অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা পর্ব -০৭

#অপ্রয়ি_প্রেয়সীর_ভালোবাসা –[৭]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________

সময়ের স্রোত বহমান। কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দেখতে দেখতে প্রায় এক মাস হয়ে গেছে আমি এখন আয়মানদের বাড়িতে আছি। আয়মান আর আমার সম্পর্কটা আগের থেকে একটু উন্নতি হয়েছে। উনি রোজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে উনার অফিসের জন্য বেরিয়ে যান আর আমি সংসারে কাজকর্মেই ব্যস্ত থাকি। আয়মান অফিস থেকে ফিরলে কখনো সখনো একটু আধটু গল্প করি উনার সঙ্গে। এভাবেই দিন দিন আমাদের সম্পর্ক টা আরো সহজ হয়ে যাচ্ছে।

-‘ তানহা একটু গিয়ে দেখোতো দরজা খুলে কে এসেছে?’

শাশুড়ি মায়ের কথায় কল্পনার ছেদ ঘটিয়ে দরজা খুলতে গেলাম। দরজার উপারেই আমার দেবর রাসেল দাঁড়িয়ে আছে। আমি যেই ওকে ভেতরে আসতে বলবো তখুনি দেখতে পেলাম ওর পিছু একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাও বধূর বেশে ঘোমটা দিয়ে!
আমি তৎক্ষনাৎ আমার শাশুড়ি মা’কে ডাক দিলাম। আমার ডাক শুনে বাড়ির সবাই নিচে নেমে আসলো। সবাই রাসেলকে দেখে অবাকের সপ্তম পর্যায় পৌঁছে গেছে! সবাই যতোটা অবাক হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুন পরিমান অবাক আমি হয়েছি। আসলে মূল ঘটনাটা হলো রাসেল আর অন্য কাউকে নয় আমারই বান্ধবী তামান্নাকে বিয়ে করে এনেছে! রাসেলের গায়ে বরের বেষ আর তামান্না বধূ সেজে রাসেলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে! বোঝাই যাচ্ছে দু’জনে বিয়ে করে এসেছে। আমার চাচি শাশুড়ী রাসেলের কাছে গিয়ে রা’গা’ন্বিত দৃষ্টিতে তাকালেন! গালে জোরে স’পাটে একটা চ’ড় মা’রলেন! চ ড় খেয়ে রাসেল গালে হাত দিয়ে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! তামান্নাও নিশ্চুপ। পুরো বাড়ি জুরে পিনপিন নিরবতা বিরাজ মান।

-‘ তুই কি এই মেয়েটিকে বিয়ে করে এনেছিস?’

-‘ হ্যাঁ। আমি ওকে ভালোবাসি আর সেজন্যই ওকে বিয়ে করেছি আমি।’

-‘ তোর এই পা’গ’লামো ভালোবাসা বড়ো হয়ে গেলো এখন? কই একটিবারও তো আমাদের কিছু বললি না? এতো তাড়া কেনো তোর বিয়ের জন্য? আমরা কি তোর বিয়ে দিতাম না?’

এবার রাসেল নিশ্চুপ। কোনো কথা নেই তার মুখে। মুখ খুললো তামান্না। রাসেলের পিছন থেকে এসে দাঁড়ালো।

-‘ ওর কোনো দোষ নেই। যা করেছি আমিই করেছি। আসলে আমার বাবা নেই আমার মা’ই আছে তারউপর আমরা খুব গরিব। এরকম পরিবারে নিশ্চয়ই আপনাদের মতন বড়োলোক ছেলেকে বিয়ে করাতেন না? ওদিকে আমার মা আমার বিয়ের জন্য অহরহ সমন্ধ দেখছে আর আমিও রাসেলকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না তাই বাধ্য হয়েই আমরা দু’জনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই কাউকে না জানিয়ে। এতে পুরো দো’ষ আমারই রাসেলের কোনো দো’ষ নেই!’

আমার চাচি শাশুড়ী মা কোনো কিছু বললেন না! ছেলরর দিকে এক পলক অ’গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে উপরে চলে গেলেন। এতোদিনে এই বাড়িতে থেকে বেশ বুঝেছি চাচিআম্মা বড্ড রা’গী মানুষ! তার যখন রা’গ ওঠে তিনি কাউকে বেশি কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন! প্রায়ই এরকমটা করতে দেখেছি উনাকে। আজকেও উনি তা-ই করলেন রাসেলের উপর রা’গ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। ইতিমধ্যেই চাচাও বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন তিনি সবটা দেখে চাচিমার মতনই রে’গে গেলেন!

-‘ এই যে মেয়েটাকে বিয়ে করলি কোনো যোগ্যতা আছে তোর? এইচএসসি ওতো পাশ করতে পারিস নি ঠিকমতন। দু বার ফেল করে তারপর টেনেটুনে পাশ করেছিস। তোকে ব্যাবসার হাল ধরতে বললাম আর তুই এই কান্ড করলি? তোর মতন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো তুই এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যা!’

চাচি যেমন রা’গ করে দরজা বন্ধ করে বসে আছেন উপরে ঠিক তেমনি ভাবে আমার চাচা শশুড় রাসেলের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো, ওদের ঘরে আসতে না দিয়ে! আমরা সকলে এতোক্ষণ ধরে সবটা দেখছিলাম এবার আমার শশুড় মশাই যিনি এই বাড়ির কর্তা তিনি বলে ওঠলো,

-‘ অনেক হয়েছে তোর আর তোর বউয়ের কথা বলা! এবার আমি বলি সবাই শুনবে ব্যস! এখনআর বলে কোনো লাভ নেই বিয়েতো বিয়েই! বিয়ে নিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওরা একে অপরকে ভালোবাসে এটুকুই যথেষ্ট! আমার মনে হয় ওরা একসঙ্গে সংসার করলে সুখেই থাকবে। ওরা ওদের রুমে যাক। বউমা তুমি গিয়ে খাবারটুকু দিয়ে আসো ওদের রুমে দুপুর হয়ে যাচ্ছে! সাদিকের দায়িত্ব সাদিকের বউকে বোঝাবার যাতে রাসেলের বিয়েটা মেনে নেয়। ‘

ব্যস আমার শশুড়মশাই তার আদে’শ শিরধার্য করে চলে গেলেন উপরে। উনার কথা শেষ না হতেই রাসেল তামান্নাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। আমিও গেলাম খাবার দিয়ে আসতে। রুমে গিয়েই দেখতে পেলাম রাসেল ওয়াশরুমে ঢুকেছে ফ্রেশ হবার জন্য। এই সুযোগে আমি তামান্নাকে চে’পে ধরলাম!

-‘ তুই রাসেলকে ভালোবাসতিস অথচ এই কথাটা আমার থেকে লুকিয়ে গেলি কি করে? সবচেয়ে বড়ো কথা হলো তোরা বিয়েও করে নিয়েছিস কিন্তু আমাকে কিচ্ছু জানালি না মানে কি এসবের?’

-‘ আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। তুই তো জানিসই আমার মতন মেয়েকে তোর এই পরিবার মেনে নিতো না কিছুতেই তাই বাধ্য হয়েই বিয়েটা করতে হয়। ক্ষমা করে দে তোকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলিনি বলে। রাসেলই আমাকে ওয়াদা করিয়ে ছিলো যাতে কাউকে কিচ্ছু না বলি এবার বুঝলি? এবার অন্ততো আমার উপর রক’গ করে থাকিস না প্লিজ।’

তামান্নার মুখ থেকে সব সত্যিটা শোনার পর সত্যিই আর ওর উপর রা’গ রইলো না আমার! ওর সঙ্গে কিছুটা গল্প করলাম যতোক্ষণ না পর্যন্ত রাসেল বেরোচ্ছিলো।

-‘ নে এবার খেয় নে। আমি যাচ্ছি কেমন? কোনো কিছু দরকার পড়লে আমাকে বলিস আমি থাকতে তোর আর কোনো অসুবিধা হবে না। ‘

তানহা চলে যেতেই তামান্না ঘরের দরজা আটকে দিলো।
-‘ আমিই থাকতে তুই কোনো দিনও সুখে হবি? এটা সম্ভব? উঁহু একদমই না! সেইজন্যই তো আমি চলে এসেছি। ‘

তামান্না নিজের আপন মনে হাসতে লাগলো! রাসেলকে দেখতে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবে বসে রইলো আগের ন্যায়।

____________°____

আজকে আয়মানের পছন্দ অনুযায়ী সাদা রঙের শাড়ি পড়েছি। মাথায় সাদা ফুলের মালা। চোখ ভর্তি কাজল,হাত ভর্তি চুড়ি সব মিলিয়ে উনার পছন্দ মতন সেজে উনার জন্য অপেক্ষা করছি। উদ্দেশ্য হলো উনি আসলে ঘুরতে বেরোবো।

-‘ কি ম্যাডাম এতো সেজেগুজে বসে আছো যে আজকে?’

ড্রেসিং টেবিলে বসে ছিলাম হঠাৎ আয়মানের গলা শুনে চমকে ওঠলাম! উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।আজকে কেনো জানি লজ্জা করছে খুব করে।

-‘ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আজকে আমরা বাহিরে যাবো খেতে?’

আমার কথায় আয়মান মা’থা দুলিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই আমরা দু’জন বেরিয়ে পড়লাম রাতের শহড়ে! সর্বপ্রথম রাস্তার ধারে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ উনা্ হাত দু’টি ধরো! হাতে হাত রাখ রেখে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম। তারপর একটু ঘুরাঘুরি করে বসলাম এক জায়গায়।

-‘ কি সুন্দর মুহূর্ত না এখন? শুধু তুমি আছো বলে, এমনি করে যেনো প্রতি মুহুর্তই একসঙ্গে কাটে আমাদের।’

-‘ সবই ঠিকঠাক থাকবে যদি আপনি থাকেন সারাজীবন আমার সঙ্গে। ‘

-‘ তোমার সঙ্গে থাকবো বলেই তো এতোকাল অপেক্ষা করেছি আর সৃষ্টিকর্তা সেই তোমাকেই পাইয়ে দিলো আমাকে। একবার হারিয়েছি আর দিত্বীয় বার হারাতে দিবো না। কালো অতীত একেবারের জন্য বিদায় হয়েছে আমাদের জীবন থেকে। এখন শুধু সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যত।’

-‘ আমি আর কিছু বললাম না আয়মানের কথার পৃষ্ঠে। মানুষটাকে একটু ভালোবাসা দিলেই যেনো পৃথিবীর সমস্ত সুখ উনার মুখে। 🥰

#চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here