#অপ্রেমের গল্পটা যেভাবে শুরু হয়েছিলো
#পর্ব-২১
বিন্তী বাড়িতেই রইলো। বাকীরা শিশির কে ছাড়ানোর জন্য গেলেও বিন্তী গেল না। মিশুক শিশিরের অনেক দিনের বন্ধু। শিশিরের রাগের সঙ্গে পরিচিত আছে বলেই হয়তো থানায় আর অভিযোগ করলো না। বলল, ওদের কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে শিশির ও’কে মেরেছে।
এ যাত্রায় শিশির বাড়ি ফিরলো। জেল হাজতে আর থাকতে হলো না। মারামারির পরও ওর হেলদোল নেই। একদম শক্ত মুখে বসে আছে। শিশিরের বাবা ছেলের কোনো ব্যাপারেই তেমন কথা বলেন না। নিজের মতোই ছেড়ে দিয়েছে। নিজের মতো ছেড়ে দেবার ফল হিসেবেই বোধহয় আজকের দিন টা দেখতে হলো।
বাড়ি ফিরে শিশিরের বাবা কোনো প্রশ্ন উত্তর পর্বে না গিয়েই শিশির কে কয়েকটা থাপ্পড় মারলো। শিশির শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মারার পর শিরিনের উদ্দেশ্যে শিশিরের বাবা বললেন,
“ও যেন এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আমি আর একটা পয়সাও ওর পিছনে খরচ করতে রাজি নই। ”
বাকীরা কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই ই আজ বিরক্ত ওর কাজের জন্য। বিন্তী এতক্ষন চুপ করে থাকলেও এবার বলল,
“চাচা আমার কিছু কথা আছে। ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার চেয়ে সরাসরিই বলি, আমি আর শিশিরের সঙ্গে থাকতে চাই না।”
সবাই ই অবাক হলো। সবচেয়ে বেশী অবাক হলো শিশির। বিন্তী এইরকম গলায় এর আগে কখনো কথা বলেনি। বিন্তী আবারও বলল,
“আপনার ছেলে শুধু অসভ্য, বর্বর ই না। বদ্ধ উন্মাদ ও পাগল। ছোট ছোট ব্যাপার নিয়ে যে বিরাট ইস্যু তৈরী করে সে সুস্থ মানুষ না। স্যরি টু সে, আপনাদের শুনতে খারাপ লাগলেও এটা সত্যি। আমার পক্ষে ওর সঙ্গে থাকা সম্ভব না। ”
শিশিরের বাবা, মা দুজনেই মাথানিচু করে বিন্তীর কথা শুনলো। তুষার বলল,
“ভাবী মাথা ঠান্ডা করো।”
“আমার মাথা যথেষ্ট ঠান্ডা আছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে এতো কিছুর পরও আমার মাথা ঠান্ডা আছে। তোমার ভাইয়ের মতো আমার অল্পে মাথা গরম হয়ও না।”
শিশিরের বাবা বললেন,
“তোমাকে আর কিছু বলারও নেই বিন্তী। যা ভালো বোঝো করো। আমি তোমাকে কোনো অনুরোধও করব না। পারলে আমাকে মাফ করে দিও। ”
বিন্তী শিশির কে বলল,
“শিশির তোমার কাউন্সিলিং এর দরকার। তুমি আসলেই অসুস্থ। তোমার অসুখ টা তোমার জন্য তো বটেই, সবার জন্যই ক্ষতিকর। ব্যাপার টা ভেবে দেখো।”
কথাগুলো বলে বিন্তী চলে গেল৷ শিশির নিজের পক্ষে একটা কথাও বলতে এলো না আজ। চুপচাপ শুনলো।
বিন্তী আজ আবার গেস্ট রুমে থাকতে এসেছে। শিশিরের ঘরে থাকার আর ইচ্ছেই নেই। পারলে এক্ষুনি বেরিয়ে যেত। রাত বলে সেটাও করতে পারছে না। একটা মানুষ সত্যিই কী এতো টা অবুঝ হয়! নাকি পুরোটাই শয়তানি! এই বয়সী একটা ছেলেকে অবুঝ বলে দোষ এড়ানো টা স্রেফ হাস্যকর। ওর বাবা, মায়ের কাছে সেটা মনে হলেও বিন্তীর কাছে তা মনে হয় না। একটা সম্পর্ক এগিয়ে নিতে বিন্তী তো খানিকটা হলেও চেষ্টা করেছিল! কিন্তু ও কী করেছে! ঝামেলা, ঝগড়াঝাটি ছাড়া আর কিছুই না। অন্যদের মতো বিন্তীও ভেবেছিল আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক হবার বদলে পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে শুরু করেছে। এইভাবে আসলে সম্পর্ক হয় না। এমন সম্পর্কে বিন্তী থাকতেও চায় না। অনেক হয়েছে, আর না। এবার দুজনের পথ আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। শিশির থাকুক ওর মতো। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, বিন্তীরও থাকবে না। হয়তো শিশিরেরও থাকবে না।
***
শিরিন কথা বলতে এলো বিন্তীর সঙ্গে। বিন্তীকে বলল,
“জানি আজ যা হয়েছে তাতে তুমি খুব রেগে গেছো। সেটা হওয়া উচিত। কিন্তু রেগে ভুল ডিসিশন নিও না বিন্তী। ”
বিন্তী স্বাভাবিক গলায় বলল,
“আপনি শিশির কে কেন এতো প্রশ্রয় দেন আন্টি?”
শিরিন চুপ করে রইলো। বিন্তী আবারও বলল,
“ওর ভুলগুলো প্রশ্রয় দেন বলেই এগুলো ও বেশী করে। আপনারা শক্ত হচ্ছেন না কেন জানিনা। তবে আমি আর ও’কে প্রশ্রয় দিতে পারছি না।”
“ও যাই করুক, তোমার জন্য ওর ভালোবাসা কিন্তু সত্যি। তুমি কী সেটা সত্যিই বুঝে উঠতে পারো নি।”
“ওর ভালোবাসাও ওর মতো ভয়ংকর চাচী। ও চাইছে আমি সারাক্ষণ ওর সঙ্গেই থাকি। কোথাও কারোর সঙ্গে দুটো কথা যেন না বলি। এগুলো কী ভয়ংকর না! ”
শিরিন আবারও চুপ করে রইলো। বিন্তী বলল,
“একটা ব্যাপার সিরিয়াসলি ভাববেন প্লিজ। ওর কাউন্সিলিং করান। ওর অসুখ টা সাড়ানো দরকার। নাহলে আশেপাশের সবাই কে অসুস্থ করে ফেলবে।”
শিরিন আর কথা বাড়ালো না। বিন্তী চলে গেল পরদিন সকালে। শিশিরের সঙ্গে কথাও বলল না ভালো করে। শিশিরও চুপচাপ আছে। কোনো ঝামেলা কিংবা তর্কবিতর্ক টোট্যালি বন্ধ করে দিলো।
বিন্তী বাড়ি ফিরে যাবার পর হাজারো প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে লাগলো। শিশিরের ঘটনা কিছু বলল না। শুধু বলল যে কয়েকটা দিন থেকেই চলে যাবে। বাড়ি ফেরার পর থেকে খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। শিশির এরকম কেন! খুব বেশী ভালো না হোক একটু স্বাভাবিক তো হতে পারতো!
***
ওদিকে শিশির আগের মতোই চুপচাপ। ঘর থেকে বেরোয় কম। কথাও বলে কম। শিরিন বলেছিল,
“বিন্তী কে আনতে যাবি না। রেগে চলে গেছে। তুই গেলেই ফিরে আসবে। ”
শিশির গিটার নিয়ে বসেছিল। সেদিকে মনোযোগ রেখেই বলল,
“আমি অসুস্থ মানুষ। ও’কে আনতে গেলেই কী আসবে!’
“দোষ তো তোর ই। ”
“আচ্ছা।”
“অন্তত একটা ফোন কর। ফোন করে বল যে এমন ভুল আর করবি না। ”
শিশির চুপ করে থাকে। আর কোনো কথা বলে না। ”
শিরিন বিন্তীকে ফোন করবে ভেবেও করলো না। বিন্তীও এবার খুব রেগে গেছে। এখন ভালো কথাও ওর কাছে খারাপ মনে হবে। তুষার হঠাৎ বলল,
“মা শিশির কে একবার সত্যি সত্যি সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছে নেয়া যায় না!”
“ও কী যেতে রাজী হবে?”
“ভাবীর কথা বললে রাজী হবে।”
শিরিন শিশির কে মিথ্যে করে বলল,
“তোর বউ হয়েছে তোর মতোই। একই মাটি দিয়া আল্লাহ বানিয়েছে। কী জেদ! তুই যদি কাউন্সিলিং করাতে রাজী হোস তাহলে আসবে বলেছে।”
শিশির হ্যাঁ, না কিছু না বললেও মা, ভাইয়ের চাপে রাজী হলো।
***
সাইকোলজিস্ট এর চেম্বারে শিশির ঢুকেছে অনেকক্ষন। বাইরে বসে আছে শিরিন আর তুষার। তুষার মা’কে বলছে,
“মা এতো টেনশন করছ কেন! সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“সব আমার জন্য বুঝলি। আমিই ছেলেটাকে ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারলাম না। যখন যা চেয়েছে তাই তো করেছি। তবুও এমন কেন হলো বলতো!”
তুষার কিছু বলল না। শিরিন আবারও বলল,
“বিন্তী ওর জীবনে আসার পর ই এমন হয়েছে। আগে তো এমন ছিলো না।”
“শিশির ভাবী কে নিয়ে ইনসিকিউরড মা। সেজন্য এতো কান্ড করেছে। ভাবী বাড়ি গেছে ভালো করেছে। এবার ও শিক্ষা পাবে দেখো। ভাবী যেন একমাসেও না ফেরে।”
শিরিন মনে মনে বলল, বিন্তী একমাসে না ফিরলে শিশিরের কী হবে! যে ছেলে দুদিন থাকতে পারে না, সে একমাস কী করে থাকবে!
চলবে…
(