#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
সন্ধ্যার পর যথারীতিতে চারজনে পড়তে বসলাম। এদিকে আমার পড়া চুলোয় উঠেছে, মাথায় শুধু বিয়ের চিন্তা, কি করা যায় কি করা যায় ভাবছি সারাক্ষণ। গতকাল সকলে একটু খানি বিয়ে নিয়ে কথা বলল। আর আজকে সকলে এমন বিহেভ করছে মনে হচ্ছে গত কালকের ঘটনা সকলে ভুলে খেয়ে ফেলছে।
পড়া বাদ দিয়ে কলমের মুখ কামড়াচ্ছি তখনই মাথায় একটা একটা গুনে পোকা কামড় বসালো। বিছানা থেকে নেমে সোজা হাঁটতে শুরু করলাম।
দাদার রুমের সামনে আসতে দেখলাম দাদি আমার রুম থেকে বের হচ্ছে, আমি ছুটে দাদির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, ‘ দাদা কোই? ‘
দাদী বলল, ‘ বিছানায় বসে আছে। ‘
আমি দাদীকে শাসিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললাম, ‘ শুনো আমি দাদার সাথে খুব খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবো। তাই যতক্ষণ না আমি বের হচ্ছি ততক্ষণ জেনো রুমে কেউ না আসে৷ ‘
বলেই ঢুকে গেলাম দাদার রুমের মধ্যে পেছন থেকে দাদি কয়েকবার ঢেকেছে, হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছিলো। আমি কোনো তোয়াক্কা করলাম না কারণ তার কথার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার এখন দাদার সাথে কথা। রুমে ঢুকেই দেখলাম দাদা বিছানার উপর বসে আছে। আশে পাশে লক্ষ্য না করেই দাদার উদ্দেশ্য কাঠ কন্ঠে বলে উঠলাম, ‘ দাদা আমার কি বিয়ে দিবে না? তোমাদের তো কোনো চিন্তা ভাবনা’ই নেই আমার বিয়ে নিয়ে। তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দাও। ‘
বলতে বলতেই হঠাৎ চোখ পরলো আমার ঠিক বা পাশে রুমের উল্টো দিকে বাড়ির সকলে বসে হয়তো গোল মিটিং করছিল। আর আমি ভুল করে ভুল সময়ে চলে আসছি। লক্ষ্য করলাম সকলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি সকলের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলাম। স্তব্ধ স্থির দাঁড়িয়ে আছি। সেকেন্ড কয়েক পর হুট করে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললাম আর বলতে লাগলাম, ‘ আমি ঘুমাচ্ছি! ঘুমের মধ্যে হাঁটছি আমার রুমটা কোনদিকে? ’
বলতে বলতে দৌঁড়ে বের হয়ে গেলাম রুম থেকে, বাহিরে এসে একহাত বুকে চেপে ধরে ভারী নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম। ঠিক তখনই দাদি কোথা থেকে জেনো সামনে চলে আসলো। আর আমাকে হাঁপাতে দেখে ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ কি হয়েছে বোইন হাঁপাচ্ছিস কেন পানি খাবি? ‘
আমি রাগী গলায় বলে উঠলাম, ‘ আরে রাখো তোমার পানি! তোমার রুমের মধ্যে বাড়ি সদ্য সবাই বসে মিটিং করছে আমাকে বলো নাই কেন? ‘
দাদি নির্মূলকন্ঠে বলল, ‘ আমি তো তোকে তখন এটা বলার জন্যই ডাকছিলাম। কিন্তু তুই তো পিছু ফিরে তাকাসনি! ‘
“ অভ্র ভাইয়া ঠিকই বলে আমি সত্যি কেয়ারলেস। ” মনে মনে বলে এক ভারী নিঃশ্বাস ফেললাম।
ঠিক তখনই সিঁড়ি দিয়ে কাশতে কাশতে উপরে উঠছিল সে আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মাথায় চাপড় দিতে দিতে বলল, ‘ কোন ফাজিলে জেনো বকতাছে। ’
আমি তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, ’ কি বলল আমায় ফাজিল? শুধু দাদি আছে বলে বেঁচে গেলে৷ ’ মনে মনে বলে তাদের সামনে থেকে চলে আসলাম। দাদি তার রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আমি কি বলতে এসেছিলাম। দাদা দাদিকে সবটা বললে দাদি সহ রুমের সকলে হাসতে শুরু করে।
গোমড়ামুখে হয়ে রুমে বসে রয় বর্ষা। আজ আর রুম থেকে বের হবে না৷ ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে শুয়েছে৷ বের হলেই কারো না কারো সামনে পড়তে হবে আর তারা কিছুক্ষণ আগের বোকা কর্মের জন্য প্রশ্ন করবে লজ্জায় পরতে হবে এর থেকে দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকা শ্রেয়। আজ মনে করে বারান্দার দরজা ও বন্ধ করেছে সে।
🌸
পরদিন সকালে ~
রুম থেকে বের হয়ে বাহিরে যেতে সিঁড়ির উপর থেকে এক সুখবর শুনে বর্ষা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ছুটে চলে যায় অভ্রর রুমের দিকে, দরজার সামনে এসে দেখলো অভ্র খাটের সাথে লেগে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা পেছন থেকে ছুটে গিয়ে অভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা কেউ এমনভাবে জড়িয়ে ধরায় কারেন্টে শকট খাওয়ার মতো অবস্থা হয় অভ্র’র। হাত দু’টো দেখে বলে উঠল, ‘ বর্ষ্যু দরজা খোলা! ’
বর্ষা অভ্রকে ছেড়ে দিয়ে এক’পা পেছনে পিছিয়ে যায়। অভ্র বর্ষার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। বর্ষার চোখে মুখে আনন্দের জ্বলক স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অভ্র। ভ্রুযুগল কুঁচকে বলে উঠল, ‘ কি হয়েছে এত খুশি কেন? ‘
বর্ষা অধিক মাত্রায় খুশি হওয়ায় কোনো কথা বলতে পারছে না। কোনো রকম হাসি চেপে ধরে বলল, ‘ আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি নিজের কানে শুনেছি। ‘
অভ্রর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল এবং সে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে। এ-খবর সে আগে থেকেই জানে কিন্তু বর্ষার সামনে এমন বিহেভ করছে যে সে এখন ওর থেকেই প্রথম শুনছে খবরটা৷ কেননা এখন যদি অভ্র বলে সে এটা আগে থেকেই জানে তাহলে বর্সার হাসোজ্জল মুখটা খানিকের মধ্যে মলিন হয়ে যাবে। সে চায়না বর্ষার মুখ থেকে হাসি বিলীন হোক। তারপর একহাত দিয়ে বর্ষার কপালে পরে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো পেছনে ঠেলে দেয় অভ্র। আলতো ভাবে কপালে ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে শুকনো এক চুমু একে দেয়। তৎপর আবারও শক্ত করে নিজের আষ্টেপৃষ্টের সাথে জড়িয়ে নেয়।
.
.
.
সকলে খাবার টেবিলে নূর ইসলাম হাত দু’টো একত্রে এনে মুঠ করে গুরুগম্ভীর হয়ে বসে আছেন।
সকলের দৃষ্টি তার দিকেই স্থির। বর্ষা অভ্রর দিকে তাকালো অভ্র একবার চোখের পলক ফেলে ইশারায় শান্ত হয়ে বসতে বলল।
নূর ইসলাম কিয়ৎক্ষণ পর কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে নিয়ে বললেন, ‘ আমি যা বলবো সকলে মন দিয়ে শুনো। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী মাসের আঠারো তারিখে অভ্র ও বর্ষার বিয়ে হবে। এই মাসের এখন ২২ তারিখ তোমরা যথারীতি তে বিয়ের তর্জাব শুরু করে দাও। বিয়ে ওই তারিখেই হবে আশা করি কারো আপত্তি নেই। ’
বর্ষা সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ সে কি কথাগুলো সত্যি শুনেছে নাকি স্বপ্ন দেখছে। এক ধ্যানে সে তার দাদার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ পাশ থেকে রিয়া টেবিলের নিচ থেকে বর্ষার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। বর্ষা রিয়ার দিকে ঘুরে তাকালো, কেউ যাতে শুনতে না পায় তাই রিয়া বর্ষার দিকে ঝুঁকে আসতে আসতে বলল, ‘ কংগ্রাচুলেশনস বর্ষ্যু ’
বর্ষা রিয়ার উদ্দেশ্য ক্ষীণকন্ঠে বলল, ‘ এটা কি সত্য নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি? ’
রিয়া একহাত দিয়ে বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ স্বপ্ন নয় রে বোকা পাখি সত্যি ঘটেছে আর আমরা সবাই সাক্ষী! ”
বর্ষার অন্য পাশ থেকে পায়ে পা লাগিয়ে লাণ্থি মেরে বৃষ্টি বলল, ‘ কিসের বর্ষ্যু? ভাবি বল ভাবি! ’
বর্ষা রাগী চোখে বৃষ্টির দিকে তাকালো, বৃষ্টি ও রিয়া দু’জনে মুখে হাত দিয়ে নিঃশব্দে হাসতে লাগলো।
নূর ইসলাম আরও কিছু কথা বললেন তারপর সকলে খাওয়া শুরু করে।
🌸
হাতে গুনা আর কিছুদিনই রয়েছে বিয়ের। তারমধ্যে বিয়ের কার্ড ছাপাতে দিতে হবে। হল রুমে সোফার উপরে সকলে বসে আছে। টেবিলের উপর খাতা ও হাতে একটা কলম নিয়ে মেঝেতে বসে আছে পুতুল। বাড়ির বড়রা ডিসকাস করছে কাকে বিয়েতে ইনভাইট করবে। সকলে ভাবনা চিন্তা করে নাম বলছে। পুতুল লিস্টে নাম গুলো লিখছে৷
চেনা জানা কারো নাম বাদ দেওয়া যাবে না। নাম অনুযায়ী কার্ড হবে তাই একটু ভালো করে লক্ষ্য করা হচ্ছে সব কিছু। কার্ড গুলো ছাপানো হলে সেগুলো তে নাম লিখে লিস্টের সবার বাড়ি বাড়ি পৌঁছিয়ে দিতে হবে।
দুইদিন আগে অভ্রর বাবা বাড়ি ফিরে আসছেন, কাব্য আসতে পারেনি তার ঢাকা তে থেকে যেতে হয়েছে। ওখানে এখনও অনেক কাজ বাকি তাই সে নিজে থেকেই থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
বাড়ি থেকে নূর ইসলাম সে তার বড় ছেলেকে কল দিয়ে বাড়িতে চলে আসতে বলেন। বাবার কথা তার কোনো ছেলে-মেয়েই অমান্য করেন না। কল পাওয়ার পরপর সব কাজ কাব্য কে বুঝিয়ে দিয়ে তিনি গাজীপুরের উদ্দেশ্য রওনা দেন। বাড়িতে আসার পর ছেলের সাথে স্পেশাল ভাবে কথা বলেন। বর্ষার সাথে অভ্রর বিয়ে নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই শুনে নূর ইসলাম খুশি হন। এবং তারপরই অনেক ভাবনা চিন্তা করে বিয়ের ডিসিশন ফাইনাল করে সকলকে জানানো হয়।
মুন্নী সে অধিক সময় হাসপাতালে থাকে, পেসেন্ট এর অবস্থা খারাপ হলে রাতেও হাসপাতালে থাকতে হয়। সে কখনো নিজের দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় না৷ গত কাল সকালে গিয়েছে হাসপাতালে এখনও বাড়ি ফিরে আসেনি। রাতে কল দিয়ে বলেছিল, সে বাড়িতে আসতে পারবে না। রাতে হাসপাতালে থাকতে হবে। দুইটা বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে হাসপাতালের সামনে দুইজন রাস্তাতেই স্পট ডেট ‘মা’রা গেছে’ আর বাকি দুইজনের খুব করুণ অবস্থা তাদের ঢাকা পাঠাতে হবে। আর একজনের হাত ও পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে তাকে হাসপাতালে’ই আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে ও আরও দু’জনকে হাসপাতালে থাকতে হবে। রাতে নাহিদ খাবার নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু মুন্নি যেতে বাড়ণ করে দেয়। সামনেই রেস্তোরাঁ থেকে কিছু এনে খেয়ে নিবে বলে সকলকে বিদায় জানিয়ে ফোন কেটে দেয়।
পুরো রাত হাসপাতালে থাকায় বর্ষা অভ্রর বিয়ের খবর সে জানে না। এমনকি হাসপাতালে পুরো রাত জেগে ছিলো বৈকি এখন সে খুব ক্লান্ত। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে যাবে এমন সময় একটা ঘটনা তার মনকে বিষন্নতায় ডুবিয়ে দেয়। সিনিয়রদের কথা অমান্য করার সাধ্য কারো নেই। উদাসীন মনে বাড়ি ফিরে মুন্নী। বাড়িতে এসে সকলকে একসাথে বসে আলোচনা করতে দেখে থমকে যায় মুন্নি। ক্লান্ত শরীরে সকলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ কি ব্যাপার তোমরা সবাই একসাথে? যাক ভালোই হয়েছে তোমাদের আমার একটা জরুরী কথা বলার আছে। ‘
মুন্নীর বাবা মুন্নীর উদ্দেশ্য বলল, ‘ তোকেও আমাদের একটা কথা বলার আছে। হাসপাতালে ছিলি বলে বলা হয়নি। ‘
মুন্নি ভ্রুযগুল কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ কি কথা? ’
‘ অভ্রর বিয়ে ঠিক করেছি সামনের মাসে আঠারো তারিখে। ’
মুন্নি চোখ জোড়া বড়সড় করে তার চাচ্চুর দিকে তাকালো আর বলে উঠল, ‘ কিহহ? কার সাথে? ’
পেছন থেকে তিন্নি মুন্নির কাঁধের উপর হাত দিয়ে বলল, ‘ বর্ষার সাথে৷ ’
মুন্নি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল পরক্ষণে বলল, ‘ আমার ও আমার সঙ্গে পাঁচ জনের মনপুড়া গ্রামে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পোস্টিং হচ্ছে। সেখানে অনেক মানুষ জন চিকিৎসার অভাবে মা’রা যাচ্ছে। আমাদের হাসপাতাল থেকে যেতেই হবে। আর সেটাও সামনের মাসের ২১ তারিখে। ’
কাজের জন্য যাচ্ছে বলে কেউ আপত্তি জানালো না কিন্তু একা যাবে, থাকবে কিভাবে অজানা যায়গায় তাই সাথে কাউকে নিয়ে যেতে বলল নূর ইসলাম। মুন্নি তার দাদাকে উদ্দেশ্য করে ধীর কন্ঠে বলল, ‘ দাদু আমি সেখানে কাজের জন্য যাচ্ছি। ঘুরতে যাচ্ছি না যে কাউকে নিয়ে যাবো। এখন তুমি ভাবো আমার এখানে কাজের জন্য রাতেও হাসপাতালে থাকতে হয়। সেখানে একটা পুরো গ্রাম ও আশ পাশে গ্রাম তো আছেই। সকলে অনেক ব্যস্ত থাকবো কখন বাড়ি ফিরবো তারও কোনো ঠিক নেই। কাউকে সঙ্গে নিয়ে গেলে সে সারাদিন কি করবে একা একা? তোমরা চিন্তা কোরো না, আমি ফোন দিয়ে তোমাদের সাথে যোগাযোগ করবো আর আমি তো একা যাচ্ছি না আরও চারজন যাবে। আমরা পাঁচজন মিলে ভালো করেই থাকতে পারবো। ’
মুন্নি কথাগুলো তেও যুক্তি আছে। তাই আর কেউ কোনো কথা বাড়ালো না। শরীর ক্লান্ত দেখাচ্ছে বলে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে বলে সকলে। এবং তার খাবার রুমে দিয়ে আসবে তার মা। খেয়ে একটা ঘুম দিতে বলল নূর ইসলাম। মুন্নি ও বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।
বিকালে ঘুম থেকে উঠার পর বর্ষার সাথে দেখা করতে যায় মুন্নি। সে চলে যাবে শুনে খুব মন খারাপ হয় বর্ষার। দু’জনে মিলে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে সময় কাটায়।
২০ দিন পর ~🌸
বিয়ের শপিং করতে এসেও এক মহা বিপদ। এক মধ্য বয়স্ক লোককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে বর্ষা। সে এক লম্বা স্টোরি আগামী পর্বে বলবো!
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৫৬
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখিকা]
🌸
“তোর কি কি জিনিসপত্র লাগবে একটা কাগজে লিস্ট করে দে! আমরা মার্কেট থেকে নিয়ে আসবো।”
কিছুক্ষণ আগে রোদে শুকানো কাপড়গুলো রুমে নিয়ে এসে বিছানার এক সাইডে রেখে ভাজ করতে করতে বললেন বর্ষার মা। বিছানার অন্য সাইডে বসে বসে মেসেঞ্জারে গ্রুপ চ্যাট করছিল বর্ষা। মায়ের কথা কান অব্ধি যেতেই তড়িঘড়ি করে মায়ের মুখপানে তাকালো আর অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ মানে কি? তোমরা আমার বিয়ের মার্কেট আমাকে ছাড়াই করে ফেলতে চাচ্ছো? আমার জন্য মার্কেট করা হবে সো আমিও যাবো! যাবো মানে যাবোই আমাকে কেউ রেখে যেতে পারবে না। ’
বর্ষার মা মেয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। হাতে ভাজ করতে থাকা জামাটা বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে রাগী গলায় বললেন, ‘ অতিরিক্ত কথা বলিস তুই। তোকে কি আমি একবারও বলছি তোকে আমরা নেবো না? আমি বলছি একটা কাগজে লিখে লিস্ট বানাতে। এর ফলে মার্কেটে গিয়ে সে লিস্টে অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনলে সুবিধা হবে৷ আর নয়তো পরে বাড়িতে এসে বলবি আমার এটা কেনা হয়নি ওটা রয়েগেছে এসবই বলবি। এত ঝামেলা বাপু নিতে পারবো না। এমনিতে কয়েকদিনই বাকি আছে বিয়ের এর মধ্যেই সব কিছু গুছিয়ে ঠিকঠাক করে ফেলতে হবে। পরে কোনো ঝামেলা আমি চাচ্ছি না। আজাইরা বসে না থেকে তারাতাড়ি লিস্ট করে ফেল। আর নয়তো ভালো হবে না দেখিস খুন্তির মার একটাও মাটিতে পরবে না। ’
বলেই আবারও কাপড় ভাজ করতে শুরু করলেন। এদিকে বর্ষা বিরক্তির সাথে বলে উঠল, ‘ উফফ আম্মু! তোমাদের জন্য একটু শান্তিতে বসে মোবাইল ও টিপতে পারি না। তোমাদের সব সমস্যা আমার মোবাইল নিয়ে একবার শুধু বিয়ে হয়ে চলে যেতে দাও তারপর দেখবে হাজার কান্না কাটি করলেও আমি আসবো না। তখন চাইলেও আমার মুখ আর দেখতে পাবে না। তখন অনেক অনেক আফসোস করবে। ’
বর্ষার মা মেয়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘ বিয়ে করে যাচ্ছিস বা কোন রাষ্ট্রে এইতো উপরের তলায় যাচ্ছিস। তোকে না চাইতেও দিনে বত্রিশ বার দেখা হবে। তাছাড়া এত বেশি বক বক করিস না তোকে তো আমি চিনি যতই হোক আমার পেট থেকে তোর জন্ম হইছে। তোর দৌঁড় ওই মোল্লার দূর মসজিদ পর্যন্ত’ই। ’
‘ ওহ আম্মু চুপ করবা প্লিজ! ’ বর্ষা রাগী গলায় বলল।
‘ তুই কি লিখতে বসবি নাকি আমি ঝাঁটা টা হাতে নিমু? ’
আড়চোখে বর্ষা ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ এখানে ঝাটা কোথ থেকে আসলো? রুম আমার পরিস্কার আছে আর করতে হবে না। ’
‘ বর্ষা ’ ধমকের স্বরে বললেন।
‘ আচ্ছা বাবা করছি ধমকাচ্ছো কেন? ‘ বলে বিছানা থেকে উঠে সোজা চলে গেলো বর্ষা।
.
.
চার ঘন্টা পর-
“ মার্কেটে এসে গ্যাঞ্জাম আমার মোটেও পছন্দ না। তোমরা পছন্দ করো একা আমাকে সব কিছু দেখতে হচ্ছে। কোন কোন শাড়ি গুলো পছন্দ হয় সেটা বের করতে বলো। একা আমিই কি সব দেখবো নাকি? তাহলে তোমরা সব আসছো কেন বেডাগো চেহারা দেখতে? ”
রাগী গলায় বললেন বর্ষার মা। দীর্ঘ দুই ঘন্টা ধরে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বাকিরা ক্লান্ত হয়ে পরেছে। দুপুরে যা খেয়েছিল এত হাঁটার বদৌলতে তা হজম হয়ে আবারও খিদে পেয়ে গেছে। এক মাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা কোনো কিছু বাদ রাখতে চাচ্ছে না বর্ষা মা। তবে মার্কেটের কোনো শাড়ি’ই উনার মন মতো হচ্ছে না তাই পছন্দ হচ্ছে না। বর্ষার ছোট ফুপির স্বভাব ঠেস দিয়ে কথা বলার সে তার সে স্বভাবে অভস্ত্য তিনি বর্ষার মায়ের দিকে তাকিয়ে কাঠ কন্ঠে বললেন, ‘ বুঝছো রিয়ার মা বর্ষার লাইগা বুঝি এহন চাঁদের বুড়ি রে দুনিয়ায় নামাইয়া নিয়া আসতে হইবো। যাতে করে চাঁদের বুড়ি বর্ষার লাইগা একখান শাড়ি বুনে দেয়। ’
বর্ষার মা তার ছোট ননদকে কথা শুনাতে ছাড় দেননি তিনি কথার প্রত্যত্তরে বললেন, ‘ একটাই মাইয়া আমার সখ আহ্লাদ তো থাকবোই। আমার মাইয়া রে আমি বেস্ট টাই দিতে চাই। দরকার পরলে সারা রাতই বাজারে থাকমু পুরো মার্কেট ঘুরে বেস্ট শাড়িটাই নিমু। ’
বাড়ির মেয়েরা সকলে বিরক্ত বোধ করছে। বর্ষা শানিতকন্ঠে বলল, ‘ আম্মু এখন কার যুগে বিয়েতে সবাই শাড়ি পরে না। তোমার যখন শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না৷ তখন শাড়ির শপ থেকে চলো চলে যাই৷ আমার জন্য না হয় বিয়ের লেহেঙ্গা পছন্দ করো। ’
বর্ষার মা বর্ষার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাইলেন, ‘ তুই বিয়েতে শাড়ির বদলে লেহেঙ্গা পরবি? ’
পেছন থেকে বর্ষার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো অভ্র। মুচকি হেসে মৃদুস্বরে বলল, ‘ সমস্যা কি? বিয়েটা তো ওর তাই ও ওর ইচ্ছে মতো পোশাক পরার অধিকার রাখে। ’
বর্ষার মা অভ্রর কথার পিঠে দুইবার মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে বলল, ‘ ঠিক আছে। ’
বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো। বিয়ের কনের জন্য লিস্ট অনুযায়ী পা থেকে মাথা পর্যন্ত যা যা প্রয়োজন সব জিনিস পত্র কেনা শেষ। এখন শুধু মার্কেট থেকে বেরিয়ে বাড়ি যাওয়া বাকি।
আচমকা বর্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে ডান পাশে তাকালো আর দেখতে পেলো অভ্র কারো সাথে কথা বলছে। বর্ষা মানুষদের উপেক্ষা করে মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করল৷ সে শুধু দেখতে পেলো একটা মেয়ে অভ্রর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকায় মেয়েটার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। কুঁকড়ানে চুল ও থ্রি পিছ দেখেই বুঝে গেছে ওটা মেয়ে। বর্ষা সেদিকে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতে যাবে তখন পাশ থেকে ডাক দিলো তিন্নি সে বলল, ‘ আমাদের সব মার্কেট শেষ তোর কি আর কিছু লাগবে? ‘
‘ বর্ষা তিন্নির দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, না! ‘
তারপর আবারও অভ্র যেদিকে আছে সেদিকে ঘুরলো। চমকিতা বর্ষা যেখানে অভ্রকে দেখেছিল ও সেখানে নেই আর সে মেয়েটাও নেই। পেছন থেকে কারো কন্ঠ শুনে পেছনে ঘুরে দাঁড়ায় তখন বর্ষা দেখতে পায় অভ্রকে সে সকলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা তখন মনে মনে ভেবে নেয়, ‘ এ নিয়ে পরে কোনো সময় কথা বলা যাবে৷ মেয়েটা কে ছিলো এটা না হয় বাড়িতে গিয়েই প্রশ্ন করবো। ’
বাড়ির বড়রা শপিং ব্যাগ নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেছে তাদের পিছু পিছু বের হতে লাগে বর্ষা অভ্র আর বাকিরা। ভীরের মধ্যে হঠাৎ একটা মধ্য বয়স্ক লোক এসে বর্ষার হাতের সাথে ধাক্কা লাগলো। মার্কেটে তেমন বিড় নেই খুব কম মানুষই চলাচল করছে এর মধ্যে ঠেলাঠেলি করে ভেতরে ঢুকা বা বের হওয়া প্রসঙ্গ’ই আসে না। এত জায়গা ফাঁকা রসেছে তবুও সে এসে গায়ের সাথে ধাক্কা খেলো। বুঝাই যাচ্ছে এই সব থার্ডক্লাশ লোকেদের এটাই স্বভাব মেয়ে দেখলেই গায়ের সাথে ধাক্কা খাওয়ার স্বভাব। বর্ষা ধাতস্থ হয়ে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে রাগে চোয়াল শক্ত করে সে পেছনে ঘুরে। সকলে বর্ষার কান্ড দেখে অবাক হয়। আর পিছু ফিরে তার দিকে তাকিয়ে বর্ষা বলে ডাকতে থাকে। বর্ষা সোজা লোকটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো আর কোনো কিছু না বলেই ধাক্কা খাওয়ার মতো করে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো।
আচমকিত সকলে লোকটার অস্ফুটস্বরের চিৎকার শুনে ঘুরে তাকালো। সকলের দৃষ্টি এখন লোকটার উপর স্থির। কিছু ভদ্র লোক সামনে এগিয়ে আসলেন। উনারা লোকটা উঠে দাঁড় করালেন। লোকটা তাদের বলল এই মেয়েটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
সকলে বর্ষার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল, ‘ বাপের বয়সি লোকটা ফেলে দিতে মেয়ে তোমার লজ্জা করেনি? ’
বর্ষা তাদের জবাবে হুংকার দিয়ে বলল, ‘ আমাকে কেন বলছেন? যা বলার এই চরিত্র হীন লোকটা কে বলেন। রাস্তায় মেয়ে দেখলেই গায়ে ঠেলে পরে। গায়ের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে চলে যায়। কি ভাবছে আমাকে ধাক্কা দিয়ে পাড় পেয়ে যাবে? আমাকে না চিনেই আমার সাথে বেয়াদবি করেছে। আর সেজন্যই আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি। অনেক সখ মেয়েদের সাথে ধাক্কা খাওয়ার আরও সখ থাকতে বলতে বলেন। জীবনকার মতো সখ গুচিয়ে দেবো। ’
বর্ষার কথাগুলে শুনে সকলে লোকটার দিকে তাকালো লোকটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা সকলের উদ্দেশ্য আবারও বলল, ‘ বাপের বয়সি বলেই কিছু বলিনি আর নয়তো এমন অসভ্যতামির জন্য হাত আমারও আছে। ’
বর্ষা কথাগুলো বলে সকলের সামনে থেকে চলে আসলো। বাকিরাও ইচ্ছে মতো লোকটাকে অপমান অপদস্ত করলো সে মাথা নিচু করে সব কিছু শুনছে মাত্র।
বর্ষা হেঁটে ওদের সামনে আসলো অভ্র বর্ষার দিকে তাকিয়ে নির্মূলকন্ঠে বলল, ‘ এজন্যই তোকে আমার বেশি ভালো লাগে। যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনও ঠিক এইভাবে একটা ছেলের কলার ধরে শাসিয়ে ছিলি একাই একশ নারী। ’
বর্ষা অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, “ জি হ্যাঁ! আমার নিজের রক্ষার জন্য কাউকে প্রয়োজন নেই। আমি সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে ও রক্ষা করতে জানি। ”
“ সেটা তো আমরা সবাই জানি! ” বলল অভ্র।
তারপর মার্কেট থেকে বের হলো সকলে। গাড়িতে উঠে বসে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।
বাড়িতে ইতিমধ্যে বিয়ের তর্জাব শুরু হয়ে গেছে।
★
হলুদের দিন থেকে শুরু করে বৌভাতের অনুষ্ঠান পর্যন্ত তিন দিন বিয়ের সব কার্যকম কমিউনিটি সেন্টারে হবে।
বি:দ্র: আসসালামু আলাইকুম রিডার্স! আগামীকাল হলুদ বর্ষাভ্র’র হলুদ সন্ধ্যা সকলে এসে হলুদ দিয়ে যেও!
]