“অবশেষে_তুমি (অন্তিম পর্ব ৩০)

#অবশেষে_তুমি (অন্তিম পর্ব ৩০)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছে।। অর্ণব আমার খুব যত্ন নেয় আর খেয়াল রাখে।। বলতে গেলে এক মুহূর্তও নজরছাড়া করেনা।। আমার সাথে সারা রাত জেগে কাটায়।। মনে হয় অসুস্থ আমি না ও নিজেই।। আমি না চাইতেই সবকিছু আমার হাতের কাছে এনে দেয়।। যখন যা বলি সবকিছু এনে দেয়।। কোনো কিছুতে মানা করে না।। রাত বারোটা বাজেও কিছু চাইলে মানা করে না বরং এনে দেয়।।
এখন অর্ণব অফিসেও বেশি যায় না, আর গেলেও বেশিক্ষণ থাকেনা।। সে নাকি অফিসে গেলে আমার যত্ন নেয়ায় কমতি পরে যাবে।। এখন ওকে কে বোঝায় যে অফিসের কাজও তো করতে হবে।।

এখন আমি কোনো কাজই করি না।। মা আর অর্ণব কোনো কাজই করতে দেয় না।। তাদের মতে এই সময়ে কোনো কাজ করতে হবে না।। বাড়িতে অনেক সার্ভেন্ট আছে তারাই সব করবে।। আমার শুধু একটাই কাজ খাওয়া- দাওয়া করা আর নিজের যত্ন নেয়া।। আর আমি এসব করতে করতে বিরক্ত।। সারাক্ষণ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে কারই বা ভালো লাগে।। যত্তসব!!

.

.

ইদানীং আমার ভিষণ রকমের মুড সুইং হয়।। কখন যে কি করতে ইচ্ছে করে নিজেও বুঝি না।। রাত বারোটা বাজে অর্ণব ঘুমাচ্ছে।। অর্ণবকে বললাম

মিমঃ এই শুনছো।।

অর্ণব ঘুম ঘুৃম কন্ঠে বললো

অর্ণবঃ হুম বলো।।

মিমঃ হুম বলো কি।। শুনো না একটা কথা।।

অর্ণবঃ বলো।।

এবার রাগী গলায় বললাম

মিমঃ তুমি কি উঠে বসবে নাকি আমি কিছু করবো।।

এই একটা কথা টনিকের মতো কাজ করলো।। অর্ণব সাথে সাথে উঠে বসলো।।

অর্ণবঃ বলো কি হয়েছে? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? কিছু হয়েছে নাকি কিছু লাগবে?

মিমঃ কিছুই হয়নি।। বলছি কি আমার না অনেক আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।।

অর্ণবঃ এতো রাতে!! আমি এখন কোথায় পাবো!! বলি কি যে কালকে এনে দিলে হয় না।।

মিমঃ না, আমি এখন বলেছি মানে আমার এখনই লাগবে।। আমি এখনই খাবো।।

অর্ণবঃ ok ok. এতো রাগ করছো কেনো?? আমি কি না করেছি নাকি।। এখনই এনে দিচ্ছি।।

অর্ণব মুখটা কালো করে চলে গেলো আইসক্রিম আনতে আর এদিকে ওর চেহারা দেখে আমার হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে।। একটু পরে অর্ণব আইসক্রিম নিয়ে হাজির হলে আমি একটা আইসক্রিম নিয়ে অর্ণবকে একটা দিয়ে বলি

মিমঃ এবার আমার সাথে আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করো।।

অর্ণব আমাকে একটান দিয়ে ওর কোলে বসিয়ে বলে

অর্ণবঃ এতো কষ্ট করে এতো রাতে তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে এলাম আর এখন তুমি বলছো গল্প করতে।। আগে একটু আদর করো।।

মিমঃ পারবো না।।

অর্ণবঃ কেনো??

মিমঃ এমনি।।

আমার কথা শুনে অর্ণব মন খারাপ করে বসে রইলো।। আমি ওর গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম।। আর ও সাথে সাথে আমার কোমর শক্ত করে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।।🍁🍁

রাতে খাটে বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছিলাম অর্ণব এসে আমার পেটে হাত রেখে বললো

অর্ণবঃ আমার বেবিটা কি করে??

মিমঃ বেবি এখন ঘুমাচ্ছে।। ডিস্টার্ব করা যাবে না।।

অর্ণবঃ ওহ সরি সরি।। আচ্ছা আমাদের প্রিন্সেসেরর নাম কি রাখবো??

মিমঃ কে বলেছে আমাদের প্রিন্সেস হবে!! আমাদের একটা প্রিন্স হবে।।

অর্ণবঃ উহু, প্রিন্সেস হবে।।

মিমঃ বললাম না প্রিন্স হবে।। আর একটা কথাও শুনতে চাই না।।

অর্ণবঃ সময় হলেই দেখা যাবে।।

.

.

আমার এখন আট মাস চলে।। চলাফেরা করতে এখন অনেকটা কষ্ট হয়।। অর্ণব তো আমার হাটার স্টাইল দেখে শুধু হাসে আর এদিকে আমার যে কি কষ্ট হয় তার কোনো খবর নেই, আসছে শুধু মজা করতে।। অর্ণব এখন প্রায়ই বলে যে আমি নাকি আগের থেকে সুন্দর হয়ে গিয়েছি।।

.

.

একদিন সকালে অর্ণব খুব মন খারাপ করে আমার সামনে এসে দাড়ালো।। কি হয়েছে জানতে চাইলে বলল ওর ব্যাবসার কোনো একটা কাজে ওকে শহরের বাইরে যেতে হবে।। আমারও একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।। কিন্তু অর্ণবকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম, ”কাজ যখন পড়েছে তখন তো যেতে হবেই।। কাজে ফাঁকি দিলে কিন্ত আমাদের বেবি বলবে তার পাপা ফাঁকিবাজ”

এই কথা বলে আমরা দুজনেই হেসে দিলাম।। অর্ণব বিকেল চারটার দিকে বেরিয়ে পড়লো।।

রাতে মা এসে আমার কাছে থাকলো।। রাতে ইদানীং ঘুমাতে খুব কষ্ট হয়।। কোনোমতে রাতটা পার করলাম।।

সকালে উঠে মা রান্নাঘরে চলে গেলেন।। আমি ফ্রেশ হয়ে বারান্দার দিকে আসছিলাম হঠাৎ করে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।। মা দৌড়ে আসলেন।। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।।শুধু এতটুকু মনে করতে পারি যে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।।

কিছু সমস্যার কারণে আগেই সিজার করতে হয়।।

ওদিকে অর্নবের মা অর্ণবকে ফোন করে সব জানিয়েছে।। মিমের বাবা মাও চলে এসেছে।।
সবটা শুনে অর্ণব সাথে সাথে রওনা দিয়েছে।।
অর্ণবের সারা শরীর ঘামছে আর কান্না করছে।। ওর বাচ্চার কোনো চিন্তা হচ্ছে না চিন্তা শুধু মিমকে নিয়েই করছে, মিম যেন সুস্থ থাকে।। কিছুক্ষণ পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজে ওর ঘোর কাটলো। খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছে।। ডক্টর বাচ্চাকে অর্ণবের মায়ের কোলে দিয়েছে।। অর্ণব ওর ছেলের ছোট্ট ছোট্ট হাত পা গুলো ছুয়ে দেখছে।।

এমন সময় অর্ণব মিমের কথা জিজ্ঞেস করলো। ডক্টর বলল মিমের অবস্থা বেশি একটা ভালো না।। আসলে সিজারের আগে অনেক সময় নরমালে চেষ্টা করা হয়েছে।। এতে করে অনেকটা এনার্জি লস হয়েছে।। তারপর সিজারের সময় অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে।।

এই কথা শুনে অর্ণবের পৃথিবী যেন এক মূহুর্তে অন্ধকার হয়ে গেল।।
অর্ণবের কানে মিমের কথাগুলো ভাসতে থাকলো:
লক্ষীটি একবার ঘাড় নেড়ে
সম্মতি দাও আমি যাই চলে।

অর্ণব আতকে উঠলো।। নিজের মনেই বলতে থাকলো, না না এমন হতেই পারে না।।
কতক্ষণ এভাবে কেটেছে অর্নবের জানা নেই।।হঠাৎ দেখলো ডক্টর OT থেকে বের হচ্ছে।।
অর্ণব দৌড়ে গেলো ডক্টরের কাছে।। কিছু বলতে পারছে না সে, শুরু অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আর মনে মনে প্রার্থনা করছে যেন খারাপ কিছু শুনতে না হয়।।
ডক্টর একটা হাসি দিয়ে বলল, সব ঠিক আছে। নাও সি ইজ আউট অফ ডেনজার।।
অর্ণব যেন প্রান ফিরে পেলো।।

মিমকে কেবিনে আনা হলে অর্ণব মিমের সাথে দেখা করতে গেলো।। অর্ণবকে দেখে মিম বলে উঠলো…

মিমঃ আমার ছেলে কোথায়?? ও কেমন আছে??

অর্ণবঃ ভালো আছে, একদম ঠিক আছে।।

এই কথা বলে অর্ণব মিমের হাত ধরে ওর পাশে এসে বসে ওর কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।।

অর্ণব ভাবছে, একটু আগে নিজের জীবন নিয়ে টানাটানি চলছিলো, সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।। ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করছে।। মায়েরা বুঝি এমনই হয়।।

.

.

.

তিন বছর কেটে গিয়েছে।। আমাদের সেদিনের ছোট্ট অর্ক আজ সারা বাড়ি গুটি গুটি পায়ে হেটে বেড়ায়।। আর যখন ভাঙা ভাঙা গলায় মিম্মি বলে, পাপা বলে ডাক দেয় তখন জীবনটা স্বার্থক মনে হয়।।

অর্ণব অর্ককে অনেক আদর করে।। কিছুই বলে না ওকে, শাষনও পর্যন্ত করেনা।। আবার আমি অর্ককে কিছু বললে উল্টা আমাকে বকা দেয়।। দুই বাপ বেটার কাহিনী দেখলে হাসি উঠে।। অর্ক পুরা অর্ণবের মতো হয়েছে, দেখতেও এক সবকিছুতেই এক।। অর্ণব আগের চেয়ে আরো বশি স্টাইলিশ হয়ে গিয়েছে।। ওকে দেখলে কেউ বলবেই না যে ওর তিন বছরের একটা ছেলে আছে।।

সব কাজ শেষে রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।।এখন জীবনের গতি অনেকটা পাল্টে গিয়েছে।।তবে অর্ণবের ভালোবাসা নয়।।

হঠাৎ করে অর্ণব এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।।

অর্ণবঃ মিম।।

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ মনে পড়ে চার বছর আগের কথা??

মিমঃ হুম।। সব মনে আছে।। জানো আগের দিন গুলো খুব মিস করি।। তোমার রাতের আবদার মেটাতে কত রাত রাস্তায় হেটে পার করেছি।। কত রাত নদীর পাড়ে জোৎস্না দেখে কাটিয়েছি।।

এমন সময় অর্ণব আমার হাত ধরে হাটু গেড়ে বললো

সব বাধা পেরিয়ে
সব অভিযোগ শেষে
সব না পাওয়াকে জয় করে
অবশেষে তুমি আমার

আমি অর্ণবের হাত শক্ত করে ধরে বললাম,

যদি তুমি থাকো পাশে
হাতটা ধরো শক্ত করে
একটু যদি দাও অভয়
সকল বাধা করবো জয়

অর্ণব আমাকে বুকের মাঝে শক্ত করে ধরে বলল, তুমি এখনো বদলালে না।। আর please সবসময় এমনই থেকো।। অবশেষে তুমিই হলে আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার জীবন সঙ্গীনি।।

অর্ক কেদে উঠলো।। আমরা দুজনেই ছুটে গেলাম ওর কাছে।। আজ আমাদের সব আনন্দ ওকে ঘিরেই।।

—(সমাপ্ত)—

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here