“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৯)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৯)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
চির চেনা সেই ছোয়া।। না তাকিয়েই বললাম:

মিমঃ আপনি হঠাৎ??

অর্ণবঃ আসতে পারি না বুঝি??

মিমঃ আমার কাছে কেনো জানতে চাইছেন??আমার বলার উপর কিছু নির্ভর করে বুঝি?

অর্ণবঃ মিম, বিশ্বাস করো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।। আমার তোমার সাথে ওভাবে ব্যবহার করা উচিত হয়নি।।

মিমঃ বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ।।

অর্ণবঃ এভাবে কেনো কথা বলছো?? আমি কি তোমার অচেনা কেউ??

মিম: চেনা কেউ ও তো নন।।

অর্ণবঃ আপনি করে কেনো বলছ??

মিমঃ তো কি বলবো??

অর্ণবঃ তুমি কি আমাকে আপনি করে বলো?

মিমঃ না, তুমি করে বলতাম।। আপনি জানেন তুমি করে কাদেরকে বলে??

অর্ণবঃ বলছি তো মিম আমার খুব বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।।

মিমঃ কোনটা ভুল?

অর্ণবঃ সবটাই ভুল।। তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো। তুমি please ফিরে চলো।।

মিমঃ হ্যাঁ সবটাই ভুল।। আমিও তো ভুল তাইনা??

অর্ণবঃ please, মিম আর কষ্ট দিও না।। তুমি জানো এই কটা দিন আমার কতটা কষ্টে কেটেছে।।

মিমঃ আম্মু জসনে আপনি এসেছেন??

অর্ণবঃ please, মিম এভাবে কষ্ট দিও না।।

মিমঃ তার মানে জানে না।।

অর্ণবঃ কথা ঘোরাচ্ছো কেনো??

মিম বললো

তুমি বলে দিতে পারো তা আমায়
চিঠি লিখবো না ঐ ঠিকানায়
আমারো তো মন ভাঙে
চোখে জল আসে
অভিমান আমারও তো হয়।
লক্ষিটি একবার ঘাড় নেড়ে
সম্মতি দাও আমি যাই ছেড়ে।।

নিচে আসুন।। আম্মু আপনাকে দেখে খুব খুশী হবে।। এই কথা বলে আমি চলে নিচে চলে এলাম।।

মিমঃ আম্মু অর্ণব এসেছে।।

আম্মুঃ কই দেখি দেখি।। কতো দিন পর এলো।। কাজের জন্য তো আসতেই পারে না।। আমিও একটু মনমতো জামাইকে আপ্যায়ন করতে পারি না।।

মিমঃ এতো খুশী হওয়ার কি আছে বুঝলাম না।।আমি আসলে তো এতো খুশী হওনি।

এই বলে আমি ঘরে চলে আসলাম।। আম্মু বলছে, মেয়েটা আর বড় হলো না।। আম্মুর কথা শুনে হেসে দিলাম।। আম্মু তো জানে না তার মেয়ে কতো বড় হয়ে গেছে।। তার মেয়ে এখন কষ্ট লুকিয়ে হাসতে শিখে গিয়েছে।। ছাদে অনেক সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম তাই জন্য হয়তো শরীরটা একটু খারাপ লাগছে।। তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।।

ঘুমের মদ্ধে মনে হচ্ছে মুখের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে।। ভাবলাম হয়তো ঘুমের মদ্ধে মনে হচ্ছে, কিন্তু না মুখেট উপর তরল কিছু পড়ছে।। তাড়াতাড়ি করে চোখ খুলে দেখি অর্ণব আমার দিকে ঝুকে তাকিয়ে আছে আর কান্না করছে।। আমি শুয়া থেকে উঠে বসে বললাম

মিমঃ কি হচ্ছে এসব।।

অর্ণবঃ মিম please আমাকে ক্ষমা করে দাও।। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি।। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।।

অর্ণবঃ হাসালেন।। ভালোবাসা মানে কি সেটা জানেন!! ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে জানতে হয়।। ভালোবাসলে সবার আগে বিশ্বাস করতে হয়।। যে ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই সেই ভালোবাসার কোনো মানে নেই, কোনো দাম নেই।। যে ভালোবেসে বিশ্বাস করতে জানে না তার ভালোবাসার কোনো অধিকার নেই।। আপনি আমাকে বিশ্বাসই করতে পারেননি আপনি আমাকে কি ভালোবাসেন।। আমার তো মনে হয় আপনার নিজের ভালোবাসার প্রতিই বিশ্বাস নেই।।

অর্ণবঃ মিম!!

মিমঃ আপনার মনে আছে আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বিয়ে মানে কি।। আমি বলেছিলাম বিয়ে মানে হচ্ছে একটা বন্ধন যেখানে থাকবে দুজন দুজনের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস, নির্ভরশীলতা, আস্থা।। যেখানে একজন আরেকজনকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারবে।। কিন্তু আপনি সেখানে আমাকে বিশ্বসাই করতে পারলেন না।। আপনি একটা ব্যাপার দেখেই ভেবে নিয়েছেন যে আমি খারাপ আমি আপনাকে ধোকা দিয়েছি।। আপনি এতটুকু বিশ্বাস আমার উপর রেখে এটার বিচার করলেন না।। এই বিষয়টা কি আদৌ সত্য নাকি সেটাও জানার চেষ্টা করলেন না।। আপনি এই বিষয়টা নিয়ে ভালোভাবে তদন্ত করলে ঠিকই উত্তর পোয়ে যেতেন আমি কি সত্যি এমন কিছু করেছি কিনা।। কিন্তু আফসোস আপনি কিছুই করেন নি।। শুধু অবিশ্বাস করেছন।।

অর্ণবঃ আমি মানছি আমার তোমাকে ভুল বোঝা উচিত হয়নি অবিশ্বাস করা উচিত হয়নি।। এখানে সব দোষই আমার ছিলো।। আমি আর কখনো তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।। এমন কোনো কাজ করবো না যাতে তুমি কষ্ট পাও।। তবুও আমাকে ক্ষমা করে দাও।। আমি আর পারছি না।। আমি একটুও ভালো নেই।। তোমাকে ছাড়া সত্যিই আমি ভালো নেই।। please তুমি ফিরে চলো।। আমার আর কিছু চাই না।।

কথা বলতে বলতে গা কেমন জানি গুলিয়ে আসছে অনেক বমিও আসছে।। তাই বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।। ইচ্ছামতো বমি করলাম।। অর্ণব আমার অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে আমার।। আমি কিছুই বলতে পারছি না।। মাথা অনেক ঘুরাচ্ছে।। ওয়াশরুম থেকে রুমে যেতে পারছি না পা চলছে না আর।। অর্ণব বুঝতে পেরে ধরে ধরে রুমে নিয়ে বিছানার উপর বসালো।।

অর্ণব মিমের এই অবস্থা দেখে একদম অস্থির হয়ে পড়েছে।। মিমের আম্মুকে ডেকে নিয়ে এসেছে।। অর্ণব বলছে

অর্ণবঃ মা মিমের কি হয়েছে?? ও এমন করছে কেনো?? ওর শরীর কি বেশি খারাপ?? আমি কি ডাক্তার ডেকে আনবো??

আম্মুঃ আরে বাবা থামো থামো।। এতো টেনশন করতে হবে না।। ওর তেমন কিছুই হয়নি।। এই সময়ে একটু এরকম হয়ই।।

অর্ণবঃ এই সময় মানে!!

আম্মুঃ ওমা সে কি!! তুমি জানো না!! আমি তো নানু হতে চলেছি।।

কথাটা বলেই আম্মু চলে গেলো।। অর্ণব প্রথমে খেয়াল করেনি তারপর যখন বুঝতে পারলো ওর খুশি দেখে কে।। মিমের কাছে গিয়ে মিমকে জড়িয়ে ধরলো।। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ জানে তুমি আমাকে কতো বড় খুশির খবর দিলে।। আমাকে আগে বলোনি কেনো!! তুমি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার দিলে।।

মিম অর্ণবকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অর্ণব ছাড়ছে না আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।। এবার মিম একটা ধক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো

মিমঃ এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে!! আমার দম আটকে আসছিলো।।

অর্ণবঃ sorry sorry. আসলে বেশি এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম তাই খেয়াল ছিলো না।।

কিছুক্ষন পরে অর্ণব বললো

অর্ণবঃ আমি কালই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।। রেডি থেকো।।

মিমঃ আমি কোথাও যাবো না।। আমি এখানই থাকবো।।

অর্ণবঃ যাবো না বললো তো হবে না।। আর আমি তোমাকে এই অবস্থায় এখানে রাখতে চাচ্ছি না।। তুমি আমার কাছে থাকবে।। আমি তোমার খেয়াল রাখবো।।

মিমঃ বললাম না যাবো না।।

অর্ণবঃ সময় আসলেই দেখা যাবে কে যাবে আর কে যাবে না

মিমঃ এই অবস্থাতেই তো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন।। তখন তো একবারের জন্য মনেও আসেনি যে মেয়েটা ওভাবে কেনো সেজেছিলো।। কিছু বলার আছে কিনা।।

এ-ই বলে আমি ঘর থেকে চলে আসলাম।। অর্ণবও আমাকে কিছু বলেনি।।

পরদিন সকালে মা এসে বললো

আম্মুঃ তোরা কখন বের হবি মা?? তাহলে সেভাবে সবরকম ব্যবস্থা করতাম আরকি।

মিমঃ কোথায় যাবো? আমি কোথাও যাবো না।

আম্মুঃ শোন মা এভাবে রাগ করে থাকতে নেই।।আমরা যদি চাই তোকে সারা জীবন আমাদের কাছে রেখে দিতে পারি।। সেটা তুই খুব ভালো করে জানিস।। আমাদের তুই ছাড়া আর কে আছে বল?? কিন্তু বিয়ের পর স্বামীর ঘরই তোর আসল ঘর। তুইই বল তুই কি অর্ণবকে ছাড়া এই কটা দিন ভালো ছিলি?

মিমঃ উফফ, মা।। টিপিকাল মায়েদের মতো কথা বলো না তো।।

আমি বারান্দায় এসে দাড়ালাম।। আসলেই তো অর্ণব তো আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।। কজন হাজব্যান্ডই বা এভাবে তার স্ত্রীর কাছে এসে হাত জোর করে।। তাছাড়া বাইরের একটা ছেলের জন্য আমাদের ভেতরের সম্পর্ক কেনো নষ্ট করছি?? ও তো এটাই চায়।। এমন হলে তো ও জিতে গেল।। আমাদের ভালোবাসার মূল্য তাহলে কোথায়।।

ঘরে গিয়ে মাকে বললাম আমি যাবো।

গাড়িতে অর্নবের সাথে কোনো কথা বলিনি।।বাড়িতে পৌছালে আমাকে দেখে মা অনেক খুশী হলেন।। প্রায় কেদেই দিয়েছেন।। মানুষটাকে দেখলে এমনিতেই সম্মান করতে মন চায়।।

বিকালে ছাদে দাড়িয়ে আছি।। দূর থেকে গাড়ির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।। আমাকে মা এখন কোনো কাজই করতে দেন না।। পেছন থেকে এসে হঠাৎ করে অর্ণব আমাকে জড়িয়ে ধরল…….

অর্ণবঃ মিম আমাকে শেষবারের মতো ক্ষমা করা যায় না?

মিমঃ করতে পারি একটা শর্তে।।

অর্ণবঃ কি শর্ত বলো।। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।।

আমি হেসে দিয়ে বললাম

মিমঃ আমাকে নিজ হাতে কফি বানিয়ে খাওয়াতে হবে।।

অর্ণবও হেসে দিয়ে বলল,

অর্ণবঃ তুমিই তো এখনো বাচ্চা কিভাবে যে আমার পুচকুকে বড়ো করবে আল্লাহই জানে।।

মিমঃ এই যে শুনো, পুচকু শুধু তোমার না, আমারও।। বেশি আমার আমার করছো তো দেখবো বাচ্চা হওয়ার পর কি করো।। যাও এখন কফি নয়ে আসো।।
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here