“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৮)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৮)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
অর্ণব এতো জোরে থাপ্পড় মেরেছে যে গাল জ্বলে যাচ্ছে আর বেয়ে শুধু পানি পরছে।। অর্ণবের চোখ লাল আগুন হয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে ও অনেক রেগে আছে।। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না যে কি এমন হলো যে অর্ণব আমার গায়ে হাত তুললো।। যেই মানুষটা নাকি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সে কিভাবে আমার গায়ে হাত তুলতে পারলো!! আমি কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম

মিমঃ কি হয়েছে?? আমাকে মারলে কেনো??

অর্ণবঃ কেনো মেরেছি বুঝতে পারছিস না তো!!

অর্ণবের মুখে তুই ভাষা শুনে আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম।। কি বলছে ও এসব!! তারপর অর্ণব ওর মোবাইল আমার সামনে দিয়ে বললো

অর্ণবঃ দেখ এইগুলা কি?? আর এইগুলা কার ছবি!!

অর্ণবের মোবাইলের ছবিগুলো দেখে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে।। এইগুলা আমি কি দেখলাম।। এটাতো আমাদের এলাকার সেই ছেলেটা আবির যে নাকি আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করতো।। আমাকে পছন্দ করতো আর আমি পাত্তা দিতাম না বলে কতো কি করেছে।। কিন্তু ওর সাথে আমার ছবি এলো কোথায় থেকে।। আমি তো কখনো ওকে দেখতেই পারতাম না তাই এড়িয়ে চলতাম।। তার মানে আবির এসব করেছে ওই এডিট করে ওর সাথে আমার ছবি বানিয়েছে।। আর ছবিগুলা এমন যে, যে কেউ দেখলেই বলবে যে ওর সাথে আমার খুব ক্লোজ ভাবে ছবি তুলা।। আমি অর্ণবকে বললাম

মিমঃ দেখো আমার কথা শুনো…….

আমাকে কোনো কথা না বলতে দিয়ে অর্ণব বললো

অর্ণবঃ কি শুনবো আর!! এইসব দেখার পরও আর কি কিছু শুনার বাকি আছে।। আসলে তোকে বিশ্বাস করাটাই আমার ভুল হয়েছে।। তুই আমাকে ধোকা দিয়েছিস।। আমি আর তোকে এইখানে দেখতে চাই না।। এক্ষুনি বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।।

অর্ণবের কথা শুনে আমার মাথা কাজ করছে না।। ও কিভাবে আমাকে অবিশ্বাস করতে পারলো!! আর কি বললো ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে।। তবে তাই হবে আমি আর থাকবো না এই বাড়িতে।। আমি বললাম

মিমঃ তুমি আমাকে এভাবে ভুল বুঝলে!! আমাকে অবিশ্বাস করতে পারলে!! আমি কোনো দোষ করিনি।। আমি চলে যাচ্ছি এই বাড়ি ছেড়ে।।একদিন তুমি ঠিকই তোমার ভুল বুঝতে পারবে যে আমি কিছু করিনি আর আমার কাছে আসবে।।
কিন্তু সেদিন অনেক দেরি হয়ে যাবে।।

কথাটা বলেই মোবাইল আর পার্স নিয়ে নিচে চলে আসলাম।। আমাকে চলে যেতে দেখে মা আমাকে আটকালো আর জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে কিন্তু আমি কিছুই বলিনি শুধু চোখ বেয়ে পানি পরছে।। মা আমাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করলো আর বললো যে যদি কোনো ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে তাহলে মিটিয়ে নিতে আর অর্ণব যদি কিছু বলে থাকে তাহলে ওকে বুঝাবে কিন্তু মায়ের কোনো কথা না শুনে বেরিয়ে আসি।।

মিম চলে যাওয়ার পর অর্ণব ধাপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে কান্না করতে থাকে।। অর্ণব বলতে থাকে কেনো করলে আমার সাথে এমন আমি তো তোমাকে ভালো বেসেছিলাম তবে কেনো আমাকে এভাবে ঠকালে ধোকা দিলে।।

বাসায় এসে কলিংবেল বাজালে আম্মু দরজা খুলে আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো মুখ করে তাকিয়ে আছে।। আম্মুকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকলে আম্মু জিজ্ঞাসা করলো

আম্মুঃ এতো রাতে বাসায় আসলি কেনো?? কিছু হয়েছে কি আর অর্ণব কোথায় তুই একা কেনো??

মিমঃ কেনো কোনো সমস্যা হচ্ছে এখানে এসেছি বলে!! যদি সমস্যা হয় তাহলে বলে দাও চলে যাচ্ছি।।

আম্মুঃ এসব কি বলছিস সমস্যা হতে যাবে কেনো!! তুই এসেছিস এটাতো খুশির কথা সমস্যা হবে কেনো!! আমি তো বলেছি এতো রাতে তুই একা এলি যে!!

আম্মুকে কিছু বলতে না দিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।। হয়তো আম্মু কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।। বিছানায় বসে ভাবছি অর্ণব কি করে আমাকে অবিশ্বাস করতে পারলো!! আমার কথাটাও শুনলো না।। যতটা না কষ্ট লাগছে তার থেকে বেশি কষ্ট লাগছে এই ভেবে যে অর্ণব আমাকে ভুল বুঝলো।। ভাবতেই চোখ ভরে শুধু পানি আসছে।। কোনো মতেই কান্না আটকাতে পারছি না।।

এবার মিম কান্নায় একদম ভেঙে পরে।। ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না যে অর্ণব ওকে অবিশ্বাস করেছে।। কান্না করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর সাথে দেখা করতে যাই।। আম্মুর কাছে যেতেই আম্মু জিজ্ঞাসা করছে

আম্মুঃ মিম কিছু কি হয়েছে?? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?? আর তুই হঠাৎ করে কিছু না বলে চলে এলি।। অর্ণবের সাথে কি কিছু হয়েছে।।

আম্মুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি অনেক কষ্টে কান্না চেপে রেখে বলি

মিমঃ কিছুই হয়নি।। এমনি এসেছি অনেকদিন হলো আসিনা আর তোমাদের কথা অনেক মনে পড়ছিলো।।

আম্মু যে আমার একটা কথাও বিশ্বাস করেনি সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।। কিন্তু আমি আম্মুকে কিছুই বলবো না।। শুধু শুধু আম্মুকে বলে কি লাভ।।

নাস্তার টেবিলে বসে একসাথে নাস্তা করছিলাম।। আব্বু বললো

আব্বুঃ মিম অনেক দিন পরে যে এলে বাসায় তাও হঠাৎ করে।। বলে আসোনি কেনো?? আর অর্ণব আসেনি কেনো??

মিমঃ তোমাদের কথা অনেক মনে পরছিলো তাই চলে এসেছি আর ওর অনেক কাজের চাপ তাই আসতে পারেনি।।

তাড়াতাড়ি কোনোমতে খাবার শেষ করে সেখান থেকে চলে এলাম অনেক বড় মিথ্যা কথা বলেছি তাই আর বসে থাকতে পারছিলাম না।। কিন্তু কি করবো!! আমার যে আর কিছু করার নেই।। সত্যি কথাটা বললে সবাই অর্ণবকে ভুল বুঝতো আর আমাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতো।। কিন্তু আমি তো যাবো না।।

.

.

হাজার রাগ দেখালেও আমি মনে মনে ভাবতাম অর্ণব নিজের ভুল বুঝতে পেরে ঠিকই আমার কাছে আসবে।। কিন্তু না অর্ণব আসে নি।। পুরো পাঁচ পাঁচটা দিন পার হয়ে গিয়েছে অর্ণব আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত দেয় নি।।

সত্যিই মানুষ বড় অদ্ভুত।। যাকে এতো দিন ধরে দেখছে, যাকে এত ভালোবাসে তাকে অবিশ্বাস করতে দু সেকেন্ডও লাগে না।। অথচ অচেনা অজানা একটা মানুষকে অবলীলায় বিশ্বাস করে ফেলে।।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আমার গা গুলোতে লাগলো। আমি দৌড়ে ওয়াশরুমে গেলাম।। আম্মুও সাথে সাথে আসলো।। আমি অসুস্থ দেখে আম্মু খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।। ডক্টর ডাকতে চাইলে আমি বললাম না ডক্টর ডাকার দরকার নেই।। তুমি নানু হতে চলেছো।।

এই কথা শুনে আম্মু খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছে না।। আমি তাদের একমাত্র মেয়ে খুব আদরের।। তাই জন্য হয়তো খুশিটা একটু বেশী।।আম্মু আব্বু কে বলে সাথে সাথে মিষ্টি আনতে পাঠালো।।

অন্যদিকে অর্ণবও খুব অপরাধবোধে ভুগছে।। ও ভাবছে সেদিন কি করে ও মিমের গায়ে অমন হাত তুললো!! আর কি করে মিম কে চলে যেতে বলতে পারলো!! এই কদিনে আর কিছু না হলেও অর্ণব এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে যে মিম ওকে কতটা জড়িয়ে রেখেছে।। প্রতিটা মুহুর্তে ও মিমের না থাকাটা অনুভব করতে পারছে।। ও খুব একা হয়ে গেছে।। ওর মাও ওর সাথে ঠিকভাবে কথা বলছে না।।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন দশটা বেজে গেছে অর্ণব খেয়ালই করে নি।। এর মধ্যে একবার ওকে খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে।।

অর্ণব নিচে গিয়ে দেখে সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।। এর আগে এমন কখনো হয় নি যে অর্নব খায় নি অথচ সবাই খেয়ে নিয়েছে।। চেয়ের টেনে বসতে বসতে মাকে কিছু একটা বলতে যাবে কিন্তু কিছু না শুনেই অর্নবের মা উঠে চলে গেল।।

এখন রাত প্রায় দেড়টা।। অর্ণব বারান্দায় বসে আছে।। রাস্তার হালকা আলো সময়টাকে আরো বিষাদময় করে তুলেছে।। অর্ণব ভাবছে আগের কথাগুলো………

“”মিম, আমাকে ছেড়ে যাবে না তো কোনোদিন? ধরে রাখবে যতদিন।।
আর যদি ছেড়ে দেই??
ভালোবাসবো দূর থকেই।।
আচ্ছা তুমি এমন কেনো?
জানি না।। আমি আমার মতো।।
আকড়ে রাখতে হয়, ভালোবাসলে।।
ধরে রেখে মানুষ কবেই বা ভালোবাসা পেয়েছে।।
তুমি অন্যরকম ভারি।।
আমি ছেড়ে দেওয়াতে বিশ্বাসী।।””

.

.

আজ পনেরো দিন হলো ওই বাড়ি থেকে চলে এসেছি।। এই পনেরো দিনে প্রথম এক সপ্তাহ অর্ণব আমাকে ফোন দেয়নি কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।। এর পরের সপ্তাহে অর্ণব আমাকে ফোন দিয়েছে কিন্তু আমি ধরিনি লাগাতার ফোন দিতে থাকলে ওর নাম্বারটা ব্লক মেরে রেখে দেই।। আম্মুকে অনেকবার ফোন দিয়েছে আমার সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু আমি বলিনি।। তারপর থেকে আম্মুর কাছ থেকে আমার খবর নিয়েছে।। আম্মুকে আমার ব্যাপারটা অর্ণবকে জানাতে মানা করে দিয়েছি তাই আম্মু বলেনি।। মা আমাকে প্রত্যেকদিন ফোন দিয়ে আমার খবর নেয়, ফিরে যাওয়ার জন্য বলে কিন্তু আমি যাবো না বলে দিয়েছি।।

বিকেলে ছাদে দাড়িয়ে আছি।। সময়টা খুব বিরক্ত লাগছে।। হালকা বাতাসে খোলা চুলগুলো উড়ছে।। সময়টা একেবারে খারাপ লাগার মতো না কিন্তু আমার কাছে একদম বিষাদময়।। আজকাল কিছুই ভালো লাগে না।। আমি জানি যে আমি এখন একা না।। কিন্তু………..

কাধে কারো হাত পড়তেই আমি চমকে উঠলাম।। স্পর্শটা খুব চেনা।। আমি জানি এটা কার স্পর্শ।।
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here