“অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৫)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৫)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
অর্ণব বললো

অর্ণবঃ ছিলাম এদিকেই।। কেনো কোনো সমস্যা!! আমাকে খুঁজছিলে কেনো!!

নিসাঃ কেনো তোমাকে খুঁজতে গেলে কি কোনো কারণ থাকা লাগবে নাকি!! আমি কি তোমাকে খুঁজতে পারিনা!! আর তুমি আমার সাথে দেখা করোনি কেনো!! আমি সেই কখন এসেছিল।। তুমি তো আমার কাছে একবারো এলেনা!!

অর্ণবঃ আমি তো তোমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম।। সামনে থাকলে তো আর ভালো মতো দেখতে পারতাম না।। সামনে থাকলে তো নিজেকে কন্ট্রোলও করতে পারতাম না আর তোমার থেকে দূরে সরে থাকতে পারতাম না।। যদি তুমি বুঝতে তোমাকে আমি কতোটা চাই………..যদি তুমি জানতে তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি।। (মনে মনে)

নিসাঃ কি এতো ভাবছো সেই কখন থেকে!! আমি যে তোমার সামনে আছি সেটার কোনো গুরুত্বই নেই তোমার।। ব্যাপারটা কি বলো তো!!

অর্ণবঃ না কিছু না।।

নিসাঃ আমাকে কেমন লাগছে সেটাও বললে না………….আমি এতো কষ্ট করে শাড়ি পরে এসেছি।।

অর্ণবঃ হুম সুন্দর লাগছে।।

নিসাঃ শুধু সুন্দর বললো তাও আবার এমন শুকনো মুখ করে।। (মনে মনে)

অর্ণবঃ তুমি থাকো আমি আসছি।।

অর্ণব চলে গেলো।। এভাবে চলে গেলো কেনো!! আজব তো!! আজকে এমন করছে কেনো!! এইরকম অদ্ভুত ব্যবহার করছে কেনো!!

হঠাৎ করে ফারিয়া এসে বললো

ফারিয়াঃ দোস্ত তুই এখানে কি করছিস!! তোকে আমি খুঁজছি।।

নিসাঃ দেখনা অর্ণব কেমন করছে!! আজকে কলেজে আসার পর থেকে আমার কাছে একবারো আসেনি।। খুঁজেও পাচ্ছিলাম না।। এখন যখন পেলাম ও ভালো করে কথা না বলেই চললে গেলো।।

ফারিয়াঃ দোস্ত একটা কথা বলবো কিছু মনে করিস না।। আমার কেনো যেনো মনে হয় ভাইয়া তোকে পছন্দ করে।।

নিসাঃ কি যাতা বলছিস!! মাথা ঠিক আছে তোর!! ও কেনো আমাকে পছন্দ করতে যাবে!! আমরা অনেক ভালো ফ্রেন্ড……. that’s it.

ফারিয়াঃ আমি বললেই দোষ।। আমি সিউর ভাইয়া তোকে পছন্দ করে।। আর তুই একটা বলদ তাই এখনো বুঝিস না।। আর নইতো তুই ভাব কলেজে আরো কতো মেয়ে আছে আর ভাইয়ার জন্য কতো মেয়ে পাগল ভাইয়া ওদেরকে পাত্তা দেয়না অথচ তোর সাথে এতো ভালো ব্যবহার করে তোকে এতো কেয়ার করে তোকে ফ্রেন্ড বানিয়েছে।। আর তুই কিনা এখনো বুঝিস না।।

নিসাঃ বাদদে তো।।

ফারিয়াঃ তুই আমার কথা মিলিয়ে নিস।। আমার কথাই সত্যি হবে।।

কলেজে এখন সব মেয়েই নিসাকে দেখে হিংসা করে।। নিসাকে অর্ণবের সাথে দেখলে সবার হিংসা হয়।। সবাই বলাবলি করে—- ” এই মেয়ের মদ্ধে এমন কি আছে যে আমাদের পাত্তা না দিয়ে এই মেয়ের সাথে অর্ণব এইভাবে মিশে চলাফেরা করে।।”

এদিকে অর্ণব ফারহানের কাছে গিয়ে ফারহানকে বলছে

অর্ণবঃ দোস্ত আমি আর এইভাবে নিসার থেকে দূরে থাকতে পারছিনা।। আমি যে এতো কিছু করি ওর জন্য ও কি তাও বুঝেনা!! ওকে আমি কবে বলতে পারবো যে আমি ওকে ভালোবাসি।।

ফারহানঃ দোস্ত আমি বলি কি যে আজকেই তুই নিসাকে বলে দে যে তুই ওকে ভালোবাসিস।। এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ।।

অর্ণবঃ নিসা রাজি হবে তো!! ও আমাকে ভুল বুঝবেনা তো আবার!!

ফারহানঃ তুই বলেই তো দেখ।। না বললে বুঝবি কি করে।। আর আমি সব ব্যবস্থা করেছি।। তুই চিন্তা করিস না।।কেমন!!

অর্ণবঃ ঠিক আছে।।

কিছুক্ষণ পরে ফারহান ফারিয়ার কাছে এসে বললো

ফারহানঃ ফারিয়া এইদিকে আসো তো!!

ফারিয়াঃ জ্বী ভাইয়া বলেন।।

ফারহানঃ নিসাকে গিয়ে বলো অর্ণব ওকে ডাকছে।। যেখানে ওকে সরি বলার জন্য ডেকেছিলো সেখানে।।

ফারিয়াঃ ঠিক আছে।।

ফারিয়া নিসার কাছে গিয়ে বললো

ফারিয়াঃ নিসা অর্ণব ভাইয়া তোকে ডাকছে।।

নিসাঃ আমাকে ডাকছে!! কোথায়!!

ফারিয়াঃ যেখানে তোকে সরি বলার জন্য ডেকেছিলো ওইখানে।।

নিসাঃ ওই জায়গায় কেনো ডাকলো!! এখানে কি কথা বলতে পারতো না!! আর কি এমন কথা বলবে যে ওইখানে যেতে বললো!!

ফারিয়াঃ আমি কিভাবে বলবো!! ডেকেছে হয়তো কোনো কাজে।। গিয়েই দেখ কি বলে।। গেলেই তো বুঝতে পারবি।।

নিসাঃ আচ্ছা তাহলে আমি যাচ্ছি।।

সেই জায়গায় গিয়ে দেখি অর্ণব দাড়িয়ে আছে উল্টাদিকে মুখ করে।। আমি গিয়ে পিছন থেকে ডাক দিলে সে আমার সামনে ফিরে।। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কিছু একটা নিয়ে খুবই টেনশনে আছে।। আমি বললাম

নিসাঃ আমাকে ডেকেছিলে??

অর্ণবঃ হুম।।

নিসাঃ এখানে কেনো ডেকেছো!! কোনো কাজ আছে!! আর তোমাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেনো!! কিছু হয়েছে!!

অর্ণবঃ দেখো তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।।

নিসাঃ হ্যা বলো।।

অর্ণবঃ কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।।

নিসাঃ কি এমন কথা!! তুমি আগে শান্ত হও তারপর বলো।।

অর্ণব একটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলো

অর্ণবঃ দেখো নিসা তোমাকে আমি ভালোবাসি।। তোমাকে যেদিন আমি কলেজে প্রথম দেখি সেদিনই আমি তোমাকে পছন্দ করে ফেলি আর আস্তে আস্তে সেটা ভালোবাসায় পরিণত হয়।। আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।। আমি তোমাকে এতোটাই বেশি ভালোবাসি যেটা আমি কখনো কাউকে বলে বুঝাতে পারবো না।। তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা।। আমি এর আগে কাউকে কখনো ভালবাসিনি।। তোমাকে প্রথমবার দেখে যেমনটা ফিল হয়েছিলো বিশ্বাস করো এর আগে কখনো কাউকে দেখে এমনটা ফিল হয়নি।। আজ পর্যন্ত আমি কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকাইনি।। তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা।। আমি জানিনা তুমি আমার সম্পর্কে কি ভাবো।। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বলতে চাইনি।। আমার কথায় যদি তুমি কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে I’m sorry.

নিসাঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো!! তুমি আমার সম্পর্কে এসব ভাবো আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।। আমি তো জানতাম তুমি আমার ভালো ফ্রেন্ড।। আর আমি তোমাকে একজন ফ্রেন্ড ছাড়া কখনোই অন্য কিছু ভাবিনি।। আমি তোমার সাথে আর কখনো কোনো কথা বলতে চাইনা।। আর তোমার সামনেও আসতে চাইনা।।

কথাটা বলেই নিসা চলে যাচ্ছে আর অর্ণব হা করে তাকিয়ে আছে।। কিছুক্ষণ পরে অর্ণব নিসাকে ডাকতে থাকে কিন্তু নিসা আর পিছনে না তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলো।।

অর্ণব অনেক্ষন ধরে সেখানেই দাড়িয়ে আছে।। আর ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।। নিসা ওকে ভুল বুঝে চলে গেলো।। ওর ভালোবাসাটা বুঝলো না।।

এদিকে নিসা ফারিয়ার কাছে গিয়ে ফারিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।। ফারিয়ে নিসাকে জিজ্ঞাসা করলো

ফারিয়াঃ কি হয়েছে!! কান্না করছিস কেনো!! অার অর্ণব ভাইয়া ডেকে তোকে কি বললো!!

নিসাঃ অর্ণব আমাকে বলেছে ও নাকি আমাকে ভালোবাসে।।

ফারিয়াঃ সত্যি!! ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।। এটাতো ভালো কথা।। তো তুই কান্না করছিস কেনো!!

নিসাঃ তুই এটাকে ভালো কথা বলছিস!! আমি ওকে এতো ভালো ফ্রেন্ড ভাবতাম আর ও কিনা আমাকে অন্য নজরে দেখে।।

ফারিয়াঃ দেখেছিস আমার কথাই সত্যি হলো।।আমি তোকে বলেছিলাম না ভাইয়া তোকে পছন্দ করে আর আমার কথা মিলিয়ে নিস।। এখন মিলাতে পারছিস তো আমার কথা।।

নিসাঃ তুই চুপ থাকবি??

নিসা কান্নাকাটি করে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।। নিসা ফ্রেশ হচ্ছিলো এমন সময় মনে হলো কেউ ওর পিছিনে আছে আর ওকে দেখছে।। নিসা পিছনে তাকিয়ে দেখে অর্ণব দাড়িয়ে আছে।। নিসা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো

নিসাঃ তুমি এখানে!! তুমি এখানে কি করছো!!

নিসা রেগে গিয়ে চলে যেতে নিলে অর্ণব ওর হাত চেপে ধরে।। নিসা পিছনের দিকে তাকিয়ে বললো

নিসাঃ আমার হাত ধরেছো কেনো!!

অর্ণব কথার উত্তর না দিয়ে একটানে নিসাকে ওর কাছে নিয়ে এলো। নিসা ওর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।। অর্ণব নিসাকে এতো কাছে নিয়ে এসেছে যে অর্ণবের নিঃশ্বাস নিসার মুখে পরছে।। অর্ণব দুই হাত দিয়ে নিসার গাল ধরে নিসার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো…….. নিসা হালকা কেপে উঠলো।। তারপর অর্ণব বললো

অর্ণবঃ দেখো নিসা আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসি।।

নিসা অর্ণবের থেকে একটু ছাড়া পাওয়া মাত্রই অর্ণবকে এক ধাক্কা মেরে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েই দৌড় দিলো।। আর অর্ণব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো পালিয়ে যাবে কোথায়……… আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।।
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here