“অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৭)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৭)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
অর্ণব বললো

অর্ণবঃ ওই ছেলের সাথে তো খুব হাসি খুশি ভাবে কথা বলছিলে।। কই আমার সাথে তো বলো না!! আর তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেনো??

নিসাঃ আমি কার সাথে কিভাবে কথা বলবো সেটা কি আপনি আমাকে ঠিক করে দিবেন নাকি!! আমার যার সাথে যেভাবে ইচ্ছা আমি কথা বলবো।। তাতে আপনার কোনো সমস্যা আছে?? আর আপনাকে আপনি করে বলবো নাতো কি বলবো!! আপনি আমার কে হোন যে তুমি করে বলবো!!

অর্ণবঃ তুমি আমার সাথে এমন করছো কেনো??

নিসাঃ আর নয়তো কি করবো!! আপনি যা শুরু করেছেন!! এখন তো আপনাকে দেখে আমার ভয় লাগছে।। কখন যে আমাকে মেরে বসেন তার ঠিক নেই!!

অর্ণবঃ আমি তোমাকে মারতে যাবো কেনো!! আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।।

নিসাঃ এই বুঝি আপনার ভালোবাসার নমুনা!! মানুষকে মেরে ভালোবাসা বুঝাতে এসেছেন!! রাখেন আপনার ভালোবাসা।।

অর্ণবঃ নিসা প্লিজ এমন করো না।। আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে রেখো না আর।। আমি আর থাকতে পারছিনা তোমার থেকে দূরে।। কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।।

নিসাঃ হয়েছে আর ন্যাকামি করতে হবেনা।।

কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে আসছি আর মুখ টিপে হাসছি।। পিছনে ফিরে আর তাকালাম না।। তাকালে হয়তো দেখতে পেতাম বেচারা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।। লোকটা আসলেই আমাকে ভালোবাসে।। বাসুক না ভালো না করেছে কে!! আমিও আরেকটু মজা নেই।। বেটাকে ঠিক মতো জব্দ করি।।

ফারিয়া আর আমি বসে আছি।। ফারিয়া বললো

ফারিয়াঃ দোস্ত তুই কি রাজি হবি না!! অর্ণব ভাইয়া আর কি করলে তুই বুঝবি যে উনি তোকে ভালোবাসে!! আর কি করলে তুই রাজি হবি!!

নিসাঃ আরে কে বলেছে আমি রাজি হবো না!! আমি বুঝেছি যে ও আমাকে আসলেই ভালোবাসে।। আমি তো পরিক্ষা করছিলাম ও কি আসলেই আমাকে ভালোবাসে কিনা!! আর মজা নিচ্ছিলাম।। বেচারার আসলেই মন খারাপ।। সময় হলে বলে দিবো চিন্তা করিস না।। আমি আবার এতোটাও খারাপ না আর পাষাণও না।।

ফারিয়াঃ তুই পারিসও বটে।। এই ক্ষেত্রেও তোকে মজা করতে হবে!! আজব মেয়ে!!

নিসাঃ তুই তো জানিসই আমি কেমন টাইপের।। মজা করতে আমার অনেক ভালো লাগে।। আর এই ক্ষেত্রে মজা না নিলে তো এতো বড় মজাটাই মিস করতাম।।

ফারিয়াঃ হয়েছে আর মজা করতে হবে না।। এইবার চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।।

নিসাঃ চল যাই।।

ফারিয়া আজকে হঠাৎ করে বলছে

ফারিয়াঃ নিসা চল তো একটা জায়গায় যাবো।।

নিসাঃ কোথায় যাবি হঠাৎ করে!!

ফারিয়াঃ আরে চলনা।।

নিসাঃ না আমি যাবো না।। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে এসে বলে এক জায়গায় যাবো!! না বললে যাবো না।।

ফারিয়াঃ এই তুই সবসময় এতো জিদ করিস কেনো বলতো!! যেতে বলেছি যখন যাবি।। এতো প্রশ্ন করছিস কেনো!!

নিসাঃ তোর যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তুই যা।। আমার ইচ্ছে নেই যাওয়ার।।

ফারিয়াঃ আরে গেলেই দেখতে পাবি।। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।।

নিসাঃ কি!! সারপ্রাইজ!! আমার জন্য!!

ফারিয়াঃ হ্যা এবার চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।।

নিসাঃ হুম।। চল গিয়েই দেখি কি সারপ্রাইজ আছে আমার জন্য।।

ফারিয়া ক্যাম্পাসের একটা ফাকা বিল্ডিং এর কাছে নিয়ে এলো।। বিল্ডিং এর একটা ফাকা রুমে নিয়ে এলো।। রুমে ঢুকেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো।। চোখ বড় বড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।। আমি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা।। রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো।। বেলুন দিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো রুমটা।। আর সেখানে দাড়িয়ে আছে অর্ণব।। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে এইসব অর্ণবের কাজ।। না চাইতেও আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।। অর্ণব আমাকে দেখেই একগাল হাসি দিলো।। ভাবছি লোকটা আসলেই একটা পাগল।। ফারহান ভাইয়াও আছে এখানে।। বুঝলাম যে এটা ওদের সবার প্ল্যান ছিলো।। আমাকে না জানিয়ে ফারিয়াও এসব করেছে।। হায়রে মানুষ!! বলে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললাম।।

সামনে এগিয়ে গিয়ে অর্ণবের সামনে দাড়ালে অর্ণব বলতে থাকে——

“দেখো নিসা আমি জানিনা তুমি আমার সম্পর্কে কি ভাবো।। কিন্তু আমি তোমার সম্পর্কে অনেক কিছুই ভাবি।। তুমি আমার প্রতিটা মুহূর্তের ভাবনায় আছো।। আমি প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাই করতে পারিনা।। তুমি আমার ভাবনায় মিশে আছো।। যেটাকে আমি ইচ্ছা করলেও ভুলতে পারবো না।। আমি তোমাকে কখনো কোনো পরিস্থিতিতে ছেড়ে যাবো না।। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।। আর যাই করি না কেনো তোমাকে আমি কখনো ছাড়বো না।। তোমার পাশে সারাজীবন থাকতে চাই।। নিঃশব্দে সারাজীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই।। তোমার হাতে হাত রেখে চলতে চাই তোমার সাথে।।আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি।। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। তোমার সাথে আমি প্রতিটা মুহূর্ত কাটাতে চাই।। দিবে আমাকে থাকতে তোমার পাশে……. কাটাতে দিবে তোমার সাথে প্রতিটা মুহূর্ত……. ধরতে দিবে তোমার হাত……….তোমার হাতে হাত রেখে চলতে দিবে তোমার সাথে!!!!!!!!!!!”

অর্ণবের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে।। তবে এটা খুশির পানি কোনো কষ্টের পানি নয়।। এই মানুষটা এতোটা ভালোবাসে আমাকে!! অদ্ভুত লাগছে!!
ফারিয়ার দিকে তাকালে ফারিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলছে…… আমাকে হ্যা বলতে বলছে।।
আজকে অনেক খুশি লাগছে অর্ণবকে দেখে।।

আমি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললে অর্ণব হাটু গেড়ে বসে আমার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল দিয়ে বললো

—- “” I love you…….I love you so much……Will you accept my proposal and
flower??? “”

আমি ওর হাতের ফুলগুলো নিয়ে বললাম

—- “” Yes……..I love you too””

অর্ণব উঠে দাড়িয়ে আমার হাত ধরে বলছে—- “Thank you”. আমি আর অর্ণব দুজনেই দিজনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।। আজকে অর্ণবকে দেখতে অনেক ভালো লাগছে শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করছে।।

একটু পর ফারহান ভাইয়া বলে উঠলো

ফারহানঃ উহু উহু!! আমরা যে এখানে আছি সেটার কি কোনো খবর আছে!! তোদের কাহিনি শেষ হলে আর দেখাদেখি শেষ হলে এবার আমাদের সাথেও একটু কথা বল।।

অর্ণবঃ শালা একটু কথাও বলতে দিস না।। কেনো তোর হিংসা হচ্ছে আমাদের দেখে নাকি তোর কপালে এখনো কেউ জুটলো না তাই দেখে দুঃখ পাচ্ছিস!! চিন্তা করিস না তুইও একটা না একটা পেয়ে যাবি।। এখন আর কাঁদিস না।।

ফারহানঃ কার সামনে কি বলছিস খেয়াল আছে!! তুই ভাবির সামনে আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারিস না।।

ওদের কথা শুনে আমি আর ফারিয়া হেসে দিলাম।।

আজ এক মাস ঘুরার পর নিসা রাজি হয়েছে।। অর্ণবের যেনে আজ খুশির বাধ মানছে না।। নিসাও অনেক খুশি আজকে।। আফটার অল এমন একটা ছেলেকে পেলে কে না খুশি হবে।।
.
.
.
.
.
.
.

আমার আর অর্ণবের সম্পর্কটা ভালোই চলছে।। ওর সাথে প্রতিদিন দেখা করি ঘুরাঘুরি করি।। রাত জেগে মোবাইলে কথা বলি।। অর্ণব আমার অনেক কেয়ার করে।। প্রতি মুহূর্তের খোঁজখবর নেয় কখন কি করছি ঠিক মতো খেয়েছি কিনা সব কিছুরই খেয়াল রাখে।। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যাই ওর এতো কেয়ারে আবার ভালোও
লাগে।। এখন পর্যন্ত ও আমাকে একটুও কষ্ট দেয়নি।। আমার সব আবদার পূরণ করেছে।। আমার সব পাগলামিতে সায় দিয়েছে কখনো বিরক্ত হয়নি।।
·
·
·
চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here