“অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৮)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৮)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
কলেজ শেষ হওয়ার পর বের হয়ে দেখি অর্ণব বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।। আমি তো দেখে খুশিতে আত্মহারা।। কারণ আমার বাইকে ঘুরতে অনেক ভালো লাগে।। আর এই কথা একদিন আমি অর্ণবকেও বলেছিলাম।। আর এইজন্য অর্ণব আমার শখ পূরণ করতে বাইক নিয়ে এসেছে।। অনেক অবাকও লাগছে।। এই মানুষটার কাছে আমি কি না পাইনি।। যা চেয়েছি সব দিয়েছে কিছু জিনিস বলার আগেও এনে দিয়েছে।। আমি শুধু আমার ইচ্ছার কথা বলেছি তাতেই ও বাইক নিয়ে এসেছে।। মানুষটা আসলেই একটা পাগল।।

সামনে গিয়ে বললাম

নিসাঃ বাইক নিয়ে এসেছো কেনো??

অর্ণবঃ তুমি না বলেছিলে বাইকে ঘুরতে তোমার অনেক ভালো লাগে।।

নিসাঃ আমি তো এমনি বলেছিলাম তাই বলে বাইক নিয়ে আসবে!!

অর্ণবঃ কেনো তুমি খুশি হওনি!! আমি তো ভাবলাম তুমি খুশি হবে!!

নিসাঃ হুম।।

অর্ণবঃ তাহলে আর কি আমি চলে যাই।।

আমি ফিক করে হেসে দিলাম।। আর অর্ণব অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।। আমি বললাম

নিসাঃ আরে আমি তো মজা করছিলাম।। তুমি তো সিরিয়াস হয়ে গেছো।। আমি অনেক খুশি হয়েছি।। তুমি আমার একটু বলাতে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে চলে এসেছো।। Thank you. চলো যাই।।

অর্ণবঃ চলো।।

অর্ণব আজকে আমাকে নিয়ে অনেক ঘুরছে।। আমরা অনেক মজাও করছি।।
.
.
.
.
.
.
.
.

বর্তমানে…………

সেদিন আমরা অনেক ঘুরেছি।। অনেক মজাও করেছিলাম।। আমি আর নিসা বাইক নিয়ে ঘুরছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে একটা এক্সিডেন্ট করলাম।।

কথাটা বলেই অর্ণব কান্না শুরু করলো।। উনি এমনভাবে কান্না করছেন যে উনাকে দেখে আমি পুরো অবাক হয়ে যাচ্ছি।। আমি বললাম

মিমঃ কি হয়েছে!! আপনি কান্না করছেন কেনো??

অর্ণবঃ…………..

মিমঃ এরপর কি হয়েছে??

অর্ণব বলা শুরু করলো

আমি আর নিসা বাইক নিয়ে ঘুরছিলাম।। হঠাৎ করে একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে এক্সিডেন্ট করলাম।। আমি আর নিসা বাইক থেকে পরে যাই।। আমি পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছিলাম আর মাথায়ও ব্যথা পেয়েছিলাম পাশে তাকিয়ে দেখি নিসা রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।। ওর এই অবস্থা দেখে আমার মাথা কাজ করছিলো না আর আমার মাথা ঘুরছিলো।। ওর অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো।। আশেপাশের মানুষ জড়ো হওয়া শুরু করে।। আমাদেরকে একটা হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়।। হসপিটালে আসার সাথে সাথেই নিসাকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়।। আমি পায়ে আর মাথায় ব্যাথা পাওয়ায় আমাকেও চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।। আমার পা আর মাথা ব্যান্ডেজ করছিলো একটা নার্স কিন্তু আমার মাথায় শুধু নিসার চিন্তা ঘুরছিলো।। ও কি অবস্থায় আছে কেমন আছে।। আমি বার বার বলছিলাম নার্সকে তাড়াতাড়ি করতে।। আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছিলো।। আমার পা আর মাথা ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে আমি নার্সকে বলি যে আমার সাথে যেই মেয়েটি এসেছিলো সে কোথায় আছে আমি তার কাছে যাবো।। নার্সটা আমাকে প্রথমে যেতে বাধা দিচ্ছিলো বলছিলো যে আপনার পায়ের অবস্থা এখন ভালো নয়।। আপনি হাটতে পারবেন না আর আপনি হাটলে আপনার পায়ের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।। কিন্তু আমি জোর করেই যাচ্ছিলাম বলছিলাম যে আপনি আমাকে বলেন ও কোথায় আছে আমি যেতে পারবো আমার কিছু হবে না।। আমার এই অবস্থার জন্য প্রথমে যেতে দিতে না চাইলেও পরে আমার অবস্থা দেখে যেতে দিতে রাজি হয়।। নার্সটা আমাকে ধরে ধরে নিয়ে আসে।। এসে দেখি নিসা অপারেশন থিয়েটারে আছে।। আমি নার্সটাকে জিজ্ঞাসা করলাম নিসার কি হয়েছে উনি বললো উনার অপারেশন চলছে।।রোগীর অবস্থা ক্রিটিকাল।। উনি মাথায় ব্যাথা পাওয়াতে অনেক ব্লিডিং হয়েছে আর অবস্থা খুবই খারাপ।। কথাটা বলে নার্সটা চলে গেলো।। আর আমি পাশে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে পরলাম।। আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছিলো আর হাত পা অনেক কাঁপছিলো।। একটু পরে দেখি নিসার বাবা মা আর আমার বাবা মা আসছে।। আমাকে দেখে বাবা মা আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করছিলো কি হয়েছে কিভাবে এক্সিডেন্ট করলাম আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না।। নিসার বাবা মা অনেক কান্না করছিলো।।

অনেক্ষন হয়ে গিয়েছে কিন্তু অপারেশন থিয়েটার থেকে কেউ বের হচ্ছে না।। আমার যেনো আর সময় পার হচ্ছিলো না।। প্রতিটা সেকেন্ড মনে হচ্ছিলো এক একটা ঘন্টা।।

অনেক্ষন পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাক্তার বের হলে আমি দৌড়িয়ে যাই উনার কাছে হাটতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু তাও গিয়েছি।। ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলাম নিসা কেমন আছে ওর এখন কি অবস্থা।। ডাক্তার বললো দেখুন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু পেশেন্টের অবস্থা ভালো নয় উনার অনেক ব্লিডিং হয়েছে আমরা উনার লাইফের কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছিনা।। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন এখন উনার হাতেই সবকিছু আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।। ডাক্তারের কথা শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো অবশ হয়ে আসছিলো।। গলা ভারি হয়ে আসছিলো কিন্তু তাও কষ্ট করে বললাম আমি কি এখন দেখা করতে পারি।। উনি বললেন রোগী এখন আইসিউতে আছে উনার সাথে দেখা করা যাবে না।। আমি অনেক রিকুয়েস্ট করি নিসার সাথে একবার দেখা করতে দেয়ার জন্য আর কান্না করতে থাকি।। ডাক্তার আমার অবস্থা দেখে আমাকে ভেতরে যাওয়ার পারমিশন দেন আর বলেন বেশিক্ষণ না থাকতে।। আমি ডাক্তারে কথা শুনেই এক দৌড়ে ভিতরে গেলাম।। ভিতরে যেতেই দেখি নিসা বেডে শুয়ে আছে ওর জ্ঞান নেই।। আমি ওর পাশে গিয়ে বসি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।। নিসার হাতটা আমার হাতে নিয়ে কান্না করতে লাগলাম।। ভাবছিলাম মেয়েটা কতোটা কষ্টে আছে।। অনেক্ষন ধরে বসে আছি।। একটা নার্স এসে আমাকে বাহিরে চলে যেতে বললো।। কিন্তু আমি অনেক রিকুয়েস্ট করে রয়ে গেলাম।। একবার বাহিরে বের হলে নিসার বাবা মা আমাকে ধরে কান্না করতে লাগলো।। আমি উনাদেরকে শান্তনা দিয়ে বললাম যে কিছু হবে না নিসার।।

রাতে নিসার সাথেই বসে ছিলাম।। নিসার তখনো জ্ঞান ফিরেনি।। নিসার পাশে বসেই সারা রাত কাটিয়ে দেই কিন্তু ওর কোনো উন্নতি হচ্ছিলো না।।

সকালে হঠাৎ করে দেখলাম নিসার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।। আমি তাড়াতাড়ি করে ডাক্তার আর নার্সকে ডাকতে থাকি।। ওরা এসে নিসাকে দেখতে থাকে আমি পাশেই দাড়িয়ে ছিলাম।। একটু পরে ডাক্তার বললো— “she is no more”.

কথাটা শুনেই আমি ধপ করে বসে পরি।। আমি ভাবতেও পারছিলাম না যে নিসা আর নেই আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছিলো।। নিসার কাছে গিয়ে লাস্ট বার ওর দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।।
.
.
.
.
.

সেটাই ছিলো আমার আর নিসার কাটানো শেষ মুহূর্ত।। কখনো ভাবতেও পারিনি যে নিসা আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যাবে।। আমাকে এভাবে একা করে চলে যাবে।। আমি আজও ওকে ভুলতে পারিনি।। জানিনা কখনো ভুলতে পারবো কিনা।। ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমি ভুলতে পারবো না।। ও আমার প্রথম ভালোবাসা ছিলো।।

কথাগুলো বলে অর্ণব কান্না করতে থাকে।। আমিও আর বাধা দিলাম না।। উনি উনার ইচ্ছা মতো কান্না করুক।। হয়তো কান্না করলে উনার ভালো লাগবে।। উনার সাথে সাথে আমার চোখ দিয়েও পানি পরছে।। উনার কথাগুলো শুনে অনেক কষ্ট লাগছে আর নিসার জন্য খারপও লাগছে।। আমি কখনো কোনো ছেলেকে এভাবে কান্না করতে দেখিনি।। ছেলেরা নাকি সহজে কান্না করে না।। উনার কান্না দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি অনেক কষ্টে আছেন।। ভাবছি যে উনি আসলেই নিসাকে অনেক ভালোবাসেন।। কেননা এতোটা ভালো না বাসলে কেউ এমন করেনা।। এখন আমার কাছে সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার।। এই কারনেই উনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন না বলেছিলেন।। এজন্যই উনি আমার থেকে দূরে থাকেন।। কিন্তু নিসা তো মারা গিয়েছে তবুও উনি নিসার স্মৃতি আকরে ধরে বসে আছেন।। উনার তো বুঝা উচিত যে নিসা মারা গিয়েছে ও আর কখনোই ফিরে আসবেনা।। যে একবার চলে যায় সে আর কখনো ফিরে আসেনা।।

অনেক্ষন ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।। উনিও চুপ করে আছেন।। দুজনের মাঝেই নিরবতা কাজ করছে।। অনেক্ষন পরে আমি বললাম

মিমঃ আচ্ছা শুনুন।।

অর্ণবঃ হ্যা বলো।।

মিমঃ আমি জানি আপনি নিসাকে অনেক ভালোবাসেন।। আপনি নিসাকে কখনো ভুলতে পারবেন না।।

অর্ণবঃ হুম।।

মিমঃ আচ্ছা আমরা কি ভালো ফ্রেন্ড হতে পারিনা!! আমি জানি আপনি আমাকে মেনে নিতে পারবেন না।। আপনার মনে শুধু নিসার জন্যই জায়গা আছে অন্য কারো জন্য নয়।। তবুও কি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারিনা!!

অর্ণবঃ হ্যা অবশ্যই।।

আমি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম

মিমঃ তাহলে এখন থেকে আমরা ভালো ফ্রেন্ড।।

অর্ণবও একটা হাসি দিয়ে আমার সাথে হাত মিলালেন।। এই মুহূর্তে উনার হাসিটা অনেক ভালো লাগছে।। হয়তো উনি একটু হলেও স্বাভাবিক হতে পেরেছেন।।

ভাবছি এই মেয়েটার মদ্ধে কি আছে মুহূর্তেই মুড চেঞ্জ করে দিলো।। মানতেই হবে কিছু একটা আছে মিমের মদ্ধে।।

আমি আর অর্ণব কিছুক্ষণ কথা বলে ছাদ থেকে চলে আসি।। অনেক রাত হয়েছে।। উনার কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।। রুমে এসে শুয়ে পড়ি অর্ণবও ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরে।।
·
·
·
চলবে………………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here