“অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৯)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ১৯)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিচে গেলাম।। রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম নাস্তা বানানোর জন্য।। রান্নাঘরে গিয়ে দেখি সার্ভেন্ট চলে এসেছে।।আমাকে দেখে বললো— ভাবি চইলা আসছেন আজকে কি কি বানাবেন বলেন আমি সাহায্য করতাছি।। আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম এতো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই আমি করছি আপনি আমাকে একটু সাহায্য করুন।।আজকের নাস্তার আইটেমে পরোটা, গরুর মাংস ভুনা, সবজি ভাজি আর পায়েস করেছি।। নাস্তা বাননো শেষে রুমের দিকে পা বাড়ালাম।। রুমে গিয়ে অর্ণবের অফিসে যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র গুছিয়ে দিচ্ছিলাম এমন সময় অর্ণব বলে উঠলো

অর্ণবঃ মিম!!

মিমঃ জ্বী বলেন।।

অর্ণবঃ কালকের আমার কোনো কথায় কি তুমি কষ্ট পেয়েছো??

মিমঃ নাতো কষ্ট পাবো কেনো!!

অর্ণবঃ আমি জানি তুমি আমার আর নিসার কাহিনী শুনে কষ্ট পেয়েছো যেটা তুমি মুখ ফুটে প্রকাশ করছো না।। দেখো আমি নিরুপায়।। আমি নিসাকে ভুলতে পারবো না।। আমি জানি আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি কিন্তু আমি কিছু করতে পারবো না।। আর আমার কোনো কথায় যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে I’m sorry.

মিমঃ ফ্রেন্ডকে কি কেউ সরি বলে!! আমি তো আগে জানতাম না!!

মিমের কথা শুনে হেসে দিলাম।। আমি ওকে কি বলছি আর ও এইসব কথার মদ্ধে কি বলছে।। আমি বললাম

অর্ণবঃ তাও তো কথা।। আগে তো ভেবেই দেখিনি।।

কথাটা বলে উনি ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।।
মানুষ বড়োই অদ্ভুত।। উনাকে দেখে আরো বুঝতে পারছি কেননা উনি নিজেই বলছেন যে উনি নিসাকে ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারেন না আবার এটাও বলছেন যে উনি বুঝতে পারছেন যে উনি আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন আর মেনেও নিতে পারবেন না।। কি অদ্ভুত ব্যাপার!! মনে মনে ভাবছি আর হাসছি।।

নাস্তার টেবিলে সব গুছিয়ে রাখলাম তখন মা বাবা এলেন।। মা এসে বললেন

মাঃ অনেক সুন্দর রান্নার গন্ধ বের হচ্ছে।। এতো ভালো রান্না করেছো!! আমি তো আর থাকতে পারছিনা।।

মিমঃ বসে পড়েন মা দেড়ি করছেন কেনো!!

মাঃ সকাল সকাল তোমার হাতের এতো মজার খাবার খেলে দিনটাই ভালো যায়।।

মিমঃ কি যে বলেন না মা!!

অর্ণবও এসে বসলো।। সবাই একসাথে বসে খেলাম।। অর্ণব নাস্তা করে অফিসে চলে গেলো।।

রাতে ডিনার শেষে রুমে বসে বই পরছিলাম আর অর্ণব ল্যাপটপে কাজ করছিলেন।। একটু পর ল্যাপটপ রেখে বলে উঠলেন

অর্ণবঃ তোমার তো দেখি বই পড়ার অনেক নেশা।।

মিমঃ হুম।। যেকোনো বই হলেই হয় পড়া শুরু করে দেই।। বই পড়তে আমার অনেক ভালো লাগে।। বলতে গেলে বই পড়া আমার একটা শখ।।

অর্ণবঃ হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি।। ফেভারিট রাইটার কে?? কোন লেখকের বই পড়তে বেশি ভালো লাগে??

মিমঃ সরমেশ মজুমদার।। উনার লেখার মান অনেক ভালো।। উনি অনেক সুন্দর করে লেখেন আর উনার লেখা অত্যন্ত আধুনিক।। উনি উনার প্রত্যকটা বইয়ের প্রত্যকটা চরিত্রকে অন্যরকমভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।। আপনার ফেভারিট রাইটার কে??

অর্ণবঃ হুমায়ুন আহমেদ।।

মিমঃ ওহ্।। উনিও অনেক ভালো লেখেন।। উনারও কিছু বই পড়েছি।।

অর্ণবঃ হুমায়ুন আহমেদের সবচেয়ে আলোচিত সৃষ্টি কি জানো?? হিমু।। বড্ড এলোমেলো তার জীবন।। ছোটবেলা থেকে মহাপুরুষ হওয়ার জন্য পথে নেমেছিল। আর তার একমাত্র শিক্ষক ছিলেন তার বাবা।। হিমুর যাতে কোনো পিছুটান না থাকে সেজন্য তার বাবা তার মাকে মেরে ফেলেছিল।।

জানো,আমার না মাঝে মাঝে হিমু হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।। আমিও বিশ্বাস করি আমার কাছে পাঁচটি নীল পদ্ম আছে।। সেখান থেকে একটা পদ্ম আমি নিসাকে দিয়েছিলাম।। বাকী চারটা এখনো আমার কাছেই আছে।।
সম্পুর্ণ হিমু হতে না পারলেও আমি আমার জীবনে রূপার মতো কাউকে খুব আশা করি।।আমি আসবো না জেনেও যে নীল শাড়ী,লাল টিপ,চোখে কাজল দিয়ে পথ চেয়ে বসে থাকবে।আমার ছন্দহীন স্রোতের বিপরীতে চলা জীবনের সাথে যে মানিয়ে নিবে।। আমার জোৎস্না বিলাসের সঙ্গী হবে।

জানি হিমুদের কোনো পিছুটান থাকতে নেই।অনেকে ভাবে যে হিমুদের ভালোও বাসতে নেই।কিন্তু না আমি হিমুর মধ্যেও একটা অসাধারণ প্রেমিক খুঁজে পেয়েছি।। যে কিনা দূর থেকে কোনো কিছু পাওয়ার লোভ না করে ভালোবাসতে জানে।। যে যখন ইচ্ছা (কল্পনায়) রুপার একদম কাছে যেতে পারে।।

মিমঃ সব পেমিকাই রুপার মতো হয়।যদি তার ভালোবাসা সত্যি হয়।

আমার কথা শুনে অর্ণব আর কিছু বললো না।।

.

.

আজকে সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ার আগে ভাবলাম অর্ণবকেও ডাক দেই নামাজ পড়ার জন্য।। তাই উনাকে ডাক দিলাম নামাজ পড়ার জন্য।। উনি আমার ডাকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে নামাজ পড়লেন।। অনেক ভালো লাগছে আজকে একসাথে নামাজ পড়ে।।

নামাজ শেষ করে ছাদে গেলাম।। সকালের পরিবেশটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।। এই সময়টা চারিদিক একদম শান্ত থাকে।। অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে এই সময়টায়।। ছাদে দাড়িয়ে আছি।। এখনো পুরোপুরি আলো ফোটেনি চারিদিকে হালকা আলো ফুটেছে।। দূরের আকাশে লাল আলো দেখা যাচ্ছে মানে সূর্য উঠছে।। হালকা বাতাস বইছে বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ আছে যেকারনে নিঃশ্বাস নিতে অনেক ভালো লাগছে।। পাখিরা কিচিরমিচির করছে ওরা এখন ওদের স্থান থেকে বের হয়ে গিয়েছে।। চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে ভালো করে পরিবেশটা অনুভব করছি আর জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।। এই সময়টায় মনে হয় প্রান ভরে নিঃশ্বাস নেয়া যায়।। অনেক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ করে কে যেনো ডাক দিলো পিছনে তাকিয়ে দেখি অর্ণব দাড়িয়ে আছে।। আমি বললাম

মিমঃ আপনি এখানে!!

অর্ণবঃ দেখতে এলাম কি করো।। কি করছো এখানে!!

মিমঃ সকালের পরিবেশটা অনুভব করছি।। অনেক ভালো লাগছে দেখতে চারপাশটা।। কতো স্নিগ্ধ লাগছে।। চারপাশটা একদম নিরব নিস্তব্ধ কোনো কোলাহল নেয়।। এই একটা মুহূর্ত অন্য কোনো সময় পাওয়া যায় না।। মনে হয় মন খুলে নিঃশ্বাস নেয়া যায়।।

অর্ণবঃ আমাকে তো বললে না আসার জন্য!! একা একা চলে এসেছো।। আমাকে ডাক দিলেও পারতে।।

মিমঃ ভাবলাম আসবেন কিনা!! তাই একা একাই চলে এসেছি।।

অর্ণবঃ হুম।।

মিমঃ এখন যখন চলেই এসেছেন তাহলে আমার সাথে সঙ্গ দিতে পারেন।।

অর্ণবঃ সেজন্যই তো এসেছি।। তবে এখন যদি কফি হয় তাহলে মন্দ হয় না।।

আমি হেসে বললাম

মিমঃ ঠিক আছে।। আপনি থাকুন আমি নিয়ে আসছি।।

নিচে গিয়ে দুজনের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম।। ছাদে এসে দেখলাম উনিও চুপ করে দাড়িয়ে পরিবেশটা অনুভব করছেন।। পাশে গিয়ে উনাকে একটা কফির মগ দিলাম।। আমি আর অর্ণব একসাথে কফি খাচ্ছি ভালোই লাগছে সময়টা।। কফির কাপে প্রথম চুমুক দিতেই অর্ণব বলে উঠল

অর্ণবঃ মীম তোমার হাতের কফির কোনো তুলনা হয় না।।

আমি কিছু বললাম না।। শুধু একটা মুচকি হাসি দিলাম।। প্রশংসা পেতে সবারই ভালো লাগে আর সেটা যদি হয় প্রিয় মানুষটার মুখে তাহলে তখনকার অনুভূতিটা যে কেমন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।।

আমি অর্ণবের চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, কে বলে ভালোবাসা মানে শারীরিক?? যারা বলে তারা কি আদৌ ভালোবাসে??এমন একটা মানুষের চোখের দিকে তাকিয়েই তো কাটিয়ে দেওয়া যায় বছরের পর বছর। এমন একটা মানুষকে তো যোজন যোজন দূর থেকেও ভালোবাসা যায়।।

অর্ণবঃ জানো মিম আমি আগে কখনো এতো সকালে বাহিরে বের হয়নি।। এখন যেমন এতো সুন্দর করে মন দিয়ে পরিবেশটা অনুভব করছি আগে কখনো করিনি।। আজকে এখানে না আসলে তোমার সাথে দাড়িয়ে পরিবেশটা অনুভব না করলে হয়তো জানতেই পারতাম না সকালের পরিবেশটা এতো সুন্দর হয় এতো ভালো লাগে চারপাশটা।।

অর্ণবের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ল।

অর্ণবঃ কি ব্যাপার?কি ভাবছ??

মিমঃ (আমি চমকে উঠলাম)না,তেমন কিছু না।।

অর্ণবঃ আমি এতক্ষণ ধরে যা যা বললাম মনে তো হয় না কিছু শুনেছ!!

মিমঃ কি বলেছেন??

অর্ণবঃ থাক।তোমার আর শুনে কাজ নেই।
বলেই হেসে দিলো।

আমি একটু লজ্জা পেলাম।।আমি চোখ নামিয়ে ফেললাম।।

অর্ণবঃ আচ্ছা মীম,তোমার কাছে ভালোবাসা মানে কি??

(ওনার হঠাৎ এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাকই হলাম)

অর্ণবঃ এই যেমন আমার কাছে বহুদিন ভালোবাসা অর্থহীন ছিল।তোমার কাছে ব্যাপারটা কেমন?

মিমঃ আমার কাছে ভালোবাসা একটা অনুভূতি।। যার না কোনো সংজ্ঞা আছে না কোনো ব্যাখ্যা আছে।। আমার কাছে ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না।। আমি ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার আশা করি না।। আমি বিশ্বাস করি আমি যদি কাউকে ভালোবাসি তাহলে তাকে আমি পাবই।।এই জীবনে না পেলেও পরের জীবনে ঠিকই পাব।।

অর্ণবঃ তুমি তো দেখছি ফিলোসফার হয়ে গেছো।। কখনো কাউকে ভালোবেসেছো??

মিমঃ আছে একজন।।

অর্ণবঃ কে? কখনো তো নাম বলনি।

মিমঃ আমি মুচকি হেসে বললাম রান্না করতে হবে।। অফিসে যেতে হবে তো!!

এই বলে চলে আসলাম।। অর্ণবকে যে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা বলে আর নিজেকে ছোট করলাম না।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here