“অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৮)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৮)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
ডিনার শেষে সব কিছু গুছিয়ে রুমে এসে দেখি অর্ণব ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে।। আমি একটা বই নিয়ে পড়তে বসলাম।। কিছুক্ষণ পর অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মিম!!

মিমঃ জ্বী বলেন।।

অর্ণবঃ তুমি তো এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছো!!

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ তো আর পড়াশুনা করবে না!!

মিমঃ করতে তো চাই।। কিন্তু!!

অর্ণবঃ তুমি ইচ্ছা করলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারো।। যতদূর ইচ্ছা পড়তে পারো।।

মিমঃ সত্যি!!

অর্ণবঃ হুম।।

মিমঃ Thank you.

অর্ণবঃ এতে thank you দেয়ার কিছু নেই।। আমি ওইসব হাসব্যান্ডদের মতো না যে বিয়ের পর বউয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিবো।। আর যারা এই কাজ করে আমি মনে করি তারা অত্যন্ত নীচু মনের মানুষ।। আমার মতে পড়াশুনা করাটা সবার মৌলিক অধিকার।। সবারই পড়াশুনা করার অধিকার রয়েছে।। আর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটা নিতান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার।। কারো যদি পড়াশুনা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে তাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।। তোমার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে পড়াশুনা চালিয়ে যাও।।

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ আর আমার বউ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শুনলে লোকে কি বলবে!!

মিমঃ উনার মুখে বউ কথাটা শুনে খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো।। মনে মনে অনেক খুশি হচ্ছি।।

অর্ণবঃ কি হলো!! কি এতো ভাবছো!!

মিমঃ না কিছু না।।

অর্ণবঃ কোন বিভাগ??

মিমঃ কমার্স।।

অর্ণবঃ কোন সাবজেক্টে পড়ার ইচ্ছা আছে??

মিমঃ ম্যানেজমেন্ট।।

অর্ণবঃ ম্যানেজমেন্ট তো ভালে সাবজেক্ট।।

মিমঃ হুম।।
লোকটাকে যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটাও খারাপ না।। (মনে মনে)

সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্ণবের মুখটা দেখতে অনেক ভালো লাগে।। অর্ণবের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে উনার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম।। এটা এখন আমার নিত্যদিনের কাজ।। উনাকে লুকিয়ে আদর করতে ভালোই লাগে।। উনি জানতে পারলে কি করবে জানি না কিন্ত এই কাজটা করতে আমার খুব ভালো লাগে।।

অর্ণব অফিস থেকে এলে আমি রুমে গিয়ে দেখি উনি মাথা নিচু করে দুহাত দিয়ে মাথা ধরে স্কাউচে বসে আছে।। আমি খাটে বসে আছি অনেক্ষন ধরে কিন্তু উনার কোনো পরিবর্তন নেই।। উনি উনার মতো বসে আছে।। বুঝতে পারছিনা উনি এতক্ষণ ধরে এইভাবে বসে আছে।। তাই ভাবলাম উনাকে জিজ্ঞাসা করি উনার কিছু হয়েছে কিনা।।

মিমঃ আপনার কি কিছু হয়েছে??

অর্ণবঃ………….

মিমঃ আপনি এইভাবে বসে আছেন কেনো এতক্ষণ ধরে??

অর্ণবঃ অর্ণব এইবার মাথা তুলে মিমের দিকে তাকালো।।

উনার চোখ একদম লাল হয়ে আছে।। বুঝতে বাকি রইলো না যে উনি অসুস্থ।। তাই আমি উনার কপালে হাত দিয়ে দেখি উনার শরিরে অনেক জ্বর।। আমি উনাকে ধরে খাটে শুয়াতে নিলে উনি আমাকে বাধা দিতে লাগলেন।। আর বললেন

অর্ণবঃ আমার জন্য কিছু করা লাগবে না।।

মিমঃ দেখুন আপনি আমাকে মেনে নিতে না পারলেও আমি তো আপনাকে মানি।। আর আপনি আমার স্বামী।। আর আপনার সেবা যত্ন করা আমার দায়িত্ব।।

মিমের কথা শুনে অর্ণব মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।। মিম অর্ণবের কাপড় পালটে দিলো।। রাতে খাবার আর ওষুধ খাইয়ে দিলো।। তারপর অর্ণবের পাশে বসে অর্ণবের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।। সারারাত অর্ণবের পাশে বসে কাটিয়ে দেয় মিম।।

সকালে অর্ণব ঘুম থেকে উঠে দেখে মিম অর্ণবের পাশে বসে ঘুমাচ্ছে।। অর্ণব ভাবতে থাকে— ” তার মানে মিম সারারাত আমার পাশে বসে আমার সেবা যত্ন করেছে।।”

অর্ণব ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে বুঝতে পেরে মিম নড়েচরে বসে জিজ্ঞাসা করে

মিমঃ এখন আপনার শরির কেমন লাগছে??

অর্ণবঃ আগের থেকে ভালো।। তুমি সারারাত না ঘুমিয়ে আমার পাশে বসেছিলে??

মিমঃ হুম।। আজকে আপনার অফিসে যাওয়ার দরকার নেই।। বাসায় থেকে রেস্ট নিন।।

অর্ণবঃ হুম।।

মিমঃ আমি নিচে যাচ্ছি।। আপনার খাবার নিয়ে আসছি।।

অর্ণব মিমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছে এই মেয়েটাকে আমি মেনে নেই নি দূরে ঠেলে রাখি সবসময় অথচ ও সবসময় আমার খেয়াল রাখে।। আমার সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে।।

আজকে সারদিন মিম অর্ণবের খেয়াল রেখছে সেবা যত্ন করেছে।। এখন অর্ণব আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ।।

বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি।। আজ পূর্ণিমার রাত।। চাঁদটাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।। হঠাৎ কারো ডাকে ধ্যান ভাঙে আমার।। পিছনে ফিরে দেখি…….
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here