“অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৭-৮)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৭)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
অর্ণব হঠাৎ করে বললো….

অর্ণবঃ সামনে একটা সুন্দর পার্ক আছে।। চলো ওখানে যাই।।

মিমঃ এখন!!

অর্ণবঃ হুম।।

পার্কটা অনেক সুন্দর।। পার্কে একটা লেক আছে।। আমি আর অর্ণব লেকে পা ঝুলিয়ে বসে আছি।। অনেকক্ষন ধরে বসে আছি।। দুজনের মােঝে শুধু নিরবতা বিরাজ করছে।। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না।। দুজনের নজর শুধু সামনের দিকে।। উনি কি ভাবছে তা জানি না তবে আমি ভাবছি যে উনি কিভাবে হঠাৎ করে আমাকে নিয়ে পার্কে এলো।। নিরবতা ভেঙে হঠাৎ অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মিম গান গেতে পারো!!

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ একটা গান গাও না!!

মিমঃ এখন!!

অর্ণবঃ হুম।।

কতক্ষন চুপ থেকে গাওয়া শুরু করলাম

Tere dar pe ake tham gaye
Naina naamazi ban gaye
Ek doje mei yun dhal ke
Ashiqana ayat ban gaye Main Aur Tum.

Kaisi dil lagai kar gaye
Rooh ki rubai ban gaye
Khaali khaali dono thee jo
Thoda sa dono bhar gaye Main Aur Tum.

Chalo ji aj saaf saaf kehta hoon
Itnisi bat hain mujhe tumse pyar hai
Yuhi nahi main tumpe jan deta hoon
Itnisi bat hain mujhe tumse pyar hain.

(( বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন))

গান গাওয়া শেষ হলে অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মিম তুমি তো অনেক ভালো গাও।।

মিমঃ Thank you.

কিছুক্ষণ পরে মিম বললো অর্ণবকে– “ওই যে দেখুন কতো বেলুন।।” অর্ণব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো

অর্ণবঃ লাগবে তোমার!!

মিমঃ ………….

তারপর অর্ণব উঠে গিয়ে অনেকগুলো বেলুন কিনে এনে দিয়ে বললো

অর্ণবঃ এই নাও তোমার বেলুন।।

মিমঃ Thank you.
(আমি তো অনেক খুশি)

অর্ণবঃ তোমার কি বেলুন পছন্দ!!

মিমঃ হুম অনেক।।

আমি বেলুন নিয়ে দেখতে থাকি……এখানে অনেকগুলো বেলুন।। অর্ণব বলতে লাগলো

অর্ণবঃ জানো মিম এই জায়গাটা আগে আমার অনেক পছন্দের ছিলো।। প্রায়ই আসতাম এখানে।।

মিমঃ এখন পছন্দের না!!

অর্ণবঃ না।। এখন আর এখানে আসি না ভালো লাগে না।।

মিমঃ কেনো???

অর্ণবঃ এই জায়গাটায় আসার আর পছন্দের কারণ আর নেই।।

মিমঃ অহ্।।
আমি বুঝলাম না এখানে আসার আর পছন্দের কারণ নেই কেনো।। আর এই কথাগুলো বলতে গিয়ে উনি এতো emotional হয়ে পরছেন কেনো!! আমি কিছুই মিলাতে পারছিনা।। তাই ভাবা বন্ধ করে দিলাম।।

মিমঃ অনেক রাত হয়েছে।। বাসায় যাবেন না!!

অর্ণবঃ হ্যাঁ চলো।।

মিম বসা থেকে উঠে বেলুনগুলো সব উড়িয়ে দিয়ে খিলখিল করে হাসছে।। মিমের হাসির সাউন্ড যেন অর্ণবের বুকের মাঝে বিধছে।। অর্ণব মিমের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে……..আর ভাবছে কি আছে এই মেয়েটার মদ্ধে যা ওকে এতো টানে।। ওর হাসিটা অনেক সুন্দর।। আর ওর চেহারায় এতো মায়া কেনো!!

মিমের কথায় অর্ণবের ঘোর কাটলো।

মিমঃ বাসায় যাবেন না!! দেরি হয়ে যাচ্ছে।।

অর্ণবঃ হুম।।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এসে অর্নবকে বললাম

মিমঃ Thank you.

অর্ণবঃ For what??

মিমঃ আজকে ঘুরানোর জন্য।।

অর্ণবঃ এতে thank you দেয়ার কিছুই নেই।। আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতেই পারি।।

মিমঃ হুম।।

মা আর আমার সম্পর্কটা এখন বন্ধুর মতো।। বাড়িতে এখন মার সাথে সারাক্ষণ কাটে।। মা আর আমি অনেক গল্প করি।।
আজকে বিকালে বাবার মার রুমে চা দিতে গিয়ে দেখি বাবা বই পড়ছে।। আমি বললাম

মিমঃ বাবা কি করছেন??

বাবাঃ বই পড়ছি মা।।

মাঃ উনার আর কি কাজ।। সারাদিন শুধু বইয়ের মদ্ধে মুখ গুজে রাখা।।

মিমঃ বই পড়াতো ভালো কাজ মা।।

মাঃ তাই বলে সারাদিন পড়বে।।

মিমঃ মা আমারো বই পড়তে ভালো লাগে।। আমি আর বাবাকে কি বলবো!!

বাবাঃ তাহলে তো আমরা দুজনের পছন্দ এক হয়ে গেলো।।

মিমঃ হা হা হা।।

মাঃ এখন দুজনে মিলে এক হয়ে গেলে!!

বাবা আর আমি দুজনে একসাথে হেসে দিলাম।। আর মা রাগে ফুঁসছে।।
·
·
·
চলবে………………………

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ০৮)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
ডিনার শেষে সব কিছু গুছিয়ে রুমে এসে দেখি অর্ণব ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে।। আমি একটা বই নিয়ে পড়তে বসলাম।। কিছুক্ষণ পর অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মিম!!

মিমঃ জ্বী বলেন।।

অর্ণবঃ তুমি তো এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছো!!

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ তো আর পড়াশুনা করবে না!!

মিমঃ করতে তো চাই।। কিন্তু!!

অর্ণবঃ তুমি ইচ্ছা করলে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারো।। যতদূর ইচ্ছা পড়তে পারো।।

মিমঃ সত্যি!!

অর্ণবঃ হুম।।

মিমঃ Thank you.

অর্ণবঃ এতে thank you দেয়ার কিছু নেই।। আমি ওইসব হাসব্যান্ডদের মতো না যে বিয়ের পর বউয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিবো।। আর যারা এই কাজ করে আমি মনে করি তারা অত্যন্ত নীচু মনের মানুষ।। আমার মতে পড়াশুনা করাটা সবার মৌলিক অধিকার।। সবারই পড়াশুনা করার অধিকার রয়েছে।। আর পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়াটা নিতান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার।। কারো যদি পড়াশুনা করার ইচ্ছা থাকে তাহলে তাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।। তোমার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে পড়াশুনা চালিয়ে যাও।।

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ আর আমার বউ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শুনলে লোকে কি বলবে!!

মিমঃ উনার মুখে বউ কথাটা শুনে খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো।। মনে মনে অনেক খুশি হচ্ছি।।

অর্ণবঃ কি হলো!! কি এতো ভাবছো!!

মিমঃ না কিছু না।।

অর্ণবঃ কোন বিভাগ??

মিমঃ কমার্স।।

অর্ণবঃ কোন সাবজেক্টে পড়ার ইচ্ছা আছে??

মিমঃ ম্যানেজমেন্ট।।

অর্ণবঃ ম্যানেজমেন্ট তো ভালে সাবজেক্ট।।

মিমঃ হুম।।
লোকটাকে যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম ততোটাও খারাপ না।। (মনে মনে)

সকালে ঘুম থেকে উঠে অর্ণবের মুখটা দেখতে অনেক ভালো লাগে।। অর্ণবের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে উনার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম।। এটা এখন আমার নিত্যদিনের কাজ।। উনাকে লুকিয়ে আদর করতে ভালোই লাগে।। উনি জানতে পারলে কি করবে জানি না কিন্ত এই কাজটা করতে আমার খুব ভালো লাগে।।

অর্ণব অফিস থেকে এলে আমি রুমে গিয়ে দেখি উনি মাথা নিচু করে দুহাত দিয়ে মাথা ধরে স্কাউচে বসে আছে।। আমি খাটে বসে আছি অনেক্ষন ধরে কিন্তু উনার কোনো পরিবর্তন নেই।। উনি উনার মতো বসে আছে।। বুঝতে পারছিনা উনি এতক্ষণ ধরে এইভাবে বসে আছে।। তাই ভাবলাম উনাকে জিজ্ঞাসা করি উনার কিছু হয়েছে কিনা।।

মিমঃ আপনার কি কিছু হয়েছে??

অর্ণবঃ………….

মিমঃ আপনি এইভাবে বসে আছেন কেনো এতক্ষণ ধরে??

অর্ণবঃ অর্ণব এইবার মাথা তুলে মিমের দিকে তাকালো।।

উনার চোখ একদম লাল হয়ে আছে।। বুঝতে বাকি রইলো না যে উনি অসুস্থ।। তাই আমি উনার কপালে হাত দিয়ে দেখি উনার শরিরে অনেক জ্বর।। আমি উনাকে ধরে খাটে শুয়াতে নিলে উনি আমাকে বাধা দিতে লাগলেন।। আর বললেন

অর্ণবঃ আমার জন্য কিছু করা লাগবে না।।

মিমঃ দেখুন আপনি আমাকে মেনে নিতে না পারলেও আমি তো আপনাকে মানি।। আর আপনি আমার স্বামী।। আর আপনার সেবা যত্ন করা আমার দায়িত্ব।।

মিমের কথা শুনে অর্ণব মিমের দিকে তাকিয়ে রইলো।। মিম অর্ণবের কাপড় পালটে দিলো।। রাতে খাবার আর ওষুধ খাইয়ে দিলো।। তারপর অর্ণবের পাশে বসে অর্ণবের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।। সারারাত অর্ণবের পাশে বসে কাটিয়ে দেয় মিম।।

সকালে অর্ণব ঘুম থেকে উঠে দেখে মিম অর্ণবের পাশে বসে ঘুমাচ্ছে।। অর্ণব ভাবতে থাকে— ” তার মানে মিম সারারাত আমার পাশে বসে আমার সেবা যত্ন করেছে।।”

অর্ণব ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে বুঝতে পেরে মিম নড়েচরে বসে জিজ্ঞাসা করে

মিমঃ এখন আপনার শরির কেমন লাগছে??

অর্ণবঃ আগের থেকে ভালো।। তুমি সারারাত না ঘুমিয়ে আমার পাশে বসেছিলে??

মিমঃ হুম।। আজকে আপনার অফিসে যাওয়ার দরকার নেই।। বাসায় থেকে রেস্ট নিন।।

অর্ণবঃ হুম।।

মিমঃ আমি নিচে যাচ্ছি।। আপনার খাবার নিয়ে আসছি।।

অর্ণব মিমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছে এই মেয়েটাকে আমি মেনে নেই নি দূরে ঠেলে রাখি সবসময় অথচ ও সবসময় আমার খেয়াল রাখে।। আমার সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে।।

আজকে সারদিন মিম অর্ণবের খেয়াল রেখছে সেবা যত্ন করেছে।। এখন অর্ণব আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ।।

বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি।। আজ পূর্ণিমার রাত।। চাঁদটাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।। হঠাৎ কারো ডাকে ধ্যান ভাঙে আমার।। পিছনে ফিরে দেখি…….
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here