‘অবিশ্বাস’
সাবিহা আফরিন
৩.
কলিং বেলের শব্দে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন মিসেস আশালতা। দরজার অপর পাশে মেয়েকে দেখতেই খুশিতে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। কিন্তু নীরার রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে মুখটার দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই ধীরে ধীরে সমস্ত খুশি মুছে গিয়ে চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল।
‘নীরা এ অসময়ে তুই? কি হয়েছে মা?’
নীরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। মাকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল। মেয়ের আকস্মিক এমন আচরণে দিশেহারা হয়ে উঠলেন আশালতা। অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,’কি হয়েছে মা? সব ঠিকঠাক আছে তো? জামাই কোথায়? কি হয়েছে? আমাকে বল…’
নীরার বাবা রফিক সাহেব ড্রইং রুমের সোফায় বসে ছিলেন। একমাত্র মেয়ে এসেছে শুনে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালেন। খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,’কে এসেছে নীরা?’
কিন্তু পরক্ষণেই মেয়ের এমন কান্না দেখে ঘাবড়ে গেলেন তিনি। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘কি হয়েছে? আমার মেয়ের কি হয়েছে?’
ওনারা নীরাকে ঘরে নিয়ে এসে সোফায় বসালেন। নীরা অনবরত কেঁদেই চলেছে। হাজারো প্রশ্ন করার পরও নীরা কোনো উত্তর দিতে পারলো না। এভেবে কেটে গেল অনেক ক্ষণ। অবশেষে নীরা মুখ খুললো। একে একে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সবাই সব শুনে কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল। নীরা ফ্লোরে বাবার সামনে হাটু গেড়ে বসলো। বাবার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে ছলছলে চোখে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল,’বাবা, বাবা বিশ্বাস কর আমি এসবের কিছুই জানি না। ঐ লোকটার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
‘তাহলে ঐ লোকটা তোর বেডরুমে ঢুকলো কি করে?’ চোয়াল শক্ত করে বললেন রফিক সাহেব।
‘জানি না বাবা আমি কিচ্ছু জানি না। প্রথম থেকেই এই লোকটাকে আমার খুব একটা ভালো লাগতো না। আশফাক একটা পার্টিতে যখন প্রথম ওর বন্ধুদের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল তখন থেকেই খেয়াল করছি লোকটা আমার দিকে কেমন বাজে নজরে তাকায়। ইনিয়েবিনিয়ে আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে বহুবার। কিন্তু পারেনি। শেষে.. শেষে একদিন আমাকে সরাসরি এসে একটা নোংরা প্রপোজাল দিল। আমি সেদিন সাথে সাথেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওর গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে ছিলাম। সেদিন লোকটা যাওয়ার সময় আমাকে দেখে নেবে বলে শাসিয়ে গেছিল। বিশ্বাস কর বাবা লোকটার সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই।’
‘তুই ঠিক বলছিস?’ নীরার চোখে চোখ রেখে বললেন রফিক সাহেব।
নীরা নিজের পেটে হাত দিয়ে বাবা চোখে চোখ রেখে বলল,’এই আমি আমার অনাগত সন্তানকে ছুঁয়ে বলছি আমার সাথে লোকটার কোনো সম্পর্ক নেই আর না কোনোদিন ছিল। আমায় বিশ্বাস কর বাবা। প্লিজ বাবা প্লিজ…’
নীরা বাবার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। রফিক সাহেব আর আশালতা স্তব্ধ হয়ে বসে৷ রইলেন। নীরা তাদের একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে করে সুশিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেছে। নীরা কোনোদিন তার বাবা মায়ের অবাধ্য হয়নি। কখনো ছোট্ট একটা মিথ্যেও বলেনি তাদের, সেখানে অন্যায় করা তো অনেক দূরের ব্যাপার। হঠাৎ রফিক সাহেবের মনে হল, নাহ! তার মেয়ে কখনো কোনো অন্যায় করতেই পারে না। তার মেয়ে কোনো দুশ্চরিত্রা নয়। তার মেয়ে ফুলের মতো পবিত্র। রফিক সাহেব ধীরে ধীরে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। ধরে আসা গলায় বললেন,’তুই চিন্তা করিস না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। আমি কথা বলবো আশফাকের সাথে।’
চলবে…
‘অবিশ্বাস’
সাবিহা আফরিন
৩.
[nxt, nice, n, f এসব কমেন্ট দয়া করে করবেন না। এরচেয়ে কমেন্ট না করাই শ্রেয়। আর গল্পের শেষে যতদিন ‘চলবে’ লেখা থাকবে ততদিন পর্যন্ত গল্প চালানোর দায়িত্ব আমার। এই নিয়ে আপনারা মাথা না ঘামালেই বরং খুশি হবো।]
কলিং বেলের শব্দে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন মিসেস আশালতা। দরজার অপর পাশে মেয়েকে দেখতেই খুশিতে চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। কিন্তু নীরার রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে মুখটার দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই ধীরে ধীরে সমস্ত খুশি মুছে গিয়ে চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল।
‘নীরা এ অসময়ে তুই? কি হয়েছে মা?’
নীরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। মাকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল। মেয়ের আকস্মিক এমন আচরণে দিশেহারা হয়ে উঠলেন আশালতা। অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,’কি হয়েছে মা? সব ঠিকঠাক আছে তো? জামাই কোথায়? কি হয়েছে? আমাকে বল…’
নীরার বাবা রফিক সাহেব ড্রইং রুমের সোফায় বসে ছিলেন। একমাত্র মেয়ে এসেছে শুনে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালেন। খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,’কে এসেছে নীরা?’
কিন্তু পরক্ষণেই মেয়ের এমন কান্না দেখে ঘাবড়ে গেলেন তিনি। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, ‘কি হয়েছে? আমার মেয়ের কি হয়েছে?’
ওনারা নীরাকে ঘরে নিয়ে এসে সোফায় বসালেন। নীরা অনবরত কেঁদেই চলেছে। হাজারো প্রশ্ন করার পরও নীরা কোনো উত্তর দিতে পারলো না। এভেবে কেটে গেল অনেক ক্ষণ। অবশেষে নীরা মুখ খুললো। একে একে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সবাই সব শুনে কেমন স্তব্ধ হয়ে গেল। নীরা ফ্লোরে বাবার সামনে হাটু গেড়ে বসলো। বাবার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে ছলছলে চোখে তাকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলল,’বাবা, বাবা বিশ্বাস কর আমি এসবের কিছুই জানি না। ঐ লোকটার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
‘তাহলে ঐ লোকটা তোর বেডরুমে ঢুকলো কি করে?’ চোয়াল শক্ত করে বললেন রফিক সাহেব।
‘জানি না বাবা আমি কিচ্ছু জানি না। প্রথম থেকেই এই লোকটাকে আমার খুব একটা ভালো লাগতো না। আশফাক একটা পার্টিতে যখন প্রথম ওর বন্ধুদের সাথে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল তখন থেকেই খেয়াল করছি লোকটা আমার দিকে কেমন বাজে নজরে তাকায়। ইনিয়েবিনিয়ে আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে বহুবার। কিন্তু পারেনি। শেষে.. শেষে একদিন আমাকে সরাসরি এসে একটা নোংরা প্রপোজাল দিল। আমি সেদিন সাথে সাথেই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওর গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে ছিলাম। সেদিন লোকটা যাওয়ার সময় আমাকে দেখে নেবে বলে শাসিয়ে গেছিল। বিশ্বাস কর বাবা লোকটার সাথে আমার কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই।’
‘তুই ঠিক বলছিস?’ নীরার চোখে চোখ রেখে বললেন রফিক সাহেব।
নীরা নিজের পেটে হাত দিয়ে বাবা চোখে চোখ রেখে বলল,’এই আমি আমার অনাগত সন্তানকে ছুঁয়ে বলছি আমার সাথে লোকটার কোনো সম্পর্ক নেই আর না কোনোদিন ছিল। আমায় বিশ্বাস কর বাবা। প্লিজ বাবা প্লিজ…’
নীরা বাবার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে লাগল। রফিক সাহেব আর আশালতা স্তব্ধ হয়ে বসে৷ রইলেন। নীরা তাদের একমাত্র মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে করে সুশিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেছে। নীরা কোনোদিন তার বাবা মায়ের অবাধ্য হয়নি। কখনো ছোট্ট একটা মিথ্যেও বলেনি তাদের, সেখানে অন্যায় করা তো অনেক দূরের ব্যাপার। হঠাৎ রফিক সাহেবের মনে হল, নাহ! তার মেয়ে কখনো কোনো অন্যায় করতেই পারে না। তার মেয়ে কোনো দুশ্চরিত্রা নয়। তার মেয়ে ফুলের মতো পবিত্র। রফিক সাহেব ধীরে ধীরে মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। ধরে আসা গলায় বললেন,’তুই চিন্তা করিস না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। আমি কথা বলবো আশফাকের সাথে।’
চলবে…