#অবুঝ বেলার তুমি
পর্ব ৫
বিকেলে অঙ্কুর বিহান কে সাথে করে নিয়ে আসলো গুঞ্জনের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী।অঙ্কুরের বাবা মা ঢাকায় শিফট হলো দশ বারো দিন হবে।অঙ্কুর এখনো ব্যাচেলর ই থাকে।মাসের মাঝ বরাবর এসে, সে আর বাবা মায়ের বাসায় গেলো না।এ মাসটা শেষ হলেই ফ্যামিলির সাথে থাকবে।
বিহান আর অঙ্কুর দুজনেই চোখে সানগ্লাস, গোফ,দাড়ি লাগিয়ে হাজির হলো গুঞ্জন দের বাসার সামনেই।দুজনেই ভয়ে আছে। এক পা এগোচ্ছে তো দু পা পিচোচ্ছে।
গুঞ্জন ছাদ থেকে বেশ কিছুক্ষন আগে থেকেই লক্ষ করছে।কি করছে এই বেটারা এখানে।সেই কখন থেকেই গাপটি মেরে দাড়িয়ে আছে।গুঞ্জন দ্রুত ছাদ থেকে নেমে আসলো।
তারপর আস্তে আস্তে পা ফেলে দরজা খুলতে যেতেই গুঞ্জনের মা জোরে ডেকে উঠলেন,
_____কোথাও যাচ্ছিস গুঞ্জন?
গুঞ্জনের ইচ্ছে করছিলো ওর মায়ের মুখে একটা ট্যাপ মেরে দিক।যখনই তাকে চুপ থাকতে হবে তখন তার মায়ের গলার আওয়াজ দ্বিগুন পরিমাণ বেড়ে যায়।
ওদিকে গুঞ্জন দরজা টা খুলতে যাওয়ায় একটু ফাঁক হয়েছিলো। বিহান সেই ফাঁকে চোখ রাখতেই গুঞ্জন কে দেখতে পেয়ে এক লাফ দিয়ে দূরে সরে দাড়ালো।অঙ্কুর কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলো বিহানের করা এমন কাজে।
বিহান অঙ্কুর কে উদ্দেশ্য করে বললো,
_____দা ভাই গিভ মি এ হাই ফাইভ অর টাটা প্লিজ।
____অঙ্কুর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,হাই ফাইভ ই বা কেনো আর টাটা ই বা কেনো।
____কারণ তুমি যার বাড়িতে এসেছো সে মস্ত একটা ডাকুনী।ব্যাগে বইয়ের পাশাপাশি চুরি টুরি নিয়ে ঘোরে।আমার তো সন্দেহ হয় জানো তো এ মেয়ের নিশ্চয়ই কোন ও জঙ্গির সাথে কানেকশান আছে।
____অঙ্কুর শাট আপ বলতেই বিহান অলঙ্কুরের হাতের সাথে নিজের হাত মিলিয়ে একটা হাই ফাইভ নিয়ে ন্যায়।আর টাটা বলে যেই দৌড় দিতে যাবে ওমনি গুঞ্জন দরজা খুলে দিলো আর বিহান গিয়ে অঙ্কুরের পেছনে লুকালো।
গুঞ্জন কোমরে হাত দিয়ে চোখ গুলোকে গোল গোল করে ঘুরাতে লাগলো আর সন্দেহ প্রবণ দৃষ্টি নিয়ে দুজনকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
গুঞ্জন বলে উঠলো,
____এই যে লম্বুর পেছনে বাটলু,পেছন থেকে সরে আসো বলছি।
বিহান ভয়ে ভয়ে পা ফেলে অঙ্কুরের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো।বারবার হাত দিয়ে দাড়ি গোফ দেখতে লাগলো।ঠিক আছে কিনা।তখন রাস্তায় ছুরি দেখালো,এবার তো বটি নিয়ে দৌড়াবে।বিহানের মুখ টা দেখার মতো ছিলো।
গুঞ্জনের বাবা অভিক ও এবার বেরিয়ে এলেন।গুঞ্জন কে জিজ্ঞেস করলেন,
____কি হচ্ছে এখানে?
গুঞ্জন বলে উঠলো,
____ সেই কখন থেকে আমি খেয়াল করে যাচ্ছি এ লোক দুটো বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করে যাচ্ছে।কি মতলব সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
গুঞ্জনের বাবা গুঞ্জন কে চুপ করতে বলে নিজে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
____আপনারা কি কাউকে খুজছেন?বা কোন ও দরকারে এসেছেন?
অঙ্কুর গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে জানালো,
____আসলে আমরা এই পথেই যাচ্ছিলাম।আর আপনাদের বাড়িতে একটা সাপ ঢুকতে দেখলাম। তাই খুজে যাচ্ছিলাম সাপটা আসলে কোথায় গিয়ে ঢুকলো।
বিহান ও এবার একটু সাহস পেলো,সে অঙ্কুরের সাথে তাল মেলালো,
____হ্যা।ইয়া বড় একটা সাপ।নিশ্চয়ই বিষধর সাপ হবে।
গুঞ্জনের কন্ঠটা কেমন চেনা চেনা মনে হলো।অঙ্কুর যদিও গলার আওয়াজ টা যতটা সম্ভব চেঞ্জ করে বলার চেষ্টা করেছে।কারণ গুঞ্জন যদি তার তুলতুল না হয়।তাহলে ধরা খেলে একটা কেলেঙ্কারি কান্ড হয়ে যাবে।কলেজে তার একটা খুব ভালো রেপুটেশন আছে।সেটা একেবারে ভেস্তে যাবে।
কিন্তু বিহান ভয় পেলে তাল গোল পাকিয়ে পেলে।তাই স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে ফেললো,
বিহানের মুখ টা দেখার মত ছিলো।সে ভাবছে এক্ষুনি মেয়েটা বটি নিয়ে আসবে আর তার গলায় বসাবে।তার মতো তার দা ভাই ও কিভাবে মেয়েটাকে তুলতুল দি ভেবে একই ভুল করলো।
গুঞ্জন যে ই বিহানের দিকে এগিয়ে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই অভিক রায় বললেন,
_____তোকে অনেকবার বারণ করেছি গুঞ্জন৷বাড়িতে ওসব ফুল গাছ লাগাস না।কিন্তু আমার কথা তোর কানেই ঢুকে না।ওই হাসনাহেনা ফুলের গন্ধেই সাপেরা আসে।আগের বারও ভালোয় ভালোয় বেছে গিয়েছিলাম যদি না তোর মা দেখতো।
অঙ্কুর আর বিহান অপেক্ষা করছিলো গুঞ্জনের মা কে দেখা যায় কিনা!কারণ তারা কেউই গুঞ্জনের বাবাকে দেখেনি শুধু মা কেই দেখেছে।
ওদের দেয়া যুক্তিটা গুঞ্জনের মনে ধরলো না।নিশ্চয়ই কোনো ঘটলা আছে এ দুটোর ভেতরে কিন্তু কি।ওদিকে বাবাই ও চলে এলো নাহলে ভালোভাবে জব্দ করা যেতো দুজনকেই।
শেষমেশ দুজনকেই উল্টো পথে হাটা ধরতে হলো।যে কারনে এসেছে তার কিছুই খোজ নিতে পারেনি।অর্ধেক পথ আসতেই দুজনে গোফ দাড়ি খুলে ব্যাগে ভরে নিলো।বিহান পাশে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
তারপর বললো,
_____আমার মতো একই ভুল তুমিও কি করে করলে দা ভাই?
____অঙ্কুর ভাবনায় ছিলো,হঠাৎ বিহানের করা এমন প্রশ্নে চকিতে ফিরে তাকালো,
তোর মতো একই ভুল মানে?
____আরে আজ আমিও যখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।তখন মেয়ে টাকে দেখে রিকশা থেকে নেমে পড়লাম।অবশ্য তোমার ও ভুল করার কথা কারণ মেয়েটার সাথে তুলতুল দির অনেকটাই মিল আছে।
আমি যেই মেয়েটার পিছু নিলাম কিছু জিজ্ঞেস করতে,মেয়েটা আমার কথা তো শুনলোই না বরং কি বললো জানো,
____অঙ্কুর ও কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
কি বললো?
____বলে কিনা এই ব্যাগে শুধু বই থাকেনা।তোমাদের মতো ছেলেদের শায়েস্তা করতে অস্ত্র ও থাকে,বলেই চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো বিহান।
অঙ্কুর খুব জোরে হাসতে লাগলো।সাহস আছে মেয়েটার।দেখেই বোঝা যায়।তোর মনে আছে বিহান,
তোকে এক ছেলে একবার থাপ্পড় মেরেছিলো বলে তুই আমাকে বিচার দিয়েছিলি।
আর তোর তুলতুল দি কিভাবে গিয়ে ওই ছেলে টাকে শাষিয়ে এলো আর স্যরি ও বলিয়ে নিলো।
আমার তো এবার আরো বিশ্বাস জন্মাতে লাগলো গুঞ্জন ই আমার তুলতুল।
বিহান বললো,
____সে তুমি যাই বলো তাই বলে গুঞ্জন দি তার বিহান কে চিনবে না?
আমার গুঞ্জন দি কখনোই এভাবে রিয়্যাক্ট করতো না আমার সাথে।
____পাগল ছেলে তুই কি আগের মতো সেই ছোট্ট বিহান আছিস যে তোর গুঞ্জন দি তোকে দেখেই চিনে ফেলবে!
মেয়েদের সেইফলি থাকাটা জরুরী। তাই ওসব জিনিস ব্যাগে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
বাসায় পৌছাতেই অঙ্কুরের বাবা জানালো অঙ্কুরকে কাল বিকেলে সময় দিতে হবে। তার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে।এই জন্যই অঙ্কুরের এই বাসায় উঠতে ইচ্ছে করছে না।সব সময় কানের কাছে একটি কথা বিয়ে নিয়েই পড়ে থাকে।তার তুলতুল ছাড়া অঙ্কুর কি করে পারবে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে!
অঙ্কুর খুব গম্ভীর গলায় বললো বিকেলে তার সময় হবে না।কাজ আছে কিছু।কিন্তু অঙ্কুরের বাবা ও কড়া গলায় বলে দিলেন।কাজ টাজ এসব আর তিনি শুনছেন না।
যেভাবেই হোক বিকেলে তাকে থাকতে হবে।বয়স তো আর কম হয়নি।মা টা ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে আর কতকাল একা হাতে সংসার সামলাবেন।বাসায় আসার পর থেকেই অভিক দা কে দেখা করবো করবো বলে ও দেখা করে হয়ে উঠেনি।কি ভাববেন ওনারা!
আর আমার চোখ দুটো ও তর সইছে না কবে মেয়েটাকে একনজর দেখবো।সেই ছোটবেলায় দেখেছি যে আর দেখা হয়নি।অঙ্কুরের এসব ন্যকা ন্যাকা কথা শুনতে একদমই ইচ্ছে করছে৷। তাই সে বেরিয়ে গেলো।
কি এক আদিখ্যেতা একটা মেয়েকে নিয়ে।কি আছে ওই মেয়েটাতে যে তার এতো প্রশংসা করতে হবে।যত্তসব!
আর এ বাড়িতেই আসবে না সে।
তার দুচোখ যে শুধু তুলতুলকে দেখার অপেক্ষায় বসে আছে অন্য কোন ও মেয়েকে নয়।সে যতোই রুপে লক্ষী আর গুণে স্বরসতি হোক না কেনো।অঙ্কুরের কাছে তার তুলতুল ই বেস্ট।
চলবে