অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৯+৩০

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_২৯

অবশেষে ইহরা আর ফাহিনের বিয়ে সম্পন্ন হলো। আয়ুশী ইহরাকে ফাহিনের পাশে বসালো! ফাহিন আড়চোখে তাকিয়ে আছে।তাই দেখে ইহরা মুচকি হাসলো! ফাহিন একটু ঝুঁকে ইহরার কানে কানে বললো,”অবশেষে তোমায় পেলাম!মায়াবতী!”

হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো ইহরার।মুহূর্তেই এক রাশ লজ্জা ঘিরে ধরলো ওকে!পাশে থাকা নিজের ভালোবাসার মানুষটা আজ ওর স্বামী,ভাবতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।এসব ভাবনার মাঝেই খেয়াল হলো,বেশ কিছু মেয়েই ফাহিনকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে!মুহূর্তেই চটে গেলো ও!

“বিয়ের সময় বর মুখে রুমাল রাখে শুনেছিলাম!আপনার রুমাল কই?”

অন্ততপক্ষে এরকম একটা উত্তর এই মুহূর্তে ওর কথার সাপেক্ষে শুনতে হবে তা জানা ছিল না ফাহিনের!অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!

ইহরা নিম্নস্বরে বললো,”কি হলো?বলছেন না কেনো?”

“রুমাল দিয়ে কি হবে?”

“মুখ ঢেকে রাখবেন!”

“আরে ওগুলো ওল্ড ফ্যাশন,এখন কেউ এমন করে নাকি?”

“ওল্ড হোক আর নিউ আপনি মুখ ঢাকেন!”

“কিন্তু কেনো?লজ্জা আমার পাওয়ার কথা নাকি তোমার?”

“ও আগে বলবেন তো,সব মেয়েদের আপনার উপর ফিদা হওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন!”

“এহ?আমি এটা কখন বললাম?”

ইহরা মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো,এদিকে ফাহিন কিছুই বুঝলো না!

__________________________________

বিদায় শেষে নাহারের কোলে মাথা রেখে মন খারাপ করে বসে আছে আয়ুশী। ইহরাকে ছাড়া ওর যে মন টিকে! নাহারেরও মন খারাপ!তাও তা গোপন রেখে আয়ুশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন!

“কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে আপুকে ছাড়া!”

“এই পাগলী, এত মন খারাপ করিস কেনো? ইহরা তো কাছেই আছে!যখন মন চাইবে দেখতে পারবি!”

“সেটা তো তোমাকেও বলতে পারি!তুমি কেনো মন খারাপ করে আছো?”

“আরে,আমি কোথায় মন খারাপ করেছি?”

“হয়েছে,আর বলতে হবে না!ইস,এখন তুমি সারাদিন বাসায় একা থাকবে!এখন তোমায় কে দেখবে?আমিও তো ভার্সিটিতে যাই!”

“তোর এত ভাবা লাগবে না,আমি একাই যথেষ্ট!”

“হ্যাঁ,যে কি না শরীর খারাপ লাগলে ওষুধও খায় না!স্যারকে বলবো তোমার জন্য আয়া রাখতে!”

“আয়া কেনো রাখবে?একটা বিয়ে করে বউ নিয়ে আসলেই তো পারে!”

আয়ুশী চমকে তাকালো!

“বউ?”

“হুমম,বয়স তো আর কম হচ্ছে না তোর স্যার এর!আচ্ছা একটা কথা বলতো!”

“কি?”

“তোর স্যার কি কাউকে পছন্দ করে?”

আয়ুশী আমতা আমতা করলো!এখন নিজের কথা কি নিজে বলা যায়?

“আমি কি জানি ছোট আম্মু!স্যার কি আমাকে বলে নাকি!*

“আচ্ছা তোর কি মনে হয় যে,ডেইজিকে আয়ান পছন্দ করে?”

“স্যার আর ডেইজি আপু বেস্ট ফ্রেন্ড,এর বেশি কিছু আমার মনে হয় না!”

“মেয়েটা কিন্তু ভীষণ মিষ্টি!বিদেশে জন্ম,বিদেশেই বড় হওয়া!অথচ কি সুন্দর বাংলায় কথা বলে। বাঙালির মত চলে!দারুন লাগে!”

আয়ুশী কিছু বললো না!

“ডেইজিকে বউ করে আনলে কেমন হয় আয়ু?”

আয়ুশীর মন ধক করে উঠলো!এর প্রেক্ষিতে কি বলবে?মুখের উপর বলতে পারবে ও!কিন্তু উত্তর দেয়া লাগেনি ওর!তার আগেই আয়ান রুমে আসলো।

“মা!তোমার ওষুধ!বিয়ের চক্করে যে ওষুধ শেষ সেটাও বলো না!আর তোমরা এখনও চেঞ্জ করো নি কেনো?এত কাজ করলে,কই চেঞ্জ করে ঘুমাবে!তা না,গল্প করছো!”

“গল্প করছি না,আমাদের দুইজনের মন খারাপ!বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!আয়ুশী চিন্তা করছে আমাকে এখন কে দেখবে, ওরও তো ভার্সিটি আছে!”

“চিন্তা করো না,আমি তোমার আর বাবার দেখা শোনার জন্য লোক রেখেছি!”

“বাইরের লোক রাখার কি দরকার?”

“তো কাকে রাখবো?”

“বিয়ে করলেই তো হয়!একটা বউ আনলে আমার দেখভাল করতো!”

আয়ান দরজায় হেলান দিয়ে বললো,”এবার বুঝলাম!”

নাহার না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,”কি?”

আয়ান আয়ুশীর দিকে তাকাতেই আয়ুশী অন্যদিকে তাকালো! আয়ান হেসে বললো,”তো মেয়ে কে?”

আয়ুশী চোখ বড় বড় করে তাকালো!বাহ পল্টি খেয়ে নিলো?

“মেয়ে তো এখনও সিলেক্ট করিনি!আগে বলো তোমার কোনো পছন্দ আছে?”

আয়ান আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললো,”না!”

মুহূর্তেই আয়ুশীর মুখ ভার হয়ে গেলো!নাহারের কোলে মাথা রেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলো!

“পছন্দ নেই ,তবে একজনকে ভালোবাসি!”

হাসি ফুটলো আয়ুশীর মুখে।

“ডেইজি নাকি?”

চট করে মাথা তুলে তাকালো আয়ুশী। আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”ডেইজি আসলো কোথা থেকে? ও আমার জাস্ট বেস্ট ফ্রেন্ড!”

“তাহলে?”

“সময় হোক,আমি বলবো মা!এখন ঘুমাও…”

বলেই বেরিয়ে গেলো!

“কে হতে পারে আয়ু?”

“কে জানে!”

__________________________________

আজ ইহরার বৌ ভাত! সকাল সকাল ওদের বাড়িতে হাজির বেলাল, স্ব-পরিবারে!আয়ুশীকে দেখা মাত্রই এসে জড়িয়ে ধরলো ইহরা!

“আই মিসড ইউ সো মাচ বেহনা!”

“আই মিসড ইউ টু আপু!”

“দুইজন এমন চিপকা চিপকি কেন করছো?”(আয়ান)

“আমাকেও তো এমনে জড়িয়ে ধরো নাই,যেভাবে মিস রোগীকে ধরলে!”(ফাহিনে)

ইহরা চোখ পাকিয়ে তাকালো!আয়ুশী ঠোঁট চেপে হাসলো! আয়ান ওর কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো,”আমারও সেম অবজেকশন!”

আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

“শুধু মিস রোগীর জায়গায় ইহরা হবে!”

“হুশ!আপনার কথাবার্তা কেউ শুনলে নির্ঘাত মান সম্মান যাবে!ভাগেন…”

বলে ইহরাকে নিয়ে একটু সরে দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলো!

“ভাও!”,বলে আচমকা আয়ুশীকে পিছন থেকে মৃদু ধাক্কা দিলো সীমা!

“বাহ,এসে গেছিস!”

“এটা কিন্তু খুব খারাপ হলো!তোমাদের হলুদ থেকে শুরু করে বিয়েতে পর্যন্ত আসতে বলেছিলাম!আর তোমরা আসছো বৌ ভাতে !”

“আরে আপু! জানোই তো অসুস্থ ছিলাম!”(সীমা)

“কিন্তু ইভা তো ঠিক ছিল!”

ইভা হাত কচলাতে কচলাতে বললো,”আমি তো এখানে কাউকেই চিনি না!আয়ু আর তুমি থাকবে বিজি!আমি একা একা কি করতাম!তাই আরকি!”

“হেই হাতুশী!”

আবারও চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো আয়ুশী!বুঝতে পারলো না,এই ডেইজি সব কিছুই একটু চেষ্টা করলে বলতে পারে!কিন্তু ওর নামের বেলায় এমন কেন করে!

সীমা আর ইভা ফিক করে হেসে দিলো! ইহরা হেসে বললো,”আয়ুশী আপু!”

“আরে যাই হোক, ডাকলেই হলো!”

আয়ুশী ডেইজির দিকে তাকিয়ে বললো,”হ্যাঁ, হ্যাঁ!ডাকলেই হয়!যেমন গ’রু কে ছা’গল ডাকবেন,বা’ঘ কে সিং’হ ডাকবেন!একই সব…”

“আরে আরে রেগে যাচ্ছো কেনো হাতুশী!তুমি তো জানোই আমা..”

“হ্যাঁ,আমি জানি!আপনার বাংলা বেশি রপ্ত হয় নি!তাই বলে হ আর আ এর এমন গড়মিল করবেন?”

“আহ,আয়ু!বাদ দেও…আপু এরা আয়ুর ফ্রেন্ডস!সীমা আর ইভা!”

“ওয়াও সীমা আর ইভা!নাম গুলো তো ভারী মিষ্টি!আমি ডেইজি…”

সীমা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,”বাহ!আর আমার ডেইজি ফুল ভীষণ পছন্দ!”

এভাবেই ওরা গল্প করতে লাগলো!কিন্তু আয়ুশী চুপচাপ!ডেইজি যে ওর ফ্রেন্ডসদেরও পটিয়ে নিচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই!কিছুক্ষণ বাদেই ইহরা বলে উঠলো,”আয়ু,তুমি ওদের নিয়ে ওপরে যাও!একটু ফ্রেশ হোক!”

“আচ্ছা!”

ওরা তিনজন উপরে গেলো!গেস্ট রুমে ঢুকতেই ইভা বলতে লাগলো,”ডেইজি আপু কি মিষ্টি!”

“হুমম,দেখতেও মিষ্টি!আর ব্যবহারও…বিদেশে ছিলো বোঝাই যায় না!”(সীমা)

“ইশ আমার যদি একটা ভাই থাকতো,আপুকে ভাবী বানাতাম!”(ইভা)

“আমিও রে!”(সীমা)

আয়ুশী বিছানার উপর শব্দ করে বসলো,ইভার দিকে তাকিয়ে বললো,”এতই যখন পছন্দ হয়েছে,তোর সতীন বানিয়ে নিয়ে যা!”

“কিহ?”

“জি!যা যা…আর সীমা!তুই বরং নাহিম ভাইয়ার বউ কর!”

সীমা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো!আয়ুশী এই কয়দিনে বেশ বুঝেছে সীমা আর নাহিমের মাঝে কিছু মিছু আছে!তাই ও বললো!

“কেনো তোর ভালো লাগে না উনাকে?”(ইভা)

“মানুষ হিসেবে ভালো লাগে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে না!”

দুইজন চট করে আয়ুশীর দুই পাশে বসলো!

“কি ব্যাপার আয়ু?এভাবে বলছিস কেনো?”(ইভা)

আয়ুশী গাল ফুলিয়ে সবটা বললো।

“বাবাগো,এত দূর?কিন্তু উনাকে দেখে তো ভালো মানুষ লাগলো।”(ইভা)

“হুহহ,একমাত্র আমাকেই এসব বলে!”

সীমা মজা করে বললো,”তবে যাই বল, আয়ান স্যারের সাথে ডেইজি আপুকে দারুন মানাবে!তাই না ইভা?”

বলেই আয়ুশীর আড়ালে চোখ মা’রলো ওকে। ইভাও ঠোঁট চেপে হেসে বললো,”হ্যাঁ হ্যাঁ!একদম ঠিক.. নাইস জুটি!”

আয়ুশী উঠে দাড়িয়ে ওদের দিকে ঘুরে তাকালো!বুকে হাত গুজে মুচকি হেসে বলল,”অনেক কিউট জুটি হবে,তাই না?”

ইভা আর সীমা দাত কেলিয়ে বললো,”একছের!”

আয়ুশী আশেপাশে খুঁজে বিছানার ঝাড়ু পেলো! চট করে ওটা হাতে তুলে নিলো!

“অনেক কিউট তাই না?”

“আয়ু বেবি,বিছানা ঝাড়বি নাকি?এই সীমা ওঠ!বিছানা ঝাড়বে ও!”

“বিছানা না,এই রুমে উপস্থিত দুই পে’ত্নীকে আপাতত ঝাড়বো!”

“আয়ু বেবি,রেখে দে ওটা!দেখ আমরা এত কষ্ট করে সেজে এসেছি!নষ্ট হয়ে যাবে তো!”(সীমা)

“তোর সাজের বারোটা বাজাবো!দাড়া!”

বলেই তেড়ে গেলো!

“ইভা ভাগ!”

তিনজন মিলে ছোটাছুটি শুরু করলো!বেশি ছোটাছুটির কারণে বেখেয়ালে হুট করেই পা মচকে যায় ওর!মৃদু আর্তনাদ করে উঠে ও।সীমা আর ইভা তাড়াতাড়ি এসে ওকে ধরে বসায়!

“আয়ু ঠিক আছিস?”

“আহ, পায়ে লেগেছে!”

“দাড়া! স্যারকে ডাকি!”
বলে সীমা যেতে নিলেই আয়ুশী বাঁধা দেয়!

“ডাকিস না,এখন নাইলে অনুষ্ঠান ছেড়ে আমাকে নিয়ে পড়বে!”

“তাইলে কি করবি?”

“একটু বসি ঠিক হয়ে যাবে!”

এভাবেই বেশ অনেকক্ষণ বসে রইলো।কিন্তু ব্যাথা কমলো না।সীমা আর ইভা অজুহাত দিয়ে ব্যাপারটা সবার থেকে গোপন রাখলো পুরোটা সময়!
__________________________________

অনুষ্ঠান শেষে সবাই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলো! ইহরা আর ফাহিনও যাবে। আয়ুশীর পায়ের ব্যাথা একটু কমেছে!স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে সিড়ি দিয়ে নামতে গেলেই অসাবধানতাবশত আবার স্লিপ কেঁ’টে পড়ে যেতে নিলে সীমা ধরে!কিন্তু এতে পড়া থেকে বাঁচলেও পায়ে আবার ব্যাথা পেয়েছে!এবার আর দাড়াতে পারছে না ও! সিড়িতেই বসে পড়লো ও!নাহার, আয়ান আর ইহরা এগিয়ে এলো!

“আয়ু কি হয়েছে?”

“পায়ে আবার ব্যাথা পেয়েছে!”(সীমা)

“আবার বলতে?”(আয়ান)

সীমা সব বললো! ফলস্বরূপ সবাই কিছুক্ষণ বকলো!ততক্ষণে বাড়ির আর সবাই এসে গেছে!

“মিস রোগী!হাসপাতালের মত আজ আবার একই কাহিনী ঘটালে!”
আয়ুশী চট করে পা লুকালো!

“ডাক্তার,একদম আপনার পুরনো টেকনিক ইউজ করবেন না! জান বেরিয়ে যায় আমার!”

ফাহিনের মা বলে উঠলো,”ও এই পা নিয়ে যাবে কিভাবে?তার চেয়ে বরং থাকুক এখানে!”

“এই না,সবাই ওখান থাকবে!আমি একা এখানে কি করবো!”

ডেইজি মাঝ দিয়ে বললো,”কিন্তু তুমি তো হাঁটতে পারবে না!তুমি এখানেই থাকো আজ!”

আয়ুশী কটমট করে তাকালো!এই মেয়ে যে আয়ানের সাথে চিপকাবে ওর অনুপস্থিতে ,ঠিকই জানে ও!

জেদ করে উঠে দাড়ালো ও!

“আমি পারবো যেতে!”

এক পা এগিয়ে নিতে আয়ান ঝট করে ওকে কোলে তুলে নেয়!আয়ুশীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো!

“চলো,আপাতত এইটাই একমাত্র পথ!”

“আমাকে নামান,আমি হাঁটতে পারবো!”

“বেশি কথা বললে কোমরটাও হারাবে!”

“কেনো?”

“কারণ আমি আছার মা’রবো তাই!”

“কিন্তু…”

“চুপ!”

বলেই নেমে গেলো ও! ফাহিনের মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে সবাই আয়ানের পিছু পিছু চললো!চলার মাঝেই ইহরা নাহারকে ফিস ফিস করে বললো,”মামনি!”

“হুমম?”

“কেমন লাগছে দুইজনকে?”

“ভালোই তো লাগছে তোমাদের!”

“উফফ মামনি আমি না,ওই দুইজনকে!”

“বলতে কি চাস বলো তো!”

“মামনি!এখনও বুঝো না!তোমার ছেলে কি কেয়ারিং দেখিয়ে আয়ুশীকে নিয়ে যাচ্ছে!”

নাহার এক সেকেন্ড ভাবলো।অতঃপর ইহরার দিকে তাকাতেই ও চোখ মা’রলো।এতক্ষণে উনি বুঝলেন সবটা!

“আচ্ছা,তাই তো সেদিন আয়ানের বিয়ের কথা তুলতেই মুখ ভার করে ফেলেছিল!আর দুইজন চোখাচোখি করছিল!”

“এইতো,আমার সুইট মামনি!”

“ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ না!তাই না?”

“একছের!”

এদিকে ওদের কথা শুনে রাগে ফুসছে ডেইজি!

“এটা কিছুতেই হতে দিবো না আমি!কিছুতেই না…”

#চলবে#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩০

“এইযে ডা’ইনি আপু,শুনছেন?”

“এই তুমি কি বললে আমায়?”

“কই কি বললাম?”

“আমার নাম কি বললে?”

“ডা’ইনি!”

“ডা’ইনি আবার কি?”

“ওমা আপনি জানেন না?”

“না!”

“ইসস,ইউটিউবে সার্চ দিয়েন!রূপকথার ডা’ইনি!তাহলে পেয়ে যাবেন..তার আগে আমাকে একটু পানি দিন তো!পায়ের ব্যাথায় উঠা দায়!”

ডেইজি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পানি দিলো!বাড়িতে আসার পর সবাইকে ইমপ্রেস করার জন্য সে আয়ুশীর কেয়ার নিবে বলেছিল!শুরুতে আয়ুশী চটে গেলো,কারণ ও জানে ডেইজি আয়ানকে ওর কাছে আসতে দিবে না বলেই এমন করেছে!কিন্তু পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটলো!যাক,এই বাহানায় একটু মজা নেয়া যাবে ভেবে!এখন অব্দি ডেইজিকে কিছুক্ষণ পর পর খাটিয়েই যাচ্ছে!রাতে খেয়ে দেয়ে ডেইজি আয়ুশীর কাছেই শুয়েছিল!গেস্ট রুমে সীমা আর ইভা!নাহার ওদের আজকে এখানেই থাকতে বলেছেন! শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পড়েই আয়ুশী ডাক দিল!কিন্তু ডেইজি না শোনার ভান করে ওভাবেই রইলো!আয়ুশীও কম না!এতদিন মনে মনে দেয়া নামটা সরাসরি ই বলে দিলো!নিজের এমন উদ্ভট নাম শুনে না উঠে পারলো না।

“শুনো,আমার নাম ডেইজি!ওই নামেই ডাকবে..”

“আমার নাম আয়ুশী,কিন্তু আপনি তো হাতুশী ডাকেন!”

“আমি হায়ুশীই ডাকি!”

“উফফ!”

বির বির করে একপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো! ডেইজিও ভেং’চি কেঁ’টে শুয়ে পড়লো!

__________________________________

সকাল থেকে বিকাল অব্দি আয়ুশী নিজের সব কাজ ডেইজি কে দিয়ে করিয়েছে!যদিও ওর পায়ের ব্যাথা আগের মত বেশি নেই! হাঁটতে পারে,কিন্তু আপাতত ডেইজির করুন অবস্থা ইনজয় করছে ও!

“আয়ু,আমরা চলে যাচ্ছি!”(ইহরা)

“সেকি আপু,এত জলদি কেনো?”

“নতুন বিয়ে হয়েছে,এখনই বেড়ালে লোকে কি বলবে?”

“আচ্ছা চলো এগিয়ে দিয়ে আসি!”

বলেই বিছানা থেকে নেমে ইহরার কাছে এলো। তাই দেখে ডেইজি চোখ বড় বড় করে বলল,”তোমার না পায়ে ব্যাথা?”

আয়ুশী জিভ কাটলো!ভুলেই গিয়েছিল ডেইজি আছে এখানে!একটু আগেই ডেইজিকে দিয়ে নিজের জন্য নাস্তা আনালো পায়ে ব্যাথার অজুহাতে!

“হে হে!কমে গেছে…ছোট আম্মু ডাকে!টাটা..”

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ইহরা হেসে বললো,”আপু কিছু মনে করো না! ও একটু দুষ্টু!”

ডেইজি হাসলেও ভিতরে রাগে জ্বলছে!

ইহরাদের সাথে ইভারাও চলে গেলো!ডেইজি এখানে কয়দিন থাকবে বলে ওদের সাথে গেলো!তাতেই আয়ুশীর রাগের শেষ নেই!

__________________________________

সন্ধ্যায় বসে বসে টিভি দেখছে আয়ুশী আর নাহার।তখনই ডেইজি নিচে নেমে এলো।নাহারের পাশে বসে বললো,”আন্টি রাতে তো রুটি বানাবে তাই না?”

“হুমম!কেনো তুমি অন্য কিছু খাবে নাকি?”

“না,না!বলছিলাম কি..আমি রুটি বানাই?”

নাহার অবাক হয়ে বললো,”তুমি রুটিও বানাতে পারো?”

ডেইজি একটু হেসে বললো,”আমি প্রায় সবই পারি!”

“তা ঠিক আছে,কিন্তু তুমি অতিথি মানুষ!তোমাকে কিভাবে..”

“ধুর,আমি তো তোমার মেয়ের মত!আমি বানাবো…তোমরা শুধু দেখো!”

বলেই রান্না ঘরে গেলো!আয়ুশী ওড়নার আঁচল হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে ছিলো!বেশ বুঝতে পারছে নাহারকে ইমপ্রেস করতে এমন করছে!কিন্তু তা তো হচ্ছে না!

ডেইজি রুটির জন্য একটা কড়াইয়ে পানি বসালো, পরিমাপ মত লবণ দিয়ে আটা খুঁজতে লাগলো!কিন্তু পেলো না…তাই নাহারকে জিজ্ঞেস করতে বেরিয়ে এলো!এই ফাঁকে আয়ুশী রান্নাঘরে এলো!কড়াইয়ে রাখা পানি আরো বেশি করে লবণ দিয়ে দিলো!

“খুব ইমপ্রেস করার শখ না?এবার দেখি…কি করেন ডা’ইনি ম্যাম!”

ডেইজি আসছে দেখে বেরিয়ে গেলো ও!ডেইজি এসে সব তৈরি করতে লাগলো!সব বানানো শেষ…দুপুরের যা রান্না হয়েছে সেগুলো দিয়েই হয়ে যাবে রাতের খাবার!খাওয়ার সময় সব পরিবেশন করলো ডেইজি!আয়ুশীর মুখ থেকে যেনো হাসিই সরছে না! আয়ান সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলো!একটু আগেই অফিস থেকে ফিরেছে!ডেইজি নতুন বউ এর মত সবাইকে পরিবেশন করছে সেটা আয়ুশীর মোটেও ভালো লাগছে না!কিন্তু ও কিছু বলতেও পারবে না!সেই সাথে এসব কাজের অভ্যাস ওর নেই!এখন মনে হচ্ছে মা যখন শিখতে বলেছিল,তখন শিখে নিলে ভালো হতো!সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে আয়ান আর বেলাল সাহেব মুখে রুটি নিলেন সাথে সাথেই মুখ থেকে ফেলে দিলেন!

বেলাল সাহেব অবাক হয়ে বললেন,”নাহার,এসব কি?এত লবণ কেনো?”

“মা,আজকে লবণ এত বেশি দিয়েছো কেনো?মুখেই নেয়া যাচ্ছে না!”

নাহার আমতা আমতা করে বলল,”আজকে তো আমি কিছুই করিনি,ডেইজি বানিয়েছে সব!”

ডেইজি ভীত চোখে তাকিয়ে আছে!আয়ানের মেজাজ বিগড়ে গেছে!এমনেই আজকে সারাদিন কাজ করলো,তার উপর খেতে বসে এমন হলে ভালো লাগে?

“তোকে এত পাকনামি করতে কে বলেছে?এখন সবাই খাবে কি?”

“আহ, আয়ান!ভুল তো হতেই পারে!”

“মা..ভুল হতেই পারে,কিন্তু এখন তোমরা খাবে কি? বানাতেও তো সময় লাগবে!উফফ,জাস্ট অসহ্য!”

বলেই টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল।বেলাল সাহেব হেসে বললেন,”মা কিছু মনে করো না!কাজ করে এসেছে তো!তাই মেজাজ বিগড়ে আছে!”

“দাড়াও আমি বানিয়ে আনি আবার!”(নাহার)

“থাক, এত কষ্ট করতে হবে না!আজকের দিনটা ম্যানেজ কর!চলো ঘরে!আয়ু আর ডেইজি মা,তোমরা ঘরে বিস্কিট খেয়ে শুয়ে পড় আজ!আমরাও এই দিয়ে কাজ চালিয়ে দেই! বুঝোই তো তোমাদের আন্টির বয়স হয়েছে!এখন খাটাখাটি না করাই ভালো!”

“আরে এখন সব না খেয়ে থাকবে নাকি!”(নাহার)

“দেখো নাহার,আজ এমনেই ভালো লাগছে না!আর তোমারও শরীর চলে না!প্লিজ চলো!”

বলেই নাহারকে নিয়ে চলে গেলেন!ডেইজির চোখ পানিতে ভরে গেলো!ওর কারণে সব না খেয়ে চলে গেলো!ভেবেই আয়ুশীর রুমে চলে গেলো।এদিকে শুধু আয়ুশী টেবিলে বসে আছে মাথা নিচু করে,ডেইজিকে জব্দ করতে গিয়ে এত গুলো মানুষের খাওয়া নষ্ট করলো ও।মোটেই ভালো লাগছে না ওর!এখন বুঝতে পারছে এমনটা করা মোটেই ঠিক হয়নি!কিন্তু বুঝে লাভ কি? যা হওয়ার তো হয়েই গেছে!হুট করেই রান্নাঘরের দিকে গেলো ও!আড়াল থেকে ডেইজিকে লক্ষ্য করেছিল ও!সে হিসেবেই রুটির ডো করলো!এখন এই রুটি বেলতে,ভাজতে আরও সময় লাগবে!উপায় না পেয়ে ডেইজির কাছে গেলো।বিছানার উপর মন খারাপ করে বসে আছে ডেইজি! হ্যাঁ হয়তো আয়ানের জন্য একটু স্বার্থপর হয়েছে ও।কিন্তু এমন কিছু কখনও চায়নি!

আয়ুশী গলা ঝেড়ে বললো,”আপু?”

ডেইজি এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো!ভাবছে আয়ুশী হয়তো অপমান করতে এসেছে!

“একটু হেল্প করবে?”

“কি হেল্প?”

“রুটি বানাতে!”

ডেইজি অবাক হয়ে তাকালো!

“আসলে সবাই এভাবে না খেয়ে থাকবে,তাই ভাবলাম এবার বানাই!সব রেডি,শুধু তুমি একটু ভেজে দিবে?”

ডেইজি কিছু না বলে উঠে দাড়ালো! আয়ুশীও সম্মতির লক্ষণ পেয়ে নিচে গেলো!দুইজন মিলে কম সময়ে রুটি বানিয়ে ফেললো!আয়ুশী প্লেটে খাবার নিয়ে ডেইজিকে বললো দিয়ে আসতে।কিন্তু ডেইজি গেলো না।আয়ুশী বুঝতে পারলো কেনো যেতে চাইছে না!নিজেই নিয়ে গেলো ছোট আম্মু – আব্বুর কাছে।তারা একটু বকাবকি করলো,এখন এসব করার জন্য।কিন্তু পাত্তা দিল না।এরপর গেলো আয়ানের কাছে।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো আয়ান নেই!বেলকনিতে উকি মারতেই দেখলো ফোনে কথা বলছে কাজ নিয়ে।নিজের উপস্থিতি বুঝাতে একটু কেশে নিলো!

“তুমি এখানে?”

“খাবার!”

“এই খাবার খাওয়া যায়?”

“আহহহ!আমি আর ডেইজি আপু মিলে আবার বানিয়েছি!”

“বাহ,তাই নাকি!”

“হুমম!”

“তাহলে খাইয়ে দেও!”

আয়ুশী ইতস্তত করলো!

“না খাইয়ে দিলে নিয়ে যাও!”

“এত জেদী কেনো আপনি?”

“জেদী না হলে তোমায় পেতাম নাকি?”

আয়ুশী হাসলো! আয়ান ফোন কাজ করতে করতেই খেলো!দুইজনে নিজেদের মুহূর্তে এতটাই বিভোর যে, পাশের বারান্দায় থাকা ডেইজিকে খেয়ালে নিলো না।ডেইজি অপলক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!কয়েক ফোঁটা জল চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তেই তা মুছে ভিতরে চলে গেলো! আয়ানকে খাইয়ে নিচে এসে পড়লো ও। ব্যাস্ত থাকায় আয়ান ওকে নিজেই খেয়ে নিতে বললো।আয়ুশী আরেক প্লেটে নিজের জন্য খাবার নিলো।কিছু একটা ভেবে ডেইজির জন্যেও নিয়ে গেলো!

ডেইজি মাথায় হাত রেখে বিছানায় শুয়ে ছিলো!

“আপু!”

“আবার কি?”

“খাবে না?”

“না!”

“উঠো!”

ডেইজি নিরুত্তর।

“আপু!”

ডেইজি তাও সাড়া দিলো না।আয়ুশী বুঝলো এভাবে হবে না।রুটি একটু ছিঁড়ে তরকারি নিলো!তারপর বললো

“এই ডা’ইনি আপু!”

এবারে কাজ হলো।ঝড়ের বেগে উঠে ডেইজি সবে চিল্লাতে যাবে তখনই আয়ুশী ওর মুখে রুটি পুড়ে দিলো।
মুচকি হেসে বলল,”না খেয়ে থাকলে,আমার সাথে ঝগড়া করার শক্তি কই পাবে শুনি?”

ডেইজি ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকালো!আয়ুশী মনে মনে বললো,”আই এম সরি!আমি এত কিছু হোক চাইনি!”

#চলবে

(দুঃখিত দেরি আর ছোট পর্বের জন্য!ফোন পাইনি আজ!পাওয়া মাত্রই যতটুকু পেরেছি লিখেছি!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here