অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৭+৩৮ ও শেষ

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩৭

খুনশুটি,হাসি ঠাট্টা, ঝগ/ড়া নিয়েই পার হলো একসপ্তাহ।আজ আয়ুশী আর আয়ানের গায়ে হলুদ! আয়ান আয়ুশীকে হলুদ লাগিয়ে নিচে নামছিলো ডেইজি!ছাদে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে!আজকে খুব একটা ভালো করে হাঁটতে পারছে না শাড়ি পড়ে!শাড়ি ঠিক করতেই রুমে যাচ্ছিলো ও!সিড়ি থেকে নামতে গিয়ে অসাবধানতায় শাড়িতে পা বেজে পড়ে যেতে নিলেই কেউ একজন আগলে নিলো। কোনো পুরুষালি হাত নিজের উন্মুক্ত পেটে আবিষ্কার করলো ও!শাড়িটা সরে গেছে কখন টেরও পায়নি!হিতাহিত জ্ঞান ফিরতেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে জোড়ে একটা চ’র মা’র’লো হাতের অধিকারী কে!আফরান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!ডেইজি জ্ঞান শূন্য হয়ে রইলো…কিছুই বুঝতে পারলো না কি করছে বা করেছে!উপায় না পেয়ে শাড়ির আঁচল ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিয়ে আরেক হাতে কুচি ধরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেলো ও!আফরান এখনও অবাক হয়ে ওখানেই গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে!ঘটনার আকস্মিকতায় দুইজনই স্তব্ধ!রুমে এসে বিছানায় বসলো ডেইজি!ছোট থেকে ফাহিন ও আয়ানের সঙ্গ পেতো বেশি বলে অন্য কোনো ছেলে ফ্রেন্ড বানায়নি!বিদেশে আর সবাই ছোট ছোট ড্রেস পড়লেও, ও আয়ানের কথামত শালীন পোশাকে নিজেকে আবদ্ধ রাখতো! আয়ান আর ফাহিন বন্ধু হলেও কখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি!এমনকি বিদেশে থাকাকালীনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি!আজ প্রথম কোনো পুরুষের হাতের ছোঁয়া পেয়েছে!পুরো শরীর ওর ঘিন ঘিন করছে! কিছুক্ষন বাদে শান্ত হলো ও…পুরো ঘটনায় আফরানের কোনো দোষ ছিল না। সে তো ওকে পরা থেকে বাঁচাতেই সাহায্য করলো! পেটে হাত রাখা ব্যাপারটা সম্পূর্ণ একটি দু’র্ঘটনা..এভাবে ওকে মা’রাটা ঠিক হয়নি!দু হাতে চুল খামচে ধরলো ও….জীবনটা ওর বড্ড এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সত্যি কি এই এলোমেলো জীবনে কাউকে আনা দরকার?

__________________________________

সীমা আর ইভার ফটোশুট করছে ফাহিন।দুইজন একপ্রকার জোর করেই ছবি তুলছে ওকে দিয়ে!বেচারা ওদের কারণে নিজের বউয়ের কাছে যেতে পারছে না!

“ডিয়ার শালিকারা!আর কত ছবি তুলবে তোমরা?”

“ভাইয়া,মাত্রই তো কয়েকটা হলো!”(সীমা)

“দুইশো প্লাস হয়ে গেছে!”

“না ভাইয়া আর লাগবে না!”(ইভা)

ফাহিন এতক্ষণে রেহাই পেলো!সোজা চলে গেলো স্টেজের কাছে!

সীমা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো,”আমার তো হয়নি!”

“উফফ,শিম!ভাইয়া কি নিজের বউ এর ছবি তুলবে না নাকি?”

সীমা কিছুক্ষণ ভাবলো…

“তাও ঠিক!”

হুট করেই ওর দুই গালে কেউ হলুদ লাগিয়ে দিল!

“কোন ফা’জিল রে?আমার মেকআপ নষ্ট করলো!”

বলে পিছে ঘুরতেই নাহিমকে দেখতে পেলো! চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো!ইভা ওদের একান্ত সময় দিতে আলাদা হয়ে গেলো!

“আপনি?”

“কেনো অন্য কাউকে আশা করেছিস নাকি?”

“না মানে,আপনি না বললেন আসবেন না?”

“এখন মন চাইলো,এসে গেলাম!”

সীমার উত্তরটা পছন্দ হলো না।বেশি আফসোস হচ্ছে ওর হলুদ নিয়ে!এত কষ্ট করে সাজলো,আর ঠিক মত ছবি না তুলেই মেকআপ নষ্ট করে দিলো।রাগে ফুসে উঠলো ও!নিজের গাল থেকে হলুদ নিয়ে নাহিমকে বললো,”ওই ছেলেগুলো কি কিউট না?”

নাহিম তৎক্ষণাৎ সীমার দৃষ্টি অনুসারে তাকালো!সেই ফাঁকেই সীমা ওর গালে হলুদ লাগিয়ে দৌড়ে স্টেজের দিকে গেলো! নাহিম বির বির করে বললো,”ফা’জিল মাইয়া!”

__________________________________

স্টেজে আয়ুশীর দুইপাশে বসে আছে ইহরা আর ফাহিন। দুইজনই আয়ুশীর সাথে বসে ছবি তুলছে। আয়ান গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সেও যে এখানে আছে তার কোনো হুস এদের নাই। আফরান ওদের ছবি তুলে দিচ্ছে।মন খারাপ করে থাকা ওর ডিকশনারিতে নেই!কিছুক্ষণ পরেই ডেইজি এলো । আফরান এক পলক ডেইজিকে দেখে ছবি তোলায় মন দিল।ব্যাপারটা ডেইজির মনে দাগ কাটলো! আর দিন তো একবার তাকালে কেউ না বলা অব্দি চোখ সরতো না ওর! ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ওদের কাছে দাড়ালো! ইহরা ওকে নিজের পাশে বসালো!আফরান চারজনের ছবি নিতে গিয়েও থেমে গেলো!ক্যামেরায় চোখ রেখেই বললো,”হাসি মুখ ছাড়া ছবি ভালো আসে না!”

ইহরা না বুঝে বললো,”মানে?”

আফরান ওদের ডেইজির দিকে তাকিয়ে বললো,”স্মাইল প্লিজ!”

তিনজনের নজর ডেইজির উপর গেলো!এতে ডেইজি ভরকে গেল। মেকি হাসি মুখে ফুটিয়ে তুললো!

“ভাই এবার আমাকেও ফ্রেমে নে!”(আয়ান)

সবাই এক সাথে হেসে উঠলো….

__________________________________

বাড়িতে মানুষ গিজ গিজ করছে।সীমা,ইভা, ইহরা,আয়ুশী আর ডেইজি সহ আরো দুইটা মেয়ে একসাথে এক ঘর শেয়ার করছে!এত লোকের মাঝে ঘুম আসছিল না ডেইজির!তাই একটু রুমের বাইরে এলো!ভালো লাগছে না কিছু ওর…করিডোরের শেষ প্রান্তে গিয়ে জানালার কাছে দাড়ালো ও!ওখান থেকেই ছাদের সিড়ি! হঠাৎ খেয়াল হলো ছাদের দরজা খোলা! সাধারণত এই সময় দরজা খোলা থাকে না!কেউ ভুলে খুলে রেখেছে ভেবে উঠে গেট লাগিয়ে দিতে নিলো!তখনই কেউ হাত দিয়ে বাঁধা দিলো! আফরান বিচলিত কণ্ঠে বললো,”ওগো বিদেশিনী,আমাকে কি ছাদে বন্দী বানানোর প্ল্যান করছো?”

“আপনি এত রাতে?”

“আমার কাজ করছিলাম!”

বলেই দূরে গিয়ে দাড়ালো!ডেইজি ফিরে যেতে নিয়েও যায় না!ভিতরে ঢুকে আফরানের কাছে দাড়ালো!

“সিগারেট খাচ্ছিলেন বুঝি?”

“নাতো!”

“মিথ্যে বলা লাগবে না!লুকিয়ে রাখলে কি হবে?ধোয়া উড়ছে!”

আফরান হেসে সিগারেট নিভিয়ে দিয়ে বললো,”বদভ্যাস হয়ে গেছে!চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারিনি!”

ডেইজি কিছু বললো না।

“এত রাতে যে?”

“ঘুম আসছিলো না ,তাই হাঁটতে বের হলাম!”

“ওহ!”

“দুঃখিত!”

“তখনের ব্যাপারটা নিতান্তই একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা!ওটা নিয়ে সরি বলার কিছুই নেই!”

“আমার তো আপনাকে ওভাবে মা’রা…”

ডেইজিকে থামিয়ে আফরান বললো,”আপনি একজন মেয়ে!সেখানে আপনার ওভাবে রিয়েক্ট করা ভুল কিছুই ছিল না।আমি কিছু মনে করিনি!”

“তবে ছবি তুলার সময় আমার দিকে ঠিক মত তাকালেন না কেনো?”

আফরান ভ্রু কুঁচকে তাকালো!ডেইজি জিভ কাটলো!মুখ ফসকে বলে ফেলেছে কথাটা!আফরান ঠোঁট চেপে হেসে বললো,”আপনি এসবও খেয়াল করেন!”

ডেইজি আমতা আমতা করতে লাগলো।ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে ওর।ওর অস্বস্তি বাড়িয়ে আফরান আবার বললো,”আমার তাকানোটা মিস করেছেন বুঝি?”

“আমি ওটা বলিনি!”

আফরান জোড়ে হেসে ফেললো।ডেইজির দিকে একটু ঝুঁকে বললো,”আপনার দিকে তাকালে চোখ সরানো দায় বিদেশিনী!তাই তো তাকাইনি!যদি এত লোকের সামনে অস্বস্তিবোধ করেন…যেমন এখন করছেন!”

আর এক মুহূর্ত থাকলো না ডেইজি!দৌড়ে বেরিয়ে এলো!তাই দেখে হেসে ফেললো আফরান…

“বিদেশিনীর মনের কোটর আস্তে আস্তে খুলছে মনে হয়!”

ভেবেই আরেকটা সিগারেট ধরালো!

__________________________________

রুমের সামনে এসে হাপাতে লাগলো ডেইজি! কি অদ্ভুত অনুভূতি…বুকের মাঝে যেনো উত্থাল পাতাল শুরু হয়েছে!তখনকার কথা বলার জন্য নিজেকে নিজেই বকলো ও।রুমের ভিতরে ঢুকতেই দেখলো আয়ুশী নিজের জায়গায় নেই!বেলকনিতে উকি দিতেই দেখলো আয়ুশী পাশের বেলকনিতে থাকা আয়ানের সাথে কথা বলছে!অন্ধকারে হয়তো খেয়াল করেনি ডেইজি রুমে নেই!উকি দিয়ে ওদের খুনশুটি দেখতে লাগলো ও।

আয়ুশী আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,”আজকে মনে হয় অমাবস্যা!চাঁদের দেখা নেই কোনো!”

“কোথায় আমার কাছে তো পূর্ণিমা লাগছে!”

আয়ুশী বিস্মিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”চাঁদ না থাকলে পূর্ণিমা হবে কি করে?”

“চাঁদ আছে তো!”

আয়ুশী কোমরে হাত দিয়ে বললো,”কোথায়?আমি দেখতে পাচ্ছি না কেনো শুনি?চাঁদ কি আপনাকেই দেখা দিচ্ছে শুধু?”

আয়ান হেসে বললো,”আয়নার সামনে গেলে ঠিকই দেখতে পারবে!”

কিছুক্ষণ ভেবে কথাটার মানে উদঘটন করলো ও!মাথা নিচু করে ঠোঁট চেপে হাসলো!সেই হাসিতেই আবার মুগ্ধ হয়ে আয়ান বললো,”আমার ব্যাক্তিগত চাঁদ তুমি! একান্তই ব্যক্তিগত…”

আয়ুশী আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।মনে মনে বললো,”আম্মু,আব্বু…তোমরা দেখতে পাচ্ছো আমায়?দেখো না!তোমাদের মেয়ের এক বিশাল প্রাপ্তি হয়েছে!এমন এক মানুষ যে কিনা আমার ব্যাক্তিগত সম্পদ.. একান্তই আমার!”

এদিকে আয়ান নিষ্পলক তাকিয়ে আয়ুশীকে দেখতে ব্যাস্ত!

ওদের মুহুর্ত দেখে তৃপ্তির হাসি হাসলো ডেইজি!আচ্ছা সেও তো এমন ভালোবাসা পেতে চায়!সে কি পাবে?মুহূর্তেই আফরানের মুখ ভেসে উঠলো।মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটলো।পরক্ষণেই হাসি মিলিয়ে দিয়ে নিজের মাথায় নিজেই চা’টি মে’রে বললো,”পা’গল হয়ে গেছি নাকি?কিসব ভাবছি…ঘুমানো প্রয়োজন!”

বলেই চাদর মুড়ো দিয়ে শুয়ে পড়লো!ভাবতে ইচ্ছুক নয় এখন কাউকে নিয়ে…
#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩৮

জোড়ে দরজা লাগানোর শব্দে চমকে উঠলো আয়ুশী,সীমা, ইহরা,ইভা সহ পার্লার থেকে আসা মেয়ে দুইটি!ডেইজি ওদের এমন চাহুনি দেখেও কিছু না বলে রাগে ফুসতে, ফুসতে বিছানায় বসলো,আয়ুশীর পাশে!সীমা,ইভা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজেদের সাজে মন দিল!বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা!না সাজলে চলে? ইহরা আর আয়ুশীকে আগেই রেডি করিয়ে রাখা হয়েছে! ইহরাও সীমা আর ইভাকে সাজাতে হেল্প করছে।আয়ুশী চিন্তিত হয়ে ডেইজিকে জিজ্ঞেস করলো,

“কিছু কি হয়েছে আপু?”

ডেইজি সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো,”না!”

“এমন রেগে আছো কেনো?”

ডেইজি আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো!

“এখনকার সব ছেলেরাই চা’পা’বা’জ,তাই না?”

আয়ুশী ঠিক বুঝলো না।

“এহ?”

“এক মেয়ের পিছু ঘুর ঘুর করবে,সেই মেয়ে পাত্তা না দিলেই অন্য মেয়ের কাছে চলে যাবে!এটাই ছেলেদের রীতি!”

“হঠাৎ এসব বলছো কেনো?”(সীমা)

“বলবো না কেনো? কাল অব্দি আমার পিছে ঘুর ঘুর করলো,আর আজই অন্য মেয়েদের সাথে কি হেসে খেলে কথা বলছে!”

ইহরা চমকে গিয়ে বললো,”আফরান ভাইয়ার কথা বলছো?”

“তো আর কে হবে?”

চারজন হকচকিয়ে তাকালো!ওদের এভাবে তাকানোতে ভরকে গেলো ও!ওর মন জানান দিলো,কথাটা এদের বলা ঠিক হয়নি!আয়ুশী এক আঙ্গুল দিয়ে ডেইজির হাতে খোচা দিয়ে বললো,”কি হয়েছে বলো তো!”

ডেইজি গম্ভীর গলায় বললো,”কিছু না!”

সবাই হতাশ হলো।সীমা ,ইভার সাজ শেষ হতেই পার্লারের মেয়েরা চলে গেলো।

“চলো এবার কাজে লেগে পড়ি!”(সীমা)

“কি কাজ?”(আয়ুশী)

সীমা দাত কেলিয়ে বললো,”দুলাভাইয়ের পকেট খালি করার কাজ!”

“ডেইজি আপু চলো!”(ইভা)

“না তোমরা যাও!”(ডেইজি)

“কেনো?”(ইহরা)

“আয়ু এখানে একা হয়ে যাবে!”

তিনজন বিষয়টা ভেবে দেখলো!কিছুক্ষণ পর সীমা বললো,”আচ্ছা তুমি থাকো!আমি তোমার ভাগেরটা দিয়ে যাবো!”
বলেই বেরিয়ে গেলো!

ডেইজি হাসলো…

“এবার বলো আসল ঘটনা!”

আয়ুশীর কোথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ডেইজি!

“কিসের ঘটনা?”

“রেগে ছিলে কেনো তখন?একদম কিছু না বলবে না…”

ডেইজি কিছুক্ষণ চুপ রইলো!

অতঃপর বললো,”নিচে গেছিলাম দেখতে সব ঠিকঠাক আছে কিনা।তখন দেখি তোমার ঐ কাজিন দেবর কিছু মেয়ের সাথে কেমন হেসে খেলে কথা বলছে!আর দিন তো আমাকে দেখলে চোখ সরাতো না!আজ উনার পাশ দিয়ে হেঁটে আসলাম,আমাকে দেখলোই না..এত দিন ফ্লার্ট করতো শুধু!”

আয়ুশী হেসে বললো,”তাই বুঝি?”

ডেইজি ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো,”একদম মজা নিবে না!”

“তাকে বললেই তো পারো!”

“কি?”

“তোমার মনের কথা!”

ডেইজি চুপ করে গেলো!কিছুক্ষণ পর বললো,”তুমি ভুল ভাবছো,আমার মনে এখনও তার প্রতি ভালোবাসার ফিলিংস নেই! যা আছে তা কেবলই একজন মানুষের প্রতি ভালোলাগা!”

“ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসার সূচনা হয়!”

ডেইজি চুপ করে রইলো!আয়ুশী ডেইজির হাত ধরে বললো,”জীবনকে আরো একটা সুযোগ দিয়ে দেখো আপু!এবার সত্যি হতাশ হবে না!কারণ এবারের মানুষটা শুরুতেই তোমাতে আসক্ত!”

ডেইজি কিছু বলতে নিবে তার আগেই সীমা আর ইভা ঢুকলো!
“বান্ধবী,টাকা পাইছি!”(সীমা)

আয়ুশী হাসলো!ইভা তাড়া দিয়ে বললো,”আয়ু বেবি বিছানার উপরে বস ঠিক করে,কাজী আসছে!”

ইভার কথা মত আয়ুশী উপরে উঠে বসলো।কিছুক্ষণ পর কাজী এসে বিয়ে পড়ালো।অবশেষে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।সকলে খুশিতে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো!

__________________________________

স্টেজে বসে আছে আয়ান আর আয়ুশী। আয়ান আয়ুশীর দিকেই তাকিয়ে আছে।আশেপাশে সবাই কত কি বলছে।সেদিকে ওর খেয়াল নেই! ও বধূবেশে বসে থাকা আয়ুশীকেই দেখতে ব্যাস্ত!বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ুশী আয়ানের কিছুটা কাছে এসে বললো,”এভাবে নির্ল’জ্জের মতো তাকিয়ে আছেন কেনো?সবাই কি ভাববে?”

“কে কি ভাবলো আমার তাতে কিছু আসে যায় না মিস কাঠগোলাপ!”

“বাহ ঝামেলা থেকে কাঠগোলাপ?”

“আমার বউ তো আর সব সময় ঝামেলা করে না এখন!তাই একটু আপডেট করলাম!”

“তোমাদের ফুসুর ফুসুর শেষ হলো?”(ইহরা)

আয়ুশী তৎক্ষণাৎ সরে গেলো! আয়ান বিরক্তির সুরে বলল,”শেষ হতে দিলে কই?দিলে তো ভাগিয়ে?”

ফাহিন মজার ছলে বললো,”আরে ভাই,দেখ বিয়েতে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে। ওদের দিকেও নজর দে…”

আয়ান আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললো,”আমার কাছে আমার অর্ধাঙ্গিনীই সেরা!আর কাউকে দেখা লাগবে না!”

“এই হলো প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ!আরেকজনকে দেখো বউ রেখে অন্যকে চেক আউট করতে ব্যাস্ত!”,বলেই ফাহিনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো ইহরা!

“আরে আমি তো মজা করেছি!”

ইহরা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

“আয়ান বোঝা না!”

আয়ানের সেদিকে কোনো খেয়াল ই নেই!সে তো আয়ুশী তে ব্যাস্ত…আয়ুশী গালে হাত দিয়ে ওদের ঝ’গড়া দেখছে…

“ও বউ!”

ইহরা উত্তর দিলো না!

“আরে আমি তো আয়ুশীকে রাগাবো ভেবে বলেছিলাম!কিন্তু এখন দেখি তুমিই রেগে যাচ্ছো!আমি তো জানিও না এখানে কে কে এসেছে!”
ইহরা ফাহিনের আড়ালে মুচকি হাসলো!কিন্তু গম্ভীরতা বজায় রেখে বললো,”কানে ধরে উঠ বস করো!”
“মানে?এই বিয়ে বাড়িতে?”

“হ্যাঁ,আর না করলে…আমি গেলাম!খবরদার আমার কাছে আসবে না!”

বলে যেতে নিলেই ফাহিন বললো,”করছি করছি!”

কানে হাত দিতে নিলেই ইহরা বাঁধা দিল!হেসে বললো,”হয়েছে,বউয়ের বাধ্য জামাই এর মত বিহেভ করতে হবে না!আমি জানি তুমি কেমন!বুঝলে?”

ফাহিন হেসে ইহরাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো!সবার আড়ালে ইহরার কানে কানে বললো,”ভালোবাসি মায়াবতী!”

ইহরাও ফিস ফিস করে বললো,”আমিও ভালোবাসি ধর্মাবতার!”

বলেই হেসে দিলো!

সীমা তার ক্যামেরায় সবার মুহুর্ত বন্দী করছে!আজকের ক্যামেরাম্যান এর দায়িত্ব ও পালন করছে!ছবি তোলার মাঝেই কানের ঝুমকার সাথে চুল আটকে গেলো। হাতে ক্যামেরা থাকায় ঠিক মত ছাড়াতে পারছে না।তখনই কেউ ওকে ছাড়াতে সাহায্য করলো!সীমা ক্যামেরা চেক করতে করতেই বললো,”এই আপনার আসার সময় হলো?বিয়ে তো শেষ!”

নাহিম হেসে বললো,”কাজও শেষ আমার!”

“কি এমন কাজ করছিলেন শুনি?”

নাহিম হেসে সীমাকে এক সাইড এ নিয়ে গেলো!

“আরে এখানে কেনো আনলেন?”

কিছু একটার রিপোর্ট সীমার হাতে দিলো।সীমা জিজ্ঞাশাসূচক দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,”তোমার বাবার মেডিক্যাল রিপোর্ট বলছে,তিনি আবার হাঁটতে পারবেন!কিছু থেরাপি দেয়া লাগবে শুধু!”

চমকে তাকালো সীমা!দ্রুত রিপোর্ট চেক করতে লাগলো..চোখের কোণে অশ্রু জমা হলো! রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছে তখন নাহিম ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো ,”কথা বলো!”

“কে?”

“শুনে দেখো!”

সীমা ফোন নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশে ওর সৎ মায়ের গলা শোনা গেলো!

“কেমন আছিস মা?”

সীমা নিরুত্তর!

“কথা বলবি না?”

সীমা তাও কিছু বললো না।রূপা(সীমার সৎ মা) ডুকরে কেঁদে দিলেন!

“মারে আমার নিজ ভাইয়ের কু বুদ্ধিতে আমি এমন নির্দয়,পাষাণ হয়ে গেছিলাম!ঠিক ভুল কিছুই বুঝি নাই…আজকে নাহিম আইয়া আমাদের সব বুঝায়ছে!সম্পত্তির লোভে আর তোর বাবার এমন অবস্থা দেখে আমারে পুরাই বেদিকে লইয়া গেছিলো আমার ওই ভাই!পারলে এই পাপীরে মাফ কইরা দিস!আমি আর কোনোদিন তোগোর সামনে আমু না! তোগোর বাড়ি,ঘর দুয়ার সব তোগোরই আছে…শেষ বারের মত কথা কইয়া নিলাম!ভালো থাকিস..মাফ কইরা দিস আমারে!”

জমা অশ্রুটুকু গড়িয়ে পড়লো ওর।এক হাতে মুছে নিয়ে বললো,”কেমন আছো মা?তারেক কেমন আছে?”

“ভালা মা!কথা কইবি?”

“উহু,এবার বাড়ি গেলেই একবারে কথা বলবো।আমার জন্য কিন্তু খেজুরের রসের পায়েস রান্না করবে!সেই ছোট বেলার মত!”

রূপা কাঁদলেন!

“আয় আয়,তোরে নিজের হাতে খাওয়ামু!উনারেও আনিস!আমি পায়ে ধরে মাফ চামু মা!”

সীমা হাসলো…কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিল!ফোনটা নাহিমকে দিয়ে হেসে বললো,”তাহলে এই ছিল আপনার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ?”

“হুমম,ভাবলাম তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ের সুযোগেই তোমার অতীতকে শুধরে দেই!এবার খুশি তো?”

“আজকে যে তুমি করে বলছেন?”

নাহিম মাথা চুলকে বললো,”হবু বউকে তুই করে বললে লোক কি বলবে?”

“ধন্যবাদ!”

“তুমি বলার জন্য?”

“না ,আমার পরিবার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য!”

“আমি শুধু তোমার মুখে হাসি দেখতে চেয়েছি শ্যামবতী!”

সীমা নাহিমকে হুট করেই জড়িয়ে ধরলো।

কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,”ভালোবাসি!ভীষণ ভালোবাসি… জানেন আয়ু বলেছিলো,আমার লাইফেও কেউ আসবে।যে আমাকে সবটা দিয়ে ভালোবাসবে!আর এটাই সত্যি হলো…ভালোবাসি!”

“আমিও ভালোবাসি আমার শ্যামবতীকে!বড্ড ভালোবাসি..”

__________________________________

এক কোণার টেবিলে বসে আছে ইভা!মুড তার বেজায় খারাপ!এখানে এসেও জুনাইদ ফোনে ব্যাস্ত! এত কাজ কে করে?জুনাইদ ওর সামনে বসতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো ও!

“কি হলো?”

“মাঝে মাঝে ভাবি!”

“কি?”

“আপনি আমাকে বিয়ে না করে কাজকে বিয়ে করলেই তো পারতেন!”

“আরে বুঝোই তো..কাজ না করলে চলবে কি করে?”

“তাই বলে এখানেও?”

“কাজ আছে দেখেই আমি এখনো ঠিক আছি!নাহলে অন্য সরকারি চাকরিওয়ালাদের মত ভুঁড়ি আর টাক থাকতো!”

জুনাইদের কথায় হাসলো ইভা!

“সীমা আর নাহিম কে দেখলাম!”

“সে তো আগেও দেখছেন!”

“পাগলী..সেই দেখা নয়!”

“তাহলে?”

“দুইজন নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করছিল!”

ইভা কিছু বললো না।

“আমার পো’ড়া কপাল!বিয়ের বিয়ের সাত মাস হয়ে গেলো,তাও বউটা এখনও কিছুই বললো না!”

ইভা হাসলো!

“হ্যাঁ হ্যাঁ,হেসে হেসেই এই পর্যন্ত আসলে!”

ইভা এবার জোড়ে জোড়ে হেসে দিল!জুনাইদ কিছুক্ষণ ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইলো,পরক্ষণে নিজেও হেসে দিলো! কিছুক্ষণ পর ইভা হাসি থামিয়ে বলল,”কংগ্রাচুলেশন!”

” কিসের জন্য ?”

“বাবা হওয়ার জন্য!”

জুনাইদ প্রথমে কিছু বুঝতে পারল না কিন্তু কিছুক্ষণ পর কথাটার মানে বুঝতে পেরেই আমতা আমতা করতে লাগলো।

“মানে আমি…মানে তুমি …..মানে..”

জুনাইদের অবস্থা দেখে ইভা হাসলো। মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। হুট করেই জুনাইদ উঠে ওকে জড়িয়ে ধরলো।

“বেস্ট গিফট ফর এভার। আই লাভ ইউ ইভা মনি …আই লাভ ইউ আ লট!”

ইভা জুনাইদকে ছাড়িয়ে উঠে বলল ,”আই লাভ ইউ টু ডিয়ার!”

জুনাইদ মুচকি হেসে চোখে আসে পানিটুকু মুছে নিল বাবা হওয়ার অনুভূতি কতটা সুখের সেটা একমাত্র যে বাবা হয় সেই জানে। আলতো হাতে ইভাকে জড়িয়ে ধরলো। ইভা ও পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।

__________________________________
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ভালোবাসার এই মিষ্টি অনুভূতি গুলোকে প্রাণভরে দেখছিল ডেইজি!

“বর্তমানকে আগলে নাও না আপু!”

আয়ুশীর হঠাৎ কথা বলায় চমকে উঠল ডেইজি।

“মানে?”

“আফরান ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসি না হলে, এত মেয়ের মাঝে থেকেও কেউ এক দৃষ্টিতে নিষ্পলক ভাবে এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে না।”

সঙ্গে সঙ্গে আফরানের দিকে তাকালো ডেইজি। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিলো আফরান ।একপ্রকার পালিয়ে গেলো ওখান থেকে।

“ভালো তাকেই বাসো ,যে তোমায় ভালোবাসে। অন্তত সুখে দুখে তাকে পাশে পাবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।”

নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো আয়ুশী। ডেইজি এক পলক ওর দিকে তাকালো।

__________________________________

রাত প্রায় সাড়ে বারোটা। এই সময় আয়ুশীর রুমে আয়ান কে দেখে অবাক হলো ডেইজি।
“তুই?”
আয়ান আমতা আমতা করে বলল,” আয়ুর আলমারিতে একটা শাড়ির প্যাকেট আছে দে তো।”

“আচ্ছা!”
বলেই ডেইজি আলমারিতে শাড়ির প্যাকেট খুঁজতে লাগলো।অবশেষে পেয়েও গেলো। দরজার কাছে এসে আয়ানকে প্যাকেটটা দিল।

“থ্যাংকস!”

“ফর্মালিটি করছিস কেনো?”

আয়ান ইতস্ততবোধ করল। ডেইজি হেসে বলল,” বি নরমাল আয়ান। আমি সব ভুলে গেছি, প্লিজ আর অচেনা মানুষের মতো ব্যবহার করিস না। আমি আগেও তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম, এখনো তো রেস্ট ফ্রেন্ড আছি। সো এসব ফর্মালিটি করিস না। আর আগে যা যা হয়েছে সব ভুলে যা। নতুন করে সব শুরু কর আমিও কিছু মনে রাখব না। সো বেস্ট অফ লাক ফর ইওর ফার্স্ট নাইট।”

বলেই চোখ মা’রলো। আয়ান মাথা চুলকে রুমে গেল। এতক্ষণ আয়ানের জন্য অপেক্ষা করেছিল আয়ুশী। আয়ানকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,”এতক্ষণ কই ছিলেন মহাশয়?”

কিছু না বলেই আয়ান আয়ুশীর হাতে শাড়ির প্যাকেটটা দিয়ে বললো,”জলদি করে পড়ে আসো!”

“কেনো?”

“এই শাড়ি সেদিন তো আর পড়লে না ,আজ পড়…আমি একটু দেখি!”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু না,যাও!”
বলেই খেলে ঠুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিল ওকে। অজ্ঞতা শাড়িটা পড়ে আসলো আয়ুশী।আয়ুশীকে দেখে আয়ান স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে বললো,”মাশাআল্লাহ!”

লজ্জাবতী লতার মতন নুয়ে গেলো ও। আয়ান নিজ হাতে ওকে সাজিয়ে দিল।

“এখন আবার সাজাচ্ছেন কেন একটু আগেই মুখ ধুয়েছি!”

“বেশি না অল্প!”

বললেই সাজিয়ে দিলো ওকে। হাতে দিলো নীল চুড়ি ,আর কানে সেই ঝুমকো গুলো।

“চলো!”

আয়ুশী হতভম্ব হয়ে বলল ,”এত রাতে কই যাবো?”

“গেলেই দেখতে পাবে।”,বলেই নিচে নিয়ে গেলো।

আয়ুশীকে গেটের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে বাইক আনতে গেলো আয়ান ।কিছুক্ষণ পর ফিরেও এলো তারপর আয়ুশীকে নিয়ে রওনা দিলো।

__________________________________

ছাদে সিগারেট খাচ্ছিলো আফরান। সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছিল তখনই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেলো। ডেইজি কে দেখে তৎক্ষণাৎ সিগারেট নিভিয়ে দিলো ও।

“আরে বিদেশিনী যে?”

ডেইজি উত্তর দিলো না।মূলত আফরানের সাথে দেখা করার জন্যই এখানে এসেছিলো ও!

“তো আজকেও কি দরজা লাগাতে এসেছো?”

“আপনি কি জানেন আমার এই সম্পূর্ণ বাঙালি আচার-আচরণ,কথাবার্তা… পোশাক আশাক, সাজসজ্জা এসব কিছু কারণ একমাত্র আয়ান ।ওর কারণেই আমি এতটা ভিন্ন অন্য বিদেশীদের থেকে ।ওকে ভালোবেসেছিলাম বলেই নিজেকে বাঙালি হিসেবে গড়ে তুলেছি। বিদেশী কালচারে নিজেকে গড়িনি! এমন কাউকে কি মেনে নিতে পারবেন যার পরিবর্তনটাই অন্য কারো জন্য ছিল? মানতে পারবেন সে আরেকজনের ভালোবাসা পাওয়ার লোভে পড়ে নিজেকে তার মত গড়ে তুলেছিল!পারবেন?”

আফরান চুপ রইলো।ডেইজি আশাহত হলো।হয়তো সে পারবে না।ভেবেই চলে আসতে নিলো ও!

“পরিবর্তনটা যার জন্যই হোক, মানুষটা আমাকে ভালোবাসলেই চলবে। যার ভালোবাসা পাওয়ার লোভে নিজেকে পরিবর্তন করেছিল ,তার থেকেও বেশি ভালোবাসলে চলবে। যে নিজের প্রথম ভালোবাসা ও নিজের একতরফা ভালোবাসার জন্য নিজেকে এতটা পরিবর্তন করতে পারে অন্যদের থেকে, তাকে কেউ ভালোবাসলে সে যে তার থেকেও বেশি ভালোবাসা দিতে পারে সেটা আমি জানি এবং মানি।তাই মেনে নিতে আমার কোন অসুবিধা নেই ।আর মানার কথা আসছে কেন? আমি তো ভালোবেসেছি এক মানুষকে …সে আগে কেমন ছিল, কার জন্য এমন হলো ?এসব আমার জানা দরকার নেই.. আমি শুধু তার বর্তমান সে – টাকে।ভালোবাসি…আর কিছুই না!”

ডেইজি মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণ কথা শুনলো।মুচকি হেসে বলল,”দেখুন ভালোবাসা এমন এক জিনিস , হুট করেই হয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু সময় লাগে। আপনার প্রতি আমার হয়তো কিছু অনুভূতি তৈরি হয়েছে, এ থেকেই হয়তো ভালোবাসার সূচনা হবে.. কিন্তু আপনাকে ফিরিয়ে দেবো না, শুধু একটু সময় নিব …তাই বলছিলাম কি আমার সুখ দুঃখের সাথী হবেন? ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবেন? নিজের ভালোবাসা দিয়ে আমার মনে জায়গা করে নেবেন?”

আফরান হাত বাড়িয়ে বললো,”আপনি সম্মতি দিলে অবশ্যই হ্যাঁ হবে আমার উত্তর!”

ডেইজি হেসে বললো,”সিগারেট আমার পছন্দ না!আমি এতটাও উদার নই যে মানিয়ে চলবো!সো আজ থেকে সিগারেট বন্ধ!”

বলতে না বলতেই আফরান পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট ছুঁড়ে ফেলে দিলো!

“মানিয়ে নিতে হবে না আপনাকে !শুধু হুকুম করবেন… এই বান্দা আপনার কর্মে নিয়োজিত থাকবে ওগো বিদেশিনী!”

“অন্য মেয়েদের দিকে তাকানো যাবে না!সবটা দিয়ে আমাকেই ভালোবাসতে হবে!”

“যথা আজ্ঞা বিদেশিনী!”

ডেইজি হাসলো!তার মাকে ফোন দিয়ে বললো,”মম,বিয়ে নিয়ে আর জোর করতে হবে না! পাত্র রেডি!”

আফরান খুশিতে লাফিয়ে উঠলো!তাই দেখে হেসে দিল ডেইজি…

“ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি এসেছি নূতন দেশে
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে
ওগো বিদেশিনী!”

__________________________________
বাইক থামতেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো আয়ুশী!ওদের বাসা থেকে একটু দূরে!মাঠের মত জায়গা!এখন আনুমানিক দেড়টা বাজে!এত রাতে এখানে আসার কি মানে? হুট করেই আয়ান আয়ুশীর চোখ বেঁধে দিলো!

“কি করছেন?”

“চুপচাপ এগিয়ে আসো!”
আয়ুশী আয়ানের কথা মত এগিয়ে গেলো! আয়ান ওকে রেখেই আড়ালে চলে গেলো।বেশ কয়েকবার আয়ানকে ডাকার পরেও সাড়া পেলো না ও।চোখের বাঁধন খুলতেই চমকে গেলো ও! ছোট ছোট দিয়া দিয়ে জায়গাটা সাজানো।আশেপাশে সাদা পর্দার আবরণ,এক জায়গায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা,”হ্যাপি বার্থডে কাঠগোলাপ!”

আরেকবার চমকালো ও!বিয়ের খুশিতে মনেই ছিলো না আজ ওর জন্মদিন!খুশি মনে আশপাশটা চোখ বুলালো ও!ওদের কিছু মুহূর্তের ছবি ছড়িয়ে আছে চারপাশে!বাইরে আ’তশবা’জির আওয়াজ পেতেই আবরণ থেকে বের হলো ও!আকাশের পানে তাকিয়ে দেখলো,সেখানে লিখা রয়েছে,”হ্যাপি বার্থডে!”

ওটা মিলিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আরেকটা আ’তশবা’জি ফুটলো!এইবারে লেখা উঠলো,”আমার কাঠগোলাপ!”

মুখে হাসির রেখা আরো প্রসারিত হলো! আশেপাশে তাকিয়ে আয়ানকে খুঁজতে লাগলো ও…পিছনে চুলে কারো হাত পেয়ে ওখানেই দাড়িয়ে গেলো ও! ও জানে ব্যাক্তি কে… আয়ান পরম যত্নে আয়ুশীর খোলা চুলে নিজের তৈরি কাঠগোলাপের গজরা পড়িয়ে দিলো!আয়ুশীর কানের কাছে বললো,”শুভ জন্মদিন আমার প্রেয়সী!ভালোবাসি এই অর্ধাঙ্গিনীকে!সারাজীবন পাশে থাকতে চাই এই কাঠগোলাপের।আগলে রাখতে চাই এই লজ্জাবতীকে!আর..”

“আর?”

আয়ান ঠোঁট চেপে হেসে বললো,”আরে সাথে নিয়ে বইতে চাই এই ঝামে/লাকে!”

আয়ুশী ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো।এত এত সম্বোধন পেয়ে কি রোম্যান্টিক মুডে চলে গেছিলো ও।লোকটা সব কিছুর বারোটা বাজিয়ে দিলো!

“আমি ঝামেলা?”

“তা নয়তো কি?”

“তাহলে বিয়ে করেছেন কেনো?”

“কারণ এই ঝামেলা ছাড়া লাইফ অপরিপূর্ণ!”

আয়ুশী মুচকি হেসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।

“ভালোবাসি মিষ্টার খারুশ!”

ভালোবাসার মুহূর্তের এক স্মৃতি রাখতে আয়ান আয়ুশীর অধরে অধর মিলিয়ে দিলো!মুহূর্তেই ডুবে গেলো ভালোবাসার এক মিষ্টি মুহূর্তে, যার সাক্ষী রইলো – খোলা আকাশ,চাঁদ,তারা;…

সমাপ্ত হলে প্রত্যেক অবেলায় ভালোবাসার গল্প!…
“মেঘ চায় বৃষ্টি, চাঁদ চায় নিশি
মন যে বলে যায়
তোমায় ভালোবাসি বেশি!
দিন ফুরাবে, রাত ফুরাবে,
ফুরাবে ফুলের প্রান,
কিন্তু কখনো কমবে না যে..
ভালোবাসার এই টান!
ভালোবাসার ছন্দে
কোনো অবেলায় বলতে চাই..
ভালোবাসি প্রিয়..অবেলায় ভালোবাসি!”
(~সাবরিন জাহান~)

#সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here