প্রেমময় বিষ পর্ব ১+২

১.

– পরপর কয়টা থাপ্পড় গালে পড়াতেই অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় মানুষটার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলাম।এই মানুষটি কী কোনদিনও আমার অনুভূতি গুলো বুঝবে না? কথাটা মাথায় আসতেই মানুটার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলতে লাগলাম,

— রায়ায ভাই আমি আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না..
কথাটা আর শেষ করতে পারলাম না তার পূর্বেই আগের চেয়ে বেশ জোরে আরো কয়েকটি থাপ্পড় পড়লো আমার গালে, এবার আর সইতে পারলাম না মাথা নিচু করে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।

রয়ায ভাই এবার অনেকটা রেগে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলেন,

— বয়স দেখেছিস নিজের? আমি তোর থেকে গুনে গুনে তেরো বছরের বড়। লজ্জা করলো না নিজের থেকে বয়সে এতো বড় ছেলেকে প্রেমের প্রপোজাল দিতে?তাছাড়া সম্পর্কে আমি তোর বড় ভাই হই তা কী ভুলে গেছিস নাকি গুলে খেয়ে ফেলেছিস?আর তোর কি যোগ্যতা আছে আমার ভালোবাসা পাওয়ার ? না আছে রূপ আর না গুন! কিছুই নেই! তাহলে কোন সাহসে আমার সামনে এসে দাঁড়ালি? আগে নিজেকে আয়নায় দেখ,তারপর আমার কাছে প্রেম নিবেদন করতে আসবি।

কথাটা বলেই রায়ায ভাই হনহন করে চলে গেল।
রায়ায ভাই আমার বড় চাচ্চুর ছেলে।ভালোবাসা কী আমিতো এই মানুষটাকে দেখেই বুঝেছি! কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তাই মাটিতে বসে কাঁদতে লাগলাম যেই মানুষটাকে আমি এতো ভালোবাসি সেই ভালোবাসার মানুষটা আজ আমাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেল। উনার বলা অপমান জনক কথাগুলো মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে ।
যখন থেকে বুঝে ওঠতে শিখেছি ভালোবাসা কী? তখন থেকেই এই মানুষটার প্রতি আমার মনে এক অন্যরকম অনুভুতি জন্মে ছিল।
“যখন ক্লাস সবে মাত্র সেভেনে পড়ি তখন একদিন আমি বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরি।সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না হঠাৎ করে আমার দাদু অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সকলে তড়িঘড়ি করে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।আমি স্কুলে থাকায় আমাকে আর নিতে পারেনি। তবে বাসায় থেকে যায় শুধুমাত্র একজন কাজের মেয়ে আর ভাইয়া।ভাইয়া কেন যায়নি তা আজই জানি যা।সেদিন আমার প্রথম পিরিয়ড হয়েছিল, এতো কই বুঝতাম? তাই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাসায় ফিরছিলাম। কারণ যখন বাসায় ফিরছিলাম তখনই রাস্তার পাশে বসে থাকা কিছু ছেলে খুব নোংরা নোংরা কথা শুনিয়েছিল। তাই কাঁদতে কাঁদতে তাড়াতাড়ি দৌড়ে বাসায় আসি।এসে যখন দেখি বাসায় কেউ নেই তখন আমি আরো ভয় পেয়ে যাই আর জোরে জোরে কাঁদতে থাকি। সেদিন এই রায়ায নামক মানুষটাই আমাকে সামলেছে।আমাকে বুঝিয়েছিল এসব নরমাল ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।সেদিন এই মানুষটাই ছিল আমার একমাত্র ভরসা”
সেদিন থেকেই এই মানুষটাকে আমি চোখে হারাই।ধীরেধীরে বড় হতে থাকি আর রায়ায নামক মানুষটার প্রতি আমার মনের অনুভূতি গুলো আরো গভীর থেকে গভীরে হতে থাকে।
দেখতে দেখতে সবে পনেরোতে পা দেই।আর তাই যেন আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।বুঝতে পারি ভালোবাসা নামক রোগে আমি আক্রান্ত আর এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে রায়ায।দিন যত যেতে থাকে আমার নির্ঘুম রাতের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে।আমি যেন পাগল হয়ে উঠছিলাম রায়ায নামক মানুষটাকে নিজের করে পেতে।
~তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে করেই হোক আজকেই নিজের মনের কথা ভাইয়াকে জানাবোই।তাই ভাইয়ার প্রিয় রঙের শাড়ি চুড়ি নিজের গায়ে জড়িয়ে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে ভাইয়ার কলেজে এস হাজির হয়েছিলাম। ভাইয়া এবার মাস্টার্স করছে পাশাপাশি বড় চাচ্চুর বিজনেস ও সামলাচ্ছে।আবার নাকি কলেজে রাজনীতি করে বেড়ায় শুনেছি।ছেলেটার অনেক গুণ আছে বলতে হবে তার উপর দেখতে যা হ্যান্ডসাম ভাবতেই নিজের উপর প্রাউড হচ্ছে। কী চয়েস আমার।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভাইয়াকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও খুঁজে না পেয়ে সামনে একটা ছেলেকে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম,

— রায়ায আরহান কে দেখেছেন?

ছেলেটা আমাকে একপলক দেখে নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজের মুখে নিয়ে বলতে লাগলেন,

— আমার সাথে এসো।

ছেলেটার এমন আজব ব্যবহার দেখে প্রথমে আমি বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলাম।পরে আর আমলে নিলাম না। আমার কাজ হচ্ছে রায়ায ভাইয়াকে নিয়ে এই ছেলে যা খুশি করুক তাতে আমার কি? এসব ভাবতে ভাবতে উনার পিছু পিছু যাচ্ছিলাম।কিছুক্ষন পর ভাইয়াকে পেয়েও গেলাম।
দেখলাম ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে আর মেয়েরা মনে হয় পারলে এখনই ভাইয়ার কোলে উঠে যেত।এসব দেখেই গা টা জ্বলে গেল।তবে নিজের রাগটাকে দমিয়ে নিলাম।কারণ আজ আমার জন্য খুব বিশেষ একটা দিন।

ছেলেটা ভাইয়াকে ডাক দিলে ভাইয়া এদিক ফিরে তাকালো।আমি ধীরে ধীরে ভাইয়ার দিকে এগোতে লাগলাম।ভাইয়া আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি উনার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে নিজের মনে লুকিয়ে রাখা এতদিনের ভালোবাসা গুলো আজ উনার সামনে ফুলের ন্যায় তুলে ধরি।আর সাথে সাথে কয়েকটি থাপ্পড় আমার গালে এসে পড়ে।

______

সেই তখন থেকে নিচে বসে কেঁদেই চলছি।আশেপাশের কোনকিছুই আপাদত আমার মাথায় নেই।আমি যখন নিজের ভাঙ্গা মনটাকে শান্তু করতে ব্যস্ত তখনই একটা হাত আমার দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দেয়, আর বলতে লাগে,

— চোখের পানি মুছে নাও।কেঁদে কোন লাভ নেই। কাঁদলেই যদি রায়াযকে পাওয়া যেত তাহলে শতশত মেয়ে তার পায়ের কাছে বসে প্রতিনিয়ত কেঁদেই যেত।

উনার কথা শুনে আমি ওনার দিকে চোখ তুলে তাকালাম আর সাথে সাথেই উনি আমাকে টেনে উপরে তুলে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিজের হাতে আমার চোখের জলটুকু মুছে দিল। উনার এহেম কাজে আমিতো অবাকের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেলাম।ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে আমাকে বলতে লাগলো,

— সো সেড, ইউ পুর গার্ল।যেখানে এতো এত মেয়ে ওকে চেয়েও পায় না সেখানে তোমার মত পুঁচকে মেয়ে এসেছো ওর ভালোবাসা পেতে? সো সেড বাট তুমি ওকে কখনোই পাবেনা কারণ তোমার মত ক্ষ্যাত আর আনকালচারাল মেয়েকে দিয়ে ও ওর জুতাও মুছে না।
কথাটা বলেই মেয়েটা চলে গেল।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম প্রায় অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মজা নিচ্ছে।
এসব আর নিতে পারছি না তাই উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলাম নিজ গন্তব্যে।

তখনই পিছন থেকে একটা বলিষ্ঠ হাত আমার হাত আঁকড়ে ধরলো। আমি হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তখনকার সেই ছেলেটি।তাই আমি তাকে বললাম,

— কী করছেন কী?আমার হাত ছাড়ুন।আর কে আপনি?
আমার কথার পিঠে উনি শুধু মুচকি হাসলেন,,
একটা বাইকের সামনে এসে উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন আর বলতে লাগলেন,

— তাড়াতাড়ি উঠে বস আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসি।
উনার কথা শুনে আমি অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

— আপনি কেন আমাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবেন?আর আপনি কী আমার বাড়ি চিনেন নাকি না আমাকে চিনেন কোনটা?

আমার কথা শুনে উনি হালকা হেসে বলতে লাগলেন,

— আমি তোমাকে চিনি সেই ছোটবেলা থেকেই বেলা রাণী। বলেই আমার গাল দুটো টেনে দিলেন।

আমি অনেকটা অবাক হচ্ছি, উনি দেখছি আমার নামও জানে।আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই উনি অনেক তাড়া দিয়ে বলতে লাগলেন,

— তাড়াতাড়ি উঠে পড়। নিশ্চয়ই তোমায় দেরি হচ্ছে?

আমিও আর কথা বাড়ালাম না এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই।উঠে বসলাম উনার পিছনে,আমি বসার সাথে সাথে উনি বাইক স্টার্ট দিলেন।

_____

আকাশে কেমন মেঘ করেছে। মনে হচ্ছে ঝড় হবে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম আকাশটার ও বুঝি আমার মত মন খারাপ? তাই হয়তো বৃষ্টির মাধ্যমে এভাবে নিজের অভিমান গুলো ঝরাতে চাইছে?আমার ও যেমন কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে জল হয়ে চোখে ঝরতে চাইছে।তবে অনেক কষ্ট নিজের অভিমান গুলো কে চেপে রাখলাম।

হঠাৎ করে সামনের মানুষটা বলতে লাগলো’,

— নিজের কষ্ট গুলোকে আটকা না রেখে ঝরতে দাও‌।এতে মন হালকা হবে।
কথাটা বলতে দেরি আমার কাঁদতে দেরি নেই।মুখ চেপে ঘরে কাঁদতে লাগলাম।
মাঝরাস্তায় বৃষ্টি নেমে গেল।তাই বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে আমি প্রায় ভিজে গেলাম। ভাইয়াটা ও অনেকটা ভিজে গেছে তাই তাকে বলতে লাগলাম,

— ভাইয়া আপনিতো অনেকটা ভিজে গেছেন তাই আমার সাথে আমাদের বাড়ির ভিতরে আসুন প্লিজ।তাছাড়া আপনি নাকি আমার পূর্ব পরিচিত? তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের পরিবারের সকল সদস্যই আপনার চেনা?আসুন না ভাইয়া ভিতরে আসুন এসে সকলের সাথে দেখা করে যান।

কথাটা বলতে দেরি ভাইয়া আমাকে তাড়া দিয়ে বললেন,

— আজ নয় বেলা রাণী, অন্য একদিন অবশ্যই আসবো।

কথাটা বলে উনি সাথে সাথে প্রস্থান করলেন আর আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সাথে সাথে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

আমাকে ভেজা অবস্থায় দেখে বড়মা তাড়াতাড়ি দৌড়ে আসলেন আর যথিকে তাড়াতাড়ি বলেলন একটা টাওয়াল নিয়ে আসতে। যথি আমাদের বাড়িতে কাজ করে।
বড়মা উত্তেজিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

–কিরে কী হয়েছে? এরকম করে ভিজে গেলি কেমন করে?আর কোথায় গিয়েছিলি?

— বড়মা আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।আমাকে আগে একটু বসতে দেবে?

কথাটা বলার সাথে সাথে বড়মা আমাকে সোফায় এনে বসিয়ে দিলেন।আমি নিজেকে একটু রিল্যাক্স করতে লাগলাম। যথি টাওয়ালটা এনে বড়মার হাতে দিতেই উনি আমার মাথা মুছে দিতে লাগলেন।কিছুক্ষন পর আমার আম্মুও এসে হাজির হলো আর এসেই জিজ্ঞেস করতে লাগলো,

— কিরে এমন করে ভিজলি কী করে? আর এতো সেজে কোথায় গিয়েছিলি?

আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আর সকলকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলাম,

— আমি এখন আমার রুমে যাচ্ছি। আমি খুব ক্লান্ত, একটু রেস্ট করে নেই এরপর তোমাদের সকল কথার জবাব দেব।

কথাটা বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।রুমে গিয়ে দরজা আটকে হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে লাগলাম।কিছুক্ষন কেঁদে নিজের মনকে হাল্কা করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম চেঞ্জ করতে।চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়লাম।অতঃপর ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।

যখন ঘুম ভাঙলো তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।
তাই হাতমুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামলাম।
নিচে গিয়ে দেখি টিনা- মিনা খেলছে।

“আমাদের যৌথ পরিবার। আমার আব্বুরা তিন ভাই।রায়ায ভাইয়ার বাবা হচ্ছে সবার বড় এরপর আমার আব্বু একপর আমার ছোট চাচ্চু আর তাদের একমাত্র আদরের ছোট বোন যিনি আপাদত শ্বশুর বাড়ি আর আমাদের দাদি সকলে মিলে আমরা একই ছাদের নিচে বসবাস করি।বড় চাচ্চুর এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে রায়ায ভাই আর ছোট মেয়ে টায়রা যে কিনা আমার সকল কাজ-অকাজের সঙ্গী। তাছাড়া আমরা একে অপরকর বেস্টফ্রেন্ড ও। আর ছোট চাচ্চুর দুজন মেয়ে টিনা আর মিনা। পরিবারের একমাত্র চিরাগ হচ্ছে রায়ায ভাই।যায় কারণে সকলের চোখের মনি সে। তাই তার কথা ব্যতীত এই বাড়ির একটা গাছের পাতা ও নড়ে না”

আমি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে মাকে ডাকতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,

— ও মা তাড়াতাড়ি কড়া করে এককাপ কফি করে দাও না।

মা আরো উল্টো চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

— পারবো না নিজের কফি নিজে বানিয়ে খা আমার অনেক কাজ আছে।

মায়ের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর ভাবতে লাগলাম সবাই খালি আমাকে অবহেলা করে কেউ আমাকে ভালোবাসে না।ঠিক তখনই একটা হাত আমার দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিল।আমি উপরে তাকিয়ে একগাল হেসে কফিটা নিলাম আর বলতে লাগলাম,

— বড়মা তুমি ছাড়া আমাকে এই পরিবারের আর কেউই ভালোবাসে না।

কথাটা শুনে বড়মা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,

— আমার পাগলী মেয়েটাকে এইকথা কে বলেছে? সবাই তোকে খুব ভালোবাসে বুঝেছিস?

আমি কিছু বলতে যাবো তখনই দেখি হনহন করে রায়ায ভাই বাড়িতে ঢুকে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেল আর যাওয়ার আগে বড়মা কে বলে গেল,

— মা আমাকে এক কাপ কড়া লিকারের কফি দিয়ে যাও তো।

ভাইয়ার বলতে দেরি আর আমার মায়ের কফি নিয়ে আসতে বেশি সময় লাগলো না। মায়ের এমন কাজ দেখে আমিতো পুরাই অবাক! কই আমি যখন কফি চাইলাম তখন কেমন আমাকে কাজের বাহানা দেখালো।কিন্তু রায়ায ভাইয়া যেই বললো এমনি উনি কফি নিয়ে হাজির।
মা কফি হাতে নিয়ে আমাকে বলতে লাগলো,

— যা তো বেলা তাড়াতাড়ি আমার সোনা বাবাটা কে কফি টুকু দিয়ে আয়। বাবাটা আমার কত পরিশ্রম করে বেড়ায় সারাদিন।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ভাইয়ার রুমের দিকে যেতে লাগলাম।আর ভাবতে লাগলাম,, দেখি আবার একটু বলে ভাইয়া আমার অনুভূতির মূল্য দেয় কী না?

রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছি।ভিতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। অবশেষে ভয়কে জয় করে রুমে পা বাড়ালাম।রুমে গিয়ে দেখি কেউ নেই।তাই কফিটা টেবিলে রেখে বেডে বসে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ভাইয়া হয়তো ওয়াশরুমে।
একটু পর ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে হয়তো গোসল ও করে নিয়েছে।

ভাইয়া আমাকে এখানে দেখে অনেকটা রেগে গেল আর চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

— তুই আমার রুমে কী করছিস?আর এতকিছুর পরেও তোর লজ্জা করলো না আমার সামনে আসতে?লজ্জা করবে কী করে?তোর তো লজ্জাই নেই।

কথাটা বলেই উনি আমার হাতের কব্জি ধরে টেনে রুমের বাইরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। আর বলতে লাগলেন,

— তোকে যেন আমার রুমের আর আমার আশেপাশের কখনো না দেখি।একদম আমার কাছে ঘেঁষতে আসবি না।

কথাটা বলেই উনি আমার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন আর আমি ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকে রেখে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে কাঁদতে লাগলাম।আমি ছোট হতে পারি কিন্তু আমার ভালোবাসা মিথ্যা কিংবা আবেগ নয় তা উনাকে কী করে বোঝাই?
মা এসে কয়েকবার খাওয়ায় জন্য ডেকে গেল।কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম কিছু বললাম না। আমার মোটেও খেতে ইচ্ছে করছে না। কারণ জানি আমি মুখ খুললেই আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাবে খাওয়ায় জন্য।তাই চুপ করে ঘুমের ভান ধরে রইলাম।

____

সকালে সবার চিল্লাচিল্লি শুনে আমার স্বাদের ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘুম ঘুম চোখে হাতে ব্রাশ নিয়ে নিচে গেলাম।ব্রাশ করছি আর মা,বড়মা আর চাচির কীর্তি দেখছি। সকলে খুব তোড়জোড় লাগিয়ে দিয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না।কাউকে যে জিজ্ঞেস করবো তারও কোন সুযোগ পাচ্ছি না।

চলবে ইনশাল্লাহ#প্রেমময়_বিষ
#মাহিমা_রেহমান
#পর্ব_২

– গালে হাত দিয়ে সেই কখন থেকে বসে আছি কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কেউ আমাকে তেমন পাত্তাই দিচ্ছে না।
তাই আর সইতে না পেরে মাকে এবার ডেকেই উঠলাম,

— মা ও মা,, কে আসবে গো? তোমরা এই ভোর বেলা এতো তড়িঘড়ি শুরু করে দিয়েছো কেন?

আমার ডাক শুনে মা জবাব দিল,

— তোকে বলে কোন লাভ আছে?তুই কি এসে আমাদের কাজগুলো করে দিবি?তাই চুপচাপ যেখানে আছিস সেখানেই বসে থাক।

মায়ের কথা শুনে আমার মনটা বড্ড খারাপ হয়ে গেল। মা সবসময় খালি আমাকে বকতে থাকে।তখনই বড়মা আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন,

— তোর ফুপা ফুপি আসছে,সাথে তোর কিয়ার আপু আর আদিব ভাইয়া।

কথাটা শুনে খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আর বলতে লাগলাম,

— তুমি সত্যি বলছো বড়মা! কতদিন পর সবাই আসছে।সেই কবে যে তারা আমাদের বাড়িতে এসেছিল সেটা আমি ভুলেই গেছি এতো দিনে!এবার আসলে আর সহজে যেতে দেব না কাউকে।

কথাটা বলেই আমি নাচতে নাচতে উপরে নিজের রুমে চলে গেলাম।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে ভাবতে লাগলাম,,

“ফুপি ফুপা কিয়ারা আপু প্রায়ই আমাদের বাড়িয়ে আসত কিন্তু আদিব ভাইয়া কে বেশি আসতে দেখি নি।ছোটবেলা হয়তো কয়েকবার আসতে দেখেছিলাম কিন্তু বড় হওয়ার পর ভাইয়াকে অতটা আসতে দেখি নি। তাই ওনার চেহারা আমার ঠিক মনে নেই। সর্বদা কাজ আর লেখাপড়া নিয়েই নাকি ব্যস্ত থাকতো উনি,কিন্তু এবার আসবে শুনে খুশি লাগছে। সেই ছোটবেলায় দেখেছি ভাইয়াকে এরপর আর দেখা হয়নি। এবার আসলে দেখা যাবে”

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে চলে গেলেন কারণ নাস্তার সময় হয়ে গেছে।এখনই সবাই নিচে নামবে নাস্তার জন্য সাথে রায়ায ভাইয়া ও এই ফাঁকে ভাইয়াকে একটু দেখা হয়ে যাবে।উনকে আমার খালি দেখতে ইচ্ছে করে, কী সুন্দর উনি! কিন্তু আগে তো তাও এটা সেটায় বাহানা দিয়ে উনার রুমে যেতাম,ওনার আশপাশে ঘুরঘুর করতাম ওনাকে একবার দেখবো বলে কিন্তু এখন তো তাও করতে পারবো না। এখন কেবল খাবার টেবিলেই ওনার দেখা মিলবে। কথাটা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল।

নিচে গিয়ে দেখি সবাই এসে গেছে এমনকি ভাইয়াও এসে গেছে,, ভাইয়াকে দেখে যেই না আমি ভাইয়ার পাশে বসতে যাবো, তখই ভাইয়া আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায়।ভাইয়ার এমন চাহনি দেখে এতটাই ভয় পাই যে আর তার পাশে বসার সাহস পায়নি তাই চুপচাপ টায়রার পাশে গিয়ে বসে পড়ি, আর আড় চোখে বারবার ভাইয়াকে দেখতে থাকি। হঠাৎ করে ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেই আমি খাওয়ায় মনোযোগ দেই।পরবর্তীতে ভুলেও আর তাকাই নি এই ভেবে না,,আবার যদি তাকাই না জানি আমাকে কী করে?

নাস্তা শেষে আমি আর টায়রা দুজন রেডি হয়ে নেই স্কুলের যাওয়ার জন্য।আমি আর টায়রা সবে ক্লাস নাইনে পড়ছি।রায়ায ভাইয়া প্রতিদিন আমাকে আর টায়রাকে উনার গাড়ি দিয়ে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে নিজে ভার্সিটিতে চলে যায়।

রয়ায ভাই অনেক আগেই গাড়িতে গিয়ে বসে আছে। আমি আর টায়রা রেডি হয়ে সোজা গাড়ির সামনে এসে হাজির হলাম।টায়রা আমাকে রেখে টুপ করে আগেই গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে।যেই আমি গাড়ির দরজা খুলতে যাবো অমনি ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দেয় আর আমাকে রেখেই চলে যায়।

ভাইয়ার এমন কাজে আমি অনেকটা কষ্ট পাই তাই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভিতর ঢুকে যাই।আমাকে এমন কাঁদতে দেখে বড়মা দৌড়ে আমার কাছে এসে বাবার জিজ্ঞেস করতে থাকে,

–কী হয়েছে বেলা তুই এবাবে কাঁদছিস কেনো?

আমি কাঁদতে কাঁদতে বড়মার কাছে বিচার দিতে লাগলাম,

— তোমার ছেলে আমাকে রেখেই টায়রাকে নিয়ে চলে গেছে।

বড়মা আমার কথা শুনে অনেকটা অবাক হয় আর বলতে লাগে,

— সে কী কথা? ও তো তোকে আর টায়রাকে প্রতিদিন একসাথে স্কুলে নিয়ে যায় তাহলে আজকে এমন কী হলো যে তোকে ফেলে শুধু টায়রাকে নিয়ে গেল।

বড়মার কথা শুনে আমি অনেকটা ঘাবড়ে যায়, কারন ভাইয়া যে কেনো আমাকে ফেলে গেছে তা আমি বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি।তাই কথা ঘুরিয়ে বললাম,

— হয়তো ভুল করে রেখে গেছে।যাক ভালোই হলো আমাকে আর স্কুলে যেতে হবে না আজকে।

কথাটা বলেই আমি নিজের রুমে চলে এলাম।ভাইয়ার এহেম কাজে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি রায় মন খারাপ করে বসে রইলাম।কিছুসময় যেতে না যেতেই আমার মা জননী এসে হাজির আর এসেই বলতে লাগলেন,

— কীরে বেলা তোকে নাকি রায়ায না নিয়েই চলে গেছে?তা কী এমন মহাকার্য যে ও এভাবে তোকে না নিয়ে চলে গেল? নিশ্চয়ই তুই কিছু করেছিস! বল কী এমন করেছিস যে আমার সোনা বাবাটা তোর উপর এভাবে রেগে আছে?

মায়ের কথাগুলো শুনে আমি অনেকটা ঘাবড়ে গেলাম। মা যদি আমার এসব কাজের কথা জানে আমাকে জানেই মেরে ফেলবে নিশ্চয়ই।তাই ভয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম।ঠিক সেই সময় দাদি এসে মাকে থামতে বললেন,আর সবাইকে বলতে লাগলেন,

— এখন এসব পড়ে হইবো,আগে এই ছেমড়িরে স্কুলে পাঠাও।স্কুলের সময় তো চইলা যাইতাসে।

দাদির কথা শুনে মা আমাকে তাড়া দিতে লাগলেন আর ড্রাইভার দিয়ে অন্য গাড়ি দিয়ে আমাকে স্কুলে পাঠিয়ে দিলেন। একদিনই স্কুল যাওয়া থেকে নিস্তার নেই।স্কুলে না গেলে বাড়ির সকলের মাথা ও পেট দুটোই ব্যথা শুরু হয়ে যায়।তাই এতো কাহিনীর পরেও স্কুলে পাঠিয়ে ছাড়লো।তবে আমার খুব ভয় হচ্ছে স্কুল থেকে ফিরে আমার না জানি কী কী সম্মুখীন করতে হয়।
বাবা আর চাচ্চুরা কিছুক্ষন আগেই অফিসে চলে গিয়েছে যার যার গাড়িতে নিয়ে ।আমাদের বাড়ির মহিলা সদস্যদের জন্য আলাদা একটা গাড়ি রয়েছে,,যেটাতে সকলে যার যার প্রয়োজনে কোথাও যাওয়ার হয়ে যায় অগ্যতা আমিও আজকে এই গাড়ি করেই স্কুলে পৌঁছালাম।

____

স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছি সেই কখন।কিন্তু এখনও ফুপিদের কোন দেখা নেই।আসার সময় আমরা বাড়ির বাড়ি দিয়েই ফিরে আসি প্রতিদিন। তাই রায়ায নামক ঝামেলাতে আমাকে আর পড়তে হয়নি। নয়তো আসার সময়ও নিশ্চয়ই একটা কেলেঙ্কারি বাঁধত।যাক বাঁচা গেল।মা, চাচী, বড়মা সকলে কাজে ব্যস্ত নয়তো সকলের সেই ঘটনার জন্য নিশ্চয়ই স্কুল থেকে আসার পরেই আমাকে চেপে ধরতো।ভেবেই স্বস্থির নিশ্বাস নিলাম।

হঠাৎ করে শোরগোলের শব্দ শুনে দৌড়ে নীচে গুলাম,আর গিয়েই দেখি ফুপি ফুপা আর কিয়ারা আপু এসে হাজির।কীয়ারা আপুকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে জাপটে ধরলাম।

ফুপি আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

— কেমন আছে আমাদের বেলা রাণী?

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আমি ফুপিকেও গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।আর বলতে লাগলাম,

— তুমি কেমন আছো ফুপি?

ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

— ভালো আছি মা, এরপর টিনা মিনা আর টায়রা ও এসে জড়িয়ে ধরলো ফুপিকে।

এরপর কিছুক্ষন সকলের কুশল বিনিময় পালা শেষ হলে যেই না ভিতরে ঢুকতে যাবো অমনি একজন সুদর্শন পুরুষ এসে বাড়ির ভিতর ঢুকল আমরা সাথে সাথে সকলে ঐদিকেই তাকালাম।ছেলেটা এসে মা, চাচী আর বড়মার সাথে কুশল বিনিময় করলো।এতে যা বুঝলাম, এটাই হচ্ছে আদিব ভাইয়া।
বাহ! আদিব ভাইয়া দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।শুনেছি রায়ায ভাই আর আদিব ভাই নাকি সমবয়সী।উনাকে দেখে আমার ওনার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে আর খুব জানতে ইচ্ছা করছে উনি আমাকে চেনে কিনা?কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ওনি আমাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।তাই আমিও আর কথা বাড়ালাম না।

বড়মা সকলকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল আর বলতে লাগলো,

— রিহা, কিয়ারা, আদিব আর ভাইয়া আপনারা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসুন সকলে মিলে দুপুরের খাবারটা সেরে নেই। একটু পর সবাই দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় চলে আসবে।সবাই একসাথে বসে খাওয়া যাবে।

বরমায়ের কথা শেষ হতে না হতে রায়ায ভাইয়া কোথা থেকে এসেই আদিব ভাইযতাকে জাপটে ধরলো আর বলতে লাগলো,

— কিরে ব্যাটা এতদিন পর আমাদের কথা মনে পড়লো।তোকে তো দেখাই যায় না।তা আজকে কী মনে করে চলে এলি? নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে।

রায়ায ভাইয়ার কথা শুনে আদিব ভাইয়া হেসে দিলেন আর বলতে লাগলেন,

— এবার তোকে বিয়ে করানোর মতলবে এসেছি। বয়সতো আর কোন হলো না।এবার তোকে বিয়ে করিয়ে তারপর যাবো।

আদিব ভাইয়ার কথা শুনে রায়ায ভাইয়া বলতে লাগলেন,

— শুধু আমার বয়সটা নয় নিজের বয়সটা ও দেখ এবার ব্যাটা।তাই বিয়ে করলে দুজন একসাথেই করছি।

বলেই দুজন হাই ফাইভ করতে লাগলেন।তখনই আব্বু আর চাচ্চুরা এসে হাজির হলেন।অতঃপর সকলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলেন। ভাইয়া আর আদিব ভাইয়া এসকসাথে বসেছে।আমি টায়রা আর কিযারা আপু একসাথে বসেছি।আর পাশেই টিনা মিনা।আর মা চাচী এর ফুপি সকলকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন।কিন্তু বড়মা ফুপিকে সকলের সাথে বসিয়ে দিলেন আর বলতে লাগলেন,

— রিহা তুমি অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো তুমি সকলের সাথে খেতে বসো।আমরা সকলকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।

বড়মার কথা শুনে ফুপি বললেন,

— আমি তোমাদের সাথে খেতে চাচ্চি ভাবী। তাই আর জোর করো না।অগ্যতা বড়মা আর কিছু বললেন না।

হঠাৎ করে টায়রা আমাকে খোঁচা মেরে বলতে লাগলেন,

— দেখ দেখ আদিব ভাইয়া কত সুন্দর! তাই না,? উনাকে দেখে আমার কেমন জানি লাগছে রে বেলা।

ওর কথা শুনে আমি ওকে বলতে লাগলাম,

— তুই বুঝি আদিব ভাইয়ার প্রেমে পড়ে গেলি?

আমার কথা শুনে টায়রা বলতে লাগলো,

— প্রেম কিনা জানি না তবে ওনাকে দেখার পর থেকে বুকের ভিতর কেমন টিপ টিপ করছে আর পেটের ভিতর কেমন গুড়গুড় করছে।

ওর কথা শুনে আমি খুব জোরেই হেসে দিলাম আর সামনে তাকিয়ে দেখলাম সবাই কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তাই সাথে সাথে হাসি থামিয়ে মাথা নিচু করে নিয়ে খেতে লাগলাম। কিয়ারা আপু আমাকে একটা খোঁচা মেরে বলতে লাগলো,

— কিরে বেলা তোর কী কোন কান্ড জ্ঞান নেই?

আপুর কথা শুনে আমি আপুকে বলতে লাগলাম,

— আরে আপু টায়রা এমন একটা কথা বলেছিল না তুমি শুনলে তুমিও হাসবে।

আপু আমার কথা শুনে আমাকে আস্তে করে ধমক দিয়ে বলতে লাগলেন,

— মুখ বন্ধ রেখে,এখন চুপচাপ খেতে থাক।জানিস না খাবার সময় কেউ কথা বলা পছন্দ করে না।

তাই আমিও আর কথা বাড়ালাম না চুপচাপ খেতে আরম্ভ করলাম।খাওয়া দাওয়া শেষে যেই আমরা সবাই কিয়ারা আপুর রুমে যেতে নিলাম আড্ডা দেওয়ার জন্য ঠিক তখনই বড়মা আমাদের থামিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,

— তোরা এখন চুপচাপ যার যার রুমে গিয়ে বসে থাক। কিয়ারা অনেকটা ক্লান্ত তাই ওকে বিশ্রাম নিতে দে।পরে তোরা গল্প গুজব করিস।

— সমস্যা নেই মামি।

— সমস্যা আছে,তুমি ক্লান্ত এখন গিয়ে বিশ্রাম নাও আর তোরা যা।

বড়মার কথা শুনে আমাদের সকলের মন খারাপ হয়ে গেল।তাই মন খারাপ করে যে যার রুমে চলে এলাম আর কিয়ারা আপু নিজের রুমে চলে গেল। বাড়িটা অনেক বড় হওয়ায় সবার জন্য একটা করে রুম বরাদ্দ আছে।
রুমে এসে ভাবতে লাগলাম কী করে রায়ায ভাইয়ার মন জয় করে নিজের জন্য ওনার মনে জায়গা করে নিব।তাই পা টিপে টিপে ওনার রুমের দিকে পা বাড়ালাম।সবাই এখনভাত ঘুম দিবে। তাই আমি খুব সাবধানতার সাথে ভাইয়ার রুমের বাইরে এসে দাঁড়ালাম।দরজা হালকা করে ভিড়ানো।যেই আমি রুমের ভিতর উঁকি দিতে যাবো ওমনি কেউ একজন রুম থেকে বের হয়ে আসলো আর আমি তার শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে অমনি ওনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আমাকে বাঁচিয়ে নিলেন।চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আর আমার এমন ফেস দেখে আদিব ভাইয়া হেসে দিলেন আর বলতে লাগলেন,

— তুমি বেলা, এম আই রাইট?কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?-উনি কিছুটা ভ্রু কুঁচকে কথাটা বলে উঠলেন।

যেই আমি কিছু বলতে যাবো অমনি রায়ায ভাইয়ার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম।উনি খুব রাগান্বিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন,

— কী হচ্ছে কী এখানে?

কথাটা বলার সাথে সাথে আদিব ভাইয়া আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন আর আমি কাচুমাচু করতে লাগলাম।রায়ায ভাই আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,

– আর তুই এখানে কী করছিস? তোকে না কালকেই আমি বলেছিলাম যে একদম আমার রুমের আশেপাশে ঘেঁষবি না – কথাটা উনি অনেক রেগেই বললেন।

উনার এমন রাগ দেখে আমি সাথে সাথে দিলাম এক দৌড় আর এক দৌড়ে নিজের রুমে এসে হাঁপাতে লাগলাম।

একা একা কিছুই ভালো লাগছে না তাই টায়রার রুমে গেলাম।আর গিয়ে বসতে না বসতেই ও বলতে লাগলো,

— কিরে বেলা তুই তখন কী কেলেঙ্কারিটাই না লাগিয়ে দিতি।

আমি ওর কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়ে বলতে লাগলাম,

— আমি আবার কখন কী করলাম?

আমার কথা শুনে ও একটা মুখ ভেংচি কেটে বলতে লাগলো,

— আদিব ভাইয়াকে দেখে আমার কেমন কেমন লাগছিল তা তুই একটুর জন্য তো কিয়ারা আপুকে বলেই দিচ্ছিলি।

টায়ার কথা শুনে আমি জিভ কাটলাম।আর বলতে লাগলাম,

— বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম রে, তাই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছিল।কিন্তু তুই তো আর আদিব ভাইয়ার প্রেমে পড়ে যাসনি তাহলে বললেই বা কি হতো?

আমার কথা শুনে টায়রা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,

— তারপরও আপু যদি অন্যকিছু ভাবতো? আর ওনাকে দেখলে সত্যি আমার মন কেমন কেমন করে রে বেলা।

চলবে ইনশাল্লাহ।

#প্রেমময়_বিষ
#পর্ব_১
#মাহিমা_রেহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here