অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩৫+৩৬

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩৫

বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে আয়ান আর আয়ুশীর!আজ থেকে এক সপ্তাহ পর ওদের বিয়ে!সবাই প্ল্যানিং এ ব্যাস্ত!আয়ুশী গালে হাত দিয়ে সবার প্ল্যানিং শুনছে! আয়ান আর ফাহিন গেছে ফাহিনের কাজিনকে রিসিভ করতে!আয়ুশী অপেক্ষা করছে সীমা আর ইভার আসার!বিয়েতে ফ্রেন্ড ছাড়া মজা হয় নাকি?আলোচনার ফাঁকেই ডেইজির মায়ের কল এলো!ডেইজি একটু আলাদা হয়ে গেলো কথা বলতে!

“হ্যাঁ মম বলো!”

ডেইজির মা বাংলা বুঝলেও ইংরেজিতেই কথা বলেন!

“কি ব্যাপার ডেইজি?তুমি দেশে কবে আসবে?”(নোট – কথা গুলো গল্পের ভারসাম্য রাখতে আর বোঝার সুবিধার্থে বাংলায় লিখলাম!)

“মম,বললাম তো!বিয়ে শেষ হোক,তারপর!”

“ছেলে পক্ষ কি তোমার জন্য এতদিন অপেক্ষা করবে?”

“অপেক্ষা না করলে বিদায় করো!

“হোয়াট?এমনেই তুমি পড়াশোনা শেষ করার জিদ করে নিজের বয়স বাড়িয়েছো!এখন এক ছেলে পক্ষ গেলে আরেক ছেলেপক্ষ পাবে কোথায়?”

“প্লিজ মম,আমি এসব শোনার মুডে নেই!”

“তুমি এত জেদী কেনো ডেইজি?তোমার কি মনে হয়?বয়স জানার পর কেউ তোমায় বিয়ে করবে?”

“করলে না করুক!”

বলেই ফোন কেঁটে দিলো!বিয়ের জন্য ওর মা বাবা যেনো পাগল হয়ে গেছে!ওর মা আবার ফোন করলেও ধরলো না!সাইলেন্ট করে রেখে দিলো!ফোনের দিকে তাকিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলো ও!হুট করেই করো বুকের সাথে ধাক্কা লাগলো ওর!চোখ তুলে সামনে তাকাতেই সুঠাম দেহের অধিকারী এক যুবককে দেখলো!ডেইজির চোখ আপনাআপনিই ছোট হয়ে গেলো!সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”কে আপনি?”

পিছন থেকে আয়ান ট্রলি আনতে আনতে উত্তর দিলো,”ও আফরান! ফাহিনের ফুফাতো ভাই!”

“ওহ!”
বলেই নিজের জায়গায় বসলো!কিন্তু আফরান ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো!এক মিনিটের জন্য ওর হার্ট অ্যাটাক হয়নি!ফর্সা মুখ,হালকা গোল্ডেন ,সেই সাথে রিবন্ডিং করা পিঠ অব্দি পড়ে থাকা চুল…কোনো সাজ সজ্জা ছাড়াই অপূর্ব লাগছে!মেয়েটি বিদেশি তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।তার মানে সে বিদেশিনী!বিদেশিনী কথাটা মাথায় আসতেই ওর মনে একটাই গান বাজতে লাগলো!

“আমি চিনি গো চিনি তোমারে,ওগো বিদেশিনী!”

পিছন থেকে ফাহিন এসে জোড়ে একটা কি’ল ওর পিঠে বসিয়ে দিল! বিদেশিনীর কথা ভুলে আপাতত ব্যাথায় আর্তনাদ করলো ও!ওরা সমবয়সী ই!

“স্ট্যাচুর মত এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভূত দেখলি?”(ফাহিন)

“ভূত না বন্ধু,ভূত না!পরী…”

“মাথা গেছে তোর?”

“মন গেছে রে!”

ফাহিন কিছুই বুঝলো না।এসব পাত্তা না দিয়েই টানতে টানতে ওকে নিয়ে আলোচনা সভায় গেলো!

“মামনি দেখো তো চিনো নাকি?”

নাহার ফাহিনের কথায় হেসে বললেন,”আরে চিনবো না কেনো?তোরা না থাকতে ওই তো এসে আমাদের আর তোর মা বাবার খবর নিতো!”

আফরান নিজেকে ছাড়িয়ে নাহারের পায়ের কাছে বসে বললো,”এরা ভাবে আমি কোনোদিন তোমাদের কাছেও আসিনি!”

“আসো নাই ই তো,আমি কিন্তু বেশ অভিমান করেছি!”

“এমা কেনো?”

“আয়ান আসার পর তো একবারও আসো নি!”

“আন্টি, বুঝোই তো কাজ থাকে!”

ফাহিন ওকে তাচ্ছিল্য করে বললো,”ও তো আমার বিয়েতেই আসেনি! নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ব্যাস্ত এখন!”

“আমাকে তোর মত পেয়েছিস নাকি,যে মেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত থাকবো?”

ফাহিন চোখ বড় বড় করে ইহরার দিকে তাকালো! ইহরা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! ফাহিন আফরানের পিছে দিলো এক লা’থি!আফরান আবারও ব্যাথায় আর্তনাদ করলো।নাহারের কাছে বিচার দিয়ে বললো,”দেখো আন্টি,কিভাবে মা’রছে ফাহিন!”

“মিথ্যা কেন বলিস?”

“মজাও করতে পারবো না নাকি!”

নাহার ওদের থামিয়ে বললো,”হয়েছে হয়েছে,এখন যাও।ফ্রেশ হয়ে আসো!”

“আরে আগে আমার ভাবীকে তো দেখাও!”

ফাহিন ওর মুখ প্রথমে ইহরার দিকে ঘুরিয়ে বললো,”এটা আমার ভাবী!”

ইহরা চোখ বড় বড় করে বলল,”আমি তোমার ভাবী?”

ফাহিন জিভ কেটে বললো,”সরি,আমার বউ ,তোর ভাবী!”

আফরান হেসে বললো,”হাই ভাবী!”

ইহরা হাসলো!

এরপর আয়ুশীর দিকে ধরে বললো,”এইযে আয়ানের হবু বউ,তোর ভাবী!”

মুহূর্তেই আফরান এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো!আয়ুশীর অস্বস্তি হতে লাগলো!কিছুক্ষণ পরেই অস্ফুট স্বরে বললো,”মাশাআল্লাহ!”

সঙ্গে সঙ্গে গালে চ’র পড়লো!আফরান গালে হাত দিয়ে চ’রদাতার দিকে তাকালো। আয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে তাকিয়ে আছে!উপরে আফরানের ট্রলি রাখতে গিয়েছিল!সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখলো আফরান মুগ্ধ দৃষ্টিতে আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে আছে।এটা আয়ানের সহ্য হলো না!

“শা’লা, ভাবী হয় তোর!”

“তুই আমায় মা’রলি কেনো?”

“তুই ওভাবে আমার বউকে দেখছিস কেনো?”

“আমি তো বিদেশিনীকে দেখছিলাম!”

মুহূর্তেই সবার চোখ ডেইজির দিকে গেলো।ডেইজি ভ্রু কুঁচকে তাকালো!আয়ুশীর কাছে ডেইজি বসে ছিলো।ডেইজিকে দেখেই ওভাবে তাকিয়ে ছিলো।এক পর্যায়ে দেখলো ডেইজি ওর সামনের ছোট চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিলো।তখনই আফরান বললো মাশাআল্লাহ! আফরানের কথা শুনে ডেইজি বললো, “এক্সকিউজ মি,বিদেশিনী কে?”

আফরান ভরকে গেলো।চ’রের চোটে মুখ ফসকে বলে দিলো!

“ইয়ে মানে আপনি!আসলে কখনো বিদেশী মেয়ে দেখিনি!আপনাকেই প্রথম দেখলাম,তাও বাঙালি পোশাকে।তাই…”

“ওহ!”, ছোট করে উত্তর দিয়ে লিস্ট করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো! আফরান কোমর ধরে,গালে হাত রেখে উঠে দাড়ালো!আফসোসের সুরে বললো,”” আসতে না আসতেই এত মা’র খেতে হচ্ছে!এক সপ্তাহে না জানি কি কি হবে!”

আয়ান ওর গলা জড়িয়ে “আরে আরে,মা’র বলিস কেনো?এটা ভালোবাসা!”

ফাহিন ও গলা জড়িয়ে বললো,”হয় ভালোবাসা!”

ইহরা ফোঁড়ন কেঁটে বললো,”তোমাদের ছেলে ছেলে ভালোবাসা শেষ হলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো!”

তিন জন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।ইহরার কথার মানে বুঝতেই একসাথে বলে উঠলো,”ষীহ!”

আয়ুশী আর ডেইজি ফিক করে হেসে দিলো!ডেইজির হাসি দেখে আফরান বাম বুকে হাত দিয়ে মিন মিন করে বললো,”হায়!কিতনি সুন্দর হাসি….”

আয়ুশীরা ওর কথা না শুনলেও ফাহিন আর আয়ান শুনে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো!আফরান ওদের চাহুনি দেখে বললো,”ফ্রেশ হতে যাওয়া দরকার!”

বলেই ওদের ছাড়িয়ে দৌড় দিলো!

“ওই দাড়া!” (বলেই ফাহিন আর আয়ানও পিছু গেলো)

নাহার আফসোসের সুরে বললো,”এরা এখন বাচ্চাদের মতো ঝ’গ’ড়া করছে…”

আয়ুশীরা আর ওদিকে না তাকিয়ে প্ল্যানিংয়ে মনোযোগ দিলো।

__________________________________

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বাইরে আসতেই আফরান দেখলো ফাহিন আর আয়ান বিছানায় বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে! ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সেটাও লক করে রেখেছে!বুঝতেই পারছে আজ আর ছাড় নেই!তোয়ালে চেয়ারে রেখে ওদের মাঝে বসে পড়লো!

“বল কি বলবি?”

“নিচে অমন ব্যাবহার করলি কেনো?”(ফাহিন)

“কি চলে তোর?”(আয়ান)

আফরান ওদের পাত্তা না দিয়ে বসা অবস্থাতেই মাথার নিচে দুই হাত রেখে শুয়ে পড়লো!ভাবুক কুমার হয়ে বললে,”প্রথম দেখাতেই বিদেশিনীর প্রেমে পড়েছি বন্ধুগন!এখন আর উঠার ইচ্ছে নেই!”

আয়ান আর ফাহিন ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,”ওহো!”

__________________________________

দরজায় বেল বাজার শব্দ শুনতেই আয়ুশী উঠে গেলো!দরজা খুলে কাউকেই পেলো না!কেউ মজা করেছে ভেবে আবার লাগিয়ে আসতে নিলো,তখন আবার বেল বাজলো!কিন্তু আবারও খুলার পর দেখলো কেউ নেই!এবার বেশ বিরক্ত হলো!এভাবে বেশ কয়েকবার হওয়ার পর আয়ুশীর ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙলো!দরজা খুলে বাইরে গিয়ে উকি ঝুঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না!ক্ষিপ্ত গলায় বললো,”কোন বা’ন্দর রে?”

তখনই ওর পিছ থেকে,”ভাউ!” ,বলে সীমা আর ইভা লাফিয়ে পড়লো!হুট করে এমন হওয়ায় বেশ ঘাবড়ে গেলো!বুকে থু থু দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকাতেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো ওরা!কিছুক্ষণ বাদেই দেখলো জুনাইদ আর নাহিম দুইজন দুইটা ব্যাগ কাধে করে নিয়ে আসছে!ওদের দেখে ওখানেই রাখলো ব্যাগ দুটো!

“বুঝলাম না তুমি এক সপ্তাহের জিনিস এনেছো,নাকি এক মাসের?”(জুনাইদ)

“আমারও একই প্রশ্ন!এত ভারী কেনো তোর ব্যাগ?”(নাহিম)

“আরে বাবা,বিয়ে বলে কথা!জিনিস তো লাগবেই!”(ইভা)

“তাই বলে এত?”(জুনাইদ)

“আরে দুলাভাই!আপনি তো বিয়ে করেছেন , জানেনই তো কত সাজসজ্জা লাগে!”(সীমা)

“বাবা রে,জানি না আবার?বিয়ে ছাড়াই তো এর সাজসজ্জার কোনো সীমা নাই!বিয়ের সময় তো আরো লাগবে!”(জুনাইদ)

“কি বললে?”(ইভা)

জুনাইদ মেকি হেসে বললো,”কিছু না!”

“এই ওয়েট ওয়েট!তোমরা সব এক সাথে এসেছো?”(আয়ুশী)

“আরে না,বাড়ির সামনে আসতেই দেখা হয়ে গেলো!”(ইভা)

“আমাকে তো নাহিম ভাইয়া এনেছে!”(সীমা)

নাহিম ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি বললি?”

ইভা হেসে বললো,”শিম,কয়েকদিন পর যাকে বিয়ে করবি তাকে এখনও ভাইয়া ডাকিস?”

“বোঝাও তোমার বান্ধবীকে!”(নাহিম)

“কেউ যদি আমাকে তুই ডাকে আমার কি করার আছে?হবু বউকে কেউ তুই ডাকে?”(সীমা)

নাহিম মাথা চুলকালো!

“আচ্ছা ইভা আমি গেলাম!”(জুনাইদ)

“সেকি ভাইয়া,আপনি থাকবেন না?”(আয়ুশী)

“উনি বিজনেস এর কাজে বাইরে যাবে!তাই তো আমি এখানে থাকার পারমিশন পেলাম!”(ইভা)

জুনাইদ হেসে বললো,”বুঝোই তো!”

“বিয়েতেও আসবেন না?”(আয়ুশী)

“বিয়েতে অবশ্যই আসবো!”

“তাতেই হবে! নাহিম ভাইয়া আপনি তো থাকবেন?”

“না না,আমার কাজ আছে!”

সীমা মনে মনে বলে,”কাজ না ছাই!এভাবে কোনো সম্পর্ক ছাড়া হবু বউয়ের ফ্রেন্ডের শ্বশুর বাড়িতে থাকা ঠিক হবে না বলেই থাকতে চাচ্ছে না!”

“আচ্ছা বেশ!অন্তত ছোট আম্মুর সাথে দেখা করে যান!”

ওরা দুইজনেই ভেবে দেখলো!এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না!তাই নাহার আর বেলালের সাথে দেখা করে গেলো….

#চলবে

(এমনেই একবার লিখতে গিয়ে পুরোটা কেঁটে গেছে!এখন আরেকটু লিখতে পারতাম,কিন্তু ফোন নিয়ে যাবে!তাই ছোট পর্বের জন্য দুঃখিত)#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_৩৬

নিজের রুমে বসে আছে আয়ুশী।সেই সাথে ইভা,সীমা,ডেইজি আর ইহরা!ইভা মন খারাপ করে বলছে,তার বিয়েতে কেউ আসেনি!কত একা একা ছিল!
“আরে ইভা,তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল জানোই তো?”(ডেইজি)

“বাট তাও..এদিকে উনার মা বিয়ের জন্য তাড়াহুড়া শুরু করেছিলেন!নাহলে আয়ুকে ছাড়া বিয়ে করতাম নাকি?”(ইভা)

আয়ুশী ভেংচি কেটে বললো,”ইহ…ঢংয়ের জ্বালায় টিকা যাচ্ছে না!বিয়ে করে বাসর অব্দি কমপ্লিট হয়ে গেছে!আর উনি বলছে বিয়ে করতো না!”

ইভা গাল ফুলালো!ডেইজি হাসলো…দরজায় নক পড়ায় সীমা গিয়ে দরজা খুলে দিলো! আফরানের সাথে ওদের এখনও দেখা হয়নি!সীমা চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলো,”কে আপনি?”

আফরান দাত কেলিয়ে বললো,”ভাবীর ডাক্তারের কাজিন !”

সীমার কাছে কথাটা ঠিক বোধগম্য হলো না!আয়ুশী উকি দিতেই আফরানকে দেখতে পেলো!

“আরে,আফরান ভাইয়া যে!ভিতরে আসুন!”

“না না,এত লেডিসদের মাঝে আমি কি করবো!ভাবলাম আপনারা দুইজন আছেন!এখন দেখি মেয়েদের ফৌজ!”

সীমা হেসে বললো,”কেনো ভয় পেয়ে গেলেন নাকি আমাদের দেখে?”

“অস্বাভাবিক কিছু না!না জানি একা কুমার ছেলেকে পেয়ে কি করেন!ইজ্জত হরন হলে পরে আমি মানুষকে মুখ দেখাতে পারবো না!”

“কি বললেন?আমরা আপনার ইজ্জত হরন করবো?”

“করতেই পারেন,মেয়েদের বিশ্বাস নেই!”

“সীমা,উনাকে একটু ভিতরে আনো!উনার ধারণা খানা সত্যি করে দেই!”(ইহরা)

আফরান চোখ বড় বড় করে ফেললো! ও তো খেপাতে চাইছিলো…এরা দেখি ওর থেকেও এক ধাপ উপরে!কি ডেঞ্জারাস!ভাবতেই পালাতে গেলে সীমা আর ইহরা টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো!আয়ুশী আর ডেইজি গালে হাত দিয়ে সবটা দেখছে!

সীমা কোমরে হাত দিয়ে বললো,”এবার বলেন!বিয়ান সাহেব…কি বলছিলেন?”

আফরান কিছু না বলেই ওদের গুনতে লাগলো!

“হায় আল্লাহ,শেষ মেষ পাঁচ জন মেয়ের হাতে আমার ইজ্জত হরন হবে!আমি এই মুখ এখন সমাজে কি করে দেখাবো?”,বলেই দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো!

সীমা আর ইহরা হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে আছে!ইভা আর আয়ুশী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!এত ড্রামা ছেলেরা করে ওদের জানা ছিলো না!মাঝে ডেইজি জোড়ে হাসতে শুরু করলো!বেশ ইনজয় করছে আফরানের এমন ড্রামা! কারো হাসির শব্দ শুন আঙ্গুলের ফাঁকে শব্দ অনুসরণ করে তাকালো!ডেইজি হাসছে…দেখেই মুখ থেকে এক হাত নামিয়ে বুকের বাম পাশে রাখলো!ঘায়েল হওয়ার মত করে বললো,”হায়, জান নিকাল গিয়া!”

কথাটা একটু জোড়ে বলায় সবারই কানে গিয়ে ঠেকলো!মুহূর্তেই সব সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো!আফরান তখনও ডেইজির দিকে তাকানো!ডেইজি হাসি থামিয়ে অস্বস্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।সীমা আফরানের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,”কি চলছে ভাই?”

আফরান আনমনেই বললো,”ঝড়!”

ডেইজি বাদে ওরা চারজন একসাথে বললো,”কিসের?”

“প্রেমের!”

চারজন একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,”ওহো?”

ডেইজি ভ্রু কুঁচকে তাকালো!মনে মনে নিজেই বললো,”মেন্টাল নাকি?”

আফরানের এতক্ষণে খেয়াল হলো।ওর এই একটা দূর্বল পয়েন্ট!কোনো কথা চেপে রাখতে পারেনা…বলতেই হবে তাকে সব! পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মাথা চুলকে মেকি হাসি দিয়ে এক ছুটে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো ও!চারজন হাসতে লাগলো..শুধু হাসি নেই ডেইজির মুখে!

“এতো দেখি ডেইজি আপুর দিওয়ানা!”(সীমা)

“নিচেও তখন কেমন অদ্ভুত ব্যাবহার করলো!”(ইহরা)

সীমা আর ইভা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো কি করেছিলো! ইহরা সবটা বললো!সব শুনে আরেক দফা হাসলো ওরা!

“তাহলে একটা জিনিস কনফার্ম!”(ইভা)

ডেইজি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,”কি?”

চারজন একসাথে বলে উঠলো,”হি লাভস ইউ!”

কথাটা ওদের ভালো লাগলেও ডেইজির না।সেখান থেকে উঠে যেতে নিলেই ফোন বেজে উঠলো ওর।বেলকনিতে হয়ে ফোন রিসিভ করলো ও।সবাই ভাবলো ফোন আসায় উঠে গেছে,কিন্তু আয়ুশী ঠিকই বুঝেছে ডেইজির মনের অবস্থা!

“ইহরা আপু ফাহিন ভাইয়া ডাকে!”(কাজের লোক)

গল্পের মাঝেই ডাক পড়লো ইহরার!

“কেনো?”

“ভাইয়া হের মানিব্যাগ পায় না!”.

“ওহ,তুমি গিয়ে দেখো ওইটা ড্রেসিং টেবিলের দ্বিতীয় ড্রয়ারে আছে।”

“আচ্ছা”,বলে ফাহিনের কাছে গেলো।

ততক্ষণে ডেইজিও এসে বসলো।কাজের লোকটি আবার একটু পর এসে বললো,”আপু,ভাইয়া আপনারে যাইয়া খুঁজতে কয়!”

ইহরা বিরক্ত হয়ে বলল,”আরে গিয়ে বলো,আমি এখন আসতে পারবো না। তুমি খুজে দিবে!”

কাজের লোক আবার গেলো।কিছুক্ষণ পর বিরক্ত ভরা মুখ নিয়ে ফিরে এসে বললো,”আপা আপনি যান!”

“আবার কি?”

“ভাইয়া আমারে বকছে!”

“কেনো?”

“বলে,আমি কি হের বউ নাকি যে আমি খুজে দিমু!”

ইহরা আড়চোখে ওদের দিকে তাকালো!সবাই মুখ চেপে হাসছে!

“তুমি যাও,আমি যাচ্ছি!”

“আচ্ছা!”

বলে আবার গেলো!আয়ুশী হাসি আটকে বললো,”যাও যাও,ডাক্তার তোমায় ভীষণ মিস করছে!”

তখনই আবার কাজের মেয়েটি এলো! কাঁদো স্বরে বললো,”আপা!”

ইহরা অসহায় হয়ে বললো,”আবার কি?”

মেয়েটি বলল,”আপনি না!আয়ুশী আপাকে খালাম্মা ডাকে!”

সেই মুহূর্তেই নাহার ওদের রুমের সামনে দিয়ে নিচে গেলো। পাঁচজন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতেই মেয়েটি অসহায় হয়ে বললো,”আয়ান ভাই কইছে এটা কয়ে নিয়ে আসতে!”

ইহরা তখন টিটকারী দিয়ে বলে,”যাও যাও ,মিষ্টার খারস তোমায় মিস করছে!”

বলে ইহরা উঠে নিজের রুমে গেলো।আয়ুশী একপলক ওদের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে উঠে দৌড় দিল!

ডেইজি আফসোসের সুরে বলল,”আজ সিঙ্গেল বলে…”

সীমাও তাল মিলিয়ে বললে,”সেম!”

মুহূর্তেই ইভা আর ডেইজি ওরে দিকে তাকালো!তাই দেখে সীমা ভরকে গেলো…সীমা হেসে বললো,”বাবাকে ফোন দিয়ে আসি!”

বলেই বেলকনিতে চলে গেলো!ইভা আর ডেইজি গল্প জুড়ে দিলো একসাথে!

__________________________________
আয়ানের ঘরে গিয়ে কোমরে হাত রেখে আয়ুশী ক্ষিপ্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,”ডেকেছেন কেনো?”

“আমি কখন ডাকলাম?”

“সাহেলা(কাজের লোক) যে বললো?”

“ও আমার নাম বলেছে?”

“না আমার প্রাক্তন জামাই এর নাম বলেছে!”

আয়ান অবাক হয়ে বললো,”তুমি বিয়ে করলে কবে?”

“আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে!”

আয়ান উত্তর না দিয়ে আয়ুশীকে টেনে বিছানায় বসালো!

“আরে আরে,কি করছেন?”

“চুপ করে বসো!”

বলে নিজে আয়ুশীর কোলে মাথা রেখে নিচে বসলো!আয়ুশী ভাবুক ভঙ্গিতে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে!

“এবার মাথার চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে দেও!একটু ঘুমাই!”

“আপনি এই জন্য আমাকে ডেকেছেন?”

“তো তুমি কি ভেবেছিলে? রোম্যান্স করবো নাকি?”

“আমি কেন ওসব ভাববো?”

“তাহলে ,আপাতত আমাকে ঘুমাতে সাহায্য করো!”

“কেন এমনিতে ঘুমাতে পারেন না?”

আয়ান ওর কোলে মাথা রাখা অবস্থাতেই চোখ বন্ধ করে বললো,”মেয়ে ,আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছো তুমি!মন – মস্তিষ্কে তুমি এমনভাবে গেঁথে গেছে সারাদিন তোমার চিন্তায় থাকি!এভাবে কি থাকা যায়!যায় জন্য ঘুম হাওয়া,এখন তাকে দিয়েই ঘুম আমার চেষ্টা!তাই কথা না বলে কাজ করো!নাহলে ঘুম কেড়ে নেয়ার দায়ে মামলা করবো!”

আয়ুশী হাসলো!

“এভাবে বসে না ঘুমিয়ে বিছানায় উঠুন!”

আয়ান বাধ্য ছেলের মত আয়ুশীর বিপরীতে মুখ রেখে কোলে মাথা রাখলো!আয়ুশী মাথার চুল টানতে টানতে আয়ানকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো! আয়ান চোখ বন্ধ রেখেই বললো,

“এভাবে দেখতে নাই মিস ঝামেলা!প্রেমে পড়ে যাবেন…”

আয়ুশী হেসে বললো,”সেটা তো কবেই পড়েছি!”

“এইজন্য বুঝি আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন ম্যাম?”

আয়ুশী রেগে আয়ানের চুল জোড়ে টানলো!মৃদু ব্যাথায় আর্তনাদ করলে আয়ান।তাই দেখে মুচকি হেসে আয়ুশী বললো,”আমার জিনিস,আমি দেখছি!আপনার কি?”

আয়ান কিছু বললো না।শুধু একটু হাসলো! আয়ুশীও নিজের কাজে মন দিল!

__________________________________

“ও বউ, রাগছো কেনো?”

“রাগবো না কেনো?সাহেলাকে কি বলেছেন আপনি?”

“তুমি যদি নিজে আসতে তাহলে তো আর বলতাম না!”

ইহরা চোখ পাকিয়ে তাকালো! ফাহিন ওসবে পাত্তা না দিয়ে পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ ডুবালো ফাহিন।মৃদু কেঁপে উঠলো ইহরা। ফাহিন ওভাবে থেকেই বললো,”সারাদিন টই টই করে ঘুরলে হবে?ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে হবে না বুঝি?”

“আবার কিসের ভবিষ্যৎ!”

“বারে ছেলে পুলে আসার ব্যাবস্থা করবে না নাকি?”

ইহরা রেগে কুনুই দিয়ে ফাহিনের পেটে ধাক্কা মারলো!

“উফ, মা’রো কেন?”

“তোমারর কথার জন্য?”

“আমি তোমার হাজব্যান্ড বলতেই পারি!”

“মাথা আপনি!”

বলেই ওকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। ফাহিন আফসোসের সুরে বলল,”ফাহিনরে তোর বউয়ের এত লজ্জা,মনে হয় না কোনোদিন বাবা হতে পারবি!থাক মন খারাপ করিস না!”

__________________________________

ডেইজির সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে ইভার ফোন বেজে উঠলো!জুনাইদ ফোন দিয়েছে!ইভা বিপাকে পড়লো…সীমার আসার তো খবরই নেই! নিশ্চয়ই নাহিমের সাথে কথা বলছে!এখন সেও ফোন নিয়ে কথা বললে ডেইজির তো খারাপ লাগবে!এদিকে ফোন রিসিভ না করলেও হবে না!জুনাইদ ফ্রি থাকলে কল দেয়!নাহলে কাজের চাপে থাকলে ফোন ই ধরতে পারে না!কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ও।ডেইজি ওর অবস্থা বুঝতে পারলো
“ইভা,আমি একটু নিচ থেকে আসছি!”

বলেই বেরিয়ে এলো ও!ইভা সেই ফাঁকে ফোন রিসিভ করলো!ডেইজি সিড়ি থেকেই উকি দিয়ে দেখলো নিচে কিছু লোক এসেছে!হয়তো বিয়ে বারি বলে দেখতে এসেছে!কিছুনা ভেবেই ছাদে চলে গেলো! ছাদেই পায়চারি করছিলো তখন আফরান এলো!

“আরে বিদেশিনী!”

ডেইজি সৌজন্যমূলক হাসি দিল!

“কেমন আছেন!”

“ভালো!”

“আমায় জিজ্ঞেস করবেন না?”

“আপনাকে দেখতেই পাচ্ছি আপনি ভালো আছেন!”

“কে বললো?আমি মোটেও ভালো নেই!”

ডেইজি কিছু বললো না!

“কথা বলছেন না যে?”

“একটা মেয়ে হয়ে কোন ছেলে তাকে কি নজরে দেখে সেটা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে!কি বলুন তো,বিদেশে অনেক এমন সিচুয়েশনে পড়েছি!আমি চাই না ব্যাপারটা আগে বাড়ুক!তাই কথা বলতে ইচ্ছুক নই!”

“কারণ জানতে পারি?”

“আয়ান বা ফাহিনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন!গেলাম..”

বলে যেতে নিলেই আফরান বললো,”সবটা জেনেই হাত বাড়িয়ে দিতে চাইছি!”

যেতে যেতেই থেমে গেলো ডেইজি! আফরানের দিকে তাকিয়ে বললো ,”সব জানেন?”

“হুমম জানি!”

“কি জানেন?”

“তোমার প্রথম ভালোবাসা!”

ডেইজি দীর্ঘশ্বাস নিলো!

“তাহলে এটাও জানেন,দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না!”

“সম্ভব না ,এটা মানলাম না!সম্ভব..শুধু একটু মনটাকে মানাতে হয়!”

“শুধু শুধু পিছে পড়ে থেকে লাভ নেই!যা হবার নয়… তা নিয়ে বেশি ভাববেন না!আসছি..”

বলেই চলে গেলো।আফরান মুচকি হেসে বলল,”মিস বিদেশিনী!আমি যে মনটা আপনার কাছে বন্দক রেখে দিয়েছি!এখন যে আমার আর কোনো কূল কিনারা নেই!”

কিছুক্ষণ চুপ থেকেই নিজেই বললো,” তোমায় দেখেছি হৃদিমাঝারে
,ওগো বিদেশিনী!”

#চলবে

(মনে হয় গল্প লিখি না,যু’দ্ধ করি!কবে যে নিজের ফোন হবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here