#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৪
ভার্সিটির গেটে আইসক্রিম হাতে নিয়ে ঢুকছে তিন বান্ধবী।
“আজ প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি আগে এসে পড়লাম তাই না?”(সীমা)
“হুঁ,চল ঘুরি একটু!ফুল ক্যাম্পাস!”
ইভার কথায় আয়ুশী আর সীমা সম্মতি দিলো। অরেঞ্জ ফ্লেভারের এই দশ টাকা দামের আইসক্রিম গুলো আয়ুশীর দারুন পছন্দ!ভার্সিটির তিন তলাতে এসেই স্যারদের কেবিনে উকি মারে ওরা!প্রায় সবাই এসেছে!আয়ুশী চোখ বুলিয়ে আয়ানকে খুঁজতে লাগলো!
“আয়ু,এভাবে বেশি উকি দিস না! স্যাররা দেখলে বকা দিতে পারে!”
সীমার কথাটা বলতে দেরি কিন্তু ফলতে দেরি হলো না।ভিতর থেকে কোনো এক স্যার গম্ভীর গলায় বললেন,”কে ওখানে?”
আওয়াজ পেয়ে তিনজন দিলো দৌড়!প্রত্যেক বারের মত এবারও কলার খোসা পায়ের নিচে পড়াতে পা পিছলে গেল।নিজেকে সামলাতে নিয়েও এবার সামলাতে পারলো না আয়ুশী।ফল স্বরূপ আইসক্রিম হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায়,আর আয়ুশী নিচে।এভাবে পড়ে যাওয়ায় বেশ ব্যাথা পেয়েছে! হাতে কুনুই ছিলে গেছে অনেকটাই।সামনে তাকাতেই দেখলো আইসক্রিমটা কারো পায়ের কাছে পড়ে আছে।প্রিয় আইসক্রিম এভাবে পড়ে যাওয়ায় বেশ আফসোস হলো ওর। কার পায়ের কাছে পড়েছে দেখতে গিয়ে মাথা উঠাতেই বিস্মিত হয়ে রইলো।এখন ও কনফিউসড! আইসক্রিম পড়ে যাওয়ায় আফসোস করবে নাকি সামনে থাকা ব্যাক্তির সাদা শার্টের উপর যেই কমলা রঙের দাগ চক চক করছে ওইটা দেখে হাত পা ছড়িয়ে কান্না করবে,নাকি বার বার ওকে বিপদে ফেলা কলার খোসাকে এমন অপরাধ করা উপলক্ষে জেলে দিবে।দাগটা ওর আইসক্রিম এরই।আর সামনের ব্যাক্তিটি স্বয়ং আয়ান!কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে একবার আইসক্রিম এর দিকে তাকাচ্ছে, তো একবার আয়ান,তো আবার কলার খোসা।আয়ানকে দেখে সীমা আর ইভাও সামনে আসার সুযোগ পাচ্ছে না।আয়ান দীর্ঘশ্বাস নিলো।এই মেয়ে যতবারই আছাড় খাবে,ততবারই আয়ানের সাথে কিছু না কিছু হবে,ঢের বুঝতে পেরেছে।নিজের সাদা শার্টে আইসক্রিম শেপ কমলা রঙের দাগ দেখে আয়ুশীর দিকে তাকালো।কাঁদো কাঁদো ফেস করে একবার কলার খোসা দেখছে,আবার শার্টের দিকে তাকাচ্ছে।সীমা আর ইভার অবস্থা দেখে বুঝলো ওরা এগিয়ে আসবে না এখন।আইসক্রিম কে ঠেলে এক সাইড করলো।আদারওয়াইজ নোংরা হবে জায়গাটা বাজেভাবে।আয়ুশীর দিকে এগিয়ে গেলো ও।আয়ানকে এগিয়ে আসতে দেখে আয়ুশী চট করে নিজের গালে হাত দিলো।না জানি চ’র দেয় সেদিনের মতো।আয়ান বুঝতে পারলো আয়ুশী ওকে ভয় পাচ্ছে।নিজের হাত ওর দিকে এগিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,”উঠো!”
আয়ুশী একের পর এক ঢোক গিলছে।আয়ান একটু ধমকের মতো করেই বললো,”কি হলো? উঠো!”
আয়ুশী আস্তে করে আয়ানের হাত ধরে উঠে দাড়ালো।হাত অনেকটাই ছিলে গেছে।সীমা আর ইভাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”ওকে ধরো!”
আদেশ পাওয়া মাত্রই ওকে ধরলো ওরা।পায়ে হালকা চোটও পেয়েছে।এমনিও পূর্বের ব্যাথা কিছুটা ছিলো।আয়ান কেবিনের দিকে গেলো।ওদের ধারণা আয়ান আর আসবে না।তাই আয়ুশীকে নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো ক্লাসের উদ্দেশ্যে! তখনই আয়ানের ডাক পড়লো।ওদের কেবিনের দিকে ডাকছে।ভয়ে চুপসে গেলো ওরা।না জানি ওই স্যার ওদের উঁকি ঝুঁকি দেয়ার জন্য আয়ানকে বিচার দিয়েছে।তাও ওরা ওদিকে গেলো।কেবিন ফাকা।সম্ভবত সব ক্লাসে গিয়েছে।আয়ান একটা চেোয়ার টেনে আয়ুশীকে বললো,”বসো!”
আয়ুশী অবাক হয়ে বললো,”জী স্যার?”
“তোমায় বসতে বলেছি!”
আয়ুশী তবুও দাড়িয়ে।এবার আয়ান ধমকে বললো,”ধমক ছাড়া কথা শুনো না?”
তড়িঘড়ি বসে পড়লো ও।আয়ান একটা তুলায় কিছুটা হেক্সিসল ঢেলে ওকে লাগিয়ে দেও।সীমা ঢোক গিললো।ওর এসব করতে হাত কাঁপে।তাও স্যার বলেছে করতে তো হবেই।কাঁপা কাঁপা হাতে নিতে গেলেই আয়ান বললো,”এনি প্রবলেম?”
সীমা মেকি হেসে বললো,”আসলে স্যার আমার এগুলো করতে নার্ভাস লাগে।তাইতো মেডিকেলে পড়িনি!”
আয়ান ইভার দিকে তাকাতেই বুঝলো সেও সেম।উপায় না পেয়ে নিজেই হাঁটু গেড়ে বসলো আয়ুশীর কাছে।কুনুইয়ের দিক খেয়াল করতেই দেখলো বেশ ময়লা লেগে আছে।পকেট থেকে রুমাল বের করে তার এক কোণা পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলো।ছোটবেলায় মাকেও এভাবেই করতে দেখেছে যখন ও ব্যাথা পেতো।পানি লাগার ফলে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলেও কোনো শব্দ করলো না ও।হেক্সিসলে ভেজানো তুলা হাতে লাগাতেই মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো আয়ুশী!এই প্রথম আয়ুশীর দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি দিলো আয়ান।ব্যাথায় চোখ-মুখ কুঁচকে রেখেছে ও।চোখের কোণে পানি লক্ষ করতেই হাতে হাল্কা করে ফুঁ দিলো ও।মৃদু কেঁপে উঠলো আয়ুশী।আস্তে আস্তে চোখ খুললো ও।আয়ান যত্ন নিয়ে ফু দিয়ে মেডিসন লাগিয়ে দিচ্ছে।ব্যাথার কথা বেমালুম ভুলে গেলো ও।এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ও।এভাবে তাকিয়ে থাকতে ওর বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু ওর মুডের বারোটা বাজিয়ে আয়ান বলে উঠলো,”সারাদিন আছার খাওয়া ছাড়া তোমার কোনো কাজ নাই?”
আয়ুশীর ঠিক বোধগম্য হলো না।তাই বললো,”জী?”
“বললাম সারাদিন আছার খাওয়া ছাড়া তোমার কোনো কাজ নাই?আর যখনই খাও হয় আমার উপরে পড় নয়তো কিছু ফেলো!কোনো রোগ নাকি এটা?”
আয়ুশী ফোঁস করে শ্বাস নিলো।যাই একটু ক্রাশ খেলো বাট এই খারুসের তেঁতো কথায় তা হাওয়া।গাল ফুলিয়ে বসে রইলো ও।আয়ান ওর পায়েও ব্যাথার স্প্রে করে ফার্স্ট এইড কিডটা গুছিয়ে রাখলো।দ্বিতীয় ক্লাসের ঘন্টা পড়তেই বললো,”নেও শেষ,এবার ক্লাসে যাও তোমরা!”
এখন আয়ানেরই ক্লাস ওদের সাথে সীমা, ইভা আয়ুশীকে ধরে নিতে চাইলে ও জানায় ও নিজেই পারবে।ওরা বের হয়ে গেলেও আয়ুশী বের না হয়ে আবার আয়ানের সামনে দাড়ালো।আয়ান তাকাতেই বললো,”সরি স্যার,এই কয়দিনের সব কিছুর জন্য!আর ওই দিন আপনাকে ফল বিক্রেতা ভাবার জন্য!আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে আপনি উনি নন!তাই আরকি….”
আয়ুশীর কথার মাঝেই আয়ান বলে উঠলো,”সিরিয়াসলি?ভুল কি আদো ছিলো?”
আয়ুশী হাত কচলাতে লাগলো।
“আমি বাচ্চা না যে তুমি যা খুশি বুঝাবে!সরি বলতে আসলে,তাও মিথ্যে বলে!সরি মানে নিজের দোষ স্বীকার করা। তুমি এক দোষ স্বীকার করতে গিয়ে আরেকটা দোষ ক্রিয়েট করলে!”
আয়ুশী এবার শুরু থেকে সবটা বলে আবার সরি বললো।
“ইটস ওকে,ইউ মে লিভ!”
“আপনি ক্ষমা করেছেন তো স্যার?”
“কেও ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হলে তার উপর রাগ করে থাকতে নেই।”
আয়ুশী মুচকি হেসে বেরিয়ে যেতে লাগলো।দরজার কাছে যেতেই আয়ান ওকে ডাক দিলো,”আয়ুশী!”
থমকে গেলো ওর পা!আগেও তো কতজন এভাবে ডেকেছে।কই এত মিষ্টি তো লাগেনি।নিজেকে সামলে ঘুরে তাকালো ও।আয়ান আমতা আমতা করে বললো,”সরি!”
“কেনো স্যার?”
“রাগের বসে তোমার গায়ে একদমই হাত তুলা উচিত হয় নি!আসলে রাগ উঠলে নিজের মাঝে থাকি না আমি!”
“রাগাটা স্বাভাবিক স্যার!আমি কিছু মনে করিনি…”
“তাও সরি!”
“ইটস ওকে স্যার!”
বলেই বেরিয়ে গেলো।
ক্লাস শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা লাগালো আয়ুশীরা।আয়ুশী মুখে মুচকি হাসি বিদ্যমান।এতে ইভা আর সীমা বেশ ভাবুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।দ্বিতীয় ক্লাস থেকেই আয়ুশী কেমন আনমনা হয়ে হাসছে, তো আবার নিজে নিজেই বিরবির করছে।সীমা এবার আয়ুশীর কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিলো।
“আয়ু!”
“আয়ান স্যার কি কিউট তাই না?”
দু জন চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই এক সাথে সমস্বরে টেনে বললো,”ওহো!”
আয়ুশীর এতক্ষণে হুস হলো।মুখ ফসকে কি বলে ফেলেছে।পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠলো,”ইয়ে মানে,কত ভালো ক্লাস করায়।কি সুন্দর সব বুঝিয়ে দেয়।কতটা দায়িত্ববান মানুষ…কিউট না?”
ওরা দুইজন তাও চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।আয়ুশী মেকি হাসলো।
“কি চলে আয়ু বেবি?”(সীমা)
” কই কি?”(আয়ুশী)
“বুঝি তো বেবস!” (ইভা)
আয়ুশী কিছু বলবে তার আগেই সীমার ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে বাবা নামটা জ্বল জ্বল। হাসি মুখে রিসিভ করলো ফোনটা।সালাম দিতেই সীমার বাবা এক গাল হেসে তার উত্তর নিলেন।
“কেমন আছিস মা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ,তুমি?”
“ভালো রে!বাড়ি আসবি না এবার?”
দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সীমার!কতদিন বাবাকে দেখে না ও।কথা বলতে বলতে রাস্তার ফুটপাতের উপর বসলো ও।
“বন্ধ পেলেই আসবো বাবা!এই মাসে ডাক্তার দেখিয়েছো?”
“হ্যাঁ রে মা!”
আবারও দীর্ঘশ্বাস নিলো ও।
“মিথ্যা বললে আমি বুঝে ফেলি এটা জানো না?”
ওই পাশে কোনো আওয়াজ এলো না।হুট করেই ভেসে এলো কারো কর্কশ আওয়াজ!
“আমার ফোনের সব টাকা শেষ করে ফেললো এই বুড়ো!বলি তোমার কি আক্কেল জ্ঞান নেই? কার সাথে কথা বলছো? নিশ্চয়ই ওই মাইয়ার লগে!দাড়াও।”
বলেই ফোন কেড়ে নিলো।সীমার বাবা বাঁধা দিতে গিয়েও দিতে পারলো না।
“কিরে,গিয়েও শান্তি দেস নাই?তোর জন্য আমার ফোনের সব টাকা শেষ করছে।এগুলো কি তুই দিবি?তোর প’ঙ্গু বাপরে যে রাখছি এটাই অনেক!শহরে কোন না’গ’রে’র লগে ঘুরস যে সময় মতো টাকা পাঠাস না!তোর বাপের খরচ কি আমি দিমু নাকি?”
চোখ বন্ধ করে রইলো সীমা!এখন কিছু বললে বাবার উপর এর প্রভাব পড়বে।শান্ত গলায় বললো,”এই মাসের টিউশনির টাকা এখনও পাইনি।পাওয়ার সাথে সাথেই পাঠিয়ে দিবো!”
“মনে থাকে যেনো!”
বলেই ফোন রেখে দিলেন সীমার সৎ মা।যখন ওর পাঁচ বছর বয়স তখন মা মা’রা যায়!তখন ও মায়ের আবদার করতো বাবার কাছে।”বাবা আমাকে একটা মা দেও!”,বলে কি কান্নাটাই না করতো!তখন মেয়ের জন্য আবারও বিয়ে করেন তিনি।শুরু দিকে সব ভালোই ছিল।উনাদের কোল আলো করে আসে আরেক ছেলে।তখনও ওদের সম্পর্কের পরিবর্তন হয়নি!কিন্তু পরিবর্তন তখন হলো যখন ওর বাবা দু’র্ঘ’ট’না’য় নিজের পা হারান!নিজের বাড়ির কু মন্ত্রণায় শুরু করে অস্বাভাবিক ব্যাবহার!ভার্সিটি ওর পড়া হতো না যদি না ওর মামা ওকে পড়াশোনার সুযোগ দিতেন।তিনি ই এখানে ভর্তি করান আর খরচ চালান।এতে সৎ মা আরো ক্ষেপে জানান উনি বাবার কোনো দায়িত্ব নিতে পারবে না।যেখানে উনার সম্পত্তির অভাব নেই।তার বাবার খরচ চালাতে টিউশনি করে মাসে দশ হাজার টাকা দেয়।কিন্তু এতে দেরি হলেই বাবাকে শুনতে হয় অনেক কথা।পড়াশোনাটা শেষ করেই একটা চাকরি খুঁজবে।তারপর বাবাকে নিয়ে আসবে ও।ওই নরকে রাখবে না,যেখানে প্রতি নিয়ত শুনতে হয় সে প’ঙ্গু!দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো আবারও।জীবন কি অদ্ভুত!এত কষ্টের আড়ালেও হাসি মুখে দিব্বি আছে ও।
#চলবে#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_০৫
চোখের কার্নিশে জল এসে জমা হলো সীমার…আর কয়েকটা বছরের অপেক্ষা!তখনই কেউ টিস্যু এগিয়ে দিলো ওর দিকে।টিস্যু নিয়ে চোখে জমে থাকা জল টুকু মুছে ফেললো।অপরজন পানি এগিয়ে দিল। ও জানে এরা কে!মুখে হাসি ফুটলো ওর।এরা থাকতে ওর কাঁদতে মানা!নিজেকে সামলে বললো,”তোরা দুইজন এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
“তোর রূপ গজিয়েছে তো তাই!”(আয়ুশী)
ইভা ফিক করে হেসে দিল।সীমা আস্তে করে আয়ুশীর পিঠে কি’ল বসালো।
ওরা তিনজনই এক গ্রামের বাসিন্দা।ছোট থেকেই একসাথে থেকে এসেছে ওরা।কিন্তু স্কুল জীবন শেষে আয়ুশী ভালো কলেজে অ্যাডমিশন এর জন্য শহরে এসে পড়লেও ,সীমা আর ইভা পারেনি!কিন্তু ভার্সিটিতে ঠিকই পেরেছে। আয়ুশীও চায় নি,কিন্তু বাবার আশা ফেলতে পারেনি!
সীমা এবার দুষ্টু হেসে বললো,”আয়ু! স্যার যেনো কেমন?”
আয়ুশী ভরকে গেল।ভেবেছিলো এদের মাথা থেকে কথাটা হাওয়া হয়ে গেছে।কিন্তু ও তো ভুলেই গেছে।এরা বিচ্ছু বাহিনী!
“বল ,বল!”(ইভা)
“আব..কেমন আবার।ভালোই তো! কত দায়িত্ব নিয়ে পড়ায়!বেলাল স্যার এর মত!”
“উনারই তো ছেলে ,ভালো তো পড়াবেই!”(ইভা)
“তুই চুপ কর(ইভাকে উদ্দেশ্য করে),আর আয়ু তুই বল!সামথিং সামথিং?”(সীমা)
“এবার বাড়াবাড়ি হচ্ছে!উনি আমাদের টিচার!রেসপেক্ট হিম!”
বলেই উঠে হাঁটতে লাগলো।সীমা পিছন পিছন যেতে যেতে বলল,”ও হ্যাল্লো!পার্মানেন্ট টিচার নয়..সাময়িক!আর না বুড়ো ,না বিবাহিত!আর তোদের তো যাবেও ভালো।তুই শুধু উনার সামনে আছার খাবি!আমি জানিস তোদের জন্য একটা ফিল্ম বানাবো।নাম হবে ,’নায়কের আছার খাওয়া নায়িকা!’,যেখানে নায়িকা নায়কের সামনেই দিন রাত আছার খায়!নায়ক তো আয়ান স্যার,নায়িকা তুই! সাইড ক্যারেকটার আমি আর ইভা!আর ভিলেন …. উম!ভিলেন কাকে দেয়া যায় ,বল তো?বেলাল স্যার?না না..উনি তো ভালো মানুষ!”
মাঝেই ইভা বলে উঠলো,”ভিলেন দে কলার খোসা কে!যেটা অলওয়েজ ওকে আছার খেতে সাহায্য করে!”
“পারফেক্ট!জোস হবে না আয়ু?”
আয়ুশী রাগে ফুলছে। আশে পাশে খুঁজে একটু মিডিয়াম পাথরের কণা উঠিয়ে ওদের দিকে ছুঁড়ে মা’র’লো…
“তোরা আর তোদের ফিল্ম,সেই সাথে তোদের ভাবনা নিয়ে জা’হা’ন্না’মে যা! অ’স’ভ্যে’র দল!”
বলেই আরো জোড়ে হাঁটা লাগালো।সীমা আর ইভা মুখ চেপে হাসতে লাগলো। অতঃপর হাসি থামিয়ে ছুটলো আয়ুশীর রাগ ভাঙাতে!
_________________________________
নিজের কেবিনে সবে মাত্র গা এলিয়ে বসলো ফাহিন!একটু আগেই একটা অপারেশন করে এসেছে।রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল থাকলেও ,আল্লাহর রহমতে সফল হয়েছে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো ও।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে ফোন হাতে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকলো ও!এক হাস্যজ্বল রমণীর প্রতিচ্ছবি বের করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ও! রমণীটিকে যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয় ও।আনমনেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,”আমার মায়াবতী!”
_____________________________
সবে মাত্রই ফ্রেশ হয়ে বসলো আয়ান!বারান্দায় তার প্রিয় সাদা শার্টটি রোদে দিয়েছে!ধোয়ার পরেও দাগ সেভাবে যায়নি! শার্টের কথা ভেবেই হাসি পেলো ওর।সাদা শার্টে কমলা রঙের নতুন ডিজাইন !স্টাইল হিসেবে পড়া যাবে!নিজের ভাবনায় নিজেই আবার অবাক হলো।এসব কি ভাবছে ও?বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো ও!মুহূর্তেই ভেসে উঠলো আয়ুশীর চোখ মুখ কুচকানো প্রতিচ্ছবি! ঝট করে চোখ খুলে ফেললো ও। কার কথা ভাবছে ও?ফোন হাতে নিয়ে একজনের ছবি বের করলো ও!নিজের মনে নিজেই আওড়ালো,”আমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে কেবল তোমার আনাগোনা হবে!আর কারোর না!একদমই না!”
________________________
হোস্টেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো সীমা,ইভা!সীমার টিউশনি আছে।তাই একটু পরেই বের হবে।ইভা বাড়ির খোজ নেয়ার জন্য ছোট ভাই মিতাফের ফোনে কল দিল।মিতাফ এবার এইচ এস সি দিলো।ভার্সিটি এডমিশনের প্রিপারেশন নিচ্ছে।ফোন ধরতে না ধরতেই মায়ের আওয়াজ শুনলো ও।চোখ মুখ কুচকে গেলো ওর।এমনটা নয় মায়ের আওয়াজ শুনতে বিরক্ত লেগে।কিন্তু ও জানে এখন ঠিক কি কি বলবে।
“কিরে ইভা!কেমন আছিস?আমি ফোন দিলে ফোন ধরিস না কেনো?”
“তুমি জানোই মা,কেনো ধরি না!”
“দেখ ছেলেটা ভালো।সরকারি চাকরি করে।একবার দেখা করবি এতে তোর সমস্যা কোথায়?”
“সরকারি চাকরি করে ,তাহলে যৌতুকের দাবি কেনো রাখে মা?”
“তুই কিভাবে….”
“আমি কিভাবে জানলাম সেটা বড় কথা নয়,যারা উচ্চবিত্ত হয়েও ভিক্ষুকের মতো মেয়ের বাড়িতে আগেই যৌতুক দাবি করে ,তাদের আর যাই হোক আমি মানুষ ভাবি না!”
“যৌতুক ছাড়া কেউ বিয়ে করবে নাকি তোকে?”
“করবে!আর এমনটা তো না তোমরা কিছুই দিতে না!দিতে তো ঠিকই।কিন্তু চেয়ে কেনো নিবে?যৌতুক দেয়া বা নেয়া উভয়ই অপরাধ!”
ইভার মা মলিন গলায় বললেন,”মেয়ের সুখ চাওয়া আমাদের অপরাধ রে মা?”
নিমিষেই নুয়ে গেলো ও।মায়ের কাতর কণ্ঠ কোনোকালেই সইতে পারে না ও!
“মা প্লিজ!”
“আমাদেরই ভুল,হয়তো একটু বেশি ই আশা করেছিলাম!”
ইভা চুপ রইলো।কিছুক্ষণ পরে বললো,”কোথায় দেখা করতে হবে?”
ফোনের অপর প্রান্তে ইভার মা বাঁকা হাসলেন!
“আমি অ্যাড্রেস মিতাফ দিয়ে পাঠাচ্ছি!”
আরো টুকটাক কথা বলে রেখে দিলেন উনি। মিতাফ মায়ের হাসি দেখে বললো,”ইমোশনাল কথা বার্তা উরফে ব্ল্যাক’মেইল কেউ তোমার থেকে শিখুক মা!”
মিতাফের হাতে ফোন দিয়ে বললেন,”তোর বোনের জন্যই করা!ওকে একটা ভালো পরিবারে দিতে পারলেই শান্তি!আর উনারা ভালো মানুষ!আমার মেয়ে ভালো থাকবে!”
মিতাফ হাসলো।বোনের কথা সেও ভাবে।কিন্তু বাবা মায়ের মত হয়তো এতটাও ভাবতে পারেনি ও!
__________________________________
বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছে আয়ুশী।সীমা টিউশনি শেষে পার্কে থাকবে বলে জানিয়েছে।আর ইভাকেও আসতে বলেছে।যদিও এই নিয়ে মাকে অনেক বলে কয়ে রাজি করিয়েছে।পার্কে ঢুকে একটা বেঞ্চিতে বসলো ও।ছোট ছোট বাচ্চারা কি সুন্দর মজা করছে।বাচ্চাদের দেখতে এতই বিভোর যে পাশে কেউ এসে বসেছে টেরই পেলো না।
“বাচ্চা ভালো লাগে?”
“প্রচুর!”
উত্তর দিলেও প্রশ্নদাতাকে দেখতে ঘাড় ঘুরালো আয়ুশী। ফাহিন মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“আরে ডাক্তার যে!”
“জি মিস!বাট আমার একটা নামও আছে!”
“তাতে কি?আপনাকে আমি ডাক্তারই ডাকবো।”
“আচ্ছা বেশ,তো একা বসে যে?”
“সীমা আর ইভা এক্ষুনি এসে পড়বে!আপনি এখানে?”
“এ সময় সাধারণত বাসায় ফিরি।কিন্তু আজকে মন চাচ্ছে না।তাই একটু সময় কাটাতে এলাম!”
“একা একা ?”
“একা একা ছিলাম, তবে এখন তো তুমি আছো!”
“আচ্ছা,বুঝলাম!”
ততক্ষণে সীমা আর ইভাও চলে এসেছে।
“আরে ফাহিন ভাইয়া,আপনি?কেমন আছেন?”
” এইতো তোমরা?”
এইভাবেই চার জন আড্ডা জমালো।একটু ঘুরাঘুরি করলো।
“আয়ু,এখন যাওয়া উচিত!হোস্টেলে সন্ধ্যার আগে ঢুকতে হবে আমাদের!”(ইভা)
“হুমম,সন্ধ্যা হয়ে গেছে!তোরা যা।আমিও যাই!”(আয়ুশী)
“তুমি একা যাবে?”(ফাহিন)
“ওদের হোস্টেলের আমার বাড়ির বিপরীতের রাস্তা!তাই একাই যেতে হবে!”(আয়ুশী)
“চলো আমি ড্রপ করে দেই!”
“আপনার গাড়ি আছে?”
“গাড়িতেই কি শুধু ড্রপ করা যায় নাকি?হেঁটে হেঁটেও তো করা যায়..”
আয়ুশী হাসলো।লোকটা ভীষণ মজার!
“তাহলে আয়ু তুই ভাইয়ার সাথে যা,আমরাও যাই! টাটা…”
“টাটা!”
বলেই সকলে নিজেদের গন্তব্যের দিকে গেলো।
আজান পড়েছে একটু আগেই।আরো আগে যাওয়া উচিত ছিল বলেই মনে হচ্ছে আয়ুশীর।ওদের বাড়ির রাস্তা অনেকটাই শুনশান!প্রথমে এত কিছু না ভাবলেও,এখন ভাবতে হচ্ছে।এভাবে হুট করে মাত্র দুইদিনের আলাপে পরিচিত হওয়া ব্যাক্তির সাথে এমন শুনশান রাস্তায় একা আসা ওর মোটেও ঠিক হয়নি!হালকা ভয় করছে ওর!যতই হোক!পুরুষ মানুষ….সহজে বিশ্বাস আজকাল কার যুগে কেই বা করে।আয়ুশীর অবস্থা হয়তো অনেকটা বুঝতে পেরেছে ফাহিন।
“আচ্ছা তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে ?”
এমন প্রশ্নে বেশ ভরকে গেলো ও।তাও জবাব দিল,”না!”
“কাউকে পছন্দ করো নিশ্চয়ই?”
পছন্দের কথা শুনতেই আয়ানের কথা মাথায় এলো সর্ব প্রথম!অদ্ভুত ভালো লাগে ওই লোকটাকে নিয়ে ভাবতে ওর!
“কল্পনা জল্পনা পরে করো,আপাতত আমায় বলো কে সে?”
আয়ুশী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,”না,ভেবে দেখছিলাম! তেমন কেউ নেই এখনও!”
“সিরিয়াসলি?”
“হুমম,আপনি করেন কাউকে পছন্দ?”
“হুমম করি তো!”
“কাকে?”
“তোমাকে!”
থমকে গেলো আয়ুশীর পা! ঢোক গিলতে লাগলো ও!ভয় করছে এখন ভীষণ!
“আরে আরে রিল্যাক্স,আমি মজা করছিলাম!”
আয়ুশী শান্ত হলো।মৃদু রেগে বলল,”আমার এমন মজা মোটেও পছন্দ না!”
“আচ্ছা সরি!আমি কাউকে পছন্দ করি না!বাট…”
“বাট?”
“ভালোবাসি!”
“কে সে?”
“তার অনুভূতি আগে জানি,তারপর তোমায় বলবো তার কথা!”
“বেশ,তবে আমার একটা প্রশ্ন!”
“কি?”
“আপনি এত সহজ ভাবে নিজের পারসোনাল কথা শেয়ার করছেন কিভাবে আমার সাথে?”
“বলতে পারো,আমরা এখন ভালো বন্ধু হয়ে গেছি!তাই…যদিও এর উত্তর আমারও জানা নেই!”
“আমার বাসা এসে গেছে!”
“ওহ,ওকে বাই!আবার কখনো দেখা হলে কথা হবে!”
“বাই!”
আয়ুশী চলে গেলো। ফাহিন মুচকি হেসে ফোন বের করলো। ফোনের স্ক্রিনে থাকা রমণীর হাস্যজ্বল মুখশ্রী দেখে ওর হাসি আরো প্রসারিত হলো। বিরবির করে বললো,”ভালোবাসি মায়াবতী!”
#চলবে…
(কালকে অনেকেই কলার খোসার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কিছু বললেন।তো এবার আমি বলি…আসলে ওটা জাস্ট একটু বিনোদনের জন্য এড করা!আর যেহেতু এটা বাস্তবের কোনো কাহিনী লিখছি না,তাই একটু অন্যরকম ভাবে জিনিসটা সাজিয়েছি!কিন্তু অনেকের এটা ভালো লাগেনি!তাই এখন একটু সাবধানে লিখবো!যাতে বাড়াবাড়ি কিছু না হয়!আর আমার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের!তাই এই ভুলটুকু ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ!)