পাঁচ বছর আগে যেই মেয়েকে অপমান করে তার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলাম, সেই মেয়েই আজ আমার সামনে একটা কন্ট্রাক্ট পেপার রেখে বলছে চাকরি করতে হলে তাকে আমার চুক্তিতে বিয়ে করতে হবে। মেয়েটার কথা শুনে আমি নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চাকরির সন্ধানে এক অফিসে জবের ইন্টারভিউ দিতে এসেছি। কিন্তু ইন্টারভিউ দিতে এসে পাঁচ বছর আগের সেই মেয়েটার সাথে আবারো দেখা হয়ে যাবে তা কোনোদিন ও কল্পনা করিনি। তার উপরে আবার মেয়েটা আমাকে বলছে চাকরি করতে হলে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে তাকে চুক্তিতে বিয়ে করতে হবে। মেয়েটার কথা শুনে সারা শরীর নাড়া দিয়ে উঠেছে আমার। চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে হাবলার মতন তাকিয়ে আছি। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। অপরপাশ থেকে মেয়েটা আমাকে হাবলার মতন তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
–‘এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? অবাক হয়েছিস মনে হয় আমাকে এখানে দেখতে পেয়ে? অবশ্য অবাক হওয়ায় এই কথা। কারণ গত পাঁচ বছর আগে আমি কি ছিলাম আর এখন কি হয়েছি সেটা দেখে অবাক না হয়ে তো আর কোনো উপায় নেই। তবে যাই হোক তুই কি আমায় চিনতে পেরেছিস মিস্টার আকাশ মাহমুদ? আমিই কিন্তু সেই তনু যাকে তুই গত পাঁচ বছর আগে অপমান তার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলি। মনে পড়ে কিনা দেখ তো আমার কথা।’
–‘জ্বি মনে আছে।’
–‘হুম মনে থাকলে তো ভালোই। জানিস বহু দিন ধরে প্রত্যাশা করে বসে আছি তোর সাথে আমার কবে দেখা হবে। আর আমি তোর উপরে প্রতিশোধ নিব সতেরো সালের এপ্রিল মাসের সাত তারিখে করা অপমানের। আমি সেই দিনের কথা আজও ভুলিনি। ডায়েরি’তে ডেট টা একদম টুকে রেখেছি ভালো ভাবে। আজ সেই দিন টা এসেছে। অবশ্য আমি ভেবেছিলাম তোর সাথে পরবর্তীতে আমার দেখা হলেও তোকে অপমান করার সেভাবে সুযোগ পাবো না। কিন্তু আজ দেখছি তুই পুরো ভিখারির ন্যায় আমার সামনে এসে চাকচির জন্য হাজির হয়েছিস। মিস্টার আকাশ মাহমুদ দেখলি তো সময়ের পরিবর্তন? গত পাঁচ বছর আগে আমার কিছুই ছিল না। বিজনেসের সমস্ত টাকা মা~ইর খাওয়ার ফলে বাবা স্ট্রোক করে মা~রা গিয়েছিল। তখন আমার আর আমার পরিবারের মাথার উপরে কোনো ছাদ ছিলো না। বাবার বিজনেসের এতোটাই লোকসান হয়েছিল, যে বাবার সমস্ত টাকা ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি এক গাদা ঋণে ডুবে পড়েছিলাম আমরা। যেই কারণে আমাদের বাড়িটাও সেই সময় আমাদের থেকে কেঁড়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন আমাদের আশ্রয়ের খুব প্রয়োজন ছিল। তার উপরে তোকে আমি বহু আগ থেকেই ভালোবাসতাম। আমার বাবার সাথে তোর বাবার বেশ ভালো একটা সম্পর্ক ছিল। কারণ দু’জনে এক সাথে বিজনেস করতো। কিন্তু আমার বাবা মা~রা যাওয়ার পর তোরা আমাদের দিকে সাহায্যের হাত তো বাড়াস এই নি, তার উপরে আমি তোর বুকে মাথা রেখে ঠাঁই খুঁজার প্রত্যাশা করায় তুই আমাকে একগাদা অপমান করে আমার প্রেমের প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিলি। জানিস আমার ভিতরে সেদিন এই আগুন জ্বলে উঠেছিল। আমি সেদিন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছি নিজের বাবার যেই টুকু ধনসম্পদ আর নাম ছিল, আমি তার থেকেও দ্বিগুণ টাকা আর নিজের নাম কামাবো। আর সেই সঙ্গে তোর থেকে অপমানের প্রতিশোধ নিব। এরপর আমরা তোদের সেই শহরটা ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাই। অন্য শহরে যাওয়ার পর আমার মায়ের কিছু জমিজমা ছিল সেসব মা বিক্রি করে আমায় অল্প সংখ্যক টাকা দেয় ছোটখাটো বিজনেস করার জন্য। মা’য়ের দেওয়া সেই অল্পসংখ্যক টাকা থেকে আমি নিজের এতো বড় একটা অবস্থান তৈরী করেছি।
আজ দ্যাখ পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে। আজ দ্যাখ আমার সেই দুঃসময় তোর দেখা দিয়েছে। তাই তো তুই চাকরির জন্য আমার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিস। শুন তোর চাকরিটা যদি তুই কনফার্ম করতে চাস, তাহলে অবশ্যই তোকে কন্ট্রাক্টে সাইন করতে হবে।’
–‘তনু প্লিজ এমনটা করিও না। আমার চাকরিটা খুব প্রয়োজন।’
আকাশের কথা শুনে তনু খুব কর্কশ গলায় বলে উঠে,
–‘থা~পড়ে তোর গালের সমস্ত দাঁত ফেলে দিব। তুই আমার নাম ধরে ডাকছিস কোন সাহসে? ম্যাডাম বলে ডাক।’
–‘ম্যাডাম প্লিজ আমায় চাকরিটা দিন। আমার চাকরিটার খুব প্রয়োজন।’
–‘হ্যাঁ এবার ঠিক আছে। আর মিস্টার আকাশ তোকে কি আমি বলেছি যে চাকরিটা দিব না? তোকে তো আমি চাকরি দিতেই চাইছি। কিন্তু তার জন্য তো তোকে শর্ত মানতে হবে। তুই আমার কন্ট্রাক্ট পেপার টাতে সাইন করে দে। যেখানে লিখা আছে তুই আমার সাথে তিন বছরের চুক্তিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছিস। চুক্তির তিন বছরে তুই এই বিয়ে নিজ থেকে কখনোই ভাংতে পারবি না। সেই সঙ্গে অফিস থেকেও রিজাইন করে চলে যেতে পারবি না। তবে আমি চাইলে যে কোনো কিছুই করতে পারবো। তিন বছরের আগে বিয়ে ভাংতে পারবো। আমি চাইলে তোকে অফিস থেকেও তাড়িয়ে দিতে পারবো। এক কথায় আগামী তিন বছর আমার যেমন ইচ্ছে হয় তেমনটাই আমি করতে পারবো। তুই আমার এই এগ্রিমেন্টে রাজি হয়ে যা। তাহলেই তো চাকরিটা তুই পেয়ে যাচ্ছিস।’
আকাশ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আবারো হাবলার মতন তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে তার দিকে আবারে হাবলার মতন তাকিয়ে থাকতে দেখে এবার চরম রেগে যায়। যার ফলে সে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে,
–‘দ্যাখ তোর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বকবক করবো সেই সময়টা আমার নেই। হয় তুই কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন কর৷ না হয় শুরুতে অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে আমি তোকে চরম অপমান করবো, তাপরপ সিকিউরিটির মাধ্যমে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিব। এবার তুই কোনটা করনি জলদি বল।’
আকাশ এই অফিসে ইন্টারভিউ দিতে এসে এক ভয়ানক পরিস্থিতিতে আঁটকে গেছে। এখন সে চাইলে চাকরিটা বরখাস্ত ও করতে পারবে না। কারণ তনু সবার সামনে তাকে অপমান করার হু~মকি দিয়েছে। অন্যদিকে সে চাকরিটা করলেও তার জন্য বিপদ। কারণ আজ প্রথম দিনেই তনু তার সাথে যেভাবে কথা বলেছে, এতে করে আকাশ বুঝে গেছে রোজ তাকে তনুর হাতে অপমান আর অপদস্ত হতে হবে। এছাড়া তনু তাকে কন্ট্রাক্ট পেপারের সাহায্যে তিন বছরের জন্য বিয়ে করে তার জীবনটা নড়ক বানিয়ে দিতে চাইছে।
তবে আকাশের হাতে বর্তমানে থার্ড কোনো অপশন নেই। দু’টোর মধ্যে থেকে যে কোনো একটা তার বেছে নিতেই হবে। একদিকে তার চাকরিটা খুব প্রয়োজন। সংসারের অভাব অনটন মেটাতে হলে চাকরিটা তার করতেই হবে। অন্যদিকে চাকরিটা রিজেক্ট করলে ঘরের মানুষের পেটে ভাত জুটবে না। আর সেই সঙ্গে অফিসের সকল কর্মচারীর সামনে অপমান হতে হবে। তাই আকাশ পরিবারের কথা চিন্তা করে আর কোনো কিছু না ভেবে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দেয়৷ তনু আকাশের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করিয়ে সেই কন্ট্রাক্ট পেপারটা ডেস্কের ভিতর রেখে ডেস্ক তালা মে~রে চেয়ার থেকে উঠে আকাশের কাছে এসে দাঁড়ায়। এরপর আকাশকে বলে,
–‘আজ থেকে তুই আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট। তোর কোয়ালিফিকেশন যতোই থাকুক না কেন, বর্তমানে এর থেকে ভালো কিছু তুই ডিজার্ভ করিস না। আগামী তিন বছর তোকে আমার এসিস্ট্যান্ট হয়েই কাটাতে হবে। এবার দেখি আমার কোমরে দু’হাত রেখে আমায় বেরিয়ে ধর।
আকাশ তনুর কথা শুনে থতমত খেয়ে যায়। আকাশ ভূত দেখার মতন করে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। অপরদিকে তনু আকাশকে আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
–‘এভাবে তাকিয়ে থাকলে চোখ দু’টো উঠিয়ে নিব তোর। মনে রাখবি তুই আমার এসিস্ট্যান্ট। আর আমি তোর ম্যাডাম। আমি যখন জানতে পেরেছি তুই আমার অফিসে ইন্টারভিউ দিতে আসবি, তখনি উকিলের মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট পেপারটা বানিয়ে রেখেছি। যাতে করে তোকে একদম আঁটকে ফেলতে পারি। তবে তোকে আপাতত বেরিয়ে ধরতে বলার একটা কারণ রয়েছে। সেটা হচ্ছে আমার ইচ্ছে ছিল আমার যেদিন বিয়ে হবে সেদিন আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে অনেক খুনসুটি করবো। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোকে বিয়েটা করতে হয়েছে। তবে যাই হবে হোক স্বপ্নটা পূরণ করি আগে। এবার দেখি তুই আমার কোমরে হাত রেখে আমি বেরিয়ে ধর। তবে সাবধান জড়িয়ে ধরবি না কিন্তু।’
আকাশ তনুর কথা মতন অপারগ হয়ে দু’হাত তনুর কোমরে রেখে তনুকে বেরিয়ে ধরে। আকাশ তনুকে বেরিয়ে ধরার কয়েক সেকেন্ড পর তনু আকাশকে নিজেই জড়িয়ে ধরে আকাশের বুকে মাথা রাখে। তনু আকাশের বুকে মাথা রাখতেই আকাশের সারা শরীর কেমন যেনো শীতল হয়ে যায়। আকাশের মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই সে নিজের প্রিয়তমাকে নিজের বাহুতে নিয়ে রেখেছে। চোখ বুঁজে আকাশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাস্তব জগত থেকে কল্পনার জগতে বিচরণ করেছে। তবে কিছু সময় যেতেই তনু আকাশের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আকাশের গালে কোষে একটা থা~প্পড় লাগিয়ে দিয়ে বলে,
–‘আমার ইচ্ছাটা আমি যাস্ট পূরণ করেছি। কিন্তু তুই তো দেখছি চোখ বুঁজে মজা নেওয়ায় ব্যস্ত। কি ভুলে গেছিস নাকি আমি তোর ম্যাডাম। আর তুই আমার এসিস্ট্যান্ট?’
–‘না ম্যাডাম ভুলিনি।’
–‘তাহলে চোখ বন্ধ করে কি করছিলি? আমার তো মনে হচ্ছিল তুই আমাকে নিজের বউ ভেবে জড়িয়ে ধরে আছিস।’
–‘সরি ম্যাডাম।’
–‘প্রথম বারের মতন ক্ষমা করে দিলাম। আগামী থেকে নিজের পরিচয়টা মনে রাখবি।’
–‘জ্বি আচ্ছা।’
–‘এবার গিয়ে আমার জন্য চা করে নিয়ে আয়।’
আকাশ তনুর কথা মতন চা করে আনতে চলে যায়। তবে সে জানে না টি- কর্ণারটা কোথায়। তনুর কেবিন থেকে বেরিয়ে এদিক-সেদিক টি- কর্ণারটা খুঁজতে থাকে। এমন সময় অফিসের ম্যানেজার আকাশের কাছে এসে বলে,
–‘তোমার চাকরিটা কি কনফার্ম হয়েছে?’
–‘জ্বি হয়েছে।’
–‘কোন পোস্টে চাকরি দিয়েছে ম্যাডাম তোমায়?’
–‘ম্যাডামের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে।’
–‘ওহ আচ্ছা। তবে তুমি এখন কি খোঁজা-খুঁজি করছো? বেশ কিছু সময় ধরে দেখছি তুমি এদিক-সেদিক কি যেনো খুঁজে বেড়াচ্ছো।’
–‘আসলে ম্যাডাম আমায় উনার জন্য চা করে নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু আমি জানিনা টি- কর্ণারটা কোথায়! তাই সেটা খুঁজছিলাম।’
–‘ঠিক আছে তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমায় দেখিয়ে দিচ্ছি।’
–‘জ্বি আচ্ছা।’
অফিসের ম্যানেজার আকাশকে নিয়ে গিয়ে টি- কর্ণারটা দেখিয়ে দিয়ে সে চলে আসে। অন্যদিকে আকাশ টি- কর্ণারে গিয়ে তনুর জন্য চুলোয় চা বসায়। কিছুক্ষণ পর চায়ের পানি তৈরী হলে আকাশ চায়ের মধ্যে চায়ের সরঞ্জাম দিয়ে একটা কাপে করে তনুর জন্য নিয়ে যায়। আকাশ প্রচন্ড নার্ভাস চা কেমন হয়েছে সেটা নিয়ে। অবশ্য আকাশ সব কিছুই পরিমাণ অনুযায়ী দিয়েছে। তবে তনুর কাছে চা টা কেমন লাগে সেটাই বড় বিষয়। আকাশ তনুকে চা করে দেওয়া পর তনু চা টা মুখে দিতেই তনুর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়৷ যার ফলে গরম চা ভর্তি কাপটা কোনো কিছু না ভেবেই তনু আকাশের শরীরের উপরে ছুঁড়ে মে~রে বলে,
–‘এই অকর্মায় ঢেঁকি এটা কি চা বানিয়ে এনেছিস? চায়ের মধ্যে এতো চিনি কেন? আমি যে চিনি একেবারে কম খাই সেটা কি তুই জানিস না?’
–‘সরি ম্যাডাম আমি আসলে জানতাম না।’
–‘যা চায়ের ভাঙা কাপটা উঠিয়ে নিয়ে আবার গিয়ে আমার জন্য আরেক কাপ চা করে নিয়ে আয়।’
আকাশ তনুর কথা মতন চুপচাপ মাথা নুইয়ে চায়ের
ভাঙা কাপটা ফ্লোর থেকে উঠিয়ে আরেক কাপ চা করার উদ্দেশ্যে কেবিন থেকে বেরিয়ে টি- কর্ণারে চলে যায়। টি কর্ণারে এসে আকাশ আবারো চুলোয় চা বসায়। চুলোয় চা হচ্ছে আর অপরিদকে আকাশের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। কারণ একটু
আগে ছুঁড়ে মা~রা তনুর গরম চা গুলোর কারণে আকাশের শরীরে প্রচন্ড জালাতন শুরু করেছে। তবে আকাশ সেটাকে বেশি একটা গুরুত্ব দেয় না। কারণ সে এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে চা বানানোতে কোনো গড়মিল করলে আবারো তাকে সাজা পেতে হবে। তাই সে নিজের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে চা বানিয়ে তনুর জন্য নিয়ে যায়। আকাশ এবার একদম আংশিক পরিমাণ চিনি দিয়েছে চায়ে। তনু এবার চা খেয়ে আর কোনো রিয়েক্ট করে না। কারণ চায়ের মধ্যে সব ঠিকঠাক আছে এবার। তবে তনু চা নিয়ে আকাশকে কিছু না বললেও আগের বার চায়ে চিনি বেশি দেওয়া কারণে আকাশকে বলে,
–‘এই যে শুন তুই আমার এসিস্ট্যান্ট হলেও আমি জানি তুই যোগ্যতা সম্পন্ন একটা ছেলে। তাই তোকে এখন কিছু কাজ দিব সেসব তোর সম্পন্ন করতে হবে। অবশ্য ফাইল গুলো যদিও আমার সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু প্রথম বার চায়ে বেশি চিনি দেওয়ার শাস্তি এটা তোর। এই যে আমার ডেস্কের উপরে তিনটা ফাইল রয়েছে। ফাইল গুলো ফাস্ট টু লাস্ট শেষ করে বুঝিয়ে দিয়ে তারপর বাসায় যাবি। যা এবার গিয়ে ঐ কোনায় ফ্লোরের উপরে বসে কাজ শুরু কর। আমি আগামীকাল ম্যানেজারকে বলে দরজার বাহিরে তোর জন্য চেয়ার আর একটা ডেস্কের ব্যাবস্থা করে দিব।
আকাশ চুপচাপ তনুর কথা মতন তনুর ডেস্কের উপর থেকে তিনটা ফাইল নিয়ে তনুর কেবিনের এক কোনায় বসে ফাইল গুলো রেডি করতে শুরু করে। তনু আকাশকে ফ্লোরের উপরে বসে কাজ করতে বলায় আকাশের বেশ অপমান লাগে, কিন্তু আকাশ তনুকে সেটা নিয়ে কিছুই বলে না। কারণ সে অপারগ। চাকরিটা তার জন্য খুব জরুরী। পারিবারিক অবস্থা আকাশের একদম ভালো নেই। সে এখন যদি তনুর কথা না শুনে তাহলে সেটা তার জন্য সমস্যাজনক হবে। চাই সে মুখ বুঁজে ফ্লোরের উপরে বসেই কাজ করতে আরম্ভ করে। কাজ করতে করতে দুপুর তিনটা পেরিয়ে গেছে। দুপুর দুইটার দিকে অফিসের লাঞ্চ টাইম। অনেকেই অফিসের বাহিরের কেন্টিন টাতে খেতে গিয়েছে। আবার অনেকেই বাসা থেকে দুপুরের নিয়ে আসা খাবার গুলো অফিসেই বসে খেয়েছে। এমনকি তনুও কেবিনে বসে তার দুপুরের লাঞ্চ করেছে। তবে আকাশ কিছুই খায়নি। সে না খেয়েই সব গুলো ফাইল রেডি করে সারে তিনটার দিকে তনুর কাছে দেয়। ফাইল গুলো রেডি করে আকাশ তনুকে দেওয়ার পর তনু এবার দশ মিনিটের জন্য আকাশকে ছুটি দেয় বাহির থেকে খেয়ে আসার জন্য। আকাশ কেবিন থেকে বেরিয়ে কেন্টিনের দিকে চলে যায় খাওয়ার জন্য। কেন্টিনে গিয়ে হালকা কিছু খাবার খেয়ে দশ মিনিটের আগেই সে ফিরে আসে৷ ফিরে আসার পর তনুর কেবিনে ঢুকতেই দেখে তনু ফোনের মধ্যে কার সাথে যেনো প্রেমের কীর্তন গাইছে। আকাশ পুরো হতভম্ব হয়ে গেছে তনু ফোনালাপ শুনে। কারণ আজ সকালেই কন্ট্রাক্ট পেপারের মাধ্যমে তনু তাকে বিয়ে করেছে। আবার অন্যদিকে এখন তনু কেবিনে বসে ফোনের সাহায্যে অন্য কোনো ছেলের সাথে প্রেমালাপ করছে….
চলবে….
#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)