অবেলায় তুমি পর্ব -১৭+১৮

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৭)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আসছে শুক্রবারে তনু সারাজীবনের জন্য আকাশের হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সকলের সামনে স্বীকৃত পাবে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি ভাবে বেখবর সোহান শুধরে যাওয়ার বদলে আরো বড় ধরনের কিছু প্ল্যান করছে। আকাশ খুশি মনে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আকাশের মা রহিমা বেগম ছেলের খুশমেজাজ দেখে ছেলেকে জিজ্ঞাস করে,

–‘আকাশ কি হয়েছে? অন্য দিনের তুলনায় আজ তোকে একটু খুশি খুশি দেখাচ্ছে। সাধারণত অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলে তোর চেহারায় ক্লান্তি থাকে। কিন্তু আজ আমি তোর চেহারায় কোনো প্রকার ক্লান্তি দেখতে পাচ্ছি না। কাহিনী কি আকাশ?’

–‘মা একটা সুসংবাদ আছে।’

–‘কি সুসংবাদ?’

–‘আগে আমি নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ ট্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আসি। আর তুমি চা বসাও চুলোয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে চা খেতে খেতে সুসংবাদ বা গুড নিউজটা দিব।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চুলোতে চা বসাচ্ছি। তুই জলদি করে ফ্রেশ হয়ে আয়।’

আকাশ নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ পর রুম থেকে বেরিয়ে মা’য়ের কাছে আসে। আকাশের মা রহিমা বেগম ছেলের জন্য চা করে এনে সবে কেবল টেবিলের উপর রেখেছে। আর আকাশ ও ইতিমধ্যে হাজির। ছেলের আগমনে রহিমা বেগম বলে,

–‘এই যেনতোর চা। আর এবার বল কি গুড নিউজ আছে।’

আকাশ টেবিলের উপর থেকে চায়ের কাপ উঠিয়ে নিয়ে দুইটা চেয়ার টেনে একটাতে নিজে বসে। আরেক টাতে নিজের মা’কে বসতে বলে। রহিমা বেগম চেয়ারে বসে পূনরায় ছেলেকে আবার বলে,

–‘এবার বল কি গুড নিউজ আছে।’

–‘মা আসছে বৃহস্পতিবার অফিসে ছোট খাটো একটা আয়োজন করে আমাদের বিয়ের বিষয়ে সবাইকে জানাবো। আর শুক্রবার আমাদের দুই পরিবারকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে আমরা সারাজীবনের জন্য আবারো বিয়ে করবো।’

–‘কিহহহ! সত্যি বলছিস তুই?’

–‘হ্যাঁ মা সত্যি বলছি। আজ তনুই আমাকে এসব বললো।’

–‘যাক খুশি হলাম কথাটা শুনে। কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে আমার।’

–‘কি প্রশ্ন মা?’

–‘তনুর তো টাকা পয়সার অভাব নেই। সে চাইলে একটা অনুষ্ঠান করে বিয়েটা করতে পারে। কিন্তু সে তা না করে কোর্ট ম্যারেজ কেন করবে? আর লোকে কি বলবে তার এই জিনিসটা নিয়ে?’

–‘মা তনুর নাকি ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। তাই সে কোর্ট ম্যারেজ করবে। আর লোকজন বলতে অফিসের লোকজন এই আছে। তাঁদের জন্য তো সে বৃহস্পতিবার একটা আয়োজন করছেই।’

–‘তাও বিষয়টা কেমন যেনো লাগছে আমার কাছে! কারণ তোর না হয় সেভাবে কোনো পরিচিত লোকজন নেই। কিন্তু তনুর তো অফিস ব্যতীত পরিচিত আরো লোকজন আছে। তারা পরবর্তীতে কি না কি বলবে। আর সে যেহেতু অফিসে অনুষ্ঠান করবেই, তাহলে সেই অনুষ্ঠানে অফিসের লোকজনের পাশাপশি তার পরিচিত লোকজন গুলোকে ইনভাইট করলে বিষয়টা আর জটিল হয় না। আর সে চাইলে কোর্টে বিয়ে না করে অফিসের অনুষ্ঠানের মধ্যেই কাজি ডেকে সবার সামনে তোকে বিয়ে করতে পারে। তাহলে একেবারেই সব হয়ে যায়। আলাদা করে বৃহস্পতিবারে অফিসে আয়োজন করবে। আবার শুক্রবারে কোর্ট ম্যারেজ করবে। এতো ঝামেলা করার তো আর দরকার পড়ে না।’

–‘মা তনুর ধুমধাম করে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই সেটা সে আমাকে জানিয়ে দিয়েছে। তাই হয়তো সে কোর্ট ম্যারেজ করবে। এছাড়া কেন সে শুধু অফিসের মানুষজনকে আয়োজন করে খাওয়াবে বাকি আরো মানুষজনকে রেখে, সেটা তনুই একমাত্র ভালো জানে! তবে আমার যতদূর মনে হয় তনু আমার কারণেই বাহিরের কাউকে দাওয়াত করবে না বা বাহিরের কারোর জন্য কোনো আয়োজন করবে না। কারণ আমার কোনো কিছু নেই এই জিনিসটা নিয়ে মানুষ এটা সেটা বলতে পারে, তাই হয়তো তনু এই বিষয়টা খেয়াল রেখে অফিসের লোকজন বাদে কারোর জন্য কোনো আয়োজন করছে না।’

–‘হ্যাঁ এমনটাও হতে পারে। তনু হয়তো তোর এই দিকটা খেয়াল করে নিজের মতন সব চিন্তা-ভাবনা করেছে। তবে যাই হোক আমি খুশি তুই আর তনুর মিলন হওয়ায়। কারণ মেয়েটাকে তুই কতোটা ভালোবাসিস সেটা আমার অজানা নয়। আমি শুকরিয়া আদায় করছি তোদের মিলন হওয়ায়।’

–‘মা দোয়া করো। আর আমি আগামীকাল গিয়ে খালার বাড়ি থেকে আফিয়াকে নিয়ে আসবো। তারপর তুমি আর আফিয়া দু’জনে শুক্রবারে রেডি হয়ে থাকবা কোর্টে ম্যারেজ করার জন্য আমার সাথে যেতে।’

–‘আচ্ছা বাবা।’

আকাশ চা খাওয়া শেষ করার পাশাপাশি মা’য়ের সাথে কথা বলে আবার নিজের রুমে চলে যায়। পরেরদিন যথারীতি অফিসে চলে যায়। ডেস্কে বসে বসে তনুর অপেক্ষা করছে সে। তনু এখনো অফিসে আসিনি। কিছুক্ষণ পর তনু অফিসে চলে আসে। তনু আসার পর আকাশ তনুর সঙ্গে তনুর কেবিনে গিয়ে তনুকে বলে,

–‘তনু আজ আমার ছুটি লাগবে। আমার একটা জায়গায় যেতে হবে।’

–‘কোথায় যাবে তুমি? আমি যে আজ আরো তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান করলাম।’

–‘দুপুরে পর ছোট বোন আফিয়াকে খালার বাড়ি থেকে আনতে যাবো। তাই ছুটির দরকার ছিল।’

–‘আরেহ ছুটি নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে আমি ভেবেছি আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তিনটা বা সাড়ে তিনটার নাগাদ অফিস ছুটির কিছু সময় আগে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো। কিন্তু তুমি তো আফিয়াকে আনতে গেলে আর অফিসে আসবে না। সোজা বাড়ি চলে যাবে। আচ্ছা একটা কাজ করলে হয় না? তুমি এখুনি চলে যাও আফিয়াকে খালার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য। দুপুরে না হয় অফিসে চলে এসো৷ তারপর রোদের উত্তাপ কমলে দু’জনে তিনটা সাড়ে তিনটা নাগাদ শপিং করতে যাবো।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তনুর কথা মতন দুপুরে না গিয়ে এখুনি খালার বাড়ি থেকে আফিয়াকে আনতে চলে যায় আকাশ।
খালার বাড়ি গিয়ে খালাকেও বিয়ের কথা জানায়৷ আকাশের খালা নাজিয়া বেগম আকাশের বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে আকাশের হাতে হাজার দশেক টাকা দিয়ে বলে,

–‘আকাশ এই টাকা গুলো নিজের বিয়ের প্রয়োজনে খরচ করিস৷ আমরা শুক্রবার বিকাল করে তোর বাড়ি যাবো। আর তোরা যেহেতু কোর্ট ম্যারেজ করবি, তাহলে আমাদের আগে গিয়ে কোনো কাজ নেই। ধীরেসুস্থে বিকাল করে সপরিবারে তোর বউকে দেখতে যাবো।’

–‘ঠিক আছে খালা। তবে খালা একটা আবদার ছিল।’

–‘কি আবদার আকাশ?’

–‘খালা আমি তো তনুকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। আর আমারো কিছু দায়দায়িত্ব আছে তনুর উপর। কিন্তু আমার হাতে তোমার দেওয়া হাজার দশেক টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা নেই। আর আজকে তনু আমাকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে চাচ্ছে। আমার মনে হয় না শপিংয়ে গেলে অল্প টাকায় হবে। হ্যাঁ আমি জানি তনু নিজেই খরচ করবে টাকা পয়সা। কিন্তু তার পরেও আমারো তো কিছু কর্তব্য তার জন্য খরচ করা। খালা তোমার কাছে কি আর হাজার দশেক টাকা হবে? আমি মাসের শেষে বেতন পেলেই টাকাটা তোমায় দিয়ে দিব।’

–‘না রে বাবা আমার কাছে তো আর কোনো টাকা নেই রে। যা ছিল সব তোকে একমুঠ করে দিয়ে দিয়েছি। আর তুই তো জানিস তোর আঙ্কেল ঘরে বসা। কামাই রোজকার করতে পারে না। যা করি আমি নিজেই করি। তবে তুই চাইলে একটা কাজ করতে পারিস। আমার এক জোড়া স্বর্ণের দুল আছে, যেটা বর্তমানে আমার কোনো কাজে লাগছে না। তুই সেটা দোকানে দিলে হাজার দশেক টাকা নিতে পারবি। তুই সেটা দোকানে জমা দিয়ে হাজার দশেক টাকা নে। তারপর মাস শেষে বেতন পেলে না হয় সেটা তুই দোকান থেকে ফিরিয়ে এনে দিস পরে আমাকে।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে খালার কানের দুল জোড়া নিতে সম্মতি জানায় আকাশ। আকাশের খালার অবস্থাও বেশি একটা ভালো না। একটা সময় সব কিছু মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু আকাশের আঙ্কেল অসুস্থতার কারণে কাজকাম করতে না পাড়ায় সংসারে অভাব লেগেছে তাঁদের। সবার একই দশা। আকাশের খালা আর তার নিজের পরিবারের কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। সবার জীবনেই টানা পোড়া লেগেছে। অবশ্য আকাশের মা রহিমা বেগমের ভাগ্য কিছুটা ভালো ছিল। তাই তিনার আকাশের বাবার সাথে বিয়ে হয়েছে। আর বিয়েটা আকাশের বাবা নিজেই আকাশের মা রহিমা বেগমকে করেছে। আকাশের বাবা সেলিম সাহেব একদিন রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যাওয়ার সময় আকাশের মা রহিমা বেগমকে দেখে তিনার প্রেমে পড়ে যায়। সেই এক দেখাতেই সেলিম সাহেব প্রেমে পড়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আকাশের মা রহিমা বেগমকে নিজের ঘরের বউ বানিয়ে নেয়। সংসার জীবন সুন্দর চলছিল দু’জনের। কিন্তু কপালের দূর্গতি থাকলে সেটাকে আর কে খন্ডন করতে পারে। যাক গে প্রসঙ্গটা এখানেই সমাপ্তি করি। নাজিয়া বেগম কিছু সময়ের মধ্যেই আলমারি থেকে কানের দুল জোড়া এনে আকাশের কাছে দেয়। আকাশ কানের দুল জোড়া নাজিয়া বেগমের থেকে নিয়ে সাবধানে পকেটে রাখে। এরপর আফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে খালার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে পড়ে। দুপুরের আজানের কিছু সময় পর আকাশ আফিয়াকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছায়। বাড়িতে পৌঁছে আফিয়াকে রেখে সময় নষ্ট না করে আবারো সে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর অফিসে যাওয়ার আগে খালার থেকে আনা স্বর্ণের দুল জোড়া একটা স্বর্ণকারের দোকানে দিয়ে দশ হাজার টাকা এবং রিসিট নিয়ে অফিসে রওয়ানা হয়। দুইটার কিছু সময় পর আকাশ অফিসে এসে পৌঁছায়। তনু না খেয়ে বসে আছে। আকাশ অফিসে পৌঁছাতেই তনু আকাশকে জিজ্ঞাস করে,

–‘নিয়ে এসেছো তোমার বোনকে?’

–‘হুম নিয়ে এসেছি।’

–‘খাবার খেয়েছো?’

–‘না খাইনি। তুমি খেয়েছো?’

–‘না আমিও খাইনি। এতো সময় তুমি আসার অপেক্ষায় বসে ছিলাম।’

–‘ওহহ।’

–‘আচ্ছা যাও এবার ওয়াশরুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এসো। আমি ফোন করে খাবারের দু’টো পার্সেল আনতে বলছি। তারপর দু’জনে মিলে একসাথে খেয়ে নিব।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

আকাশ কেবিনের ভিতরে তনুর পার্সোনাল ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আর তনু ফোন করে দু’জনের জন্য দু’টো খাবারের পার্সেল অর্ডার করে। কিছু সময় পর আকাশ ফ্রেশ হয়ে আসে। আর তার অল্প পরেই কেন্টিন থেকে খাবারের পার্সেল চলে আসে। দু’জনে মিলে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। এরপর সাড়ে তিনটা নাগাদ দু’জনে মিলে বিয়ের শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে পড়ে….
#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৮)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

আকাশ আর তনু সাড়ে তিনটা নাগাদ দু’জনে মিলে বিয়ের শপিংয়ের জন্য বেরিয়ে পড়ে। তনুর গাড়ি করেই দু’জনে শপিংয়ের জন্য যাচ্ছে। আকাশ তনুর পাশের সিটে বসে আছে। আর তনু গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ কিছুক্ষণ পর তনু একটা নামি-দামি শপিংমলের সামনে গিয়ে গাড়ি থামায়। আকাশের ভিতরে খচমচ করছে শপিংমল দেখা মাত্রই। কারণ শপিং নিয়ে আকাশের ও কিছু পরিকল্পনা আছে। যদি কোনো কারণ বশত জিনিসপত্রের দাম বেশি হয়, তাহলে আকাশ কুলিয়ে উঠতে পারবে না। এছাড়া সচারাচর শপিংমল গুলোতে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশিই হয়। ভয় হচ্ছে আকাশের। তবে সেটা তনুর সামনে প্রকাশ না করে তনুর সাথে শপিংমলের ভিতরে চলে যায়। তনু আকাশের হাত ধরে আকাশকে শপিংমলের ভিতরে নিয়ে যায়। আকাশ ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড নার্ভাস। তবে তনুকে সেটা কোনো ভাবেই বুঝতে দিচ্ছে না সে। তনু শপিংমলে ঢোকার পর একটা দোকানে গিয়ে আকাশের জন্য বেশ নামি-দামি ব্রান্ডের একটা খয়েরী রঙের শার্ট পছন্দ করে। আকাশ কিছুই বলছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে৷ তনু শার্টটা নিয়ে আকাশের শরীরের সাথে মাপ দিয়ে আকাশকে বলে,

–‘সাইজ তো একদম ঠিক ঠাক লাগছে। তবুও আকাশ তুমি একটু ট্রায়াল রুমে গিয়ে শার্ট টা গায়ে দিয়ে দেখে আসো তো সব কিছু বরাবর আছে কিনা।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ শার্টটা নিয়ে ট্রায়াল রুমে চলে যায় শার্টের ট্রায়াল দিতে। কিছুক্ষণ পর ট্রায়াল রুম থেকে ফিরে এসে তনুকে বলে,

–‘হ্যাঁ তনু সব ঠিক ঠাক আছে।’

–‘যাক তাহলে আমার মেজারমেন্ট একদম ঠিক ঠাক ছিল। আচ্ছা এবার তুমি নিজে আরো কিছু শার্ট আর প্যান্ট পছন্দ করো।’

–‘কেনো এতো গুলো শার্ট আর প্যান্ট দিয়ে কি করবো? আমি আর একটা প্যান্ট নিলেই আমার হয়ে যাবে।’

–‘এই যে কথা কম বলে আমি যেটা বলি সেটা শুনো। কারণ আগামীতে জামাকাপড় গুলো লাগবে। এক সুট জামাকাপড় দিয়ে আর কয়দিন চলবে। যাও গিয়ে আরো কয়েকটা শার্ট দেখো। সেই সঙ্গে প্যান্ট ও।’

–‘আচ্ছা।’

বেচারা আকাশ আর কোনো কথা বলে না। তনুর কথা মতন বাধ্য হয়ে আরো দুইটা শার্ট আর দুইটা প্যান্ট পছন্দ করে নেয়। আকাশ বাকি জিনিস গুলো পছন্দ করতে করতে তনু আকাশের জন্য পছন্দ করে একটা পাঞ্জাবি কিনে ফেলে। আকাশের কেনাকাটা কমপ্লিট। এবার তনুর কেনার পালা। তনু আর আকাশ যেই দোকানে কেনা কাটার জন্য ঢুকেছে তাঁদের দু’টো দোকান। একটা লেডিস আরেক জেন্টস। দু’টো দোকান এই সামনা-সামনি। এক দোকান থেকে আরেক দোকানের সব কিছু দেখা যায়। তনু দোকানদারকে আকাশের জিনিসপত্র গুলো প্যাকিং করতে বলে আকাশকে নিয়ে সামনের দোকান টাতে চলে যায় নিজের জন্য কেনাকাটা করতে। সামনের দোকানে গিয়ে বহু ঘাটাঘাটি করে তনু নিজের জন্য শুধু একটা ড্রেস পছন্দ করে। দোকানদার ড্রেসটা তনুকে প্যাক করে দেয়। আর সঙ্গে একটা রিসিট দিয়ে বলে,

–‘ম্যাডাম বড় ভাইয়ার দোকান থেকে কিছু কেনা কাটা করেছেন দেখলাম। আপনি এই ড্রেসটার টাকা এক সাথে বড় ভাইয়ার কাছেই দিয়ে দিয়েন।’

–‘জ্বি ঠিক আছে। এই আকাশ চলো।’

তনু শুধু একটা ড্রেস কেনায় আকাশের জিনিসটা ভালো লাগে না। তনুকে আপত্তি জানিয়ে বলে,

–‘এই তনু এটা কি হলো? তুমি আমাকে এক গাদা কিনে দিয়ে নিজের জন্য শুধু একটা ড্রেস কিনলে মাত্র?’

–‘আরে সমস্যা নেই। আমার বাসায় অনেক জামাকাপড় রয়েছে নতুন নতুন। তাই একটা ড্রেস কিনেছি।’

–‘না এটা তো হতে পারে না। এই যে দোকানদার ভাইয়া আপনি ঐ শাড়িটা দেখান তো।’

–‘আরে আকাশ লাগবে না।’

–‘একদম চুপ থাকো। আমার বেশ পছন্দ হয়েছে ঐ শাড়িটা। আমি কিছুক্ষণ ধরেই ভাবছিলাম শাড়িটা তোমাকে নিতে বলবো। দোকানদার ভাইয়া আপনি শাড়িটা দেখান।’

–‘জ্বি ভাইয়া দেখাচ্ছি।’

দোকানদার আকাশের কথা মতন শাড়িটা নামিয়ে দেখায়। আকাশ শাড়িটা নিয়ে তনুর গায়ে কেমন মানাবে সেটা চেক করে। শাড়িটা বেশ মানিয়েছে তনুকে। আকাশ কোনো কিছু না ভেবে শাড়িটা নিয়ে নেয়। বাজেটের কথা আপাতত আকাশ মাথা থেকে সরিয়ে ফেলে৷ আগের নেওয়ার আছে নিয়েছে। পরে যা হবে সেটা না হয় পরেই দেখা যাবে। আকাশের পছন্দ করা শাড়িটা দোকানদার আলাদা ভাবে প্যাক করে দিয়ে আবারো একটা রিসিট দেয়। শাড়ি আর জামাটা নিয়ে তনু আর আকাশ আগের দোকানে চলে আসে। আগের দোকানদার সমস্ত কাপড়-চোপড়ের হিসাব করে তনু আর আকাশকে জানায় ইনটোটাল সব মিলে বাইশ হাজার তিনশ টাকা এসেছে। দোকানদারের কথা শুনে আকাশের চোখ মুখ কালো হয়ে যায়। কারণ তার বাজেট ছিল বিশ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কিছু না ভেবেই দোকানদারকে বলে,

–‘ভাইয়া আমার এতো গুলো শার্ট প্যান্টের দরকার নেই। বাসায় এমনিতেও আমার কয়েক জোড়া নতুন শার্ট আর প্যান্ট রয়েছে। আমার সেগুলাই এখনো পড়া হয়নি। আপনি আমার একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট কমিয়ে রাখুন। তারপর দেখুন কতো আসছে বিল।’

–‘আরে ভাইয়া পছন্দ করে যেহেতু নিয়েছেন কমিয়ে না রাখাটাই ভালো। আর আমি ডিসকাউন্ট ছাড়া আপনাকে বলেছি। তবে ডিসকাউন্ট সহ আপনার বিল হচ্ছে উনিশ হাজার পাঁচশ টাকা।’

আকাশের মন খুশি হয়ে যায় দোকানাদের কথা শুনে। চোখে-মুখে খুশি নিয়ে দোকানদারকে বলে,

–‘ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে সব গুলোই দিন।’

দোকানদার আকাশের কথা মতন সব গুলো জিনিস আকাশদেরকে দিয়ে সব কিছুর একটা ক্যাশ মেমো দেয়। আকাশ ক্যাশ মেমো আর সব কিছু বুঝে নিয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার মধ্যে থাকা বিশ হাজার টাকা বের করে এগিয়ে দেয়। তনু পুরো আশ্চর্য হয়ে যায় আকাশের আচরণে। শপিংয়ের টাকা আকাশ দিচ্ছে সেটা তনু বিশ্বাস এই করতে পারছে না। সব কিছু কেমন যেনো লাগছে তনুর। আকাশ দেকানদারকে টাকাটা দেওয়ার আগেই তনু আকাশকে থামিয়ে দিয়ে আশ্চর্য হয়ে বলে,

–‘এই তুমি এটা কি করছো? আর এতো টাকা কোথায় পেয়েছো তুমি?’

–‘আরেহ কিছুই না। প্রিয় মানুষের জন্য নিজের সাধ্য মতন কিছু করার চেষ্টা করছি। আর টাকাটা কোথায় পেয়েছি সেটা না হয় পরে এক সময় বলবো। এখন আগে বিলটা দিয়ে নেই।

–‘না তুমি বিল দিবে না। টাকাটা তুমহ নিজের কাছে রাখো। আমি বিল দিচ্ছি।’

–‘তনু এভাবে আমাকে আঁটকেও না। আমারো কিছু দায়দায়িত্ব আছে। যেই মানুষ টাকে আমি ভালোবাসি, তার জন্য অল্প সংখ্যক টাকা খরচ করতে না পারলে কি ভাবে কি। তুমি পরে কখনো দিও। এবার টাকাটা আমি দিচ্ছি।’

আকাশের জোড়াজুড়ির কাছে তনু হার মানে। আকাশ সমস্ত বিল পরিশোধ করে তনুকে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। তনুও কম নয়। দোকানটা থেকে বের হওয়ার পর আকাশকে একটা জুতার দোকানে নিয়ে গিয়ে ভালো মানের এক জোড়া জুতা কিনে দেয়। আর জুতার টাকাটা তনু নিজেই দেয়। অবশ্য আকাশ এখানে কোনো জোড়াজুড়ি করে না। কারণ আকাশের পকেটে আর বেশি টাকা নেই। সে চাইলেও জোড়াজুড়ি করে বিল দিতে পারবে না। সেজন্য নিরব হয়েই থাকে। জুতা কেনার পর তনু আকাশকে নিয়ে শপিংমলের ভিতরে থাকা একটু রেস্টুরেন্টে যায়। এরপর দু’জনে কিছু খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি ফিরে আসে। দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবার চলে আসে। বৃহস্পতিবার দিন সকাল বেলায় আকাশ তনুর পছন্দ করে দেওয়া খয়েরী রঙের শার্ট আর প্যান্ট পড়ে ভালো ভাবে রেডি হয়ে নেয় অফিসে যাওয়ার জন্য। আজ সকল মানুষ জানতে পাবে তনু আকাশের স্ত্রীর। খুশিতে আত্মহারা আকাশ। রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে তনুকে ফোন করে আকাশ। তনুও রেডি হচ্ছিল। আকাশের ফোন পেয়ে রেডি হওয়া থামিয়ে ফোন রিসিভ করে। তনু ফোন রিসিভ করার পর আকাশ তনুকে বলে,

–‘তনু আমার পছন্দ করে কিনে দেওয়া শাড়িটা পড়ে এসো কিন্তু।’

–‘আরে আমি ওটাই পড়ছিলাম।’

–‘হুম ঠিক আছে তাহলে। আর শুনো জলদি চলে এসো। আমি কিছু সময়ের মধ্যেই রওয়ানা হচ্ছি।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে। এবার ফোন রাখলাম। আমিও রেডি হয়ে জলদি চলে আসবো।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ ফোন রেখে দিয়ে প্রথমে মা’য়ের কাছে গিয়ে মা’য়ের পা ধরে সালাম করে। এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে অফিসে চলে যায়। অফিসে বেশ জোরদার আয়োজন চলছে। অফিসের ছাদে রান্নাবান্না হচ্ছে। নিচে সবাই ডেকোরেশন করছে। তবে কেউ জানে না আয়োজন টা কি উপলক্ষে। তনু সবার জন্য বিষয়টা সারপ্রাইজ রেখেছে। আজ দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তনু সবাইকে সারপ্রাইজটা দিবে। আই মিন আয়োজনের উদ্দেশ্যটা বলবে। আর সেই সঙ্গে আকাশকেও নতুন ভাবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। তবে ম্যানেজার খালেক সাহেব কিছুটা আন্দাজ করতে পারে কি কারণে এই আয়োজন৷ কিন্তু ম্যানেজার এবারো বিষয়টা কারোর সাথে শেয়ার করে না। কারণ দুপুরের পর তো সবাই এমনিতেই আয়োজনের আসল উদ্দেশ্যটা জানতে পারবে। তাই চুপচাপ সবার সাথে মিলে কাজকর্ম করতে থাকে। অফিসটা সুন্দর ভাবে ডেকোরেশন করছে সবাই মিলে। আকাশ অফিসে পৌঁছানোর পর সে নিজেও সবার সাথে কাজে যোগদান করে। তবে ম্যানেজার আকাশকে বারণ করে না করার জন্য। আর বলে সবটা উনারাই সামলে নিবে। আকাশ বুঝে যায় ম্যানেজার কেন বারণ করেছে। মুখের কোণে হাসি টেনে বলে,

–‘খালেক সাহেব সমস্যা নেই। কাজ করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আর তাছাড়া আমি কাজ করলে কোনো জাত পাত নষ্ট হবে না।’

ম্যানেজার খালেক সাহেব আকাশকে আর কিছু বলে না। আকাশ সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর তনু সেজেগুজে আকাশের পছন্দ করা শাড়িটা পড়ে অফিসে আসে। সবাই তনুকে দেখে অবাক। কারণ এই প্রথমবার তনু শাড়ি পড়ে অফিসে এসেছে। সবার মনে একই প্রশ্ন জাগে তনু শাড়ি পড়ায়।
কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারণ যতোই হোক তনু সবার বস। আর তারা তাঁদের কর্মচারী। তাই সবাই চুপচাপ করে থাকে। তনু অফিসে এসে নিজের কেবিনে চলে যায়। দেখতে দেখতে একটার আজান হয়। বাবুর্চিদের রান্নার কাজ শেষ। তনুও কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। খাওয়া-দাওয়ার পালা শুরু হয়। এমন সময় সোহান অফিসে আসে। সোহানকে দেখা মাত্রই আকাশের রাগ উঠে যায়। আকাশ তনুর কাছে গিয়ে বলে,

–‘ঐ বদ’মাইশ টা এখানে কি করছে?’

–‘আকাশ আমিই ওকে দাওয়াত করেছি।’

–‘মানে কি! সে এতোকিছু করলো। আর তুমিই তাঁকে দাওয়াত করেছো ঘটনাটা বুঝলাম না!’

–‘আকাশ চাপ নিও না। আমি ওকে দাওয়াত করেছি শুধুমাত্র দেখানোর জন্য। আমি আজকে সকলের সামনে তোমাকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় দিব। আর সোহান সেটা দেখে দেখে জ্বলবে।’

–‘তনু এমনটা করা কি বেশি প্রয়োজন ছিল?’

–‘হুম ছিল। কারণ সে শয়তানি করতে চেয়েছিল তোমার আর আমার সাথে। তাই তাকে ইনভাইট করেছি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। যাতে করে আমাদের সমস্ত কিছু দেখে তার ভিতরে হিংসায় জ্বলতে থাকে।’

–‘যাক যা ইচ্ছে করেছো। তবে দেখো কোনো ঝামেলা যেনো সে না করে।’

–‘আরেহ আজকে আর কোনো ঝামেলা করতে পারবে না। কারণ অফিসের এতোগুলো কর্মচারী রয়েছে। তার উপরে তুমি তো রয়েছোই। আশা করি তার আর সাহস হবে না কিছু করার।’

আকাশ আর কিছু বলে না। তবে মনে মনে সোহানকে নিয়ে সে একটু দোটানায় ভুগছে। কারণ শয়তান বলতেই সুযোগ পেলে সে মানুষের ঘাড়ে চে’পে বসবে। কখন কোন দিকে কি করে তার কোনো ঠিক নেই।একদিকে সোহানকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। অপরদিকে আর কিছুক্ষণ পর সবার সামনে তনু তাঁকে নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিবে সেই খুশি। সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়। তনু সকলের খাওয়া-দাওয়া শেষ হওয়ার পর আজকের আয়োজনের উদ্দেশ্য কি সেটা বলার জন্য সবাইকে একসঙ্গে করে বলে,

–‘কি কারণে আজকের এই আয়োজন সেটা একটু পরেই বলছি। আগে ছোট্ট একটা কাজ সেরে নেই।

তনু সবাইকে অপেক্ষায় রেখে আকাশের কাছে যায়। আকাশ এক সাইডে করে তনুর থেকে দুই-তিন হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। তনু আকাশের কাছে গিয়ে হুট করে তার পছন্দ করে দেওয়া আকাশের শার্টের কলারে সে নিজেই খপ করে চে’পে ধরে। এরপর আকাশের শার্ট ধরে তাঁকে সবার সামনে টেনে এনে লাগাতার কোষে কয়েকটা থা’প্পড় মা’রে। আকাশ তনুর আচরণে পুরো আশ্চর্য হয়ে যায়। হুট করেই পরিস্থিতির এমন পরিবর্তন দেখে আকাশ হতভম্ব হয়ে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে…..

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।)
চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here