অবেলায় তুমি পর্ব -১৫+১৬

#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৫)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

সোহান ফোন থেকে তনুর একটা ছবি বের করে নিজের মা’কে দেখিয়ে বলে একেই সে বিয়ে করবে। সোহানের মা রোকেয়া বেগম ছেলের কথায় বেশ খুশি হয়। তবে সোহানের দেখানো ছবিটা দেখে রোকেয়া বেগম নিজের ছেলেকে বলে,

–‘এটা তো তোর বান্ধবী তনু। তুই তাকে কেন বিয়ে করতে চাইছিস?’

–‘হ্যাঁ মা সে আমার বান্ধবী তনু৷ আর কেন আমি তাকে বিয়ে করতে চাইছি সেটা অজানাই থাক।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে সেটা না হয় অজানাই থাকলো। কিন্তু সে কি তোকে বিয়ে করবে?’

–‘সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে তুমি ওর মা’য়ের সাথে কথা বলো।’

–‘ঠিক আছে আমি আগামী কালকেই তনুর মা’য়ের সাথে কথা বলবো ওর বাসায় গিয়ে। দেখি কতদূর কি হয়। এবার তুই খেয়ে নে।’

–‘আচ্ছা।’

সোহানের মা রোকেয়া বেগম পরেরদিন তনুর বাসায় যায় বিয়ের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলতে। তনু বাসায় নেই। সে সকালে উঠে নাশতা করে অফিসে চলে গিয়েছে। তনুর মা বাসায় একা। আর একজন কাজের মহিলা আছে তনুর মা’য়ের রান্নাবান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য। রোকেয়া বেগম তনুর বাসায় যাওয়ায় তনুর মা কাজের মেয়েকে রান্না সামলাতে বলে রোকেয়া বেগমের সাথে কথা বলার জন্য গেস্ট রুমে আসে৷ রোকেয়া বেগমকে তনুর মা আগ থেকেই চেনের তনুর মাধ্যমে। দু’জনে একসাথে বসে প্রথমে কুশল বিনিময় করে। পরবর্তীতে রোকেয়া বেগম তনুর মা’কে বলে,

–‘আপা আসলে আমি আপনার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি।’

–‘হ্যাঁ আপা বলেন কি আবদার।’

–‘আপা আমার ছেলে সোহানকে বিয়ের জন্য বহু আগ থেকে বলে আসছি, কিন্তু সে রাজি না। তবে শেষমেষ গতকাল সে রাজি হয়েছে। কিন্তু সে তনুকে বিয়ে করতে চায়।’

–‘যাক শেষমেষ রাজি হয়েছে এতে শুকরিয়া। তবে সোহান আর তনু তো ভালো বন্ধু। কিন্তু সোহান হুট করে তনুকে কেন বিয়ে করতে চাইছে?’

–‘আপা সেটা আমি নিজেও জানি না! সোহান গতকাল বিয়ের জন্য রাজি হওয়ার পর তনুর ছবি দেখিয়ে বললো তাকে বিয়ে করবে। তাই আপনার কাছে আবদার নিয়ে এসেছি। আপা আপনি যদি আপনার মেয়ে টাকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতেন, তাহলে অনেক বেশি খুশি হতাম।’

–‘সোহান কেন তনুকে বিয়ে করতে চাইছে সেটা সে ভালো জানে। তবে আমার এতে কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ মেয়ের হাত চাইতে যে কেউ বাসায় আসতে পারে। কিন্তু আপা আপনার কথাটা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।’

–‘কেন সম্ভব নয় আপা? আমার ছেলে কি তনুর যোগ্য না? বা আমার ছেলেকে কি আপনার মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ হয় না?’

–‘না আপা আসলে এমনটা নয়।’

–‘তাহলে সমস্যাটা কোথায় আপা?’

–‘আসলে আপা তনুর তো বিয়ে হয়ে গেছে।’

–‘কিহহ! তনুর বিয়ে হয়ে গেছে মানে? কই আমরা তো কিছুই শুনলাম না। কখন বিয়ে হলো তনুর? আর কি ভাবে হলো?’

–‘আপনি শুনেন নি সেটা তো বহু পরে আসছে। বিয়ের বিষয় নিয়ে তো আমি নিজেও আগে জানতাম না!’

–‘তাহলে কি ভাবে কি হয়েছে?’

–‘তনু নিজেই আমার স্বামীর বিজনেস পার্টনারের ছেলে আকাশকে কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে।’

–‘বলেন কি!’

–‘হ্যাঁ এটাই সত্য। তনু আকাশকে বিয়ে করার পর এসে আমাকে তাদের বিষয়ে জানিয়েছে। দুঃখিত আপা আপনার আবদারটা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না।’

–‘আরেহ আপা দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার মেয়ে যেহেতু বিয়ে করেই নিয়েছে, তাহলে এতে আপনি আর আমার আবদার রাখবেন কি করে।’

–‘হুম।’

–‘আচ্ছা আপা তাহলে আর কি করার। আমি তাহলে এবার চলি।’

–‘আরেহ কোথায় যাচ্ছেন চা খেয়ে যান।’

–‘আপা আজকে নয় অন্য আরেকদিন খাবো। আমি বাসায় কাজ ফেলে তাড়াহুড়ো করে এসেছি।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে।’

রোকেয়া বেগম তনুর বাসা থেকে ফিরে এসে সোহানকে ফোন করে সমস্ত কিছু জানায়। সোহান ও বাসায় নেই। নিজের বাবার অফিস দেখাশোনা করে সে। রোকেয়া বেগমের মুখে সমস্ত কিছু শুনে সোহানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। কারণ প্রথমত তনুর মা না করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত তনু যে আকাশকে বিয়ে করেছে, সেই বিষয়ে সোহান কিছুই জানে না। রাগে পিত্তি ফেটে যাচ্ছে সোহানের। প্রতিশোধ নেওয়ার তাড়নাটা আরো বেড়ে গিয়েছে সোহানের। কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার মতন সমস্ত রাস্তাই বন্ধ। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে অফিসে বসেই সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়ে টানতে থাকে সোহান। অপরদিকে তনু একটা ফাইল নিয়ে আঁটকে গেছে। পরিপূর্ণ এক্সপেরিয়েন্স থাকা সত্বেও তনুর দক্ষতা আজকে কাজে দিচ্ছে না। গুলিয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কাজ করতে গিয়ে একের পর এক গন্ডগোল করছে ফাইলটার মধ্যে। খুব দরকারি ফাইল। কি ভাবে ফাইলটা কমপ্লিট করবে তনুর মাথায় কাজ করছে না। এমতাবস্থায় আকাশের কথা মাথায় আসে তনুর। সাহায্যের জন্য কেবিন থেকে বেরিয়ে আকাশের কাছে গিয়ে বলে,

–‘আকাশ একটা সমস্যায় পড়েছি।’

–‘কি সমস্যা তনু?’

–‘খুব দরকারি একটা ফাইল নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু সেটা কেন জানি আমার দ্বারা কমপ্লিট হচ্ছে না! যতোই চেষ্টা করছি ততোই আরো ঝামেলা পাকছে। তুমি কি একটু পারবে ফাইলটা ঠিকঠাক ভাবে কমপ্লিট করতে?’

–‘হুম পারবো। আর না পাড়ার কি আছে। আমার হয়তো বর্তমানে অফিস-আদালত নেই। কিন্তু কাজ আমি ভুলিনি। হাত ঠিক আগের মতোই চলে। তবে একটা কথা। তোমার অফিসে তো দক্ষ অনেক কর্মচারী আছে। তুমি চাইলে তো তাদেরকে দিয়েও করাতে পারো।’

–‘হ্যাঁ অফিসে দক্ষ অনেক কর্মচারী ঠিকই আছে। তবে সবাইকে দিয়ে সব কাজ করানো যায় না। তাই নিজেই বসেছিলাম ফাইলটা নিয়ে। কিন্তু সম্পূর্ণ করতে না পাড়ায় তোমার কাছে এসেছি।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি। তুমি আমাকে ফাইলটা এনে দাও।’

–‘এখানে নয় তুমি নিজেই আমার কেবিনে চলো। কেবিনে গিয়ে বসে বসে শান্ত মাথায় কাজ করবে।’

–‘আচ্ছা।’

আকাশ তনুর কেবিনে গিয়ে ফাইলটা নিয়ে কাজ করতে শুরু করে। ফাইলটা হচ্ছে অফিসে এযাবৎ কালে যে কয়টা ডিল হয়েছে বা যে কয়টা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে সেসবের হিস্ট্রি নিয়ে। আকাশ ফাইল টাতে হাত দেওয়া মাত্রই বুঝে ফেলে তনু কেন অন্য কোনো কর্মচারী দিয়ে এই কাজটা করায়নি। আসলে তনু অন্য কাউকে দিয়ে এই কাজটা করালে তারা অফিসের অনেক তথ্য সম্পর্কে জেনে যাবে। তাই তনু কাজটা আকাশকে করতে দিয়েছে। তনু হয়তো আকাশকে অনেক বেশি বিশ্বাস করে। আকাশ কাজ করতে শুরু করে। তনুর নিজের চেয়ার রেখে আকাশের পাশের চেয়ারে চুপ করে বসে আকাশের কাজ দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আকাশের পাশ উঠে তনু আকাশকে বলে,

–‘আকাশ তুমি কাজ করো। আমি একটু কেবিন থেকে হেঁট হুঁটে আসি। আর সঙ্গে দেখেও আসি কে কিভাবে কাজ করছে।’

–‘আচ্ছা।’

–‘আর হ্যাঁ ফাইলটা দুপুরের আগে কমপ্লিট করে ফেলো। কারণ আজ দুপুরে দু’জন মিলে বাহিরে খাবার খাবো এবং সেই সঙ্গে দু’জনে মিলে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করবো। অনেক কয়দিন হয়ে গেছে দু’জনে পার্সোনাল সময় কাটাই না।’

–‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

তনু আকাশকে কাজ করতে দিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে যায়। আর আকাশ খুশি মনে কাজ করতে থাকে। তনু কেবিনের বাহিরে গিয়ে অফিসের ভিতরেই হাঁটাহাটি করার পাশাপাশি কর্মচারী কে কিভাবে কাজ করছে সেটা দেখছে। কিছু সময় পর তনুর কাছে সোহানের ফোন আসে। কিন্তু তনু ফোন রিসিভ করে না। সোহান তনুকে লাগাতার ফোন দিতেই থাকে। তনু এক পর্যায়ে গিয়ে অফিসের এক সাইডে গিয়ে সোহানের ফোন রিসিভ করে। সোহান তো রেগেমেগে আগুন। উত্তেজিত কন্ঠে তনুকে বলে,

–‘কি হলো এতো সময় ধরে ফোন রিসিভ করছিলি না কেন?’

–‘কাজ করছিলাম তাই ফোন দেখতে পাইনি। আচ্ছা বল কি হয়েছে?’

–‘তনু তোর আর আকাশের নাকি বিয়ে হয়েছে এটা কি সত্যি?’

–‘সত্যি মিথ্যা পরে আসছে, কিন্তু তুই এটা বল যে আমার আর আকাশের বিষয়ে তুই জানলি কি করে?’

–‘তনু সত্যি বেশিদিন লুকিয়ে থাকে না। এক সময় না এক সময় সত্যিটা মানুষের সামনে চলেই আসে। আর আমি সত্যিটা জেনেছি তোর মা’য়ের মাধ্যমে। কিন্তু এবার বল যে তুই আমাকে এই বিষয়ে কেন জানস নি?’

–‘সোহান কেন জানাইনি সেটা আমার মধ্যেই থাক।’

–‘না আমাকে কারণ বলতে হবে তোর।’

–‘সোহান আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে আপাতত ইন্টারেস্টেড না। আমি ফোন রাখলাম। আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।’

তনু ঠুস করে ফোন কেটে দেয়। সোহানে রাগ চুড়ায় পৌঁছে যায় তনু ফোন কেটে দেওয়ায়। হাতে থাকা ফোনটা সজোড়ে দেয়ালে ছুঁ’ড়ে মে’রে ফোনের নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলে। রাগ চরম সীমায় পৌঁছে গেছে সোহানের। রাগে ফসফস করতে থাকে সে। অপরদিকে তনু ফোন কেটে দিয়ে কর্মচারীদের কাজ দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে দুপুর হয়। তনু কেবিনে চলে যায়। আকাশের কাজ ও শেষ। নিখুঁত ভাবে ফাইলটা কমপ্লিট করেছে আকাশ। তনু খুশি হয়ে আকাশের কপালে একটা চুমু একে দেয়। পরবর্তীতে ফাইলটা সামলে রেখে আকাশকে সঙ্গে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে। গাড়ি ড্রাইভ করে প্রথমে দু’জনে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ভরা দুপুরে কঠোর রোদের মধ্যে দু’জনে একটা পার্কে যায়। পার্ক পুরো খালি। আর এই দুপুর বেলায় কে বা পার্কে ঘুরতে আসে। আকাশ আর তনু ছাড়া পার্কে আর তেমন কেউ নেই। পার্কের একপাশে ছায়ার মধ্যে দুজনে একটা বেঞ্চের উপরে বসে। তনু বেঞ্চে বসে আকাশের কাঁধে মাথা রেখে পিছন থেকে হাত দিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধরে৷ আকাশের ভিতরে খুশির জোয়ার বইছে তনু আকাশের কাঁধে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরায়। আকাশ মুহুর্ত টাকে উপভোগ করতে থাকে। সে সঙ্গে সারাজীবন তনুর সাথে এভাবে হাসিখুশি থাকার পরিকল্পনা করতে থাকে। এমন সময় হুট করেই আকাশের মনে একটা প্রশ্ন জাগে। তনু তার সাথে আজীবন এভাবে থাকবে তো। কারণ তনু তো তাকে শুধু তিন বছরের জন্য বিয়ে করেছে৷ এই বিয়েটা শুধু তিন বছরের জন্য কথাটা মনে পড়তেই চেহারায় মলিন হয়ে যায় আকাশের। চোখ মুখ কালো করে তনুকে প্রশ্ন করে,

–‘আচ্ছা তনু তুমি কি আমায় তিন বছর পর ছেড়ে চলে যাবে?’

–‘আজব! ছেড়ে কেন যাবো?’

–‘তাহলে এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে শুধু তিন বছরের জন্য কেন বিয়ে করেছো?’

–‘আসলে সেটা করেছি তোমার উপরে বদলা নেওয়ার জন্য। আর আমি ভেবেছিলাম তুমি আমায় ভালোবাসো না। তাই তোমায় আঁটকে রেখে প্রতিশোধ নিয়ে ছেড়ে দিব ভেবেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেখি তুমিও আমায় ভালোবাসো। তাই ঠিক করে নিয়েছি তোমার সাথে আজীবন থাকবো। আর এগ্রিমেন্ট বাতিল করে দু’জনে সারাজীবনের জন্য আবারো বিয়ে করবো।’

–‘সত্যিই?’

–‘হুম।’

–‘কিন্তু তনু আমার যে কিছু নেই বর্তমানে। আমায় বিয়ে করলে তো তোমার তেমন কোনো ফায়দা হবে না।’

–‘আকাশ ফায়দার জন্য সবাই বিয়ে করে না। আর আমার ফায়দার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজের যেটুকু আছে সেটা দিয়েই চলবে আমার। এছাড়া তোমার কিছু নেই তো কি হয়েছে? আমার তো আছে। আমি নতুন একটা কোম্পানি খুলবো। যেটার দায়িত্ব আমি তোমায় দিব। তারপর তুমি একটা অফিস সামলাবে। আর আমি একটা সামলাবো।’

আকাশ তনুর কথার উত্তরে মুচকি একটা হাসি দেয়। আকাশের কাছে সব কিছু কেমন যেনো স্বপ্নের মতন লাগছে। যেই মেয়েটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিন বছরের এগ্রিমেন্ট করেছে, সেই মেয়েটাই আজ তাকে নিয়ে সারাজীবন কাটানোর পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। কল্পনায় বিভোর আকাশ। পাশ থেকে তনু আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে,

–‘এই আকাশ চুপ করে আছো কেন? কথা বলো। আকাশ তুমি জানো আমি আরেকটা প্ল্যান করেছি?’

–‘কি প্ল্যান?’

–‘আমাদের যখন আবার বিয়ে হবে, তখন তোমার মা আর ছোট বোনকে আমাদের উপরের ফ্ল্যাটটা দিয়ে দিব। তাহলে আমাদের আর বেশি সময় নষ্ট হবে না শ্বশুর বাড়িতে যাতায়াত করতে। এছাড়া দুই বেয়াইন মিলে একসাথে সব সময় গল্প গুজব করতে পারবে।’

তনুর কথা শুনে আকাশ খুশিতে আত্মহারা হয়ে তনুকে একহাত দিয়ে নিজের কিছুটা কাছে টেনে নেয়। এরপর সেও তনুর দিকে এগোতে থাকে। তনু আকাশের এগোনো দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কারণ সে বুঝতে পেরে যায় আকাশ এখন কি করবে। তাই সে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আকাশ তনুর দিকে এগিয়ে গিয়ে তনুর উষ্ণ ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। তনুও আকাশকে রেসপন্স করছে। দু’জনে কিছুটা সময় ঠোঁটের ব্যায়াম করে। এরপর একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে কথাবার্তা বলে অনেকটা আনন্দের মুহূর্ত কাটায়। বিকাল হয়ে এসেছে। দু’জন পার্ক থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে এসে বসে। তনু গাড়ি ড্রাইভ করে আকাশকে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে নিজ থেকেই আকাশের সঙ্গে গিয়ে আকাশের মা রহিমা বেগমের সাথে দেখা করে। এরপর দেখাসাক্ষাৎ শেষ করে নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে আসার পর তনুর মা তনুকে সোহানের মা’য়ের বিষয়ে বলে। তনু বেশ অবাক হয় সোহানের মা সোহানের জন্য বিয়ের কথা বলতে এসেছিল এই কথা শুনে। তবে তনু অবাক হলেও বিষয়টা নিয়ে বেশি একটা মাথা ঘামায় না।
নিজের মতন স্বাভাবিক থাকে। দিন কাটতে থাকে। যতো দিন কাটছে ততোই তনু আর আকাশের সম্পর্ক মজবুত হচ্ছে। একে অপরকে রেখে অল্প সময়ের জন্যেও তারা থাকতে পারে না। অফিসে থাকলে আকাশের সারাটা সময় তনুর কেবিনেই কাটে। আর বাড়িতে গেলে সর্বক্ষণ ফোনে লেগে থাকে একে অপরের সাথে। এছাড়া তনু প্রায় সময় আকাশকে সঙ্গে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। তনুও প্রায় সময় আকাশের বাড়িতে আসে। দুই পরিবারও অনেক খুশি আকাশ আর তনুর সম্পর্কে। কিন্তু কথায় আছে না সুখ বেশিক্ষণ মানুষের কপালে দীর্ঘায়ু হয় না। একদিন অফিস টাইম শেষ করে তনু গাড়িতে করে আকাশকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সময় সোহান অনেক কয়জন ভাড়াটে ছেলেপেলে নিয়ে তনু আর আকাশের পথ আটকায়। এরপর শুধু আকাশকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে সকলে মিলে মা’রার জন্য ঘিরে ধরে। তনু জলদি করে গাড়ি থেকে নেমে আকাশকে বাঁচানোর জন্য যায়। কিন্তু সোহান তনুকে আঁটকে দেয়। আর নিজের ভাড়া করা ছেলে গুলোকে বলে,

–‘আমি একে দেখছি। তোরা ওর ব্যবস্থা কর।’

সোহান ভাড়া করা ছেলে গুলোকে আকাশের ব্যবস্থা করতে বলে। আই মিন আকাশকে মা’রতে বলে। ছেলে গুলা সোহানের কথা মতন আকাশকে মা’রতে আরম্ভ করে। কিন্তু কিছু সময় পর বিকট একটা আওয়াজ হয়। আর সেই সঙ্গে সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা’রা বাদ দিয়ে পিছাতে শুরু করে….
#অবেলায়_তুমি (পর্ব-১৬)
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ

সোহানের ভাড়া করা ছেলে গুলো সোহানের কথা মতন আকাশকে মা’রতে আরম্ভ করে। কিন্তু কিছু সময় পর বিকট একটা আওয়াজ হয়। আর সেই সঙ্গে সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা’রা বাদ দিয়ে পিছাতে শুরু করে। সবাই ভূত দেখার মতন চমকে আছে। কারোর সাহসে আর কুলাচ্ছে না আকাশের গায়ে হাত দেওয়ার। সবার সাহস মুহূর্তের মধ্যেই রাস্তা বদল করে পালিয়েছে। আকাশ মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। ছেলে গুলো আকাশকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল মা’রার সময়। আকাশের হাতে মানুষ টপকে দেওয়ার যন্ত্র। মানে হলো আকাশের হাতে পিস্তল। আর একটু আগে যেই আওয়াজটা হয়েছে সেটা আকাশের পিস্তলের আওয়াজ ছিল। আকাশের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আকাশ পিস্তলটা কোমর থেকে বের করে হাওয়ায় চালিয়েছে। আর সেটা দেখেই সোহানের ভাড়া করা লোকজন আকাশকে মা’রা বাদ দিয়ে দূরে সরে গিয়েছে। সবাই হতবাক আকাশের হাতে পিস্তল দেখে। বিশেষ করে সোহান আর তনু। আকাশ পিস্তলটা হাতে নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে সোহানের ভাড়া করা ছেলে গুলোর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,

–‘দম ফুরিয়ে গেছে তোদের? মা’রবি না আমায় আর? আয় মা’র এখন আমাকে। তোরা আট থেকে দশজন। আর আমি একা। তোরা সকলে মিলে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লে আমার অস্তিত্ব সহ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নে শুরু হয়ে যা এবার।’

সবাই চুপ করে থাকে। আকাশের কথার প্রত্যুত্তরে কেউ কোনো কথা বলবে সেই সাহস টা পাচ্ছে না। আকাশের হাতের পিস্তলটা যেনো সকলের মুখের বুলি বন্ধ করে দিয়েছে। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইতিমধ্যে সকলেই বুঝে গেছে তারা ভুল মানুষের খপ্পরে পড়েছে। সকলে মিলে একসাথে আকাশের যেই ক্ষতি টা করবে, আকাশ সেকেন্ডের মধ্যেই চাইলে উল্টো তাঁদের আরো বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে। সকলেই নিশ্চুপ। সাড়া শব্দ নেই কারোর। আকাশ বুঝে যায় সোহানের ভাড়া করা লোকজনের সাহস কতোটা। অযথা আর সময় নষ্ট না করে সোহানের কাছে চলে যায় আকাশ। কারণ ভাড়া করা লোকজনের সাথে কথা বলে আর কোনো ফায়দা নেই। সব কিছুর ভূমিকায় যে আছে তার সাথেই কথা বলা উচিত। সময় নষ্ট না করে বুদ্ধিমানের মতন সোহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আকাশ। সোহানের চোখ কপালে উঠে আছে। শায়েস্তা করতে এসে উল্টো সোহান নিজেই যেনো শায়েস্তা হয়ে গেলো। চেহারার ধরণ পাল্টে গেছে সোহানের। শুরুতে যেমন তেজ নিয়ে কথাবার্তা বলছিল বর্তমানে তার কোনো ছিটেফোঁটাও নেই সোহানের মধ্যে। সোহানের পরিবর্তন দেখে আকাশের প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। তাও কোনো মতে হাসি থামিয়ে সোহানকে বলে,

–‘আমার বারোটা বাজাতে এসে উল্টো তোর নিজের উল্টো বারোটা বেজে যাচ্ছে। জানিস কোমরে পিস্তল গুঁজে রাখা শৌখিন মানুষ আমি। তুই আমাকে সাধারণ ভাবে নিয়ে অনেক বড় ভুল করেছিস। না হয়তো আজ তোর এতোটা অবাক হতে হতো না আমায় দেখে। অবশ্য তুই শুধু একা নয়। আমি নিজেও অবাক। কারণ কেন জানিস? গত পাঁচ বছর আগে যখন আমার বাবার অঢেল সম্পত্তি ছিল, তখন আমি আমার বাবার টাকা নষ্ট করে শখের বসে এই জিনিসটা কিনেছিলাম। কিন্তু কখনোই আমি এই জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিয়ে বের হই নি। আর না এই জিনিসটা আমার কখনো কাজে লেগেছে। তবে আজ অফিসে আসার সময় কেন জানি ইচ্ছে হলো জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিতে। তাই অফিসের আসার পূর্বে জিনিসটা নিজের সঙ্গে নিয়েছি। কিন্তু এখন দ্যাখ আজ জিনিসটা সঙ্গে নিয়ে বের হওয়ায় আমার ফায়দা হয়েছে। তার জন্য নিজের ও অবাক লাগছে। এবার বল জিনিসটা কি সত্যিই কাজে লাগাবো?’

আকাশের কথা শুনে সোহান তনুকে সামনে এগিয়ে ধরে বাঁচার জন্য। আর সোহান তনুর পিছনে লুকিয়ে পড়ে। সোহানের কান্ড দেখে আকাশ আর নিজের হাসি থামিয়ে রাখতে পারে না। শব্দ করো হেঁসে দিয়ে সোহানকে বলে,

–‘তনুকে সামনে এগিয়ে দিলে কোনো কাজ হবে না। তাই নিজের ভালো চাস তো তনুকে ছেড়ে দে। না হয় যতোই তাল-বাহানা করিস না কেন, নিশানা কিন্তু ঠিকই আমি তোর কপালে লাগাবো।’

সোহান ভয় পেয়ে তনুকে ছেড়ে দেয়। সোহানের থেকে ছাড়া পেয়ে তনু দৌড়ে এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। আকাশ তনুকে শান্ত করতে তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

–‘তনু একদম কান্না করো না। আমার হাতে যেই যন্ত্রটা আছে সেটার কারণে আমাদের সমস্ত বিপদ কেটে গেছে। তনু আমি বাকি আট-দশটা মানুষের মতন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তোমার জন্য সাধারণ থেকে গুন্ডা-মাস্তানে পরিণত হতে আমি এক সেকেন্ড ও ভাববো না।’

–‘আকাশ আমি ভাবতেই পারিনি সোহান এমন। আমি তাঁকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবেছিলাম। কিন্তু সে আমার জীবনের সুখ-শান্তি কেঁড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। আকাশ তুমি সোহানকে একটা চরম শিক্ষা দাও। যাতে করে আগামীতে সে তোমার আর মাঝে কখনো ঝামেলা করার সাহস না পায়।’

–‘তনু এমনিতেও সে আর আগামীতে আমাদের মাঝে ঝামেলা করার দুঃসাহস করবে না। কারণ এমনিতেই তার শিক্ষা হয়ে গেছে। আগামীতে মনে হয় না আর সে কিছু করার সাহস করবে। তবে যদি সাহস করেও থাকে, তাহলে সে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মা’রবে। আর সোহান ভাই আমার শোন। আমাদের দু’জনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা দু’জন স্বামী-স্ত্রী। তাই তুই অযথা কাবাব মে হাড্ডি হতে আসিস না। মানুষ জীবনে বড় ধরনের বিপদ থেকে ভাগ্যক্রমে একবার বেঁচে যায়। তবে প্রতিবার যে বেঁচে যাবে তার কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরেরবার তুই কিছু করতে আসলে তোর জন্য আমাকে সাধারণ মানুষ থেকে দাগী আসামি হতে হবে। যেটা তোর জন্য কখনোই মঙ্গলকর হবে না। তাই এবার একটা সুযোগ দিলাম সেটা কাজে লাগিয়ে ভালো হ। আর আমার সমস্ত কথা মাথায় ভিতরে ঢুকিয়ে নে। এবার চললাম আমরা। এই তনু চলো।’

পিস্তলটা কোমরে রেখে আকাশ তনুকে নিয়ে গাড়িতে এসে বসে। তনুর চোখ দিয়ে এখনো পানি পড়ছে। আকাশ গাড়িতে উঠে তনুর চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে তনুকে বুকে আগলে নিয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে। তনুও আকাশকে জড়িয়ে ধরে। আকাশের বুকে মাথা রাখার খানিক পরেই তনু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্বাভাবিক হওয়ার পর আকাশের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে তনু আকাশের ঠোঁটে নিজের দখল বসায়। আকাশ ও কম কিসে। সেও তনুর আচরণ সাড়া দিতে ব্যস্ত। দু’জনের মধ্যে আবারো কিছুটা রোমান্টিক কাজ কারবার ঘটে। দু’জনে আবারো কিছু সময়ের জন্য ঘনিষ্ট হয়। মিনিট পাঁচেক একে অপরের সাথে মিশে থাকে। এরপর একজন আরেকজনকে ছেড়ে দিয়ে দু’জন দুই সিটে বসে। তনু গাড়ি স্টার্ট করে ড্রাইভ করতে শুরু করে। আর আকাশ চুপ করে তনুর পাশে বসে আছে। তনু গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আকাশকে বলে,

–‘আকাশ আজকে সোহান চরম বড় শিক্ষা পেয়েছে। আমি তো ভাবতেও পারিনি তুমি নিজের রূপ মুহূর্তের মধ্যে এভাবে পাল্টে ফেলবে। জানো আমি না আজকে বেশ অবাক হয়েছি তোমার নতুন রূপ দেখে।’

–‘কি করবো বলো? সোহান যে এমনটা করবে সেটাও তো আমরা জানতাম না! আজ কেন জানি পিস্তলটা নিয়ে আসতে ইচ্ছে হয়েছে। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে এটার যে আজ প্রয়োজন পড়বে সেটা আমারো জানা ছিল না।’

–‘যাক ভালোই হয়েছে। তবে আকাশ জানো সোহান যে এমনটা করবে সেটা আমি কখনো কল্পনা করিনি। এছাড়া গতকাল সোহানের মা আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল সোহানের জন্য। আমি বিষয়টা নিয়ে অবাক হলেও সেটা নিয়ে বেশি একটা মাথা ঘামাইনি। কারণ মা সোহানের মা’কে আমাদের বিয়ের বিষয়ে বলেছে। আমি ভেবেছিলাম সোহান আমাদের বিয়ের বিষয়ে শুনলে সে আর আমাকে বিয়ে করার চিন্তা করবে না। কিন্তু ওমা আজ দেখি সে ছেলে-পেলে নিয়ে হাজির আমাদের ক্ষতি করার জন্য।’

–‘আমারো সেদিন সন্দেহ হয়েছিল সোহানের কথাবার্তায়। যার কারণে আমি তোমাকে বলেছিলাম সোহানকে চলে যেতে বলতে। আর আজকে সোহান আমার সন্দেহ টাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে।’

–‘আচ্ছা থাক বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
আমাদের দু’জনের ভালোবাসা এতোটা সস্তা না যে, যে কেউ এসে সেটা ভেঙ্গে ফেলবে। আকাশ তুমি আমায় কতোটুকু ভালোবাসো সেটা সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। আর তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য চাই।’

–‘তনু আমিও তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি।
তুমি হয়তো এখনো পুরোপুরি ভাবে অনুমান করতে পারোনি আমার ভালোবাসার পরিমাণ কতটুকু। তবে সত্যি বলতে তোমায় আমি এতোটা ভালোবাসি, যে তোমায় না পেলে জীবনটা মরা লাশের মতন হয়ে যাবে। তোমায় না পেলে আমি বেঁচে থেকেও ম’রে যাবো। এক কথায় জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো। আমার মধ্যে কোনো শোক তাপ থাকবে না। ভিতরটা পাথরে পরিণত হয়ে যাবে। অনুভূতি শূন্য হয়ে যাবো আমি।’

–‘এই পাগল কি সব বাজে কথা বলছো? আমায় পাবে না কেন তুমি? আর আমি কোথায় যাবো তোমায় রেখে? আমি তোমার আছি তোমার এই থাকবো। একদম স্বার্থপরের মতন কথা বলবে না বলে দিলাম। তোমাকে না পেলে আমিও কি ভালো থাকবো নাকি? তুমিই আমার সমস্ত ভালো থাকার কারণ। সেখানে তোমার কাছ থেকে আমি হারাবো কোন দুঃখে?’

–‘তা আমি জানি না! আমি শুধু নিজের কি পরিণতি হবে সেটাই তোমাকে জানালাম।’

–‘জানো না কেন? জানতে হবে। আর না জেনে উল্টো-পাল্টা কথা কেন বলো? তোমার পিস্তল দিয়েই তোমার খুলি একদম ফুটো করে দিব আর একবার বাজে কথা বললে।’

–‘আচ্ছা আর বলবো না।’

–‘মনে থাকে যেনো।’

–‘হুম থাকবে।’

–‘আচ্ছা শুনো আমরা একটা কাজ করি চলো। তাহলে তোমার মুখ দিয়ে আর উল্টো-পাল্টা কথা বের হবে না।’

–“কি কাজ?’

–‘আসছে বৃহস্পতিবারে অফিসে একটা ছোটখাটো খাবারের আয়োজন করে সবাইকে দু’জনের বিষয়ে জানিয়ে দিব আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর তার পরেরদিন শুক্রবারে দু’জন দুজনের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে আবারো বিয়ে করবো সারাজীবনেটর জন্য। কারণ আমার এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। সাধারণ ভাবেই আমরা দুই পরিবারকে নিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যাসেজ করবো। আর অফিসের মানুষদেরকে যেহেতু জানাতে হবে, তাই আগের দিন ওদেরকে একটা খাবারের আয়োজন করে জানিয়ে দিব। না হয়তো এটা সেটা বলবে যে আমি কৃপণ। আমার এতো টাকা পয়সা থাকা সত্বেও বিয়ের অনুষ্ঠান করিনি। আর তাঁদেরকে খাওয়াইনি।’

–‘কিহহহ! তুমি সত্যিই আগামী শুক্রবারে আমাকে সারাজীবনের জন্য বিয়ে করবে?’

–‘হুম করবো। কেন তোমার কি কোনো ডাউট আছে?’

–‘নাহ সব কিছু কেমন যেনো কল্পনা লাগছে আমার কাছে।’

–‘কল্পনা নাকি বাস্তব সেটা বৃহস্পতিবার আসলেই বুঝতে পারবে যখন আমি তোমাকে সকলের সামনে নিজের স্বামী বলে পরিচয় করিয়ে দিব। এবার গাড়ি থেকে নেমে বাসায় যাও। তোমার বাসার সামনে চলে এসেছি।’

আকাশ তনুর কথা শুনে খুশি মনে গাড়ি থেকে নেমে ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে যায়। আসছে শুক্রবারে তনু সারাজীবনের জন্য আকাশের হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কটা সকলের সামনে সৃকৃতি পাবে। কিন্তু আকাশ পুরোপুরি ভাবে বেখবর সোহান শুধরে যাওয়ার বদলে আরো বড় ধরনের কিছু প্ল্যান করছে….

চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।)
চলবে….

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here