— তুমি ভাবলে কিভাবে তোমার মতো একটা অক্ষম মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে দিব?
বিয়ের দুই দিন আগে নিজের হবু শাশুড়ির মুখে এই কথা শুনে চমকে ওঠে বৃষ্টি। তার মাথা ঘুরতে থাকে। বৃষ্টির বাবা রাদিব সাহেব ওখানেই বসে ছিলেন। বৃষ্টির হবু শাশুড়ি মিসেস আয়েশার কথা শুনে তিনি সামনে এগিয়ে আসেন। বৃষ্টির বাবা রাদিব সাহেব বলে ওঠেন,
— দেখুন আমার মেয়ের সম্পর্কে না জেনে শুনে আপনি এমন মন্তব্য করতে পারেন না।
মিসেস আয়েশা মুখ বেঁকিয়ে বললেন,
— আমি কখনো না জেনে কথা শুনে কথা বলি না। এই দেখুন প্রমাণ।
বলেই তিনি রাদিব সাহেবের হাতে একটা রিপোর্ট দেন। রাদিব সাহেব কাঁপাকাঁপা হাতে সেটা খুলে পড়ে দেখেন। সেখানে স্পষ্ট লেখা রয়েছে যে বৃষ্টি কখনো মা হতে পারবে না। মিসেস আয়েশা এবার পাশ থেকে বলে উঠলেন,
— কি? এবার প্রমাণ হয়ে গেল তো যে আপনার মেয়ে একটা বাঁজা?
মিসেস আয়েশার কথা শুনে রাদিব সাহেব রেগে বলে উঠলেন,
— দেখুন আপনি আমার মেয়েকে এই ধরনের বাজে মন্তব্য করতে পারেন না।
বৃষ্টির সৎ মা মিসেস সানিয়া পাশের রুমেই ছিলেন। তাদের এসব কথোপকথন শুনে তিনি এই রুমে ছুটে আসেন। তিনি রাদিব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন,
— ওনাকে ধমকে কি হবে? তোমার মেয়েরই তো দোষ। আর উনি বললেই ভুল।
মিসেস সানিয়ার কথা শুনে মিসেস আয়েশা বলে উঠলেন,
— আপনি ঠিকই বলছেন। আর এই কারণে এই বিয়ে হবে না।
— এসব আপনি কি বলছেন? পরশু বিয়ে আর আপনি বলছেন যে এই বিয়ে হবে না।
— তো কি করব? আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিব। কখনোই না। ওর মতো অক্ষম মেয়েকে আমি আমার বাড়ির বউ কোনোদিন করব না।
ওনার কথা শুনে রাদিব সাহেব রেগে বলে উঠলেন,
— বারবার আমার মেয়েকে অক্ষম বলে অপমান করবেন না। বাচ্চা দেওয়া না দেওয়ার মালিক আল্লাহ। তাই এসব বলবেন না।
তখনই পাশ থেকে মিসেস সানিয়া বলে উঠলেন,
— তুমি চুপ করো।
তারপর তিনি মিসেস আয়েশার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— দেখুন আমি বলছিলাম কি যে বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে? আত্মীয়স্বজনদেরও বলা হয়ে গেছে। তারা খুব তাড়াতাড়ি এসেও পড়বে। এখন এসব কিছু বাতিল করা ঝামেলার না? তাই বলছি কি? আমার তো আরও একটা মেয়ে আছে। আপনারা তো দেখেছেনই সায়েরাকে। তাই বলছি সবকিছু ঠিকই থাক। শুধু বৃষ্টির জায়গায় আমার সায়েরার সাথে আসিফের বিয়েটা দিন। তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই হয় না।
মিসেস সানিয়ার কথা শুনে রাদিব সাহেব বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
— এসব তুমি কি বলছো? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে? আমার বৃষ্টির কথা একবারও ভাবছ না।
মিসেস সানিয়া এবার রাদিব সাহেবের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন,
— তুমি চুপ করো। আমি যা করছি ভালোই করছি।
মিসেস আয়েশা কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলেন,
— প্রস্তাবটা খুব একটা খারাপ নয়। সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। আমার বাসায় তো অনেকে চলেও এসেছে। এখন মানা করাটা ঝামেলার। তাই যদি বৃষ্টির বদলে সায়েরার বিয়ে হয় তাহলে ভালোই হয়।
মিসেস আয়েশার কথা শুনে মিসেস সানিয়া বলে উঠলেন,
— দেখলেন আমি সবসময় ঠিকই বলি।
— সানিয়া তোমার মাথা ঠিক আছে। তুমি কিভাবে এটা বলতে পারলে যে বৃষ্টির বদলে সায়েরার সাথে আসিফের বিয়ে হবে? তুমি একবারও আমার মেয়েটার কথা ভাবছ না। মেয়েটার মনের ওপর দিয়ে কি ঝড় যাচ্ছে?
— দেখ এখন এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তোমার মেয়েরই তো সমস্যা। নাহলে কি ওরা বিয়ে ভাঙত? আর না আমি সায়েরার সাথে বিয়ের কথা বলতাম?
— আর সবাই যখন জিজ্ঞাসা করবে সায়েরার সাথে আসিফের বিয়ে হচ্ছে কেন? তখন?
— তখন বলে দেব যে আসিফের বৃষ্টিকে নয় সায়েরাকে পছন্দ। তাই ওর সাথে বিয়ে হচ্ছে।
— বাহ! খুব ভালো। সব কথা তো আগে থেকেই মনে মনে সাজিয়ে রেখেছ। আরে বিয়েটা ভেঙে গেলে যেত। কিন্তু যে ছেলের সাথে আমার বড় মেয়ের বিয়ে ছিল সেই ছেলের সাথেই তুমি আমার ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা বলছ।
— দেখ আমি যা করছি আমাদের মানসম্মানের কথা ভেবেই করছি। তাই যা হচ্ছে হতে দাও।
তখনই পাশ থেকে মিসেস আয়েশা বলে ওঠেন,
— আমি আজ আসি। তাহলে ওই কথাই রইল। আসিফের সাথে সায়েরার বিয়ে হচ্ছে। আবার বেইমানি করে সায়েরার বদলে আমার ছেলের সাথে এই বন্ধ্যা মেয়েটার দিয়ে দিয়েন না। তাহলে কিন্তু আপনাদের আমি ছাড়ব। আসি।
বলেই মিসেস আয়েশা বেরিয়ে গেলেন। রাদিব সাহেব একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। এই দীর্ঘশ্বাসে রয়েছে একরাশ বিষণ্ণতা। আর মিসেস সানিয়ার মুখে লেগে আছে বিজয়ের হাসি।
বৃষ্টি আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। সে ধীরে ধীরে পা ফেলে তার রুমে চলে এলো। রুমে এসে দরজা দিয়ে সে দেওয়াল ঘেসে নিয়ে বসে পড়ল। একটু আগে বৃষ্টির সাথে যা ঘটল তা সে এখনো মানতে পারছে। সবকিছু তার কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। তার মনে হচ্ছে সে এখনি ঘুম থেকে জেগে উঠবে আর দেখবে এসব স্বপ্ন। আর সবকিছু ঠিকই আছে। কিন্তু না। তা যে হওয়ার নয়। বৃষ্টি এবার এইচএসসি দিয়েছে। দেড় বছর রিলেশনের পর পরশু তার আসিফের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটা ধাক্কায় সব এলো মেলো হয়ে গেল। সে এখনো মানতে পারছে না যে সে কখনো মা হতে পারবে না। একটা মেয়ে তখনই নারী হিসেবে পূর্ণতা পায় যখন সে মা হয়। আর সে যখন জানতে পারে যে সে মা হতে পারবে না এর থেকে দুঃখের বিষয় আর কি হতে পারে?
বৃষ্টির অবস্থাও এখন অনেকটা সেরকম। হয়তো বা তার থেকে বেশি। আর আজ সে মা হতে পারবে না বলে তার বিয়েটা ভেঙে গেল। সে তার ভালোবাসার মানুষকে চিরদিনের জন্য হারালো। সে পেয়েও তার ভালোবাসার মানুষকে পেল না। আর সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে তারই ছোট বোনের বিয়ে হবে। পরশু তার বিয়ের জায়গায় তার ছোটবোনের সাথে তার ভালোবাসার মানুষের বিয়ে। কারণ সে কখনো মা হতে পারবে না। যাকে বলে বন্ধ্যা। মিসেস আয়েশা যখন তাকে বারবার বন্ধ্যা, অক্ষম বলছিল তখন তার ওতোটাও খারাপ লাগেনি। যতটা খারাপ লেগেছে এটা জানতে পেরে যে সে মা হতে পারবে না।
বৃষ্টি ভেবেছিল বিয়ের পর একটু সুখ পাবে। কিন্তু সুখ জিনিসটা যে তার শত্রু সে সেটা কোনো দিন পাবে না তা তার জানা ছিল না। বৃষ্টির যখন পাঁচ বছর বয়স তখন একটা দূর্ঘটনায় সে তার মাকে হারায়। কিন্তু দূর্ঘটনা সম্পর্কে তার একটুও মনে নেই। তারপর থেকে সে তার বাবার কাছেই থাকত। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার বাবা আরেকজনকে বিয়ে করে আনেন। আর একটা মেয়ে তার সৎ মায়ের সংসারে যে খুব একটা ভালো থাকে তা নয়। সায়েরা তার সৎ মায়ের আগের ঘরের মেয়ে। ও বৃষ্টির চেয়ে এক বছরের ছোট। বৃষ্টি তাকে সবসময় নিজের বোন মনে করলেও সায়েরা কখনো তাকে নিজের বোন বলে ভাবে না।
বৃষ্টি এসব ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙে পড়ল। তার জীবনটাই এমন, স্রোতে ভাসা শেওলার মতো। বৃষ্টির হঠাৎ আসিফের কথা মনে পড়ল। সে চোখ মুছে সাথে সাথে আসিফকে ফোন দিল। এখন যদি কেউ কিছু করতে পারে সেটা হলো আসিফ।
#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_২
#লেখিকা_N_K_Orni
বৃষ্টি আসিফকে কল দিলো। কিছুক্ষণ পর আসিফ ধরল। বৃষ্টি ভেজা গলায় বলে উঠল,
— আসিফ তুমি শুনেছ কিছু? আন্টি তোমার আর আমার বিয়েটার ভেঙে দিয়েছেন। আমি আর তোমাকে পাব না আসিফ। কিছু করো তুমি প্লিজ।
বলেই বৃষ্টি ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। বৃষ্টির কথা শুনে আসিফ গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
— আমি মায়ের কাছ থেকে সব শুনেছি। মা বলল তুমি নাকি কখনো মা হতে পারবে না। তাই মা বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। মা ভুল কিছু মনে হয় করেননি। মায়ের শখ আছে আমার সন্তানের মুখ দেখার। আমারও তো সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাক শোনার ইচ্ছা আছে। আর তোমাকে বিয়ে করলে আমার এসব স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। যা আমি কখনোই চাই না। তাই আমার মনে হয় আমাদের বিয়েটা না হওয়াই ভালো।
আসিফের কথা শুনে বৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে গেল। সে যেন তার কানকে বিশ্বাসই করতে পারছে। এটাই কি সেই আসিফ? যাকে সে ভালোবেসেছিল, বিশ্বাস করেছিল, দুজনে একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল। সে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠল,
— তুমি না আমাকে ভালোবাসো আসিফ?
— হ্যাঁ বাসি। কিন্তু তোমার জন্য আমি আমার বাবা হওয়ার শখ বলি দিতে পারব না।
— এখন তো দেশ উন্নত হচ্ছে। আমরা উন্নত বিশ্বে বাস করি। কোনো না কোনো একটা উপায় তো ঠিক বের হয়ে যেত। তার পরেও যদি না হয় তাহলে আমরা বাচ্চা এডপ্ট করতে পারি। শুধুমাত্র এই একটা সমস্যার জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না আসিফ।
— বাচ্চা এডপ্ট করলেও সেটা তো আর আমার বাচ্চা হবে না। আর তোমার এই সমস্যাটা অনেক বড় একটা কারণ তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার। তাই সবচেয়ে ভালো হবে তুমি আমাকে ভুলে যাও।
আসিফের কথা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে ওঠে,
— এসব তুমি কি বলছ আসিফ? আমি তোমাকে কিভাবে ভুলে যাব?
— চেষ্টা করো। চেষ্টা করলে মানুষ সব পারে। তাই চেষ্টা করলে তুমিও আমাকে ভুলে যেতে পারবে।
— তুমি জানো তোমার মা আমার ছোট বোনের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে?
— হ্যাঁ।
— তুমি রাজি হয়েছ?
— এখন এছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি সায়েরাকেই বিয়ে করব। তাই ভালো হবে তুমি আমাকে ভুলে যাও।
— না আসিফ এটা তুমি করতে পারো না।
— এটাই হবে। যা হচ্ছে মেনে নেও। আর পারলে আমাকে ভুলে যেও। আই এম সরি।
বলেই আসিফ কল কেটে দিল। বৃষ্টি ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। কিছুক্ষণ পর সে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে তার পড়া টেবিলের সামনে চলে গেল। টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর থেকে একটা ছোট বক্স বের করল। বক্সের ভেতরে একটা স্বর্ণের চেন রয়েছে। বৃষ্টি সেটা হাতে নিয়ে বক্সটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিল। তারপর সেটা হাতে নিয়ে বিছানায় গিয়ে খরগোশের বাচ্চার মতো কাচুমাচু হয়ে শুয়ে পড়ল। চেনটাকে বুকে জড়িয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।
এটা তার মায়ের চেন। তার মায়ের স্মৃতি বলতে এই একটা জিনিসই আছে। আর কোনোকিছুই নেই। এমনকি একটা ছবিও নেই। সবকিছু তার সৎ মা ফেলে দিয়েছে। আর তার বাবা কিছু বলতে গেলে তিনি চুপ করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কিভাবে সেটা বৃষ্টির জানা নেই? এই চেনটার কথা তার সৎ মা জানে না। তিনি যদি জানতেন তাহলে এটাও ফেলে দিলেন। বৃষ্টি তার ফুফির কাছে শুনেছে চেনটা তার দাদু তার মাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সে হওয়ার পর তিনি এটা বৃষ্টির গলায় দেন।
দূর্ঘটনার পর যখন বৃষ্টি অসুস্থ ছিল তখন এই চেনটা বৃষ্টির ফুফির কাছে ছিল। তারপর আর তিনি দেননি চেনটা। গতমাসে যখন এখানে এসেছিলেন তখন তিনি বৃষ্টিকে এই চেনটা দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে বৃষ্টির যখনই মন খারাপ হয় তখনই সে এই চেনটাকে বুকে জড়িয়ে রাখে। এই চেনে তার মায়ের স্পর্শ আছে। এটাকে বুকে জড়িয়ে সে তার মাকে অনুভব করে। বৃষ্টি চেনটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা অবস্থাতেই বলতে লাগল,
— মাম্মাম তুমি আমাকে কেন ছেড়ে চলে গেলে? তুমি জানো কেউ আমাকে ভালোবাসে না। কেউ আমাকে বোঝে না। আসিফও আমাকে বুঝল না। আম্মুও খুব পচা। আমাকে একটুও ভালোবাসে না। আম্মু শুধু সায়েরাকেই ভালোবাসে। পরশু সায়েরার সাথে আসিফের বিয়ে হয়ে যাবে। আমার কি হবে মাম্মাম? তুমি কিছু করো মাম্মাম। তুমি কেন আমাকে তোমার সাথে নিয়ে গেলে না? আমি এখানে থাকতে চাইনা। এখানে সবাই পচা, সবাই বাজে, সবাই খুব স্বার্থপর। যদিও বাবা আমাকে একটু হলেও বোঝে কিন্তু তাও আম্মু বাবাকে চুপ করিয়ে দেয়। আমার আর কেউ নেই। তুমি আমাকে নিয়ে যাও মাম্মাম।
বৃষ্টির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। এভাবে এসব বলতে বলতে একটা সময় বৃষ্টি ওই অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়ল।
—————-
একরাশ বিষণ্নতা নিয়ে নিজের রুমের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছেন রাদিব সাহেব। আজ যেটা হয়ে গেল সেটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। বৃষ্টি মা হতে পারবে না বলে যে এই বিয়েটা ভেঙে গেল তাতে উনি খুবই কষ্ট পেয়েছেন। মানসম্মানের ভয়ে নয় বরং নিজের মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে পাবে না এটা জেনে। এজন্যই ওনার বেশ কষ্ট হচ্ছিল।
কিন্তু পরে ভাবলেন যারা বাচ্চা না হওয়ার জন্য মেয়েকে বাজে কথা বলছে তাদের কাছে মেয়েকে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু তিনি সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হলেন যখন তার স্ত্রী সানিয়া তার ছোট মেয়ের সাথে সেই ছেলেরই বিয়ের কথা বলল। যদিও সায়েরা তার নিজের মেয়ে নয় তবুও তিনি সায়েরা কখনো অন্য চোখে দেখেন না। বিয়েটা না হলে হতো। লোকজন কিছু কথা বলত পরে ঠিকই থেমে যেত। তাই বলে যার সাথে বড় মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার সাথেই ছোট মেয়ের বিয়ে হবে সেটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি মেয়েটাকে খুব বেশিই ভালোবাসেন। তাই তার কষ্ট তিনি কিছুতেই দেখতে পারছেন না।
————–
মিসেস সানিয়া আজ খুবই খুশি। তার মেয়ের এতো ভালো ঘরে বিয়ে হচ্ছে। তিনি তো খুশি হবেনই। তিনি প্রথম থেকেই চাইতেন যাতে আসিফের সাথে সায়েরার বিয়েটা হোক। আর আজ সেটাই হচ্ছে।
— নাহ সায়েরা ফোন দিয়ে খবরটা জানাতে হচ্ছে তো। উফফ আমার যে কি ভালো লাগছে? ওই অলক্ষীর সাথে বিয়ে না হয়ে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে হচ্ছে। যাই সায়েরা ফোন দিয়ে সুখবরটা দেই।
তিনি ফোন হাতে নিয়ে সায়েরাকে কল দিলেন। কিছুক্ষণ পর সায়েরা কল ধরল। ফোনের অপর পাশ থেকে সায়েরা বলে উঠল,
— আম্মু হঠাৎ এখন কেন কল দিয়েছো? তুমি তো জানো আমি কিছু কাজের জন্য সীমার বাড়িতে এসেছি।
— আর বাইরে বেশি থাকিস না। পরশু তোর বিয়ে আসিফের সাথে। বুঝলি? এবার তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয়।
— তুমি সত্যি বলছ আম্মু?
— হ্যাঁ সত্যি বলছি। এখন তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আয়।
মিসেস সানিয়ার কন্ঠে একরাশ উচ্ছাস মিশে আছে যা সায়েরা শুনেই বুঝতে পারছে।
— আচ্ছা আমি একটু পরেই আসছি।
বলেই সায়েরা কল কেটে দিল। মিসেস সানিয়া ফোন রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
————–
বন্ধ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতেই বৃষ্টি কিছু শব্দের আভাস পাচ্ছে। কিছু পরিচিত আওয়াজ যা সে এর আগেও শুনেছে। আর এসব আওয়াজে তার ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙে গেল। সে পিটপিট করে সামনে তাকাল। সামনের মানুষটাকে দেখে সে কিছুটা অবাক হলো।
চলবে,,,
(