অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব -১৫

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_N_K_Orni

রাত চলে গিয়ে এক নতুন দিনের সুচনা হয়েছে। বৃষ্টি পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকাল। দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকাল। বৃষ্টি দেখল ঘড়িতে আটটা বাজে। বৃষ্টি উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রুম থেকে বেরিয়ে দেখল মিসেস সানিয়া রান্নাঘর আর রাদিব সাহেব তার নিজের ঘরে। বৃষ্টি একবার চারপাশে তাকিয়ে আবার রুমে ফিরে এলো। তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগল,

— মনেই হচ্ছে না আজকে আমার বিয়ে। সত্যিই কি আজকে আমার বিয়ে? আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখেছিলাম? সত্যিই কি আমার আজকে বিয়ে হয়ে যাবে? ধুরর কিছুই ভালো লাগছে না। আমার ঘুম পাচ্ছে। যাই আরেকটু ঘুমিয়ে নেই।

বলেই বৃষ্টি আবার বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

রাদিব সাহেবের ডাকে বৃষ্টি পিটপিট করে চোখ খুলল। সামনে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চোখ পিটপিট করল। তারপর উঠে বসল। বৃষ্টিকে উঠতে দেখে রাদিব সাহেব বলে উঠলেন,

— বৃষ্টি মা কতক্ষণ ঘুমাবি? সাড়ে নয়টা বাজে। আজকে না তোর বিয়ে?

রাদিব সাহেবের কথা শুনে বৃষ্টি ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,

— এর আগেও একবার উঠেছিলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে চারিদিকে ঘুরে আবার ঘুমিয়ে পড়ছি।

বৃষ্টির কথা শুনে রাদিব সাহেব হেসে ফেললেন। তারপর বললেন,

— আচ্ছা চল খেয়ে নিবি। তারপর বিশ্রাম নিস। আর তোর বিয়ে বিকালের দিকে।

— ওহহ।

তারপর বৃষ্টি তার বাবার সাথে গিয়ে খেয়ে নিল। দুপুরের দিকে বৃষ্টি শুয়ে শুয়ে ফোনে গেম খেলছিল। তখনই ওখানে নাবিলা এলো। নাবিলা বৃষ্টির পাশের ফ্লাটে থাকে। নাবিলা বৃষ্টির দুই বছরের বড়ো। নাবিলাদের পরিবারের সাথে বৃষ্টির খুব ভালো সম্পর্ক। নাবিলা এসে বৃষ্টির পাশে এসে বসল। তারপর বৃষ্টির ফোনের দিকে উঁকি দিয়ে দেখল বৃষ্টি কি করছে? নাবিলাকে বসতে দেখে বৃষ্টি ফোন পাশে রেখে উঠে বসল। নাবিলা এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— তুই এতোক্ষণ গেম খেলছিলি? তোর না আজকে বিয়ে? তোকে দেখে তো মনেই হচ্ছে না যে আজকে তোর বিয়ে?

— কোন বইয়ে লেখা আছে যে বিয়ের দিন গেম খেলা যাবে না?

— আরে বইয়ে কেন এসব থাকবে? আমি তো বলছি যে বিকালে তোর বিয়ে। তোর তো এখন রূপচর্চা করা উচিত।

— তুমি তোমার বিয়ের দিন করো। আমার ওসবের ইচ্ছা নেই।

— আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নে। শাওয়ার নিয়ে এসে খেয়ে নিবি। তারপর তৈরি হতে হবে তো।

— আচ্ছা।

বলেই বৃষ্টি চলে গেল শাওয়ার নিতে চলে গেল। শাওয়ার নিয়ে এসে দেখল নাবিলা বসে আছে। বৃষ্টি আসতেই নাবিলা তার চুল শুকিয়ে দিল। এরপর বৃষ্টি আর নাবিলা খেতে গেল। খেয়ে ওরা রুমে চলে এলো। নাবিলা এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— বৃষ্টি এবার আয় তোকে তৈরি করে দেই। তোকে তৈরি করে দিয়ে আবার আমাকেও তো তৈরি হতে হবে।

তখন বৃষ্টি বলে উঠল,

— আপু তুমি আগে তৈরি হয়ে এসো। তারপর না হয় আমাকে তৈরি করে দিও। নাহলে আমাকে তৈরি করতে করতে তুমি তৈরি হওয়ার সময় পাবে না। তার থেকে ভালো হবে তুমি আগে গিয়ে তৈরি হয়ে এসো।

নাবিলা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

— আচ্ছা।

এরপর নাবিলা তৈরি হওয়ার জন্য চলে গেল। বৃষ্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে পড়ল। এসব কিছু তার কাছে বিষাক্ত লাগছে। ওই ঘটনার পর থেকে ওর বিয়ের প্রতি ইচ্ছাই উড়ে গিয়ে ছিল। কিন্তু আজকে তাকে না চাওয়া সত্ত্বেও বিয়ে করতে হচ্ছে। তার যে খুব চিন্তা হচ্ছে যার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে সে কি তার বিষয়ে সব জানে? নাকি পরে জানতে পেয়ে সেও আসিফের মতো ছেড়ে চলে যাবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর নাবিলা রুমে এলো। সে তৈরি হয়েই এসেছে। নাবিলা এবার বৃষ্টিকে তৈরি করে দিল। খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল। বৃষ্টিকে তৈরি করতে করতে সাড়ে চারটা বেজে গেল। বৃষ্টিকে তৈরি করে রেখে নাবিলা বাইরে চলে গেল। বিয়ে উপলক্ষে নাবিলার মা এসেছেন মিসেস সানিয়াকে সাহায্য করতে। নাবিলা তাদের কাছেই গেল। বৃষ্টি ওখানেই চুপ করে বসে রইল। বৃষ্টি বসে বসে তার এই কয়দিনের কথা ভাবছিল। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। সে দেখল নিরা কল দিয়েছে। সে ধরতেই যাবে তখনই নাবিলা রুমে এলো। বলল,

— ওরা এসে গেছে।

বৃষ্টি ফোনের দিক থেকে মনোযোগ সরিয়ে নাবিলার দিকে তাকাল। তারপর মলিন মুখে বলল,

— ওহহ।

— আমি শুধু দূর থেকেই দেখেছি। কারো মুখ দেখতে পারিনি। তবে দেখলাম তিনজন লোক।

বৃষ্টি আবারও বলে উঠল,

— ওহহ।

বৃষ্টির কথায় নাবিলা বিরক্ত হয়ে বলে উঠল,

— কি ওহহ ওহহ করছিস? কিছু তো বল? আচ্ছা বল তোর বরকে কেমন দেখতে?

বৃষ্টি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল,

— আমি এখনো তাকে দেখিনি।

বৃষ্টির কথায় নাবিলা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কি বলিস? এখনো দেখিস নি?

— না দেখিনি। বাবা তো দেখেছে। তাতেই হবে।

— আচ্ছা তুই থাক আমি আসি।

বলেই নাবিলা চলে গেল। ছয়টার দিকে নাবিলা বৃষ্টিকে নিতে এলো। বৃষ্টি বেশ বড়ো একটা ঘোমটা দিয়ে ওর সাথে গেল। আপাতত তার ইচ্ছা নেই যার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে তার মুখ দেখার। তাই সে ওখানে গিয়ে চুপ করেই বসে রইল। কিছুক্ষণ পর কাজি এসে তাদের বিয়ে পড়িয়ে দিয়ে গেল।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর নাবিলা বৃষ্টিকে তার রুমে দিয়ে গেল। বৃষ্টি রুমে আসার কিছুক্ষণ পর তার বাবা রাদিব সাহেব রুমে এলেন। বৃষ্টি তার বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরল। রাদিব সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। যদিও ছেলেদের কাঁদতে নেই তবুও রাদিব সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে কেঁদে দিলেন। আপন বলতে তার একমাত্র এই মেয়েই আছে। বৃষ্টিও তার বাবাকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদল।

রাতের খাওয়ার পর ওরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বৃষ্টি আর ওর স্বামী একটা গাড়িতে আর বাকিরা অন্য একটা গাড়িতে। বৃষ্টির স্বামী তার পাশে থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি এখানো তার মুখ দেখেনি। তবে বৃষ্টি তার রুম থেকে একটা হাস্যজ্বল ছেলেকে দেখতে পেয়েছিল। তবে ওরা তার স্বামী কিনা সেটা তার জানা নেই।

আসার সময় বৃষ্টি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেনি। কারণ সে রুমে কেঁদেছিল। তবে তার আম্মু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে খুব ইচ্ছা করছিল। কিন্তু সে পারেনি। সে তার আম্মুকে নিজের মায়ের মতো দেখলেও তিনি তো তাকে মেয়ে হিসাবে দেখেন না। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি তার কাছ থেকে বিদায় নিতে পারেনি। বৃষ্টি এক দৃষ্টিতে গ্লাসের ওপাশের দিকে তাকিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে একটা বাড়ির সামনে এসে থামল। গাড়ি থামার সাথে সাথেই বৃষ্টির স্বামী হনহন করে বেরিয়ে গেল। একবারও বৃষ্টির দিকে তাকাল না। সেটা দেখে বৃষ্টির খুব মন খারাপ হলো। সে মনে মনে বলতে লাগল,

— তাহলে কি ওনার এই বিয়েতে মত ছিল না? ওনাকে কি জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে?

বৃষ্টি এসব ভাবছিল তখনই গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে একজন মধ্যবয়স্ক লোক বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— এসো মা। বাইরে এসো।

বৃষ্টি বুঝতে পারল এটা তার শশুর। সে এবার গাড়ি থেকে নামল। তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। বৃষ্টি বাড়ির ভেতরে আসতেই একটা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে এলো। সে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— চলেন বড়ো ভাবি আপনাকে আপনার রুমে দিয়ে আসি।

বৃষ্টি কিছু বলব না। শুধু চুপচুপ তাকে অনুসরণ করল। মেয়েটা বৃষ্টিকে একটা রুমে নিয়ে এলো। রুমটায় খুবই হালকা আলো জ্বলছে। মেয়েটা বৃষ্টিকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো।

— আসলে ভাবি বড়ো ভাই অন্ধকার রুমই পছন্দ করে তাই তেমন আলোর জ্বালান হয়নি।

বৃষ্টি কিছু বলল না শুধু চুপ করে রইল। মেয়েটা আবার বলে উঠল,

— ভাবি আপনি বসেন। আমি বরং যাই। ভাই একটু বেরিয়েছেন। তাড়াতাড়িই চলে আসবেন। আপনি অপেক্ষা করুন।

বৃষ্টি শুধু মাথা নাড়াল। বৃষ্টি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল সাড়ে এগারোটা বাজে। বৃষ্টির খুব অস্বস্তি হতে লাগল।

ঘড়িতে সাড়ে বারোটা বাজতে গেছে। বৃষ্টি এখনো বসে আছে। তার দুই চোখ ঘুমে ভর্তি। তখনই কেউ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here