অবেলায় তোমার আকাশে পর্ব -০৬

#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_৬
#লেখিকা_N_K_Orni

— এই মেয়ে তুমি কে? আর আমার রুমেই বা কি করছো?

ছেলেটার মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে ওঠে। বৃষ্টি আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা আবার বলতে শুরু করে,

— আম্মু! আম্মু! আয়ু! তোমরা কই? তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসো।

ছেলেটার কথা শুনে বৃষ্টি মনে মনে বলে উঠল,

— আম্মু! আয়ু! তারমানে এটা ফুফির ছেলে। উফফ ভুল করে কার রুমে চলে এসেছি? নাহ এখান থেকে পালাতে হচ্ছে তো।

মিসেস রায়া আর আয়না ছেলেটার চিৎকারে রুমে ছুটে আসে। বৃষ্টি রুম থেকে বের হতেই যাচ্ছিল তখনই তারা এখানে চলে আসে। মিসেস রায়া বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— তুই এখানে কি করছিস মা?

আয়না অবাক হয়ে বলে ওঠে,

— আপু তুমি এই রুমে কি করছো?

বৃষ্টি এবার আমতা আমতা করে বলে ওঠে,

— আসলে আমার জামার চেনের সাথে চুল পেচিয়ে গেছে। আমি কিছুতেই ঠিক করতে পারছিলাম না। তাই ভাবলাম আয়নার কাছে যাই। আর আয়নাকে খুঁজতে খুঁজতে ভুল করে এই রুমে চলে এসেছি।

আয়না বলে ওঠে,

— ওহহ তাহলে এই ব্যাপার।

ছেলেটা এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের কথোপকথন শুনছিল। সে এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল,

— আম্মু এই মেয়েটা কে? আর আমাদের বাড়িতেই বা কি করছে?

মিসেস রায়া এবার বলে উঠল,

— এটা বৃষ্টি। তোর মামাতো বোন। তুই চিনতে পারছিস না অভ্র? অবশ্য চিনবিই বা কি করে? সেই ছোটবেলায় ওকে দেখেছিস।

বৃষ্টির এবার মনে মনে বলে উঠল,

— ওহহ তাহলে এর নাম অভ্র।

মিসেস রায়ার কথা শুনে অভ্র অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কিইইই? এটা বৃষ্টি? অসম্ভব। ও এখানে কি করছে? বৃষ্টির তো আজকে বিয়ে ছিল।

মিসেস রায়া এবার বলে উঠলেন,

— আমি তোকে পরে সবটা বলব। শুধু এটুকু জেনে রাখ যে ওর বিয়েটা হয়নি।

বিয়ের কথা শুনে বৃষ্টির কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেল। আয়নাকে ওর মা গতকাল রাতেই সবটা বলেছিল। আর বৃষ্টি যে এখানে আসবে সেটাও বলেছিল। তাই আয়না বৃষ্টির বিষয়টা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

— আপু চলো তোমার রুমে যাই। তোমার না চুল চেনের সাথে পেঁচিয়ে গেছে। ঠিক করতে হবে তো। চলো চলো।

— হুম।

আয়না এবার বৃষ্টিকে ওর রুমে নিয়ে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই অভ্র মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

— এবার বলো তো কাহিনী কি? বৃষ্টির না বিয়ে ছিল আজকে? তা ভেঙে গেল কিভাবে? আমি যতদুর জানি বিয়েটা বৃষ্টির পছন্দেই হচ্ছিল। তাহলে এভাবে হঠাৎ করে ভেঙে গেল কেন?

মিসেস রায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসলেন। তারপর বলে উঠলেন,

— সবই দুর্ভাগ্য। মেয়েটার জীবনে একটা না একটা ঝামেলা লেগেই আছে।

— কি হয়েছে খুলে বলতে তো?

— আচ্ছা তাহলে শোন।

মিসেস রায়া এবার উনি বৃষ্টির বাড়িতে যাওয়ার পর যা যা ঘটেছে সবটা খুলে বললেন। সবটা শুনে অভ্র রাগে বলে উঠল,

— আমি তোমাকে বলেছিলাম না ওই মহিলা একদমই ভালো না। মামি যাওয়ার পর থেকে বৃষ্টি এমনিতেই অসুস্থ ছিল। আর সুস্থ হতে না হতেই মামা ওই বাজে মহিলাকে বিয়ে করে নিয়ে এলেন। ওই মহিলাকে আমার প্রথম থেকেই অসহ্য লাগত। আর ওনার মেয়েকে তো আরও বেশি। যার কারণে আমি ওই বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আর আজ ওদের জন্যই বৃষ্টি কষ্ট পাচ্ছে।

— আচ্ছা আমি একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছি না মামা এতোকিছুর পরেও চুপ করে আছে কি করে? ওদের বের করে দেয় না কেন? মামার উচিত ওদের বাড়ি থেকেই বের করে দেওয়া। আমার তো মনে হয় ওরা দুজন মিলেই কোনো ঝামেলা করিয়েছে।

মিসেস রায়া বলে উঠলেন,

— আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু সঠিক প্রমাণের অভাব। যাইহোক, অনেকক্ষণ এই অবস্থায় আছিস। জামাকাপড় পরে খেতে আয়।

— আচ্ছা।

মিসেস রায়া এবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

————–

এদিকে আয়না বৃষ্টিকে নিয়ে তার রুমে গেল। তারপর বৃষ্টির জামার চেন থেকে খুব সাবধানে চুল ছাড়িয়ে নিল। এতোকিছুর মাঝে আয়না এতোক্ষণ বৃষ্টির চুল ভালো করে খেয়াল করেনি। এবার সে ভালো করে দেখে বলে উঠল,

— মাশাল্লাহ্ আপু তোমার চুল কতো সুন্দর! আর অনেক বড়োও।

আয়নার কথায় বৃষ্টি মিষ্টি হেসে বলে উঠল,

— কেন তোমার চুল বুঝি সুন্দর নয়?

— হুম মোটামুটি সুন্দর। কিন্তু তোমার মতো এতো সুন্দর না। আর এতো বড়োও না। আমার বড়ো চুল ভালো লাগে।

— তাহলে তুমিও বড়ো করো।

বৃষ্টির কথা শুনে আয়না মুখ ফুলিয়ে বলল,

— সম্ভব না। ওতো বড়ো চুলের যত্ন কে নিবে? আর আঁচড়াতে তো অনেক সময় লাগবে।

আয়নার কথা শুনে বৃষ্টি হাসতে হাসতে বলে উঠল,

— দুটো কথাই তো তুমিই বললে। বড়ো চুল ভালো লাগে। আবার যত্ন করতে চাও না। তাহলে কিভাবে হয়?

— এজন্যই তো ছোট চুল ঠিকাছে।

তখনই মিসেস রায়া রুমে এসে উপস্থিত হলেন। আর আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

— আয়না তোমাদের কাজ শেষ হলে বৃষ্টি আপু নিয়ে খেতে এসো।

আয়না মাথা নাড়িয়ে বলল,

— আচ্ছা।

— তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু।

বলেই মিসেস রায়া চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আয়না বৃষ্টিকে নিয়ে ডাইনিং রুমে যায়। বৃষ্টি গিয়ে দেখে ওর ফুফা রায়হান সাহেব বসে ওদের জন্য অপেক্ষা করছেন। ওরা যেতেই মিসেস রায়া একটা চেয়ার টেনে বৃষ্টিকে বসতে বললেন। বৃষ্টিও বসল। আয়না বৃষ্টির বিপরীতে বসল। রায়হান সাহেব বলে উঠলেন,

— অভ্র কই?

মিসেস রায়া কিছু বলতে যাবেন তার আগেই দরজার দিকে চোখ গেল। তিনি ওই দিকে ইশারা করে বললেন,

— ওই তো অভ্র আসছে।

অভ্র এসে বৃষ্টির পাশে চেয়ার টেনে বসল। মিসেস রায়া সবাইকে খাবার সার্ভ করতে লাগলেন। বৃষ্টি মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— ফুফি তুমিও বসে পড়ো আমাদের সাথে।

বৃষ্টির কথা শুনে রায়হান সাহেব বলে উঠলেন,

— বৃষ্টি মামনি তো ঠিকই বলছে। রায়া তুমিও আমাদের সাথে বসে পড়ো।

— না না। তোমরা খেয়ে নেও আমি পরে খাব।

— আচ্ছা।

সবাই খেতে শুরু করল। খাওয়ার মাঝে রায়হান সাহেব অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— অভ্র কালকে তোমার কলেজ আছে?

— হ্যাঁ বাবা আছে তো।

— তাহলে কালকে তুমি যাওয়ার সময় বৃষ্টিকে সাথে করে নিয়ে যাবে। বৃষ্টিকে ওই কলেজেই ভর্তি করে দিবে।

— আচ্ছা। বৃষ্টিরও কি এই কাটাকাটি শখ?

অভ্রর কথা শুনে বৃষ্টি বাদে ওখানে থাকা সবাই হেসে দিল। বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কাটাকাটা মানে?

আয়না হাসতে হাসতে বলে উঠল,

— আরে আপু বুঝতে পারছ না।

অভ্র এবার পাশ থেকে বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠল,

— এতে এতো হাসার কি আছে? সারাদিন খালি একে কাটো ওকে কাটো? সারাদিন খালি সার্জারি। বিরক্তি ধরে গেল। আগে জানলে ডাক্তারিই পড়তাম না।

পাশ থেকে আয়না বলে উঠল,

— এতোই যখন সার্জারিতে সমস্যা তাহলে সার্জেন্ট হয়েছিস কেন? তুই তার থেকে পাগলের ডাক্তার হতিস তাহলে আর এতো সার্জারি করতে হতো না।

বলেই আয়না আবার হাসতে লাগল। ওদের কথা শুনে বৃষ্টি ঠোঁট চেপে হাসতে লাগল। খাওয়া শেষে অভ্র যখন চলে যেতে যাবে তখন রায়হান সাহেব আবার বলে উঠলেন,

— তাহলে অভ্র মনে থাকে যেন। কালকে কিন্তু বৃষ্টিকে সাথে করে নিয়ে যাবে।

— আচ্ছা।

বলেই অভ্র তার রুমে চলে গেল। খাওয়া শেষ করে বৃষ্টিও তার রুমে চলে এলো। রুমে এসে বৃষ্টি গিয়ে আয়নার ( বৃষ্টির মামাতো বোন আয়না না, চেহারা দেখার আয়না ) সামনে দাঁড়াল। তারপর গলায় হাত দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here