অবেলায় তোমার দেখা পর্ব ১

ভার্সিটির টিচারকে নিজের হাজবেন্ট হিসেবে মানবেনা বলে মিথ্যে অঙ্গান হওয়ার নাটক করে আয়াত।
আয়াতকে এভাবে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে দেখে অবাক হয় আদ্র।তবুও সে তাকে ধরেনা।
আয়াত পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায়,তার তখনই চোখ খুলে উঠে বসে সবার দিকে তাকিয়ে বলে

” দেখলে তোমরা,উনি আমাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখেও ধরলেন না।উনি কীভাবে আমাকে সারাজীবন ভালোরাখবে।”

আয়াতের কথায় কেউ পাত্তা দিল না।আদ্র আয়াতের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল

” আয়াত ম্যাথ নিয়ে পড়ে জানি,তবে তার যে অভিনেত্রী হওয়ার শখও আছে তা তো জানাননি আংকেল।”

আয়াতের বাবা আয়াতের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদ্রকে বলল

” আসলে বাবা আমার মেয়েটা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছে।ওর সব কাজই এমন উল্টোপাল্টা। তাই তো তোমার মতো একজনের হাতে ওকে তুলে দিচ্ছি।”

আদ্র আর কোনো কথা না বলে আয়াতের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়।আদ্রর এই হাসির পিছনে যে ভয়ানক কিছু আছে তা বুঝে শুকনো ঢোক গিলে আয়াত।

” আয়াত আমার রুমে এসো. ”

কথাটা বলে আয়াতের বাবাও সেখান থেকে চলে যায়।আয়াতও ভয়ে ভয়ে ওর বাবার পিছনে চলে যায়।

———-

বাবার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত।শান্তস্বরে সে তার বাবাকে বলল

” আমি আদ্র স্যারকে বিয়ে করতে পারবোনা বাবা।”

” এটা কেমন কথা আয়াত মা।তুমি তো নিজে এই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছিলে।তাহলে,,, ”

” আমি কী তখন জানতাম নাকি যে তোমার বন্ধুর ছেলে আদ্র স্যার।আমি যদি আদ্র স্যারকে বিয়ে করি তো সবাই ব্যাপারটা কীভাবে নিবে বলোতো।”

” প্রবলেম কী।আজকাল তো এমন অনেক হয়।আর আদ্র আর তোমার বিয়েটা আমরা অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি।তোমার বিয়ে আদ্রর সাথেই হবে।
আর হ্যাঁ,কাল আদ্রর বাড়ির লোকজন তোমাকে দেখতে আসবে। ওদের সামনে যেনো কোনো উল্টোপাল্টা কাজ না করতে দেখি।”

আয়াত বিরক্ত হয়ে রুমে চলে এলো।শেষে কিনা ঐ গোমরামুখো স্যারটাই তার কপালে জুটল।

__________

অন্যদিকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বোনের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছিল আদ্র।আর প্রায়ই মুচকি মুচকি হাসছিল। আদ্রকে এভাবে হাসতে দেখে আদ্রর বোন আয়রা বলে

” কী ব্যাপার ভাইয়া।তুমি এমন মুচকি মুচকি হাসছো কেন?”

আদ্রদ আবারও মুচকি হেসে আয়রাকে আয়াতের করা সকল কান্ডের কথা বলে দেয়।আয়রা আদ্রকে বলে

” এটা কিন্তু তুমি মোটেও ঠিক করোনি।আয়রা আপু ব্যাথা পেল না।”

” বাহ রে,,,আর এই পিচ্চিটা যে আমাকে এতবার দূরে ঠেলে কষ্ট দিচ্ছে।”

—————

রাতে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে আয়াত।ঘুম আসছে না।সকাল হলেই ভার্সিটি গিয়ে আবার আদ্রর মুখোমুখি হতে হবে ভেবেই রাগ হচ্ছে তার।
অন্যদিকে আরেকটা চিন্তা মাথায় ঘুরছে আয়াতের।অনেকদিন ধরেই ভার্সিটিতে একটা আগন্তুক ছেলে খুব বিরক্ত করছে তাকে।কিন্তু ছেলেটা কে তা বুঝে উঠতে পারছেনা আয়াত।

বেশকিছুক্ষণ এসব সাত পাঁচ ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল আয়াত।

,,,,

হঠাৎই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় আয়াতের।এমনটা প্রায়ই হয়।ওর মনে হয় কেউ খুব কাছ থেকে দৃঢ় ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করে।কিন্তু প্রতিবারের মতো আজও চোখখুললে কোনো কিছুই দৃশ্যমান হলোনা আয়াতের সামনে।

______________

পরদিন ভার্সিটিতে এসে বারবার যেন আয়াতের চোখ দুটো আদ্রকে খুঁজছে। কিন্তু আয়াত আদ্রকে না দেখতে পেয়ে একটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল।লোকটা না আসলেই ভালো।

নিজের ক্লাসরুমের দিকে যাচ্ছিলো আয়াত।তখনই পেছন থেকে কেউ আয়াতকে টেনে একটা ফাঁকা রুমে নিয়ে যায়।ভীষণ ভয় পেয়ে যায় আয়াত।রুমটা বেশ অন্ধকার। সামনে থাকা লোকটাকে দেখতে না পেলেও তার নিঃশ্বাসের শব্দ বেশ উপলব্ধি করতে পারছে আয়াত।

লোকটা আয়াতের খুব কাছে এসে বলল

” শুনলাম নাকি বিয়ে করছ।তবে একটা কথা জেনে রেখো তুমি যদি আমার না হও।আমি তোমাকে অন্যকারোও হতে দিবোনা।”

কথাগুলো বলেই মুহূর্তেই লোকটি সেখান থেকে চলে যায়।আয়াত রুম থেকে বের হয়ে আসলে আদ্রর মুখোমুখি হয়।আদ্রর চোখগুলো বেশ লাল হয়ে আছে।আদ্র আয়াতের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বলল

” এখানে কী করছিলে আয়াত।”

আয়াত চুপ কর। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়।আদ্র বেশ রেগে গিয়ে বলল

” আনসার মি, আয়াত।ছেলেটা কে ছিল।”

আয়াত বেশ ভয় পেয়ে যায় আদ্রর এমন চিৎকারে।ও কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে।আদ্ররও বেশ আপসোস হয়,হয়ত একটু বেশি রুড বিহেব করে ফেলেছে সে।

________

বিকেলে শুয়ে শুয়ে আয়াত বারবার ঐ আগন্তুকের কথা ভাবছিল।আয়াতের লোকটার ভাবভঙ্গি খুব চেনা পরিচিত লাগলেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলনা।আয়াতের এসব গভীর চিন্তার মাঝেই তার ফোনটা বেজে উঠল।আদ্রর কল।ধরবে কিনা ভাবছিল আয়াত। তবুও বেশ ভয়ে ভয়ে ফোনটা ধরল আয়াত।

ওপাশ থেকে আদ্র বেশ শান্ত গলায় বলল

” সরি।”

” সরি!” কিসের জন্য।

আয়াতের এমন পাল্টা প্রশ্নে কিছুটা সময় নিয়ে আদ্র বলে

” সকালের বিভেবটার জ্ন্য।আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি।”

” হুম”

আয়াতের হুম বলায় ফোনটা কেটে দেয় আদ্র।
আয়াত বেশ অবাক হয়।অনেকদিন ধরেই তো সে আদ্রকে দেখছে।ওকে বরাবরই শান্ত মেজাজের মনে হয়েছে।আজ হঠাৎ করে এমন রেগে গেলো।এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাল না আয়াত।আজ সন্ধ্যায় আদ্রর বাড়ির লোকেরা আয়াতকে দেখতে আসবে।আয়াত জানে যে তাকে এই বিয়েটা করতেই হবে।তাই বিয়ে ভাঙার চিন্তা আর মাথায় আনেনা সে। তবুও বেশ ভয়ে আছে সে।

——-

সন্ধ্যায় আদ্রর বাড়ির লোকদের সামনে গিয়ে রীতিমতো কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে আয়াতের।আয়াতের এমন অবস্থা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে আদ্রর।

আয়াতের এমন অবস্থা দেখে আয়রা বলল

” ওমা, আপু তুমি এমন ভয় পাচ্ছো কেন? আমাদের কী বাঘ ভাল্লুক মনে হচ্ছে নাকি।”

আয়রার কথায় আয়াত নিজের কাজে বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।নিজেকে কন্ট্রোল করার দৃঢ় প্রচেষ্টা চালাতে লাগলো।

আদ্রর বাড়ির লোক আয়াতকে অল্পকিছু প্রশ্ন করলে আয়াত বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিলো।সবার আয়াতকল বেশ মনে ধরল।

আদ্রদের বাড়ির লোকরা চলে যেতে আয়াত রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল।এতক্ষণ যে তার ভেতরে কে চলছিল তা বলে বোঝানো যাবেনা।আয়াত মাত্রই চোখটা বন্ধ করছে তখনই তার ফোনে একটা মেসেও আসে।
আয়াত চোখখুলে ফোনটা হাতে নেই।আননোন একটা নম্বরের মেসেজ।

” মায়াময় মুখটাকে এমন পেঁচার মতো করে রেখোনা মায়াবতী।”

মেসেজটা দেখে কিঞ্চিত অবাক হয় আয়াত।কে দিলো এটা।আদ্র নাকি সে আগন্তুক।

__________

সকালের সোনালি আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় আয়াতের।আজকের সকাল টা একটু বেশি সুন্দর লাগছে তার।
আয়াত ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তার ফোন বাজছে।আদ্রর কল দেখে আয়াত জলদি রিসিভ করে।

” আজকে ভার্সিটি এসে আমার সাথে আগে দেখা করবে।”

ছোট্ট কথাটি বলেই আদ্র ফোন কেটে দেয়।অবাক হয় আয়াত।বেশ ভয়ও পেয়ে যায়।আদ্র হঠাৎ এভাবে দেখা করতে বলল কেন!

———-

ভার্সিটিতে এসে আয়াত প্রথমেই আদ্রর সাথে দেখা করতে যায়।আদ্র আয়াতের হাতে একটা ছোট বক্স দিয়ে বলে

” এটা বাসায় দিয়ে খুলবে।তার আগে না।”

আয়াত উল্টে কিছু জিঙ্গেস করার আগেই আদ্র চলে যায়।আয়াত হাবার মতো বক্সটা নিয়ে আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়।

আয়াত বক্সটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ক্লাসে চলে যায়।

________

আদ্র আয়াতের বিয়ের তোড়জোড় বেশ ভালোমতোই চলছে।আদ্র যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা করে নিতে চাই।দুই পরিবারেরও কোনো আপত্তি নেই।তাই আয়াতও আর না করেনি।

আজকে আয়াতকে নিয়ে আদ্র শপিংয়ে এসেছে।আয়াতের বেশ অস্বস্তি হলেও কিছু না বলে আদ্রর সাথে ঘুরছে।আদ্র একের পর এক নিজের পছন্দরে জিনিস কিনছে আয়াতে জন্য।

শপিং শেষে আদ্র আয়াতকে নিয়ে একজনের সাথে দেখা করাতে যায়।সামনে কোনো মেয়েকে দেখে বেশ অবাক হয় আয়াত।মেয়েটা হয়ত আদ্রর ফ্রেন্ড হবে।

মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর।তবে চেহারায় কোথাও একটা মলিনতার ছাপ।বেশ কিছু ক্ষণ মেয়েটার সাথে কথা হলো আয়াতের।

আয়াতকে বাসায় রেখে যাওয়ার সময় আদ্র বলে, ,

চলবে

#অবেলায়_তোমার_দেখা
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here