অবেলায় তোমার দেখা পর্ব ২ ও শেষ

#অবেলায়_তোমার_দেখা
পর্ব-০২
লেখিকা-#খেয়া

তোমাকে যার সাথে আলাপ করালাম ওর নাম রাহা।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।পরিববারের বিপক্ষে গিয়ে বিয়ে করেছিল।বিয়ের চারমাসের মাথায় একটা এক্সিডেন্টে ছেলেটা মারা যায়।রাহার কাছে সুযোগ ছিল জীবনটা নতুন করে শুরু করার।ও করেনি।”

আয়াতের মনটা খারাপ হয়ে যায়।আয়াত বিষন্ন মনে আদ্রকে জিঙ্গেস করে

“ভালোবাসায় বিচ্ছেকদ কেন হয় বলুনতো।”

আদ্র মুচকি হাসে আয়াতে কথায়।কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রাইভিং য়ে মন দেয়।খানিকক্ষণ পর বলে

” যে ভালোবাসায় বিচ্ছেদ হয়,তাই যে ওমর হয়ে রয়।যেসব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় সেগুলো ক’জন মনে রাখো বলো।আর যেসব ভালোবাসায় বিচ্ছেদ হয় তা মানুষের মনে একটা দাগ কেটে যায়।”

” ভালোবাসায় বিচ্ছেদ হওয়াটা কী খুব জরুরি।”

” হয়তো বা।”

আয়াত যেন খুব ভালোমতো আদ্রর কথাগুলো উপলব্ধি করছে।লোকটা বরাবরই খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলে।আদ্রর এই কথার প্রেমে যে আয়াত অনেক আগেই পড়েছে।

আদ্র আয়াতকে বাসায় রেখে চলে যায়।

_________

আদ্র আয়াতের বিয়ের বেশি দিন বাকি নেই।আর মাত্র তিনটে দিন।এখন সাধারণভাবে কাবিন করে রাখবে বলে ঠিক করা হয়েছে।

একদিনে আয়াতের মনে আদ্রর জন্য অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে।প্রথমে বিয়েটা নিয়ে আয়াত খুশি না থাকলেও এখন বেশ খুশি।

****

ভার্সিটি শেষে আদ্রর জন্য দাঁড়িয়ে আছে আয়াত।আদ্র আজ তাকে বাসায় দিয়ে আসবে বলেছে।

ভাপসা গরম।তার ওপর প্রচন্ড রোদ।বেশ বিরক্ত লাগছে আয়াতের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে।মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে বেশ খানিকক্ষণ পর আদ্র এলো।আয়াত এবার যেনো একটা শান্তি পেল।দ্রুত গিয়ে গাড়িতে বসল।আর কিছুক্ষণ রোদে দাঁড়ালে যেনো মাথাটাই ফেটে যেতে।

আয়াতকে এমন দেখে আদ্র বলল

” কী ব্যাপার।এমন লাল হয়ে আছো কেন?”

আয়াত এবার আদ্রর দিকে চোখগরম করে তাকিয়ে বলল

” সেই কখন থেকে রোদে দাঁড়িয়েছিলাম।আপনার কী কমনসেন্স নাই।কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

” আরে বাবা,সরি তো।একটু কাজ ছিল।তাই লেট হয়ে গেছে।”

আদ্র পানির বোতলটা আয়াতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল

” চোখেমুখপ একটু পানি ছিটিয়প নাও।ভালোলাগবে।”

আয়াত কিছু না বলে চুপচাপ বোতলটা নিয়ে নিলো।আদ্রও ড্রাইভিংয়ে মন দিলো।

_______

দেখতে দেখতে কেটে গেছে দুটো দিন।আজ আদ্র আয়াতের বিয়ে।সকাল থেকে বেশ এক্সাইটেড আয়াত।বাসা ভর্তি লোকজন।তাই নিজের এক্সাইটমেন্টটাকে নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছে সে।

সবটা বেশ ঘরোয়া ভাবে হচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে বিয়ে পড়ানে হবে।সকাল থেকে অনেকবার আদ্র ভিডিও কল দিয়েছে।আয়াত এত মানুষ দেখে কলটা আর ধরেনি।তবে বিকেলের দিকে সে আদ্রর কলটা ধরল।তবে ভিডিও কল না।

” কী ব্যাপার।আজ বাদের কাল যে তোমার সব হবে তার ফোনটাও ধরছ না যে।”

আয়াত একটু হেসে বলল

” কীভাবে ধরি বলেন।আশেপাশে এত লোক। সবাই কী ভাববে। ”

আয়াতের কথায় আদ্র বেশ খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল

” এখন একটু তোমার মুখটা দেখা দরকার ছিল।নিশ্চয় লজ্জায় একদম চেরির মতো লাল হয়ে গেছে।”

খিলখিলিয়ে হাসে আয়াত।বলে

” আপনাকে এখন দেখতে হবেনা।একটু পর তো এমনি দেখতে পাবেন।মা ডাকছে,ফোনটা রাখুন।”

———-

সন্ধ্যাবাতির আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক।বিয়ের আনন্দই মেতে আছে সবাই।খুব সাধারণ ভাবেই আদ্র আয়াতের বিয়ে সম্পন্ন হলো।

আয়াতের মুখে এক টুকরো মিষ্টি হাসি লেগে আছে।পবিত্রতার হাসি।

বিয়ে পড়ানো শেষে আয়াতকে আদ্রদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।আয়াত প্রথমে বেশ ভয়ে থাকলেও পরে আর অসুবিধা হয়নি।আদ্রদের বাড়ির সবাই বেশ ভালো। সবাই আয়াতকে আপন করে নিয়েছে।বিশেষ করে আদ্রর বোন আয়রা।

এখন প্রায় মাঝরাত।সবকিছু সেরে উঠতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে।বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আদ্র আয়াত।আদ্রর খুব ইচ্ছে জীবনের এই স্পেশাল দিনটা তার প্রিয়জনের সাথে গল্প করে কাটাবে।

চারিদিকে সুন্দর হাওয়া বইছে।আয়াতের মুখে এক চিলতে মুচকি হাসি।চাঁদের আলো পড়ে মুখটা চকচক করছে।

আদ্র বেশ খানিকক্ষণ আয়াতকে পর্যবেক্ষণ করে বলে

” সেই আগন্তুকের কথা ভাবছো নাকি।”

আয়াত বিচলিত হয়।ভ্রু কুঁচকে আদ্রর দিকে তাকায়।একদিনে সেই আগন্তুকের কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল।আয়াতকে এমন চুপ থাকতে দেখে আদ্র বলে

” আগন্তুকের ভাবনায় এতটাই ডুবে গেলে।”

” আমি সত্যি উনাকে চিনিনা।”

আয়াতের চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে আলতো হাসে আদ্র।

” সেই আগন্তুক কে তো তুমি খুব ভালো মতোই চিনো।সে যে বর্তমানে তোমার সামনে প্রতীয়মান।”

অবাক হয়না আয়াত।সে এমন একটা কিছুই আশা করেছিল।
আয়াত একটু গাল ফুলিয়ে আদ্রর দিকে না তাকিয়েই বলল

” আমাকে এভাবে জ্বালানোর মানে কী। জানেন এর টেনশনে আমার রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল।”

আয়াতের কথায় মুচকি হাসে আদ্র।আয়াতের দিকে কিছুটা ঝুকে গিয়ে ওর কানেকানে বলে

” আর তুমি যে আমার হাজার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলে তার কী! ”

আয়াত উল্টে আদ্রকে বলে

” আপনি লোকটা তো আসলেই ভালো না দেখছি।এতো প্রতিশোধ নেওয়া হলো।”

” তবুও কী এই খারাপ লোকটাকে তুমি ভালোবাসো।”

আদ্রর এই কথায় আয়াতের ভেতরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।আদ্রর দিক থেকে চোখটা নামিয়ে নিলো।

” আপনাকে হয়ত ভালোবাসি।হয়ত বড্ড বেশি ভালোবাসি।এত অল্প সময়ে কারো প্রতি এত দৃঢ় অনুভূতি জন্মানোটা বিশ্বাস যোগ্য কিনা আমি জানিনা।তবে আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

” দেখো আয়াত, ভালোবাসাটা মন থেকে আসে।এখানে সময় অসময় ব্যাপার না।আর আমার মনে তুমি সর্বদাই বিরাজমান।”

আয়াত আলতে হেসে আদ্রর বুকে মাথা রেখে বলে

” আমার মনে কী আমার একটুকু ঠাঁই হবে, মাস্টার মশাই।”

দুজনের হাসি মজাই রাতটা কেটে গেলো।

___________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে যায় আয়াতের।আয়াত বেশ ঘাবড়ে যায় না জানি সবাই কী ভাবছে।একেই নতুন জায়গা তার ওপর সারারাত জাগার কারণে ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়।আয়াত গুটিশুটি পায়ে বাইরে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়।আয়াতকে দেখে আয়রা এগিয়ে আসে।

আয়াতকে ভুল প্রমাণ করে সবাই ওকে আপন করে নেয় খুব অল্প সময়েই।
এত কম সময়েই আয়রার সাথে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার।একদম নিজের বোনের মতো লাগে তার আয়রাকে।

আদ্র আয়াতের বিয়ের প্রায় সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেছে।ভার্সিটিতে আদ্রর কিছু কলিগ ছাড়া ওদের বিয়ের ব্যাপারটা তেমন কেউ জানেনা।আয়াত তার ক্লোজ কিছু ফ্রেন্ডকে জানালেও ভার্সিটিতে গিয়ে আদ্রর থেকে দূরে থাকারই চেষ্টা করে আয়াত।

ক্লাস ফাঁকা থাকায় লাইব্রেরিতে গিয়ে বসে ছিল আয়াত।মন মতো একটা বই খু্জছিল সে।কিন্তু মন মতো পাচ্ছিল না কিছুই।অবশেষে মন মতো একটা বই পেল সে।বইটা সে নিতে গেলে তার আগেই কেউ বইটা তুলে নিলো।সামনে আদ্রকে দেখে কিছুটা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো আয়াতের।

” বইটা দিন।”

” প্রবলেম কী তোমার?”

আদ্রর এমন খাপছাড়া প্রশ্নের উত্তরে আয়াত বলল

” আমার কী প্রবলেম হবে।”

” আজকাল ভার্সিটিতে এলে দেখি আমাকে চিনতেই পারোনা।নতুন করে প্রেম করার শখ জেগেছে নাকি।”

আদ্রর এমন কথায় ফিক করে হেসে দেয় আয়াত।
আয়াতকে হাসতে দেখে আদ্র বলে

“আজকেই পুরো ভার্সিটিতে জানিয়ে দিবো যে তুমি বিবাহিত।তার পর দেখি তোমার বিএখ জুটে কেমনে!”

আয়াত অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলল

” আপনি তো মশাই ভারি হিংসুটে।নাহয় একটা প্রেমই করতে চেয়েছি।তাতেই এমন করবেন।”

আদ্র এবার আয়াতের কোনো কথার উত্তর না দিয়েই চলে যায়।আয়াতের বেশ লাগে আদ্রকে এভাবে রাগাতে।রাগলে আদ্রর নাকটা একদম লাল হয়প যায়।আয়াতের খুব ইচ্ছে করে সেখানে একটা কামড় বসিয়ে দিতে।কিন্তু তা আর কী হবে?

________

আদ্র আয়াত ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে বেশ বৃষ্টি শুরু হলো।আয়াতের খুব শখ হলো বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাতে।আয়াত গাড়ির জানালা খুলে হাত ভেজাতে লাগলো।আদ্র একপলক আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল

” জানোতো আয়াত,এমনই কোনো এক দিন অবেলায় তোমাকে দেখেছিলাম।তোমার সেই অবেলার দেখাতেই যে আমার সর্বনাশ নিহিত ছিল।তোমার সেই মিষ্টি চাহনি যে আমার হাজার রাতের ঘুম কেড়েছিল।কেন বলোতো সেদিন অবেলায় তোমার দেখা পেয়েছিলাম।সেদিন থেকে যে আমার পুরো দুনিয়া ওলোটপালট হয়ে গেছে।
ভালোবাসি আয়াত, ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।”

আলতো হাসে আয়াত।আদ্রর বলা শেষোক্ত কথাটির মূল্য তার জানা আছে।মনে মনে ভাবে,ভাগ্যিস সেদিন অবেলায় আদ্রকে দেখা হয়েছিল।নয়ত এমন একজন প্রেমিক পুরুষ কোথায় পেতো সে।
আদ্রর দিকে নিস্প্রভ চোখে একপলক তাকিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখায় মন দিলো।পাশে ভালোবাসার মানুষ থাকলে যে সব সুন্দর লাগে।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here