#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৫
সাতটা বেজে গেছে। চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে সূর্য ডুবে গেছে কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। সারা আকাশ জুড়ে প্রচন্ড মেঘ করেছে। মনে হচ্ছে যে কোন সময়ে ঝড় উঠবে। ইমরান ঘরের বেলকুনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ফোটা ফোটা বৃষ্টি নামতে লাগলো।
হঠ্যাৎ বাহিরে গুড় গুড় করে মেঘ ডেকে উঠলো।
এতক্ষণ বাতাস বন্ধ ছিলো। এখন হালকা বাতাস ও হচ্ছে। শীত শীত ভাব লাগছে।
ইমরান ঘড়ির দিকে তাকালো। ৭.৩০ বেজে।
ইমরান ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকালো। বুয়া টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছে।
ইমরান টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,,
-“আপনি এখনো যাননি??
-“এই তো ভাইজান মুই এহনি যাইতাম। কিন্তু আপামনি তো কিছু খায়নি তাই একটু নাস্তা বানাইয়া রাইখা যাইতে চাইছিলাম।
-“আচ্ছা ঠিকাছে। তুমি চলে যাও। আমি রিপাকে উঠিয়ে খাইয়ে দিবো।
-“আচ্ছা ভাইজান মুই তাইলে এহন জাই। কাল সকালে আবার আমু।
-“ওকে।
রিপার রুমে গিয়ে দেখে সে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে একপাশে বসে আছে। মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে। শরীরটা ও কাঁপছে।
ইমরান রিপার কাছে এগিয়ে গিয়ে খুব স্নেহ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,,কী গো তুমি কী ভয় পেয়েছো নাকি??
-“রিপা করুণ দৃষ্টিতে একবার ইতিবাচক মাথা বাঁকালো।
-“কোন ভয় নেই জান,,,আমি তো আছি।
রিপা এসো বুয়া নাস্তা তৈরি করে রেখে গেছে।
-“আমার ক্ষিদে নেই ইমরান।
-“ক্ষিদে নেই বললেই হলো নাকি??
ইমরান রিপার কপালে হাত দিয়ে ধরে বললো,,গায়ে এখন জ্বর নেই। কালকে যদি জ্বরটা আবার ও উঠে তাহলে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।
রিপাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গেলো ইমারান।
বুয়া রিপার জন্য স্যুুপ বানিয়ে গেছে আর নুডলস।
ইমরান রিপাকে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে পাশের চেয়ার টেনে নিজে বসলো। বাটিতে করে স্যুপ নিয়ে চামচ দিয়ে রিপাকে খাইয়ে দিচ্ছে। কয়েক চামচ খাওয়ার পরে রিপা খেতে অনিহা প্রকাশ করলে রেগে যায় ইমরান।
-“রিপা খাবো না কথাটা একদম বলবেনা। খেতে তো তোমাকে হবেই। তুমি না খেলে শরীরটা আরো উইক হয়ে যাবে। খাওয়া শেষ করে রিপার মুখ মুছিয়ে দিয়ে তারপর সোফার উপরে বসিয়ে দিলো।
-“রিপা তুমি শুয়ে শুয়ে টিভি দেখো। আর আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। সারাদিন তো শুয়ে ছিলে। মানুষের তো একটু বিনোদনের ও দরকার আছে।
এদিকে বাহিরে ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে বাতাস ঢুকছে। জানালার পাল্লা ঠাস্ ঠাস্ করে বাড়ি খাচ্ছে। ইমরান তাড়াতাড়ি জানালা গুলো ঠিক করে লাগালো।
প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গেলো তবুও ঝড়ের কোন কমতি নেই।
কিছুক্ষণ পরে কারেন্ট ও চলে গেলো।
সাথে সাথে রিপা ইমরানকে জড়িয়ে ধরে।
ইমরান ও রিপাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
-“ভয় নেই আমি তো আছি।
রিপাকে কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানার উপরে শুইয়ে দিলো।
বাহিরের ঝড়ের শব্দটা আরো বেশি মনে হচ্ছে। শুধু শো শো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর বিদুৎ চমকাচ্ছে।।
ইমরান রিপাকে রেখে উঠতে নিলে রিপা হাতটা টেনে ধরে বললো,,,কোথায় যাচ্ছো??
আমার কাছে থাকো। আমার ভীষণ ভয় করছে।
-“পাগলী আমি যাচ্ছিনা। আমি চাদর বের করতে যাচ্ছি। আমার ও শীত করছে খুব।
ইমরান চাদর বের করে বিছানার উপরে বসলো। তারপর গায়ে চাদর দিয়ে শুয়ে পড়লো রিপাও খুব জড়সড় হয়ে ইমরানের পাশে শুয়ে পরলো।
কিন্তু শীতে জড়সড় হয়ে পা গোছাতে গোছাতে রিপা যেনো ফুটবলের মতো গোল হয়ে গেলো। কাঁথার ভিতরে রিপা বারবার নরাচড়া করছে দেখে নিজের গায়ের চাদরটা খুলে রিপার গায়ে জড়িয়ে দিলো।
ইমরান খুব মায়াময় কন্ঠে জিজ্ঞাস করলো,,,রিপা! তোমার কী খুব শীত করছে??
-“হুম।
ইমরান রিপাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
.
সকালবেলা রিপার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে যায় ইমরানের।
-“জান তুমি আজকে অফিসে যাবেনা?? অনেক বেলা হয়ে গেছে তো।
ইমরান আড়মোড়া দিয়ে রিপাকে এক টান দিয়ে জড়িয়ে ধরে নাকটা টেনে দিয়ে বললো,,
-“অফিস তো আছে। কিন্তু তোমাকে রেখে তো যেতে ইচ্ছা করছে না।
-এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি চা নিয়ে আসছি।
রিপা চা নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি এখন ও উঠোনি?? আমার চা বানানো হয়ে গেছে আর তুমি এখন ও ঘুমাচ্ছো??
-“বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে এক পলক রিপার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
রিপার হাতে চায়ের মগ। রিপাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে রিপা গোসল করেছে। রিপা শার্ট আর প্লাজু পড়ে আছে। ভেজা চুলে খোপা করে শুকনো তোয়ালে পেঁচানো।
ইমরান শুধু বিষ্মিত হয় না,,,একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। আজকে রিপাকে অন্য রকম লাগছে। চোখের পলকই পড়ছে না ইমরানে। চোখদুটো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে রিপার দিকে।
রিপা অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঠোঁট চেপে ধরে ফিক করে হেসে ওঠে।
-“এভাবে তাকিয়ে কী দেখছো?? এই নাও তোমার বেড-টি। বাব্বাহ! এত ঘুম তোমার আগে জানতাম না।
রিপা আবার ও হাসছে। কী হলো চা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো?? এমন ভাবে তাকিয়ে আছো যেন আমাকে আর কোনদিন দেখইনি।
-“দেখছি তবে আজকের রিপার সাথে এতদিনের রিপার তো কোন মিলই নেই।
-“রিপা আবার ও হেসে ওঠে। আমার ভুত এসেছে মনে হয়।
-“এবার চা দাও।
চা খাওয়া হয়ে গেলে রিপাকে কোলে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো ইমরান।
-“একি! কী করছো?? আমাকে এখানে আনলে কেনো???
-“আমার সাথে শাওয়ার নিবে।
-“আমি তো শাওয়ার নিয়েছি।
-“এবার আমার সাথে নিবে।
-“মুখটা ভেংচিং কেটে অন্যদিকে তাকায় রিপা।
তারপর দুজনে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো।
ইমরান রিপার চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো।
-“তুমি যে আমাকে আবার ও গোসল করালে যদি ঠান্ডা লাগে,,,জ্বর আসে??
-“ইমরান মৃদু হেসে দুষ্টমি করে বললো,,,আসলে আসবে,,,আমি আছি তো তোমার সেবা করার জন্য।
রিপার ঠোঁটে ভালো লাগার হাসি ফোঁটে। আসতে আসতে রিপা ইমরানের ডান গালটা টিপে দিয়ে বললো,,
আ-হা কী ইচ্ছে গো। ইচ্ছে করে জ্বর বাঁধিয়ে আমার সেবা করতে চায়। কী শখ রে বাবা??
ইচ্ছে করে কোথায়??? মন চাচ্ছিলো তোমার সাথে একত্রে গোসল করবো তাই তো……
-“লজ্জায় রিপা চোখ ঢেকে রাখলো।
ইমরান রেডী হচ্ছে। তারপর এসে রিপার দুই চোয়াল চেপে ধরে দুই চোখে দুটো চুমো খায়। তারপর ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াতেই রিপা ডাকলো,,,
ইমরান শোন।
ইমরান দাঁড়াতেই রিপা ইমরানের কাছাকাছি এগিয়ে যায়। তারপর ইমরানের হাত ধরে বললো,,,ইমরান তোমাকে আমার কিছু বলার ছিলো।
ইমরান হেসে রিপার গলায় হাত দিয়ে বললো,,
-“আমি এখন অফিসে যাচ্ছি এসে তারপরে তোমার বুকে মাথা রেখে তারপরে শুনবো।
-“হুম।
তারপর রিপার নাকে নিজের নাকটা দিয়ে ঘষে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
রিপা চুপচাপ বিছানার উপরে গিয়ে বসলো। চোখ দুটো জলে ঝাপসা হয়ে গেলো। ভীষণ অনুশোচনা হয় তার। সত্যিটা বলার সাহস পাচ্ছেনা সে। এত বড় একটা সত্যি আর সেটা শোনার পরে কী যে হবে সেটা সবার জানা।
বুকের মাঝে কে যেনো ডুকরে কেঁদে ওঠে।
ইমরানকে কীভাবে কথাগুলো বলবে বুঝতে পারছেনা। কিন্তু সত্যিটা তো বলতেই হবে।
হঠ্যাৎ রিপার ফোনটা বেজে উঠলো।
.
মোবাইলটা হাতে নিয়ে স্কীনের দিকে তাকিয়ে রাহাতের নাম্বারটা দেখেই বুকটা কেঁপে উঠলো। প্রচন্ড ভয় কাজ করছে তার।
কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ফোনটা রিসিভ করলো রিপা।
-“হ্যা…….হ্যা…..হ্যালো।
-“তোর সমস্যা কী?? তোর কলিজাটা অনেক বড় তাই না?? সেদিন কী বলেছিলাম ভুলে গেছিস??
কী চাস তুই?? আমার কাছে আসবি নাকি তোর স্বামীকে ভিডিওটা মেসেঞ্জারে সেন্ড করবো। শুধু তোর উত্তরটা শুনবো তারপরে যা করার করবো। শুধু ১ সেকেন্ডের ব্যাপার।
-“রাহাত তোমার পায়ে ধরি। প্লিজ এমন নোংরা কাজ করোনা। ভিডিওটা ডিলিট দাও।
-রাখ তো রিকুয়েস্ট। মাথা গরম করবিনা একদম। তুই কবে আসবি তাই বল। তারিখ দে আমাকে।
-“রিপা নিশ্চুপ।
-“কী হলো কথা বলিস না কেন?? সেন্ড করবো ভিডিওটা।
-“রিপার এবার ভীষণ রাগ উঠলো। রাগান্বিত হয়ে বললো,,,তোর যা ইচ্ছা তাই কর। আমি নিজেই ইমরানকে সব বলে দিয়ে নিজের জীবন নিজে শেষ করে দিবো। আর শোন তুই এটা ভাবিস না যে তুই বেঁচে যাবি। তোর কী একটু ভয় নেই?? তোর বউ না প্রেগন্যান্ট?? আর সে যদি এসব শোনে তোর কী হবে একবার চিন্তা করে দেখ। আর শোন মরার আগে মানুষ যা বলে সবই সত্যি বলে। কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে রাখলো রিপা।
সন্ধ্যার পরে ইমরান বাসায় আসলো।
ইমরান এসে প্রথমে রিপার কপালে,,বুকে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর উঠছে কিনা! না গা ঠান্ডাই আছে। তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে রিপার পাশে বসলো। রিপার মুখটা অন্ধকার দেখে হাতটা ধরে বললো,,,
-“জান তোমার কী মন খারাপ??
-“রিপা কোন উত্তর দেয় না। মাথাটা নিচু করে রাখলো।
-“রিপা কী হয়েছে?? আমাকে খুলে বলো। প্লিজ চুপ করে থেকো না। সকালে কী জেনো বলতে চেয়েছিলে?? এখন বলো। এভাবে মনের মাঝে কথা লুকিয়ে রেখে কষ্ট পেয়ে লাভ কী???
রিপার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। আমাকে তুমি ক্ষমা করো ইমরান। তোমাকে আমার বলার আছে অনেক কিছু,,, কিন্তু কীভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।
-“এটা কেমন কথা জান। আমাকে বলতে তোমার কী সমস্যা?? প্লিজ শেয়ার করো দেখবে হালকা লাগবে তোমার।
-“ভয় হচ্ছে সত্যি কথাগুলো শোনার পরে তুমি আমাকে ঘৃণা করবে। কিন্তু বিশ্বাস করো ইমরান আমি যেটা করেছি আবেগের বসে করেছি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমি অন্যায় করেছি। আর এই অন্যায়ের কোন ক্ষমা নেই।
ইমরান রিপার হাত ধরে বললো,,,তুমি আমাকে ভালোবাসো??
-“হ্যাঁ বসি। ভীষণ ভালোবাসি।
-“তাহলে বলো আমাকে কী হয়েছে?? রিপা মনের কথা আটকে রাখলে কষ্ট আরো বাড়ে। তার চেয়ে আমাকে বলে একটু হালকা হও।
আমি তোমার কষ্টের ভাগ নিতে চাই রিপা। প্লিজ আমাকে সব খুলে বলো। প্রিয়জনের কাছে কোন কথা লুকাতে নেই।
রিপা এবার কান্না আটকাতে পারেনা। চোখ দুটো তার মূহুর্তেই জলে ভরে যায়।
-“কী হলো রিপা বলো?? আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে। কী এমন কথা যেটা বলতে তোমার এতটা সংকোচ হচ্ছে??
-“রিপা মনে মনে ভাবে আমার সত্যিটা শুনলে তুমি আমাকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবে না। ভীষণ ভীষণ ঘৃণা করবে।
চলবে………………