অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ১৬

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_১৬

ইমরান রিপার হাত ধরে বললো,,,
-“কী হলো কথা বলছো না কেনো?? টেনশনে তো আমার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। এমন কী কথা যার জন্য তুমি এমন ভয় পেয়ে আছো।
.
ইমরানের হাতটা ছাড়িয়ে রিপা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে আনমনে। খানিকবাদে ইমরান ও গিয়ে রিপার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,,,রিপা আমার দিকে তাকাও।
আমি বুঝতে পেরেছি অনেক বড় কিছু একটা হয়েছে যার জন্য তুমি আমার কাছে সেটা লুকাতে চাচ্ছো। কিন্তু এভাবে লুকিয়ে না রেখে সরাসরি বলে দাও। কারণ সত্যিটা প্রথমে তিতা লাগলে ও ভালো। আর সত্যিটা কখনও লুকিয়ে রাখা যাবেনা। আজ না হয় কাল তো সামনে আসবেই। তাই তোমাকে অনুরোধ করছি তোমার মনের ভিতরে কী চলছে আমাকে বলো।

-“রিপা কোন কথা বলেনা। হঠ্যাৎ করে সে চাপা স্বরে কান্না শুরু করে দেয়।
ভীষণ আশ্চর্য হয় ইমরান। স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে,,নিশ্চয়ই বড় ধরণের কোন রহস্য আছে। কিন্তু তাহলে রহস্যটা কী???

রিপা তোমার সাথে কী হয়েছে বলবেনা আমাকে??
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তোমার মুখ থেকে কথাটা শোনার জন্য।

-“রিপা ইমরানকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,আমার অনেক বড় ভূল হয়ে গেছে ইমরান। আমাকে তুমি ক্ষমা করো। তোমার স্ত্রী হওয়ার কোন যোগ্যতাই আমার নেই ইমরান। কীভাবে কথাগুলো বলবো বুঝতে পারছিনা।
-“রিপা প্লিজ বলো।
রিপা ইমরানকে ছেড়ে দিয়ে বললো,,,
রাহাত আমাকে ব্লাকমেইল করছে ইমরান।

-“ব্লাকমেইল করছে মানে?? কী কারণে??
-“ইমরান তোমাকে কীভাবে বুঝাবো আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না বলেই রিপা হু হু করে কেঁদে উঠলো। আমার সব শেষ হয়ে গেছে ইমরান। আমি নষ্ট হয়ে গেছি।

-“কী বলছো এসব?? কী শেষ হয়েছে?? আর নষ্ট হয়েছো মানে?? রিপা আর একটা ও কথা বাড়াবে না বলছি। কী হয়েছে আমাকে সব খুলে বলো। বলো রিপা তোমার সাথে কী হয়েছে?? প্লিজ বলো। এভাবে চুপ করে থেকো না।

রিপা কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,রাহাত আমার ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল করবে বলে ভয় দেখাচ্ছে।

-“এক মিনিট,,,,,,ভিডিও মানে?? কীসের ভিডিও??
-“কীভাবে বোঝাবো তোমায়??
-“বলো রিপা কীসের ভিডিও? আর রাহাত ভিডিও করলো কীভাবে??

রিপা ইমরানের পা জড়িয়ে ধরে বললো,,,
ইমরান আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। কথাগুলো শোনার পর তুমি কী বলবে, কী ডিসিশন নিবে আমি জানিনা। কিন্তু তুমি যে শাস্তি দেবে আমি মেনে নেব তবে আমি নিজের ইচ্ছাতে করিনি। কীভাবে কী হয়ে গেছে আমি নিজেই বুঝতে পারিনি…বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো রিপা।

ইমরান আমি রাহাতের সাথে…………!

চুপ করো রিপা চুপ করো। ইমরানের বুকের ভিতরে বিশাল ওজনের একটা পাথর দিয়ে কে যেনো প্রচন্ড বেগে আঘাত করলো। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে যায়। মাথাটা প্রথমে চক্কর দিয়ে ওঠে। সমস্ত পৃথিবীটা উলোট পালোট হতে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে সমস্ত শরীরটা অবশ হয়ে যায়। চোখদুটো জলে টুইটম্বুর হয়ে তাকিয়ে থাকে রিপার দিকে।

রিপা ইমরানের কাছে এগিয়ে আসলে,,,
-“ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকো একদম কাছে আসবেনা।
তোমাকে আমার শুরু থেকেই সন্দেহ ছিলো যে রাহাতের সাথে তোমার কিছু একটা চক্কর চলছে। কিন্তু প্রুফ ছিলোনা আমার কাছে। তাই ইচ্ছা করেই আমি এখানে বদলী হলাম। আর তোমার নজর রাখার জন্য লোক লাগিয়ে দিলাম যাতে তোমার সমস্ত খবর আমি জানতে পারি। তিনি আমাকে যখন বলেছে তুমি রাহাতের বাসায় যাও তখন আমি বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম হয়তো আমার বন্ধু হিসাবে যাও। কিন্তু তুমি যখন আমার এক্সিডেন্টের খবর শুনে আসোনি তখনি আমি শিউর হলাম তুমি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছো। ঢাকা আসার পরে যখন তুমি যখন আমার কাছে আসলে তখন তোমাকে দেখে মনে হলো তুমি অনেক টেনশনে আসো। তাই বুদ্ধি করে তোমার ফোনে auto call recording চালু করে রেখেছিলাম।

তোমার আর রাহাতের সমস্ত কথা আমি শুনে ফেলেছি।
কথাগুলো বলতেই চাপা স্বরে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো ইমরান। জীবনে কোনদিন এমন ভাবে কাঁদেনি। এমন কষ্টও কোনদিন পায়নি। জীবনের প্রদীপ আজ নিভে গেছে তার। বেঁচে থাকার সব আশা ভরসাও শেষ হয়ে গেছে। মনের মাঝে হাজারো স্বপ্নগুলো অনেক যত্নে লালন করে আসছিলো সব কিছু এক ধাক্কায় শেষ হয়ে গেলো। কোনকিছুর যেনো বাকী নেই আর।
রিপা তুমি কেনো এমন করলে??? এমনটা না করলে কী হতো?? কীভাবে নিজেকে সামলাবো আমি?? আমার যে সব স্বপ্ন শেষ করে দিলে। এখন বেঁচে থেকে কী করবো আমি??

রিপা এগিয়ে গিয়ে ইমরানের পাশে বসে হাতদুটো ধরতেই রিপার হাতদুটো ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে,,,,আমাকে তুমি ধরবেনা। দূরে থাকো আমার থেকে। আমাকে একবার বলার সুযোগ দাও ইমরান।

-“একদম না। তোমার কথা শুনলে ও আমার ঘৃণা হচ্ছে। বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে।

রিপা এবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরপরই রিপা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রাত ১১ টায়…….

রিপা এসে ইমরানের রুমের দরজা খুললো। সমস্ত রুমের লাইট বন্ধ করা। রিপা রুমের লাইট অন করলো।
সামনে তাকিয়ে দেখলো ইমরান ফ্লোরে বসে দুই হাঁটুর ভাজে মুখ দিয়ে মাথা নিচু করে রাখলো।

রিপার বুক ফুলে কান্না আসতে চায় কিন্তু কাঁদে না সে। কী জন্য কাঁদবে আজ?? নিজের দোষে আজ সব কিছু হারাতে বসেছে সে।

তবুও পা টিপেটিপে ইমরানের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিপার পায়ের শব্দে ইমরান মাথা উঁচু করে তাকায়। ইমরানকে দেখে রিপা ও এক দৃষ্টিতে ইমরানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইমরান ও তাকিয়ে আছে। কারও চোখের পলক পড়েনা। কোন কথাও নেই কারো মুখে।
ভাষাহীন বোবা প্রাণীর মতো নীরব হয়ে আছে দুজনে। চোখ ভর্তি জল ছলছল ভাসা ভাসা মেঘের মতো ক্রমেই জমাট বেঁধে আসছে উভয়েরই।

রিপার ইমরানের পাশে বসে এক হাত চেপে ধরলো। ইমরানের বুকের ভিতরে একবার স্নাৎ করে কেঁপে ওঠে।
রিপার ঠোঁট দুটো কাঁপতে থাকে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললো,,,ইমরান তুমি ভালো থেকো। আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
————————-
রিপার ঠোঁটদুটো প্রবল বেগে কাঁপতে থাকলো। ইমরান কোন উত্তর দিচ্ছেনা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
আর সহ্য করতে পারছেনা রিপা। মুখ চেপে ধরে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা আটকে দিলো। তারপর প্রাণ খোলা কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ইমরান এসে দরজা নক করলো। কারণ ডিপ্রেশনে এসে যদি নিজের কোন ক্ষতি করে ফেলে।

-“রিপা দরজা খোল।
অনেকবার দরজা ধাক্কা দেওয়ার পরে রিপা দরজা খুলে দিয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে থাকে।
এমন সময় রিপার ফোন বেজে উঠলো।
ফোনটা হাতে নিলে স্কীণের উপরে রাহাতের নামটা ভেসে উঠলো।
রাহাতের নাম্বারটা দেখে পুরো শরীরটা রাগে জ্বলছে ইমরানের।
ফোনটা রিসিভ করতেই,,,,,,
-“হাই জান,,কেমন আছো??? তোমাকে কত মিস করছি। তুমি কবে আমার বুকে আসবে। তোমাকে না পেয়ে তো আমার রাতের ঘুম হয়না।
কী হলো কথা বলছো না কেনো??? দেখো আমার ধৈর্য্যের সীমা পাড় করো না। অনেক হয়েছে তোমার নাটক। তুমি না আসলে বলো আমি এখুনি ইমরানের কাছে তোমার ভিডিওটা সেন্ড করি। (রাহাত)

-“শালা হারামীর বাচ্চা,,,কুত্তার বাচ্চা। তোর এত বড় সাহস তুই আমার বউয়ের ভিডিও কী করবি?? ভাইরাল করবি??

-“আমতা আমতা করে বললো,,,ইমরান তুই!(রাহাত)

-“হ্যাঁ আমি। তুই কী ভেবেছিলি আমার বউকে তুই ব্লাকমেইল করে পার পেয়ে যাবি। তুই বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে এত বড় প্রতারণা করতে তোর একবার ও বিবেকে বাঁধেনি! শালা তোর কলিজাটা এত বড় হলো কীভাবে?? তুই একটু ওয়েট কর আমি এসে তোর কলিজা কেটে দেখবো তোর এত সাহস হলো কীভাবে??
কথাটা বলতেই রাহাত কলটা কেটে দিলো।

ইমরান ফোনটা বিছানার উপরে ছুরে মেরে রিপাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আমি পারবো না রিপা তোমাকে ছাড়া বাঁচতে কিন্তু ঘটে যাওয়া ঘটনা ও যে ভুলতে পারবোনা।
কী করবো আমি তুমি বলে দাও??

রাহাতকে আমি ছাড়বো না। কী না করেছি ওর জন্য!

সব ভুলে গেছে বেঈমানটায়। দুধকলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি এতদিন। আর সুযোগ বুঝে ছোবল মারলো।

রিপা তুমি জানো কাঁচ ভাঙলে কয় টুকরা হয় বলতে পারো???
রিপা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।

জানি পারবেনা। যদি পারতে তাহলে আজকে আমাকে এই দিনটা দেখতে হতো না। জানো আজকে আমার মনটা কত টুকরা হয়েছে?? সেটা কেউ বলতে পারবেনা।
যদি পারতো তাহলে আমার বুকের ভিতরের কষ্টটা কতখানি সেটা সবাই অনুভব করতে পারতো।

রিপা অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। ইমরানের প্রশ্নের কোন উত্তর নেই তার কাছে।

চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here