অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ২

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান(ফারিয়া_আলম_মিম)
#সিজন_২
#পর্বঃ_২

রিপা ঘরে ঢুকেই ব্যাগ দুটো বিছানার উপরে রেখেই ওয়াশরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো ইমরান বিছানার উপরে বসে আছে। ভয়ে ভয়ে গিয়ে ইমরানের পাশে বসলো রিপা। কাঁধে হাত দিতেই রিপার দিকে তাকিয়ে বললো,,,তুমি না আর কখন ও যাবেনা।।
আমি তো যেতেই চাইনি ইমরান চাচার অসুস্থতার জন্য যেতে বাধ্য হলাম। তোমাকে বলে যেতে পারিনি বলে দুঃখিত।
-“হয়েছে আর দুঃখিত বলে লাভ নেই।
-“আচ্ছা।

ইমরানের ফোনটা বেজে উঠলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে নামটা দেখেই কলটা রিসিভ করলো সে।
-“হ্যালো দোস্ত কেমন আছিস??
-“ভালো আর থাকতে দিলি কই। নিজে তো বিয়ে করে ইনজয় করছিস আর আমরা তো এখন ও বিয়েই
করতে পারলাম না।
-“এই তুর্জ শোননা এত বেশি বকবক করিসনা। দাঁড়া তোর বিয়ে খুব তাড়াতাড়ি দিবো।
-“তাই।
-“হুম।
-‘আচ্ছা শোন কিছু বলবি তুর্জ?
-“হ্যাঁ। বলার জন্যই তো কল দিলাম।
-“বল তাহলে।

-“সন্ধ্যার পরে আমার বার্থডে পার্টির এরেঞ্জমেন্ট করেছি ছোট খাটো। সবাইকে বলেছি কিন্তু তোর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। মাত্র মনে পড়লো তাই কল দিলাম।
-“তা তো ভুলবি হারামী।
-“স্যরি দোস্ত। এখন রাগ অভিমান বাদ দে। আর তোকে কিন্তু আসতেই হবে।
-“আচ্ছা দোস্ত আসবো।

কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বিছানার উপরে ছুরে মেরে হ্যাচকা টান দিয়ে রিপাকে জাপটে ধরলো ইমরান।
রিপা চোখ বন্ধ করে রাখলো।

ইমরান রিপার চুলগুলো সরিয়ে গালে চুমো এঁকে দিলো।
রিপা লজ্জায় লাল হয়ে ইমরানকে জাপটে ধরলো।
রিপা শোন তুমি রেডী হয়ে থেকো আমি প্রেজেন্টেশন কিনতে যাচ্ছি।
-“আচ্ছা।

ইমরান দরজা লক করে চলে গেলো বাহিরে।
রিপার মনের ভিতরে খচখচানি শুরু হয়ে গেলো।
ইমরানকে কেনো জানি রিপা মন দিয়ে ভালোবাসতে পারছেনা আগের মতো। মনের অজান্তেই ঘৃণা লাগছে রিপার। স্বামীর প্রতি যে একটা টান ছিলো সেটা এখন আর নেই।

রিপা হালকা করে সাজলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে। তেমন ভালো লাগছেনা নিজেকে। কী কমতি আছে বুঝতে পারছেনা।

দরজা খোলার শব্দে বুঝতে পারলো ইমরান এসেছে।
একটুবাদেই ইমরান রুমে এসে বললো,,রিপা তোমার হয়েছে???
-“হ্যাঁ আমি রেডী।
-“আচ্ছা আমি গাড়ি বের করে আসছি।
-“আচ্ছা।

ইমরান রুমে এসেই রিপার হাত ধরে টেনে নিচে নামতে লাগলো।

গাড়িতে উঠে বসলো দুজনে। ইমরান রিপার হাত ধরে রেখেছে। রিপার খুব বিরক্ত লাগছে। রিপা হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে কোলের ভিতরে নিয়ে বসলো।
ইমরান বুঝতে পারছে রিপা তাকে ইগনোর করছে। খুব মেজাজ গরম হচ্ছে তার।

রাগে গদগদ করতে করতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
খুব দ্রুত ছুটছে ইমরানের গাড়ি।
.
কিছুক্ষণ পরে তুর্জর বাসার সামনে আসলে গাড়িটা দাঁড় করায়।
রিপা দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। মুখ ভার করে ইমরান নেমে বাসার দিকে যেতে নিলো।
রিপা ও ইমরানের পিছনে পিছনে গেলো।
-ইমরানকে দেখেই সবাই হাসতে লাগলো।
দোস্ত তোকে তো আজ দারুণ লাগছে। যে মেয়ে দেখবে তারাই তোর প্রেমে পড়ে যাবে।
-“কী যে বলিসনা।

রুমের ভিতরে রিপা ঢুকলো।

সব বন্ধুরা তো হা করে তাকিয়ে আছে। তুর্জ তো বলেই উঠলো ইমরান ওদিকটায় তাকিয়ে দেখ না সেই রকমের সেক্সি ফিগার। উফফ! এক কথায় অস্থির।
ইমরান মুখটা ঘুরিয়ে রিপাকে দেখেই চোখ বড় হয়ে গেলো।
বন্ধুদের কাছ থেকে রিপার দিকে এগিয়ে ওর হাত ধরে টেনে সবার সামনে আনলো। রিপাকে নিজের বুকের কাছে টেনে ধরে বললো,,ওই তোরা তাহলে শোন এই সেক্সি ফিগারের মেয়েটা আমার ওয়াইফ। তাই কুনজর দেওয়া বন্ধ করিস।

-“সবার হা করা মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।

ইমরান এই মেয়ে তোর ওয়াইফ?? আমরা তো বিশ্বাস করতে পারছিনা। তোকে কী দেখে বিয়ে করলো???
নিশ্চয়ই টাকা দেখে।
-“তুর্জের শার্টের কর্লার টেনে ধরে বললো,,,হারামজাদা কী বললি তুই?? তুই আমার বন্ধু না শত্রু।

-“ইমরান শার্টের কর্লার ছাড়। ভালো হবেনা বলে দিলাম।
-“ইমরান ছেড়ে দিয়ে বললো,,কী করবি মারবি নাকি?? মেরে দেখা??
-“ইমরানের আরেক বন্ধু রাহাত এসে দুজনের ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে বললো,,,আরে ইমরান রাগ করিস কেন?? আমরা কী জানি নাকি যে এই মেয়েটা তোর ওয়াইফ তাহলে তো আমরা কিছু বলতাম না। স্যরি দোস্ত ভুল হয়ে গেছে। আমাদের ক্ষমা করে দিস।

-“আচ্ছা। এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম। আর কখন ও এমনটা করলে চোখ তুলে ফেলবো।

-“হয়েছে রে দোস্ত। পার্টিতে এসেছি চল না আড্ডা দেই।

ইমরানকে সবাই টেনে আরেক রুমে নিয়ে গেলো। রিপা একা একা সোফার এক পাশে বসে আছে। পুরো পার্টিতে কোন মেয়ে মানুষ নেই সব পুরুষ। রিপার খুব বোরিং লাগছিলো। তবুও কিছু বলতে পারছিলো না।

হঠ্যাৎ মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছিলো।
একটু বাদেই পার্টিতে একটা মেয়ে উপস্থিত হলো। রিপা অপলোক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটির পরনে ছিলো জিন্সের প্যান্ট,,,টপস,, এক হাতে কতগুলো চুড়ি ,,চুলগুলো ছাড়া দেওয়া।
ইমরানকে দেখেই জাপটে ধরলো সে।
রিপার তো মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
রাহাত এসে রিপার পাশে বসলো।
রিপা মুখটা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
-“আমি কী তোমার সাথে কথা বলতে পারি??
– মুখটা তার দিকে ফিরিয়ে জ্বি আমাকে বলছেন??
-‘হ্যাঁ।
-“জ্বি বলেন??
-‘এই মেয়েটি কিন্তু ইমরানের এক্স গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো। ১ বছর আগে ব্রেকআপ হয়েছিলো কিন্তু ইদানিং দেখছি আবার ও ভাঙা সম্পর্কটা জোরা লাগানোর চেষ্টা চলছে।
-“এসব কথা আমাকে বলছেন কেনো??
-“আমার মনে হলো তোমাকে কথাটা বলা উচিত তাই বললাম।
-“যাই হোক আমি রাহাত। আমি জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার।
-“ওহ্ আচ্ছা।
-“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাস করবো??
-“হ্যাঁ বলুন??
-“তোমাদের কী লাভ ম্যারেজ??
-“না। এরেঞ্জ ম্যারেজ।
-“ওহ্ আমি ভাবলাম লাভ ম্যারেজ।

রাহাত কথা বলার সাথে সাথে রিপার পুরো শরীরটাকে একেবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিলো।
রিপা মাথায় কাপড় টেনে দিলো।

এদিকে ইমরান সবার সাথে আড্ডায় মেতে ছিলো। রিপার প্রতি কোন খেয়ালই ছিলো না।
-“রাহাত নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,আমরা কী ভালো বন্ধু হতে পারি?? যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে??

আমি বুঝতে পারছি ইমরানের কাছে তুমি সুখি না।
আর হ্যাঁ তোমাকে তুমি করেই বললাম কিছু মনে করো না। রাহাত নিজের মোবাইল নাম্বারটা একটা কাগজে লিখে রিপার হাতের মুঠোয় দিলো।
-“এটা কী??
-“আমার ফোন নাম্বার।
-“আমি কী করবো?
-‘যদি পথ চলতে গিয়ে আমাকে প্রয়োজন হয় তাহলে ফোন করবে। এনি টাইম আমাকে পাশে পাবে কথা দিলাম।

রিপা মুখটা রাহাতের দিকে ঘুরিয়ে আবার ও অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলো।

প্রায় ৩০ মিনিট হয়ে গেলো ইমরান এখনো রুম থেকে বের হচ্ছেনা। পুরোপুরি আড্ডায় মেতে উঠেছে।
এদিকে রিপার খুব বিরক্ত লাগছিলো।
বসা ছেড়ে উঠে ইমরানকে ডাকার জন্য গেলো। কিন্তু কিছুতেই ভিতরে ঢুকতে পারলো না।
ওখান থেকে বেরিয়ে এসে সোজা সোফার উপরে ধাপ করে বসলো।

রাহাত আবার ও এসে রিপার পাশে বসলো।
কী ব্যাপার বলেছিলাম না আজকে ইমরানকে পাবে না। ওর পুরানো বান্ধবীকে যে পেয়েছে।
-“রিপা মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে।
-‘কী হয়েছে তোমার?? মাথায় কী ব্যাথা করছে??
-“হুম।
-“ওহ্।
-“আচ্ছা শোনেন। আমরা একটা উপকার করতে পারবেন??
-“হুম। বলো পারবো।
-“আমার না এখানে একদম ভালো লাগছেনা। যদি কিছু মনে না করেন আমাকে বাসায় পৌছে দিবেন??
-‘অবশ্যই কিন্তু ইমরান যদি কিছু বলে।
-‘হাসালেন,,,যে নিজের বউয়ের কোন খোঁজ খবর না রেখে বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠে সে আবার কী বলবে??
-“তাহলে চলো।

রাহাতের মোটরসাইকেলের পিছনে বসলো রিপা।
রিপার বাসার সামনে এসে রিপাকে নামিয়ে দিলো রাহাত। রিপা চলে যেতে নিয়ে আবার ও আড়চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।
রাহাত ও হাসলো।

রাহাত আবার ও পার্টিতে জয়েন্ট করলো।
রাত প্রায় ২ টা তখন ইমরানের হুশ ফিরলো রিপা কোথায়??

সারা বাড়ি রিপাকে খুঁজতে লাগলো। না পেয়ে রিপার নাম্বারের কল দিলো কিন্তু রিপা ফোন রিসিভ করছেনা।
টেনশনে ইমরান ঘামতে শুরু করলো।
রাহাত এসে ইমরানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,,এতো চিন্তা করিস কেন?? তোর বউ লাগবে না তো। যা না আরো মেয়েদের সাথে আড্ডা দে।

-“ইমরান রাগি লুকে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললো,,কী বলতে চাস তুই??
-‘আমি কী বলতে চাচ্ছি তোর এখন না বোঝারই কথা। তোর সাথে করে ভাবীকে আনলি তারপরে তাকে একা ফেলো রেখে তুই গিয়ে সবার সাথে আড্ডা মারছিস। বেচারি একা একা সোফায় বসে বসে বোরিং ফিল করছিল। এখন রাত প্রায় ২ টা বাজে সবেমাত্র তোর ভাবীর কথা মনে পড়লো। ভাবী বাসায় চলে গিয়েছে।

-“বাসায় গিয়েছে মানে?? তুই কী করে জানলি??
-“আমি ভাবীকে বাসায় পৌছে দিয়ে এলাম।

ইমরান আর একটু ও না দাঁড়িয়ে বাসায় দিকে রওনা দিলো।
কলিং বেল চাপ দিচ্ছে বারেবারে কিন্তু রিপা দরজা খুলছে না।
বেশ কিছুক্ষণ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরে রিপা দরজাটা খুললো।
-“দরজাটা খোলা মাত্রই রিপার গালে ঠাস্ ঠাস্ থাপ্পর বসিয়ে দিলো ইমরান। তোমার সাহস তো কম না আমার বউ হয়ে তুমি পরপুরুষের সাথে পাশাপাশি বসে বাসায় এসেছো?? রাহাত তোমার কোথায় কোথায় ধরেছে বলতো।

-“ছিঃ ইমরান এসব তুমি কী বলছো? লজ্জা করছে না এসব বলতে??

আমি এসে পরেছি কারন তুমি আমাকে ফেলে রেখে তোমার বান্ধবীর সাথে ডলাডলি করছিলে তখন কোথায় ছিলো তোমার এই লেকচার। তুমি যখন চাও না তোমার বউ অন্য পুরুষের সাথে কথা বলুক ঠিক তেমনি আমি ও চাইনা আমার স্বামী অন্য মেয়েদের সাথে…..😒

-“ইমরান রিপাকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে গলা চেপে ধরে বললো,,আমরা পুরুষরা যা ইচ্ছা করতে পারবো আমাদের সেই অধিকার আছে। দরকার হলে ৭ টা বিয়ে করবো কিন্তু মেয়েরা সেটা পারবেনা।

-“কেনো পারবেনা?? তোমরা পুরুষ বলে যা ইচ্ছা করে যাবে আর মেয়েরা নিরবে সহ্য করবে??? কখন ও না।

ইমরান রাগি লুকে বললো,,যতবড় মুখ নয় ততোবড় কথা। তোমরা মেয়েরা সব সময়ই স্বামীর পায়ের কাছে পড়ে থাকবে। তোমাদের যা যা চাহিদা সেটা পেলেই এনাফ।

-“একদম না। মেয়েরা কোন কাঠের পুতুল নয় যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নাচাবে।

ইমরান কোমড় থেকে বেল্ট খু্লে রিপার শরীরে আঘাত করতে লাগলো।

রিপা যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ইমরান বেল্টটা ছুরে ফেলে বললো,,,মুখ চালাতে মানা করেছিলাম শুনিস নি তাই শুধু শুধু মার খেলি বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ব্যাথায় হেস্কি দিয়ে কাঁদতে লাগলো রিপা।
চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো।

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here