অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ৩

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান(ফারিয়া_আলম_মিম)
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_৩

রিপা ফ্লোরে শুয়ে আছে। সমস্ত শরীরে যন্ত্রণা করছে।
শরীরের অনেক জায়গায় বেল্টের দাগ বসে গেছে।
উঠে দাঁড়াবার মতো ও শক্তি নেই। চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো। তবু ও আস্তে আস্তে উঠে ড্রয়ার খুলে ক্ষত স্থানে মলম লাগিয়ে বিছানার উপরে বসলো। কী নিষ্ঠুরভাবে মারলো ইমরান। ভাবতে ও অবাক লাগছে।

রিপা ভাবছে সংসার জীবনটাই বোধহয় এমনি। এখানে পুরুষের রাজত্ব চলে। স্বামীর মন যোগার করে চলতে না পারলেই বুঝি এভাবে অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
মনের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
চাচার উপরে বড্ড অভিমান হচ্ছে কেনো সে এত বড়লোক বাবার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিলো। তার থেকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিলে ও বোধহয় ভালো হতো। বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই মরে গেছে রিপার। মনে চাচ্ছে গলায় রশি দিয়ে ঝুলে পড়ি। না হলে ব্লেড দিয়ে শরীরের সমস্ত রক্ত বের করে ফেলি। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না সে। কারন এসব করতে অনেক সাহস লাগে মনের জোর লাগে যার কোনটাই রিপার নেই।
.
যা হবার হয়ে গেছে এখন আর পিছনের কথা ভেবে লাভ নাই। নিজেকেই নিজের ভাগ্য ফিরাতে হবে।
এখন তো মনে হচ্ছে ইমরান কখন ও ভালো হবেনা।
.
হঠ্যাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার দিয়ে কল এসেছে। কলটা রিসিভ না করে বিছানার বালিশের উপরে রেখে দিলো রিপা।
আবার ও রিং হচ্ছে।
এবার ও কলটা রিসিভ করলো না রিপা।

প্রায় ১০ মিনিট পরে আবার ও রিং হলো।
এবার মেজাজটা গরম করে কলটা রিসিভ করলো রিপা।

-“হ্যালো। সমস্যা কী আপনার?? বারবার কল দিচ্ছেনা কেন??? কী চাই??
-“আসসলামু আলাইকুম রিপা। কেমন আছো তুমি??
-“অচেনা নাম্বারের মানুষটার মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো রিপা। তোতলাতে তোতলাতে বললো কে আপনি??
-“আগে তো সালামের উত্তর দাও। তারপরে সব বলছি।
-“ওয়ালাইকুম আসসালামু। আচ্ছা আপনার ভয়েসটা খুব চেনা চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে কোথায় ও শুনেছি।

-“তাই। তাহলে মনে করে বলতো আমি কে??
-“ঠিক মনে করতে পারছিনা। আপনি প্লিজ বলে দিন কে আপনি?? আমি খুব কনফিউশন হয়ে গেছি।

-“আমি রাহাত। ওই যে সেদিন প্রোগ্রামে দেখা হয়েছিলো।

-“ওহ্ এবার মনে পড়লো। আচ্ছা আপনি কেনো কল দিলেন??
-“ভালো লাগলো তাই দিলাম।

-“আমি তো আপনার বন্ধুর বউ তাই আমাকে কল দেওয়াটা কী আপনার ঠিক হয়েছে??

-“বন্ধুর বউ হয়েছে তো কী হয়েছে?? ভালো একটা ফ্রেন্ডশীপ থাকলে তো কোন ক্ষতি নেই।

-“ইয়ে মানে। এসব কথা যদি ইমরান জানে তাহলে আমাকে জানে মেরে দিবে।

-“কী যে বলোনা। তুমি না বললে ইমরান কীভাবে জানবে?? তুমি আর আমি শুধু জানবো আর তো কেউ না। আচ্ছা রিপা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাস করবো??

-“জ্বি বলেন।
-“আমাকে তোমার কেমন লাগে??
-“এটা আবার কেমন প্রশ্ন করলেন??
-“আরে যেটা জিজ্ঞাস করছি সেটার উত্তর দাও না। আমাকে তোমার কেমন লাগে??

-“রাহাতের এমন প্রশ্নে রিপা তো রীতিমত হতবাক হলো। তারপরে বললো,, আপনি তো অনেক স্মার্ট আর কোনদিক থেকে তিল পরিমাণ কমতি নেই আপনার।

-‘স্টপ রিপা এতো প্রশংসা করো না আমি তো ফেটে যাবো।
-“রাহাতের কথা শুনে রিপা হাসছে। আচ্ছা এখন রাখছি অন্য এক সময় কথা হবে।
-“আচ্ছা। তোমার কলের অপেক্ষায় থাকবো।
-“আচ্ছা।

কলটা কেটে মোবাইলটা বিছানার পাশে রেখে শুয়ে পড়লো রিপা। বিছানার শুয়ে পড়া মাত্রই তার পিঠে আরো যন্ত্রণা হচ্ছিলো। শোয়া থেকে উঠে চেয়ারের উপরে বসলো।

রাহাতের সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগছিলো তার। কেনো জানিনা কষ্টটা কম অনুভূতি হচ্ছিলো।

রাত প্রায় ১০ টা বেজে ৪৫ মিনিট।

দরজাটা খোলার শব্দে রিপা বুঝতে পারলো ইমরান এসেছে।
রিপা রুমের লাইট অফ করে ফ্লোরে বসে আছে। রুমের লাইট অফ দেখে মোবাইলের লাইট অন করলো ইমরান। লাইটের আলোয় রিপাকে দেখেই রুমের সব লাইট অন করে দিলো।

আস্তে আস্তে রিপার কাছে এগিয়ে গিয়ে হাঁটু ভাজ করে রিপার পাশে বসলো। রিপার হাত দুটো মুখের কাছে নিয়ে চুমো দিতে দিতে বললো,,,স্যরি রিপা। আমার ভুল হয়ে গেছে তোমার গায়ে হাত দেয়াটা।

আসলে মাথাটা কেমন জানি খারাপ হয়ে যায়। তোমাকে কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। আমার জীবনের থেকে ও বেশি।

-“রিপা নিজের হাতটা ইমরানের কাছে থেকে সরিয়ে নিয়ে কোনভাবে উঠে জানালার এক পাশে দিয়ে গ্রিল ধরে দাঁড়ায়। ইমরান ও রিপার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রিপার কাঁধে হাত রেখে বললো,,কী হলো রিপা আমাকে ক্ষমা করবেনা?? বললাম তো ভুল হয়েছে।

-“রিপা চুপ করে বাহিরে দিকে তাকিয়ে আছে।

ইমরান রিপার কাঁধে হাত দিতেই রিপা ইমরানের দিকে তাকিয়ে বললো,,,একটু আগে তুমি আমাকে বললে আমাকে তুমি ভালোবাসো তাই না! আর সেটা নাকি তোমার জীবনের থেকে ও বেশি।

তাহলে তুমি যাকে এত ভালোবাসো তার শরীরকে কীভাবে রক্তাক্ত করতে পারলে?? এটা কে কী তুমি ভালোবাসা বলবে?? তুমি শুধুমাত্র আমার শরীরকে ভালবাসো। যতদিন আমার এই সৌন্দর্য্য থাকবে ততোদিন তোমার ও ভালোবাসা থাকবে তাই না??

-“না রিপা। এটা ভুল ধারণা।

ইমরান যে সত্যিকারী ভালোবাসে সে কখন তার ভালোবাসার গায়ে আঘাত করতে পারেনা।
ইমরান ভালোবাসা হলো প্রজাপতির ডানার মতো যদি শক্ত করে ধরো মরে যাবে,,,যদি হালকা করে ধরো সারাজীবন বেঁচে থাকবে।

ইমরান চুপ করে রিপার কথাগুলো শুনছে।
কিছুক্ষণ শোনার পরে বললো,,,,রিপা তুমি কী এই বিষয়টা নিয়েই পড়ে থাকবে???

-“রিপা কোন কথা বললো না।
-“আমার খুব খিদে পেয়েছে রিপা। খেতে দাও।

আমি তো কোন কিছু রান্না
করিনি তাহলে তোমাকে কী খেতে দিবো???

-“আমি বিরিয়ানি কিনে এনেছি। তুমি বসো আমি গরম করে আনছি।

ইমরান টেবিলের উপর থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকলো। তারপরে গরম করে প্লেটে করে রিপার কাছে নিয়ে আসলো।
রিপাকে বিছানার উপরে বসিয়ে ইমরান পাশে বসলো।
তারপরে নিজের হাত দিয়ে রিপাকে খাইয়ে দিলো।
রিপা খাচ্ছে আর রাহাতের কথা চিন্তা করছে।
মনে মনে ভাবছে রাহাত কী বলতে চায়??

খাওয়া শেষ হলে ইমরান রিপার দিকে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলো কিন্তু রিপার কোন খেয়ালই নেই।
ইমরান আবার ও বললো,,,রিপা নাও পানি খাও।

এবার ইমরানের ডাক শুনে কল্পনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে বললো,,,
আমাকে কিছু বলছো ইমরান??
-“খাওয়া হয়েছে তো সেই কখন পানি খাওয়া লাগবেনা??

-“ওহ্ স্যরি ইমরান আমি একটু মায়ের কথা ভাবছিলাম।
-‘ওহ্। ঠিক আছে মা বাসায় আসলে আমি তোমাকে নিজে তোমার বাসায় বেড়াতে দিয়ে আসবো।
-“আচ্ছা।

খাওয়া শেষ করে রিপা গিয়ে বিছানার শুয়ে পড়লো।
ইমরান গিয়ে রিপার পাশে শুয়ে পড়লো।

পরেরদিন সকালে……

রিপার ঘুম ভাঙলে পুরো শরীর প্রচন্ড ব্যাথা করছিলো। গায়ের একটু ছোঁয়া লাগলে ও ব্যাথা লাগছে এমন।
আড়ামোড়া দিয়ে ইমরান উঠেই রিপাকে জাপটে ধরলো।

-“আউচচচচচচচ,,,কী করছো ইমরান ছাড়ো?? সমস্ত শরীর ব্যাথা করছে।
ইমরান রিপার পিঠের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো। বেল্টের আঘাতগুলো পিঠের উপরে রক্তের জমাট বেধে আছে। ইমরান মনে মনে অনুশোচিত হলো রিপার গায়ে এভাবে আঘাত করা ঠিক হয়নি তার। কতটা যন্ত্রণা সহ্য করেছে রিপা।

বিছানা দিয়ে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলো ইমরান। রেডী হয়ে রিপার কপালে চুমো দিয়ে বললো আমি অফিসে যাচ্ছি। রাতে ওষুধ নিয়ে আসবো।

ইমরান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর ভাবছে ফার্মেসি দিয়ে ওষুধ কিনতে হবে কারন ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলে হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তখন তো সবাই আমার দিকে আঙুল তুলে ধিক্কার জানাবে। যে ছোটলোকের মতো বউয়ের গায়ে হাত তুলেছি।

বিকাল ৫ টা……

ইমরানের কেনো জানি আজ অফিস করতে একদম ভালো লাগছেনা। বাসায় আসার জন্য মনটা ছটফট করছে। কোন রকমে অফিস শেষ করে রিপার জন্য ওষুধ নিয়ে বাসায় রওনা দিলো।

বাসায় পৌঁছে রিপার ক্ষত স্থানে মলম লাগিয়ে দিলো। ডিনার করার পরে রিপাকে ওষুধ খাইয়ে দিলো।

রিপা প্রতিদিন ওষুধগুলো সময় মতো খাবে তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

৫ দিন পর…..

ধীরে ধীরে রিপার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলো।

ইমরান অফিসে কাজ করছে কিন্তু আজকে ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেছে সে। মনে হচ্ছে তার পুরুষত্ব জেগে উঠেছে।

অফিস শেষ করে বাসায় গেলো। কোন রকমে ড্রেস চেঞ্জ করলো।
রিপা ড্রইং রুমে বসো বসে টিভি দেখছে।
একটু পরপর হাসছে। ইমরান গিয়ে রিপার পাশে বসলো।

রিপা ইমরানকে দেখে একটু আটসাট হয়ে বসলো।
ইমরান রিপার একেবারে কাছাকাছি চলে গেলো।

তারপর নিজের হাত দিয়ে রিপার চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছিলো ইমরান।

-“কী করছো তুমি??

-“ইমরান কোন উত্তর না দিয়ে রিপার গালে চুমো খেলো। তারপরে রিপাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের রুমে ঢুকলো। ইমরান কী করছো এসব??? ছাড়ো আমাকে। আমার একদম এসব ভালো লাগছেনা।

ইমরান কোন কথা না বলে রিপাকে বিছানার উপরে ধাপ করে ফেলে দিয়ে নিজে ও রিপার উপরে ধাপ করে পড়লো। রিপার হাতদুটো নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে গলায়,,ঠোঁটে চুমো দিতে লাগলো।

ইমরান পাগলের মতো অস্থির হয়ে উঠলো।। পুরুষত্ব একেবারে জেগে উঠেছে ওর। কোন বাঁধা না মেনেই রিপাকে ভোগ করলো সে। ভোগ করা হয়ে গেলে রিপাকে ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

ইমরান শুয়ে পড়লে রিপা নিজেকে সামলে জামা কাপড় পড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে ফ্লোরে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লো। কেনো জানি ইমরানকে ওর সহ্য হচ্ছেনা। ঘৃণা লাগছে ওর মুখটা দেখতে।

তবুও এখান থেকে বের হওয়ার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছেনা সে। 😭😭😭

চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here