অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ২৫

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৫

বিথী আড়চোখে রাহাতের দিকে তাকায়। তারপর গম্ভির গলায় বললো,,,
-“তুমি কাকে ব্লাক মেইল করছো?? কার সাথে তোমার অবৈধ সম্পর্ক আছে??
রাহাত চমকে উঠে। কী বলবে বুঝতে পারছেনা। তবুও আমতা আমতা করে বলে,,
-“কী বলছো বিথী?? অবৈধ সম্পর্ক মানে??
-“মেয়েটি কে??(বিথী)
-“আশ্চর্য তো! কী বলছো তুমি? কোন মেয়ে??

-” বিথী অগ্নিদৃষ্টিতে রাহাতের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।
চোখ দিয়ে যেনো আগুনের ফুলকি ছুটছে। রাহাতের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে রাহাত নির্দোষ না। কোন মানুষ অন্যায় করলে তার চোখে মুখে স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
রাহাতের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু একটা করেছে। প্রচন্ড রাগে ক্ষোভে বুকটা ওঠা নামা করে বিথীর।
এবার বিথী ধমক দিয়ে বলে,,,
চুপ করে আছো কেনো??
রাহাত সত্যিটা কী??

রাহাতের সমস্ত শরীর ঘামে ভিজে যেনো স্রোত বয়ে যায়। কী করবে এখন?? বিথীকে কীভাবে সত্যিটা বলবে?? বিথী সত্যিটা জানতে পারলে আজ এখানেই তার ভালোবাসার কবর রচনা হবে।
না এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারবেনা সে। দাঁতে দাঁত কেটে ভাবছে,,ইমরান তোর এত বড় সাহস তুই আমার বউকে খবরটা জানিয়ে দিলি এবার দেখ আমি কী করি। আগে বিথীকে মানাবো তারপর ভিডিও টা
যা করার করবো। এখন আমাকে নরমাল ভাবে বিথীকে মানাতে হবে। সে জানে বিথী তার প্রতি দূর্বল।

-“বিথী তুমি কী বলতে চাচ্ছো খুলে বলো?? তোমার কথা শুনে তো আমার কলিজায় আঘাত লেগেছে। এতদিনে তুমি তোমার স্বামীকে চিনতে পারলেনা। তুমি মানুষের কথায় আমাকে অবিশ্বাস করলে??
আসলে আমার ভাগ্যটাই এমন। আমাকে যদি তোমার ভালো না লাগে তাহলে সরাসরি বলে দাও। কিন্তু এভাবে আমার নামে বদনাম দিয়ে দূরে চলে যেতে পারোনা।

নাকি আমার ভিতরে কোন কিছুর অভাব আছে??
বিথী আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি। আমার সন্তানের কসম খেয়ে বলি আমার কোন দোষ নেই আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।
কথাগুলো বলতে বলতে চোখদুটো পানিতে ছলছল করছে রাহাতের। বিথী আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি কারো কথা ভাবতে ও পারিনা।

রাহাতের কান্না দেখে মুহুর্তেই অন্য রকম হয়ে যায় বিথী।
শরীরের সমস্ত রাগ হঠ্যাৎ কোথায় যেনো চলে যায়। ঠোঁটদুটো চেপে ধরে হঠ্যাৎ রাহাতের সামনে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।
রাহাত আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে সন্দেহ করেছি। রাহাত আমি ও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তোমার জন্য আমি সব করতে রাজি আছি। আসলে আমি খুব বোকা। চেনা নেই জানা নেই কেউ এসে হুট করে বললো,,,আর আমি সেটা বোঁকার মতো বিশ্বাস করলাম। উফফফ! লোকটাকে আমার কষিয়ে কয়েকটা থাপ্পর মারা উচিত ছিলো।

রাহাত এসে বিথীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
ভুলে যাও জান একটা দুঃস্বপ্ন মনে করে।
-“হুম।
.
তুহিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইমরানকে কল করলো।
কলটা রিসিভ করে,,,
-“হ্যাঁ দোস্ত বল। কাজটা কী হয়েছে?
-“আমি আমার যথাসাধ্যমতো চেষ্টা করেছি কিন্তু তুই যা বলেছিলি সেটাই সত্যি। রাহাতের বউ মনে হয় আমার কথা বিশ্বাস হয়নি। তার ভিতরে স্বামীর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস দেখেছি। তুই কোন চিন্তা করিস না দোস্ত জাল বিছিয়ে এসেছি দেখা যাক আটকা পরে কিনা!
তারপরে অন্য ফরমুলা প্রয়োগ করবো।
-“ঠিকাছে।
.

.

কলটা কেটে রুমে ঢুকে বিছানার উপরে শুয়ে পড়লো ইমরান। ইমরানের মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ভালো লাগছেনা একদম।
কোথায়ও মনটা স্থীর করতে পারছেনা।
রিপা রুমে ঢুকে দেখে সমস্ত লাইট অফ করা।
ইমরান তুমি কী রুমে আছো??
কোন আওয়াজ না শুনে রুমের লাইট অন করলো। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে ইমরান শুয়ে আছে।
গুটিগুটি পায়ে ইমরানের মাথার পাশে এসে বসলো।
কপালে হাত দিতেই ইমরান চোখ খুলে তাকায়।
-“তোমার কী শরীর খারাপ?
-‘না।
-“তাহলে এভাবে চুপ করে আছো যে?? খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছো না। অফিসের কাজে ও মন নেই। চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় কত বছর যেনো ঘুমাওনি।
তুমি প্রমোশন পেলে কিন্তু একটা চকলেট পর্যন্ত খাওয়াওনি।

ইমরান মৃদু হেসে বলে,,,,
তাহলে চলো কোথায় ও বেড়িয়ে আসি।
-“ঠিক আছে বেড়াতে যাবো, তবে আজ না,কাল।
-“ঠিকাছে। তুমি যা বলবে তাই করবো।
-“ইমরান কারণটা জানতে চাইলে না??
ইমরান আড়চোখে রিপার দিকে তাকায়,,
কী কারণ রিপা?
-“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কী যেনো ভাবছো। তাই আজকে যাবোনা।
-“বাহব্বা আমার বউয়ের মাথায় কত বুদ্ধি।
আচ্ছা রিপা রাতে এত বুদ্ধি নিয়ে তুমি ঘুমাও কীভাবে?
হেসে ওঠে রিপা। বলা যাবেনা।
-“কেনো??
-“তাহলে তো আমার পঁচা বুদ্ধি তোমার মাথায় চলে যাবে।

দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা বলেই রিপাকে ধরতে নিলে রিপা দৌড় দিলো। ইমরান ও পিছু পিছু গেলো।
রিপা গিয়ে সোফার উপরে বসে পড়লে ইমরান গিয়ে রিপার পাশে বসে।
-“পালিয়ে যাবে কোথায়??
লজ্জায় রিপা চোখ ঢেকে রাখে।

এমন সময় ইমরানের মোবাইলটা বেজে উঠে।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে এক্সকিউজ মি বলে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বেলকুনিতে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট পরে কথা বলা শেষ করে সোজা রুমে ঢুকে শুয়ে পড়লো।
রিপা বুঝতে পারলো না হঠ্যাৎ করে ফোনে কথা বলার পরে কী এমন ঘটলো যে সে কোন কথা না বলেই শুয়ে পড়লো।
.

.

পরেরদিন সকালে রিপার ঘুম ভাঙার আগেই ইমরান রেডী হয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে রিপা গিয়ে হাত টেনে ধরলো।

-“কী হলো ইমরান তুমি না খেয়ে কোথায় যাচ্ছো?
রাতে ও কিছু খেলে না। এখন আবার না খেয়ে চলে যাচ্ছো।

-“ক্ষিদে নেই বলেই হাতটা ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।
.
.
.

.

কিছুক্ষণ পরে বাহিরের আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। বাহিরে বাতাস শুরু হয়ে গেলো। সাথে ঝুমঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি দেখে রিপার সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো।
বৃষ্টি তো পড়ছে কিন্তু থামার কোন নাম ও নিচ্ছেনা। মূষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে। সাথে বজ্রপাত হচ্ছে বৃষ্টির সাথে। বাসায় রিপা একা মনের ভিতরে হালকা ভয় ও কাজ করছে।

বেলা ১১.৩০ এ রিপা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে বেলকুনিতে কাপড় নাড়ছিলো। ঠিক তখনি দরজায় কলিং বেল বাজলো। রিপা বুঝতে পারলো ইমরান ভিজতে ভিজতে চলে এসেছে।
দরজা খুলে দিয়ে দেখে ইমরান ভিজে পুরো কাক হয়ে গেছে।
কিছুটা বিস্মিত ভঙ্গিতে বললো,,
-“ইমরান বাহিরে এত বৃষ্টি হচ্ছে তুমি ভিজে এলে কেনো?? কোথায় ও দাঁড়ালে পারলেনা। পুরো শরীর ভিজে গেছে। জামা কাপড় গুলো ও ভিজিয়ে ফেলেছো। চুলগুলো দিয়ে পানি পড়ছে।

রিপা তাড়াতাড়া খুব ব্যস্ততার ভঙ্গিতে ইমরানের গায়ের শার্ট খুলে দিয়ে তারপর তোয়ালে দিয়ে সমস্ত শরীর,,মাথার চুল মুছে দিয়ে বিছানার উপরে বসালো।
এভাবে যে ভিজে এসেছো এখন তো সিজন ভালো না যদি জ্বর উঠে?? তোমার তো আবার ঠান্ডার সমস্যা আছে।

-“ইমরান হাসি দিয়ে বললো আসলে আসবে। যদি মরে যেতাম তাহলে মনে হয় ভালো হতো।
ইমরানের মুখে এমন কথাশুনে রিপার চোখ পানিতে ছলছল করছে মূহুর্তের মধ্যেই।
ইমরান রিপার চোখ পানিতে ছলছল করতে দেখে বলে,,,
-” কী হলো রিপা তোমার চোখে পানি কেনো?
-‘রিপা চোখদুটো মুছে নিয়ে বললো,,
চোখের ভিতরে কী যেনো একটা পড়লো তাই চোখে জল এসে গেলো।

ইমরান বসা ছেড়ে উঠে এসে রিপার দুই চোয়াল চেপে ধরে দুই চোখে দুটো চুমো খায়। তোমার চোখে আমার ভালোবাসা এঁকে দিলাম তাই এই চোখে আর পানি দেখতে চাইনা।

রিপা ইমরানের দিকে তাকায়,,,,
তারপর নরম সুরে বলে,,,তুমি তাহলে মরে যাওয়ার কথা বললে কেনো??

সাথে সাথে ইমরান রিপাকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর গলার ভিতরে কষ্টের ঢোক গিলে বললো,,
-“রিপা আমি তোমার এত অধম স্বামী যে কিনা সামান্য একটা ভিডিও ক্লিপ ঐ শয়তানের কাছ থেকে আনতে পারছেনা।
কী করবো বলো? ভিডিও টার কথা ভাবলে আমার পুরো মাথায় রক্ত উঠে যায়।

রিপা কী করবে বুঝতে পারছেনা। ইমরান সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে।
রিপা ইমরানকে তার বাহুডোরে জড়িয়ে ধরলো।
তারপরে ইমরানের ঠোঁটে চুমো এঁকে দিয়ে চলে যেতে নিলে ইমরান রিপার হাতটা টেনে ধরে।
রিপা মুখটা ঘুরালে ইমরান রিপাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার উপরে রেখে রিপার কপালে চুমো খেলো। তারপরে রোমান্টিক বৃষ্টির দিনে দুজনে ডুব দিলো দুজনের মাঝে।

.
এদিকে বিথীর মাথায় সমস্ত কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে।
এত বছর পরে আজ কেনো জানিনা রাহাতের কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছেনা। কারণ কোন মানুষ কী হুট করে একজন অপরিচিত মানুষের নামে দোষারোপ করতে পারে??
সন্দেহ যখন একবার হয়েছে তাই এর সত্যিটা ও যাচাই করা একজন স্ত্রীর দ্বায়িত্ব।

চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here