অবৈধ সম্পর্ক পর্ব ২৬

#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৬

কিছুক্ষণ পরে ইমরান ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে।

তারপর রিপা ও উঠে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এসে
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভিজা চুলগুলো আঁচরাতে থাকে।

ইমরান এসে রিপার পাশে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
বাহ্! দুজনকে তো দারুণ লাগছে……হেসে হেসে ইমরান।
রিপা তো লজ্জায় কাতুকুতু হয়ে নিচে তাকায়।

-“ঠোঁটের উপরে ঠোঁট চেপে ধরে ইমরান বলে, ইস! লজ্জায় তো গালদুটো একেবারে লাল টমেটোর মতো হয়ে গেছে আমার বউয়ের।
দিবো নাকি ঐ গালে কামড়!

-“নিঃশ্চুপ রিপা।

রিপা ইমরানের হাতটা ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে ইমরান হেঁচকা টান দিয়ে রিপাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেলে।
তারপর রিপার দিকে এক নজর তাকিয়ে পরপরই রিপার দুই ঠোঁট জুড়ে সমস্ত মুখে চুমে খেতে থাকে।
তারপর এক মূহুর্ত থেমে গিয়ে রিপার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,,,
-“জান এখনো কী আমাকে লজ্জা লাগছে তোমার??

রিপা স্তব্ধ পাথরের ন্যায় ইমরানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তারপর দৌড়ে গিয়ে বিছানার উপরে শুয়ে পড়ে। হাঁপাতে হাঁপাতে গড়াগড়ি খেতে থাকে।
ইমরান বুঝতে পারে রিপার লজ্জা এখন ও কমেনি।

ইমরান সোজা ড্রইং রুমে চলে গেলো।
এদিকে রিপার মনের ভিতরে অনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আজ কেনো এমন লাগছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
.
একটু পরে ইমরান প্রায় নিঃশব্দে রুমে ঢুকলো।
ইমরানকে দেখেই শোয়া থেকে উঠে বসলো রিপা।
ইমরান ঢুকেই রিপার চোখে চোখ পড়তেই চোখ টিপ মেরে অন্যদিকে তাকায়। রিপা তো আচমকাই চমকে উঠে। ইমরান আলমারী খুলে শার্ট বের করে গায়ে পড়তে নিলে রিপা জিজ্ঞাস করলো,,,
কী ব্যাপার এই দুপুরবেলা সাহেবে কোথায় যাচ্ছে??
.
.
.

ইমরান শার্টের হাতা কাচাতে কাচাতে বিছানার উপরে বসে। তারপর প্যান্ট পড়ে পায়ে জুতা পরতে পরতে জবাব দিলো,,,একটু কাজ আছে তাই বের হবো।
ইমরান মুখ টিপেটিপে হাসে।

-“কী এমন কাজ শুনি যে দুপুরবেলা যাওয়া লাগবে।
-“কী যে বলোনা। কত জরুরী কাজ আছে। কত মেয়ে আমার জন্য ওয়েট করছে তুমি জানোনা।
-“তাই বুঝি!
-“হুম। কেনো তুমি জানো না বুঝি?

-“জানতাম। তবে এখন ও যে আছে সেটা তো আর জানিনা।
-“তাহলে এখন তো জানলে।
-“রিপা মুখটা মলিন করে বলে,,বেশ তো তাহলে গিয়ে দেখা করে আসো।
-“ইমরান আড়চোখে তাকিয়ে বলে,,,,তুমি কী সত্যি বলছো??
-“কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,,হ্যাঁ।

ইমরানের চোখে দুষ্টামির ভাব।
তোমাকে এত ভালোবাসি তবুও আমার উপরে তোমার এই বিশ্বাস??
-“ইয়ে মানে। না তো। আমি তো এমনি বলছিলাম।

ইমরান রিপার হাতটা চেপে ধরে বলে,,,
-“তোমার হাতটা ছাড়ার জন্য ধরিনি রিপা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। তোমার জন্য সব করতে পারবো।
রিপার বুকের ভিতরে কিসের যেন প্রচন্ড ভাঙচুর হয়। নিঃশ্বাস ও ভারী হয়ে আসে। হঠ্যাৎ থেমে গিয়ে সে ইমরানের চোখে চোখ রেখে গভীর প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
-“ইমরান ও একদৃষ্টিতে রিপার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,,,কী হলো সুন্দরী এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো??
রিপার ঠোঁটের পাতা কেঁপে উঠে।
-“রিপা তুমি কী আমাকে ভয় পাও?? আমি তোমার স্বামী রিপা। এত ভয় পেলে কী হয় জান?

তারপরে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে যায়।
আরো কয়েক সেকেন্ড পর ইমরান জিজ্ঞাস করলো,,,রিপা!
-“উম্!
-“আমার দিকে তাকাও।
রিপা মুখটা তুলে তাকায়।
-“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
-” আমি তো ভয় পাইনা। তবে তুমি কাছে আসলে আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। তোমার ছোঁয়ায় আমার প্রতিটি শিরায় শিরায় অন্য রকম এক অনূভুতি কাজ করে।

ইস! আমার লজ্জাবতী বউ।
আচ্ছা রিপা আমি তাহলে আসছি। তুৃমি দুপুরে খেয়ে নিও। আমার ফিরতে রাত হবে।

-“ঠিকাছে।
.
ইমরান চলে গেলো।
.
এভাবে কেটে গেলো ১ মাস।
.
.
.
একদিন দুপুরে রিপা প্লেটে ভাত নিয়ে কয়েক লোকমা খাওয়ার পরে আর ভালো লাগছিলো না। হঠ্যাৎ মাথার ভিতরে চক্কর কাটলে থাকে। খাওয়া ছেড়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
তারপর বমি করতে লাগলো।
বমি করতে করতে গলা পুরো ব্যাথা হয়ে গেছে। বেশ কয়েকবার লাগাতার বমি করে রিপা। বুকে প্রচন্ড রকমে ব্যাথা অনুভব করে।

বমির সাথে রক্ত বের হতে থাকে।
.
.
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কোনভাবে বিছানার উপরে শুয়ে পড়লো।
.
শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। এমন সময় ওয়াডড্রবের উপরে মোবাইলটা বাজতে লাগলো।
শোয়া থেকে উঠে আস্তে আস্তে বিছানার দিয়ে নেমে মোবাইলটা হাতে নিলো। স্ক্রিনের উপরে রাহাতের নামটা ভেসে উঠছে। রাহাতের নাম্বার থেকে কল আসায় বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠে। এতদিন পরে কী মনে করে রাহাত কল দিলো।

ফোনটা হাতে নিলে গলটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
বারবার ঢোক গিলছে।
কলটা রিসিভ করার সাহস পাচ্ছেনা।
কয়েকবার রিং বাজার পরে অবশেষে কলটা রিসিভ করলো রিপা।

-“জান তুমি কেমন আছো?? এতদিন অনেক ঝামেলায় ছিলাম তাই তোমার সাথে কথা বলার কোন সুযোগ পাইনি। অনেকদিন পরে আজ তোমার ভিডিওটা দেখলাম। তোমার প্রতিটা স্পর্শ আমার আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে। তোমার ঐ ঠোঁটের কোণে যখন আমার ঠোঁট দিয়ে কামড় দিতাম তখন আমার শরীরের প্রতিটি লোম খাঁড়া হয়ে যেতো। আজ ও সেসব স্মৃতি ভুলতে পরছিনা।
.

.

রাহাতের কথা শুনে রিপার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
ছিঃ কত নোংরা এই লোকটা। একটা আস্ত খবিশ। এর মতো জানোয়ারকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে যতক্ষণ নড়ে ততোক্ষণ পিটাতে পারতাম তাহলে আমার মনের কামনা বাসনা পূরণ হতো।

রিপা আমি অনেক ভেবেছি তোমাকে ব্লাকমেইল করাটা আমার একদম ঠিক হয়নি। তোমার আর আমার ভিতরে যা কিছু হয়েছে সবটা দুজনের ইচ্ছায় হয়েছে।
আমি একটা কুত্তার বাচ্চা যে তোমার পবিত্র ভালোবাসাকে অপমান করেছি।
রিপা তুমি কালকে মিরপুর ১১ নাম্বার বালুর মাঠের পাশে হোল্ডিং নং::৩৭৮ এ আসো তোমার সামনে ভিডিও ক্লিপটা নিজের হাতে ডিলিট করে দিবো। কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে টার্চ পর্যন্ত করবোনা।

-‘আমি গেলে তুমি যদি পাল্টি খাও তখন কী হবে?
-“বিশ্বাস করো রিপা। মানুষ কী সব সময় এক রকম থাকে?? আমাকে একবার বিশ্বাস করে দেখো ঠকবেনা কথা দিলাম। রিপা তুমি কালকে আসছো এটাই ফাইনাল।

কলটা কেটে দিয়ে মোবাইলটা বিছানার উপরে ছুরে মারলো।
.
রাত ১০ টায়…….

সোফার উপরে শুয়ে চোখের উপর হাত দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে রিপা।
ইমরান এসে দরজার লক খুলে রুমে আসে। রিপাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে নিঃশব্দে রুমে ঢুকে পোশাক চেইঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে রিপার পাশে বসলো।
ইমরান রিপার ঘুম জড়ানো মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইমরান একহাত রিপার মাথায় দিতেই রিপা নড়েচড়ে ওঠে। আধো আধো চোখে কোন রকমে চোখ তুলে তাকায়। ইমরানকে দেখে শোয়া থেকে উঠে আস্তে আস্তে বসার চেষ্টা করলে ইমরান বাঁধ সাধলো। কী করছো রিপা??
উঠছো কেনো??
-“তুমি এসেছো তাই। তোমাকে বসিয়ে রেখে আমি কী শুয়ে থাকতে পারি।
.
ইমরান রিপাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
I love you…..ripa.
-“I love you too imran.
.
ইমরান আমার কিছু বলার ছিলো।
-“হুম বলো।
-“রাহাত কল দিয়েছিলো।
-“রাহাতের নামটা শুনেই রিপাকে ছেরে দিয়ে বললো,,,,
রাহাত কী বলেছে??

-“কালকে আমাকে ওর কাছে যেতে বলেছে। ভিডিও ক্লিপটা নাকি ডিলিট করবে।
-“রিপার কাঁধে হাত দিয়ে তারপর বললো,,
রিপা এই তো মোক্ষাম সুযোগ শিকারিকে জালে আটকে ফেলা। আমি এতদিন ওয়েট করছিলাম এমন দিনটা কখন আসবে। ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি সুযোগটা এসে যাবে।

-“ইমরান তোমার কথাগুলো তো বুঝলাম না।
-‘সময় হলে সব বুঝতে পারবে। কিন্তু আমি এখন যা বলবো তোমাকে সেটাই করতে হবে। তাহলেই আমাদের প্লান সাকসেস হবে।

-“কীসের প্লান ইমরান??
-“পরে বলবো।
-“আচ্ছা।.

রিপা আমাকে এক কাপ কফি বানিয়ে খাওয়াবে??
-“হুম।
-“তাহলে এক কাপ হট কফি দাও তোমার মতো।
খেয়ে একটু চাঙ্গা হই।
-“ঠিকাছে।
রিপা উঠে রান্না ঘরে ঢুকলো।

ইমরান তুহিনের নাম্বারে কল দিলো।
-“দোস্ত দারুণ খবর আছে। কালকে রিপা যাবে রাহাতের কাছে ভিডিও ক্লিপটা আনতে।
-“১ মিনিট……কী বলছিস তুই? ভাবী যাবে মানে??
তুই জানিস না ভাবীর জীবনের ঝুঁকি আছে রাহাতের কাছে।
-‘হুম জানি। কিন্তু তুই এটা শিউর থাক রিপার শরীরে একটা আঁচড় ও দিতে পারতে দিবোনা।
-“পারবি ভাবীকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে?
-“পারবো।
-“ওকে ডান।

-“তুহিন দোস্ত আমি তোকে যে কথাগুলো বলবো মনোযোগ দিয়ে শুনবি তারপর সেভাবে কাজগুলো শেষ করবি। কালকেই হবে রাহাতের জীবনের শেষ রাত। হয় আমি বাঁচবো না হয় রাহাত।
তাহলে রাখছি দোস্ত কালকে কথা হবে।

-‘হুম।

রিপা ইমরানের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এলো। তারপর কফির মগটা ইমরানের হাতে দিলো।
কফির মগে চুমুক দিলো ইমরান। খাওয়া শেষ করে মগটা টেবিলের উপরে রাখতে যাবে ঠিক তখনি রিপা ধাপ করে ফ্লোরে পড়ে যেতে নিলে ইমরান রিপাকে সামনে নিলো।

তারপর রিপাকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলো।

রিপা সেন্সলেস হয়ে গেছে। কোন জ্ঞান নেই।
ইমরান রিপাকে ডাকছে কিন্তু রিপা সাড়া দিচ্ছেনা।

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here