#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৭
ইমরান রিপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকছে তবুও রিপা চোখ মেলে তাকাচ্ছেনা।
বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইলে ইমরান কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিলো।
দ্রুত ডাইনিং টেবিলে গিয়ে জগ দিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে দৌড়ে এসে রিপার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো তবুও রিপা চোখ মেলে তাকাচ্ছেনা।
এবার ইমরানের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পরে গেলো।
কী হয়ে গেলো রিপার?
হঠ্যাৎ করে কী হলো??
বড় কোন সমস্যা হলো না তো এভাবে সেন্সলেস হওয়ার তো কোন কারণ দেখছিনা। বেশ কয়েকদিন ধরে রিপা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া ও করছেনা।
ইমরান মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডক্টরকে কল করবে তখনি রিপা চোখ মেলে তাকায়।
মোবাইলটা রেখে ইমরান রিপাকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দুটো তার ছলছল করছে। রিপা আমি তো ভয় পেয়ে গেছি তোমার কী হয়েছে ভেবে। মনের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো।
রিপা তুমি এখন কেমন আছো?? কথা বলো তুমি।
রিপা অপলোক ভাবে ইমরানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রিপার চোখ দেখে মনে হয় চোখদুটো কিছু বলতে চাচ্ছে।
রিপা,,,রিপা কথা বলো,,,প্লিজ জান।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,,,তুমি প্লিজ শান্ত হোও। আমি ঠিক আছি। একটু মাথাটা শুধু চক্কর কাটছিলো।
-“রিপা তোমার মাথা ঘুরানোর কারণ কী??
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,,
তা তো জানিনা। তবে…..
-“তবে কী রিপা?
ইমরান তোমাকে একটা কথা বলবো??
-“হুম বলো।
-“ধরো,,যদি আমি প্রেগন্যান্ট হই তুমি কী সেটা মেনে নিবে??
রিপার কথাটা শুনে ইমরান তো পুরোই চমকে উঠে।
-‘এমন কথা বলছো কেনো রিপা?
-“এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হয়নি রিপা।
-“তাহলে??
তারপর ইমরান বসা ছেড়ে উঠে জানালার পাশে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে তারপর বলে,,,
রিপা আমি তো এখন বাচ্চা নিতে চাচ্ছিনা। কিন্তু তবুও যদি এক্সিডেন্টলি হয়ে হয়ে যায় তাহলে তো মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
কিন্তু রিপা আমার একটা কথা জানার ছিলো?
-“কী কথা?
-“বাচ্চাটা কী আমার নাকি………? আর তুমি কী শিউর তুমি প্রেগন্যান্ট?
রিপা তো পুরোই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমতা আমতা করতে করতে বলে,,
-“ইমরান তোমার কী সন্দেহ আছে আমার উপরে,,,, যদি বাচ্চাটা কনসেপ্ট হয়ে থাকে তাহলে এটা তোমার সন্তান হবেনা।
ইমরান তোমার এমন ভাবার কারণটা কী বুঝলাম না। রাহাতের সাথে আমার সম্পর্কের ইতি ঘটেছে আজ প্রায় ৩ মাস চলছে। আমি তোমার সাথে এতদিন ধরে একসাথে আছি। তবুও তুমি এটা কীভাবে বলতে পারলে যে বাচ্চাটা আমার না রাহাতের?? তবে আমি শিউর না যে আমি প্রেগন্যান্ট কিনা!
-” রিপা তুমি রাগ করছো কেনো?? আমি তো এমনি জিজ্ঞাস করলাম আর কিছুনা। প্লিজ তুমি রাগ করো না। রিপা তুমি যেহেতু শিউর না তাহলে একটা কাজ করো কালকে টেষ্ট করিয়ে দেখো যদি পজিটিভ রেজাল্ট হয় তাহলে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবো। আমি চাইনা সামান্য বিষয় নিয়ে কোন সন্দেহ বা ঝামেলা হোক। রিপা আমি কী বলছি তুমি কী বুঝতে পারছো?
-“নিশ্চুপ রিপা।
-‘
রিপা তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসি।
ইমরান উঠে গিয়ে প্লেটে করে ভাত,,,গোশত,,ভর্তা নিয়ে রুমে আসলো। রিপার পাশে বসে নিজের হাতে ভাত মাখিয়ে রিপাকে খাইয়ে দিচ্ছে। কয়েক লোকমা খাওয়ার পরে রিপা আর খেতে চায়নি তবুও জোড় করে খাইয়ে দিলো।
রিপা এখন কেমন লাগছে।
-“আলহামদুলিল্লাহ। আগের চেয়ে অনেক ভালো। ইমরান একটা কথা রাখবে??
-“কী কথা??
-“যদি আমি প্রেগন্যান্ট হই তাহলে কথা দাও বাচ্চাটা নষ্ট করার কথা ভাববে না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,,,
-“ঠিকাছে। কিন্তু তুমি ঠিকভাবে না খেতে খেতে শরীরের এই হাল করেছো। এখন থেকে বেশী বেশী খাবে।
আচ্ছা,,,,,হেসে হেসে রিপা।
.
পরেরদিন,,,,,,
.
.
.
.
ভোরের মিষ্টি আলোয় ঘুম ভাঙ্গল রিপা। আজকের আলো তার জীবনের জন্য কতটা মূল্যবান সেটা সময়ের সাথে সাথে জানা যাবে। জীবনে এমন কিছু স্মৃতি থাকে যেটা সারাজীবন মনে থাকে। আজ এমন একটা সকাল তার জীবনে হয়েছে হয়তো সে জিতবে না হয়ে হারবে।
কারণ বেঁচে থাকতে গেলে জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।
রিপা বিছানা দিয়ে উঠতে যাবে তখনি ইমরান রিপার হাত টেনে ধরে। মুখটা ইমরানের দিকে ঘুরিয়ে তাকায়।
মুখের কোণে হাসি ফুটে ওঠে ইমরানের।
তারপর বলে,,,
-“তোমার শরীর কেমন এখন??
-“মাথায় হাত দিয়ে,,, মোটামুটি। তবে এখন অনেকটা ভালো লাগছে।
-“আচ্ছা রিপা রাহাতের ব্যাপারটা মনে আছে তো?
-‘কী যে বলোনা। যার সাথে আমার জীবনটা আটকে আছে আর আমি সেটা ভুলে যাবো।
-“হুম। তাহলে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানাও আমার ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।
-“বাহব্বা। আজকে মহারাজের এত সকাল সকাল ক্ষিদে পেয়েছে কীভাবে? যে কিনা সকালবেলা না খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারে।
-“জানিনা! তবে আজকে কেনো জানি ক্ষিদে পেয়েছে।
-“ঠিকাছে। তাহলে বলো আজকে কী তোমার স্পেশাল নাস্তা খাওয়ার কোন প্লান আছে??
-“তুমি পারবে বানাতে??
-“বলেই দেখোনা। চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?
-“অনেকদিন ধরেই আলুর পরোটা খেতে ইচ্ছে করছে।
-“তাই!
-“হুম।
-“এতদিনে আমাকে বলোনি কেনো??
-“তোমার কষ্ট হবে তাই বলিনি জান।
-‘আমার কষ্টের কথা তোমার চিন্তা করতে হবেনা। এখন বলো আলুর পরোটার সাথে আর কী খাবে??
-“পরোটার সাথে তোমার যেটা ভালো লাগে তাই করো।
-“আচ্ছা।
.
.
.
রিপা রান্না ঘরে ঢুকে আলু ধুয়ে তারপর কড়াইয়ে করে গ্যাসের চুলায় বসিয়ে দিলো। তারপর ফ্রিজ খুলে গরুর গোশত নামিয়ে ভিজিয়ে রাখলো নরম হওয়ার জন্য।
আলু সিদ্ধ হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে খোসা ছাড়িয়ে বাটিতে রাখলো। তারপরে আটার সাথে পরিমাণ মতো লবন,,পানি,,হালকা চিনি দিয়ে মেখে তারপর খামির বানিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলো। গোশত কষিয়ে অল্প পানি দিয়ে ভুনা করলো। গোশত হয়ে গেলে নামিয়ে রুটি বানিয়ে ভাজতে লাগলো।
.
.
কাজ শেষ করে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকবে তখনি ইমরান দেয়ালের সাথে পা তুলে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট চেপে ধরে বলে,,
-“ময়দা মেখে তো পুরোই ভুত হয়ে গেছো।
রিপা সাথে সাথে গালে হাত দিতেই সমস্ত মুখে হাতের ময়দা লেগে গেলো।
এবার ইমরান অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।
মুখটা ভেংচি কেটে ওয়াশরুমে ঢোকার জন্য পা বাড়বে ঠিক তখনি ইমরান গিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়।
-“ইমরান সরো আমি ভিতরে যাবো।
-“তা বেশ তো। যাও। আমি কী ধরে রেখেছি তোমাকে…..হেসে হেসে।
-“ইমরান সরো না। রিপার কাঁধে হাত দিয়ে নাকের সাথে নিজের নাকটা ঘষে বলে,,
তাড়াতাড়ি আসো। ক্ষিদে পেয়েছে।
রিপা এবার ফিক করে হাসি দিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
.
.
মিনিট পাঁচেক পরে বেরিয়ে এসে ডাইনিং রুমে ঢুকলো।
ইমরান চেয়ারের উপরে বসে আছে।
রিপা রান্না ঘরে ঢুকে খাবার নিয়ে এসে টেবিলে সাজালো।
.
ওয়াও। কী দারুণ ঘ্রাণ রিপা!
কী রান্না করেছো??
-‘তেমন কিছুনা। একটু গরুর গোশত ভূনা করছি বলেই
গোশতের বাটির ঢাকনা খুলতেই। বাহ্। কী দারুণ ঘ্রাণ। ঘ্রাণে তো মন কেড়ে নিয়েছে আর অর্ধেক পেট ও ভরে গিয়েছে। কালারটা ও একেবারে অন্য রকম। দেখলেই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।
.
.
.
রিপা হাসি দিয়ে প্লেটে পরোটা আর পাশে গোশত দিয়ে ইমরানের সামনে দিলো। এতক্ষণ ঘ্রাণ খেয়ে পেট ভরেছো এবার খেয়ে পেট ভরো।
ইমরান পরোটার একপাশ ছিড়ে গোশতের সাথে নিয়ে মুখে তুলতেই খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।
রিপার চোখ হঠ্যাৎ ইমরানের দিকে পড়লো।
-“কী হলো খাচ্ছোনা কেনো?
-“রিপা এটা কী রান্না করলে??
-“ভালো হয়নি?
কী যে বলোনা। ভালো হয়নি মানে কী?? এমন টেষ্ট তো আমি মায়ের হাতে পেতাম।
হিহিহি,,,মা এসে রান্না করে গেছে।
মুখটা তুলে রিপার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আবার খাওয়া শুরু করলো।
দুজনের খাওয়া শেষ হলে ইমরান রেডী হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হবে তখনি থামকে দাঁড়িয়ে বলে,,
রিপা মন খারাপ করোনা। আমি আছি তোমার সাথে। তুমি নিশ্চিন্তে রাহাতের কাছে যাবে আমি সম্পূর্ণ তোমাট সেফটির ব্যবস্হা করে রেখেছি।
-“ইমরানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
-“রিপা তুমি কেঁদো না আজকে তোমার খুশির দিন।
কথাটা বলেই ইমরান চলে গেলো।
গাড়িতে বসে তুহিনের নাম্বারে কল দিলো।
-“দোস্ত তুই কোথায়??
-“আমি বাসা থেকে মাত্র নামলাম তুই কোথায়?
-“আমি ও নামলাম। তুহিন আমার না ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। তুই আমার পাশে থাকবি তো??
-“কী যে বলিস না। আমি সব সময় তোর পাশে আছি এবং থাকবো। ইমরান আমি আমার কাজটা করে ফেলেছি দোস্ত। কী যে খুশি লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা। এখন দেখ রাহাতের আসল চেহারাটা সবার সামনে কীভাবে নিয়ে আসবো।
-“ইনশাআল্লাহ।
-“তাহলে জলদী অফিসে আয়।
-“আচ্ছা।
.
.
রিপা জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশে মেঘের আনাগোনা চলছে। রিপার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। চুলগুলো হাতের মুঠে করে নিয়ে খোঁপা করে আটকে নিলো।
বিছানার উপরে রাখা মোবাইলটা বাজতে লাগলো।
আচমকাই লাফিয়ে উঠে বিছানার কাছে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো।
স্ক্রিনের উপরে রাহাতের নাম্বারটা দেখে কলটা রিসিভ করলো। এবার আর কোন ভয় পেলোনা। সাহসিকতার সাথে বললো,,
কয়টার সময় আসতে হবে।
-“রিপা আমি কী স্বপ্নে দেখছি নাকি?? তুমি আমার আসার সময়টা জিজ্ঞাস করছো। আর কথাগুলো ও স্বাভাবিকভাবে বলছো।
-“তুমি তো আমার শত্রু না। তাই না! তুমি আমার শুভাকাঙ্খী। যে আমার ভালোটাই চাচ্ছো। তাই তো আমার ভিডিওটা ডিলিট করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছো। আর এটা শুধুমাত্র ভালো মানুষ ছাড়া আর কেউ বলতে পারেনা। আচ্ছা তোমার বউ কী বাড়িতে চলে গেছে?
-‘এখন ও যায়নি। কালকে আমরা সবাই চলে যাবো।
-‘ওহ্। আচ্ছা সময়টা বলো।
-“সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ফ্লাটে চলে আসবে।
-“সন্ধ্যায় কেনো? বিকালে আসলেই তো হয়।
-“বিকালে আমার একটু কাজ আছে সময় পাবোনা।
তাই সন্ধ্যার পরেই আসতে হবে।
আর রিপা খোলা চুলে তোমাকে দারুণ লাগে। তুমি চুলগুলো খোপা না করলে ও পারতে।
রিপা তে পুরোই অবাক হলো কী বলছে সে?? আমাকে খোলা চুলে দেখলো কীভাবে?
রিপা মোবাইলটা কানের কাছে রেখে কথা বলতে বলতে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে ভালো করে বাহিরের দিকে তাকালো।
হঠ্যাৎ রিপার চোখ আটকে গেলো সামনের বিল্ডিংয়ের বেলকুনির দিকে। রাহাত রকিং চেয়ারের উপরে বসে এদিকে তাকিয়ে আছে।
রিপার চোখের দিকে রাহাতের চোখ পড়তেই রিপা পুরোই হকচকিয়ে গেলো।
রাহাত আমি যেটা দেখছি সেটা কী সত্যি নাকি স্বপ্ন?
-“একদম সত্যি।
-“তুমি ওখানে কী কর?
-“আমি তো এই ফ্লাটেই বিথীর সাথে থাকছি এতদিন যাবত।
-“ওহ্।
-‘হুম।
-“আচ্ছা আমার এখন কাজ আছে রাখছি সন্ধ্যা ৭ টার ভিতরে পৌঁছে যেও কিন্তু।( রাহাত)
-“ঠিকাছে।(রিপা)
.
.
.
কলটা কেটেই জানালার পর্দা টেনে দিয়ে ইমরানের নাম্বারে কল দিলো।(রিপা)
-“ইমরান এই মাত্র রাহাত কল দিয়েছিলো।
-“কী বললো হারামজাদায়।
-“সন্ধ্যা ৭ টায় সেখানে পৌঁছাতে বলছে। আরেকটা জরুরী কথা রাহাত তো আমাদের সামনের বিল্ডিংয়ের ফ্লাটে থাকে।
-“হুম আমি জানি।
-“তাই। তাহলে আমাকে যে বললে না।
-“তুমি চিন্তা করবে তাই বলিনি। আর আমি চাইনা যে আমার জানে এসব বিষয়ে নিয়ে কোন চিন্তা করুক।
-“তুমি আমাকে এত ভালোবাসো ইমরান?
-“হুম।
তাহলে এখন রাখছি। আমি সন্ধ্যায় যাবো।
-“তুমি যাও কিন্তু ভয় পেওনা। আমি তো আছি। রাহাত তোমার এক চুল ও ক্ষতি করতে পারবেনা।
বলেই কলটা কাটলো সে।
.
.
.
.
বিকাল ৫ টায় দিকে রেডী হলো রিপা। শাড়ী পড়েছে সে কোন সাজগোজ করেনি। শুধুমাত্র চুলগুলো খোঁপা করেছে।
তারপর মাথায় শাড়ির আঁচলটা দিয়ে টেনে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাসা দিয়ে নামলো।
তারপর রিক্সা করে গন্তব্য স্থানে পৌঁছালো।
মোবাইলটা অন করে দেখে ৬.৪৫ বাজে কিন্তু বাসাটা এখন ও খুঁজে পায়নি রিপা।
রাহাতের নাম্বারে কল দিলো।
-“রিপা সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসো।
রিপা উপরে তাকিয়ে দেখে ৫ তলায় জানালা দিয়ে রাহাত তাকিয়ে আছে।
রিপার সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠলো। একটু ভয় কাজ করছিলো এবার।
৫ তলায় উঠার পরে দেখে ফ্লাটের দরজা খোলা। একটু পরে ভিতর থেকে রাহাত বেড়িয়ে আসে।
-“এসো ভিতরে আসো।
-“রিপা ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকতেই রাহাত দরজাটা আটকে দিলো।
-“কী করছো রাহাত দরজা আটকালে কেনো??
খুলে দাও।
-“আরে রিপা এত ভয় পাচ্ছো কেনো??
আমি তো নাকি! বাহিরের কেউ তো না।
-“মানে।
-“ওহ্ কিছু না। কী খাবে বলো? ঠান্ডা না গরম।
-“কিছু খাবোনা। ভিডিওটা আগে ডিলিট করো তারপর আমি চলে যাবো।
-“ডিলিট তো করবো কিন্তু তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেনো??
তোমার তো দেখছি পুরো শরীর দিয়ে ঘাম টপটপ করে পড়ছে। এই রুমে এসি ও নেই যে অন করে দিবো।
-‘না আমি ঠিকাছি। তুমি তোমার কাজটা করো।
একটুপরে রাহাত রিপার হাতটা ধরতেই রিপা বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,
-“রাহাত কী করছো??
-“কী করলাম?
-“আমার গায়ে টার্চ করছো কেন??
-“তোমার শরীরটা কী সোনায় বাঁধানো নাকি! যে টার্চ করা যাবেনা।
-“এসব কী বলছো রাহাত?
-“রাহাত রিপাকে জাপটে ধরে বলে,,
আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা রিপা।
প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা। আমি তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকতে পারবোনা।
রিপা রাহাতকে ধাক্কা মেরে দরজা খুলতে যাবে তখনি সে রিপার শাড়ির আঁচল ধরে টেনে ধরলো।
রিপা কোন রকমে কাঁধের সাথে আঁচলটা চেপে ধরে রেখেছে দুহাত দিয়ে।
রাহাত রিপার আঁচলটা আরো জোরে টান দিলো। আঁচলটা প্রায় খুলে যাওয়ার পালা হলে রিপা দুহাত দিয়ে বুকটা আড়াল করলো।
রাহাত ক্ষিপ্রগতিতে রিপার উপরে ঝাপ দিলে রিপা সরে গিয়ে রাহাতকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলে সে দেয়ালের উপরে পরে।
রিপা তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলতে নিলে রাহাত আবার ও রিপাকে বাঁধ সাঁধলো। তবুও রিপা দরজাটা অনেক কষ্টে খুলে ফেললো।
দরজার বাহির থেকে ইমরান ভিতরে এসে রিপাকে সামলে আঁচলটা ঠিক করে পাশে সরিয়ে দিলো।
-“হারামজাদা তোর তো দেখছি কলিজাটা অনেক বড় হয়ে গেছে। তুই আবার ও নোংরা কাজ করতে চেয়েছিস।
-“একশো বার করবো। তুই কী ভেবেছিস আমি এত সহজে রিপার পিছু ছেড়ে দিবো। কক্ষনো না।
রিপাকে পাওয়ার জন্য কত কিছু করলাম।
তোর মতো ইমরান ১০ টা এলে ও আমার কিছু করতে পারবেনা।
-“তোর খেলা শেষ রাহাত। কথায় আছে না মানুষের পাপের বোঝা যখন ভারী হয়ে যায় তখন তার শাস্তি তাকে পেতেই হয়। ঠিক তেমনি আজকে তোর ও শাস্তি হবে। তোকে কত করে বুঝিয়েছিলাম কিন্তু তুই বুঝলি না। এবার যখন তোর কবরে এক মুঠো মাটি দেওয়ার জন্য ও কাউকে পাবিনা। আর তখন বুঝবি আপন মানুষ কাছে না থাকলে কেমন লাগে।
-“অট্টহাসিতে মেতে উঠে রাহাত। তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস। তোর কথায় কী গরু মরবে। আমার বউ আমাকে ফেরেশতা মানে। আমি যা বলবো তাই ও বিশ্বাস করবে। এখন তুই গিয়ে মুড়ি ভেজে খা।
.
ইমরানের পিছন দিয়ে বিথী বেরিয়ে এসে রাহাতের সামনে দাঁড়ায়।
.
.
.
বিথীকে দেখেই রাহাতের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।
মনে হয় ভুত দেখেছে।
.
.
-“কী হলো কথা বন্ধ হয়ে গেলো কেনো?? (ইমরান)
.
.
আমি যেমন ঠান্ডা তেমনি আবার রেগে গেলে গরম হয়ে যাই। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেললে তাকে আস্ত রাখিনা সে আমার যত আপন লোক হোক না কেনো??? কথাটা বলেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে বিথীর।