#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৮
বিথীর মায়াবী অন্তরটা কেমন যেন উথাল পাথাল করে ওঠে। বুক ফুলে কান্না বেরিয়ে আসে তার। রিপাকে জাপটে ধরে কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলে,,,
আমার সব শেষ হয়ে গেছে বোন। বিশ্বাস করে এত বড় ধোঁকা খাবো কখনও কল্পনাও করতে পারিনি।
-“কেঁদো না বোন। যা হওয়ার হয়ে গেছে এসব নিয়ে এখন চিন্তা করোনা।
রাহাত আমাকে ভীষণ ফাঁকি দিয়েছে,,ভীষণ ফাঁকি।
এত বড় অন্যায়টা করতে তার বুক একবার ও কাঁপলো না। আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে এত বড় বেঈমানি কীভাবে করতে পারলো সে? বলতে পারো কতবড় বিশ্বাস ঘাতক সে। ভাবলে ও আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
রাহাতের চোখ পানিতে টলমল করছে। কোন কথা বলছেনা।
রাহাত বসা ছেড়ে উঠে বিথীর কাছে গিয়ে অনুনয় করতে যাবে তখনি বিথী তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।
don’t touch me…… তোমার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ধরবেনা।
-কী বলছো বিথী?? আমি তোমাকে ধরবো না।
-“একদম না। আমাকে ধরার কোন অধিকার নেই তোমার। তোমার ঐ নোংরা মুখে আমার নামটা শুনতে ও ঘৃণা লাগছে। ছিঃ রাহাত তুমি এতটা নোংরা! আমার প্রতি তোমার এই ভালোবাসা?? এই তোমার পরিবারের দেওয়া শিক্ষা। যাকে নিয়ে আমি সবার সাথে গর্ব করতাম আর সে কিনা………! এটা দেখার আগে আমার মরণ হলোনা কেনো। এই কথাটা যখন সবাই জানবে কীভাবে মুখ দেখাবো আমি? কী জবাব দিবো তাদের প্রশ্নের উত্তরের?? রাহাত তুমি আমাকে সব সময় পুরুষ্কার দিতে চাইতে। কিন্তু আমি বলেছিলাম সময় হলে নিবো। আজকে আমি সেই মহামূল্যবান পুরুষ্কারটা পেলাম। এমন পুরুষ্কার যেটা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণা অক্ষরে লেখা থাকবে। স্বামীর পরকিয়া।
সবাই আঙ্গুল তুলে বলবে ঐ দেখ কে যায়?? স্বামীকে নিজের করে রাখতে পারেনি আর যার কারণে আজকে সে অন্য পথে গেছে।
.
.
.
.
.
বিথীর কথা শুনে সাথে সাথে কপালের মাঝে কয়েকটা ভাঁজ পড়ে গেলো রাহাতের।
রাহাতের মুখটা একেবারে কালো হয়ে গেছে। কী করবে বুঝতে পারছেনা। বিথী তুমি যা দেখেছো এমনটা সত্যি নয়। এই মেয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমার কাছ থেকে মোটা এমাউন্ট হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। বিশ্বাস করো আমার কোন দোষ নেই।
-“বিশ্বাস! এরপরে ও বিশ্বাস করবো?
-“আমাকে তোমার বিশ্বাস করতেই হবে। তুমি তোমার স্বামীর কথা বিশ্বাস না করে অন্যের কথা বিশ্বাস করছো ভাবতে ও অবাক লাগছে।
just shut up……rahat…..
একটা কথা ও বলবেনা।
আমার এই মূহুর্তে কী রিয়েক্ট করা উচিত ভেবে পাচ্ছিনা। আমার ভাবতে ও লজ্জা লাগছে তুমি এত বাজে মনের লোক। তুমি না সেদিন তোমার ছোট্ট সন্তানের কসম খেয়ে বলেছো তুমি কোন কিছু করোনি। তাহলে আমি আমার নিজের চোখে যেগুলো দেখেছি সেগুলো কী মিথ্যে ছিলো??
-“হ্যাঁ,,,হ্যাঁ। সব কিছু মিথ্যা। আমি নির্দোষ।
-“বাহ্। তুমি তো দেখছি অভিনয় করতে ও শিখে গেছো। তাহলে ডক্টর না হয়ে এক্টর হলে না কেনো??
তাহলে অনেক মেয়েদের নিয়ে খেলা করতে পারতে।
|
|
|
|
রাহাত আবার ও বিথীর কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে অনুনয় বিনয় করতে থাকে। বিথী এবার রাগান্বিত হয়ে রাহাতের হাতটা সরিয়ে গালে কষে থাপ্পর লাগালো। থাপ্পড় এতটাই জোড়ে ছিলো যে সাথে সাথে ইমরানের গায়ের উপরে পড়লো। ইমরান ও গা থেকে সরিয়ে রাহাতের গালে থাপ্পর দেয়। থাপ্পর খেয়ে আবার ও সে বিথীকে জাপটে ধরে বলে,,,
জান আমাকে প্লিজ বিশ্বাস করো। আমি কিছু করিনি। এরা সবাই মিলে আমাকে ফাঁসাচ্ছে।
রাহাত আমি এতটা ও বোকা নই। তোমাকে আমার সেদিন হসপিটালে বসেই সন্দেহ হয়েছিলো। কিন্তু কোন প্রমাণ হাতে ছিলোনা বলে এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু আমার ভাগ্যটা এতই ভালো যে তুহিনের সাথে পরশুদিন দোকানে দেখা হয়। আমাকে দেখেই সে ইমরানকে কল করে আসতে বলে। ইমরান আসার পরে তাকে দেখেই আমি চিন্তে পারি। কী আশ্চর্য ঘটনা ঘটে একেবারে কাকতালীয়। ইমরান আমার কলেজ ফ্রেন্ড ছিলো। ইমরান আমাকে সব সত্যিটা খুলে বলে। তোমার করা সমস্ত অপকর্মগুলো। আর আমি ইমরানকে ভালো করেই চিনতাম যে ইমরান কখনও মিথ্যা বলেনা।
.
কপাল কুঁচকে বললো,,,তার মানে ইমরান তোমার পুরানো প্রেমিক! কতদিন ধরে তোমাদের এই সম্পর্ক চলছে।
-“কী বলছো এসব?? ইমরান শুধু আমার একটা ভালো বন্ধু এর বাহিরে কিছুনা।
-“শোন,,ছেলেরা কখনও মেয়েদের বন্ধু হতে পারেনা। এখন বলো বিয়ের আগে কয়বার বেড শেয়ার করেছো??(রাহাত)
আর শোন তুমি ইমরানের সাথে আর আমি রিপার সাথে ইনজয় করি। কী বলো?? তাহলে কোন ঝামেলা থাকবেনা।
.
.
রিপার মেজাজ এবার পুরোই বিগড়ে গেলো। সাথে সাথে পায়ের স্যান্ডেলটা খুলে নিয়ে রাহাতকে এলোপাথাড়ি ভাবে পেটাতে থাকে। শালা হারামজাদা। তুই একটা ছোটলোকের বাচ্চা,,,বেঈমান। তোর এত শখ কেন রে অন্যের বউয়ের সাথে বেড শেয়ার করার। বউয়েরটায় কী হয় না??
একদিকে তোর বউ আবার অন্যদিকে আমাকে লাগবে।
আসলে কুত্তার লেজ কখন ও সোজা হয়না যতই ঘি দিয়ে সোজা করুক।
.
.
এবার বিথী এদিকে এসে রাহাতের দুগালে লাগাতার চড় দিতে থাকলো জানোয়ারের বাচ্চা। আমি কী তোকে খুশি করতে পারিনি??
আমার ভালোবাসায় কী এমন ঘাটতি রেখেছিলাম যার জন্য অন্য মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছিস। আমার সমস্ত ভালোবাসা তোকে উজাড় করে দিয়েছি। তবুও তুই……!
তুই বাচ্চার বাপ হইছিস তবুও তোর চরিত্র ভালো হয়নি। একবার ও কী আমাদের কথা মনে করলিনা।
শোন তোর সাথে এখন আর একসাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভবনা। এতটুকু দুধের বাচ্চাটা আজ তোর জন্য পিতৃহারা হবে। কথাগুলো বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদছে বিথী।
.
বিথীর কথাগুলো ছুরির মতো গিয়ে কলিজায় বিঁধেছে রাহাতের। নিজের ভুলের জন্য এখন অনুতপ্ত হচ্ছে রাহাত।
ভাবছে,,আসলেই সে অনেক বড় পাপ করেছে। আর এই পাপের কোন ক্ষমা নেই।
.
.
কথার মাঝে হঠ্যাৎ করে রিপা পড়ে যেতে নিতে ইমরান রিপাকে সামলে নেয়। রিপা আবার ও সেন্সেলেস হয়ে যায়।
ইমরান যখন রিপাকে নিয়ে ব্যস্ত রাহাত তখন ফ্যালফ্যাল করে রিপার দিকে তাকিয়ে আছে।
বিথী আস্তে করে গিয়ে রাহাতের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে গ্যালারীতে ঢুকে ভিডিওটা ডিলিট করে। তারপর মোবাইল থেকে মেমোরিটা বের করে নিলো। বের করেই চাপ দিয়ে মেমোরিটা ভেঙে ফেলে আর মোবাইলটা কে ও আছাড় মেরে মেরে কয়েক টুকরা করে ফেললো।
বিথীকে দেখে মনে হচ্ছে সমস্ত রাগ মোবাইলের উপরে দেখাচ্ছে।
.
.
.
.
তুহিন এসে বলে,,,দোস্ত ভাবী তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তাড়াতাড়ি কর হসপিটালে নিতে হবে।
.
.
.
.
বিথী তুমি তোমার কুলাঙ্গার স্বামীকে ভালো করে বুঝিয়ে বলো,,,,আমি যদি চাইতাম ব্লাকমেইল করার জন্য পুলিশে ধরিয়ে দিতে কিন্তু আমি সেটা করবোনা কারণ তোমার কোল জুড়ে ছোট্ট একটা সোনামণি এসেছে। বাবা হারানোর যে যন্ত্রণা কতটা করুণ সেটা আমি নিজের চোখে উপলদ্ধি করেছি। বিথী ভালো থাকো যদি আবার কখন ও দেখা হয় তাহলে কথা হবে।
.
.
.
.
ইমরান রিপাকে কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামলো। তারপর গাড়িতে রিপাকে কোলে করেই বসালো। তুহিন গাড়ি চালিয়ে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসলো।
.
.
রিপাকে বেডের উপরে শুয়েই রাখলে ডক্টর এসে সবাইকে বাহিরে যেতে বললো।
কিছুক্ষণ পরে ডক্টর বেরিয়ে আসলো।
ইমরান বাহিরে দাঁড়িয়ে পায়চারী করছিলো। ডক্টরকে দেখে এগিয়ে এসে বলে,,
-ডক্টর আমার ওয়াইফের অবস্থা কেমন?? বাসায় বসে ও সেন্সলেস হয়ে গেছিলো। এমনটা কেন হয় ডক্টর??
ডক্টর ঠোঁটের কোণে হাসি এনে বললো,,,
এটা কোন সমস্যা না এই সময়ে এমন হয়ে থাকবে।
-“মানে ডক্টর।
-“অভিনন্দন। আপনি বাবা হতে চলেছেন। এখন কিছু টেষ্ট করানো লাগবে যেটা করলে বুঝতে পারবো কতদিন চলছে।
.
.
ডক্টরের কথা শুনে তো ইমরান হা করে তাকিয়ে আছে
কী বলবে বুঝতে পারছেনা। তবুও মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,,,থ্যাংকস ডক্টর।
-“ওয়েলকাম।
ইমরান গিয়ে হসপিটালে রাখা সোফার উপরে বসলো।
মাথার উপরে ফ্যান চলছে তবুও সে প্রচন্ড পরিমাণে ঘামছে। তুহিন পাশে বসে ইমরানের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,,,দোস্ত কী হয়েছে তোর?? এভাবে ঘামছিস কেন?
-“তুহিন আমি এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু রিপা এখন প্রেগন্যান্ট। তাই বুঝতে পারছিনা কী করবো??
-“কী যে বলিস না দোস্ত। তুই বাবা হতে পারবি এটা তো পরম সৌভাগ্যের কথা। শোন মানুষ লাখ লাখ টাকা খরচ করে ও একটা সন্তানের মুখ দেখতে পারেনা। আর তুই তো কত ভ্যাগবান এটা তোকে মানতে হবে।
-‘হুম।
-‘নিজের মনকে বুঝা দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
বিকাল বেলা সমস্ত টেষ্ট করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ডক্টরের কাছে দিলো। সে রিপোর্টগুলো ভালো করে দেখে বললো,,,
৪৫ দিন চলছে বাচ্চাটার। মানে দেড় মাস। কিন্তু পেশেন্টের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। শরীরে দূর্বলতা অনেক। আপনার অনেক দ্বায়িত্ব। নিজের সন্তান এবং স্ত্রীর খেয়াল রাখবেন।
-“ঠিকাছে ডক্টর।
.
.
রাতে রিপাকে নিয়ে বাসায় আসলো ইমরান। ইমরানকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে খুশি না। রিপা তবুও গিয়ে ইমরানকে খুশি করার জন্য বলে,,,
আমি জানি তুমি এখন কোন বাচ্চা নিতে চাচ্ছোনা। কিন্তু এখন যেহেতু এসে গেছে তাতে তো আমার কোন দোষ নেই। এখন শোন তুমি আমার স্বামী তোমাকে খুশি রাখা আমার দ্বায়িত্ব। তুমি যেহেতু চাইছো না তাই কালকে এই বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেলবো।
ইমরান কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো।
.
.
.
.
ছাদে গিয়ে বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মনের ভিতরে হাজারো প্রশ্ন দানা বেঁধে আছে। রিপাকে তো বিয়ের প্রথমদিনন থেকেই বলে এসেছি বাচ্চা নিবো না,,,বাচ্চা নিবো না। আসলে এই কথাগুলো শুনলে সত্যি সবার খারাপ লাগবে। বাচ্চা তো আর কেউ জোড় করে আনতে পারেনা। আমার এভাবে রাগ করাটা একদম বোকামি। এখন রিপাকে সান্ত্বণা দিবো তা না করে রাগ করে এখানে চলে এসেছি।
ইরমান কথা শেষ করেই দৌড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে সোজা রিপার রুমে ঢুকলো।
রিপা ফ্লোরে বসে বিছানায় মুখ গুজে কান্না করছে। আস্তে করে গিয়ে রিপাকে দাড়া করিয়ে কোলে তুলে নিলো। তারপর বিছানার উপরে শুইয়ে দিয়ে কপালে আলতো করে চুৃমো এঁকে দিলো।
রিপা বাচ্চা নষ্ট করার কথা আর কক্ষনো বলবেনা। আমি আমাদের প্রথম সন্তানটা চাই।
-“নিশ্চুপ রিপা।
-“কী হলো কথা বলো না কেনো??
এবার রিপা খুশিতে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,,,
ইমরান তুমি সত্যি বাচ্চা নিবে??
-“হ্যাঁ জান।
রিপা ইমরানকে জাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো।
রিপাকে ইমরান ও তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে শক্ত করে ধরে বললো,,
রিপা তোমাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আর কখনো কষ্ট দিতে চাইনা। আমি উপলদ্ধি করতে পেয়েছি বাচ্চা নিবো না বলাতে তুমি কতটা কষ্ট পেয়েছো। রিপা আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
প্লিজ জান I am really really sorry…..
আমার ভুলের জন্য তুমি যে শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো।
-“তুমি এভাবে বলছো কেনো??. আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। ইমরান তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিও আমি আর কিছু চাইবোনা তোমার কাছে।
আর এটাই তোমার শাস্তি।
.
.
.
.
ইমরান রিপাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর রিপা ও কাঁদছে। আজ সমস্ত সন্দেহের অবসান ঘটে দুজনের সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়ে আজ নতুন করে ফিরে পেলো পুরানো ভালোবাসার অনুভুতিটুকু।
যা এতদিন মনের গভীরে ঢাকা ছিলো আজ সেটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে নিজস্ব উদ্যোমে,,আপন শক্তিতে। আর এই ভালোবাসা এতটাই মজবুত হয়ে নতুন রুপে ফিরে এসেছে যেটা আর কেউ সহজে ভাঙ্গতে পারবেনা।
শুরু হলো দুজনের নতুন করে পথ চলা।
.
.
.
.
চলবে………………………