#অভিমান
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৭
শপিংমলের বাইরে জ্ঞানশূন্যভাবে দাঁড়িয়ে আছে ঝুমকো। দিন দুনিয়ায় কোনো হুশেই যেনো সে নেই। রুম অনেকক্ষন থেকে কথা বলার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ঝুমকো নিজের মতো অনুভূতিহীন কিছু ভেবে চলেছে। রুম এবার বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
‘আপু তুমি থাকো আমার একটু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে হবে। আমি যাই। গাড়ি নিয়ে গেলাম।’
ঝুমকো ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে শুধু বলল,
‘যা।’
একটুপর গাড়ির শব্দ পেয়ে ঝুমকো চমকে উঠে। সম্ভিত ফিরে সে দেখে রুম গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। ঝুমকো চিতকার করে তখন বলে,
‘এই বেয়াদব ছেলে, গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছিস যে আমি কি দিয়ে যাবো?’
রুম গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে বলে,
‘তুমি রিকশা দিয়ে চলে যাও আপু প্লিজ। আমার আর্জেন্ট যেতে হবে।’
ঝুমকো রাগী নিঃশ্বাস ফেলে হাটা ধরে। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে,
‘আজ হেটেই বাড়িতে যাবো। সব বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে। ‘
রাগে গিজগিজ করতে করতেই ঝুমকোর মনে পরে শপিংমলের কথা। পা চালানো বন্ধ করে ও নিজের গালে হাত দেয়। চোখ বড় বড় করে বিরবির করে,
‘কি ভয়ানক কথা! আমাকে নাকি কুট্টুস করে কামড় দিবে? এই ছেলেটা কবে এতো মারাত্মক ভাবে বেয়াদব হলো? সাংঘাতিক! ‘
ঝুমকোর অবচেতন বিস্ময়ের মাঝে মনে হয় তার কানে সুরসুর করে বাতাস লাগছে। ফসফস একটা অস্ফুটে ধ্বনি কিছু বলতে চাইছে। ঝুমকো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে শুনে। সে বলছে,
‘কুট্টুস করে কামড় দিতে দিবে না ঝুম? আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে টুক্কুস করে দেই?’
ঝুমকো তার জ্বলন্ত বিস্ফোরিত দুটো চোখ নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। সাথে সাথে রাহান সরে যায়। মুখ টিপে হেসে উঠে। ঝুমকো সদ্য তেজে উঠা আগুনের ন্যায় বলে,
‘সমস্যা কি? ফাজিল ছেলে। আমাকে জ্বালাচ্ছো কেনো? বারবার কিসের কামড় কামড় করছো?’
রাহান ঠোঁট উলটে বলে,
‘একটা কামড় দিতে দিলেই তো আর জ্বালাই না।’
ঝুমকো চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে বলে,
‘রাহান তুমি এই মুহুর্তে আমার চোখের সামনে থেকে যাও।’
রাহান কাধ নাচিয়ে বলে,
‘আচ্ছা।’
শিস বাজাতে বাজাতে রাহান স্থান ত্যাগ করে। ঝুমকো কিছুক্ষণ আবারো বলদের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের সাথে নিজেই বলে,
‘হচ্ছে টা কি এসব? সবাই কি আমাকে পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিবে না কি?’
ঝুমকো আবার হাটা ধরে। রাগে তার ফোলা ফোলা গাল দুটো লাল টকটকে আকার ধারন করে।
বাড়ি যেতে যেতে অযাচিতভাবে সন্ধ্যা নেমে যায়। ঝুমকো ক্লান্ত শরীরে স্থিত পায়ে হেটে গিয়ে সোফায় শরীর এলিয়ে দেয়। কামিনী বেগম মাগরিবের নামাজ পড়ে উঠেছেন মাত্র। হাতে তসবি গুনতে গুনতে তিনি এসে ঝুমকোর পাশে বসেন। বিরবির করে দোয়া-দরুদ পড়ে ঝুমকোর সারা শরীরে তিনবার ফু দিয়ে দেন। এরপর বলেন,
‘কোথায় গিয়েছিলি? রুম তো সেই কখন এসে পরেছে।’
ঝুমকো ক্লান্ত গলায় বলল,
‘রুম এসে পরেছে?’
‘হুম। বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছে।’
‘ওহ।’
‘তোর দেরি হলো কেনো?’
ঝুমকো ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রাগী রাগী গলায় বলল,
‘তোমার নাতিন আমাকে ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে। কত্ত বড় বেয়াদব দেখেছো? আমিও জেদের ঠেলায় পায়ে হেটে এসেছি।’
ঝুমকো গাল ফুলিয়ে বলে। কামিনী বেগম কপাল চাপড়িয়ে বলেন,
‘এই মেয়ের এতো জেদ! বলি মেয়ে মানুষের ওতো তেজ দেখানো ভালো নয় বুঝলি?’
ঝুমকো ভেঙচি কাটে। পা ধরে কুকরিয়ে উঠে বলে,
‘পা ব্যাথা করছে নানুমনি।’
কামিনী বেগম খেকানো গলায় বলেন,
‘যা খুশি তাই কর। আমি মরলেই তোদের শান্তি। এগুলো কোনো কথা হলো। একজনের কাজ থাকতেই পারে সে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে বলে ওই ওতোদূর থেকে হেটে আসতে হবে? বলি এগুলো কেমন ধারা জেদ হ্যা?’
ঝুমকো গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,
‘তোমার নাতিনের কোনো ইম্পোর্টেন্ড কাজ ছিলো না। গিয়েছিলো তো বন্ধুবান্ধব দের সাথে দেখা করতে আমাকে নিয়ে গেলে কি হতো। তা না করে আমাকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এখন আবার বাড়ি বয়ে ছাগলদের নিয়ে এসেছে।’
কামিনী বেগম উঠে ব্যাথার ওষুধ আনতে চলে যান। উপরের রুমের ঘর থেকে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ পাওয়া যায়।
নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার সময় ঝুমকো রুম এর ঘরে উঁকি দেয়। রুম রা তিনজন জানের দোস্ত। রিয়া, রুম, সবুজ। ওরা ছোটোবেলা থেকেই এক সাথে সময় পার করে এসেছে। ঝুমকোর সাথেও বেশ সখ্যতা। ঝুমকোর উঁকি ঝুঁকি দেওয়ার মাঝেই রিয়া দেখে ফেলে ডাক দেয়। ঝুমকো ভেতর যায়। রুম এর কান ধরে বলে,
‘আমাকে নিয়ে আসলে কি হতো? তোর জন্য আমার ওই ফাজিল ছেলেটার সাথে আবার দেখা হয়েছে? কত্তো বড় সাহস আমাকে না কি….
ঝুমকো থেমে যায়। রুম অবুঝের মতো পিটপিট করে তাকিয়ে থেকে বলে,
‘কার কথা বলছো আপু? ‘
ঝুমকো রুম এর মাথায় চাপড় দিয়ে বলল,
‘মাথামোটা।’
তখনি বারান্দা থেকে কেউ ভরাট স্বরে বলে উঠে,
‘আমার কথা বলছে তোমার আপু।’
ঝুমকো ভ্রু কুচকে পেছন দিকে তাকিয়ে রাহানকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আকস্মিক রুমের পিঠে কিল বসিয়ে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,
‘ও এখানে কি করছে?’
রুম নিজের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
‘আসার সময় দেখলাম ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। তখন আমি ভাইয়াকে লিফট দিতে চাইলাম। ভাইয়া গাড়িতে উঠলে আমাদের বাড়িতে আসার অফার দিলাম। ভাইয়া রাজি হলো। আমি নিয়ে আসলাম। এত্ব আমার দোষ কোথায়? শুধু শুধু আমাকে মারলা আপু। আর আগে তো ভাইয়া প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসতো। তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতো। আমাকেও তো নিয়ে যেতো। তোমরা তো প্রেম করতা সবাই জানে। তাহলে….’
এক রাম ধমক দিয়ে রুম কে থামিয়ে দেয় ঝুমকো। চোখের মনি দুটো কে বড় বড় করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘তোর ঘরে আসাই আমার ভুল হয়েছে। ‘
ঝুমকো চলে যেতে উদ্ধ্যত হয়। রিয়া ঝাপটে ঝুমকোর হাত ধরে বলে,
‘ঝুম আপু যেও না। আমাদের সাথে একটু বসো। কতদিন পর তোমার সাথে দেখা।’
রাহানও রিয়ার মতো ভঙ্গি করে বলল,
‘হ্যা ঝুম আপু..উফফ স্যরি ঝুম যেও না। আমাদের সাথে বসো। কতদিন থেকে তোমার সাথে আড্ডা দেই না।’
ঝুমকো দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলল,
‘গেট লস্ট। এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বের হও।’
রাহান চোখ বড় বড় করে আঙ্গুল নাড়িয়ে বলে,
‘তোমার এতো বড় সাহস আমাকে বের করে দেও? বাড়ি কি তোমার? বাড়ি হচ্ছে আমার নানী-শ্বাশুড়ির। তুমি কে বের করে দেওয়ার? হু আর ইউ?’
রিয়া ঝুমকোর দু কাধ ধরে বলে,
‘চলো তো আপু। আমরা ছাদে গিয়ে আড্ডা দেই। ভাইয়ার কথা ধরো না তুমি।’
ঝুমকো রাগে চোয়াল শক্ত করে রিয়ার সাথে ছাদে গেলো। পেছন থেকে রাহান দৌড়ে যেতে যেতে বলে,
‘এই ঝুমকোলতা আমাকেও নিয়ে যাও। আমার মতো অবলা বাচ্চাকে একা ফেলে চলে যাচ্ছো?’
রাহানের কথা শুনে ঝুমকো অন্যদিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয় রিয়ার থেকে লুকিয়ে। মনে মনে ঝুমকো বলে,
‘এই ছেলেটা এমন হলো কবে? যেই ছেলের ইগোর ধারের কাছ দিয়ে যাওয়া যেতো না সেই ছেলের এ কি দশা!’
‘এই ঝুমকো আপু। বিরবির করে কি বলছো? আবার হাসছোও?’
ঝুমকো আবার গম্ভীর হয়ে বলে,
‘কককই নাহ। এমনি। পা ব্যাথা করছে তো তাই বিরবির করছিলাম।’
‘ওহ চলো ছাদে গিয়ে বসে থাকি। ব্যথা কমে যাবে। তোমারও যা জেদ আপু। এতো রাগ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক।’
‘হয়েছে হয়েছে আর দাদীগিরি করতে হবে না। চল।’
কোথায় ভেবেছে ছাদে গিয়ে নিরিবিলি ভাবে একটু বসবে ঝুমকো তা না এখানেও যেনো বৈঠকখানা বসিয়েছে। রাহান, রুম, সবুজ সবাই এখানে এসে হাজির হয়েছে। ছোটোবেলা থেকেই সবুজ আর রিয়ার এ বাড়িতে যাতায়াত আছে বলে ওরা সবাই রাহান কেও চিনে। তাই পরিচয় করার ঝামেলাটা আর পোহাতে হয় নি।
ঝুমকো বসে ছিলো দোলনায়। আকাশে মস্ত বড় একটা চাঁদ কিরণ ছড়াচ্ছে। টুই টুই করে চিলেকোঠার ঘরের পাশে বন্ধি খাঁচার পাখিগুলো অযথা তাদের অভিমানগুলো জানান দিচ্ছে। বাতাসে সুমধুর সেই গন্ধ! শুধু অভিমানের ছোয়া লেগেছে। হঠাৎই ঝুমকোর পেছনে এসে রাহান বলল,
‘মনে পরে এমন ভাবে কত রাত আমি তোমাদের বাড়িতে এসে আড্ডা দিয়ে পার করেছি। রুম রিয়া সবুজের সামনে কত দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে তোমাকে লজ্জায় ফেলেছি।’
ঝুমকো নির্বিঘ্নে চোখ বন্ধ করে বলে,
‘না মনে পরে না। তুমি এখানে কেনো এসেছো আবার বলো তো? নানুমনি মামা জানে তুমি যে এসেছো?’
রাহান কলার উঁচিয়ে বলে,
‘আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কোনো কাজ করি না কি? দেখো না প্রেম করার দু’মাস পরেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। আর সবাই মেনেও নিয়েছিলো। বুঝতে হবে না হ্যান্ডসাম ছেলে আমি।’
‘বাজে কথা বন্ধ করো। যেটা বলেছি সেটা বলো।’
‘হুম। এসেই নানুমনির সাথে দেখা করেছি। মামা-শ্বশুড় বাহিরে। তবে মামী শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে এসেছি।’
ঝুমকো অবাকতার কন্ঠে বলে,
‘কেউ কিচ্ছু বলে নি তোমাকে?’
‘না কে কি বলবে উলটে সবাই খুশি হয়েছে। আদর যত্ন করে মামী শ্বাশুড়ি কতকিছু খাওয়ালো তুমি তো সব মিস করে গেছো গো।’
ঝুমকো তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে রাগাবুন্ড হয়ে বলল,
‘বার বার শ্বশুড় শ্বাশুড়ি করছো কেনো হ্যা? নেহাৎ এখানে বাইরের মানুষ আছে। না হলে এক সেকেন্ড ও আমার বাড়িতে তোমার জায়গা হতো না।’
রাহান স্বস্থির শ্বাস ফেলে বলে,
‘ভাগ্যিস রিয়া আর সবুজ ছিলো। না হলে আমার কি হতো! আল্লাহ বাঁচায়ছে।
ঝুমকো কিছু কড়া কথা বলতে উদ্ধৃত হয়। কিন্তু যথাযথ কথা খুজে না পাওয়ায় চোখ মুখ খিচে বলে,
‘ইউ আর জাস্ট ডিসগাস্টিং।’
‘ইউ অলসো।’
‘ধ্যাত।’
তখনি ছাদে আবির্ভাব ঘটে কামিনী বেগমের। রাহান মাথা নিচু করে ভঙ্গি করে বলে,
‘আসুন আসুন, রানী কামিনী বেগম। আপনার পদধূলি দিয়ে আমাদের ধন্য করুন।’
ঝুমকো বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘ডিসগাস্টিং। নানুমনি তুমি ওকে এই বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছো?’
কামিনী বেগম রাহানের থুতনি ধরে চুমু খেয়ে বললেন,
‘হ্যা। দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র নাতজামাই। আর বাড়িতে ঢুকতে দিবো না কি বলিস এগুলা। যাহ..।’
ঝুমকো ভ্রু কুটি করে বলে,
‘নাতজামাই?’
‘হ্যা তাই তো। নাতজামাই না? তোদের মধ্যে একটু ঝগড়া হয়েছে দেখেই না এমন বলছিস? তা না হলে তোদের বিয়ে তো ঠিক ই ছিলো আগে থেকে। সেই যাই হোক, এখন সব মিটমাট করে নে। ব্যস, হয়ে গেলো।’
ঝুমকো কঠিন স্বরে বলে,
‘ইম্পসিবল। সব কিছু হাতের মোয়া না। চাইলেই সব পাওয়া যায় না। যার যখন যা ইচ্ছা হবে সে তাই করবে আমার সাথে।’
রাহান ঠেস মেরে বলে,
‘হাতের মোয়া না তো লাড্ডু বানাই।’
ঝুমকো আগ্নেয়গিরির ন্যায় রাহানের উপর ক্রুর
দৃষ্টি ফেলে। রাহান কামিনী বেগমের পেছনে লুকিয়ে বলে,
‘নানুমনি দেখো দেখো এমন ভাবে তাকিয়েছে যেনো একটা ডাইনি। such a witch lady.’
ঝুমকো বড় বড় চোখ করে বলে,
‘আমি ডাইনি?’
‘নাহ তো। তুমি তো আমার জান, সোনাপাখি।’
কামিনী বেগম মুখ টিপে হাসে সাথে জোরেসোরে হেসে দেয় রুম, সবুজ, রিয়া। ঝুমকো রাগে তর্জনী আঙ্গুল উঁচিয়ে দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,
‘ইউ?? থাকবোই না আর এখানে।’
ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায় ঝুমকো। কামিনী বেগম সেখানেই দাঁড়িয়ে হেসে দেন জোরেসোরে। রাহান গলা উঁচিয়ে বলে,
‘ও গো আমার টুক্কুস কামড়ের গালওয়ালা জান যেও না গো।’
ঝুমকো যেতে যেতে জোরে চেঁচিয়ে বলে,
‘সাট আপ এন্ড গেট লস্ট ফ্রম মাই হোম।’
‘ইউ গেট লস্ট ফ্রম মাই টুক্কুস করে কামড় দেওয়া গাল।’
চলবে❤️