অ্যাটলাস শৃঙ্গে
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৯.
ফিনফিনে বাতাসে ল্যায়লার সিল্কি কালো চুল সামান্য উড়ছে। ল্যায়লা তা একহাতে কানের পিছনে গুজে হাসি সামলে নেয়। ফাতিহ এগিয়ে এসে ল্যায়লার দিকে একটি পানির বোতল এবং একটি চাদর এগিয়ে দেয়৷ ল্যায়লা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালে ফাতিহ কোনো উত্তর না দিয়ে তা ল্যায়লার সামনে রেখে ইসামের পাশে গিয়ে বসে। খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর তিনজনই আরাম করে বসে থাকে গল্পে মশগুল হয়ে। মূলত গল্প ইসামই করছে। ফাতিহ টুকটাক তার কথার জবাব দিচ্ছে এবং আড়চোখে ল্যায়লাকে দেখছে। ল্যায়লা ফাতিহর নিয়ে আসা চাদর গায়ে জড়িয়ে বসে চুপচাপ কথা শুনছে। কথার একটা পর্যায়ে ইসাম ল্যায়লাকে প্রশ্ন করে,
” গান পছন্দ করো তুমি? ”
ল্যায়লা বলে,
” পছন্দ অপছন্দ কিছুই করি না। কিন্তু শুনি মাঝেমধ্যে। ”
” এরাবিক গান শুনেছো কখনো? ”
ল্যায়লা তাকায় না। উত্তরও দেয় না। ইসাম নিজ থেকেই ফোনে একটা এরাবিক গান প্লে করে। গানের নাম ‘ লা আফারেয়ে ফি। ‘
গান চালু হতেই ল্যায়লা আর ফাতিহ দুজনেই গানে মগ্ন হয়ে যায়। ল্যায়লার চোখের সামনে ভেসে উঠে শৈশবের কিছু সুন্দর স্মৃতি এবং কিছু বিভৎসকর স্মৃতি। নিজের অজান্তেই তার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে। ফাতিহর দৃষ্টিগোচর হয় না তা। ইসাম আচমকা গান থামিয়ে প্রশ্ন করে বসে,
” ল্যায়লা কাদছো কেন? ”
ল্যায়লা হকচকিয়ে উঠে। চোখ মুছে বলে,
” এলার্জি। এলার্জিতে চোখ দিয়ে পানি আসছে। ”
কথাটা যে একটা মিথ্যা বাহানা তা ইসাম এবং ফাতিহ দুজনেই বুঝতে পারে। ইসাম কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠে,
” আমার কখনো বাংলা গান শোনা হয় নি। ল্যায়লা একটা বাংলা গানের নাম বলো তো। আমি প্লে করছি। ”
ল্যায়লার বিরস মুখে বলে,
” আমার নাম মনে নেই কোনো গানের। ”
ইসাম বলে,
” ওকে। নো প্রবলেম। ”
এটা বলেই ইসাম ফোন মুখের কাছে নিয়ে বলে উঠে,
” হেই সিরি! সাজেস্ট মি সাম হিট বাংলাদেশী সং। ”
ইসামের কর্মকান্ডে ফাতিহ এবং ল্যায়লা দু’জনেই চোখ কুচকে তাকায়৷ ইসাম কিছুক্ষণ ফোন স্ক্রল করে একটা সং প্লে করে। সাথে সাথে ল্যায়লা দু’হাতে কান চেপে ধরে শব্দে। ইসামের গান পছন্দ হয়। সে উঠে চৌকির উপর দাঁড়িয়ে গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে। পিছনে গানের লাইন বাজছে,
” তোমাকে চাই আমি আরো কাছে
তোমাকে বলার কিছু কথা আছে
আমি বলতে পারি না মুখে
তওবা তওবা,
দিলে জখম হলো উহু আহা,
একি শরম এলো উহু আহা। ”
ইসাম নাচতে নাচতে বলে উঠে,
” ড্যাম। আই লাভ দিজ সং। ইটস টোট্যালি মাই টাইপ। ল্যায়লা প্লিজ ট্রান্সলেট দি লিরিক্স ফর মি। ”
ল্যায়লার কান ছেড়ে মাথায় হাত। এই ছেলে বলে কি? এই গান ল্যায়লা কিভাবে ট্রান্সলেট করবে? ল্যায়লা বাংলায় বিরক্তির সুরে বলে উঠে,
” জগতে আর কোনো গান পেলো না এই ছেলে? ”
ফাতিহ ইসামকে হালকা ধমকে বলে উঠে,
” কি করছিস? ”
ইসাম রসিক ভঙ্গিতে নাচতে নাচতে বলে,
” ইউ গাইস ক্যান অলসো জয়েন মি। ”
এটুকু বলেই ইসাম আবার গানের লাইনের সাথে মিলিয়ে বলে উঠে,
” উহু আহা৷ ”
ইসামের নাচ আর গানের সাথে মিলিয়ে বলা উহু আহা দেখে ল্যায়লা এবার স্ব শব্দে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে ওর চোখ দিয়ে পানি এসে পড়ছে। ওকে হাসতে দেখে ইসাম সাহস পায়। লাফ দিয়ে নিচে নেমে ফাতিহকে টেনে দাঁড় করিয়ে ল্যায়লাকেও এনে দাঁড় করিয়ে তাদের আশেপাশে দিয়ে নাচতে থাকে। শুরুতে ল্যায়লা নাকোচ করলেও পরে ইসামের সাথে নাচতে শুরু করে।
ল্যায়লার সাথে এবার ইসামও ভাঙ্গা বাংলায় গান গেতে গেতে নাচতে থাকে।
” মনে লাগে শুধু ভয়,
যদি বেশি কিছু হয়।
আমি চাইতে পারিনা মুখে
তওবা তওবা।
দিলে জখম হলো উহু আহা।
একি শরম এলো উহু আহা। ”
ফাতিহ হাসতে হাসতে তার চারিদিকে ঘুরতে থাকা ইসাম ও ল্যায়লাকে দেখতে থাকে। সে কখনো চিন্তা করে নি একদিনেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়ে যাবে। গান শেষ হতেই ল্যায়লা হাসতে হাসতে একপাশে এসে দাঁড়ায়। সে খেয়াল করে নি যে তার পাশে ফাতিহ দাঁড়ানো। ফাতিহ ল্যায়লাকে প্রশ্ন করে,
” ক্যান ইউ ট্রান্সলেট দি লিরিক্স ফর মি? ”
ল্যায়লা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসিমাখা মুখে বলে উঠে,
” আই ওয়ান্ট ইউ মোর ক্লোস,
আই হ্যাভ সামথিং টু টেল ইউ। ”
এটুকু বলেই ল্যায়লা আচমকা ফাতিহর দিকে তাকায়। ফাতিহ তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। দৃষ্টি মিলন হতেই ল্যায়লা নিজের বোকামি নিয়ে লজ্জা পায়। তাড়াতাড়ি গটগট পায়ে সেখান থেকে দৌঁড়ে চলে যায়।
ইসাম হাসতে হাসতে প্রশ্ন করে,
” আরে! ল্যায়লা কোথায় যাচ্ছে? ”
ফাতিহ এসে ইসামের পিঠে চাপড় মেরে বলে,
” ঘুমোতে যাচ্ছে। এখন চল তাড়াতাড়ি। কালকে আমাদের মিশনের ফার্স্ট ডে ভুলে গিয়েছিস? লেট করে উঠা যাবে না। যদি তোর উঠতে দেরি হয় একদম শীতের সকালে তোর উপর ঠান্ডা পানি ঢেলে দিবো। ”
কথাটা বলেই ফাতিহ সামনের দিকে এগিয়ে যায়৷ ইসাম পিছন থেকে দৌঁড়ে এসে তার পিঠের উপর লাফ দিয়ে বলে,
” আমি একই দিনে ল্যায়লাকে হাসাতেও পেরেছি, সাথে নাচাতেও। ফিফটি পার্সেন্ট কাজ অলরেডি শেষ। দেখবি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পর ও সবার কাছে আমার গুণগান গেয়ে বেড়াবে। ”
” হ্যাঁ। বলবে যে সে মরক্কোতে এসে এক বাঁদড় দেখেছে যে কি-না যখন তখন লাফ দিয়ে ঘাড়ে উঠে যায়। ”
কথাটা বলে দু’জনই হাসিতে ফেটে পড়ে।
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]