আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব ২

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_২
#লেখিকা_N_K_Orni

— উহু! এখন তো তুমি তোমার বাবার কাছে যেতে পারবে না। আর এখন গিয়ে কিই বা করবে? কাল সকালে যাবে তুমি।

ইফাদের কথা শুনে তানিশা আপত্তি জানিয়ে বলে উঠল,

— না আমি এখনই যেতে চাই। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। এখন গেলে সমস্যা কোথায়?

— আমি যখন বলেছি তুমি কালকে সকালে যাবে তখন তুমি কালকে সকালেই যাবে।

বলেই ইফাদ তানিশাকে টানতে টানতে তার রুমে নিয়ে এলো।

— আপনি এমন কেন করছেন? আমাকে একবার বাবার সাথে দেখা করতে দিন। আমি একটু দেখেই চলে আসব।

— বলেছি তো কালকে যাবে। আর এখন তুমি দেখা করতেও পারবে না ওনার সাথে। তুমি এখানে থাকো। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসব। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি রুম থেকে বের হবে না। মনে থাকে যেন।

বলেই ইফাদ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইফাদ বেরিয়ে যেতেই তানিশা ধপ করে বিছানায় বসে কান্নায় ভেঙে পড়ল। তারপর মনে মনে বলতে লাগল,

— আজ যেগুলো হচ্ছে তার জন্য আমিও কম দোষী না। আজকে বাবার এই অবস্থার জন্য আমিও সমানভাবে দোষী। আমিও খুব অপরাধ করে ফেলেছি। কিন্তু আমি তো এতোটাও অপরাধ করিনি যে আমাকে এতোটা শাস্তি পেতে হচ্ছে। আমি কি সত্যিই অনেক খারাপ?

তানিশা মনে মনে এসব ভাবছে আর কান্না করছে। একটু পরে রুমের দরজা খোলার শব্দ শুনল তানিশা। সে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল ইফাদ এসেছে। তানিশাকে কান্না করতে দেখে ইফাদ বলে উঠল,

— বলেছি তো কালকে দেখা করবে। তাহলে এখন কান্না করার কি আছে?

তানিশা এবার চোখ মুছে বলে উঠল,

— বাবার অপারেশন কি শুরু হয়ে গেছে?

— হ্যাঁ। আমি ফাহিমকে বলে দিয়ে এসেছি ওদিকটার খেয়াল রাখতে।

ইফাদের কথা শুনে তানিশা ছোট করে বলে উঠল,

— ওহ।

ইফাদ তানিশার দিকেই যাচ্ছিল তখন তানিশা হঠাৎ করে বলে উঠল,

— আপনি কাজটা ঠিক করলেন না। এভাবে আমার অসহায়ত্ত্বের সুযোগ নিয়ে আমাকে বিয়ে করে আপনি কাজটা ঠিক করেননি।

ইফাদ তানিশার পাশে গিয়ে বসে বলে উঠল,

— কিন্তু তোমাকে তো দেখে মনে হয় না তুমি অসহায়। আর এভাবে ছাড়া তোমাকে বিয়ে করার আর কোনো উপায়ও আমার কাছে ছিল।

— তাহলে বিয়ে করতেন না। কেন আপনি আমার পেছনে পড়ে আছেন?

তানিশার কথায় ইফাদের বেশ রাগ হলো। সে রেগে বলে উঠল,

— কেন পড়ে আছি তুমি বোঝো না?

ইফাদ এবার তানিশার একদম কাছে গিয়ে বসল। তারপর তানিশার দুই গালে তার হাত রেখে বলে উঠল,

— তুমি কেন বোঝোনা আমি তোমাকে ভালোবাসি? এতোদিনে তুমি কি একবারও বুঝতে পারোনি যে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?

তানিশা ইফাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

— এটাকে ভালোবাসা বলে না। আপনি যেটা করেছেন এটা কোনো ভালোবাসার মানুষ করেনা।

— আরে আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই এতোকিছুর পরও ক্ষমা করে দিয়েছি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি তাকে নিজের হাতে খুন করতাম।

— কিসের জন্য ক্ষমা করবেন আপনি? আমি তেমন কিছুই করিনি। কোনো স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষ হলে এতোদিনে এসব কিছু ভুলে নতুন করে সব শুরু করত। আর আপনি এখনও এসব ধরে বসে আছেন। আর আমার জীবনটা শেষ করে দিচ্ছেন।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ মনে মনে বলল,

— আমার জায়গায় তুমি থাকলে এতোদিন তোমাকে খুঁজেও পাওয়া যেত না।

ইফাদকে চুপ করে থাকতে দেখে তানিশা বলে উঠল,

— কি হলো? চুপ করে আছেন যে? সত্যি কথাটা গায়ে লেগে গেল?

ইফাদ এবার গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

— তুমি যা ইচ্ছা ভাবো। তুমি ভাবলেই সেটা সত্যি হয়ে যাবে না।

বলেই ইফাদ ওখান থেকে উঠে রাগ করে বারান্দায় চলে গেল। তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওখানেই বসে রইল। তার বাবার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। বাবাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু ইফাদের বিরুদ্ধে গিয়ে তার বাবার সাথে দেখা করার উপায় তার হাতে নেই। এখানে তারও কিছুটা দোষ আছে যার জন্য সে ইফাদকে পুরোপুরি দোষী করতেও পারছে না। পুরোনো কিছু কথা মনে পড়তেই তার দুই চোখ বেড়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। সে নিঃশব্দে কেঁদে দিল। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে তানিশা ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ল।

এদিকে ইফাদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে অসংখ্য ছোট ছোট তারা। ইফাদ সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তবে তার দৃষ্টি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটার দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর ইফাদ রুমে ফিরে এলো। সে এসে দেখল তানিশা তার এক হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। আর তার পা দুটো বিছানার বাইরে। ইফাদ তানিশার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর ওকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে গিয়ে বসল। তারপর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক দৃষ্টিতে ঘুমন্ত তানিশার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তানিশার মাথার পাশের ছোট ছোট চুলগুলো বারবার তার মুখের উপর এসে পড়ছে। আর ঘুমন্ত তানিশা বাচ্চাদের মতো করে সেগুলো সরাচ্ছে। যেটা দেখে ইফাদের খুব হাসি পেল। সে ফিক করে হেসে দিল। তারপর সে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।

— তোমার এই ঘুমন্ত মুখ দেখে তোমাকে খুবই নিষ্পাপ মনে হয়। কিন্তু যতই নিষ্পাপ দেখাক তুমি নিজেও ভালো করে জানো তুমি এতোটা নিষ্পাপ নও। তবুও আর এই তুমিটাকেই চাই। এই তুমিটাকে পাওয়ার জন্য যে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, অনেক কাছের জিনিসও হারাতে হয়েছে। তবে আমার তোমার উপর কোনো রাগ নেই, শুধু আছে একরাশ অভিমান। যা তোমাকেই ভাঙাতে হবে।

এরপর ইফাদ হালকা হেসে তানিশাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে উঠে তানিশা দেখল সে একাই বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। সে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল যে কোথাও ইফাদ আছে কিনা। ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়েও লাভ হলো না। কারণ দরজা খোলা। ইফাদকে রুমে না দেখে তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। তারপর ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখল রুমে ইফাদ বসে আছে। ইফাদকে দেখে তানিশা বলে উঠল,

— এখন তো সকাল হয়ে গেছে। তাহলে এখন আমার বাবার কাছে যেতে নিশ্চয়ই আপনার কোনো আপত্তি নেই?

— না নেই। তবে তুমি একটু পর যাবে। আমি ফাহিমকে বলে তোমার জন্য ড্রেস আনিয়ে রেখেছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে ওখান থেকে একটা পরে নেও। তারপর ব্রেকফাস্ট করে হসপিটালে যাবে। ফাহিম তোমাকে দিয়ে আসবে ওখানে।

— তার কোনো দরকার নেই।

— আমি তোমার অনুমতি চাইনি। আমি শুধু করতে বলেছি।

ইফাদের কথায় না পেরে তানিশা ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেন্জ করে নিল।

— দেখুন আমি আপনার কথামতো ড্রেস চেন্জ করেছি। কিন্তু দয়া করে আমাকে খেতে বলবেন না। বাবাকে না দেখা পর্যন্ত আমার যে খাবার মুখে দিয়ে নামবে না।

— কিন্তু…

— প্লিজ আমার এই কথাটা রাখুন।

— আচ্ছা। তুমি তোমার বাবাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?

— অনেক বেশি। কারণ বাবা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

— আর তোমার মা?

ইফাদের কথা শুনে তানিশা কিছু বলতে গিয়েও পারল না। সে কথাটা এড়িয়ে বলে উঠল,

— আমাকে হসপিটালে যেতে হবে। দেরী হয়ে যাচ্ছে।

— আচ্ছা যাও।

তানিশা ওখান থেকে সোজা হসপিটালে চলে গেল। সে ওখানে গিয়ে তার ছোট বোন তিনাকে দেখতে পেল। তিনা ওকে দেখতেই ছুটে এলো। তারপর বলল,

— আপু তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

বলেই তিনা ওকে দূরে নিয়ে গেল। এরপর তিনা যা বলল তা শুনে তানিশা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারল না।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here