আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব ১২

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_১২
#লেখিকা_N_K_Orni

তানিশা আর নেহা একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। নেহা তানিশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,

— এই তানিশা আমি যা দেখছি তুইও কি তাই দেখছিস? নাকি আমি একাই ভুল দেখছি।

— না আমিও সেটাই দেখছি।

— কিন্তু এর সাথে যে নাবিলার বিয়ে হচ্ছে এটা নাবিলা জানতে পারলে কিন্তু অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে।

— শুধু অজ্ঞান না আরও অনেক কিছুই হবে। কিন্তু ওদের তো ব্রেকআপ হয়ে গেছে। তাহলে মাহির কেন ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছে?

— তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস ওদের রিলেশনে নাবিলা সিরিয়াস না থাকলেও মাহির কিন্তু ওকে সত্যিই ভালোবাসত। তাই তো ব্রেকআপ করে নতুন রিলেশনে যাওয়ার সাথে সাথেই ওর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।

— হ্যাঁ সেটাই তো দেখছি।

নেহা এবার আফসোসের সুরে বলে উঠল,

— ইশ! আমার কেন যে এমন একটা বয়ফ্রেন্ড হলো না? তাহলে সেও আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না।

তানিশা এবার দাঁত বের করে হেসে বলল,

— চিন্তা করিস না। খুঁজতে থাক, একদিন ঠিক এমন কাউকে পেয়ে যাবি।

— কেন তোর এই ধরনের কাউকে পাওয়ার ইচ্ছা নেই?

— নারে আমার এসব বয়ফ্রেন্ডের প্যারা ভালো লাগে না। আর যদি বিয়ের কথাই বলিস তাহলে বলব বাবা আমাকে যার সাথে বিয়ে দিবে আমি তাকেই বিয়ে করব।

— হুহ দেখা যাবে। দেখা গেল তুই তোর বাবার অপছন্দেই বিয়ে করে ফেললি?

— উহু, এটা কখনোই হবে না।

— হতেও পারে।

— ভালো হয়েছে। তুই নাবিলার কাছে যা আর আমি মাহিরের সাথে কথা বলে আসি।

বলেই তানিশা ওখান থেকে চলে গেল। নেহা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠল,

— একদিন এটাই হবে। সেদিন আমার কথা মিলিয়ে নিস। যারা এমন বলে তাদের সাথেই এসব হয়।

বলেই নেহা পেছন দিকে ঘুরতে যাবে তার আগেই কারও সাথে জোরে ধাক্কা খেল।

— কি ব্যাপার? তুমি এখানে এভাবে একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?

নেহা মুখ তুলে তাকাতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল। সে আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই সামনের ব্যক্তি বলে উঠল,

— কি হলো? কথা বলো না কেন? এখানে একা একা দাঁড়িয়ে না থেকে নাবিলার কাছে গিয়ে বসো। এখন ওর সাথে কেউ থাকলে ওর ভালো লাগবে।

নেহা ছোট করে বলল,

— হুম।

বলেই নেহা নাবিলার রুমের দিকে যেতে লাগল। যেতে যেতে বিরবির করে বলে উঠল,

— সবসময় সবকিছুতে বেশি বোঝে লোকটা।

তানিশা গিয়ে মাহিরের পাশে দাঁড়াল। তারপর মুখে হাসি এসে বলে উঠল,

— ভালো আছেন ভাইয়া?

মাহির তানিশার দিকে তাকিয়ে বলল,

— আরে তানিশা তুমি!

তারপর আশেপাশে তাকিয়ে ভালো করে দেখে বলে উঠল,

— তোমার বান্ধবীর কারণে এতদিন ভালো ছিলাম না। আজকে থেকে হয়তো ভালো থাকত। নাবিলাকে বলে দিত আমার সাথে গেম খেলা ওতো সহজ না। ওসব নাটক ও অন্যদের সাথে করতে পারলেও আমার সাথে পারবে না। আমি প্রথম থেকেই ওকে সন্দেহ করেছিলাম। তাই বাড়িতে ওর কথা বলে রেখে ছিলাম।

মাহিরের কথা শুনে তানিশা অপ্রস্তুতভাবে হাসল।

— আচ্ছা ভাইয়া আমি এখন আসি। পরে কথা বলব আপনার সাথে।

— আচ্ছা।

তানিশা ওখান থেকে চলে এলো। তারপর আশেপাশে নেহাকে খুঁজতে লাগল যে ও এখানে আছে কিনা। ওকে না পেতে সে নাবিলার কাছে চলে গেল। তানিশা গিয়ে দেখল নেহা নাবিলার পাশে চুপ করে বসে আছে। তানিশা গিয়ে নেহার পাশে বসল। তারপর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

— কিরে এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?

— বিরক্ত লাগছে তাই।

— তাহলে আয় একটু হেঁটে আসি। প্লিজ আয়।

নেহা আর উপায় না পেয়ে বলল,

— আচ্ছা।

— এজন্য আমি এসব জায়গায় আসতে চাই না। এতো লোকজন, ঝামেলা, হইচই এসব আমার একদম পছন্দের না। এখন আমার এখানে খুবই বিরক্ত লাগছে। তুমি তো জানোই যে আমি সবসময় শান্ত পরিবেশে থাকা পছন্দ করি।

ইফাদের কথায় ফাহিম একটু হাসার চেষ্টা করল।

— কি আর করবেন স্যার? এখন তো চলেই আসছেন। বেশি তো আর সময় লাগবে না। বিয়েটা শেষ হলেই আমরা চলে যাব।

— হুম তাও অনেক সময়। এই নির্জনের বাচ্চা আমাকে ফা*সিয়ে দিল।

ইফাদের কথা শুনে ফাহিম ঠোঁট চেপে হেসে বলে উঠল,

— কিন্তু স্যার নির্জন তো এখনো বিয়েই করেনি। তাহলে ওর বাচ্চা কোন জায়গা থেকে আসবে।

ফাহিমের কথা শুনে ইফাদ ওর দিকে রাগী চোখে তাকাল। ফাহিম এবার চুপ হয়ে গেল। ফাহিম এবার আশেপাশে তাকাতে লাগল। হঠাৎ তার চোখ একদিকে আটকে গেল। সে সেদিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। তার ইফাদের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,

— স্যার আপনার বিরক্তি কাটানোর উপায় খুঁজে পেয়ে গেছি। আপনি দেখলে আপনিও খুশি হবেন।

ফাহিমের কথা শুনে ইফাদ ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— কিসের কথা বলছ তুমি?

ফাহিম ইফাদকে ইশারা করে বলল,

— স্যার ওদিকে তাকান। আপনি বুঝে যাবেন।

ফাহিম ইফাদের কথা মতো সেদিকে তাকাল।

— কিরে নেহা তখন থেকে ফুটো বেলুনের মতো চুপসে আছিস? কি হয়েছে তোর?

তানিশার কথায় নেহা একবার তার দিকে তাকাল তারপর আবার চুপচাপ হাঁটতে থাকল। এবার তানিশা হাঁটা থামিয়ে দিল। ওকে থেমে যেতে দেখে নেহা পেছনে ফিরে বলল,

— কিরে থেমে গেলি কেন?

— তার আগে বল তোর কি হয়েছে?

নেহা আর না পেরে তানিশাকে সেই ধাক্কা খাওয়ার ঘটনা বলল। সব শুনে তানিশা বলে উঠল,

— আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝিনা। নির্জন ভাইয়া তো অনেক ভালো। তাহলে তোর সাথে এমন করে কেন? আর তুইও ওনাকে দেখতে পারিস না। বিষয়টা আমি কিছুতেই বুঝি না।

— তোর এতো বোঝা লাগবে না।

— আমি আবার কি করলাম?

— কিছুই না। আচ্ছা তুই মাহিরের সাথে কি এতো কথা বললি?

— তেমন কিছুই না। তুই ঠিকই বলেছিস মাহির নাবিলাকে সত্যি ভালোবাসে।

ইফাদ ফাহিমের বলা দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল।

— এতোদিন পর তুমি একটা ভালো করলে। এবার আরেকটা কাজ করো।

— আবার কি কাজ স্যার?

ইফাদ ফাহিমের কানের কাছে ফিসফিস করে কাজটা বলল। ইফাদে কথা শুনে ফাহিমের মুখ চুপসে গেল। সে আমতা আমতা করে বলে উঠল,

— কিন্তু স্যার এখন আমি কীভাবে…

ফাহিম কথা শেষ করার আগেই ইফাদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল,

— আমি কিছু জানিনা ফাহিম। তোমাকে কাজটা করতেই হবে।

ফাহিম অসহায় হয়ে বলে উঠল,

— আচ্ছা স্যার আমি দেখতেছি।

বলেই ফাহিম চলে গেল। ইফাদ ওখানে দাঁড়িয়ে হালকা হাসল। তানিশা আর নেহা একসাথে দাঁড়িয়ে মাহির আর নাবিলার বিষয়ে কথা বলছে। তখনই কিছুটা দূর থেকে নির্জন বলে উঠল,

— এই নেহা এদিকে এসো একটু। তোমার সাথে কথা আছে।

নির্জনের কথা শুনে নেহা একবার ওর দিকে তাকাল তারপর বলল,

— আমাকে বলছেন?

— তুমি ছাড়া আর কোনো নেহাকে তো আমি চিনি না। তাই তোমাকেই ডাকছি।

তানিশা এবার নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

— যা যা তোকে ডাকে।

— হুম।

নেহা নির্জনের দিকে যেতে যেতে বিরবির করে বলল,

— এর সমস্যা কি? বারবার শুধু আমাকে ডাকে কেন?

নির্জন নেহাকে নিয়ে ওখান থেকে একটু দূরে নিয়ে গেল। তানিশা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গেল।

— এই নির্জন ভাইয়া নেহাকেই কেন ডেকে নিয়ে গেল? এখন আমাকে একা থাকতে হবে। যাই একা একাই একটু ঘুরে আসি।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here