আগন্তুকের আসক্তি পর্ব -০৮+৯

#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৮]

ডাইনিং টেবিলে অলীদ আর ইতিকা মুখোমুখি একে অপরের সাথে ইশারায় কথা বলছে।ইনান মাথা নুইয়ে একের পর এক ভাতের লোকমা মুখে পুরে নিচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে ভাত নয় সে যেন শক্ত পাথর চবনে ব্যস্ত।অলীদ আরেক চামচ ভাত নিয়ে ইনানের প্লেটে তুলে দেয়।

– তোকে আমি ভাত দিতে বলেছি?

ইনানের ধমকে কেঁপে উঠলো অলীদ এবং ইতিকা।ইতিকা অলীদকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে চুপচাপ খেতে থাকে।

– এত রেগে আছেন কেন?স্বাভাবিক একটা বিষয় নিয়ে কেউ রেগে থাকে?

ইতিকার তুখড় কন্ঠে চোখ তুলে তাকায় ইনান।হাতের ভাত গুলো প্লেটে পুনরায় রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

– আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে বিষয়টি?

– অস্বাভাবিকের কি আছে?

ইতিকার গমগমে সুরে অলীদ ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে।

– ইতিবউ আপনি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছেন।আমার মনের অবস্থা আপনি একটুও বুঝতে পারছেন না, একদম নূন্যতমও না।

– আমার কি করার আছে?কে কি বললো তাতে কি যায় আসে।

ইতিকার কথায় তাল মেলায় অলীদ।ঠোঁটে হাসি রেখা ঝুলিয়ে যুক্তি সুরে বলে,

– হ্যা ঠিক।দেখ ইনান রাতুলের বিষয়টি মাথা থেকে ঝেরে ফেল।ওই ছোকরা’কে হাতের ইশারা ধমক দিলেই সরে যাবে তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন?আমি আছি না!

ইনান প্রত্যুত্তর করলো না।চুপচাপ ভাতের লোকমা মুখে তুলে নেয়।অলীদ ইতিকাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে নিজেও খাওয়া শুরু করে।
_

দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা নড়ছে বাহরুল ইসলামের লোকজন।তিনি বেশ কড়া সিকিউরিটি নিয়ে হাসপাতাল প্রবেশ করেছেন।তার নিকটতম গার্ড মুশফিকের অবস্থা বেশ আশংকাজনক।

ইনান হাস্পাতালের করিডোরে ব্যস্ত ভঙ্গিতে পাইচারি করছে।বাহরুল ইসলামকে দেখে স্থির হয়ে দাঁড়ায় সে।

– মামু তুমি এখানে কেন এসেছো?এখানে আসা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি।

– এখন তো আর তোমাকে কোন সময়ে,কাজে পাওয়া যায় না।তুমি তোমাকে নিয়েই ব্যস্ত।

– শত ব্যস্ততার মাঝেও আমি তোমার কাজ ঠিক রাখি মামু, সেটা তুমি ভালো করেই জানো।কিন্তু সাহাব উদ্দিনের লোক আজ হঠাৎ হামলা করলো কেন?

– সেটা তোমার না জানলেও চলবে।

বাহরুল ইসলাম বড়বড় পা ফেলে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করলো।অলীদ ছুটে এসে ইনানের কাধে আলতো করে চাপড় বসায়।

– তোর নিজের যত্ন তুই নিজে না নিলে কেউ এসে আদিখ্যেতা করে জানতে চাইবে না তুই কি আঘাত পেয়েছিস কি না!

– মানে কি? কি বলছিল অলীদ।

– তোর হাত কেটে রক্ত ঝরছে, শার্ট ভিজে দাগ লেগে আছে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে আছে।দ্রুত যা হাত ব্যান্ডেজ কর।

– আরে সামান্য কেটেছে সমস্যা হবে না।

– যেতে বলেছি যাবি।

ইনান শব্দ করে শ্বাস ছাড়লো।অলীদ তাকে নিয়ে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে পৌছে যায়।
হাতের ব্যান্ডেজ করা শেষে ইনান অলীদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

– দেখতো কয়টা বাজে?

– দুইটা বেজে ষোল মিনিট।কেন?

– তুই এদিক’টা সামলা আমি ইতিকাকে আনতে যাচ্ছি স্কুল থেকে তার ছুটির সময় হয়ে গেছে।

– তুই যাওয়ার কি দরকার?সুফু যাবে।

– তোদের উপর আমার বিশ্বাস মরে গেছে।রাতুল ছেলেটাকে নিয়ে এখনো আমার ভয় কাটেনি যাই হোক আমি যাচ্ছি।

ইনান শার্টের হাতাটা ভাজ করে দ্রুত উঠে যায়।হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে নিলেই ডেকে উঠে বাহরুল ইসলাম।

– ইনান?

– মামু চলে যাচ্ছো?

– হ্যা।তা তুমি কোথায় যাচ্ছো?

– ইতিকাকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছি।

– ওহ, যাও যাও তোমায় তো এখন আর পাওয়া যায় না।সবসময় বউ নিয়ে ব্যস্ত তুমি।

– দশটা নয় পাচঁটা নয় একটাই তো বউ মামু তার যত্নটা আমি ছাড়া কে নেবে?আমি তার সব, সে আমার সব।তাই সেকেন্ডে সেকেন্ডে খোঁজ নেওয়া আমার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।আসছি আমি।

ইনান সানগ্লাসটা খুলে গাড়িতে ছুড়ে মারে।দ্রুত গাড়িতে বসে শান বাজিয়ে ছুটে চলে ইতিকার স্কুলের উদ্দেশ্য।

অপরদিকে বাহরুল ইসলাম দাঁতে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত।

_
ইতিকার স্কুল ছুটি হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।হূট করেই কোথা থেকে রাতুল ছুটে এসে তার হাতে একটি চকলেট গুজে দেয়।

– মিস ইতিকা ইয়াসিম আ’ম সরি। ওইদিন আপনার পেছনে ছুটে আসা ঠিক হয়নি আমার কারনেই আপনি পা পিছলে পড়ে গেছেন।

ইতিকা উত্তর দিলো না বরং দ্রুত পা চালিয়ে হাটা শুরু করে।রাতুল তার সামনে এসে আবারো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

– আরে পালিয়ে যাচ্ছো কেন?আমি তো তোমার সঙ্গে ভালো ভাবেই কথা বলছি।

– হুম চিন্তা করবেন না আমি কাউকে কিছু বলবো না।

হঠাৎ কানে ভেসে আসে গম্ভীর সেই চেনা কন্ঠ।

– ইতিবউ গাড়িতে বসুন।

ইনানের কপট কথায় ঢোক গিলে ইতিকা।ভয়ে বুকের ভেতটায় সেকেন্ডে সেকেন্ডে ধুকপুক করছে।

ইতিকা গাড়িতে বসতেই ইনান তার পাশে বসে যায়।ইতিকার হাতে একটি চকলেট দেখে তৎক্ষণাৎ ভ্রু কুচকায় ইনান।

– এই চকলেট ওই ছেলেটা দিয়েছে তাই না?

– আব…না।

– চুপ!মিথ্যা বলার সাহস আজকাল বেড়ে গেছে আপনার।দ্রুত হাত থেকে ফেলে দাও চকলেট, কুইক।

ইতিকা তর্ক করলো না দ্রুত চকলেটটা জানালা দিয়ে ছুড়ে মারলো বাইরে।

ইনান গাড়ির স্ট্যারিং এ একটা ঘুসি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।এই মূহুর্তে তার ইতিবউয়ের প্রতি বিরক্ত সে।
.
বাসায় একজন অর্ধবয়স্ক মহিলা এসে নিয়মি পড়ান ইতিকাকে।দরজায় কলিং বেলের শব্দ হতেই দ্রুত দরজা খোলে সে।কিন্তু দরজার বাইরে গোটা পাঁচেক ছেলেকে দেখে ভড়কে যায় ইতিকা।

– আপনারা?

– ইতিবউ রুমে যান।

পেছন থেকে ইনানের কন্ঠে তড়াক করে তাকায় সে।দুজনের চোখাচোখি হতেই ইনান আবারো ইশারা করে তাকে সরে যেতে।

ছেলেগুলো একে একে ছয়টি বড় বড় কাগজের বাক্স এনে রুমের মেঝেতে রাখে।ছেলেগুলো চলে যেতে ইনান ইতিকাকে ডেকে আনে।

– এগুলো কি?

– চকলেট।

– এত চকলেট দিয়ে কি হবে?

– কেন তুমি খাবে।আমি চাইনা আমার বউকে অন্যকেউ চকলেট দিক।তাই আমি নিজেই নিয়ে আসলাম।

– ওহ আল্লাহ! আপনি এইসব কি নাটক করছেন?আমার চাই না এইসব।

ইতিকার আর্তনাদ ইনান কানে নিলো না।প্যান্টের পকেটে হাত পুরে বিনা বাক্যে বেড রুমের দিকে পা বাড়ালো।

_

কেটে গেছে বেশ কয়েকদিন ইতিকার স্কুলে এখন আর রাতুলের সঙ্গে দেখা হয় না।অবশ্য দেখা হওয়ার কোন সুযোগ নেই তাদের মাঝে, কেননা ইনান ইতিকার ছুটি হওয়ার আগেই গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।

অপরদিকে ছেলের বউকে প্রতিদিন আড়াল থেকে দেখে যান নাসরিন।শত অন্যায় করলেও ইনান তার নিজ পেটের সন্তান।কতদিন হয়েছে কাছে পায়না ছেলেকে।মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে পারেনা।তার ঘরে আলো করে একটি কন্যা সন্তান আসেনি বলে,রাত দিন আল্লাহর দরবারে কত কেঁদেছেন।কিন্তু ভাগ্যর নির্মম পরিহাসে তার একমাত্র ছেলেটাও দূরে দূরে থাকছে।

বাহরুল ইসলামের চোখের বালি হয়ে উঠছে ইতিকা।মেয়েটির কারনেই আজ ইনান তার কাছ থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে।

[ ] বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুলে তৈল দিচ্ছে ইতিকা।মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গান গাইছে তালে তালে।কিন্তু নিচ থেকে রাতুল তার দিকে তাকিয়ে নানান ভঙ্গিতে হাত ইশারা দিচ্ছে আর সেই ইশারা কিছুতেই ইতিকার চোখে পড়ছে না।ইতিকাকে গান গাইতে দেখে বারান্দায় এগিয়ে এলো ইনান।নিচে তাকাতেই রাতুলের হাত ইশারা দেখে মাথায় যেন রক্ত উঠে যায়।

-শু*য়রের বাচ্চাটা এখানে হাত নাচানাচি করছে আর সহ্য হচ্ছে না এইসব।

ইনান এক ছুটে বেরিয়ে যায়।ইতিকা বুঝতে পারলো না কি হয়েছে।নিচে তাকাতে হঠাৎ রাতুলকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না একটু পর কি ঘটবে।
.

রাতুলের কলার মুছড়ে দাঁড়িয়ে আছে ইনান।রাতুলের নাক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।অলীদকে নিয়ে নিচে আসতে আসতে রাতুলের দু’চারটা ঘুসি খাওয়া শেষ।ইনানের লোক ঘিরে রেখেছে জায়গাটা।ইতিকা বুঝে উঠতে পারছেনা কি করবে।ভিড়ের মাঝে দ্রুত পৌঁছে গিয়ে ইনানের হাত টেনে সরিয়ে আনে।

– আপনার তো সাহস কম না ইতিবউ নিচে এসেছেন কেন?

– আপনি ছেলেটাকে মারছেন কেন?বুঝিয়ে বললেই হয়।

– আপনার কাছ থেকে জ্ঞান নিতে চাইনা আমি।

ইনান আবারো তেড়ে যায় রাতুলের দিকে।ইতিকা আর অলীদ দ্রুত তাকে আটকে নেয়।এলাকার মানুষের ধীরে ধীরে ভীড় জমে গেছে।সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে বিষয়টি বোঝার জন্য।

– বেয়াদব ছেলে তোকে আমি কতবার বলেছি ওর কাছ থেকে দূরে থাকবি তা না করে তুই তাকে হাত নাড়িয়ে হাই বলছিস।আজ তোকে আমি কি যে করবো নিজেও জানিনা।

ইনান আবারো মারতে নিলে অলীদ তার হাত ধরে নেয়।ইনানের কানের সামনে ফিসফিস সুরে বলে,

– প্লিজ দোস্ত।বাড়াবাড়ি করিস না। এখন তুই বাড়াবাড়ি করা মানে ভাবীর গায়ে কলংক লাগা।কিন্তু তার তো দোষ নেই।প্লিজ সব কাজে রাগ রেখানো উচিত নয়।

অলীদের কথাটা যেন ইনানের কর্ণকুহুরে বেশ ভালোভাবেই প্রবেশ করেছে।তৎক্ষনাৎ রাতুলকে ছেড়ে আলীদের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আমি গেলাম।ওকে বুঝিয়ে দিবি ইতিবউয়ের সম্পর্কে।

ইনান ইতিকার হাত টেনে আবারো ফ্লাটে ফিরে যায়।লিভিং রুমের সামনে দাঁড়িয়ে অস্থির ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ইতিকাকে।

– শুনোন ইতিবউ ওয়াসিমের সাথে আপনার প্রেম আমার সহ্য হয়নি বলে,সুযোগ মতো বিয়ে করে এনেছি।আর এখন উলটা পালটা এসব দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।সরি।

_

বাহরুল ইসলামের কাজের সূত্রে কিছুদিনের জন্য চট্রগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা হবে ইনান সঙ্গে অলীদ এবং এবং বেশ কয়েকজন দলের লোক।ইতিকাকে একা রেখে কিছুতেই যেতে মন চাইছে না তার তবুও ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে হবে তাকে।
রাত দশটায় ব্যাগ-প্যাক ঘুছিয়ে তৈরি হয়ে নেয় ইনান।সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে আদেশ সুরে বলে,

– আমি আমার ইতিবউকে রেখে গেলাম।তুই এখন থেকে এই ফ্লাটে তার সঙ্গেই থাকবি তোর ভার্সিটি যাওয়া কোন প্রয়োজন নেই আমি খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো।

ইনান কথা শেষ করে দরজার বাইরে বেরিয়ে যায়।ইতিকার দিকে তাকিয়ে একপলক হেসে বলে,

– আসছি ইতিবউ সাবধানে থাকবেন।

_

পরের দিন ভোরে ডোর বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ইতিকা এবং সুফিয়ার।সুফিয়া এবং ইতিকা দুজনেইনে এক সঙ্গে দরজার সামনে এগিয়ে যায়।বুকের ভেতর হৃদযন্ত্রটা প্রবল ভাবে কম্পিত হচ্ছে।ঘড়িতে মাত্র সকাল ছয়টা বেজে সাইত্রিশ মিনিট।এত সকাল কে আসতে পারে? ভাবতে ভাবতে দরজা খুললো সুফিয়া।কিন্তু দরজা খুলে বাইরের মানুষটিকে দেখে তড়িৎ গতিতে চমকে যায়।আপনা আপনি মুখ থেকে বেরিয়ে যায় শব্দমালা।

– আ..আপনি!
#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৯]

গরম গরম ধৌয়া উঠা চায়ে চুমুক দিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেললেন নাসরিন।ইতিকার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে সুরে শুধালেন,

– চলরে মা তুই আমার সঙ্গে।এই বুড়ো মানুষটাকে আর জ্বালাতন করিস না তোরা।আমার ছেলের কথা ছাড়।কান টানলে মাথা সুর সুর করে আসবে।

নাসরিনের কথায় চোখ তুলে সুফিয়ার দিকে তাকায় ইতিকা।তাদের দুজনের অবস্থা করুন।সাত সকালে ইনানের মা নাসরিন এসে বায়না জুড়েছেন ইতিকাকে তিনি নিয়ে যাবেন।কিন্তু ইনান বিষয়টি জানতে পারলে যে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ছাড়বে তার ভয়ে কুঁকড়ে আছে ইতিকা এবং সুফিয়া।

– প্লিজ আন্টি এই দুঃসাহস করবেন না।আপনার সঙ্গে ইতিকাকে যোগাযোগ কর‍তে সাহায্য করায় ইনান আমার মোবাইল ভেঙ্গেছে আমার সাথেও সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে।এখন আবার যদি জানে আপনি তাকে নিয়ে গেছেন তবে আমার গর্দান যাবে আন্টি।তাছাড়া বাইরে সিকিউরিটি রেখে গেছে।ইতিকা যেদিকেই যাবে খবর তার কাছে পৌঁছে যাবে শিওর।

সুফিয়ার কাদো কাদো স্বরে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন নাসরিন।

– আমার ছেলেকে ভয় পাও ভালো কথা কিন্তু আমার কথার অমান্য করার সাহস করো না।আমি ভাইজানকে বলে রেখেছি ইতিকা আমার সঙ্গেই যাবে।আর সিকিউরিটিরা সব আমার ভাইজানের কথা মত কাজ করবে তোমরা আমার সঙ্গে চলো কোন সমস্যা হবে না।

নাসরিনের কথায় ঠোঁট উলটে তাকায় সুফিয়া।সবটা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

ইতিকা মাথা নুইয়ে অনুনয় স্বরে বলে,

– আম্মা আপনি আমায় মাফ করুন।আপনার ছেলের অনুমতি ছাড়া কোথাও যাওয়ার সাহস আমার নেই।আপনি ভালো করেই জানেন তিনি কতটা ক্রুদ্ধ স্বভাবের
যদি জানে আমি আপনার সঙ্গে ওই বাড়িতে গেছি তবে সবটা রাগ সুফিয়া আপুর উপরে মেটাবেন।

– হয়েছে হয়েছে আর স্বামী ভক্ত হয়ে হবে না।তুমি কি চাওনা তোমার স্বামী সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক?রাজনীতি ছেড়ে ঘর সংসারে মন নিবেশ করুক।যদি চাও তবে আমার সঙ্গে চলো।

– আম্মা আপনি যা বলছেন ঠিক কিন্তু….

– আর একটা কথা বাড়ালে চড় তোমার গালে পড়বে।’মা’ ডেকেছো আমায় তোমার খারাপ আমি কখনো চাইবো না।তাই দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও।সুফিয়া তুইও চল।

নাসরিনের রাগ দেখে আর দু’বাক্য প্রকাশ করলো না ইতিকা।শশুড় বাড়ি যাওযার জন্য লাহমায় রাজি হলো।
.
বুকের ভেতরটায় হতে থাকা অদ্ভুত ধুকপুক শব্দটা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইতিকার।চারিদিকে শুনসান নিরবতা এই বাড়িতে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না তার।

– আপু এইবাড়িতে কেউ থাকেনা?দারোয়ান ছাড়া আর কাউকে দেখলাম না।

ইতিকার প্রশ্নে কিঞ্চিৎ হাসে সুফিয়া।

– বাড়িতে আঙ্কেল আন্টি আর কয়েকজন কাজের লোক এইছাড়া কেউ থাকেনা।বছর খানিক আগে আমাদের আড্ডা ছিল এই বাড়িতে সবাই হইচই করে মিলেমিশে বাচঁতাম কিন্তু ইনান তার মামুর প্ররোচনায় এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এক বছর আগে।তারপর থেকে আমাদেরো আর আসা হয়নি।

নাসরিনের হাত ধরে শুশুড় বাড়ির চৌকাটে পা বাড়ায় ইতিকা।বাড়ির চারদিকে সে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত দৃষ্টিতে।সাজানো পরিপাটি বাড়িটা নির্জন কোলাহল মুক্ত।
_

ইনানের অজান্তে কেটে গেলো চার দিন।সে জানতে পারলো না তার ইতিবউ ফ্লাটে নয় বরং তার বাড়িতে আছে।অপরদিকে ইতিকাও যেন ভয়,ডর ভুলে হাসিখুশি দিন কাটাতে লাগলো।

গভীর রাত ঘুম নেই ইনানের চোখে।হোটেলের বারান্দায় বসে একের পর এক সিগারেটের ধৌয়া উড়াতে ব্যস্ত সে।এই কয়দিন ঘুম তার দু’চোখ থেকে উড়ে গেছে।ইতিকার ভাবনায় বিভোর সে।মাঝে মাঝে নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয়ে যায়। ইতিবউ তো তার জীবনে আছেই তবে কিসের এত ভাবনা?

মোবাইলে স্কিনে তাকিয়ে রাত তিনটা ছয় বাজতে দেখে উঠে দাঁড়ায়।রুমের লাইট অন করে একে একে কাভাড থেকে সব জামা নিয়ে ছুড়ে রাখে ব্যাগে।বিছানার সামনে এসে অলীদের মুখে পানির ছিটা দিতে থাকে,

– এই অলীদ।দ্রুত উঠ হাতে সময় নেই।

– আহ!দিনে খাটিয়ে মারিস এখন রাতেও শুরু করেছিস?যা এখান থেকে।

– ঠিক আছে তুই ঘুমা আমি গেলাম।

ইনানের কথাৎ তড়াক করে উঠে বসে অলীদ।

– যাবো মানে?এত রাতে কোথায় যাবো?আর এখনো ৩/৪ দিন থাকতে হবে আমাদের।

– আমার ভালো লাগছে না অলীদ।বাকি কাজের দায়িত্ব আমি অন্যদের দিয়ে যাবো।আমি বাড়ি ফিরতে চাই।

অলীদ প্রত্যুত্তর করলো না।বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে হাটা শুরু করলো।দরজাটা ভিড়ে দিয়ে বিরবির করে বলে,

– বুঝি বুঝি তোর ইতিবউয়ের শোকে রাত দিন সব এক করে ফেলছিস তুই।

_

যতটা হাসিখুশি হয়ে বাড়ি ফিরলো ইনান সেই হাসিখুশীটা আর ঠোঁটের কোনে রইলো না তার।যখন জানতে পেরেছে ইতিকা ফ্লাট ছেড়ে তার বাড়িতে চলে গেছে।

– আম্মু তুমি কার পার্মিশনে ইতিকাকে ওইবাড়িতে নিয়ে গেছো?

– আমার ছেলের বউকে আমি আমার বাড়িতে এনেছি তার জন্য আলাদা কোন পার্মিশন নেওয়ার প্রয়োজন বলে আমি মনে করিনা।

– ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম।ইতিকাকে পাঠিয়ে দাও।

– সম্ভব না।

– মা!আর সহ্য হচ্ছে না এই নাটক

ইনানের ধমক শুনে নাসরিন সহসা ফোন কেটে দিলেন।এতক্ষন নাসরিনের পাশে বসে তাদের কথোপকথন শুনছিল ইতিকা।এসির মাঝেও সে ঘেমে একাকার।

– আম্মা আমি বরং ফিরে যাই।উনি একটু বেশি রেগে আছেন।

-এক চড়ে তোর সবকটা দাঁত ফেলে দেবো।স্বামী ভক্ত আর সাজতে হবে না।চুপচাপ নাটক দেখে যা।এই ছেলের রাগ, জেদ,অভিমান,ত্যাড়ামো সারিয়ে তুলবি তুই।

নাসরিনের ধমকে চুপসে যায় ইতিকা।ইনানের বাবা ইব্রাহিম পত্রিকা পড়ার উচিলায় সোফায় বসে বউমা শাশুড়ির কান্ড দেখছিলেন।ইতিকার ভীতিকর মুখটা দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসলেন তিনি।পত্রিকাটা পাশে রেখে শুধালেন,

– আমার ছেলে সে।তোমার শাশুড়ীর কথার যুক্তি ধরে নিজেকে নিরাপদ ভেবে লাভ নেই।হামলা যেকোন সময় তোমার উপর আসবে।

ইব্রাহিমের কথা শুনে গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে ইতিকা
.
রোদের দরুনে মাথায় ওড়না দিয়ে হাটছে সুফিয়া।বিশেষ প্রয়োজনে আজ ভার্সিটিতে এসেছে।কিন্তু অলীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পেরেছে ইনান ফিরে এসেছে।
আর সেই ভয়েই সুফিয়া দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়।

হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড জোরে চড় পড়ায় পেছেনে ঘুরে তাকায় সে।আরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ইনাকে দেখে চোখে মুখে যেন ধৌয়া উড়তে শুরু করেছে সুফিয়ার।

– দ..দোস্ত!

– আমার বউ তোর আমানতে দিয়ে গেছিলাম।

– বিশ্বাস কর আমার কোন দোষ নেই।

– সব দোষ তোর তুই আমার বউকে ফিরিয়ে আনবি কুইক।

সুফিয়া পড়েছে মহা ঝামেলায়।ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছে শুরু থেকে সবটা বলতে থাকে ইনানকে।সবটা শুনে ইনানের মাথায় যেন বাজ পড়েছে।

– মামু ইতিকাকে নেওয়ার পার্মিশন দেওয়ার কে?আমার বউ পার্মিশন নিশ্চই আমি দেবো।কাজটা কিন্তু ভালো হলো না।

– আমি জানি না তুই তোর ইতিবউকে বুঝা।সে আমাকে বলেই দিয়েছে তোর ফ্লাটে আর ফিরবে না।

– এত বড় সাহস!আমাকে অবমূল্যায়ন করছে সে।

– তোর বউয়ের এখন শুধু সাহস বাড়েনি পাখনা গজিয়েছে ২ টা করে।একটা তার শাশুড়ীর আশকারায় অন্যটি তার শশুড়ের।মাঝখানে আমি বখরির গরু।

সুফিয়া কথাটি বলেই ঠোঁট উল্টে ফেলে।অপরদিকে চিন্তায় মাথায় হাত চলে গেছে ইনানের। কি করে ফিরিয়ে আনবে তার ইতিবউকে

#চলবে…

❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ❌
#চলবে…..
❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here