আমার_অবেলায়_তুমি
#সানজিদা_বিনতে_সফি(সাথী)
#পর্ব_শেষপর্ব(১ম অংশ)
রাতের খাবার শেষ করে সবাই নিজের রুমে চলে গেলেও মধু শামীরের পায়ের পাতা চেপে ধরে বসে আছে। গত আধঘন্টা যাবৎ শামীর ছাড়ানোর চেষ্টা করে ও ব্যার্থ। এক হাত ছাড়ালে আরেক হাত দিয়ে চেপে ধরে।
— কি সমস্যা তোর বড় মামী। ভাতিজার পা ধরে টানাটানি করতে লজ্জা করে না তোর? ভালোয় ভালোয় পা ছাড়।না হলে ওয়াশরুমের কাজ আমি এখানেই সারবো।আর কিছুক্ষণ চেপে রাখলে আমার কিডনি লিভার সব একসাথে নষ্ট হয়ে যাবে। এখনো আমার কতো রাত জাগা বাকি!
শামীরের ভয়ংকর ঝাড়ি কে এক আনার ও পাত্তা দিলো না মধু। পায়ের পাতা ছেড়ে গা ছাড়া ভাব নিয়েই বলল,
— চল,আমিও তোর সাথে যাবো। তুই ভিতরে যাবি আমি বাইরে দাড়িয়ে পাহারা দিবো। বলা তো যায় না, দেখা গেল বাথরুমের জানালা দিয়ে পালিয়ে গেলি!
— আমাকে কি তোর মশা মনে হয়?এতবড় দেহ ওইটুকু জানালা দিয়ে কিভাবে বেরুবে? আর তিনতলার বাথরুমের জানালা দিয়ে লাফিয়ে আমি নিজের জীবন ই বা দিবো কেন?আশ্চর্য!সমস্যা টা কোথায় বলবি আমাকে? তোর জীবন নাশক ব্যবহার আমাকে আতংকিত করছে।
শোয়েবের ভীতু ভীতু চোখ ও মধুর মন গলাতে পারলো না। আজকে রাতে রুমে যাওয়া টা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। মাহতাব নিশ্চয়ই তাকে লজ্জায় ফেলবে। তার লজ্জায় পরতে একদম ই ভালো লাগে না। লজ্জা পেলে তাকে খুবই বিশ্রী দেখায়। এটা অবশ্য তার নিজস্ব মতামত।
— কি হচ্ছে এখানে?
মাহতাবের গম্ভীর গলা শুনে মধু শামীরের শার্টের কোণা ছেড়ে দিলো। ছাড়া পেতেই শামীর আর এক মুহুর্ত ও দেড়ি করলো না৷ এক ছুটে গিয়ে লিভিং রুমের পাশের বাথরুমে ঢুকল। মাহতাব অবাক চোখে তাকিয়ে নিজের ভ্রু কুচকে ফেললো৷
— আমাদের রুমে ও ওয়াশরুম আছে মধু। তুমি সেখানে তো যেতে পারতে৷ এভাবে ওর সাথে মা*রামা*রি করছিলে কেন?
মধু অসহায় মুখ করে দাড়িয়ে রইলো। মাহতাবের কথার উত্তর দিতে তার ইচ্ছে করছে না। সব সময় তাকে লজ্জায় ফেলে।
মাহতাব কিছু একটা ভেবে নিঃশব্দে হাসলো। মধুর কাছাকাছি দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
— রুমে এসো মধু। তোমার জন্য স্পেশাল গিফট এনেছি।
মধুর উত্তরের অপেক্ষা না করেই তার হাত ধরে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
রুমে এসেই একটা প্যাকেট মধুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
— চেঞ্জ করে এসো। আমি ওয়েট করছি।
মধু চুপচাপ চলে গেলো। মাহতাবের কথার বাইরে যেতে কখনোই মন সায় দেয় না তার। ওয়াশরুমে গিয়ে প্যাকেট খুলতেই চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মধুর। টকটকে লাল শাড়িটির দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো সে। দেড়ি না করে তারাতাড়ি তৈরি হওয়ায় মন দিলো। স্বামীর আহ্বানে সারা দেয়ার জন্য সে আজ মন ভরে সাজবে।
মাহতাব’কে শুভ্র পাঞ্জাবিতে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মনে কিছুটা সংশয় নিয়েই সে দাঁড়িয়ে। মধু তাকে সত্যি সত্যি মন থেকে মানতে পারবে কিনা তা নিয়েও সে চিন্তিত। মধুর সাথে তার বয়সের পার্থক্য অনেক। মধু হয়তো এখন তাকে মেনে নিয়েছে। পরবর্তীতে যদি তার মন বদলে যায়? তখন, তখন কি হবে? মাহতাব মধুকে বিশ্বাস করে। কিন্তু মানুষের মনের উপর কারো জোর থাকে না। যদি কখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন সে মেনে নিতে পারবে তো! মাহতাব এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চাইল। নার্ভাসনেস থেকে কি সব আবোল তাবোল ভাবছে সে! মানুষ চেনার ক্ষমতা তার হয়েছে। এসব ভাবা মানেই মধুকে ছোট করা। মধু জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে নিশ্চয়ই।
চুরির রিনঝিন শব্দে মাহতাব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। পিছু না ফিরেই ধীর গলায় বলল,
— কাছে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো তো মধু। কুইক।
মধু আবার লজ্জা পেলো। কিন্তু এবার আর ভয় পেল না। এতো সুন্দর করে সাজার পরে নিশ্চয়ই তাকে বিশ্রী লাগছে না। ধীর পায়ে গিয়ে পিছন থেকেই মাহতাব কে জড়িয়ে ধরলো সে। মাহতাব নিরবে হাসলো। চোখে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে তুলে মন্থর গলায় বলল,
— হয়নি।আমি তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে বলেছিলাম মধু। সামনে এসো,আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।
মধু সামনে গেলো না। মাহতাবের বুকের কাছের পাঞ্জাবি শক্ত করে মুষ্ঠিবদ্ধ করে তার পিঠে মুখ লুকালো।
মাহতাব এবার শব্দ করে হেসে ফেললো। হেচকা টানে সামনে এনে কপালে সময় নিয়ে চুমু খেলো।
— অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ঠিক আমার বউয়ের মতো।
মধু এবার লজ্জায় সিটিয়ে গেলো। চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে মাহতাবের বুকে মুখ লুকালো।
মধুর শরীরের তীব্র কম্পন মাহতাবকে কিছুটা দিশেহারা করে দিলো। শারীরিক উত্তাপ বেড়ে কপালে ঘামের রেখা দেখা দিল। পৌরুষ মনের আনাচে-কানাচে অনুভুতির আনাগোনা বেড়ে গেলো হাজার গুণ। মধুকে বুকে জড়িয়েই হালকা উঁচু করে রুমে নিয়ে এলো সে। খেই হারিয়ে ফেলা মধু বুঝতেই পারলো না সে মাটি থেকে তিন ইঞ্চি উপরে তার বরের বুকে লেপ্টে আছে। সারা শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করেই যেন খুব বেড়ে গিয়েছে। গাল থেকে যেন গরম ভাপ বেরুচ্ছে। অনুভূতির দুনিয়া থেকে বাস্তবে ফিরে এলো নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। মাহতাবের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভড়কে ও গেল সে। মানুষ টাকে এমন উন্মাদের মতো লাগছে কেন! এই কেনর উত্তর সে জানে। মাহতাবের রক্তিম চোখে তাকিয়ে থাকতে পারলো না সে। লজ্জায় মুখ ঘুড়িয়ে নিল। মাহতাব এক টানে গায়ের পাঞ্জাবি টা খুলে কিছুটা আটকে আটকে বলল,
— আমি কিন্তু খুব রোমান্টিক। দেখতে চাও?
মধু আগের চেয়েও বেশি কুকড়ে গেল। লোকটা মোটেই সুবিধার নয়। এভাবে কেন বলতে হবে? দেখালে কি সে মানা করবে নাকি!
প্রচন্ড উন্মাদনায় ও মাহতাব মুখ টিপে হাসলো। স্ত্রীর লাজুক ভড়কে যাওয়া মুখ দেখতে তার অসম্ভব ভালো লাগে।মধুর রাতটি কাটলো অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সুখে। এই গম্ভীর স্বল্পভাষী মানুষটার পাগলাটে ভালোবাসার আদরে সে নিজের কষ্ট টুকু প্রকাশ করতে কুন্ঠা বোধ করলো। মাঝে মাঝে তার কান্নার শব্দে মাহতাবের তাকে আগলে নেয়ার সুখ টুকু সমস্ত যন্ত্রণা এক নিমিষেই ভুলিয়ে দিলো।
সকাল টা সবার কাছে প্রতিদিনকার মতো হলেও মাহতাবের কাছে সম্পুর্ন অন্যরকম একটি সকাল মনে হলো। তার বুকে লেপ্টে এক স্নিগ্ধ মেয়ে ঘুমিয়ে। ঘড়ির কাটা আটটায় গেলেও আজ তার বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। মাথা হালকা ব্যাথা করছে। কম করে হলেও তার চার থেকে পাচ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। মধু ঘুমিয়েছে ফজরের পরে। চাইলে সেও ঘুমাতে পারতো। কিন্তু তার ঘুমন্ত মধুকে দেখতেই বেশি ভালো লাগছে। মনের মধ্যে হাজার জল্পনা কল্পনা আসলেও সে পাত্তা দিচ্ছে না।
রহিমা এসে ডেকে গেছে ব্রেকফাস্টের জন্য। এখন না উঠলে ময়না বেগমে এসে হানা দিবে। মাহতাব সেই রিস্ক নিতে চাইল না। না চাইতেও মধুকে ছেড়ে উঠতে হলো তার। মধুর এতো সুন্দর ঘুমটা সে নষ্ট করতে চাইছে না।
লামিয়ার সামনে একগাদা খাবার সাজিয়ে বসে আছে ময়না বেগম৷ তার হিসেব মতো লামিয়ার এখন একমাত্র কাজ সারাদিন খাওয়ার উপরে থাকা আর রাতভর এটা সেটা খাওয়ার বায়না করে তার ভাইকে জাগিয়ে রাখা। একটি রোমান্টিক প্রেগ্ন্যাসি আওয়ার কাটাতে হলে এসব করা বাধ্যতামূলক। লামিয়ার মুখটা শুকিয়ে গেছে। এতো খাবার সে সারাদিনে খেয়ে শেষ করতে পারবে কিনা সন্দেহ। মেহরাব নিজেও কিছুটা অসহায় বোধ করলো। সকাল সকাল কিছু বলে বোন কে রাগিয়ে দেয়ার কোন ইচ্ছেই নেই তার। বউ কে দেখেও মায়া হচ্ছে। একটাই তো মাত্র বউ তার।
#আমার_অবেলায়_তুমি
#সানজিদা_বিনতে_সফি(সাথী)
#পর্ব_শেষপর্ব(শেষ অংশ)
মধুর দিন শুরু হলো বেলা এগারোটায়। মাহতাব ততক্ষণে অফিস চলে গিয়েছে। লাঞ্চের সময় অবশ্য সে বাসায় থাকবে তা মধু খুব ভালো করেই জানে। তবুও মনের মধ্যে কিছুটা অভিমানী এসে ভীড় করলো তার। একবার বলে গেলে কি হতো! অভিমানী মন নিয়েই ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো সে। বাইরে থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ময়না বেগম আজও নিচতলার ভাড়াটিয়ার সাথে ঝগ*ড়া বাধিয়েছে। লামিয়া টেনে নিয়ে এলেও সে নতুন উদ্যমে আবার তে*ড়ে যায়।রহিমা আর জরি ও তার সাথে সমানে তাল দিয়ে যাচ্ছে। আজ নাকি ময়না বেগমের গাছের ড্রাগন চুরি হয়েছে। লামিয়ার মুখ দেখেই বোজা যাচ্ছে এতে সে ভিষণ খুশি। প্রতিদিন তার উপর ড্রাগন ফ্রুটের যে অ*ত্যাচার চলে তা থেকে রেহাই পাওয়া গেল। মধু গিয়ে অনেক কষ্টে ময়না বেগম কে টেনে ভিতরে নিয়ে এলো। শামীর আজ কয়েকদিন যাবৎ তার মামার অফিসে জয়েন করেছে। তাই সকালের নাশতা সেরেই সে অফিসে ছুটেছে।এতে মাহতাবের কিছুটা চাপ কমেছে বৈকি।
ময়না বেগম এখনো রাগে ফোসফাস করছে৷ মধু মুচকি হেসে ময়না বেগম কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আর রাগ করবেন না আপা। অসুস্থ হয়ে যাবেন তো! এই জরি,আপার জন্য একগ্লাস ঠান্ডা শরবত নিয়ে এসো। আচ্ছা আপা,আজ কি খাবেন বলুন।আজ আমি রান্না করবো।
ময়না বেগম হুট করেই শান্ত হয়ে গেলো। মধুর আগাগোড়া খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো কিছুক্ষণ। লামিয়া ও এসে ময়না বেগমের পাশে বসেছে। মধু কিছুটা আড়ষ্ট হয়ে বসলো। তার অস্বস্তি হচ্ছে।
— আমার ভাই তোকে ছুয়েছে তাই না? মাহতাব তোকে মন থেকে মেনে নিয়েছে!
ময়না বেগমের উচ্ছ্বসিত গলা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল মধু। লামিয়া ও হাসিমুখে তাকিয়ে। লজ্জায় ঘামতে লাগলো সে।
মধুর লজ্জায় চুপসে যাওয়া মুখটা দেখেও পাত্তা দিলো না ময়না বেগম। সে গুনগুন করে কাদতে লাগলো। কিছুটা বিলাপের সুরেই বললো,
— বুড়ো বয়সে আমার ভাইটা যৌবনের সাধ পেলো। কত বললাম বিয়ে কর, বিয়ে কর। আমার কথা শুনলো না। এখন কার লাভ হলো? গরীবের কথা বাসি হলেই ফলে। তখন বিয়ে করলে এখন দুই বাচ্চার বাপ থাকতো৷
মধু লজ্জা ভুলে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইলো ময়না বেগমের দিকে। লামিয়া মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলো। মধু আশে পাশে চোখ বুলিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল,
–আ আমি কিচেনে যাচ্ছি আ আপা।
ময়না বেগম আঁচলে মুখ গুজেই গুন গুন করে বলল,
— লাউশাক ভর্তা করো আজ। শুটকি আর আলু ভর্তা ও করো।
মধু মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। জরি শরবত নিয়ে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে ময়না বেগমের কান্ড দেখছিল। মধু যেতেই সে মুখ থেকে আচল সরিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
— শরবত কি গ্লাসেই শুকাবি?এদিকে দে।আমার গলা শুকিয়ে গেছে ।
জরি মুখ ফুলিয়ে শরবতের গ্লাস গিয়ে দিলো।
— আফা,,আপনে সারাক্ষণ ভাই ভাবি গো পিছে লাগেন ক্যান?তারা তো আফনেরে পাগোল মনে করে। হের লাইগা তো ডাক্তার ও দেহায় দেহি।
ময়না বেগম গ্লাসে চুমুক দিয়ে মুচকি হাসলো। গ্লাসের শরবত টুকো শেষ করে হাসিমুখেই বললো,
— আমি সবই জানি। তোর দুলাভাই মারা যাবার পরে আমি বড্ড একা হয়ে গিয়েছিলাম রে জরি। (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)। লোকটা কে আমি বড় ভালোবাসতাম। তার শূন্যতা পৃথিবীর কোন কিছু দিয়ে পূর্ণ হওয়ার নয়। মাঝে মাঝে জোড়া শালিক দেখলেও আমার তার কথা মনে পরে৷ আমরা তো জোরা শালিকের মতই ছিলাম। স্বামী হচ্ছে মেয়েদের অমূল্য সম্পদ। পৃথিবীর এই হাটবাজারে আর কারোর সাথেই তার তুলনা হয় না। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা হলো পূর্নাঙ্গ ভালোবাসা। যেখানে শারীরিক, মানুসিক সব ধরনের মায়া থাকে। তুই চাইলেই সেই জায়গা টা অন্য কোন সম্পর্ক দিয়ে পূর্ণ করতে পারবি না। (একটু থেমে)
বাবার বাড়ি আসার কিছুদিন পরেই বাবা কে হারালাম। তখন আমি পাগলপ্রায়। আমার ছোট ছোট ভাই গুলো আমাকে বাচ্চার মতো সামলেছে। আমি ওদের বিরক্ত করি না। আমি ওদের পিছনে লেগে নিজের একাকিত্ব দূর করার চেষ্টা করি। আমি ওদের পিছনে লাগি বলেই ওরাও কোন জড়তা ছাড়া আমার কাছে আসে। না হলে এই ব্যাস্ত শহরে ভাইদের সাথে আমার দূরত্ব বেড়ে যেতো। পিছনে না লাগলে আমাদের মধ্যে এতটুকু কথাও হয়তো হতো না। আমার দুই ভাই আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে বুঝলি। তারা যদি মনে করে আমি অসুস্থ তাতেও আমার দুঃখ নেই৷ আমি অসুস্থ সেজেই ভাইদের কাছাকাছি থাকতে চাই। সুস্থতা যদি ভাইদের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমি অসুস্থ ই ঠিক আছি।
ময়না বেগম কুলসুম বেগমের রুমের দিকে চলে গেলো।
জরি চোখের পানি নিয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। জরি ছাড়াও আরো দুজন মানুষের চোখ ভিজেছে। তারা হচ্ছে লামিয়া আর মধু। মধু চোখ মুছে হাসিমুখে আবার রান্নাঘরে চলে গেলো। থাকনা কিছুটা লুকোচুরি, কিছুটা অভিনয়। দিন শেষে সবাই সুখে আছি এর চেয়ে বেশি আর কি চাই?
মাহতাব এলো বেলা শেষে। আজ মেহরাব ও বাসায় আসতে পারেনি। কুলসুম বেগম কে আজ লামিয়া খাইয়ে দিয়েছে৷
কুলসুম বেগম খুব একটা নড়াচড়া করে না। সারাদিন রুমে শুয়ে বসেই কাটায়। মাহতাব এসেই ড্রয়িং রুমের সাথে লাগোয়া বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে কুলসুম বেগমের সাথে দেখা করতে গেলো। কুলসুম বেগম আসরের নামাজের শেষে তাসবিহ পড়ছিলেন। ছেলেকে আসতে দেখে মুচকি হেসে হালকা চেপে বসলেন। মাহতাব মায়ের গা ঘেঁষে বসে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
— এখন কেমন আছেন আম্মা? আমার একটা মিটিংয়ের জন্য গাজীপুর যেতে হয়েছিল। জ্যামে আটকে দেড়ি হয়ে গেলো। আপনি খেয়েছেন?
— এতো চিন্তা করো না আব্বা।আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। তোমাদের মতো সন্তানের মায়েরা কখনো খারাপ থাকে না বাবা। আমি খেয়ে নিয়েছি। আমার ছেলেদের অনুপস্থিতিতে আমার মেয়েরা আমার যত্নের ত্রুটি রাখে না। যাও গিয়ে খেয়ে নাও।
মাহতাব মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেলো। আজ সারাদিন মধুর সাথে কথা হয় নি। মধু কি রেগে আছে ? কপালে ভাজ ফেলেই রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সে। পথে ময়না বেগমের সাথে দেখা হতেই সে মুখ বাকিয়ে নিজের রুমে গিয়ে খিল দিলো। মাহতাবের ভ্রু আরো কিছুটা কুচকে গেল। আপার আবার কি হলো!
মধু মাহতাবের ক্লান্ত মুখ দেখে আর রাগ করে থাকতে পারলো না। হাসিমুখেই এগিয়ে গিয়ে তার হাতে ভাজ করে রাখা কোর্ট টা নিজের হাতে নিয়ে নিলো।
— ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি খাবার দিচ্ছি৷
মাহতাব স্বস্তির শ্বাস ফেললো। বউয়ের রাগ কিভাবে ভাঙ্গাতে হয় তা সে জানে না। বহু বছর আগের প্রেমের অভিজ্ঞতা কি আর এখন কাজে লাগবে!
— ফ্রেশ হয়েছি। তুমি খেয়েছো?
— উহু।
— খুব খারাপ কথা। অল্প হলেও খেয়ে নিবে। পরে নাহয় আবার আমার সাথে খাবে।
মধু হেসে সায় জানালো। মাহতাব কে চেঞ্জ করতে বলে চলে গেলো খাবার গরম করতে।
রাতে সবাই একসাথে বসেছে। আলোচনার বিষয় হচ্ছে শামীরের বিয়ে। ময়না বেগম দেরি করতে চায় না। যত তারাতাড়ি সম্ভব ছেলের বিয়ে করাবেন। ময়না বেগমের কথায় সবাই সায় জানালো। শামীর নিজেও কোন অমত করলো না৷
আলোচনা শেষে ঠিক হলো ময়না বেগম নিজেই মেয়ে খুজে বের করবে। ভাইদের পছন্দের উপর তার ভরসা নেই।
তাতেও কারোর কোন আপত্তি নেই। ময়না বেগমের দুই সহচরী রহিমা আর জরি। তারা এলাকা ঘুরে ভালো মেয়েদের খবর জোগাড় করবে। তারপর ময়না বেগম তদন্তে নামবে।
রাতে বারান্দায় মাহতাবের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। মাহতাব মধুকে এক হাতে আগলে রেখে আরেক হাতে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে।
— কি করছেন?
— অফিসের কিছু কাজ ছিল৷ তা শেষ করছি।
মধু আবার আকাশ দেখায় মন দিলো। বেলি ফুল গাছে এখন কোন ফুল নেই। তবে তার পাশেই সারি সারি সাদা গোলাপ ফুটে আছে। এই গাছ গুলো মধু নিজ হাতে লাগিয়েছে।
— কি দেখছো?
— বাগানে খুব সুন্দর ফুল ফুটেছে।
মাহতাব সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। মধুকে আরেকটু গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে ধীর গলায় বলল,
— তুমি এই সাদা গোলাপের মতো আমার জীবনের একরাশ স্নিগ্ধতা। যে আমার অবেলায় আমার জীবনে এসে আমাকে পূর্ণতা দিয়েছে। সারাজীবন আমি তোমাকে এভাবেই আমার বুকে আগলে রাখবো।
মধু পরম আবেশে মাহতাবের বুকে মুখ গুজলো। এই মানুষ টাকে সে অসম্ভব ভালোবাসে। জীবনে এর বেশি আর কি বা চাওয়ার আছে তার?
সমাপ্ত।
(
Apu sash porter sesh onso ta din please
দিয়েছি আপু