#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(১৭)
#জেরিন_আক্তার_নিপা
আতিয়া মন খারাপ করে বেডে বসে আছে। পাপার কথা মনে পড়ছে ভীষণ। বাড়ি থেকে সেই কবে এসেছে। পাপা নিশ্চয়ই ওর জন্য টেনশন করে করে শরীর খারাপ করে ফেলেছে। হামিদ চাচা তবুও আতিয়ার খবর জানে। পাপা তো কিছুই জানে না। সা’দ রুমে এসে আতিয়াকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল,
“-মন খারাপ? ‘
“-হুম।’
“-রান্না ভালোই হয়েছিল। শুধু একটু বেশি ঝাল হয়ে গিয়েছিল। নইলে সব ঠিকঠাকই ছিল।’
“-সেজন্য মন খারাপ না।’
“-তাহলে? ‘
আতিয়া সা’দের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,
“-বাড়ির কথা ভীষণ মনে পড়ছে।’
আতিয়াকে এখন ঠিক বাচ্চাদের মত লাগছে। মন খারাপ করে কেমন গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সা’দের ভীষণ মায়া হলো।
“-বাড়ি যাবেন? ‘
“-হুম।’
সা’দ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“-আচ্ছা, আমি নিয়ে যাব। আপনার বাবা মা আবার কিছু বলবেন না তো?’
“-উঁহু।’
“-কবে যেতে চান?’
আতিয়া ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়েই রইল। কোনো উত্তর দিতে পারল না সে। চলে যাবে ভাবতেও তো কেমন যেন লাগছে। পাপাকে না দেখে থাকতে ইচ্ছে করছে না। আবার চলে যেতেও মন চাইছে না। এমন হচ্ছে কেন তার সাথে?
“-আপনি যেদিন যেতে চাইবেন, আমাকে বলবেন। আমি নিয়ে যাব।’
“-আমি চলে গেলে আপনি দাদাজানকে কী বলবেন? দাদাজান জিজ্ঞেস করবেন না, আমি কোথায় গেছি? কেন গেছি? তখন আপনি কী জবাব দিবেন? ‘
আতিয়ার এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারল না সা’দ। উত্তর তার কাছে নেই। আতিয়া চলে যাবে ভাবতেই তার নিজেরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কত দিন তাকে সে এভাবে আটকে রাখতে পারবে? একদিন না একদিন তো মেয়েটা চলেই যাবে।
আতিয়া এখনও উত্তরের আশায় সা’দের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সা’দ বলল,
“-তা বলবো কিছু একটা। আপনি যেতে চাইলে দাদাজানের কথা ভেবে তো আপনাকে আটকে রাখতে পারব না। তাছাড়া বাড়িতে আপনারও আপনজন আছে। তারাও আপনার জন্য চিন্তা করছেন হয়তো।’
“-হু।’
নাহিল দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“-ভাই,ভাবি সাহেবা! ভেতরে আসব?’
চট করে আতিয়া নাহিলের দিকে ফিরে মুখে হাসি নিয়ে এলো। সা’দ বলল,
“-এসো।’
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নাহিল বলল,
“-কি করছিলে তোমরা? এখনও জেগে আছো দেখছি। গল্প করছিলে বুঝি?’
“-তুমি এখানে কেন? কোনো দরকার? ‘
আতিয়ার পাশে বসতে বসতে নাহিল বলল,
“-এ বাবাহ! দরকার ছাড়া ভাইয়া ভাবির কাছে আসা যায় না বুঝি? আমি আমার ভাবিকে ভীষণ মিস করছিলাম। তাই তো ভাবির কাছে উড়ে চলে এসেছি।’
“-বাজে কথা রাখো।’
“-বাজে কথা না, ভাই। সত্যি…
সা’দকে চোখ পাকাতে দেখে নাহিল আসল কথায় এলো। পা নাচাতে নাচাতে বলল,
“-বুড়ো তোমাদের দু’জনকে সন্দেহ করছে।’
আতিয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“-কেন? ‘
“-তোমরা নাকি বুড়োর সামনে তেমন কথা টথা বলো না। একজন আরেকজনকে দেখোও না। ভালোবেসে বিয়ে করেছ অথচ তোমাদের দেখলে মনে হয়, জোর করে ধরেবেঁধে তোমাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘ নাহিল আরও কী কী যেন বলছিল। মাঝ থেকে সা’দ বলে উঠল,
“-এসবের পেছনে তোমার হাত নেই তো আবার? ‘
নাহিলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো যেন। এমন ভাবে চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলল,
“-আমার হাত! বিশ্বাস করো ভাই, বুড়োর মাথায় এসব ভাবনা নিজে থেকেই এসেছে। এতে আমার হাত, পা এমনকি ছায়া পর্যন্ত নেই। আমি নির্দোষ নিষ্পাপ বাচ্চা ছেলে। আমার উপর এতো বড় অপবাদ তুমি দিতে পারো না। আল্লাহ সইবেন না কিন্তু।’
“-তাহলে দাদাজানের হঠাৎ এমন মনে হবেন কেন? সন্দেহ হবে কেন? ‘
“-আমি কী জানি? দাদাজান বলছিলেন তাই আমি তোমাদের জানাতে এলাম।’ নাহিল মনে মনে ভাবলো,
-না বাবা! আমার ভাই যা চিজ। ঠিক আমার চাল ধরে নিবে। এখন ভালোই ভালোই এখান থেকে কেটে পরতে পারলেই জান বাঁচবে।’
“-আচ্ছা, তোমরা কিন্তু দাদাজানের সামনে একটু বেশি বেশি তুমি তুমি করে কথা বলবে। কেমন? আর প্রেমিক প্রেমিকারা যেমন ন্যাকামি করে। তোমরাও একটু ন্যাকামি করবে আরকি। দাদাজানকে দেখাতে হবে তোমরা রিয়েল ক্যাপল। আমি এখন আসি। ঘুমিয়ে পড়ো তোমরা। জেগে থেকো না বেশিক্ষণ।’
নাহিল আস্তে আস্তে কেটে পড়লো। সা’দ চিন্তিত মুখে আতিয়াকে দেখল। নিজে নিজেই বলল,
“-এই দাদাজান চাইছেনটা কী? এতদিন বিয়ে করো,বিয়ে করো বলে পাগল করে দিচ্ছিলেন। এখন যাও বউ বাড়িতে নিয়ে এসেছি। এখন সন্দেহ করছেন? ভাবছেন নকল বিয়ে করেছি! প্যারা দেওয়ারও একটা লিমিট থাকে দাদাজান।’
সা’দকে বাঁ হাতে কপাল চেপে ধরে বিরবির করতে দেখে আতিয়া বলল,
“-দাদাজানের উপর রাগ করবেন না। আগের যুগের মানুষ তো। একটু…
“-দাদাজানের উপর আমার রাগ চলে না। উনার উপর বিরক্তও হতে পারি না। এসব জেনেবুঝেই উনি আমার সাথে এরকম করেন। ফারিহাকে বিয়ে করার জন্যও এমন করছিলেন। বাধ্য হয়ে…
থেমে গেল সা’দ।
“-আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। দাদাজানের এসব চলতেই থাকবে। শুয়ে পড়ুন আপনি।’
আতিয়া অতি সাবধানে জিজ্ঞেস করল,
“-আপনি কোথায় শোবেন? আজ আমি লাথি দিব না প্রমিজ। আপনি চাইলে বেডে…
সা’দকে তাকাতে দেখে আতিয়া লজ্জা পেয়ে চাদর দিয়ে মাথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়ে। আতিয়ার এমন কাণ্ড দেখে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল সা’দ। মেয়েটা পাগল।
পরের দিন সকালে দাদাজান ওদের ডেকে নিলেন। কিছু কথা বলবেনা। কিন্তু কী কথা তা আতিয়া সা’দ কেউই বুঝতে পারছে না। নাহিল অবশ্য বুঝতে পেরেছে। দাদাজানের মাথায় এই কথা তো সে-ই ঢুকিয়েছে। আতিয়া ফিসফিস করে বলল,
“-দাদাজান কী কথা বলবেন? ‘
সা’দ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“-আমিও সেটাই ভাবছি।’
নাহিল মাথা নাড়িয়ে বলল,
“-হয়তো তোমাদের বিয়ের গিফট দিবে। আমার এমনই মনে হচ্ছে।’
ধমক দিল সা’দ।
“-শাট আপ!’
দাদাজান নাটকীয় ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেন,
“-তোমাদেরকে যে জন্য ডেকেছি, দু’দিন ধরেই আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসছিল। আমি জানি এতে তোমরাও খুশি হবে।’ দাদাজান বলে যাচ্ছেন। সা’দ অধৈর্য হয়ে মনে মনে বলল,
“-দাদাজানও নাহিলের মত নাটক শিখে গেছে। আমাদের টেনশনে রেখে উনি বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। আসল কথাটা বলুন না, দাদাজান। এতো ভনিতা করছেন কেন?’
“-আমি ভেবেছি তোমাদের বিয়েটা আবার দিব। আমার চোখের সামনে। বিশাল আয়োজন করে। কী বলো তোমরা? আইডিয়াটা ভালো না?’
দাদাজান হাসি হাসি মুখে নাতি, নাতবৌয়ের দিকে চাইলেন। আতিয়া কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ সা’দের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ তারপর বলল,
“-কিহ!’
সা’দও হতবুদ্ধি হয়ে বলে উঠল,
“-কি! কেন, দাদাজান?’
নাহিল ভাই আর আতিয়ার রি-অ্যাকশন দেখে হেসে ফেলল। অস্পষ্ট করে বলে উঠল,
“-এবার ঠেলা সামলাও ভাই।
ওদের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে দাদাজান বললেন,
“-কী, কেন আবার কি হ্যাঁ? বিয়েই তো দিতে চাইছি। তোমাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর কথা তো বলিনি। তোমরা এরকম করছো যেন তোমাদের দু’জনকে আলাদা করে দেওয়ার কথা বলেছি। মানুষ একবার বিয়ে করে। তোমাদের দু দু’বার বিয়ে হবে, তবুও তোমরা খুশি হতে পারছ না!’
সা’দ সবার আগে নিজেকে সামলে নিল।
“-না দাদাজান। আমাদের কথার মানে ঠিক তা না। আসলে দাদাজান, বিয়ে তো হয়েছে। তাহলে আবার কেন? ‘
আতিয়াও বলল,
“-হ্যাঁ দাদাজান। আবার কেন? ‘
“-বিয়ে হয়েছে! ওই বিয়ে কি আমি দেখেছি? আমি ছিলাম সেখানে? আমার শখ আহ্লাদের কী হবে? আমার যে কত স্বপ্ন ছিল।’
সা’দ ভালো ভাবেই নিজের জালে ফেঁসে গেছে। এখন সত্যি বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। হয় দাদাজানকে সত্যিটা জানাতে হবে। নাহয় সত্যি সত্যি বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করতে অবশ্য তার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু মেয়েটা তো মানবে না। তাকে তো নাটক করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল।সা’দ আতিয়াকো দেখল। আতিয়া এখনও হাঁ করে আশেপাশে কী হচ্ছে তা দেখে যাচ্ছে।
সা’দ বলল,
“-কিন্তু দাদাজান, আতিয়ার পরিবার আমাদের বিয়ে মানবে না।’
“-কেন মানবে না ভাই? আমার নাতি ফেলনা নাকি? কী নেই তার? সব আছে। দেখতে ভালো। আচার ব্যবহার ভালো। ভালো ইনকাম করে। সবথেকে বড় কথা তাদের মেয়েকে ভালোবাসে। সুখে রাখতে পারবে। এর থেকে বেশি আর কী চাই? ‘
আতিয়া বলল,
“-কিন্তু দাদাজান…
“-কোন কিন্তু না। তারা না মানলেও তুমি আমার নাতির বৌ। এখন আমি শুধু সমাজকে জানিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে তোমাকে ঘরে তুলবো।’
দাদাজানের সামনে আর কোনো কথা খাটে না। এখন বেশি কিছু বললে আতিয়ার মিথ্যা সবার সামনে চলে আসবে।
সা’দের ঘরে বসে আছে সবাই। নাহিল সবকিছু বেশ উপভোগ করছে। চুপচাপ মজা নিচ্ছে। আতিয়া ঘর জুড়ে পায়চারি করছে। সা’দ চিন্তিত মুখে টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“-দাদাজানকে বুঝাতে হবে। আমি আমার বাবা,মা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারব না।’
নাহিল মাঝ থেকে বলে উঠল,
“-বাবা মা’কে নিয়ে এলে তখন বিয়ে করবে? ‘
আতিয়া চুপ করে গেল। সা’দ নাহিলকে ধমক দিয়ে বলল,
“-দাদাজানের মাথা তুমি খারাপ করেছ।’
“-যাহ বাবাহ! আমি আবার কী করলাম?’
“-এই মিথ্যে বিয়ের আইডিয়া তোমার মাথা থেকেই এসেছিল।’
“-হ্যাঁ। তখন তোমার ভালোর জন্য বলেছিলাম। এখন নাহয় দাদাজানের জন্য সত্যি বিয়ে করে নাও। সমস্যা কি? তোমাদের দু’জনকে এক সাথে বেশ মানিয়েছে। একদম পারফেক্ট জুটি তোমরা।’
“-নাহিল!’
“-আমার উপর রাগ না ঝেড়ে, কী করবে সেটা ভাবো ভাই।’
“-দাদাজানকে সত্য বলে দেই?’
আতিয়া মুখ কালো করে বলল,
“-তাহলে দাদাজান হার্ট এ্যাটাক করে সঙ্গে সঙ্গে অক্কা পাবে।’
“-তাহলে কী করবো? ‘
“-জানি না আমি।’
নাহিল সা’দকে চোখে ইশারা করল। ডান চোখ টিপে দিয়ে বলল,
“-কনে রাজি।’
বাসায় কাজী ডেকে বেশ ঝাঁক জমক আয়োজনে ওদের বিয়ে হলো। তবে দাদাজান আরও আয়োজন করবেন ভেবেছিলেন। নাহিলের কথায় সব বাদ দিয়ে এটুকুই আয়োজন করেছে। আতিয়ার পরিবার থেকে কেউ আসবে না। আপনজনদের রেখে বিয়ে করবে, মেয়েটার মন খারাপ থাকবে। তাই সামান্য আয়োজন করলেই ভালো হবে। নাহিলের কথায় যুক্তি আছে। দাদাজান মেনে নিলেন। নাহিল তার নতুন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে। আড়চোখে ভাই ভাবিকে দেখছে। সা’দ আতিয়া পাশাপাশি বসে আছে। আতিয়া মনে মনে ভাবছে, বাড়িতে ফিরে গিয়ে ওই ঢেঁড়সকে বিয়ে করার চেয়ে এই লোককে বিয়ে করে নেওয়াই ভালো। পাপাকে সে বুঝিয়ে নিবে। শুধু ওই কালনাগিন আর তার ছেলে ঢেঁড়সের হাত থেকে জান ছুটলেই বাঁচে সে। এই লোকটাও খারাপ না। এই কয়দিনে তার প্রতি আতিয়ার দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। হয়তো মনে মনে ভালোবাসে।
মনে মনে যাকে ভালোবাসে তাকে সত্যি সত্যিই নিজের বউ হিসেবে পেয়ে সা’দ এক দিকে খুশি। আবার ওর কাছে মিথ্যে বলেছে এটা ভেবেও অপরাধবোধ কাজ করছে। সা’দ কিছু বলতে যাচ্ছিল। তখনই সা’দের এক ফ্রেন্ড এসে হাজির হলো। সা’দ তাকে দেখে হেসে উঠে দাঁড়াল। সা’দ এগিয়ে যেতে সোহেল গলা জড়িয়ে বলল,
“-ওরে শালা,বিয়ে করে ফেললি! আমি তো ভেবেছিলাম তুই চিরকুমার থাকবি।’
আতিয়ার দিকে ফিরে কানে কানে সোহেল বলল,
“-এই আগুন কোত্থেকে পেলি ভাই? আমাকেও একটা খুঁজে দে না। বিয়ের বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে।’
“-তুই তো বলেছিলি আসতে পারবি না। কখন এলি?’
“-আমার জানের দোস্তের বিয়ে আর আমি আসব না? একটু আগে এসেছি। ঢাকা থেকে সোজা তোর বিয়েতে।’
“-ভালো করেছিস।’
“-চল,চল। ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দে।’
আতিয়া উঠে দাঁড়িয়ে সৌজন্যমূলক হাসলো। সা’দ ওদের পরিচয় করিয়ে দিল।
“-সোহেল। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। কলেজ লাইফ থেকে একসাথে আছি। এখন ও পুলিশে আছে। ঢাকা থাকে।’
পুলিশ কথাটা শুনতেই আতিয়ার মুখ শুকিয়ে গেল। পাপা নিশ্চয়ই থানা পুলিশ করে একাকার করে ফেলেছে। এই লোক যদি তাকে চিনতে পারে, তাহলে সব খেল শেষ। সব মিথ্যা আজ ধরা পড়ে যাবে। সা’দ, নাহিল,দাদাজান ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে। সোহেল আতিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“-ভাবি মনে হয় পুলিশদের ভয় পান। আমাকে অবশ্য ভয় পেতে হবে না।’
সা’দ মনে মনে হাসলো৷ এই মেয়ে পুলিশ ভয় পাবে! আর মানুষ পেল না সোহেল।
“-ভাবির নাম কি রে সা’দ? ‘
“-আতিয়া।’
“-পুরো নাম বল শালা।’
আতিয়া নিজেই বলল,
“-আতিয়া আশরাফ চৌধুরী।’
এক গাল হেসে সোহেল বলল,
“-বাহ! বেশ খানদানি নাম তো। আতিয়া আশরাফ চৌধুরী। ভাবি, আপনার বাবার নাম নিশ্চয়ই আশরাফ চৌধুরী?’
আতিয়া ভেবে পেল না,সত্যি বলবে নাকি মিথ্যা।
“-হুম।’
“-তা আপনার বাসা কোথায়? ‘
সোহেলের কাঁধে হাত রেখে সা’দ বলল,
“-এখানেও তোর পুলিশগিরি শুরু করে দিয়েছিস?’
“-আরে নারে শালা। চিনে রাখি। ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে। ভাবির যদি ছোট বোন টোন থাকে…ওই আমারও ইয়ে হয়ে যাবে আরকি।’
কথার মাঝে দাদাজান সোহেলকে ডেকে নিলেন। অনেক দিন পর সোহেল এবাড়িতে এসেছে। আগে প্রায়ই আসত। এখন ঢাকা থাকে বলে আর তেমন আসা যাওয়া হয় না। সোহেল চলে গেলে আতিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
-উফ বাবাহ! পুলিশ ব্যাটা যেরকম জেরা শুরু করে দিয়েছিল। একটু হলেই সব কথা মুখ ফসকে বেরিয়ে যেত।#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(১৮)
#জেরিন_আক্তার_নিপা
অতিথিদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে আতিয়ার গাল ব্যথা হয়ে গেছে। এগারোটা বাজে প্রায়। এখনও অতিথিরা যায়নি। তবে দু একজন করে যেতে শুরু করেছে। সা’দ সোহেলকে বিদায় দিতে গেল। সোহেল রাতেই ঢাকা ফিরে যাবে। নাহিলকেও আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো কোন চিপায় চাপায় নতুন গার্লফ্রেন্ডের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। আতিয়া আশেপাশে তাকাল। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। জুস টুস কেউ এনে দিচ্ছে না কেন? সবাই তো ঠিকই খাচ্ছে। শুধু নতুন বৌকে না খাইয়ে রেখেছে। সবাইকে বিদায় দিয়ে ওরা নিজের ঘরে এলো রাত একটা বাজে। আতিয়া মাথা থেকে এই ভারী ওড়নার ঘোমটা ফেলে দিল।
“-বাবাহ! গরমে আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছে।’
সা’দ আড়চোখে আতিয়াকে লক্ষ করছে। এতদিন তো মিথ্যে বিয়ের অভিনয় করেছে। আজ সত্যি সত্যি বিয়ে হলো তবুও মেয়েটা কাঁদলো না। মন খারাপের তো কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যেন দুই তিন বছর রিলেশন করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিয়ে করে এসেছে। সা’দ ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে, চেঞ্জ করে বেরিয়ে এসে আতিয়াকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে বলল,
“-ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিন।’
আতিয়া ভ্রু কুঁচকে সা’দের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। সা’দ মনে মনে ভাবছে,
-ভুল কিছু বললাম নাকি? এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?’
“-কী বললেন? ‘
“-হ্যাঁ? চেঞ্জ করে নিতে বললাম।’
“-উঁহু। আরও কিছু বলেছেন?’
“-আর কী বলেছি? ‘
“-আপনি আমাকে ‘আপনি’ করে বলছেন কেন? আর আমিই বা আপনাকে ‘আপনি’ করে কেন বলছি। এতদিন ফেক হাজবেন্ড ওয়াইফ ছিলাম। কিন্তু এখন তো আমরা রিয়েল হাজবেন্ড ওয়াইফ। একটু আগেই সত্যিকারের বিয়ে হলো। আর আপনি,আপনি করে বলা চলবে না। আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।’
সা’দ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়ের আরও কত রূপ আছে? একেক সময় একেক রূপ বেরিয়ে আসে। আজ তো নতুনই কোন রূপ দেখা যাচ্ছে। সা’দকে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আতিয়া বলল,
“-কী হলো? বরফের মত জমে গেলে কেন? আমাদের বিয়ে তুমি মানো না?’
মাথা ঝাকাল সা’দ।
“-মানি।’
“-তাহলে আমার আচরণে এতো অবাক হচ্ছ কেন? কোন হাজবেন্ড ওয়াইফ কি আপনি আপনি করে? না তো? হুম। তাহলে আমরাও আর আপনি করে বলব না।’
“-হুম।’
“-থাকো তুমি। আমি চেঞ্জ করে আসি। দাদাজান যা ভারী শাড়ি দিয়েছেন! এই শাড়ি আজকেই শুধু পরেছি। আর কখনও পরতে পারব না।’
আতিয়া ওয়াশরুমে ঢুকে গেলে সা’দ ধপ করে বেডে বসে ভাবতে লাগল।
“-এটা কি আতিয়া? নাকি আসল আতিয়াকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গিয়ে ওর যমজ বোনকে দিয়ে গেছে। আমি শিওর এই মেয়েকে ভূতে ধরেছে। তাই হঠাৎ করে এমন অদ্ভুত বিহেইভ করছে।’
আতিয়া বেরিয়ে এসে সা’দকে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে মৃদু হাসলো।
“-এখনও বসে আছো? ঘুমোবে না?’
“-হু।’
“-এই তুমি এমন হু, হা করছো কেন? কথা হারিয়ে ফেলছো? নাকি নতুন বউয়ের সামনে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছ?’
“-আসলে আপনি…’ আতিয়াকে ত্যাড়া চোখে তাকাতে দেখে সা’দ ভুল সংশোধন করে নিয়ে বলল,
“-না মানে তুমি, তোমাকে কখনও এভাবে দেখিনি তো।’
সা’দ আরও কিছু বলছিল। আতিয়া বলে উঠল,
“-শোন, আগে তুমি ছিলে পর পুরুষ। তখন তোমার সাথে তুমি তুমি করে কথা বলা বা এখন যেমন ফ্রিলি কথা বলছি এমন ভাবে কথা বলা যেত নাকি? আমার নিজের কাছেই তো কেমন কেমন লাগত। আর এখন তুমি হলে আমার জামাই। সত্যি সত্যিই তো বিয়ে করেছি। তাই এখন তোমার সামনে আমার আসল রূপে আসছি। আমি যেরকম আমাকে তোমার সেরকম ভাবেই গ্রহণ করতে হবে। বিয়েটা তো আর এক দু’মাসের জন্য করিনি। সারাজীবনের জন্য করেছি।’
“-হুম।’
“-হুম, না। বুঝতে পারছ তো আমার কথা?’
“-পারছি।’
“-তাহলে এখন চলো শুয়ে পড়ি।’ ঘড়ির দিকে তাকাল আতিয়া।
“-এ বাবা! অনেক রাত হয়েছে।’ বেডে উঠে গিয়ে আতিয়া বলল,
“-অ্যাই শোন!’
“-হুম।’
“-তোমার মাথায় যদি বাসর টাসর নিয়ে অন্য কোন প্ল্যান থাকে। তাহলে বাদ দিয়ে দাও। আমরা আগে ফ্রেন্ড হবো। একজন আরেকজনকে জানব। বুঝব। তারপর হাজবেন্ড ওয়াইফ হবো। কেমন? ‘
“-হুম। ‘
“-আমরা তো এখনও একে অন্যের কিছুই জানি না। হুট করেই আমাদের দেখা। আর পরিস্থিতি কিভাবে কিভাবে আমাদের কাছে নিয়ে এলো,বিয়েটাও কেমন করে যেন হয়ে গেল। তোমাকে জানার সুযোগই পাইনি।’
আতিয়ার সহজ সরল ভাবে বলে ফেলা কথাগুলো শুনে সা’দ মনে মনে হাসছে। মেয়েটা মনের দিক থেকে এখনও বাচ্চা। নইলে এতো সহজে সবকিছু মেনে নিয়ে এভাবে স্বাভাবিক হতে পারত না। সা’দ জানে আতিয়াকে সে ভালোবাসে। তাকে আর জানার, বোঝার দরকার নেই। কিন্তু আতিয়া কি তাকে ভালোবাসে? খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে? জিজ্ঞেস করবে কি?
“-হোটেলে আমরা এক বিছানায় ছিলাম না। এখনও তেমনই থাকতে পারব। তোমাকে সোফায় বা অন্য কোথাও ঘুমাতে হবে না। আর ভয় পেয়ো না। ওই দিন একটা স্বপ্ন দেখে লাথি দিয়েছিলাম। সব সময় দিব না।’
আতিয়া নিজে নিজে বকবক করতে করতে বিছানা গুছিয়ে দিল। দু’জন পাশাপাশি শুয়ে পড়ল। সা’দ চোখ বুজে পড়ে থেকে আতিয়ার কথাই ভাবছে। কখনও কল্পনাই করেনি সে,এই মেয়েকে বৌ করে পাবে।
“-অ্যাই…
“-হুম।’
আতিয়ার অ্যাই অ্যাই করে কথা বলা বেশ ভালোই লাগছে সা’দের কাছে। আতিয়ার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তকে অনুভব করছে সে।
“-তোমার উপর হাত, পা তুলে দিলে কিছু মনে করবে না তো?’
অন্ধকারে নিঃশব্দে হেসেই ফেলল সা’দ।
“-না। তুমি চাইলে তুলতে পারো।’
সঙ্গে সঙ্গে আতিয়া সা’দের উপর পা তুলে দিল। উসখুস করছে আতিয়া। সা’দ বুঝতে পারছে, আজ ঘুম আসছে না আতিয়ার। সা’দ বলল,
“-ঘুম আসছে না?’
“-উঁহু।’
“-চুলে হাত বুলিয়ে দেই। ঘুম এসে যাবে।’
“-আচ্ছা।’
সা’দ আতিয়ার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কয়েক মিনিট চুপ করে থেকে আতিয়া আবার বলে উঠল।
“-তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে? ‘
“-হ্যাঁ? ‘
“-আরে গার্লফ্রেন্ড। গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?’
“-না। নেই।’
“-ছিল না কখনও? মানে অতীতেও না?’
“-না।’
“-একটাও রিলেশন করোনি?’
“-না।’
“-এহহ মিথ্যা কথা। একটা রিলেশনও করেনি এমন কেউ আছে নাকি? তুমি আমাকে ভয় পেয়ে আমার কাছে মিথ্যা বলছো। বৌয়ের কাছে বলতে চাইছ না।’
“-তোমার কয়টা বয়ফ্রেন্ড ছিল?’
“-এক… উম… না,না। দুইটা।’
মন খারাপ হয়ে গেল সা’দের। সা’দ জানে আতিয়ার বয়ফ্রেন্ড ছিল। তার সাথেই তো আতিয়া পালিয়ে এসেছিল। কিন্তু দু’জন ছিল তা জানতো না।
“-এক নাম্বারটা ঠিক বয়ফ্রেন্ড ছিল না। লন্ডনে… ‘ থেমে গেল আতিয়া। সা’দ জিজ্ঞেস করল,
“-লন্ডনে…? ‘
লন্ডনের কথা চেপে গেল আতিয়া। সা’দ এখনও জানে না সে কে। লন্ডনের কথা তুললে নানান প্রশ্ন জাগবে ওর মনে।
“-প্রথম জন আমাকে দূর থেকে পছন্দ করত। কখনও সামনে এসে প্রপোজ করেনি। ছেলেটা ভাল ছিল। কিন্তু ওর থেকে আমাকে দূরে চলে আসতে হয়েছে। তারপর থেকে কোন যোগাযোগ নেই। সে ছিল ভালো লাগা। তাকে ভালোবাসা নাম দেয়া যায় না।’
“-আর দ্বিতীয় জন…
সা’দ দীর্ঘশ্বাস চেপে বলল,
“-তার সাথেই পালিয়ে এসেছিলে?’
আতিয়া আজ ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। সে এতক্ষণ সা’দের কাছে সত্যই বলছিল। সা’দ পালিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে না দিলে মস্ত বড় ভুল করে ফেলত এখন। আতিয়া মনে মনে নিজেকে গালি দিল।
-এই জনমে কত কী মিথ্যা বলে রেখেছিস। এখন নিজের মিথ্যার জালে নিজেই ফেঁসে যাচ্ছিলি। একটুর জন্য বেঁচে গেলি আজ। তবে সা’দকে আর মিথ্যার অন্ধকারে রাখব না। খুব শীঘ্রই ওকে সব জানিয়ে দিব। সত্য দিয়ে ওর সাথে নতুন জীবন শুরু করব। ওকে বলব আমি কারো সাথে পালিয়ে আসিনি। কখনও কাউকে ভালোবাসিনি। ওকেই জীবনের প্রথম ভালোবেসেছি। ও-ই আমার জীবনে প্রথম পুরুষ।’
“-আচ্ছা, তুমি তো জানতে আমি একজনের সাথে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি। সে ধোঁকা না দিলে ওর সাথেই হয়তো আমার বিয়ে হতো। তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে কেন? ‘
আতিয়া মিথ্যা বলে সা’দের থেকে সত্য জানতে চাইছে। সত্যিই তো। আতিয়া জানে সে কারো সাথে পালিয়ে আসেনি। সা’দ তো তা জানে না। তবুও কেন সা’দ তাকে বিয়ে করতে রাজি হলো। তার কি তার প্রতি দুর্বল? ভালোবাসে তাকে?
সা’দ ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে একে চুপ না করালে চলবে না। এমনই প্রশ্ন করতে থাকবে। এই মেয়ে বকবক করেই আজ রাত পার করে দিবে। সা’দ শক্ত গলায় বলল,
“-এখন কথা বন্ধ করে না ঘুমালে, আমি তোমার মুখ চেপে ধরব। চুপ করে শুয়ে থাক। আর একটা কথাও বলবে না। চোখ বন্ধ করো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। এক্ষুনি ঘুম এসে যাবে।’
“-কিন্তু…
“-বলেছি না, চুপ।’
সা’দ আতিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না। যেদিন বুঝবে আতিয়াও তাকে ভালোবাসে। সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর দিবে সে। তার আগে না। আতিয়া মনে মনে বলল,
-দূর! আসল কথাটাই বললো না। উল্টো ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল। ভাল্লাগে না।’
গুটিসুটি মেরে কুন্ডলী পাকিয়ে সা’দের বুকের সাথে মিশে শুয়ে আছে আতিয়া। সা’দ একদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ আতিয়াকে দেখল। মৃদু হাসি ফুটে উঠেছে তার ঠোঁটে। আতিয়ার মুখের উপর আসা চুলগুলো আলতো হাতে কানের পেছন গুঁজে দিল। ঘড়ি দেখে উঠতে নিল সা’দ। ঘুমের ঘোরেই আতিয়া নড়ে উঠে আরও শক্ত করে সা’দকে আকড়ে ধরলো। বিরবির করে কী যেন বলে ওর বুকে মুখ ঘষে দিল। হেসে ফেলল সা’দ। আতিয়াকে না জাগিয়ে সাবধানে উঠে গেল। ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাবার জন্য রেডি হতে হতে আতিয়াকে দেখল। এখনও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
সা’দের কাছে আজকের সকালটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে। শার্টের হাতার বোতাম লাগাতে লাগাতে বেডের পাশে এসে দাঁড়াল। মন ভরে আতিয়াকে দেখে নিল। নড়াচড়া করছে আতিয়া। ঘুম ভেঙে গেছে। চোখ খুলে মিটমিটিয়ে সবার আগে সা’দের দিকে চোখ গেল। সা’দ মিষ্টি করে হেসে বলল,
“-গুড মর্নিং।’
চোখ কচলে উঠে বসতে বসতে আতিয়া বলল,
“- গুড মর্নিং। কখন উঠেছ তুমি? ‘
“-অনেকক্ষণ।’
হাই তুলে, দু’হাত মেলে দিয়ে আড়মোড়া ভাঙলো আতিয়া।
“-আমাকে ডাকলে না কেন? ‘
“-তুমি ঘুমোচ্ছিলে।’
বেড ছেড়ে উঠতে উঠতে আতিয়া বলল,
“-তাই বলে তুমি ডাকবে না! এখন কি অফিসে যাচ্ছ?’
“-হুম।’
“-এ মা! দেখো তো কেমন বৌ আমি! বিয়ের পরের দিনই বরকে না খাইয়ে অফিসে যেতে দিচ্ছি। কোথায় আমি সক্কাল সক্কাল উঠে সবার জন্য রান্নাবান্না করব। তোমাকে রেডি করিয়ে খাইয়ে অফিসে দিব। শ্বশুরবাড়ির লোকের দেখাশুনো করব। তা না করে, আমিই তো সবার পরে ঘুম থেকে উঠেছি। লোকে কী বলবে? ‘
আতিয়াকে এতটা ব্যস্ত হয়ে উঠতে দেখে সা’দ হাসতে লাগল। আতিয়া কপাল কুঁচকে বলল,
“-হাসছো কেন তুমি? ‘
“-এমনি।’ কথাটা বলেই সা’দ আতিয়ার কোমর ধরে তাকে কাছে টেনে নিল। আতিয়া হালকা লজ্জা পেল। গাল দু’টো লাল হয়ে গেছে।
“-বাহ! আমার তো জানা ছিল না,বউ আমার এতটা কাজের মেয়ে।’
“-বাহ রে! আগে তো নকল বৌ ছিলাম। এখন আসল বৌ। নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হবে তো।’
এক হাতে আতিয়াকে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সা’দ বলল,
“-বৌয়ের কিন্তু আরও অনেক দায়িত্ব কর্তব্য আছে। সবই পালন করতে হবে। শুধু এই কয়টা পালন করলে হবে না।’
আতিয়া মুখ উঁচু করে সা’দের চোখে চোখ রেখে বলল,
“-আর কী কী শুনি? ‘
“-বর অফিসে যাবার আগে তাকে আদর করতে হবে। দিন শেষে অফিসের কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলে তখন আদর করতে হবে। আর…
আতিয়া সা’দের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দিল।
“-তোমাকে বাইরে থেকে তো এতটা দুষ্টু মনে হয় না। মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানো না। আমি তোমাকে রসকষহীন ভাবতাম। এখন তো দেখছি বর আমার ভারি রোমান্টিক লোক।’
হেসে ফেলল সা’দ।
“-আচ্ছা এখন ছাড়। আমি তোমার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করি গিয়ে।’
“-হুম।’
আতিয়া চলে গেলে সা’দ ওদিকে তাকিয়ে তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিল।
চলবে…. বাবাহ!’
চলবে….