আমার আকাশ জুড়ে তুমি পর্ব শেষ

#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি (২৩)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

অফিসে যাবে সা’দ। রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসে ডাইনিংয়ে বসেছে। দাদাজান তার আগে থেকেই বসে আছেন। সা’দ হাসি মুখে দাদাজানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“-গুড মর্নিং, দাদাজান।’
দাদাজান যেন সা’দের কথা শুনতেই পেলেন না, এমন ভাবে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সা’দ চাপা শ্বাস ফেলে হজুকে ডাকল।
“-হজু, আমার খাবার দাও। অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
বলার সাথে সাথেই হজু সা’দের সামনে সেন্ডউইচের প্লেট রাখলে দাদাজান সেটা ছোঁ মেরে ওর সামনে থেকে নিয়ে নিল। মুখ বাঁকিয়ে হজুর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললেন,
“-হজু, এ বাড়িতে তুই শুধু আমার একার কাজের লোক। অন্য কারো হুট ফরমাশ খাটার জন্য তোকে রাখা হয়নি। তুমি শুধু আমার কাজ গুলোই করবি। অন্য কারো কথা একদম শুনতে যাবি না। আর শুনে রাখিস, আমার হুকুম অমান্য করলে সাথে সাথেই তোর চাকরি নট হয়ে যাবে। হুহ!’
আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল। দাদাজান এমন করলে কীভাবে হবে? সা’দ দাদাজানকে কিছু বলতেও পারবে না। বুড়োটা এভাবে টর্চার করলে সা’দ তো দু’দিনও এ বাড়িতে থাকতে পারবে না সে। ওদিকে আবার নাহিল রাগ করে বাড়ি ছেড়েই চলে গেছে। এসবের মানে হয় কিছু! সা’দ কিছু বলতে যাচ্ছিল,
“-দাদাজান…
দাদাজান মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে হজুর সাথে কথা বলছেন এমন ভাবে বললেন,
“-এ বাড়িতে থাকতে হলে আমার কথামত চলতে হবে। আমি যা বলি তা-ই করতে হবে।’
আড়চোখে সা’দকে দেখে নিয়ে দাদাজান আবার বলতে লাগলেন,
“-কারো অফিসে যাওয়ার আগে খেয়ে যেতে হলে নিজে রান্না করে খাক। সেয়ানাগিরি করে তো বৌ তাড়িয়ে দিতে পেরেছে। এখন নিজে রান্না করেও খেতে পারবে। হজু, সকাল, দুপুর, রাত এক বেলাও একটা চাল বেশি রান্না করবি না। আমি যতটুকু খাই ঠিক ততটুকু রান্না করবি। আমি কাউকে বসিয়ে বসিয়ে গিলাতে পারব না। তাকে নিজের রাস্তা নিজে দেখে নিতে বল।’
সা’দ এবার শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বুড়ো ঠিক মতই তার পেছনে লেগেছে। জীবন ত্যানা ত্যানা করে ফেলবে।
“-আমার নাতবৌ বাড়ি ফিরে না এলে, আমি কাউকে এ বাড়িতে জায়গা দিব না। একটাকেও শান্তিতে থাকতে দিব না। একেকটাকে পাছায় লাথি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করবো। এই বলে দিলাম।’
সা’দ জুসের গ্লাস নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই দাদাজান সেই গ্লাস নিয়ে এক চুমুকে সবটুকু জুস খেয়ে নিল। দাদাজানের এই বাচ্চামু ঝগড়া দেখে হেসে ফেলল সা’দ। সা’দকে হাসতে দেখে দাদাজান আরও রেগে গেলেন।
“-নির্লজ্জ! বেহায়া! মুখে মুখে আবার হাসে। ছোট থেকেই পাছায় লাথি দিয়ে আসলে এখন এমন গরু গাধা হতো না। আমারই দোষ। সব ক’টাকে আদর দিয়ে দিয়ে একেবারে বাদর করে তুলেছি।’
দাদাজান সত্যি সত্যিই রেগে যাবার আগে সা’দ বুড়োর চোখের সামনে থেকে কেটে পরলো। এই বুড়োকে বেশি ঘাটালে কপালে দুঃখ আছে।
সা’দ নিজেও আতিয়ার অনুপস্থিতি ফিল করতে পারছে। কিন্তু আতিয়ার প্রতি রাগটা কিছুতেই কমাতে পারছে না। আতিয়া বিয়ের পরেও কেন সত্য বললো না? সা’দের উপর কি তার এতটা বিশ্বাস ছিল না? সা’দ কি তাকে ক্ষমা করতো না? এতটা সময় ধরে কেন মিথ্যা বলে গেল সে?

নাহিল প্রতিদিন দেরি করেই ঘুম থেকে উঠে। কাল রাতে আরও নতুন জায়গা বলে ঘুম হয়নি। সকালে উঠে খাবার টেবিলে এসে দেখে নতুন দু’টা চেহারা যোগ হয়েছে। এখানে আসার পরে তো এই দু’জনকে দেখে নি। এরা কারা? নাহিলকে দেখে আতিয়া মৃদু হেসে বলল,
“-গুড মর্নিং। ঘুম হয়েছে তো?’
নাহিল আতিয়ার পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
“-চাঙ্গা একটা ঘুম হয়েছে।’
নাহিল দেখল সামনে বসা ছেলেটা আতিয়াকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। তাকেও কেমন কটমটিয়ে দেখছে। এই শালার চোখে সমস্যা আছে নাকি? এভাবে দেখছে কেন? নাহিল আতিয়ার দিকে ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“-সামনে বসা এই মালটা কে?’
আতিয়ার ফিসফিসিয়েই উত্তর দিল।
“-আর বলো না। আমার ফুপুর ছেলে। আস্ত একটা বদমাশ। এর জ্বালাই তো বাড়ি থেকে পালাতে হয়েছিল।’
“-ওহ, এই ব্যাপার! তাহলে তো শালাকে টাইট দিচ্ছে হচ্ছে।’
বিশাল আতিয়ার সাথে নাহিলকে ফিসফিস করতে দেখে মায়ের কানে কানে কিছু বলল। সাথে সাথেই আতিয়ার ফুপু বলে উঠলেন,
“-এটা কে আতিয়া মা? আগে তো কখনও এই বাড়িতে দেখিনি।’
“-ও আমার ফ্রেন্ড ফুপু।’
নাহিল খেতে খেতে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“-খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড।’
ফুপু এবার চালাকি করে বলে উঠলেন,
“-ওহ। তোমার আর বিশালের বিয়ের জন্য ডেকেছ ওকে। ভালো, ভালো। বন্ধু বান্ধব ছাড়া বিয়ে হয় নাকি। থাকুক। যতদিন তোমাদের বিয়ে শেষ না হয় ততদিন এখানেই থাকুক।’
ফুপুর কথা শুনে নাহিলের কাশি উঠে গেল। চোখ বড় বড় করে একবার আতিয়াকে আরেক বার বিশাল ছেলেটাকে দেখল। তারপর সামলে নিয়ে মনে মনে বলল,
“-হা হা হা! বিয়ে! আমার ভাইয়ের বউয়ের সাথে এই খাটাশের বিয়ে! ইম্পসিবল। অন্তত আমি এখানে থাকতে এটা কখনও হবে না। আমি হতেই দিব না।’
ফুপুর কথা শুনে আতিয়া তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল,
“-ফুপু, আমি কখনও বলেছি আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করব? বলেছি কখনো? তবুও কেন এই কথা বারবার তুলেন?’
আশরাফ চৌধুরী পরিস্থিতি সামলে নিয়ে বললেন,
“-খাওয়ার সময় ওসব কথা থাক।’ আশরাফ চৌধুরী নাহিলের দিকে দেখে বললেন,
“-তোমার বাসা কোথায়? ‘
“-সিলেট, আঙ্কেল। সালাম চৌধুরীর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই? আমি উনার ছোট নাতি।’
আশরাফ চৌধুরী হেসে বললেন,
“-তুমি সালাম চৌধুরীর নাতি! বাহ! অনেক নাম শুনেছি উনার। কিন্তু কখনও সামনাসামনি দেখা হয়নি।’
নাহিল মিনমিন করে বলল,
“-এখন তো দেখাই দেখা হবে আঙ্কেল। আত্মীয় হয়ে গেলাম আমরা। উনার বড় নাতি আপনার মেয়ের জামাই। এখন মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে মেলানোর জন্য আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।’

নাহিল আতিয়াদের বাড়িতে এসেছে দুই দিন হয়েছে। এখনও মাথায় কোন আইডিয়া আসছে না। ভাইকে কীভাবে এখানে আনবে? ভাই না এলে তো আতিয়া জীবনেও তার সাথে ফিরবে না। পায়চারি করতে করতে নখ কামড়াচ্ছে নাহিল।
“-কী করা যায়? কী করা যায়? কিছু একটা তো করতে হবে। আইডিয়া! আইডিয়া বাবা, কোথায় তুই? একটু দেখা দে বাবা।’
বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনে নাহিল উঁকি দিয়ে দেখল। আতিয়া আসছে। চট করে নাহিলের মাথায় একটা আইডিয়া এসে গেল। সে পকেট থেকে ফোন বের করে কানে নিয়ে বলতে লাগল,
“-কিহ! তুমি আবার বিয়ে করবে ভাই! আতিয়ার থেকেও ভালো মেয়েকে বিয়ে করবে! কিইইহ! তুমি ওই ফারিহাকে বিয়ে করবে! ফাহিরা তোমাকে আতিয়ার থেকেও বেশি ভালোবাসে। ফারিহা আতিয়ার মত তোমাকে ছেড়ে যেত না। আমি মানতে পারছি না। তুমি সত্যিই ফরিহাকে আতিয়ার সতীন বানাবে! না,না। এ হতে পারে না। এ আমি বিশ্বাস করি না।’
আতিয়া নাহিলের রুমের সামনে এসে থমকে দাঁড়াল। দরজার সামনে থেকে নাহিলের কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। কথাগুলো শুনে এক পা-ও নড়তে পারল না আতিয়া। রাগে মাথা ফেটে পড়তে চাইছে। সা’দ ওই ফারিহা শাঁকচুন্নিকে বিয়ে করবে! তাই তাকে বাড়ি থেকে এভাবে তাড়িয়ে দিয়েছে। লোকটার মনে তাহলে এই ছিল! নাহিল দরজার দিকে এগিয়ে গলার স্বর একধাপ উঁচিয়ে দিয়ে বলল,
“-আতিয়াও তোমার জন্য বসে থাকবে না ভাই। আতিয়ার ফুপুর ছেলে, বিশাল। ওর জন্য পাগল। ওকে বিয়ে করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আতিয়া এখন বললে এখনই বিয়ে করবে ছেলেটা। তুমি বিয়ে করলে আমি আতিয়াকে বলব সে-ও যেন বিশালকে বিয়ে করে। তখন তুমি মজা বুঝবে। হ্যা, থাকো তুমি ফারিহাকে নিয়ে। আমি আতিয়ার সাথে আছি। দরকার পড়লে আমি নিজে ওদের বিয়ে দিব।’
আতিয়া ঘরে ঢুকে পড়লো। নাহিল আতিয়াকে দেখে এমন ভাব করলো যেন আতিয়া কথাগুলো শুনে নেওয়ায় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে ফোন রেখে নাহিল বলল,
“-আরে, তুমি। কখন এলে? কিছু শুনেছ তুমি আতিয়া?’
“-সব শুনছি আমি। তুমি তোমার ভাইকে বলে দাও নাহিল। আমিও বিশালকে বিয়ে করব। সে ফারিহার সাথে নতুন করে সংসার শুরু করতে পারলে আমিও বিশালের সাথে করতে পারব। কী ভেবেছে ও? ওর জন্য সারাজীবন বসে বসে কাঁদব আমি? মোটেও না। ওর কথা ভেবে কেঁদে বুক ভাসাব না আমি।’
রাগে রীতিমত আতিয়ার ঠোঁট কাঁপছে। নাহিল মনে মনে হাসছে। বেচারা বেচারা মুখ করে বলছে
“-না আতিয়া। তুমি বিয়ে করতে পারো না।’
তেতে উঠল আতিয়া।
“-কেন পারি না? তোমার ভাই পারলে আমি কেন পারব না। একশো বার পারব। আমিও ওই বিশালকেই বিয়ে করব। দেখে নিও তুমি। আমাদের বিয়ের পিক তোমার ভাইকে পাঠিয়ে।’
আতিয়া রেগেমেগে চলে গেলে নাহিল পেট চেপে ধরে বিছানায় পড়ে গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে লাগল।
“-এ দিকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি। এবার ও দিকে লাগালেই হবে।’
সোজা হয়ে বসল নাহিল।
“-বাবা নাহিল, কত কষ্ট করতে হয় তোকে। ভাইয়ের ঘর বাঁচাতে বাঁচাতেই বুড়ো হয়ে যাবি। নিজের আর ঘর বাঁধতে হবে না তোর।’

আতিয়া রাগের মাথায় বাবা ফুপুকে জানিয়ে দিল,সে আজ রাতেই বিশালের সালে এনগেজমেন্ট করবে। আশরাফ চৌধুরী মেয়ের হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলে আতিয়া রাগ দেখিয়ে সবাইকে চুপ করিয়ে দিল। ফুপু তো এই কথাটা শোনার পর খুশিতে বাকবাকুম করছে। মনে মনে প্ল্যাট কষে নিয়েছেন, কাজী ডেকে আজই কোনমতে বিয়েটাও করিয়ে ফেলবে। নইলে এই মেয়ের উপর কোন বিশ্বাস নেই। এনগেজমেন্টের পরও আংটি খুলে ছুড়ে ফেলে বলবে ‘এই এনগেজমেন্ট আমি মানি না’। না বাবা, রিস্ক নেওয়া যাবে না। ফুপু রাতের জন্য আয়োজন শুরু করে দিলেন। আশরাফ চৌধুরী এসবের আগে পিছে নেই। মেয়ের মতিগতি উনি কোনো দিনই বুঝে উঠতে পারেননি। এই মেয়ে কখন কী চায় তা সে নিজেও জানে না।
রাতেই এনগেজমেন্ট এটা শুনে নাহিলও কিছুটা দমে গেল। আতিয়া এত তাড়াতাড়ি এসব করে বসবে তা কে জানত? ভাইকে কীভাবে ম্যানেজ করে আনবে? সবকিছুর মাঝে নাহিল পড়েছে মহা বিপদে। এখন বিশালের সাথে আতিয়ার এনগেজমেন্ট করে ফেললে ভাই তাকে আস্ত চিবিয়ে খাবে।

সা’দ অফিসে বসে আছে তো ঠিকই কিন্তু কোন কাজে মন বসাতে পারছে না। বারবার আতিয়ার কথাই মনে আসছে। সব রাগ,অভিমান এক দিকে ছুড়ে ফেলে আতিয়ার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। তখনই সা’দের ফোন বেজে উঠল। নাহিল। ভ্রু কুঁচকে কল রিসিভ করল সা’দ।
“-ভাই, যদি নিজের বউকে ফিরে পেতে চাও তাহলে আজ সন্ধ্যের আগে তোমার শ্বশুরবাড়িতে চলে এসো।’ এক দমে কথাগুলো বলে থামল নাহিল। সা’দ উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
“-হ্যাঁ! কি? কেন? কি হয়েছে আতিয়ার?’
“-ভাবি, তার বলদ ফুপাতো ভাইকে বিয়ে করতে যাচ্ছে।’
“-হোয়াট! মানে কর? বিয়ে করছে মানে কি? আতিয়া আমার বৌ। আমি থাকতে ও অন্য কাউকে বিয়ে করে কীভাবে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? কী সব উল্টাপাল্টা বলছো, নাহিল!’
“-মাথা আমার খারাপ হয়নি। মাথা খারাপ হয়েছে তোমার বউয়ের। সে তোমার উপর জেদ করে উল্টাপাল্টা কী সব করছে আল্লাহই জানেন।’
“-যেই গাধার বাচ্চা আতিয়াকে বিয়ে করবে, আমি ওকে খুন করে ফেলব। মাটিতে পুঁতে ফেলব শালাকে।’
“-হ্যাঁ। মারো, পুঁতে ফেলো,খেয়ে ফেলো যা ইচ্ছা তা করো। কিন্তু এখানে এসে করো। নইলে তোমার বউ অন্য কারোরও বউ হয়ে যাবে।’
“-আসছি আমি। ছাড়বো না ওই শালাকে। আর আতিয়াকেও দেখে নিব। ওর এতো সাহস। ও অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা ভাবছে। ফাজিল মেয়ে। থাপ্পড় দিয়ে ওর দাঁত ফেলে দিব। ওর বিয়ে করার শখ মিটাব আমি। তুমি দেখো, আমি এসে কী করি ওর।’
সা’দ ফোন কেটে দিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল। নাহিল লাফিয়ে উঠল।
“-ইয়াহু! ভাই আসছে।’

সন্ধ্যার আগে সমস্ত আয়োজন শেষ হয়ে গেল। ফুপু নিজের তাগিদে সবটা করেছেন। বিশাল বিকাল থেকে আতিয়ার পেছনে ঘুরঘুর করছে। নাহিলের ইচ্ছে করছে ঘুসি মেরে বেহায়াটার মুখের নকশা পাল্টে দিতে। কিন্তু ভাই না আসা পর্যন্ত কিছু করাও যাবে না। গোলমাল বেধে গেলে তখন একা সামাল দেয়া মুশকিল হবে। আতিয়া রাগের মাথায় সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেও এখন মনে মনে পস্তাচ্ছে। নাহিল সব জেনেও কেন কিছু বলছে না তা ভেবে আতিয়া হয়রান। নাহিল কিছু না করলে তো সত্যি সত্যিই তাকে এনগেজমেন্ট করে নিতে হবে। না, না। যা কিছুই হয়ে যাক। সে এখনও সা’দের বউ। সা’দ থাকতে অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা কল্পনা করতেও কেমন যেন লাগছে।
“-নাহিল নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে। এখন না করলেও শেষ মুহূর্তে কিছু তো করবেই। নাহিল জানে আমি ওর ভাইয়ের বউ। সব জেনেও নাহিল অন্তত চুপ করে বসে থাকবে না। নাহিল এনগেজমেন্টটা হতে দিবে না।’
আতিয়াকে কথাগুলো বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

আতিয়া,বিশাল পাশাপাশি বসে আছে। নাহিল দূরে থেকে ওদেরকে দেখছে আর নখ কামড়াচ্ছে। আতিয়া আশেপাশে নাহিলকে খুঁজছে। নাহিলের চোখে চোখ পড়লে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু নাহিল যেন কিছুই বুঝতে চাইছে না। বিরক্ত হয়ে আতিয়া বিরবির করে বলল,
“-এই নাহিলকে উস্টা মারতে মন চাইছে। শালা কিছু বুঝতেই চাইছে না।’
আতিয়ার চাহনি দেখে নাহিলও ভেতরে ভেতরে নার্ভাস হয়ে পড়ছে।
“-ও ভাই! কোথায় তুমি? তুমি না এলে আতিয়া আমার ঘাড় মটকাবে। যেভাবে লুক দিচ্ছে! ওর মনে হচ্ছে আমি কিছু করব। এনগেজমেন্ট আটকাবো। কিন্তু তুমি আসার আগে আমি কিছুই করতে পারব না।’
শেষ মুহূর্তেও আতিয়ার ভরসা নাহিলই ছিল। কিন্তু নাহিলও যখন কিছু বলছে না তখন আতিয়া রিং হাতে নিয়ে উসখুস করছে। কিছু বলতে চাইছে সে। বিশাল অধৈর্য হয়ে বারবার বলছে,
“-কি হলো আতিয়া? রিং পরাও। বসে আছো কেন? ‘
আতিয়া যেই বলবে আমি রিং পরাব না। এনগেজমেন্ট টেংগেজমেন্ট কিচ্ছু করব না আমি। তুমি চলে যাও। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। বর আছে আমার। ঠিক তখনই গমগমে একটা কন্ঠস্বর ভেসে এলো। আতিয়ার বুক ধুকপুকানি শুরু করে দিয়েছে। সা’দ! সা’দ এখানে কোত্থেকে এসেছে? কে আসতে বলেছে ওকে? নাহিল?
“-আতিয়া রিং পরাবে না।’
সবাই অচেনা লোকটার দিকে ঘুরে তাকাল। নাহিল খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে। আতিয়ার মুখ ঝলমল করছে। আশরাফ চৌধুরী,হামিদ চাচা,আতিয়ার ফুপু,বিশাল কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। সা’দ আতিয়ার সামনে এসে দাঁড়াল। শান্ত অথচ চাপা রাগ নিয়ে বলল,
“-এনগেজমেন্ট করছো তুমি?’
আতিয়া হ্যাঁ, না দুই দিকেই মাথা নাড়াল। সা’দ আতিয়ার হাত ধরে নিজের আঙুলে রিং পরে নিল। অন্য একটা বক্স থেকে রিং বের করে আতিয়ার হাতে পরিয়ে দিল।
“-এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে। এবার চলো আমার সাথে।’
জেদি গলায় আতিয়া ফোসে উঠে বলল,
“-আমি তোমার সাথে কোথাও যাব না।’
“-যাবে না?’
“-না।’
“-ওকে তোমার যেতে হবে না। আমি তোমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
কথাটা বলেই সা’দ আতিয়ার হাত ধরে টেনে ওকে দাঁড় করিয়ে কোলে তুলে নিয়ে যেতে লাগল। এখানে উপস্থিত সবার চোখ ততক্ষণে কপালে উঠে গেছে। আশরাফ চৌধুরী চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“-এই কে তুমি? আমার মেয়েকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’
বিশাল উঠে সা’দকে বাধা দিতে গেলে নাহিল তার কাঁধ ধরে আটকে ফেলল।
“-নো ব্রো। আমার ভাইকে তার বউকে নিয়ে যেতে দাও।’ আশরাফ চৌধুরীর সামনে এসে নাহিল বলল,
“-আঙ্কেল আমি আপনাকে সব খুলে বলছি। ও আমার বড় ভাই, সা’দ চৌধুরী। সালাম চৌধুরীর বড় নাতি। আর আপনার একমাত্র মেয়ের জামাই।

আতিয়া প্রাণপণে হাত পা ছুড়েও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। সা’দ তাকে গাড়িতে বসিয়ে সীট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
“-বলেছি তো আমি তোমার সাথে যাব না।’
“-তোমার যেতে হবে না। আমি আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছি।’
“-কে তোমার বউ হ্যাঁ? সেদিন বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সময় মনে ছিল না আমি তোমার বউ।’
“-তুমি ওই গাধা মার্কা ছেলেটার সাথে এনগেজমেন্ট করতে যাচ্ছিলে!’
“-হ্যাঁ। করতে যাচ্ছিলাম। তাতে তোমার কি?’
“-আমার কি? দেখাব আমার কি?’
হঠাৎ সা’দ কষে ব্রেক করে দাঁড়িয়ে পড়ল। আতিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে কাছে টেনে নিল। দু মিনিটে জন্য আতিয়ার কিছু বলার মত অবস্থায় রইল না। সা’দ ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজের সীটে সোজা হয়ে বসে বাঁ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বাঁকা হাসলো। হাঁপাচ্ছে আতিয়া। রাগে কিড়মিড় করতে করতে সা’দকে দেখছে।
“-তুমি মিথ্যুক হও,চোর হও, ডাকাত হও যা ইচ্ছা তা হও। এখন তুমি আমার বউ। চাইলেও এখন তুমি আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে না। অন্য কাউকে বিয়ে করা তো দূর অন্য কারো কথা শুধু ভেবে দেখো না। আমি তোমার অবস্থা খারাপ করে দিব। আমার সাথেই তোমার সারাজীবন কাটাতে হবে। বুঝলে?’
ফুঁসতে ফুঁসতে আতিয়া বলল,
“-তুমি একটা বাজে লোক। মস্ত বদ। অসভ্যও। ‘
“-বাজে,বদ,অসভ্যের দেখেছেন কী ম্যাডাম? আজ বাসায় ফিরি তখন দেখাব আমি কেমন বাজে লোক।’
চোখ টিপ দিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো সা’দ। মাঝে মাঝে আড়চোখে আতিয়াকে দেখে মনে মনে হাসছে।

সমাপ্ত।

শেষ পর্যন্ত পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ২৩১৭ শব্দের পর্ব এটা। আশাকরি আপনাদের অনুভূতি দুই লাইনে লিখে হলেও প্রকাশ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here