#আমার_একলা_আকাশ🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(Writer)
#৬_পর্ব
,
খেয়েছেন আপনি??(মেহরাব)
জ,,জি না.
আমি তো ভুলেই গিছিলাম ঘরে কিছু নেই,, কাজের চক্করে ওনার কথা তো ভুলই গিছিলাম। (মনে মনে বলে মেহরাব বলল)
আচ্ছা শুনুন আমি এখন রান্না করবো বেশি কিছু রান্না করবো না শুধু আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি চলবে??
হুম চলবে (ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে শুধু আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি কেনো পান্তা ভাত আর কাঁচা মরিচ দিলেও চলবে)
তারপর মেহরাব মোমবাতি টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো,,, মাহিও গেলো কেননা এই অন্ধকারে থাকার কোনো মানেই হয় না,,
রাতে খাওয়া শেরে যে যার রুমে চলে গেলো,,,ঘুমের মধ্যে কারো কথা শুনে মাহি জেগে গেলো, কথা গুলো কোথা থেকে আসছে সেটা অনুসরণ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,, দেখলো মেহরাব এর রুম থেকে কথার আওয়াজ আসছে,,মাহি আস্তে করে রুমের দরজাটা খুললো,, দরজাটা অবশ্য আটকানো ছিলো না শুধু একটু আওশানো ছিলো,,, দেখলো রুমে মোমবাতি জ্বলছে, কারেন্ট এখনো আসিনী বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পরছে,, সন্ধ্যার সময় আকাশ ভর্তি তারা থাকলেও এখন মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামছে,,,মাহি গুটি গুটি পায়ে মেহরাব এর রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মেহরাব পিছন ঘুরে আছে,,,
মেহরাব মায়ার ছবিটার সাথে কথা বলছে,, আজকে বৃষ্টি হচ্ছে বলে আর ছাঁদে যায়নি।
তুমি রাগ করোনি তো?? তুমি তো জানো আমি ইচ্ছে করে ওই মেয়েকে আনিনী, মেয়েটা বিপদে পড়ছে তাই নয়ত কখনোই আনতাম না (মেহরাব মায়ার ছবিকে বলল)
মাহি উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে যে মেহরাব ঠিক কার সাথে কথা বলছে,, ফোনে কথা বললে তো ওনার একহাত কানে থাকতো, কিন্তু ওনাকে দেখেতো মনে হচ্ছে ওনি সামনে হাত দিয়ে কিছু ধরে আছে।
সামনের দেওয়ালে কারো ছায়া দেখে মেহরাব চট করে পিছন ঘুরে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল।কে কে ওখানে??
মাহি তো রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে তবুও ভয়ে ভয়ে বলল,,, আ,,আমি।
আপনি?? এতো রাতে এখানে কেনো??
ন,,না আসোলে আপনার কথার আওয়াজ পেয়ে দেখতে আসলাম কি হয়েছে।
দেখেছেন কিছুই হয়নি এবার রুমে যান,,, এটা বলে মেহরাব মাহির মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। মাহিও ওখান থেকে নিজের রুমে চলে আসলো।
,,,,সকালে,,,,
মেঘ তো মেহরাব কে রীতিমতো চেপে ধরেছে মায়া কে সেটা বলার জন্য,, এই জন্যই আজকে অনেক সকাল সকাল মেহরাব এর ফ্ল্যাটে গিয়ে মাহিকে দেখে মেহরাব কে বগল দাবা করে নিয়ে এসেছে,, মায়া কে সেটা শুনার জন্য।
কি রে বল??(মেঘ)
কি বলবো??
কি বলবি মানে তুই জানিস না কি বলবি,, মায়া কে তোর সাথে মায়ার কি সম্পর্কে সেটা বলবি,।
আরে হসপিটালে যাবি নাহ??
আজকে তো অফডে কোনো চিন্তা নেই, তুই বলা শুরু কর।
আচ্ছা ঠিক আছে শোন তাহলে।
মায়া হলো সে যাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি কিন্তু আফসোস যাকে এতো ভালোবাসি সে আমার জীবনে নেই,,, আমি তখন সবে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি আর মায়া ইন্টার প্রথম বর্ষে ওদের কলেজে এর পাশে আমার কলেজ ছিলো ,, প্রথম দিন ওকে দেখেই ভালোবেসে ফেলি,, তারপর টানা অনেক গুলো বছর চুটিয়ে প্রেম করেছি।
তখন মায়া অনার্স প্রথম বর্ষে আর আমি ইন্টার্নি করছিলাম,, মায়ার বাবা মা ছিলো না তারা নাকি গাড়ি এক্সিডেন্ট এ মারা গেছিলো,, তারপর থেকেই ওর কাকু ওকে দেখে রাখে,, আর আমি ছিলাম নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে,, একদিন হঠাৎ ওর কাকু ওর বিয়ে ঠিক করে, ও সেদিন আমাকে ধরে অনেক কেঁদেছিলো, কেননা ও ওর কাকুর মুখের উপর না বলতে পারবে না আবার আমাকেও ছাড়তে পারবে না,,, আর আমিও তখন বেকার সবে ইটার্নি করছি আমিই বা কি করতাম।
তখন মায়া বললো ওকে বিয়ে করতে,, বিয়ে করে কাকার সামনে গেলে নিশ্চয়ই ওনি মেনে নেবেন৷ আমিও মায়াকে হারাতে পারবো না তাই ওর কথা মেনে আমরা বিয়ে করে ফেলি কাজি অফিসে গিয়ে,,,
সেদিন মায়া অনেক খুশি ছিলো ছোট্ট বাচ্চার মতো কেমন লাফালাফি করছিলো,, আমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছিলাম তখনি পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে আমাদের ধাক্কা মারে আমি মাথায় অনেক আঘাত পেয়ে ওখানেই অঙ্গান হয়ে যায় অঙ্গান হওয়ার আগে শুধু মায়ার রক্ত মাথা মুখটা ঝাপসা দেখেছিলাম,, তারপর যখন আমার জ্ঞান ফেরে ততক্ষণে সব শেষ,৷
মা সব জানতো মাকে অনেক আগেই মায়ার কথা বলেছিলাম,দুদিন পর আমার জ্ঞান ফেরে মাকে মায়ার কথা জিগাস করতেই মা কেঁদে ফেলে,, তারপর অনেক অনুরোধ করার পর মা আমাকে মায়ার কথা বলে, মায়া নাকি এক্সিডেন্ট স্পর্ট এ মারা যায় আর ওর কাকু ওর লাশ নিয়ে যায়,, এ কথা শুনার সাথে সাথেই পাগলের মতো ছুটে যাই মায়ার বাড়ি সেখানে গিয়েও মায়াকে শেষ বারের মতো দেখতে পারিনী ওকে দাফন করে ফেলেছিলো ওর কবর কোথায় জিগাস করতেই ওর কাকা বলে ওদের নাকি আরেকটা বাড়ি আছে সেখানে ওর বাবা মার কবর আছে আর সেখানেই ওকে দাফন করা হয়েছে, আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলাম কিন্তু ওনারা আমাকে মায়ার কাছে নিয়ে যাননি।
এটুকু বলার পরই মেহরাব চুপ করে গেলো, আর বলতে পারছে না গলা আটকে আসছে,, মেঘের চোখেও পানি, ওর প্রাণ প্রিয় বন্ধুর বুকের মধ্যে এতো কষ্ট জমা আছে ও কখনো ভাবতেও পারিনি, তবুও চোখের পানি মুছে মেঘ বলল।
এখানে কিন্তু অনেকগুলো প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে (মেঘ)
মানে??(মেহরাব চোখ মুছে বলল)
প্রশ্ন টা হলো,, ওরা তোকে মায়ার কবর দেখালো না কেনো?? আর মায়ার কাকুই বা হসপিটালে কেনো এসেছে?? কে আছে ওখানে ওনার?? আর ওই আকাশই বা কে?? মাহির সাথে ওর কি যোগসূত্র?? অনেক বড় কিছু আছে যেটা আমাদের এখনো অজানা (মেঘ)
কি বলতে চাইছিস তুই?
আমাদের সবটা জানতে হবে,, মায়া আদেও মারা গেছে কি না সেটা জানতে হবে,, আর যদি মারা গিয়েও থাকে তাহলে ওর কবর কোথায়?? আর মাহির কাকুর হসপিটালের সাথে কি সম্পর্ক (মেঘ)
কিন্তু এতো কিছু কি করে জানবো??
হুমম, এখন আমাদের প্রথম টার্গেট হলো ডাক্তার আজিজ ওনি একটু হলেও জানতে পারে।
কিন্তু ওনি কি সব কিছু বলবেন আমাদেরকে??
এমনি তে তো বলবে না, ওনাকে দিয়ে বলাতে হবে।
কীভাবে??
ভাবতে হবে,, গভীর ভাবে ভাবতে হবে।
চলবে,,,,,,??