#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব——১৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
যাই হোক বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে অনেকটা সময় কেটে গেলো।প্রত্যুষকে ফাঁকি দিয়ে সবটা সম্ভব হয়েছে এই অনেক।ড্রয়িংরুম পেরিয়ে নিজের ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলাম আমি।দেখতে পাই প্রত্যুষ বিছানার ওপর হেলান দিয়ে বসে আছে।ওর হাতে একটা নিউজপেপার,সেটাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে!
—একি তুমি,তুমি কখন এলে?
—কেনো,খুব ঘাবড়ে গেলে বুঝি,
(নিউজপেপারটা রেখে প্রত্যয় আমায় বললো)
—না ঘাবড়ানোর কি আছে,এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
এই বলে আমি বাথরুমে যাবার জন্যে ঘরের বাইরে বের হবার উদ্যোগ নিলাম ঠিক তখন প্রত্যুষ বেশ গম্ভীর আর সন্দেহবাচক স্বরে আমায় জিজ্ঞেস করে-
—কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?
—একটা জরুরী কাজে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলাম।
—কি এমন জরুরী কাজ জানতে পারি,রোজ রোজ জরুরী কাজ থাকে বুঝি তোমার?
—কি যে বলো না রোজ রোজ কেনো থাকবে,সত্যিই একটা কাজে গিয়েছিলাম।
—আচ্ছা,ভালো।
—তুমি কি সন্দেহ করছো আমায় প্রত্যয়?
–না,সন্দেহ করবো কেনো।আসলে তুমি আমায় দেখে যেভাবে ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে গেলে তাই জিজ্ঞেস করলাম।
—তুমি থাকো আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসি।
আমি বেরিয়ে গেলাম।বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে ঢুকতেই দেখতে পাই প্রত্যুষ ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমিও গিয়ে পাশে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম প্রত্যুষের দিকে।ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখতে নিষ্পাপ কোনো শিশুর মতো লাগছে।কে বলবে এই মানুষটার ভেতরটা এতো হিং স্র তা,কলু ষ তা য় ভরা।উপায় থাকলে এক্ষুণি গ লা টা টি পে দিতাম কিন্তু সুযোগ নেই আমার কাছে।তাই সবটা সহ্য করে যেতে হচ্ছে।একদিকে রোদেলা আর অন্যদিকে প্রত্যুষ এরা দুজনই সমান পথের কাঁ টা আমার,এই দুজনকে না সরানো পর্যন্ত শান্তি নেই আমার।তবে রোদেলাকে আমি একটা সুযোগ অবশ্যই দেবো,ও প্রত্যয় আর আমার রাস্তা থেকে না সরে দাঁড়ালে আমাকেই কিছু একটা করতে হবে।প্রত্যয়কে পাবার জন্য নিজের স্বামীকে খু ন করতে হাত দুবার কাঁপেনি আমার,সেই হিসেবে ওরা তো কেউ হয় না আমার।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মনের অজান্তেই চোখজড়া লেগে এলো আমার,তারপর আর কিছু চিন্তা করার অবসর পেলাম না আমি।
প্রত্যয় ওর বিছানায় শুয়ে আছে।ঘরের ড্রিম লাইটটা ছাড়া আলোর কোনো চিহ্ন নেই চারপাশে।রোদেলা এসে প্রত্যয়ের পাশে বসলো।ওর হাতে একটা চকলেটের প্যাকেট।প্যাকেট থেকে একটুকরো চকলেট ভেঙ্গে প্রত্যয়ের সামনে ধরলো রোদেলা।
—এটা খেয়ে নাও।খুব টেস্টি।মনে আছে তুমি এটা আগে কিনে দিতে আমায়,
—না,আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।খাবো না আমি,
—আরে বাবা,একটু মুখে নাও না।
—না,তুমি খাও।
—আমি খাইয়ে দিলে খাবে তো,
—জানি না।
—আইডিয়া…..দাঁড়াও
(রোদেলা কিছু একটা ভেবে বললো)
তারপর সে চকলেটের টুকরোটা নিজের মুখে নিলো,তারপর প্রত্যয়ের দিকে এগিয়ে যায়।প্রত্যয় বেশ ইতস্তত বোধ করছে।রোদেলা আর প্রত্যয়ের মুখের ব্যবধান খুব বেশি নয়,দোয়েল তার ঠোঁ টে চেপে রাখা চকলেটের টুকরোটা প্রত্যয়ের মু খে র ভেতরে আলতো করে ঢু কি য়ে দিলো।তারপর দুজন মিলে চকলেটের স্বা দ আ স্বা দ নে ব্য স্ত হয়ে পড়ে।প্রত্যয় শক্ত করে রোদেলাকে জ ড়ি য়ে ধরলো,ধীরে ধীরে ওকে বালিশের ওপর শুইয়ে দেয়।দোয়েল ল জ্জা য় চোখদুটো বন্ধ করে রইলো,প্রত্যয় ছেড়ে দিতেই আবারো উঠে বসলো সে।দোয়েলের গ লা,ঘা ড়,বু ক,গা ল সর্বত্র লেপ্টে থাকা চকলেট বিচরণ করছে।একটু পরে সে পেছনের দিকে প্রত্যয়ের অস্তিত্ব অনুভব করে।রোদেলাকে নিজের বা হু ডো রে জ ড়ি য়ে ধরে ওর ঘায়ড়ে লে গে থাকা চকলেটের স্বা দ আ স্বা দন করছে প্রত্যয়।রোদেলার পুরো শরীরে যেনো আ গু ন ধরিয়ে দিয়েছে কেউ,নিজেকে আর সংযত রাখতে পারছে না না।
প্রত্যয় ওর শার্টটা খুলতে উদ্যত হয়,কিন্তু কিছুতেই একটা বোতাম খুলতে পারছিলো না।অগ্যতা এক টানে পুরো শার্টটা ছি ন্ন ভি ন্ন করে নিজের অ না বৃ ত শরীর আবিষ্কার করলো।প্রত্যয়কে আগে কখনো এই অবস্থায় দেখেনি রোদেলা।নিজে থেকেই প্রত্যয়ের দিকে এগিয়ে যায় সে।তারপর ওর বুকের ওপরে আলতো করে নিজের ঠোঁ ট জো ড়া স্প র্শ করলো।অদ্ভুত শিহরণে প্রত্যয়ের চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসে।কিছুক্ষণ সে রোদেলাকে বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয়,প্রত্যয়ের উ ত্ত প্ত নিঃ শ্বা স রোদেলার ঘায়ড়ে শি হ র ণে র নতুন মাত্রা যোগ করছে।দুটো দেহ একে অপরকে পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।প্রত্যয় একদৃষ্টে রোদেলার দিকে চেয়ে আছে,যা রোদেলার মোটেও ভালো লাগছে না।তার চোখের চাহনি বারংবার প্রত্যয়কে কাছে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।কিন্তু প্রত্যয় সেই আহ্ববানে সাড়া দিচ্ছে না।রোদেলা নিজের সমস্ত লাজ ল জ্জা বিস র্জন দিয়ে প্রত্যয়কে বলে উঠলো।
—কিসের অপেক্ষা করছো এতো,প্লিজ।আমায় আর এভাবে কষ্ট দিও না।প্লিজ এসো।
প্রত্যয় একটুকরো হাসি দিয়ে রোদেলার ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারের প্রস্তুতি নিতে লাগলো।এরপর ঘরের লাইট অফ হয়ে যায়।অমনি এক আ র্তচি ৎকা র সমস্ত ঘরকে আন্দোলিত করে তুললো।এ চি ৎ কা র এক নারীকন্ঠের।য ন্ত্র না,সু খ,আর জীবনে প্রথম বারের মতো কিছু হা রা নো আর প্রা প্তি র আর্তচিৎকার।তারপর আবারো চারপাশে পিনপতন নিরবতা।
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড় করে বিছানার ওপর উঠে বসলো দোয়েল।এটা কি স্বপ্ন দেখলো ও!না,রোদেলা কিছুতেই এটা প্রত্যয়ের সাথে করতে পারে না।এই দুঃস্বপ্নটা নিজের মনের দুঃশ্চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।মনের শঙ্কা দূর করার জন্য রোদেলাকে একটা ফোনকল করলো দোয়েল।
—হ্যালো,রোদেলা।কোথায় তুমি?
—আমি তো বাসায়,কেনো?
—প্রত্যয়,প্রত্যয় কোথায়?
—কোথায় আর থাকবে,কাল আমরা যেখানে রেখে এসেছিলাম সেখানেই।কেনো কি হয়েছে বলুন তো?
—না,তেমন কিছু না।
—আমি কাল রাতেই বাসায় চলে এসেছি,আজকেও একবার যাবো ভাবছি।আচ্ছা প্রত্যুষ কিছু সন্দেহ করেনি তো?
—না করেনি,ও এসে যেতে পারে যেকেনো সময়।আমি ফোন রাখছি।বাই।
আজকেও আমায় প্রত্যয়ের কাছে যেতে হবে।ও আমাকে এখনো চিনতে পারেনি।এই ব্যপারটা কিছুতেই মানতে পারছি না আমি।যেকরেই হোক আমায় প্রত্যয়কে সবটা মনে করাতে হবে।কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সময়।বাড়ির দিকটা সামলে,প্রত্যুষকে ফাঁকি দিয়ে প্রত্যয়কে সময় দেওয়া আমার জন্য বেশ কষ্টকর।যদি কোনোভাবে প্রত্যয়কে এই বাড়িতে আনতে পারতাম তবে সেটা সবথেকে ভালো হতো আমার জন্য,আর যাই হোক রোদেলার কাছাকাছি ওকে বেশি সময় থাকতে দেওয়া যাবে না।
একটুপর প্রত্যুষ বাড়িতে চলে আসলো।তারপর তরিঘড়ি করে প্রস্তুত হতে থাকে।আমি ওকে জিজ্ঞেস করি।
—এতো সকালে রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?
—একটা জরুরী কাজে।
—কিসের জরুরী কাজ?
—কেনো,তোমার জরুরী কাজ থাকলে আমার কি থাকতে পারে না।তারপরেও তুমি যখন জানার আগ্রহ দেখাচ্ছো বলছি।আমাদের কোম্পানীতে একটা গন্ডগোল লেগেছে সেটারই সমাধান করতে যাচ্ছি।
—তোমাদের কোম্পানীতে গন্ডগোল লেগেছে,কই আগে তো বললে না।
—আজকেই জানতে পারলাম,আগে কিকরে বলতাম।আসলে আমি আমার একটা গুরুত্বপূর্ন জিনিস একটা জায়গায় রেখে এসেছিলাম।সেটা কেউ আমায় লুকিয়ে আমার চোখের আড়ালে সরিয়ে রেখেছে।এখন সেটাই খুঁজতে যাচ্ছি।তবে টেনশন করার কিছু নেই,খুব শীঘ্রই আমি আমার জিনিস ফেরত পাবো।
—ও আচ্ছা,এটা তো ভালো কথা।ঠিক আছে,তাহলে কাজে যাও।
–তাতো যেতেই হবে,যদিও আমি সেই জিনিসটা খুঁজে পেলে অনেকে মুশকিলে পড়ে যাবে।সেই কথাটাই ভাবছি।
এই বলে প্রত্যুষ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।একটু পরেই আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।ও কি বলে গেলো এগুলো।কালকের ঘটনার সাথে ওর বলা কথাগুলোর রহস্যজনক মিল পাচ্ছি আমি।ওর একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মানে প্রত্যয়,যাকে আমরা ওর চোখের আড়াল থেকে সরিয়ে এনেছি।ও সেটার হদিস খুঁজতে যাচ্ছে মানে প্রত্যয়ের ব্যপারে কিছু জানতে পেরেছে।আর খুঁজে পেয়ে গেলে আমি মুশকিলে পড়ে যাবো।এরকম কিছু ইঙ্গিত করেনি তো প্রত্যয়?
কিন্তু ও এতো অল্প সময়ে এতোকিছু জানলো কিকরে,প্রত্যয়কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছি এটা তো আমি আর রোদেলা ছাড়া কোনো তৃতীয় ব্যক্তির জানে না।তবে কি রোদেলা…..?
না,এটা কিকরে হয়?রোদেলা কেনো এমনটা করতে যাবে,হয়তো সবটাই আমার মনের সন্দেহর বহিঃপ্রকাশ!
চলবে…….