#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—-০২
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
—-এইতো সেই ধারালো চকচকে ছুরি।যা দিয়ে আজ থেকে ছয় মাস আগে নিজের স্বামীকে খু ন করেছিলাম আমি।ওর র ক্তে র দাগ যেনো এখনো শুকোয় নি,আমি এখনো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি…!
অকস্মাৎ দরজার টোকার আওয়াজ ভেসে আসলো আমার কানে।ছুরিটা আবারো জায়গামতো রেখে আমি গিয়ে দরজাটা খুললাম।
—-একি তুমি,কোথায় চলে গিয়েছিলে?
—-সকাল সকাল আমি আর কোথায় যাই,
আমার বুঝতে বাকি রইলো না প্রত্যয় হাঁটতে গিয়েছিলো।সকালে জগিং করা ওর ডেইলি রুটিন।ঘরের ভেতরে ঢুকে টাওয়ালটা কাঁধে নিয়ে বাথরুমের দিকে চলে গেলো প্রত্যয়।আমি আর কিছু বললাম না ওকে।কেমন জানি মনে হয়,প্রত্যয় আমার ওপরে রেগে আছে।গতকাল রাতের ঘটনার জন্য নয় তো?আমার বোধহয় ওকে ওভাবে জোর করা ঠিক হয়নি।না-জানি কি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে আমাকে নিয়ে ওর ভেতরে।যে মহিলার শরীরের ওপর থেকে বৈধব্যের গন্ধ এখনো পুরোপুরি যায়নি,যে বাসর রাতে নিজের স্বামীর ওপর ক্ষুধার্ত হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো।নাহ!এই ব্যপারটা সত্যিই বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে,প্রত্যয় আবার না সন্দেহ করে বসে এই নিয়ে!
একটু পরে গোসল সেরে প্রত্যয় ঘরে ঢুকে পড়লো।ওর কোমড়ের ওপরে শুধু একটা টাওয়াল জড়ানো।বাকি শরীর অনাবৃত।এই দ্বিতীয় বারের মতো প্রত্যয়কে এতো কাছ থেকে দেখছি আমি।এর আগে একবার দেখেছিলাম, যখন কল্লোল বেঁচে ছিলো।সেই দিনই প্রত্যয়ের প্রেমে পড়েছিলাম আমি।প্রতিরাতে যখন কল্লোল আমার ওপরে পুরুষত্ব ফলাতে ব্যস্ত থাকতো,আমি চোখদুটো বন্ধ করে প্রত্যয়ের কথাই ভাবতাম।আমার কল্পনার জগৎ কল্লোলকে সেই মূহুর্তগুলোর জন্য প্রত্যয় বানিয়ে দিতো।যদিও কল্পনার ঘোর কাটতেই প্রতিবারেই হতাশা মিলতো আমার ভাগ্যে।মনেপ্রাণে এটাই চাইতাম-আমি শুধু প্রত্যয়ের,ওকে নিজের স্বামী হিসেবে পাওয়ার বাসনা আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে।ওর মতো সুদর্শন সুপুরুষ জীবনে দেখিনি আমি।নম্র ভদ্র শান্ত শিষ্ট একটা ছেলের ভেতরে যে পুরুষত্বের আগুন লুকিয়ে আছে আমি প্রত্যয়ের কাছে গেলেই আঁচ পেতাম।ওর সেই আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে দেবার মতো ছটফট করতে থাকি।অবশেষে আমার সেই বাসনা পূর্ণ হলো।আমি ভালো করেই জানি,কল্লোল জীবিত অবস্থায় প্রত্যয় ম রে গেলেও আমার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতো না।কারণ ও এমন ধরনেই ছেলেই নয়।নিজের বড়ো ভাইকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করতো,এমনকি আমার দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকিয়ে কথা বলতো না।তাই আমি কল্লোলকেই সরিয়ে দিলাম নিজের পথ থেকে।ধীরে ধীরে সেসব ঘটনা ঘটতে লাগলো যা আমি বরাবরের জন্য চেয়েছি।আজ আমি পুরোপুরি প্রত্যয়ের।ওর আগুনে দগ্ধ হবো প্রতিনিয়ত আর নিজে সেটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবো।
হঠাৎ বুঝতে পারলাম আমার কাঁধের ওপরে কেউ হাত রেখেছে।প্রত্যয় আমার পাশে বিছানার ওপরে বসলো।লক্ষ্য করছি ওর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।আমি অবাক হয়ে গেলাম ওকে কান্না করতে দেখে।
—একি তুমি কান্না করছো কেনো,কি হয়েছে?
—কেনো জানি না,ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে খুব।আমরা কি কাজটা ঠিক করলাম ?
—কি কাজ ঠিক করিনি আমরা?
—আমাদের বিয়ে করা,না জানি ভাইয়ার আত্মা কতোটা কষ্ট পাচ্ছে।ও কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবে না আমায়।
এর ভাইয়ের প্রতি আদিখ্যেতা দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।কিন্তু সেটা যে বুঝতে দেওয়া যাবে না।তাই শান্ত করার জন্য বললাম।
—এটা তোমার মনের ভুল,তুমি তোমার ভাইকে অনেক ভালোবাসো কিনা তাই।মৃত মানুষের আত্মার পৃথিবীর সাথে কোনো যোগাযোগ থাকে না।তুমি নিজের আবেগটাকে একটু নিয়ন্ত্রণ করো।প্লিজ।
—আমি এতো কিছু জানি না,আর দেখো একটা কথা বলে দেই তোমায়,
—কী কথা বলো?
—আমার একটু স্পেস চাই।আর কয়েকটা দিন যাক আমি নিজে আসবো তোমার কাছে।নেহাত বাবা-মায়ের কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছি,কিন্তু এই সম্পর্কটা মন থেকে মেনে নিতে একটু সময় লাগবে আমার।গতরাতে যা হয়েছে রীতিমতো গা ঘিনঘিন করছে এখন আমার,আমি এতোটাই আনকমফরটেবল।প্লিজ আমার দিকটা একটু বোঝার চেষ্টা করো।
—আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি যা ভালো মনে করো।আমিও আর জোর করবো না তোমায়।কথা দিচ্ছি।
আমার কথা শুনে প্রত্যয় যেনো একটু শান্ত হলো,সত্যি বলতে ওর হাসিমুখ দেখে আমারও খুব ভালো লাগছে।আমাদের শেষ হলে প্রত্যয় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।আমরা এখন আমার পুরনো ঘরে থাকি,তাই ভাবলাম প্রত্যয়ের একটা ছবি এনে সাজিয়ে রাখবো।তাই আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় পাওয়া যেতে পারে প্রত্যয়ের ছবি।মা জানালেন একটা ফ্রেমে বা৬ধানো ছবি নাকি প্রত্যয়ের ঘরে আছে।আমি প্রত্যয়ের রুমের দিকে চলে গেলাম।রুমের ভেতরে ঢুকে ছবি খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।খুঁজতে খুঁজতে ওর বুকশেলফের কাছে গিয়ে হোঁচট খেলাম।মেঝের ওপরে প্রত্যয়ের ফ্রেমে বাঁধানো একটা ছবি পড়ে আছে।আমি ছবিটা নেবার জন্য নিচে ঝুকলাম,ঠিক তখন একটা জিনিস নজরে আসে।শেলফের নিচে ডায়েরীর মতো কিছু একটা লুকানো।ডায়েরীটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলো।প্রত্যয় ডায়েরী লিখতো কই আগে তো বলেনি কখনো আমায়।আগ্রহভরে একটার পরে একটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে পড়তে লাগলাম।ওর প্রাত্যহিক জীবনে ঘটা নানা ঘটনা ডায়েরীতে লিখে রেখেছে।হঠাৎ একটা অদ্ভুদ ব্যপার লক্ষ্য করি আমি।ডায়েরীর একটা পৃষ্ঠায় আমার মৃত হাসবেন্ড অর্থাৎ কল্লোলের ছবি আটকানো।ছবিটার ওপরে একটা লাল ক্রস চিহ্ন আঁকা।আর নিচে লেখা-
“আমার কাজ সমাপ্ত,পথের কাঁটা দূর হলো অবশেষে।তারিখ-এপ্রিল ১২ ২০২২!
লেখাগুলো পড়ে যেনো চারপাশ অন্ধকার দেখতে লাগলাম আমি,এটা তো সেই তারিখ যেদিন কল্লোলের খু ন হয়েছিলো।আমি কল্লোলকে খু ন করতে গিয়ে ওকে গু লি বি দ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই।কিন্তু সেই গু লি ডানহাতে বিদ্ধ হওয়াতে কল্লোলের তৎক্ষনাৎ মৃ ত্যু হয়নি,যন্ত্রনায় ছটফট করছিলো।তাই ওর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বুক বরাবর ছু রি চালিয়ে তারপর আমি আমার কাজ শেষ করি।তার মানে সেই অজ্ঞাত খু নিটা আর কেউ না প্রত্যয় ছিলো,ও কি আমার থেকেও বড়ো কোনো খেলোয়ার,যাকে আজোও সবাই কল্লোলের খু নে র অপরাধে খুঁজে চলছে!
কিন্তু ও নিজের আপন ভাইয়ের সাথে কেনো এমনটা করতে যাবে,কি উদ্দেশ্য ওর?
চলবে…..