আমার গল্পে আমি খলনায়িকা পর্ব -০৭

#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—০৭
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—বিষ দিয়েছি,বিষ!শুনতে পেয়েছো?

আমার কথা শুনে প্রত্যয়ের চোখদুটো ভয় আর আতংকে বড়ো হয়ে যেতে লাগলো,আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি সেটা।

—কি হলো খুব ভয় পেয়ে গেলে মনে হয়?

—বিষ দিয়েছো মানে খাবারে,কেনো করলে এটা তুমি…?

—কেনো করেছি,শুনতে চাও।আচ্ছা শোনো তাহলে বলছি….

ইতিমধ্যেই প্রত্যয়ের মায়ের গলার আওয়াজ ভেসে আসলো নিচ থেকে।ব্যপারটা কি ঘটলো বুঝলাম না,উনি এতো বাড়িতে বাড়িতে ফিরে আসলেন কিকরে?প্রত্যয়কে ওই অবস্থায় রেখে আমি নিচে ছুটে গেলাম।গিয়ে দেখি মা ছাদের দিকেই আসছে।এটা দেখে ভয়ে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে যেতো লাগলো।মাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

—মা,কোথায় যাচ্ছেন?

—কোথায় আবার ছাদে,তুমিও চলো না।

—এখন ছাদে যাওয়ার কি দরকার,আমাকে বলুন কি লাগবে,

—আমার প্রত্যয়ের সাথে একটু কথা আছে।ও তো ওপরেই আছে,নাকি?

—আমি বরং প্রত্যয়কে নিয়ে আসছি,আপনি নিচে যান।

—বুঝতে পারছি না বৌমা তুমি আমায় বাঁধা দিচ্ছো কেনো?কি এমন অসুবিধা ওপরে গেলে?

—না আসুবিধা কেনো থাকবে,কোনো অসুবিধে নেই,

—তোমাকে দেখে কিন্তু বড্ড বিচলিত লাগছে,কি হয়েছে আমায় বলবে?

আমি ভালো করেই জানি,মা ওপরে গেলেই সবটা বুঝতে পেরে যাবে।বিষের প্রভাবে প্রত্যয়ের কি অবস্থা হয়েছে এখন জানি না,তবে ও যে সুস্থ নেই এইটুকু নিশ্চিত।আজ ভাগ্যে কি আছে সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানে,এদিকে মাকেও মানাতে পারছি না কিছুতেই।যে ছাদে যাবার পণ করে বসে আছে।কোনো ছলাকলায় ভোলাতে পারছি না তাকে।

—কি হলো,কথা বলছো না কেনো,কি হয়েছে?

—কিছু হয়নি,

—তাহলে সরো,আমায় ওপরে যেতে দাও।

এই বলে মা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো,আমিও তার পিছু নিলাম।ভয় আর আতংকে বুকে কম্পন শুরু হয়ে গিয়েছে।এরপর ছাদে গিয়ে যা দেখতে পাই নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছি না আমি!প্রত্যয় বহাল তবিয়তে বসে আছে,বসে বসে আমার দেওয়া গাজরের হালুয়া খেয়ে চলছে,আমার দিকে চেয়ে মিটি মিটি হাসতে লাগলো।কিচ্ছু বুঝতে পারছি না,আমি নিজের হাতে বিষ মিশিয়েছি প্রত্যয়ের খাবারে,তারপরেও ওর কিছু হলো না কেনো?যদি ভুলে কাপ বদল হয়ে যেতো তবে তো আমার অসুস্থ যাওয়া উচিত এতোক্ষণে,আমিও সুস্থ আছি।তাহলে বিষ কি উবে গেলো?এই ভাবনায় মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো আমার।প্রত্যয় ওর মাকে দেখিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—তুমি কিন্তু গাজরের হালুয়া খুব ভালো তৈরী করো দোয়েল,খুব ভালো হয়েছে খেতে।

আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।

—কি খাবে নাকি আমার কাপ থেকে এক চামচ?

—না,তুমি খাও না।আমার কাপটা তো শেষ হলো না এখনো,

—আরে এখান থেকেই খেতে পারো,বিষ মিশিয়ে দেইনি আমি।বিশ্বাস করতে পারো।

মা এটা শুনে প্রত্যয়কে একটা ধমক দিয়ে বললো।

—এসব আবার কী কথা,চল নিচে চল।তোর সাথে কথা আছে আমার,

—কি কথা মা,বলো।

—নিচে চল,এখানে বসে বলা যাবে না।

মা প্রত্যয়কে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।আমি তখনো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছাদে বসে আছি।সবটা মাথার ওপর দিয়ে গেলো,প্রত্যয়ের সাথে গেম খেলতে গিয়েছিলাম কিন্তু ও উল্টো গেম খেললো আমার সাথে।মাই বা ওকে এভাবে ডেকে নিয়ে কোথায় গেলো,এই বিষের ব্যপারে মায়ের কোনো ভূমিকা নেই তো?প্রত্যয় আর মায়ের ভেতরে কি চলছে আমায় আগে এটার জানার চেষ্টা করতে হবে।





বিকেলে রোদেলার একট ফোনকল এলো আমার কাছে।

—হ্যাঁ,দোয়েল বলো!

—কাজটা কি হলো,কিছু জানতে পেরেছেন কি?

—না!

—না,মানে?কিন্তু আপনিই তো বললেন….

—হ্যাঁ,আমি যে প্ল্যানটা করেছিলাম,সেটা ওয়ার্ক করে নি।

—কিভাবে,প্রত্যয় কি ধরে ফেললো নাকি আপনাকে?

—বুঝতে পারছি না এই মূহুর্তে কিছুই,

—কি হয়েছে আমাকে খুলে বলবেন একটু,

আমি রোদেলাকে বলতে যাবো ঠিক তখন মা চলে আসলো,তাই আমি থেমে যাই।

—চলো আমি তোমাকে পরে কল করছি।এখন বাই।

রোদেলার কোনো কথার অপেক্ষা না করে কলটা কেটে দিলাম।

রাতের বেলা,

আমি রুমে বসে আছি,প্রত্যয় এসে আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আমি ছাড়িয়ে নিলাম ওর থেকে নিজেকে।

—রোজ তো জোর করো আমায়,আজ দূরে সরে যাচ্ছো কেনো?

—এমনি,ভালো লাগছে না আমার।

—আচ্ছা,একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমায়?

—কি কথা,

—তুমি আগে প্রাঙ্ক-ট্রাঙ্ক করতে নাকি?

—মানে,হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?

—আমার তো মনে হয়,এই কাজের ভালো অভ্যাস আছে তোমার,বিকেলে তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে আমায়।

—কি বলতে চাও ক্লিয়ার করে বলো,

—-আজব,আর কি ক্লিয়ার করে বলবো!তুমিই বললে খাবারে নাকি বিষ আছে?কোথায় বিষ,আমি তো দিব্যি হাঁটাচলা করছি তোমার সামনে,বলো এমন মজা কেনো করলে আমার সাথে?

আর কেউ না জানলেও বিকেলের ঘটনা কোনো প্রাঙ্ক ছিলো না,কিন্তু প্রত্যয় যেটা মনে করছে সেটা কি সত্যিই ওর মনের কথা?তাহলে কি ও সন্দেহ করছে না আমায়।এই পৃথিবীতে সবকিছু সম্ভব হলেও এই একটা ব্যপার কখনোই সম্ভব নয়,আর সেটা হলে অন্যের মনের কথা বুঝতে পারা।এই গল্পের সকল পর্ব সবার আগে পেতে ভিজিট করুন ‘প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ’পেজে।কিকরে বুঝবো আমি,প্রত্যয় যা বলছে সব সত্যি?যদিও ওর বাহ্যিক আচরণ দেখে মনে হচ্ছে ও সত্যিই সন্দেহ করছে না আমায়।যদি করতো সেই ছাপ ওর চোখমুখে কিছুটা হলেও ফুটে উঠতো।যাই হোক,প্রত্যয় যদি ভেবে থাকে আমি প্রাঙ্ক করেছি ওর সাথে,আমার উচিত ওর সেই ভাবনায় সায় দেওয়া।তাই ওকে বললাম।

—দেখতে চেয়েছিলাম,তুমি আসলে কতোটা বিশ্বাস করো আমায়,

—তো কি দেখলে?

—একটুও করো না।

—কিভাবে বুঝলে?

—যদি সত্যি আমায় বিশ্বাস করতে বিষের কথা শুনে ঐভাবে আঁতকে উঠতে না তুমি,

—তো কি,উল্লাস করলে খুশি হতে তুমি?হ্যাঁ তবে এটা ঠিক প্রথমে শুনে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ঠিকই,পরে বুঝতে পারি।তুমি মজা করছো আমার সাথে,মা মাঝপথে এসে সবটা ঘেঁটে দিলো।

—হুমমম,নয়তো আরেকটু মজা নেওয়া যেতো।আমার পুরো প্রচেষ্টা জলে গেলো,

—আহা!খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি।

—হবে না কষ্ট,

—এসো এক্ষুণি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিচ্ছি।

এই বলে প্রত্যয় একটা ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিলো আমায়।তারপর শার্টটা খুলে আমার নরম তুলতুলে শরীরের ওপরে উঠে পড়লো।আমার অস্বস্তি ঘড়ির কাটা টিকটিক করতে চলতে শুরু করলো,জানি এখন কিছুক্ষণ জাহান্নামের যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে।নকল প্রত্যয়ের সঙ্গ আমার কাছে জাহান্নামের আগুনের থেকে কম কিছু নয়।বিছানার চাদরটা খামচে ধরে নিজের চোখজোড়া বুঝে রইলাম,যাতে নিজের সর্বনাশের দৃশ্য নিজেকে না দেখতে হয়।





পরের দিন সকালবেলা।প্রত্যয় বাথরুমে গোসল সারতে ব্যস্ত।এর মধ্যেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো।আবারো একটা আননোন নম্বরের ফোনকল,তবে নম্বরটা আননোন হলেও বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে।কোথাও আগে দেখেছি মনে হয়।চারদিকে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই।চুপিচুপি কলটা রিসিভ করে কানের পাশে ধরলাম।তৎক্ষনাৎ ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসলো।নম্বরের মতো এই কন্ঠটাও বেশ পরিচিত মনে হতে লাগলো।বুঝে উঠতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো আমার,পরক্ষণেই বোধগম্য হলো এতো আর কারোর নয় রোদেলার কন্ঠ!

—-প্রত্যয় কথা বলছো না কেনো,

আমি চুপ করে রইলাম,

—-আজব,কথা বলছো না কেনো,সত্যি সত্যি মরে গেলে নাকি,কি বলেছিলাম দোয়েলের ব্যাগ থেকে বিষের শিশিটা পাল্টে দিতে পেরেছিলে?

—আরে চুপ করে আছো কেনো,প্রত্যয়!প্রত্যয় আমি তোমার সাথে কথা বলছি তো?

আমার কাছে এবার সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যেতে লাগলো,এই মেয়েটা আমার থেকেও বড়ো খেলোয়াড়!আর প্রত্যয়ও কম যায় না।এরা দুজন মিলে এতোদিন আমার সাথে কি ড্রামাটাই না করেছে,অথচ আমি কিচ্ছু বুঝতে পারিনি।তার মানে প্রত্যয়ের সমস্ত কুকর্মের সাথে রোদেলা জড়িত,কিন্তু ওর এসবের পেছনে উদ্দেশ্যটা কি?

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here