আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ১৬+১৭

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৬

আমি তোমার বিরহে রহিব,

বিলীন

তোমাতে করিব বাস,

দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনি,

দীর্ঘ বরস-মাস

যদি আর কারে ভালবাসো,

যদি আর ফিরে নাহি আসো

তবে তুমি যাহা চাও তাই,

যেন পাও,

আমি যত দুঃখ পাই গো…….

অন্তী এইটুকু গেয়েই থেমে গেলো…পেছন থেকে অথৈ এসে অন্তীর পাশে দাড়ালো,,

অন্তী অথৈ-এর দিকে একবার তাকিয়ে আবার আগের মতো দাড়িয়ে যায়।

-পরের লাইনটা বলবি না?

-কি হলো গা…ভালোই তো লাগছিলো,,,

-থাক বলতে হবে।পরের টা তো আমি জানি।শুধু আমি কেন আমরা সবাই জানি কিন্তু তুই জানিস না জানলেও মানিস না…!!

-আমারো পরানো যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাইই গো…আমারো……..

-তুই এখান থেকে যা আমার ভালো লাগছে না!

-অনেক দিন পর তোর গান শুনলামরে আপু।

-আজকে তূর্য ভাইয়া চলে যাচ্ছে।তাই তোর খুব মন খারাপ তাই না??ওহ্ তুই জানিস তো তূর্য ভাইয়া চলে যাচ্ছে??

অন্তী একবার অথৈ এর দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়।

-জানি!

-কি করে জানলি?তোকে তো কেউ কিছু বলে নি,,

-সকালে দেখলাম দীদমুনি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো কাঁদতে কাঁদতে….যাওয়া আগে আমাকে গাল মন্দও করে গেলো!

-শুধু এইটুকুতেই বুঝে গেলি যে,,

-ওনি ফোন করেছিলেন আমাকে ভালো থাকতে বলে গেছে….বলে গেছে আমাকে না কি মুক্তি দিয়ে গেলেন!!

-ওহ্ তাহলে থাক ভালো!এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিস কেন??এটাই কি তোর ভালো থাকার নমুনা??

-অথৈ তুই এখান থেকে…..

-লিভ মি এলোন তাই তো??

-হুহ

-যাচ্ছি…..

অথৈ পেছন থেকে চলে যেতে অন্তী আবার ডাক দেয়,,

-তিয়াশ ভাইয়াকে ভুলে যা ফিপ্পি তোকেও কখনো মেনে নিবে না!

অথৈ অন্তীর দিকে মুখ বাকিয়ে জবাব দেয়,,

-আমি ঐ সব ফুপ্পি টুপ্পিকে জানি না।আমি শুধু জানি আমার ভালোবাসাকে।ফুপ্পি বলো আর শ্বাশুড়ি বলো সে যতো টুকু সন্মান পাওয়ার যোগ্য ততোটুকুই পাবে।

অথৈ এর মুখে এমন কথা শুনে অন্তী একটু অবাক হয়।

ভালোবাসা বোধয় এমনই হয়।হটাৎ করেই প্রচুন্ড সাহস দিয়ে দেয়,করে তোলে চঞ্চল নদীর মতো আবার কখনো করে দেয় শীতল বরফের মতো শীতল,আবার পাথরের মতো স্থীর,,,

অথৈ সেখান থেকে যেতে নিলে আবার পেছন ফিরে তাকায়।অন্তীর দিকে তাকিয়ে গড় গড় করে বলতে শুরু করে,,

-আমি আর তিয়াশ নেক্সট উইকে বিয়ে করছি।তূর্য ভাইয়া সব ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে।ফুপ্পি যদি মেনে না নেয় তাহলেও আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।তুই সব চিনলি শুধু মানুষ চিনলি না

-মানে?

-সমস্যাগুলোকে বুকে ভেতর চেপে না রেখে উন্মুক্ত করে দিতে হয় তাহলেই সমাধান পাওয়া যায়!! -অবশ্য এখন এসব বলে লাভ নেই আসছি আমি।

অথৈ এইটুকু বলেই পেছন ফিরে হাটা ধরে….. এদিকে জিনিয়া ব্যাগ পত্র গুছিয়ে তৈরী হয়ে বসে আছে দুপুর দুইটাই তাদের ফ্লাইট বেলা একটা পার হতে চললো অথচ তূর্যর দেখা নেই……

জিনিয়া তো রাগে ফুসছে।

তূর্য সেই সকাল ন টায় বেরিয়ে গেছে।কোনো এক বন্ধুর সাথে নাকি দেখা করতে যাবে।যাওয়ার সময় সবার কাছ থেকে রীতিমত বিদায়ও নিয়ে গেছে।জিনিয়াও তূর্যর সাথে যেতে চাইলে সে জিনিয়াকে জানায় বন্ধুর সাথে দেখা করে দুপুরে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে একসাথে বেরিয়ে পরবে।জিনিয়াও তূর্যর কথায় রাজি হয়ে যায়।

কিন্তু এখন এতো সময় পেরিয়ে যেতে দেখে জিনিয়াও আর অপেক্ষা করতে পারে না।তার ধারনা তূর্য তাকে না নিয়েই এয়ারপোর্টে চলে গেছে।

জিনিয়া তো রাগে ফোস ফোস করতে করতে এয়ার পোর্টের দিকে রওনা হয়ে যায়।এদিকে তমসা বেগম আর অন্তীর দাদী তো কেঁদে কেটে একাকার….

ছেলেটাকে যাওয়ার আগে শেষবারের মতোও দেখতে পেলো না তারা….

কি কপাল তাদের।সব হয়েছে ঐ এক মেয়ের জন্য…অন্তী,,,, তন্ময় অন্তী আর তিয়াশের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।

অন্তী বিছানায় বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
তন্ময়ের ভাষ্য মতে জিনিয়া তূর্যকে অনেক ভাবেই নিজের কাছে টানার চেষ্টা করেছে।এমন তাদের মা তমশা বেগমকে দিয়েও কল কাঠি নেড়েছে কিন্তু কিছুতেই যখন কিছু লাভ হয়নি তখন প্রভা আর জিনিয়া মিলে তোমাকে ব্যবহার করে ঐ ছবিগুলো দিয়ে তূর্যকে ফাসানোর প্লান করে।কারন ওরা খুব ভালো করেই জানতো জিনিয়া কে নিয়ে তোমাদের মাঝে আগে থেকেই সন্দেহ ছিলো।আর আমার বন্ধু যে কিনা একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ওকে দিয়ে প্রভা এই সব করিয়েছে।শুধু প্রভা কেন এ সব কিছুতে আমি ও জড়িয়ে আছি।আমি জানি আমি খুব বড় অন্যায় করেছি আমাকে প্লিজ তোরা ক্ষমা করে দে।

অন্তু প্লিজ!!!আমি সত্যিই চাই না তুই আর তূর্য আলাদা হয়ে যা।কখনোই চাই না

তন্ময় কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাটু গেছে বসে পড়ে এদিকে অন্তী তো কেঁদেই চলেছে….

অথৈ ঠিক কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে…
-আপু আমি তোকে বলেছিলাম সমস্যাগুলো চাপিয়ে রাখতে নেই।তুই তাই করেছিস।যদি তুই একবার ছবিগুলোর ব্যপারে তূর্য ভাইয়া বা আমাদের কারো সাথে শেয়ার করতিস তাহলে এমন কিছুই হতো না।।

তিয়াশ অথৈকে ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়।
-কি হতো কি হতো না সেসব নিয়ে ভাবার সময় এখন নেই।এখন ভাইয়াকে আটকাতে হবে।ভাইয়ার দুইটাই ফ্লাইট আমরা চাইলেই ভাইয়াকে আটকাতে পারবো।সব তো এখনো শেষ হয় নি তাই না।

অন্তী কিছুটা মনের জোড় নিয়ে উঠে দাড়ায়।
তিয়াশের সাথে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পরে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।

প্রায় একটা বেজে চল্লিশে তিয়াশ আর অন্তী এয়ারপোর্টে এসে পৌছে যায়।দুজনই এয়ারপোর্টের ভেতরে যেতেই দেখে এয়ারপোর্ট চত্তরের মাঝখানে মেঝেতে কোনো একটা মেয়ে বসে বসে কাঁদছে আর তাকে ঘিরে বেস কিছু লোকজন দাড়িয়ে আছে।

অন্তী একটু এগিয়ে যেতেই দেখে মেয়েটি আর কেউ নয় জিনিয়া।অন্তী তিয়াশ দুজনেই জিনিয়ার কাছে এগিয়ে যায়। তিয়াশ জিনিয়ার কাছে গিয়ে জিনিয়াকে ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়,,,

-ভাইয়া কোথায়,
-কি হলো বলো ভাইয়া কোথায়??

-এই মেয়ে বলো ভাইয়া কোথায়??(বেশ জোড়ে ধমক দিয়ে)
এবার জিনিয়া যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে…

-আমি কি করে জানবো তোমার ভাইয়া কোথায়?সে আমাকে চিট করেছে।ঠকিয়েছে আমাকে।আমাকে বলেছে আমরা নাকি দুইটার ফ্লাইটে ইউকে তে ফিরে যাচ্ছি অথচ…..

এইটুকু কথা জিনিয়া একনাগাড়ে বলে থেমে যায়।বেশ লম্বা একটা দম নিয়ে নাক টানে,,, অন্তী অবাক হয়ে জিনিয়াকে প্রশ্ন করে,,, -অথচ কি???

জিনিয়া অন্তীর দিকে একটা কাগজ ছুড়ে মারে,, -সে আমার ফিরে যাওয়ার টিকিট ঠিকই কেটেছে অথচ নিজেরটা কাটেনি!

-মানে….(অন্তী তিয়াশ দুজন একসাথে)

-মানে তূর্য আমাকে চিট করেছে…..দুপুর দুইটার ফ্লাইটে শুধু আমার জন্য ছিট বুক করা অথচ প্যাছেন্জার লিস্টে তূর্যর নাম নেই।ও ইউকেতে ফিরছে না।আমার সাথে শুধু শুধু নাটক করেছে……!!

তিয়াশ মুচকি হেসে জিনিয়াকে জবাব দেয়
-আমি আমার ভাইয়ের থেকে এমন কিছুই আশা করেছিলাম।বাই দ্যা ওয়ে হ্যাপি জার্নি ডিয়ার।আর শুনো তোমাকে যেন আর কখনো আমার ভাইয়ের আশে পাশে না দেখি বুঝলে।যাও তোমার ফ্লাইটের দেরী হয়ে যাচ্ছে ওহ্ তুমি যা করেছো তার অনেক হিসেব নিকাশ বাকি আছে আরেক দিন না হয় মিটিয়ে নিবো আপাতোতো তুমি যেতে পারো!

জিনিয়া রাগে কটমট করতে করতে তিয়াশকে বলে,, -আই হেইট ইউ আই হেইট ইওর ব্রাদ্যার এন্ড অলসো ইউর ফ্যামিলি।আমি তোমাদের কখনো ক্ষমা করবো না কোনো দিনও না।

এইটুকু বলেই জিনিয়া ব্যাগে হাতে নিয়ে গটগট করে ইমেগ্রেশনের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে অন্তী সেখানেই স্থীর হয়ে দাড়িয়ে আছে।

তূর্য তো বিদেশ যাচ্ছে না।তাহলে কোথায় সে?? আর সকাল সকাল সবাইকে না জানিয়ে কোথায়ই বা হারিয়ে গেলো????

হটাৎই অন্তীর মাথা ঘুরে উঠে চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসে….অন্তী আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না ঐ খানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়।

ততোক্ষনে তন্ময় আর অথৈও সেখানে চলে এসেছে……
গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৭

অতি বড় ঘরোনী না পায় ঘর অতি বড় সুন্দরী না পায় বর

আমাগো অন্তীর কপাল ডা ও ওমনই হইলোরে বউমা….. একবারে গড় গড় করে কথাগুলো বলে নাক টানলেন অন্তীর দাদী।

অন্তী চোখ পিট পিট করে তাকায়।সবাই অন্তীকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।আর অন্তীর মা অন্তীর মাথার কাছে বসে আছে।শুধু বসেই নেই কেঁদে কেটে চোখের জল নাকের জল এক করে ফেলছেন ওনি।

অন্তী এক বার চোখ বোলাই গোটা ঘরটাতে।এটা অন্তীর ঘর।তার পাশেই অন্তীর দাদী হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে। (এয়ার পোর্টে অন্তী অজ্ঞান হয়ে গেলে তিয়াশ আর অথৈ অন্তীকে বাড়ি নিয়ে আছে।প্রায় ঘন্টা দুয়েক অন্তীর সেন্স ছিলোনা এরই মধ্যে ডাক্তারও এসেছিলো জানিয়ে দিয়ে গেছে অন্তী মা হতে চলেছে)

অন্তী নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে একটু উচু হয়ে বসে…..তিয়াশকে ডাক দেয়।তিয়াশ অন্তীর কাছে এগিয়ে যায়

-ভাইয়া ওনি কোথায়?

তিয়াশ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে! অন্তী আবার বেশ উদ্বীগ্ন হয়ে তিয়াশকে জিজ্ঞেস করে,,, -ওনি কোথায় ভাইয়া বলো না প্লিজ?ওনি কি সত্যি সত্যি আমাদের রেখে চলে গেলেন??আমার তো ওনাকে অনেক কিছু জানানোর ছিলো!!

কথাগুলো বলেই অন্তী কাঁদতে থাকে…. তিয়াশ চুপ করেই আছে…..

অন্তী কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একজন বলে উঠে,,, আর ন্যাক্যামো সহ্য হচ্ছে না আমার। নিজেই আমার ছেলেকে ঘর বাড়ি ছাড়া করে আবার এখন ঢং দেখাচ্ছে।দুদিন আগেই মা তোকে আমি বললাম সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে আমার ছেলের কাছে ফিরে আসতে তুই তো মুখের উপর না না কথা শুনিয়ে দিলি আবার সোজা বলে দিলি আর নাকি ফিরবি না এখন আবার কি হলো তোর?আমার ছেলেকে নিরুদ্দেশ করে এবার সাধ মিটেছে তোর

তমশা বেগমের এ হেন আচরন দেখে সবাই অবাক অথৈ কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই অন্তীর দাদী,,, তমশা বেগমকে বেশ জোড়েই ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন।

-তমা এইসব কি বলছিস তুই?অন্তী তোর ছেলের বউ।মানছি তার হয়তো দোষ আছে তোর ছেলেরও তো কম দোষ নেই!অন্তী যেমন তাকে ভুল বুঝেছে তেমনই তোর ছেলেও তো তার ভুল ভাঙ্গানোর চেষ্টাই করে নি!উল্টো তাকে আরো ভুল বুঝিয়ে গেছে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মান অভিমান থাকবেই তাই বলে একে বারে তালাক??এভাবে একটা মেয়েকে বিপদে ফেলে হটাৎ করেই দেশান্তর হয়ে যাবে সে!!

তমশা বেগম মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।মায়ের মুখের উপর কথা বলার সাহস তার নেই। অন্তীর দাদী একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,,, -তিয়াশ তোমার ভাইকে ফোন করো যতোক্ষন তাকে না পাও ফোন করেই যাও।তাকে তো জানাতে হবে।সব জানার পর না হয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে!!

মাঝখানে তমশা বেগম আবার বলে উঠে,,, -আবার কিসের সিদ্ধান্ত?সব তো জলের মতো পরিষ্কার আমার ছেলে তার বউকে তালাক দিয়ে গেছে তাই আর কোনো সিদ্ধন্ত নেওয়ার কিছুই নেই….

অন্তীর দাদী এবার আরো বেশি ক্ষেপে যায়,,, -আবার শুরু করলি তুই?এতো বয়স হলো আর এইটুকুও জানিস না যে পোয়াতি অবস্থায় তালাক হয় না!

তমশা বেগম এবার একেবারে চুপ হয়ে যায়।আর বলার মতো কিছুই খুজে পাচ্ছে না সে,, অন্তীর দাদী আবার বলতে শুরু করে,,, -বিয়ে দুজন মানুষকে একসুতোই বেঁধে দেয়।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন সমান্য একটা কাগজের সইয়ের এতো।ক্ষমতা নেই যে তা ভেঙ্গে দিবে।আর যদি তূর্যর অন্তীকে তালাক দিতেই হয় তবে সে ফিরে এসে সব নিয়ম কানুন মেনে শরিয়ত মেনে দিবে।তার জন্য তূর্যকে ফিরতে হবে….!!সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে তো আর বৌ বাচ্চাকে ত্যাগ দিতে পারে না সে….!!

অন্তীর কানে বার বার বাচ্চা শব্দটার প্রতিধ্বনী হচ্ছে…হ্যা বাচ্চা।খুব তাড়াতাড়ি সে বাচ্চার মা হতে চলেছে আর তূর্য বাবা।অথচ যে বাবা হতে চলেছে সে নিজেই জানে না এসবের কিছু।জানানোও হয়ে উঠেনি অন্তীর।

অন্তীর অভিমানগুলো ছিলো বড্ড বেশিই গভীর।আকাশ ছোঁয়া।সে যে প্রেগনেন্ট তা সে বেশ কয়েক দিন আগেই টের পেয়েছিলো।বার বার তূর্যকে বলতে গিয়েও বলতে পারে নি।ঐ যে অভিমান।অভিমান বড্ড শক্ত একটা জিনিস….

অন্তী না পেরেছে তূর্যকে জানাতে না পেরেছে পরিবারের অন্য কোনো সদস্য কে এ বিষয়ে কিছু বলতে……

সেদিনের পর থেকে তূর্য একে বারে নিখোঁজ। সব বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে যতো আত্নীয় স্বজন ছিলো বাসার কাছে খোজ নেওয়া হয়ে গেছে তবে তূর্যর কোনো খোজ নেই।

ঐ দিকে ঐ দিনে প্যাসেন্জার লিস্টেও তূর্যর কোনো এন্ট্রি ছিলো না। মাঝে কেটে গেছে প্রায় আট মাস।অন্তীর ভরা পেট। ইতিমধ্যে তিয়াশ আর অথৈয়ের ব্যপারে সব জানা জানি হয়ে যায়।এবার তমশা বেগম সাফ জানিয়ে দেয় ঐ পরিবারের কোনো মেয়েকেই সে এ ঘরে তুলবে না।

তবে তমশা বেগমের ঐ কথায় তিয়াশ দমে যায় নি।সে মাকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে,,, -আমার যেমন ছেলে হিসেবে তোমাদের প্রতি দায়িত্ব আছে তেমনই মানুষ হিসেবে নিজের প্রতিও কিছু দায়িত্ব আছে।আমি আমার ভালোবাসাকে নিয়েই ভালো থাকতে চাই।এটা আমার নিজের প্রতি দায়িত্ব।

তমশা বেগম আর কিছু বলেন নি।তার এক ছেলেকে তিনি হারিয়েছেন তার উপর আরেক ছেলেকে তিনি হারাতে চান না। তাই একরকম বাধ্য হয়েই অথৈকে মেনে নেন। প্রভা এখন তন্ময়ের কাছে বড্ড অপরাধী। তন্ময় যেমন নিজের কাছে ঠিক তেমনই।

সব মিলিয়ে সবাই ভালো আছে শুধু ভালো নেই দুজন।একজন হলো অন্তী আরেক জন তূর্য। অন্তী অপেক্ষায় আছে তূর্যর জন্য,,, একদিন তূর্য আসবে।সব মান অভিমানের পালা শেষ হয়ে যাবে আর তারপর,,,,

সব কিছু মিলে মিশে এক হয়ে যাবে।সব মান অভিমান ভালো মন্দ সব কিছু মিলে নতুন করে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে। অন্তীর প্রেগনেন্সি বেশ কমপ্লিকেটেড।একেই তো বয়সটা কম তার উপর অন্যান্য অনেক কমপ্লিকেশন তো আছেই।

অন্তী নিজের একদম যত্ন নেয় না।তার ধারনা সে যখন বিপদে পরবে তখনই তূর্য আসবে তাকে বাঁচাতে।সব সময় এমনটাই,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here