আমার গল্পে শুধু তুমি পর্ব ১৮+১৯

গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক:হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৮

সময় কারো জন্য অপেক্ষা না করলেও সময়ের স্রোতে মানুষ ভেসে গেলেও প্রিয় মানুষগুলোর প্রতি অনূভুতি, আবেগ, ভালোবাসাগুলো সর্বদা মানুষের হৃদয়েই থেকে যায় অনাদি কাল পর্যন্ত।হয়তো সেই অনূভুতি গুলোতে একটু পরিবর্তন আসে তাতে কি ভালোবাসা তো ভালোবাসায় হয়

[কেমন আছো, কাকে বলবো ?

সবাই দিব্যি ভালো থাকার ভান করে আছে।

কথা রেখো, কাকে বলবো ?

সবার কাঁধে একটা করে না রাখা কথার পাহাড়।

কাকে বলবো, মনে রেখো ?

সবার হৃদপিণ্ডে টাঙান কয়েক প্রস্ত রঙিন মুখোশ।

কাকে বলবো, তুমি হাত ধরতে জানো ? সবার মুঠো ভরতি স্বপ্ন খুনের ঋণ ।

কাকে বলবো, শুনতে পাচ্ছ ? কেউ এখানে কান পেতে নেই । কাকে বলবো ? ইচ্ছে হলে আসতে পারো ।

সবাই যাবার জন্যে পা বাড়িয়ে প্রস্তুত । কাকে বলবো ? দেখে যাও, তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি । সবার চোখে চওড়া ফ্রেমের রুপালী আকাশ ।

সময়
-রুদ্র গোস্বামী

[সন্ধ্যের সোনালী সূর্যের দিকে তাকিয়ে কবিতার লাইন গুলো গড় গড় করে আবৃতি করছিলো তূর্য।মাঝেই কেটে গেছে কয়েক মাস।মাস পেড়িয়ে হয়তো বছরে ছুই ছুই কানাডার একটা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত।দেশের পাঠ চুকিয়েছে অনেক আগেই।পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের সাথে যোগাযোগ নেই তার।তবে তিয়াশের সাথে যোগাযোগ আছে।যোগাযোগ বলতে অর্থের যোগাযোগ।

প্রত্যেক মাসের শুরুতেই তূর্য তিয়াশের ব্যাংক অ্যাক্যাউন্টে বেশ মোটা অংকের টাকা ট্রান্ফার করিয়ে দেয়।

টাকাটা তিয়াশের প্রয়োজন।তূর্যর বেশ ধারনা ছিলো সে আসার পরপরই হয়তো তিয়াশ অথৈকে বিয়ে করবে।যেহেতু তিয়াশ সবে স্টুডেন্ট সেহেতু নিজের সংসার চালানোর ক্ষমতা তার নেই।এমন কি মা ও তাদের মেনে নিবেনা।

আর তার উপর অন্তীরও একটা জীবন আছে।অন্তীর পড়াশোনা অন্তীর বোনদের পড়াশোনা সবকিছুই তো অচল হয়ে পড়বে।

তাই তূর্য যাবার আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখে গিয়েছে। এদিকে তিয়াশ খুব ভালো করেই জানে মাস শেষে তার অ্যাক্যাউন্টে মোটা অংকের টাকাটা কে পাঠাচ্ছে…..তবে সে চায়েও তূর্যর সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না।

কি করে পারবে তূর্য তো তার পুরানো ফোন নাম্বারটা ও বদলে ফেলেছে।
এদিকে তিয়াশ প্রথম দিকে ভেবেছিলো তূর্য হয়তো এদেশেই আছে।হয়তো অভিমান করে কোথাও লুকিয়ে আছে।তূর্যর পাসপোর্ট টা ও তিয়াশ ভাইয়ের অ্যালমারিতেই আবিষ্কার করেছিলো ।কিন্তু এটা যে ডেট এক্সপ্যায়ার করা পাসপোর্ট সেটা অবশ্য তিয়াশ পড়ে বুঝেছিলো……

জিনিয়ার ফিরে যাওয়ার দুদিন পরই তূর্যও চলে যায়।তবে এবার আর ইউকে নয় সম্পূন নতুন জায়গায়। হয়তো সব কিছুর পরিকল্পনা তূর্যর অনেক আগে থেকেই করা ছিলো।

সব মিলিয়ে প্রায় ন মাস হলো তূর্যর সাথে পরিবারের কারোরই যোগাযোগ নেই] আজ অন্তীর জন্মদিন।এই দিনটা তূর্য কখনো ভুলতে পারে না।নার্সিং হোমের ছোট্ট দোলনায় সাদা টাওয়ালে মোড়ানো লালটুকটুকে একটা পুতুল।

তাকে প্রথম ছোয়া,চলে আসতে নিলে ছোট্ট ছোট্ট হাতে তূর্যর হাত জড়িয়ে নেওয়া।সব কিছুই তূর্য স্মৃতিতে গেথে আছে তাই চাইলেও তূর্য এই দিনটা ভুলতে পারবে না।হয়তো এই কারনেই অন্তীকে তূর্যর এতো বেশি করে মনে পড়ছে।

তূর্য চায় ও না কিছু ভুলতে।সে চায় ব্যার্থ প্রেমিকের মতো সারা জীবন প্রেমিকার স্মৃতি জড়িয়ে বেঁচে থাকতে। তূর্যর বাকি জীবন ভালো থাকর জন্য এই স্মৃতি গুলোই যথেষ্ট।

মাঝে মাঝে তূর্য ইচ্ছে করে ছুটে চলে যেতে তার অন্তুর কাছে।সব মান অভিমানের পাহাড় ভেঙ্গে দিয়ে তাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অন্তীকে সাফ সাফ জানিয়ে দিতে,,

তুমি আমার। তুমি চাইলেও আমার না চাইলেও আমার।তুমি চাইলেও আমি তোমাকে সারা জীবন আমার ভূবন খাঁচায় বেধে রাখবো না চাইলেও

তবুও তূর্য পারে না।পারে না তার উপর অধীকার বোধ খাটাতে…..

এসব আকাশ পাতাল চিন্তার মাঝে তূর্যর ফোনটা বেজে উঠে….

তূর্য আনমোনেই ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ফোনের উপার থেকে মৃদু কান্নার আওয়াজ….

তূর্য প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও কান্নার আওয়াজ যখন তীব্র হয় তখন তূর্য বেশ বুঝতে পারে এটা কার গলা ছিলো।

তূর্যর তাৎক্ষনিক মনে পড়ে এটা তো তার আগের নাম্বার আজ হটাৎই তূর্যর নাম্বারটা অন করতে ইচ্ছে করছিলো তাই করেছে….

তূর্য বেশ গম্ভীর গলায় জবাব দেয়…. -অন্তু….কেমন আছিস????

কান্নার আওয়াক ক্রমশ্য তীব্র হচ্ছে…..তীব্র থেকে তীব্রতম….

-অন্তু
-অন্তু…..
-কান্না থামাবি!!

-তু…….তু….তুমি আমালে ছেড়ে কে…..
-টুট…..টুট…..টুট
অন্তী কথাগুলো আর শেষ করতে পারে নি,, লাইনটা হটাৎ করেই কেটে যায়।

তূর্য কল ব্যাক করতে চেয়েও কি মনে হতেই ফোনটা আবার রেখে দেয়। লাইনটা কেটে যাওয়ায় অন্তীর কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায়, এদিকে অন্তী বার দুয়েক কল ব্যাক করলেও কলটা আর লাগছে না।

অন্তী ফোন হাতে দ্রুত পায়ে নিচে নামতে থাকে উদ্দেশ্য তিয়াশের কাছে যাওয়া।তিয়াশ হয়তো আবার তূর্যরকে ফোনটা লাগিয়ে দিতে পারবে…..

তিয়াশ নিচে ড্রইংরুমে বসে ছিলো।তন্ময়,প্রভা,তমসা বেগম আর সঙ্গে তিয়াশের বাবা সবাই এসেছে অন্তীদের বাসায়।সাথে আবার বেশ কিছু অতিথিও আছে।হাজার হোক নতুন বউকে তো আর এমনি এমনি বাড়ি নিয়ে যাওয়া যায় না।আজ প্রায় ছয় মাস পর ছোট ছেলে আর ছোট বউমাকে তারা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে তারা।

তমসা বেগম এক ছেলেকে হারিয়ে বেশ ভেঙ্গে পড়েছে।তার এখন অন্ধের যষ্ঠী হলো তিয়াশ। সবাই ড্রইং রুমে বসে কথা বলা বলি করছিলো।অন্তী একটু অসুস্থ থাকায় এইসব হৈ চৈ থেকে তাকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।অন্তী দুতালায় তার ঘরটাতেই ছিলো।

অন্তী দ্রুত পায়ে নামতে গিয়ে হটাৎ করে পা পিছলে সিড়ি বেয়ে পড়ে যায়…….. যদিও বেশ কটা সিড়ি বেয়ে নেমেই পড়েছি অন্তী তবে শেষের কটা সিড়ি সে আর পাড় করতে পারেনি।

চোখের সামনেটা সম্পূর্ন ঝাপসা হয়ে আসে তার।ভরা পেট তার উপর অল্প বয়স নিজেকে সামলাতেই হিমসিম খাচ্ছিলো সে।

অন্তী মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়া মাত্র সেন্স হারিয়ে ফেলে।এদিকে সবাই অচমকায় এমন ঘটনা দেখে চমকে উঠে।যে যার নিজ নিজ জায়গায় মূর্তির মতো ঠ্যায় দাড়িয়ে যায়।কারো মধ্যেই একটু নড়াচড়া করার মতো সামান্য ক্ষমতা নেই।

সবার ধ্যান ভেঙ্গে দিয়ে তমসা বেগম চিৎকার দিয়ে উঠে….. আমার ছেলেকে তো হারিয়েছি অনেক আগেই তাকে ফিরিয়ে আনার শেষ সুতোটাও কি এবার হারিয়ে ফেলবো আল্লাহ

এতোক্ষনে তিয়াশের ধ্যান ভাঙ্গে।তিয়াশ দ্রুত পায়ে ছুটে যায় অন্তীর কাছে।এদিকে যে যার মতো কান্না কাটি জুড়ে দিয়েছে……

একদল মানুষ কোনো কাজে না লাগলেও কানা ঘুষো আর বিপদে পড়লে আগুনে ঘি ঢালতে পারে খুব ভালো ভাবেই…..
গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:১৯

ছেলেকে তো হারিয়েছি অনেক আগেই তাকে ফিরিয়ে আনার শেষ সুতোটাও কি এবার হারিয়ে ফেলবো আল্লাহ

এতোক্ষনে তিয়াশের ধ্যান ভাঙ্গে।তিয়াশ দ্রুত পায়ে ছুটে যায় অন্তীর কাছে।এদিকে যে যার মতো কান্না কাটি জুড়ে দিয়েছে……কেউ কেউ তো কানা ঘুষোও শুরু করে দিয়েছে।তাদের কথা মতো,,,

আজ বাদে কাল বউয়ের বাচ্চা হবে অথচ ছেলে তো একবার বউকে দেখতে ও এলো না,, তার উপর অনেকেই তো কাঁদতে কাঁদতে হেদিয়ে মরছে,,,

এই বাচ্চার দায়িত্ব কে নেবে….ছেলে তো বউ রেখে কোনো এক বিদেশী মেয়েকে নিয়ে ভেগেছে,,, একদল মানুষ কোনো কাজে না লাগলেও কানা ঘুষো আর বিপদে পড়লে আগুনে ঘি ঢালতে পারে খুব ভালো ভাবেই…..

তবে দূর্ভাগ্য বশত বেশি ভাগ ক্ষেত্রেই সেই এক দল মানুষের খাতায় নাম লিখাই আমাদেরই খুব কাছের আত্মীয় স্বজনরা। আত্মীয় শব্দটা তিন অক্ষরের হলেও তার অর্থটা বেশ বৃহৎ,,,

আত্মীয় হলো তারাই যদের সাথে আত্মার সম্পর্ক থাকে,, তবে বর্তমানে সম্পর্কগুলোর নাম একই থাকলেও অর্থগুলো পাল্টে গেছে,,,,

তিয়াশ আর অথৈ অন্তীকে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।দুজন মিলেই রওনা হয় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

তমসা বেগম সাথে যেতে চাইলে তিয়াশ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,,,

-না অন্তী তোমাদের কেউ হয় না অন্তীর বাচ্চা……

তমসা বেগম শুরু করে দেয় তার ভুবন জুড়ানো ভাষন,,

-বাচ্চাটা কি অন্তীর একার না কি ঐ বাচ্চা আমার ছেলের যদি বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়??তখন!!আমিও হাসপাতালে যাবো…

এবার তিয়াশ যেন রাগে ফেটে পড়ে…..

-না অন্তী তোমাদের কেউ হয় না অন্তীর বাচ্চা।বেবিটা শুধু মাত্র অন্তীর অন্তীর একার।ওদের উপর তোমার বা তোমাদের কারো কোনো অধিকার নেই,,,

-কি বললি???

-যা বলেছি ঠিকই বলেছি।আর এখানে তোমাদের বলতে আমি তুমি আর তোমার আদর্শ ছেলেকে বুঝিয়েছি যে এই টুকু বাচ্চা মেয়েকে এসবের মধ্যে একা ফেলে পালিয়ে গেছে….!!

তিয়াশ এবার নিজের রাগকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলো না।রাগে যেন তার গোটা শরীর কাপছিলো।এদিকে অন্তী থেকে থেকে ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে।

তিয়াশকে তারা দিয়ে অথৈ বলে উঠে,,

এসবের অনেক সময় পাবে তবে তার আগে আপুকে তো হাসপাতালে নিতে হবে!!

তিয়াশ এবার নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে অন্তী কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।সঙ্গে অবশ্য অথৈ ও ছিলো তবে আরো অনেকেই আসতে চাইলেও তিয়াশ কারো কথাই শোনে নি। এদিকে তখন অন্তীর সাথে কথা বলার পর থেকেই তূর্যর কেমন যেন খুব অস্থীর লাগছিলো।বার বার অন্তীকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো।

অন্তীর প্রতি কোমন একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছিলো তূর্য।যদিও এরকমটা আগে কখনো হয় নি তবুও। কথায় আছে বুকের পাজঁরে যখন টান লাগে তখন শরীরের সকল অঙ্গ পতঙ্গও কেঁপে উঠে।

অন্তীদের ঐ খানে সন্ধ্যে হলেও তূর্যর এখানে সকাল।ঠিক সকাল নয় ভোরের মতো। বেলা গড়িয়ে সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে তূর্য এখনো একই ভাবে সূর্যটার দিকে তাকিয়ে আচ্ছে।তবে তার চোখ কেন যেন ক্ষানিকের জন্যেও ক্লান্ত হচ্ছে না।

বার দুয়েক অফিস কলিক তাকে খাওয়ার জন্য ডেকে গেলেও তূর্যর কোনো হেলদোল নেই।তূর্যর বুকে এক অজানা ঝড় সব কিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে।এলোমেলো করে দিচ্ছে তূর্যর ভেতরটাকে। তূর্যর অন্তর আত্মা তূর্যকে বলছে ফিরে যেতে।ফেরে যেতে তার প্রিয়সীর কাছে।

তবে শত চাওয়া পাওয়ার মাঝেও চন্দ্রবিন্দুতে কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়….. যেই কিন্তুর শেষ পরিনতি বোঝার মতো বোধ এখন আর তূর্যর নেই।

নিজের সাথে অনেক বোঝা পড়ার পর তূর্য অবশেষে সিদ্ধান্ত নেই প্রিয়সীর কাছে তাকে ফিরতেই হবে অতন্ত একবারের জন্য হলেও ফিরতেই হবে তাকে,,

এদিকে কয়েক ঘন্টা পার হয়ে গেছে অন্তীর লেবার পেইন উঠছে না।আবার জ্ঞান ও ফিরছে না।বার দুয়েক চোখ মেলে তাকালেও পরক্ষনে আবার নিতিয়ে পড়ছে।ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাকে সিজার করাতেই হবে। কিন্তু তমশা বেগম তাতেও নারাজ।

এতোটুকু মেয়ের পেট কেটে তাকে সারা জীবন অকেজো করে রাখবে না কি? ভবিষ্যতে তো আরো ছেলেপুলে হবে না কি!!তখন কি হবে?একবার সিজার মানেই তো সব গেলো!

তার উপর সিজার করা বাচ্চা কাচ্চা নাকি ভালো হয় না!! এইসব পুরানো বুলি আওরাতে ব্যস্ত তিনি।এদিকে তিয়াশ ব্যস্ত অন্তী নামে ছোট্ট বোনটা কে বাঁচাতে। মায়ের মুখে মস্ত বড় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে তিয়াশই অন্তীর লিগার গার্ডিয়ান হিসেবে হসপিটালের অফিসিয়াল পেপার সাবমিট করে। এদিকে আবার নতুন বিপদ…..

অন্তীর অনেক ব্লাড লস হয়েছে।আবার পিচ্চি মানুষ হওয়াই শরীরে ব্লাডের যথেষ্ট ঘার্তি রেয়ে গেছে। অন্তীর ব্লাড গ্রুপের সাথে কারো ব্লাড গ্রুপই মিলছে না।ব্লাগ অ্যারেন্জ না হওয়া পর্যুন্ত অপ্যারেশন ও স্টার্ট হবে না।

অবশেষে অনেক খোজা খুজির পর ব্লাড ডোনার নিজে এসেই হাজির। ব্লাড ডোনার আর অন্য কেউ নয় সয়ং প্রভা।

প্রভাকে দেখে প্রথমে তিয়াশ অথৈ আর তমসা বেগম তিন জনই অবাক হয়। যে মেয়ে অন্তীকে একে বারে সহ্য করতে পারতো না।অন্তীর নামে দিনে দুবার গাল মন্দ করতো,অন্তীকে সরানোর জন্য আবার বোনের সঙ্গ দিয়ে এতো কান্ড করালো তার মধ্যে হটাৎ এতো পরিবর্তন।

তবে প্রভা কোনো দিকে গ্রাহ্য না করে নিঃশব্দে সোজা ডাক্তারের কাছে চলে যায়।অন্তীর প্রয়োজন মতো রক্ত দিয়ে আবার নিঃশব্দে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। একেই তো প্রভা কারো সাথে নিজে যেচে কথা বলে নি তার উপর শ্বাশুড়ি মা কথা বলতে আসলেও তাকে এড়িয়ে গেছে।

কোনো কথার উওর না দিয়েই গট গট করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায় সে। প্রভা ভাবির মধ্যে এতো পরিবর্তন কিছুতেই মানতে পারছিলো না তিয়াশ।এপাশ ওপাশ পাইচারি করতেই চোখ যায় করিডোরের এক পাশে গুটি শুটি হয়ে দাড়িয়ে থাকা তন্ময়ের দিকে।

তিয়াশ তন্ময়ের কাছে এগিয়ে যেতেই তন্ময় একরকম চমকে যায়। তার ধারনা অন্তীর এই দশার জন্য সেই দায়ী।তাই তার ভেতরের অপরাধ বোধ তাকে এই অব্দি টেনে এনেছে।

তিয়াশ বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে আবার নতুন সত্য আবিষ্কার করে।ঠিক সত্য নয় একটা রহস্য… প্রভা ভাবির এতো উদার হওয়ার রহস্য….

তন্ময়ই একরকম জোড় করেই প্রভাকে এই অব্দি টেনে এনেছে।অন্তীর ব্লাড ডোনার না পাওয়াই প্রভাকে এখানে এনে জোড় করেই ব্লাড ডুনেট করিয়েছে সে। তাছাড়া এই মুহূর্তে কোনো উপায় ছিলো না তাদের।

এবার তিয়াশের কাছে প্রভার এতো উদার হওয়ার ব্যপারটা পরিষ্কার হলো। এদিকে অথৈ বার চারেক তূর্যর নাম্বারে ডায়েল করেই যাচ্ছে।প্রথমবার ফোনটা লাগলেও পরের বারগুলোতে নোট রিচেবেলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

গোটা রাস্তা অন্তীর যতো বারই জ্ঞান ফিরেছে ততোবারই আধো বুলিতে তূর্যর নাম নিয়েই গেছে সে। তূর্যকে ফোন করে বার বার হতাশ হওয়া অথৈ আশা ছেড়ে দিলেও চেষ্টা ছাড়ছে না।যেখানে বোনের জীবন নিয়ে প্রশ্ন সেখানে এতো সহজে হাল ছাড়লে কি চলে?? না!কখনোই না।

অথৈ আবার তূর্যকে ফোন করতে যাবে তখনই তিয়াশ এসে অথৈ-এর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। -অনেক তো হলো এবার অন্তত ক্লান্ত হও!

-মানে
-কি লাভ বার বার ফোন করে??

-আপু চায় তূর্য ভাইয়াকে আর তাছাড়া সে তো বাচ্চাটার বাবা তারও জানার অধিকার আছে!! -অধিকার মাই ফুট!!অধিকার এমনি এমনি জন্মায় না অধিকার অর্জন করে নিতে হয়!আজ থেকে অন্তীর জীবনে তূর্য নামের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না।

-কি বলছো এসব!!
-অন্তীরা একাই বাঁচতে পারে……তাদের বাঁচার জন্য এমন ভালোবাসার প্রযোজন পরে না!!

তিয়াশ এইটুকু বলে পেছন ফিরে তাকাতেই…. অপ্যারেশন রুম থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে তিয়াশের সামনে দাড়ায়। -মি.তিয়াশ…..মিসেস অন্তী মাহমুদের বাড়ির লোক তো আপনিই তাই না????

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here