আমার সংসার পর্ব ১০

# আমার_সংসার
.
part :10
.
Writer :Mollika Moly
.
.
–সিনহা আমি তোমার জিবন টা নষ্ট হোক সেটা চাই না।
.
সিফাতের মুখে এমন কথা শুনে সিনহা ভ্রু-কুচকে জিঞ্জাসু দৃষ্টিতে তাকালো সিফাতের দিকে।
.
–কি হলো ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
.
–নাহ কিছু না।
.
–ওহ যেটা বলছিলাম শোনো,,?
.
–জ্বী বলুন,,,?
.
–আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী না হতে পারলেও এতোদিনে খুব ভালো একটা বন্ধুতে পরিনত হয়েছে আমাদের সম্পর্ক টা তাই না?
.
–হুম সেরকমই কিছু টা।
.
–এটা কি ধরনের কথা?
.
–কই কি ধরনের কথা?
.
–তোমার বয়স কতো বলো?
.
–১৯,,, কেনো?
.
–এইটুকু বাচ্চা মেয়ে এমন গম্ভীরমুখে কথা বলো কি করে?
.
–কই গম্ভীরভাবে বললাম?
.
–কেন জানি না তোমার সব কথাগুলোই গম্ভীর মনে হয়,আচ্ছা তুমি কি কখনো হাসো না,আমি মন খুলে হাসতে দেখিনি সেভাবে তোমায়,কেনো বলতো তুমি হাসো না?
.
–কই হাসিতো।
.
–হুম হাসো বাট তার মাঝেও কেমন জানি একটা লুকানো কিছু থাকে,প্রান খুলে হাসো না।তুমি কি আগে থেকেই এরকম কম হাসো?
.
সিনহা সিফাতের কথায় নিশ্চুপ হয়ে থাকলে,প্রশ্নটা সে নিজেকে করছে,সত্যি কি আমি আগে থেকে কম হাসি?না তো আগে তো আমি এমন ছিলাম না,অনেক হাসিখুশি পাজি ছিলাম,আগে সবসময় হাসতাম আর এখন হাসতে ভুলে গেছি।
.
–কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে পিচ্চি?
.
–হুম আমি পিচ্চি আর আপনি মনে হয় বুড়ো মশাই?
.
–হ্যা তাইতো আমি তোমার দাদার বয়সী।
.
সিফাতের এমন রসিকতায় সিনহা অবাক,এই রস কসহীন মানুষ টাও রসিকতা করতে জানে,মা ঠিকই বলেছিলো উনার ভিতর টা আলাদা।ওনার ভিতরে একটা কোমল মন আছে,যেটা অত্যন্ত ভালো,যেটা সবাইকে আপন করে নিতে জানে।
.
–আবার হারিয়ে গেলে,,,,,কি হয়েছে তোমার বলতো?
.
সিফাত সিনহার সামনে তুড়ি মেরে বললো।
.
–কই কি হবে কিছু না।
.
–কিছু না তে এমন চুপচাপ কেন?
.
–কই চুপ চাপ বলুন আপনি শুনছি,?
.
–শুধু আমি একা একা বক বক করবো?
.
–নাহ মাঝে মাঝে আমিও বলছি।
.
–হুহ,,আচ্ছা আমরা যদি আলাদা হয়ে যাই তাহলে কি তোমার কোনো সমস্যা হবে?
.
–মানে,,,,?
.
সিফাতের মুখে এমন কথা শুনে সিনহা বুঝতে পারছে না সে কি মিন করে এগুলো বলছে।
.
–আসলে বলছিলাম যে আমরা দুজন যদি একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যাই,একবারে আলাদা না বন্ধুত্ব থাকবে আমাদের,তুমি অনেক ভালো বন্ধু আমার,তোমায় ছাড়বো না,কিন্তু আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক টা আমি আর চালাতে পারছি না সিনহা,তুমি তো সবটা জানো আমি জারা কে ভালবাসি,আমার সাথে কখনো তুমি সুখি হতে পারবে না।
.
সিফাতের কথাগুলো শুনে সিনহার মুখ মুহুর্তে কালো হয়ে গেলো।খুব কান্না পাচ্ছে তার।কিন্তু সে সিফাতের সামনে ভেংগে পড়বে না,নিজেকে সংযত করে বললো,,,,,।
.
–কি চান আপনি?
.
–ডিভোর্স।
.
কথাটি শুনে সিনহা চমকে উঠলো,কেপে উঠলো ওর কলিজা।
.
–কবে দিচ্ছেন ডিভোর্স?
.
–দেরী হবে এগুলো তো বললেই হয় না,অনেক ঝামেলা আছে, লইয়ার ধরতে হবে,উনি কাগজ ঠিক করে দিবে,তারপর,,,!.
.
–ওহ আচ্ছা, সব পেপার ঠিক করে নিয়েন আমি সিগনেচার করে দিবো।
.
–হুম,,কাল কথা বলবো লইয়ারের সাথে।
.
–আচ্ছা ,,,।
.
ওদের কথা শেষ হতেই ফজরের আজানের ধ্বনি ভেসে এলো মসজিদ থেকে। সিফাত ওজু করে মসজিদে গেলো,সিনহাও নামাজে বসলো।
.
নামাজ শেষ প্রতিদিনের মতো সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরী করলো সে,তারপর বাবা,মা,সিফাত কে ব্রেকফাস্ট করতে দিলো,আজ সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে,বাবা,মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে,কতোদিন পর তার ছেলে তাদের সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করেছে,এইসব কিছুই সিনহার জন্য সম্ভব হয়েছে।সিনহা বাবা,মায়ের চোখে তৃপ্তি ও কৃতজ্ঞতার ছায়া দেখতে বলো,বাবা,মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পলক নামিয়ে ইশারায় সব ঠিক হয়ে যাবে এই আশ্বাস দিলো।
.
–বলছিলাম কি সিফাত,,,,?
.
–জ্বী বাবা বলো?
.
–বলছিলাম যে তোমাদের বিয়ের প্রায় ৭ মাস হতে লাগলো?
.
–হ্যাঁ বাবা।
.
–এর মধ্যে তুমি সিনহা কে নিয়ে কোথাও ঘুরেও আসোনি বা বাড়ি থেকে বেরই হওনি ওকে নিয়ে?
.
সিফাত মাথা নিচু করে আছে,আর সিনহা ভাবছে বাবা এগুলো কেন বলছেন ওনাকে,কি বলতে চাচ্ছে বাবা ওনাকে।
.
–তাই আমি ভাবছিলাম তোমরা কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরতে যাও,ভালো লাগবে,সিনহার সাথে কোথাও যাওয়া হয়নি তোমার,আমি চাউ দুজন একটু ফ্রি একাকিত্বে সময় কাটাও,তোমাদের ফ্লাইটের টিকিক বুকিং করেছি কাল সকালে ফ্লাইটে রওয়ানা দিবে আমি না শুনতে চাই না।
.
–কিন্তু বাবা,,,
.
–না বাবা,না বলবো কেন,যাবো আমরা কাল সকালেই।
.
সিফাতের এমন কথা শুনে সিনহা থ হয়ে গেলো,কি বলে উনি এগুলো,সিনহা ভেবেছে সিফাত যাবে না,তাই সে বাবা কে না বলতে চেয়েছিলো কিছু বলে সামলে নিতো বিষয় টা কিন্তু সিফাত নিজে যেতে চাইলো,সিফাত কি চায় সিনহার মাথায় আসছে না।
ব্রেকফাস্ট শেষে বাবা,মা রুমে চলে গেলো আর সিফাতও চলে গেলো রুমে,সিনহাও সিফাতের পিছু পিছু গেলো,জিঞ্জাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিনহা সিফাতের দিকে,মনে তার প্রশ্ন ঘুড়ছে।সিফাত বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সিনহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
.
–ঐ পিচ্চি আবারো মুখ গম্ভীর করে কি ভাবছো?
.
–আপনি সত্যিই কক্সবাজারে যাবেন?
.
–কেনো তোমার কি মিথ্যে মনে হয়?
.
–না আসলে,,,।
.
–আসলে কি ভেবেছিলে আমি যাবো না তাইতো।
.
সিনহা মাথা নেড়ে হ্যা বুঝালো।
.
–তুমি কি পাগলী?
.
কথাটি শুনে মুখ তুলে তাকালো সিফাতের দিকে।প্রশ্ন এটাই তাকে পাগল কেনো বললো সে.
.
–আচ্ছা আমি কক্সবাজার যাবো না এটা কেন মনে হলো বলতো তোমার?
.
–আসলে আমি যাচ্ছি তাই,বাবা,মা আমাদের হানিমুনের জন্য পাঠাচ্ছে এটা কি আপনি বুঝতে পারেননি?
.
–হুম পেড়েছি,কিন্তু তুমি যাবে তাই যাবো না কেন বলোতো?আর হানিমুনের জন্য পাঠিয়েছে তো কি হয়েছে,আমরা তো আর স্বামী, স্ত্রী হয়ে যাচ্ছি না,আমরা বন্ধু হয়ে যাচ্ছি।
.
–ওহ,অনেক কষ্টে কথাটি বললো সিনহা।
.
–বুঝেছো পিচ্চি?
.
–হুম।
.
–আচ্ছা একটা কথা বলোতো?
.
–বলুন?
.
–কখনো কাউকে ভালোবেসেছিলে?
.
সিফাতের প্রশ্ন শুনে সিনহা অবাক হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছে সিফাত।কি উত্তর দিবে সে,সে তো সিফাত কেই ভালোবাসে,অনেক ভালোবাসে।
.
–কেনো?
.
–আরে বলোই না লজ্জা কিসের আমরা তো বন্ধু তাই না সব শেয়ার করবে আমার কাছে।
.
–হুম।
.
–ভালোবেসেছিলে?
.
–হ্যাঁ,মাথা নাড়িয়ে বললো।
.
–ওয়াও তারমানে তুমিও ভালোবাসো কাউকে?
.
–হুম বাসি।
.
–ভালবাসা কেমন হয় জানো তুমি,কতোটা ভালবাসো তাকে তুমি?
.
–অনেক টা ভালোবাসি আমি তাকে,ভালোবাসা কাকে বলে আপনি জানেন না?
.
–হ্যাঁ জানি তবে এর সঙ্গা আমি তোমার মুখ থেকেও শুনতে চাই।আর তাকে অনেক কতোটা ভালবাসো,আমি যতটা জারা কে ভালবাসি ততটা তাই না?
.
–নাহ তার থেকেও অনেকবেশি আমি তাকে ভালোবাসি।
.
–ওহ নো,রিয়েলি,ইউ নো হোয়াটআমি জারা কে কত্তোটা ভালবাসি।
.
–হুম জানি তবে আপনার চাইতে বেশি ভালবাসি আমি তাকে,আমার ভালবাসা আকাশের মতো বিস্তৃত,মাটির মতো সমান,পানির মতো সীমাহীন।
.
–বাহ বেশ ক্যাবিকতায় বলে ফেললে দেখি?
.
–বিদ্রুপ করছেন?
.
–আরে না না একদম না,তোমায় বিদ্রুপ করবে কার সাধ্য,তুমি জানো তুমি কতো সুইটি,কিউটি একটা পিচ্চি মেয়ে,সবার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য তুমি,সিফাত সিনহার গালে দুহাত দিয়ে কথাগুলো বললো।
.
–শুধু আপনার টা পাওয়ারই যোগ্য না আনমনে বললো কথাটা সিনহা।
.
–কি বললে?
.
–কই কিছু না, চমকে উঠে বললো সিনহা।
.
–হুম তুমি অনেক ভালো মেয়ে তোমার মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।
.
–এভাবে বলবেন না প্লিজ আমি অতি নগন্য।
.
–ওকে ওকে পিচ্চি তোমার দেখি একটু ভালোও বলা যাবে না বলবো না আর হুহ।
.
–হুম।
.
to be continue………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here